সুলতান জালালউদ্দিন মাহমুদ শাহ


সুলতান জালালউদ্দিন মাহ্মুদ শাহ
৮২১ হিজরি হতে আবার জালালউদ্দিন মাহমুদের মুদ্রা পাওয়া যায়। যদি রাজা গণেশ কর্তৃক দ্বিতীয় বার
সিংহাসন অধিকারের কথা সত্য হয়ে থাকে তবে মনে করতে হবে যে, রাজা গণেশ ৮১৯-২০ হিজরিতে
ক্ষমতাসীন ছিলেন। মুদ্রা প্রমাণে বলা যায় যে, জালালউদ্দিন মাহমুদ ৮২১ হিজরি হতে ৮৩৫ হিজরি পর্যন্ত
(১৪১৮-১৪৩১ খ্রি:) রাজত্ব করেছিলেন।অনেকে দনুজমর্দন দেবের উত্তরাধিকারী মহেন্দ্র দেব ও
জালালউদ্দিনকে এক ও অভিন্ন বলে মনে করেন। আবার কেউ কেউ মহেন্দ্র দেবকে গণেশের দ্বিতীয় পুত্র
বলে মত প্রকাশ করেছেন। সীমিত তথ্যের ওপর নির্ভর করে এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত করা সম্ভব নয়।
এমনও হতে পারে যে, দনুজমর্দন দেব ও মহেন্দ্র দেব সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি এবং তাঁরা জালালউদ্দিনের
রাজত্বকালে বাংলাদেশের কিছু অংশে ক্ষমতা বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
শাসক হিসেবে জালালউদ্দিন মাহমুদ সুনাম অর্জন করেছিলেন। ফিরিশতা, নিজামউদ্দিন বখ্শী ও গোলাম
হোসেন সলিম তাঁর সুশাসনের প্রশংসা করেছেন। ফিরোজাবাদ, সোনারগাঁও, মুয়াজ্জামাবাদ, সাতগাঁও,
চাটগাঁও, ফতেহাবাদ ও রোতাসপুর টাকশাল হতে তাঁর মুদ্রা প্রকাশিত হয়েছিল। এ থেকে মনে হয়
উত্তরবঙ্গ, পূর্ববঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ, ও দক্ষিণ বঙ্গের বৃহদাংশ তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। রিয়াজ-উস-সালাতীন হতে
জানা যায় যে, তিনি রাজধানী পান্ডুয়া হতে গৌড়ে স্থানান্তর করেন। একই সূত্রে জানা যায় যে, জালালউদ্দিন
মাহমুদ স্ত্রী ও পুত্রসহ পান্ডুয়ায় একলাখী সমাধি সৌধে সমাহিত আছেন। এই সমাধি সৌধ বাংলার মুসলিম
স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্যসাধারণ নিদর্শন।
জালালউদ্দিন মাহমুদ নিষ্ঠাবান মুসলমান ছিলেন। তিনি তাঁর রাজত্বের শেষের দিকে মুদ্রায় ‘খলিফাতুল্লাহ'
উপাধি ধারণ করেছিলেন। তিনি চীনা সম্রাট, মিশর ও পারস্যের সুলতান এবং দামেস্কের খলিফার সাথে দূত
বিনিময় করেছিলেন।
সুলতান জালালউদ্দিন মাহমুদের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র শামসউদ্দিন আহম্মদ শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন।
৮৩৬ হিজরিতে উৎকীর্ণ তাঁর একটিমাত্র মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। শামসউদ্দিন আহম্মদ শাহ সম্বন্ধে ফিরিশতা
ও রিয়াজ-উস-সালাতীনে পরস্পর বিরোধী তথ্য আছে। ফিরিশতা তাঁকে ন্যায়পরায়ণ ও উদার বলে উল্লেখ
করেছেন। কিন্তু সলিম তাঁকে অত্যাচারী ও রক্তপিপাসু বলে আখ্যা দিয়েছেন।সভাসদগণের ষড়যন্ত্রে
সুলতানের দুজন ক্রীতদাস সাদী খান ও নাসির খান সুলতানকে হত্যা করেন। তবে তাঁর মৃত্যুর সঠিক
