পলাশী যুদ্ধের ফলাফল Results of Palashi War

যুদ্ধের ক্লাসিক্ল সংজ্ঞায় পলাশীর যুদ্ধ খাঁটি যুদ্ধ নয়, পাতানো খেলা মাত্র। প্রাসাদ চক্রান্তের মাধ্যমে নবাব পরিবর্তনের ব্যাপারটিও অভিনব কিছু নয়। ইতোপূর্বে সুজাউদ্দীন ও আলিবর্দী উভয়েই সিংহাসনে বসেছিলেন প্রাসাদচক্রান্তের মাধ্যমে। যুদ্ধোত্তর লাভালাভের ব্যাপারেও বলা যায় যে, পলাশী যুদ্ধের পর ইংরেজরা যে সুযোগ-
সুবিধা লাভ করেছিল তা খুব নতুন কিছু নয়। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দের ফরমান এবং আলিনগর সন্ধির (৯ ফেব্রুয়ারি ১৭৫৭) মধ্যে যে অধিকার স্বীকৃত হয়েছিল, কোম্পানি মোটামুটি তাই লাভ করলো পলাশী যুদ্ধের পর। পরিবর্তন ঘটলো শুধু সিংহাসনে। আরোহীর। সিরাজউদ্দৌলার স্থলে মীর জাফর। এ পরিবর্তন দিল্লির বাদশাহ সঙ্গে সঙ্গে অনুমোদন করেছেন এবং এর নায়ক রবার্ট ক্লাইভের সাবুদ জং (রণে পরাক্রম) উপাধি। দিয়ে সম্মানিত করেছেন। তবুও বিশ্বের যুদ্ধ-ইতিহাসে পলাশী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কারণ, ঘটনা হিসেবে এ যুদ্ধ অগ্রাহ্য হলেও এর ফলাফল দুটি অংশে আলোচনা করা যেতে পারে- অব্যবহিত ফলাফল ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল ।
১. রাজনৈতিক অস্থিরতা : পলাশীর পর দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সেটাই ছিল স্বাভাবিক। কেননা, পলাশী-পরিবর্তনের মধ্যে কোম্পানির যে দুরভিসন্ধি ছিল এবং মুর্শিদাবাদ দরবার রাজনীতিওে যে দলাদলি ছিল, তা এমন একটি দ্বন্দ্বময় রাজনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করলো, যা শুধু পলাশীর মতো একটি ঘটনার মাধ্যমেই নিরসন হবার মতো নয়। মীর জাফরের উপর কোম্পানির দাবি ছিল অফুরন্ত। দাবি মেটাতে না পারায় তিনি উৎখাত হলেন। কোম্পানিকে তিনটি জেলা (চট্টগ্রাম, বর্ধমান, মেদিনীপুর) ছেড়ে দেবার বিনিময়ে নবাব হলেন মীর কাশিম (১৭৬০)। অচিরেই মীর কাশিমও উৎখাত হলেন (১৭৬০)। মীরজাফরকে পুনরায় সিংহাসনে বসানো হলো। এমনিভাবে ফরাসি থেকে দিউয়ানি (১৭৬৫) পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের সিংহাসনে কয়েকবার পালাবদল হয়েছে। প্রতিবারের বদলেই ছিল কোম্পানির পরিকল্পনা। এর প্রভাব পড়েছে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলার উপর। অরাজকতা দেখা দিল প্রশাসন ও সমাজজীবনের সর্বস্তরে।
২. লুণ্ঠনযজ্ঞ : পলাশী নাটক সমাপ্তির পরপরই গোপন চুক্তি মোতাবেক মীর জাফর সুবা বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেননি। ক্লাইভ স্বয়ং এসে তাঁকে মসনদে বসান জুনের ২৯ তারিখ অর্থাৎ পলাশী যুদ্ধের ছ'দিন পর। অন্তর্বর্তী সময়ে মুর্শিদাবাদে চলে অবাধ লুটপাট। সাধারণ সুযোগসন্ধানীরা লুটপাট চালায় শহরে আর মুর্শিদাবাদ হারেম ও রাজকোষাগারে লুটপাট চালায় ক্লাইভ ও তাঁর মিত্রবাহিনী। এ লুণ্ঠনযজ্ঞের জন্য রবার্ট ক্লাইভকে কৈফিয়ত দিতে হয়েছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিকট। ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি তদন্ত কমিটির সামনে লুট সম্পর্কে বহুবিধ প্রশ্নের জবাবে ক্লাইভ অকপটে বলেন, “ভেবে দেখুন একবার পলাশী বিজয়ের পর আমার অবস্থা! একজন পরাক্রমশালী নরপতি (নবাব) আমার ইশারায় উঠে আর বসে; একটি ঐশ্বর্যশালী শহর (মুর্শিদাবাদ) আমার পদানত; শহরের ধনকুবের ব্যাংকার-ব্যবসায়ীরা আমার একটু হাসি পাবার জন্য অধীর। আমার আগমনে খুলে দেয়া হলো কোষাগার- দেখি আমার দু'পাশে সোনা, রুপা, হীরা-মুক্তা, জহরত, মনি-মাণিক্যের ছড়াছড়ি। মি. চেয়ারম্যান, আপনি নিজেই বলুন কে লোভ সামলাতে পারে এসব দেখে? আরো যে হাতিয়ে নিইনি, আমার এ সংযমে আমি নিজেই বিস্মিত হই।”
৩৭৪ বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যকলাপে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত, দলীর সটকাল অভিজাত শ্রেণির ভূমিকা
৩. কোম্পানির লাভ। পলাশীর বিশ্বাসঘাতকতার ফলে মীর জাফর সুবা বাংলার নিজামত পেলেন। কিসের বিনিময়ে এক মুকুট? কলকাতা থেকে দক্ষিণে সাগর পর্যন্ত। ২৪-পরগণা নামে সমুদয় এলাকা কোম্পানিকে জমিদারি-স্বত্ব হিসেবে ছেড়ে দেয়া হলো। বার্ষিক প্রায় দশ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয়ের জমিদারির সরকারি জমা ধার্য হয় টাকা ২,২২,৯৫৮। পরে এই জমাও ক্লাইভকে দান করে দেয়া হয় তাঁকে ঐ এলাকার জায়গীর প্রদানের নামে। অর্থাৎ ২৪ পরগণার জমিদার হিসেবে কোম্পানির যে রাজস্ব সরকারকে প্রদান করার কথা সে রাজস্ব সরকারকে না দিয়ে নবাবের তথাকথিত জায়গীরদার কুইভকে প্রদান করা হলো।
মীর জাফর চুক্তিবদ্ধ হলেন যে, তিনি এবং পরবর্তী সরকার হুগলীর ভাঁটিয়া গঙ্গার আশেপাশে কোনো দুর্গ নির্মাণ করতে পারবেন না এবং কোনো সামরিক উপস্থিতি ঘটাতে পারবেন না। কোম্পানির সঙ্গে মীর জাফর চুক্তিতে আবদ্ধ হন এ মর্মে যে, সুবা সরকার সব সময়ই কোম্পানির শত্রুকে শত্রু, মিত্রকে মিত্র গণ্য করবে এবং শান্তি ও যুদ্ধ ঘোষণার তিনি কোম্পানির পরামর্শ গ্রহণ করবেন। চুক্তির এ ধারা অনুসারে ফরাসিরা বাংলা থেকে বিতাড়িত হয় এবং ফরাসিদের বসতি চন্দনগর ইংরেজদের দখলে চলে যায়। মৈত্রীচুক্তির ধারা অনুসারে ভবিষ্যতে নবাব কোনো শত্রুর মোকাবিলা করতে কোম্পানির সামরিক সাহায্য গ্রহণ করলে তিনি অপারেশনের ব্যয়ভার বহন করবেন। এক কথায়, সুবা বাংলায় কোম্পানির প্রভাব এমন পাকাপোক্ত করা হলো যেন কোনো ইউরোপীয় কোম্পানি বাংলায় এসে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে না পারে। হলোও তাই। পলাশীর পর রপ্তানি-বাণিজ্যে ফরাসি, দিনেমার ও ওলন্দাজদের ভূমিকা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে সরকার ও দেশের অর্থনীতির উপর। প্রভাব খাটিয়ে বিনা শুল্কে কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ব্যবসা, ফরাসি, ওলন্দাজ, দিনেমারদের রপ্তানি বাণিজ্য থেকে বিদায়, কলকাতায় কোম্পানির নিজস্ব টাকশাল স্থাপন, পলাশীর