কোম্পানির জমিদারি লাভ, ১৬৯৮ Attainment of Company's Land-Owner

১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে সুতানুটিতে কুঠি স্থাপনের পর থেকে কোম্পানির নিয়ত চেষ্টা ছিল কুঠির আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের উপর ইজারা বা স্থায়ী স্বত্ব লাভ করে তথায় কোম্পানির একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করার এবং একই সঙ্গে একই সুরক্ষিত বসতির ব্যবস্থা করার জন্য। প্রাইভেট ইজারার মাধ্যমে কোম্পানি ইতোমধ্যেই সুতানুটির পার্শ্ববর্তী জমির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে একটি বড় বাজার প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যে ১৬৯৫-৯৬ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুরের জমিদার শোভা সিংহ ও তাঁর সঙ্গী রহিম খান বিদ্রোহ ঘোষণা করে বর্ধমান পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকার উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ফলে আইন-শৃঙ্খলার এমন অবনতি ঘটে যে, বিদেশি বণিকরা নিজেরা আত্মরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি প্রার্থনা করলে সুবাদার ইব্রাহিম খান তাদের আরজি মঞ্জুর করেন। এ সুযোগে ১৬৯৬ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি সুতানুটি বসতিতে নির্মাণ করে তৎকালীন ব্রিটিশ রাজার নামে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ। এমনিভাবে স্থাপিত হলো এ দেশের উপর কোম্পানির আধিপত্য স্থাপনের আরেকটি শক্ত খুঁটি। শৃঙ্খলা ফিরে আসার পরও এ দুর্গ ভেঙে ফেলার আদেশ সরকার দেয়নি। এ দুর্গকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত হলো দেশের অভ্যন্তরে ইউরোপীয় সামরিক উপস্থিতি।
৩৫৮ বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যকলাপ ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত, পলাশীর সঙ্কটকালে অভিজাত শ্রেণির ভূমিকা
ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ বিশেষ তাৎপর্য লাভ করলো যখন অচিরেই কোম্পানি দুর্গের পার্শ্ববর্তী এলাকার জমিদারি-স্বত্ব লাভ করলো। ১৬৯৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাটপৌত্র প্রিন্স আজিমউস্শান সুবাদার নিযুক্ত হলে কোম্পানি তাঁকে ১৬,০০০ টাকা নজরানা প্রদান করে তিনটি মৌজার (সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা) উপর জমিদারি-স্বত্ব দানের আরজি জানায়। সুবাদার সে আরজি মঞ্জুর করেন। ১৬৯৮ সালে সরকারকে বার্ষিক ১১৯৪ টাকা ১৪ আনা ৪ পয়সা জমা দানের শর্তে তিনি কোম্পানিকে উক্ত তিনটি মৌজার জমিদারি-সনদ প্রদান করেন। কোম্পানির জমিদারিস্বত্ব লাভ ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এখন থেকে কোম্পানি শুধু বিদেশি বণিক নয়, দেশের শাসকশ্রেণির সদস্যও। তাছাড়া বাণিজ্যিকভাবে কোম্পানি নতুন সম্ভাবনা আবিষ্কার করলো জমিদারির মধ্যে। নতুন নতুন বাজার স্থাপন করে এবং সুষ্ঠু ব্যবসায় বাণিজ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কোম্পানি অভূতপূর্বভাবে আকর্ষণ করলো স্থানীয় ও বিদেশি বণিকদের। অচিরেই কলকাতা দেশের একটি অন্যতম বড় ক্রয়-বিক্রয় ও আমদানি- রপ্তানি কেন্দ্রে রূপান্তরিত হলো। কলকাতা বিকাশ লাভ করলো এশিয়ার প্রথম ইউরোপীয় মডেলের একটি জনবহুল কর্ম কোলাহলনগরী রূপে। এ নগরীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে কোম্পানির হাতে এবং এ সুরক্ষিত নগরীকে ঘাঁটি করেই ইংরেজরা পরবর্তীকালে রাজনৈতিক আধিপত্যের অভিলাষ পোষণ করে। বলা যায়, পরবর্তীকালে ঔপনিবেশিক বঙ্গ তথা ভারতরাজ্য ছিল কলকাতা বসতিরই পরিকল্পিত সম্প্রসারণ ।