তারিখ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
পরবর্তীকালে সাদী খানকে হত্যা করে নাসির খান নিজেই শাসনকার্য পরিচালনা করতে থাকেন। কিন্তু
ক্রীতদাসের আধিপত্য অপমানজনক বিবেচনা করে গৌড়ের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগণ সাত দিনের মধ্যেই তাঁকে
হত্যা করে। অমাত্য ও সেনানায়কগণ ইলিয়াস শাহের এক বংশধর নাসির খানকে সিংহাসনে বসান।
এভাবে ইলিয়াস শাহী বংশের পুনরাভ্যুদয় হয়।
পরবর্তী ইলিয়াস শাহী যুগ
ইলিয়াস শাহের পরবর্তী এক বংশধর নাসির খান ৮৪৬ হিজরিতে (১৪৪২ খ্রি:) সুলতান নাসিরউদ্দিন
মাহমুদ উপাধি ধারণ করে রাজ্যশাসন করতে থাকেন। ৮৯০ হিজরি পর্যন্ত ৪৫ বৎসর কাল পুন:প্রতিষ্ঠিত
ইলিয়াস শাহী বংশের শাসন বাংলায় কায়েম ছিল।
সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ

সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ ন্যায়পরায়ণতা ও উদারতার সাথে রাজ্যশাসন করেছিলেন। রিয়াজ-উসসালাতীনে উল্লেখিত আছে যে, তাঁর শাসনকালে বৃদ্ধ-যুবা নির্বিশেষে সমস্ত প্রজা তৃপ্ত ছিল। বাংলার মুসলিম
রাজ্যে পুনরায় সামরিক শক্তি সঞ্চার হয়েছিল বলে মনে হয়। বাগেরহাটের খান জাহানের সমাধি গাত্রে
উৎকীর্ণ লিপি হতে জানা যায় যে, যশোর ও খুলনা অঞ্চল নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের রাজত্বকালে মুসলিম
সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল।এ অঞ্চলে ব্যাপক প্রবাদ আছে যে, খান জাহান নামে বাংলার সুলতানের একজন
সেনাপতি ঐ অঞ্চলে প্রথম মুসলমান রাজত্বের প্রতিষ্ঠা করেন। উড়িষ্যা রাজ কপিলেন্দ্র দেবের এক
শিলালিপি হতে জানা যায় যে, তাঁর সাথে গৌড়েশ্বর-এর যুদ্ধ হয়েছিল। সম্ভবত কপিলেন্দ্র দেবের
সমসাময়িক গৌড়ের সুলতান ছিলেন নাসিরউদ্দিন মাহমুদ। মিথিলা রাজ্যের সাথে নাসিরউদ্দিনের যুদ্ধ
হয়েছিল বলেও অনুমান করা হয়।
নাসিরউদ্দিন মাহমুদের রাজত্বকালের টাকশাল ও বিভিন্ন শিলালিপির অবস্থান হতে তাঁর রাজ্যসীমা অনুমান
করা সম্ভব। পশ্চিমবঙ্গ, পূর্ববঙ্গ, উত্তরবঙ্গ ও বিহারের কিছু অংশ তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। মোটামুটিভাবে বলা
যায় যে, তাঁর রাজ্যসীমা পশ্চিমে ভাগলপুর, পূর্বে ফরিদপুর, উত্তরে গৌড় পান্ডুয়া এবং দক্ষিণে ত্রিবেণী পর্যন্ত
বিস্তৃত ছিল।
তাঁর রাজত্বকালে বহু মসজিদ, খানকাহ্, তোরণ, সেতু, সমাধিসৌধ ও প্রাসাদ নির্মিত হয়েছিল বলে লিপি
প্রমাণ আছে। সুতরাং মনে হয় তাঁর রাজত্বে দেশে শান্তি বিরাজমান ছিল। সুলতান নাসিরউদ্দিন স্থাপত্য
শিল্পে মনোনিবেশ করতে পেরেছিলেন। ৮৬৩ হিজরি পর্যন্ত তাঁর মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। খুব সম্ভবত ঐ
বৎসরই তাঁর মৃত্যু হয়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]