পর কোম্পানি কর্তৃক মূল্যবান ধাতব আমদানি হ্রাস এবং দেশীয় বণিক শ্রেণির ব্যবসায় হ্রাস প্রভৃতি খাতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারায় এবং সূক্ষ্ম বিচারে সরকারের জন্য যা ক্ষতি তা ছিল কোম্পানির জন্য লাভ। লাভ-ক্ষতির এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে গুপ্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, পলাশী যুদ্ধের ফলে প্রতি বছর দেশের মোট রাজস্বের শতকরা ৬৬ ভাগ কোম্পানি ও কোম্পানির কর্মচারীরা কুক্ষিগত করে ।
গোপন চুক্তি অনুসারে কলকাতা, কাশিমবাজার ও ঢাকায় কোম্পানির ফ্যাক্টরিও অন্যান্য ইউরোপীয়দের ক্ষতিপূরণ বাবদ কোম্পানিকে কয়েক কিস্তিতে এক কোটি সাতাত্তর লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে মীর জাফর বাধ্য হলেন। তাছাড়া তিনি বাধ্য হলেন তাঁর ক্ষমতা লাভে যারা সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছেন তাদেরকে লক্ষ লক্ষ টাকার উপহার-উপঢৌকন দিতে। উপহার-উপঢৌকনসমূহে ক্লাইভের নিজের বখরা ছিল বিশ লক্ষ আশি হাজার টাকা। এ বখরা ছিল তাঁর বার্ষিক জায়গীরভাতার অতিরিক্ত। গুপ্ত
অনুমান করেন যে, পলাশী থেকে দিউয়ানি (১৭৬৫) পর্যন্ত কোম্পানি, কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেনাবাহিনী সম্মিলিতভাবে পুরস্কার, পারিতোষিক, অবৈধ আদায় ও শুল্ক-রেহাই থেকে প্রায় তেরো কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সুবা সরকার থেকে ।
৪. শোষণ ও সম্পদ পাচার : ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির পলাশী-উত্তর কর্মকাণ্ডকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ঐতিহাসিকগণ নাম দিয়েছেন 'Palassey Plunder'। অক্টোপাস শিকারকে যেমন বহু কর্ষিকা দিয়ে চেপে ধরে রস পান করে, তেমনি বাংলার সম্পদ শুষে নেবার জন্য অক্টোপাসরূপী কোম্পানি ব্যবহার করে, এর বহু কর্ষিকা। এগুলোর প্রধান দুটির প্রতি আমরা দৃষ্টিপাত করতে পারি। যেমন, স্থানীয়ভাবে পুঁজিসংগ্রহ নীতি ও অভ্যন্তরীণ প্রাইভেট ব্যবসা ।
৫. স্থানীয়ভাবে পুঁজি সংগ্রহ নীতি : বৈদেশিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ বরাবরই আমদানির চেয়ে রপ্তানি করেছে বেশি। বিশেষকরে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল বাংলার অনুকূলে। কারণ, ইউরোপে বাংলার পণ্যের বিপুল চাহিদা থাকলেও এদেশে ইউরোপীয় পণ্যের বাজার ছিল খুবই সীমিত। ফলে বিনিময়ের জন্য ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো আমদানি করতো স্বর্ণরৌপ্য, যা স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করে টাকায় রূপান্তরিত করা হতো। পলাশীর অব্যবহিত পূর্বেও কোম্পানি বার্ষিক পঞ্চাশ লক্ষ টাকার স্বর্ণরৌপ্য আমদানি করতো এদেশের পণ্য কেনার জন্য। কিন্তু পলাশীর পর স্বর্ণরৌপ্য আমদানির আর প্রয়োজন পড়েনি। ১৭৫৭ থেকে ১৭৬৩ খ্রিস্টব্দের মধ্যে কোম্পানি মীর জাফরের নিকট থেকে