১৫.৩ সম্রাট ফররুখশীয়র-এর ফরমান, ১৭১৭
Royal Decree of Emperor Farrukhshiyar, 1717 সম্রাট ঔরঙ্গজেব-এর মৃত্যুর (১৭০৭) পর থেকে মুঘল সাম্রাজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অবক্ষয় দেখা দিলেও সুবা বাংলা ছিল এর ব্যতিক্রম। নওয়াব মুর্শিদকুলী খানের সুযোগ্য শাসনামলে (১৭০৪-১৭২৭) এ অঞ্চল ছিল রাজনৈতিকভাবে শাস্ত, নিরাপদ এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী। এ সময় ইউরোপীয় বণিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার রপ্তানিবাণিজ্যে ক্রমাগত পুঁজি বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলে। ইতোপূর্বে ওলন্দাজ ও ফরাসিরা ছিল বাংলা-বাণিজ্যে অগ্রগামী। মুর্শিদকুলী খানের আমলে ১৭১৫ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি সুবা সরকারকে পাশ কাটিয়ে দিল্লির দুর্বল সম্রাট ফররুখশীয়রের নিকট শারমেন-এর নেতৃত্বে এক ডেলিগেশন প্রেরণ করে। ডেলিগেশন সম্রাটকে ত্রিশ হাজার পাউন্ড পেশকাশ বা পুরস্কার প্রদান করে বাংলা বাণিজ্যে কোম্পানির জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য আরজি পেশ করে। সম্রাট শারমেনের আরজি মঞ্জুর করে কোম্পানিকে অনেকগুলো নতুন সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার দিয়ে ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে একটি ফরমান জারি করেন। ফরমানে প্রদত্ত হয় :
বাৎসরিক তিন হাজার টাকা পেশকাশ দানের শর্তে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার ।
২. সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা-এ তিনটি মৌজা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী আরো
জমিদারিস্বত্ব প্রদানের জন্য সুবা সরকারকে নির্দেশ।
৩. কোম্পানির মালামাল চুরি হলে তা ফেরত পাবার অধিকার এবং কোম্পানি
কর্তৃক চোরকে শাস্তি দেবার অধিকার।
৪. মাদ্রাজ টাকশালে খচিত কোম্পানির টাকা বাংলায় বৈধ মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ । ৫. মূল সনদ স্থানীয় কর্মচারীদের না দেখাবার অধিকার ।
৬. কোম্পানির পলাতক খাতককে কোম্পানি-কর্তৃপক্ষের নিকট প্রত্যর্পণ দাবি
করার অধিকার।
৭. ফেক্টরিপ্রধান প্রদত্ত দস্তক প্রদর্শনপূর্বক মালামাল চেক না করার জন্য স্থানীয়
কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ ।
৮. মুর্শিদাবাদ টাকশালে কোম্পানির নামে মুদ্রা তৈরির অধিকার ।
আক্ষেপের বিষয়, সামান্য অর্থের বিনিময়েই সম্রাট এ ক্ষতিকর ফরমান দিয়েছিলেন। দেশের সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দেয়া হলো আংশিকভাবে। বীজ বপন করা হলো কোম্পানি ও সুবা সরকারের দ্বন্দ্বের। নবাব মুর্শিদকুলি খান এ ফরমান কার্যকর করতে অস্বীকারও করেননি, স্বীকারও করেননি। এ ফরমান কার্যকর করার জন্য কোম্পানির চাপের মুখে ছিলেন মুর্শিদকুলী এবং সুজাউদ্দীন খান। ফরমান জারির পর থেকে কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকারের এবং সরকারের বিরুদ্ধে কোম্পানির অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ উত্থাপন এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়। চৌকির আমলাগণ কর্তৃক কোম্পানির ব্যবসায় অন্যায় হস্তক্ষেপ করা, ঘুষ দাবি করা, হয়রানি করা ছিল কোম্পানির নিত্য অভিযোগ, আর সরকারের অভিযোগ ছিল কোম্পানি কর্তৃক অবৈধ ব্যবসায়, দস্তক অপব্যবহার করা, অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়ও শুল্ক না দেয়ার প্রবণতা, দাস ব্যবসায়, সামরিক তৎপরতা ইত্যাদি।
১৫.৪ মুর্শিদাবাদ দরবারে রাজনৈতিক কোন্দল
Political Wrangle in Murshidabad Darbar
আঠারো শতকের প্রথম তিন যুগ ছিল বাংলার ইতিহাসের এক বিশেষ শান্তি- সমৃদ্ধির যুগ। মুর্শিদকুলী ও সুজাউদ্দীন খানের প্রশাসনিক দক্ষতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, অভূতপূর্ব রপ্তানিবৃদ্ধি ও সম্প্রসারিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিল এ যুগ। কিন্তু এসব ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য থেকে উৎসারিত হলো কতিপয় মারাত্মক নেতিবাচক বৈলক্ষণ্য, যা দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কে প্রবর্তন করলো সুদূরপ্রসারী নতুন সম্পর্ক। সরকারের ভূমিপ্রশাসন-নীতির ফলে উদ্ভূত হলো রাজা মহারাজা পদবিধারী এক অতিশয় ক্ষমতাশীল জমিদার শ্রেণি।

৩৬০ বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনির বাণিজ্যিক কার্যকলাপ ১৭৫৭সাল পর্যন্ত, পলাশীর সঙ্কটকালে অভিজাত শ্রেণির ভূমিকা কেন্দ্রীভূত প্রশাসন-নীতির ফলে সৃষ্টি হলো একটি শক্তিশালী আমলা-মুৎসুদ্দি শ্রেণি। এদিকে রপ্তানি-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হলো একটি অভূতপূর্ব বানিয়া বা বেনে শ্রেণি, যাদের সম্পদ ও সহযোগিতার উপর সরকার অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে
পড়লো। এসব শ্রেণির প্রতিনিধিরা পরামর্শক হিসেবে নবাবি দরবারে স্থান পেল। নব্য শাসক শ্রেণি ক্রমশই রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার হতে শুরু করলো যেমনভাবে সোচ্চার ও সক্রিয় হয়েছিল সমকালীন ইউরোপে নবোত্থিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি। বানিয়া- মুৎসুদ্দি শ্রেণি রাজনির্মাতার ভূমিকা পালন করতে শুরু করলো। প্রাসাদ বিপ্লবের মাধ্যমে ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে সুজাউদ্দীন খান ও ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে আলিবর্দী খান সিংহাসন লাভ করেন তাদেরই আশীর্বাদে।
বানিয়া-ভূস্বামী চক্র আরেকটি প্রাসাদবিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছিল আলিবর্দীর নওয়াবতের শেষ দিকে। এর প্রধান কারণ অর্থনৈতিক। একটানা চার দশক পর্যন্ত তেজি অর্থনীতির পর ১৭৪০ এর দশকে দেখা দেয় দারুণ মন্দা। এ মন্দা ছিল বিশ্বব্যাপী। এ সময় ইউরোপীয় বণিকগোষ্ঠীগুলো বাংলায় রপ্তানি বাণিজ্যে সংকোচননীতি গ্রহণ করে। এর প্রতিক্রিয়া পড়ে রাজনীতিসহ সংশিষ্ট সকল সম্পর্কের উপর। অর্থনীতিকে বিশেষভাবে ন্যুব্জ ও নাজুক করে তুলেছিল ঘন ঘন মারাঠা আক্রমণ। উৎপাদন হ্রাস ও যুদ্ধজনিত কারণে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ফলে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি লাভ করে অস্বাভাবিক হারে। ১৭৩৮ খ্রিস্টাব্দে যেখানে এক