লাভ করেছে চুক্তি মোতাবেক এক কোটি টাকা এবং উপহার-উপঢৌকন বাবদ আরো সমপরিমাণ টাকা, ২৪-পরগণা জমিদারি থেকে লাভ করেছে বার্ষিক দশ লক্ষ টাকা রাজস্ব, ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনটি জেলার (চট্টগ্রাম, বর্ধমান, মেদিনীপুর) দখল নিয়ে লাভ করেছে বার্ষিক ৫০ লক্ষ টাকা রাজস্ব এবং উক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় পুঁজির চেয়ে স্থানীয় রাজস্ব আয় ছিল অনেক বেশি টাকা। কোম্পানির রাজস্ব আয় ছিল অনেক বেশি। উদ্বৃত্ত অর্থ কোম্পানির গোটা এশীয় বাণিজ্যের পুঁজিপণ্য যোগান দিতে ব্যবহৃত হয়েছে। সমুদয় অর্থ ব্রিটেনে প্রেরিত হয়েছে পণ্য আকারে। স্থানীয় পুঁজিতে ক্রয় করে ইউরোপীয় বাজারে তা বিক্রয় করে লব্ধ অর্থ মুনাফায় পরিণত করা হয়েছে। বাংলাকে শোষণ করে কোম্পানির বার্ষিক আয় কত হয়েছে সে সম্পর্কে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে মতভেদ যাই থাক না কেন, এটা পরিষ্কার যে, পলাশীর পর কোম্পানির গোটা এশীয় বাণিজ্যের পুঁজি সংগৃহীত হয়েছে বাংলা থেকে। এর বিপরীতে সুবা বাংলা কিছুই লাভ করেনি।
৬. অভ্যন্তরীণ ব্যবসায় বিদেশিদের যোগদান ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব : বার্ষিক থোক তিন হাজার টাকা পেশকাশের বিনিময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করেছিল। কিন্তু সে অধিকার ছিল শুধু বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে অর্থাৎ দেশের অভ্যন্তরে পণ্য কেনাবেচা করার অধিকার বিদেশি বণিকদের ছিল না। কিন্তু চোরাইভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির
৩৭৬ বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যকলাপ ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত, পলাশীর সঙ্কটকালে অভিজাত শ্রেণির ভূমিকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশের অভ্যন্তরে ব্যক্তিগত ব্যবসায় করতো এবং সে ব্যবসায় অনেক সময় কোম্পানির দস্তক (বিনা শুল্কে বাণিজ্য-পাস) ব্যবহার করতো। কোম্পানির লোকদের অবৈধভাবে দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে যোগদান ছিল সুবা সরকার ও কোম্পানির মধ্যে সম্পর্কের অবনতির একটি অন্যতম কারণ। পলাশীর পর কোম্পানির লোকদের দাপট এমন বেড়ে যায় যে, দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে তারা অবাধে যোগদান করে এবং সে বাণিজ্যের জন্য তারা সরকারকে শুল্ক নিত না। কিন্তু দেশি বণিকদের শুল্ক দিতে হতো বলে অভ্যন্তরীণ ব্যবসায় দেশি ব্যবসায়ীরা উৎখাত হবার উপক্রম হলো। ব্যক্তিগত ব্যবসায় কোম্পানির লোকেরা রাতারাতি ক্রোড়পতিতে পরিণত হলো। কোম্পানির কর্মচারীদের পরিচালিত ধ্বংসাত্মক ব্যক্তিগত ব্যবসাই নবাব মীর কাশিমকে বাধ্য করেছিল কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। কিন্তু তিনি পরাজিত হন। মীর কাশিমের পরাজয়ের পর কোম্পানির কর্মকর্তাদের