টাকায় চাল ক্রয় করা যেত একশত সেরেরও বেশি, সেখানে ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে এক টাকায় চাল মেলে মাত্র সর্বোচ্চ তেত্রিশ, সের। অর্থনৈতিক চাপের মুখে সরকার কয়েক দফা ভূমিরাজস্ব বৃদ্ধি করে ভূস্বামী শ্রেণিকে বৈরী করে তোলে। ঘন ঘন অনুদান দাবি করার ফলে পুঁজিপতি অমাত্যরাও সরকারের উপর আস্থা হারায়। উদ্ভূত পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। উল্লেখ্য যে, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কোম্পানি ও আমলা-মুৎসুদ্দি ও ফৌজদারদের মধ্যে সম্পর্ক শীতল হয়। আগের মতো উৎকোচ ও নজরানা দিতে তাদের অনীহাই এর কারণ। কোম্পানির কর্মকর্তারা যোগাযোগ স্থাপন করে দরবারে নবাববিরোধী অমাত্যদের সঙ্গে।
১৫.৫ কোম্পানি-নবাব সম্পর্কে অবনতি
Downfall Relation of Company-Nawab
ইউরোপে অস্ট্রীয় উত্তরাধিকার যুদ্ধে (১৭৪০-৫৬) ইংরেজ ও ফরাসিরা ছিল পরস্পর বিবদমান। স্বাভাবিক কারণেই এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতে অবস্থানরত ইংরেজ- ফরাসিরাও দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটককে করা হয় ইংরেজ-ফরাসিদের মল্লভূমি। কয়েক দফা কর্ণাটক যুদ্ধে ইংরেজরা বেকায়দায় নিপতিত হয়। অনুরূপ অবস্থার পুনরাবৃত্তি যেন বাংলাদেশও না ঘটে সেজন্য আগে থেকেই এখানে ইংরেজরা প্রতিরক্ষার প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিতে থাকে। সে প্রস্তুতির একটি দিক ছিল দুর্গ নির্মাণ।
তে ইংরেজ ও ফরাসি উভয় জাতিকেই প্রয়োজনীয় দুর্গ নির্মাণ তৎপরতা থেকে বিরত থাকার জন্য তাদের নবাবের আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া দেয়, ইংরেজরা সুবা কাম্পানির স্বার্থরক্ষার জন্য প্রয়োজনে যে-কারো সঙ্গে যুদ্ধ ব না। নবাবের পুনঃ পুনঃ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কলকাতাকে ন সিদ্ধান্ত নেয় । এ ধরনের আচরণ ছিল ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দের র্ণ পরিপন্থী। দেখা যায় যে, বিভিন্ন সনদের মাধ্যমে ভ করেছে সে সম্পর্কে এরা ছিল প্রচণ্ড সজাগ। সে ঘটলেই তারা তৎক্ষণাত অভিযোগনামা নিয়ে উপস্থিত পরীতে দায়দায়িত্ব সম্পর্কে তারা ছিল সম্পূর্ণ উদাসীন।
এবং সরকারের প্রতি অনুগত থেকে কোম্পানি বাণিজ্য তিটি সনদে ছিল উল্লিখিত। কিন্তু কোম্পানি একে কোনো
• সে উন্নাসিক প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে পঞ্চাশের
n the Road of Palashi
মুর্শিদকুলী খানের সময় থেকে বাংলার নবাব ছিলেন দিল্লির
। নবাব নিজে উত্তরাধিকার মনোনয়ন দিয়ে, পেশকাশ প্রদান
অনুমোদন করিয়ে নিতেন। কিন্তু মজার ব্যাপার, সে মনোনয়ন আরোহণ করতে পারেননি। মুর্শিদকুলী খানের মনোনয়ন পাল্টিয়ে দর সমর্থনে নবাব হলেন সুজাউদ্দীন খান। আবার সুজাউদ্দীনের সরফরাজকে উৎখাত করে ঐ একই ষড়যন্ত্রীরা নবাব করেন আলিবর্দীর কোনো জীবিত পুত্র সন্তান ছিল না। কনিষ্ঠা কন্যা এ সিরাজউদ্দৌলা (পিতা পাটনার ডেপুটি নবাব জইনউদ্দীন খান) ার জন্য আলিবর্দীর মনোনয়ন লাভ করেন। কিন্তু এ মনোনয়ন রাজ [গ্য ছিল না। এর প্রধান কারণ প্রাসাদ-রাজনীতি। আলিবর্দীর অন্য রাজনীতির সঙ্গে সংহতি ঘোষণা করে। তবে সিংহাসনের মনোনয়ন র অসন্তুষ্টি ছিল, যা আলিবর্দীর জীবদ্দশায়, এমনকি পরেও তারা করেননি। সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে কুচক্রী আমির-ওমরাহরা প্রকাশ্যে করেন অনেক পরে এবং ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। ইংরেজের সঙ্গে সিরাজের করে তৈরি হয়েছিল সে প্রেক্ষাপট ।