স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত হলো Society of trade। একষট্টি সদস্যের এ লুণ্ঠনসমিতি লবণ, সুপারি, তামাক প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের একচেটিয়া বাণিজ্য কুক্ষিগত করলো। অন্যান্য কর্মকর্তারা অনুরূপ আনুষ্ঠানিক সমিতি গঠন না করলেও কার্যত বলপ্রয়োগ করে তারা সারা দেশে চালাল বাণিজ্যের নামে লুটপাট। কোম্পানির এ হেন লুণ্ঠনযজ্ঞের পরিণতিতে দেশের অর্থনীতি ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বলতর রূপ ধারণ করে অবশেষে এ মহাদুর্ভিক্ষের করালগ্রাসে নিপতিত হলো (১৭৬৯-৭০ খ্রি. ১১৭৬ বঙ্গাব্দ)। দুর্ভিক্ষে বাংলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যায় এবং কৃষিশ্রমের অভাবে প্রায় দুই- তৃতীয়াংশ ভূমি অনাবাদে জঙ্গলভূমিতে পরিণত হয়।
আর্থিক দিক থেকে পলাশী ছিল কোম্পানির জন্যও পরাজয়। পলাশী যুদ্ধের পর দুর্নীতি, প্রশাসনিক ব্যয়বৃদ্ধি ও ঘন ঘন যুদ্ধ ঘোষণার জন্য ক্রমশই কোম্পানির বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড সংকীর্ণ হতে থাকে। কোম্পানি শাসকে পরিণত হবার পর প্রথম প্রথম বাণিজ্যে অবহেলিত না হলেও অচিরেই শাসনে অগ্রাধিকার লাভ করলো। অল্পকালের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে কোম্পানি একটি অলাভজনক সংস্থায় পরিণত হয়। বাংলায় রাজনৈতিক আধিপত্য স্থাপনের প্রকৃত মুনাফা লাভ করে ব্যক্তিগতভাবে কোম্পানির কর্মকর্তারা। পলাশীর আগে কোম্পানি প্রতি বছর শেয়ারহোল্ডারদের আকর্ষণীয় মুনাফা ঘোষণা করতো, কিন্তু পলাশীর পরই কোম্পানি প্রায় দেউলিয়ায় পরিণত হয়। এদিকে সুবার অর্থনীতিও ভেঙে পড়লো। অর্থাৎ কিনা, পলাশীর অব্যবহিত ফল ছিল একদিকে বাংলার রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনীতির পতন অপরদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থনৈতিক বিপর্যয় ৷
৭. রাজনৈতিক তাৎপর্য : পলাশী যুদ্ধ ঘটেছিল বাণিজ্যিক কারণে। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে যোগদান করতে এসেছিল আর্মেনীয়, পর্তুগীজ, ওলন্দাজ,
ফরাসি ইংরেজ বণিকেরা। স্থাপন করেছিল তারা স্থানীয় শাসক ও বণিক শ্রেণির সঙ্গে সম্পর্ক। অচিরেই দ্বন্দ্ব দেখা দেয় ঐ সম্পর্কে। সে দ্বন্দ্বেরই নিরসন চেষ্টা ছিল পলাশী। কিন্তু
বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস
৩৭৭
পলাশী-ঘটনারাজি আর বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাণিজ্য রূপান্তরিত হলো রাজনৈতিক আধিপত্যবাদে। স্থাপিত হলো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র। বাংলা থেকে সমগ্র ভারতে এবং ভারত থেকে সমগ্র ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হলো
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ।