৩৬২ বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যকলাপ ১৭৫৭সাল পর্যন্ত, পলাশীর সঙ্কটকালে অভিজাত শ্রেণির ভূমিকা ১৫.৭ কোম্পানির সঙ্গে সুবার সম্পর্ক
Relation of Company with Suba
১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে বাদশাহি ফরমান নবাব ও কোম্পানির মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশই শীতল করে তোলে। কোম্পানি দাবি জানায় ফরমান বাস্তবায়নের জন্য, আর নবাব নানা অজুহাতে ফরমানের পূর্ণ বাস্তবায়ন স্থগিত রাখেন। এ প্রক্রিয়া চলে আলিবর্দী খানের নওয়াবত পর্যন্ত। নবাবের অনুমতি না নিয়ে দুর্গ নির্মাণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সরকার ও কোম্পানির মধ্যে সম্পর্কে বিশেষ অবনতি ঘটে ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে, যখন কোম্পানি নবাবকে ধৃষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে, কলকাতার প্রতিরক্ষার জন্য তারা দুর্গ নির্মাণ করবে এবং প্রয়োজনে সমরাস্ত্র বৃদ্ধি করবে। উল্লেখ্য যে, ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে উত্তরাধিকার মনোনয়ন লাভের পর থেকে সিরাজউদ্দৌলা সুবার নানা দায়িত্ব পালন করছিলেন। সে সুবাদেই তিনি কয়েকবার কোম্পানির কাশিমবাজার কুঠি পরিদর্শনে যান এবং কোম্পানির কার্যকলাপ সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে অবহিত হন। তিনি লক্ষ করেন যে, কোম্পানি প্রকৃতপক্ষে সুবার আইনকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতো নয়ই, বরং তুচ্ছতাচ্ছিল্যপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে, যে মনোভাব তাঁর কাছে ছিল সহ্যসীমার বাইরে। সুজাউদ্দীন ও আলিবর্দী খান কোম্পানিকে সহ্য করেছিলেন এজন্য যে কোম্পানির অনুকূলে অবস্থান নিয়েছিল তাঁর সমর্থক সুবার শ্রেষ্ঠ বানিয়া-মুৎসুদ্দি শ্রেণি। স্বাভাবিকভাবেই বণিক ইংরেজ ও বণিক ভারতীয়দের স্বার্থ ছিল অভিন্ন। বানিয়া শ্রেণির আয়ের উৎস ছিল কোম্পানির বিনিয়োগ ।
সিরাজউদ্দৌলা মসনদে আরোহণ করেই (১০ এপ্রিল, ১৭৫৬) কোম্পানির প্রতি তাঁর নীতি ঘোষণা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, ইংরেজের উপস্থিতি এদেশের স্বার্থের প্রতিকূল, তাই তিনি এদের বিতাড়ন করতে বদ্ধপরিকর। তিনি ঘোষণা দেন যে, তিন কারণে তিনি কোম্পানিকে তাড়াবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিরাজ বলেন, “ইংরেজ বণিকদের এদেশ থেকে তাড়াবার প্রথম কারণ, এরা দেশের প্রচলিত আইনকানুন অমান্য করে কলকাতায় দুর্ভেদ্য দুর্গ ও পরিখা স্থাপন করেছে। দ্বিতীয়ত, এরা বিশ্বাস ভঙ্গ করে দস্তকের অপব্যবহার করছে; বেআইনিভাবে কোম্পানির নামে প্রাইভেট ব্যক্তিদের মধ্যে দস্তক (বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার পাস) বিতরণ করে সরকারকে এর বৈধ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে; তৃতীয়ত, জমিদারি ইজারার নিয়ম ভঙ্গ করে ইংরেজরা এদের কলকাতা জমিদারিকে নিজেদের সার্বভৌম এলাকা হিসেবে গণ্য করছে এবং নবাবি আইন-আদালত থেকে পালিয়ে এসে অনেক অপরাধী কলকাতায় এসে আশ্রয় নিচ্ছে এবং কোম্পানি এসব অপরাধীদের স্বাগত জানাচ্ছে।”
সিরাজের অভিযোগগুলো নতুন কিছু নয় । মুর্শিদকুলী খানের শাসনের শেষ দশক থেকেই ইংরেজদের বাড়াবাড়ি শুরু হয়। মুঘল আইন ও সার্বভৌমত্বকে তোয়াক্কা না করার প্রবণতা বাড়ে আলিবর্দী খানের শাসনের শেষ দশকে। সমকালীন ইউরোপে এ ধরনের অভিযোগের যেকোনো একটিই যুদ্ধ ঘোষণার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আলিবর্দী
খান পর্যন্ত কোনো নবাব ইংরেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি। অবস্থার চাপে নানা কৌশলে সরাসরি সামরিক মোকাবিলা তাঁরা এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু সিরাজউদ্দৌলা এর শেষ দেখার জন্য বদ্ধপরিকর হন। এ পদক্ষেপের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে স্যার যদুনাথ সরকার মন্তব্য করেন যে, সিংহাসনে আরোহণের আগে সিরাজ ইংরেজদের হাতে কয়েক বার অপমানিত হন। তাছাড়া চিরাচরিত প্রথা অনুসারে ইংরেজরা উপঢৌকন পাঠাননি বলে তিনি রুষ্ট হন এবং রুষ্ট মনে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নিজের পতন নিজে ডেকে আনেন। রাজ্যের উত্তরাধিকারী যদি কোনো বিদেশি। বণিকশ্রেণি দ্বারা ‘কয়েক বার’ অপমাণিত হন এবং সিংহাসন লাভের পর যদি উপঢৌকনরূপে এদের নিকট থেকে কোনো স্বীকৃতি না পান, তা হলে পৃথিবীর যে- কোনো রাজাই রুষ্ট হবেন। রুষ্ট হবার আরো কারণ থাকবে যদি সে অভ্যাগত বণিকশ্রেণি তাঁর রাজ্যের আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে ৷ এত সব বাড়াবাড়ি সত্ত্বেও যদি শাসক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে চোখ বুজে সব সহ্য করে চলেন, তাহলে তাকে দুর্বল, অপদার্থ, সম্মানবোধহীন নরপতি বলেই ইতিহাসে আখ্যায়িত করা হবে। সিরাজউদ্দৌলা ইতিহাসের সে অপবাদ নিতে চাননি। একজন সার্বভৌম স্বাধীন নরপতি হিসেবে তিনি বারবার ইংরেজদের হুঁশিয়ার করে দেন যে, শান্তিপূর্ণভাবে ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তারা যদি ব্যবসায় করে, তবে তিনি তাদের সকল সহযোগিতা ও সুযোগ প্রদান করবেন, অন্যথায় তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা ছাড়া তাঁর নিকট কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কলকাতা কাউন্সিল সিরাজের হুঁশিয়ারিতে কর্ণপাত করেনি। কোম্পানির সকল রাজবিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকে ।
১৫.৮ কৃষ্ণদাস মামলা
Krishnadas Law-Suit
বৃদ্ধ নবাব আলবর্দী খান যখন মৃত্যুশয্যায় তখন শাসনকার্যের ভার ছিল তাঁর উত্তরাধিকারী সিরাজউদ্দৌলার উপর। সিরাজ গোপনসূত্রে তথ্য লাভ করেন যে, ঢাকা প্রদেশের রাজস্ব পরিচালক (দিউয়ান) রাজা রাজবল্লভ দীর্ঘকাল যাবৎ সরকারি তহবিল তসরূপে লিপ্ত। সিরাজ ঢাকা প্রদেশের রাজস্ব সংগ্রহ সংক্রান্ত সকল নথিপত্র নিরীক্ষার জন্য নির্দেশ দেন এবং রাজবল্লভকে মুর্শিদাবাদে ডেকে পাঠান। রাজবল্লভ ভীত হয়ে পুত্র কৃষ্ণদাসসহ তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে আশ্রয়ের জন্য কলকাতায় পাঠিয়ে দেন। কৃষ্ণদাস প্রায় ৫৩ লক্ষ টাকা নিয়ে কলকাতায় আশ্রয় নেন। কৃষ্ণদাস কর্তৃক আনীত অর্থ কোম্পানির পুঁজি বিনিয়োগ বিরাট অবদান রেখেছিল। তাছাড়া তাকে নিরাপত্তা দেবার বিনিময়েও কোম্পানির বিভিন্ন কর্মকর্তা ঘুষ গ্রহণ করেছিল পঞ্চাশ হাজার টাকা। কৃষ্ণদাসকে আশ্রয় দেবার আর্থিক কারণ ছাড়া রাজনৈতিক কারণও ছিল। রাজবল্লভ ছিলেন সিংহাসনের জন্য সিরাজের প্রতিদ্বন্দ্বী শওকত জং (আলিবর্দীর কন্যা ঘষেটি বেগমের পুত্র) এর সহযোগী। বলাই বাহুল্য যে, কলকাতা কাউন্সিল কর্তৃক কৃষ্ণদাসকে আশ্রয় দেয়া ছিল সুবার সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ।
৩৬৪ বাংলার ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনির বাণিজ্যিক কার্যকলাপ ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত, পালীর পক্ষীকা ভিি
১৫.৯ দুর্গ নির্মাণ
Building up Durga
সিরাজউদ্দৌলা কড়া প্রতিবাদ সত্ত্বেও ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল কলকাতা দুর্গ সম্প্রসারণ ও কলকাতার চারপাশে প্রতিরক্ষামূলক পরিখা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখে। সিরাজ যুক্তি দেন যে, পূর্বে দেশে অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজমান ছিল এবং উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে কলকাতায় দুর্গ নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়েছিল, কিন্তু সে পরিস্থিতি বর্তমানে নেই এবং সকল প্রজার জীবন-সম্পত্তি এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গ নির্মাণের অর্থ হলো যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া, যা নবাব বরদাশত করতে পারেন না। কিন্তু সিরাজের হুঁশিয়ারিতে কাউন্সিল কোনো কর্ণপাত করেনি। সিরাজউদ্দৌলা ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিল প্রধান উইলিয়াম ড্রেককে এক পত্র লিখেন এ মর্মে যে, পলাতক কৃষ্ণদাসকে আশ্রয় দেয়া এবং কলকাতায় দুর্গ নির্মাণ তৎপরতা উভয় কাজই বেআইনি এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক বিধায় কলকাতা-কর্তৃপক্ষ যেন অনতিবিলম্বে কৃষ্ণদাসকে ফেরত পাঠায় এবং দুর্গ নির্মাণ বন্ধ করে। কিন্তু উইলিয়াম ড্রেক পত্রবাহক নারায়ণ সিংহকে অপমানিত করে বিদায় দেন।
যাহোক, সিরাজউদ্দৌলা কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধান করার উদ্দেশ্যে খাজা ওয়াজিদ নামে একজন প্রসিদ্ধ আর্মেনীয় বণিককে দূত হিসেবে ড্রেকের নিকট প্রেরণ করেন। কিন্তু ওয়াজিদ মিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। খাজা ওয়াজিদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুতিয়ালির দায়িত্ব নিয়ে না আসার জন্য তাঁকে হুমকি দেয়া হয় ।
রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান করতে না পেরে অবশেষে সিরাজউদ্দৌলা চিন্তা করলেন কলকাতা কাউন্সিলের উপর সীমিত সামরিক চাপ প্রয়োগ করে তাকে আলোচনায় আসতে বাধ্য করতে। নবাব কোম্পানির কাশিমবাজার ফেক্টরি অবরোধের সিদ্ধান্ত নেন। ৩ জুন (১৭৫৬) সিরাজউদ্দৌলা স্বয়ং কাশিমবাজারে সামরিক শক্তি নিয়ে উপস্থিত হন এবং ফেক্টরি প্রধান উইলিয়াম ওয়াটসকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন। ওয়াটস আত্মসমর্পণ করলে সিরাজের আদেশে ফেক্টরির মালামাল তালাবদ্ধ করে ফেক্টরি সীল করে দেয়া হয় যেন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে লুটপাট শুরু না হয়।
১৫.১০ কলকাতার পতন
Down-Fall of Kalkata
সামরিক চাপ প্রয়োগ করে কোম্পানিকে আলোচনায় আনার কৌশল সফল হয়নি। সিরাজউদ্দৌলারই বরং আত্মরক্ষামূলক নীতিতে ফিরে যাবার জন্য ড্রেক প্রতিশোধ নিলেন নবাবের ঘাঁটি সুখসাগর আক্রমণ করে (১০ জুন)। নবাব আবার তাঁর সদিচ্ছা ব্যক্ত করেন ইংরেজের সঙ্গে সব সমস্যা আপসে মিটমাট করার জন্য। কিন্তু
১ অটল থাকেন। ড্রেকের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, নবাব যতই যুদ্ধংদেহী রূপ ধারণ করুন না কেন, কোম্পানির সঙ্গে পুরাদস্তুর যুদ্ধে লিপ্ত হবার মতো শক্তি ও সামর্থ্য তাঁর নেই। উপলব্ধি করা কঠিন নয় যে, ড্রেকের খুঁটি ছিল দরবারে সিরাজবিরোধী বানিয়া দল। শত্রুর শত্রুকে কাজে লাগানো চিরাচরিত কৌশল সিরাজউদ্দৌলাও প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন। স্বদেশে রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে ইউরোপীয় বণিকগোষ্ঠীগুলো ছিল পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন । ইংরেজকে শায়েস্তা করতে সিরাজ চেষ্টা করেন, সুযোগ- সুবিধা বাড়িয়ে দিয়ে ফরাসি ও ওলন্দাজদের সামরিক সহযোগিতা লাভ করতে। কিন্তু তা ছিল অবাস্তব। উইলিয়াম ড্রেক আবেগপূর্ণ ভাষায় ওদের কাছে আকুল আবেদন জানান, আসন্ন ইউরো-এশীয় লড়াইয়ে কোনো ইউরোপীয় শক্তি যেন এশীয়দের পক্ষ অবলম্বন করে ইউরোপীয় সভ্যতার ক্ষতিসাধন না করে। নবাব দুঃখিত হলেন দেখে যে, এদের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ-সম্পর্ক থাকলেও কোনো এশীয় শক্তির পক্ষে ইউরোপীয়রা কোনো জ্ঞাতি-জাতির বিরুদ্ধে লড়তে অনিচ্ছুক। এহেন ইউরোপীয় ভাড়াটে সেনা জোগাড় করে সিরাজ তাঁর গোলন্দাজ শক্তি জোরদার করেন কলকাতা দখলের জন্য।
নবাব ত্রিশ হাজার সৈন্য নিয়ে ১৬ জুন (১৭৫৬) কলকাতা আক্রমণ করেন। নবাব এত দ্রুত কলকাতা আক্রমণ করতে পারেন এটা ছিল কোম্পানির হিসেবের বাইরে। তারা নগরী রক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ পায়নি। নবাবের সৈন্যের সঙ্গে কার্যকরভাবে দাঁড়াতে পারে এমন সৈন্যের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫০ জন ইউরোপীয় ও হাজার খানেক ভারতীয় লস্কর। দূরপাল্লার কামানের সংখ্যা ছিল ৫০। সিরাজউদ্দৌলার বাহিনী চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে কলকাতা শহর ও দুর্গ। যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে নিশ্চিত পরাজয় উপলব্ধি করে কোম্পানির সব লস্কর দলত্যাগ করে সিরাজের পক্ষ অবলম্বন করে। তৃতীয় দিনে ড্রেক শহর রক্ষার চেষ্টা পরিত্যাগ করে শুধু দুর্গ রক্ষার কৌশল গ্রহণ করেন। কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। নবাবের গোলন্দাজ বাহিনীর আক্রমণের মুখে অবশেষে ড্রেক সিদ্ধান্ত নেন অপেক্ষমান জাহাজে করে পালিয়ে নদীর ভাঁটিতে চলে যেতে। পলায়নপর জাহাজগুলো সকল ইউরোপীয়দের নিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে ভাটিতে পাড়ি দেয়, কিন্তু আতঙ্কিত অবস্থায় প্রিন্স জর্জ নামে একটি জাহাজ চরায় আটকে যায়। আটকেপড়া ইউরোপীয়দের মধ্যে ছিলেন হলওয়েল, যিনি মিথ্যাচার দিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। ২০ জুন বিকেল চারটায় কলকাতার চূড়ান্ত পতন ঘটে। আলিবর্দীর নামানুসারে কলকাতার নতুন নামকরণ করা হয় আলিনগর। মানিকচাঁদকে আলিনগরের প্রশাসনিক দায়িত্বভার অর্পণ করে সিরাজউদ্দৌলা বিজয়োল্লাস করে মুর্শিদাবাদ প্রত্যাবর্তন করেন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]