সন্দেহ নেই যে, পলাশী একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। এতকাল যাবৎ যে সরকার পদ্ধতি, যে শাসনব্যবস্থা, যে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক সম্পর্ক বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক ভিত্তি রচনায় অবদান রেখেছে, পলাশী এসব প্রতিষ্ঠানের ইতি ঘোষণা করলো এবং ভিত্তি রচনা নতুন প্রতিষ্ঠানের- ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের একটি অন্যতম প্রয়োজন ছিল হাজার বছরের রাজনৈতিক বিবর্তনধারায় গড়ে উঠা বঙ্গরাজ্যকে ভারত রাজ্য তথা ভারত সাম্রাজ্য রূপান্তর করা। তবে এ রূপান্তরে বাংলার আবহমান আঞ্চলিক গুরুত্ব লাঘব হয়নি। সুবা বাংলা ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের মুকুট। তেমনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেরও মুকুট
বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী। ভালো হোক আর মন্দই হোক বাংলায় এ রূপান্তর ছিল পলাশীরই সুদূরপ্রসারী ফল। নতুন শাসনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, পুলিশ, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা, স্থানীয় শাসনব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র, জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানাদি, উন্নত যোগাযোগেব্যবস্থা এবং অনুরূপ আরো অনেক আধুনিকীকরণ- পরিবর্তন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের দান, যা ছিল পলাশী থেকে উৎসারিত।
এসব পরিবর্তনকে ভিত্তি করে অনেক পণ্ডিত মনে করেন যে, পলাশী যুদ্ধোত্তর ব্রিটিশ শাসন ভারতীয়দের জন্য পরম সুফল বয়ে এনেছিল। স্যার যদুনাথ সরকার যেমন মন্তব্য করেন, এদেশের ইতিহাস “ধীরে ধীরে এবং অলক্ষ্যে [পলাশী যুদ্ধ] আনয়ন করলো এমন একটি গৌরবময় প্রভাত, যা কিনা বিশ্ব-ইতিহাসের অন্য কোথাও বিলক্ষণ করা যায় না। ২৩ জুন, ১৭৫৭ তারিখে অবসান ঘটলো ভারতের মধ্যযুগের এবং সূত্রপাত হলো আধুনিক যুগের। পলাশীর পর এক প্রজন্মের কম সময়ের মধ্যেই দেশ এর মধ্যযুগের ধর্মদুষ্ট শাসনের পক্ষঘাত থেকে নিরাময় লাভ করতে শুরু করলো। শিক্ষা, সাহিত্য, সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি- সব কিছুর মধ্যেই জোয়ার আসল পাশ্চাত্যের নব প্রেরণায় ও স্পর্শে। বিধাতাদত্ত এক যাদুকরের যাদুকাঠির ছোঁয়ায় যেন স্থবির প্রাচ্য সমাজের শুকনো হাড়ে দেখা দিলে জীবনের স্পন্দন। এ ছিল এক সত্যিকারের রেনেসাঁ। এ রেনেসাঁ কনস্তান্তিনোপল পতনোত্তর ইউরোপীয় রেনেসাঁর চেয়েও ব্যাপক, গভীর ও বৈপ্লবিক।”
১৫.১৭ পলাশীর সঙ্কটকালে অভিজাত শ্রেণির ভূমিকা
The Role of Elite Class in Palashi Crisis
সিরাজউদ্দৌলা নবাব হওয়ার পর প্রথম থেকেই এটা স্পষ্ট যে, সামরিক অভিজাত শ্রেণি, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও জমিদারদের নিবিড় জোটবদ্ধতা বাংলার নবাবের পূর্ণ ক্ষমতার উপর যে চাপ সৃষ্টি করেছিল, সিরাজ তা মেনে নিতে মোটেই রাজি ছিলেন
৩৭৮ বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যকলাপ ১৭৫৭সাল পর্যন্ত, পলাশীর সঙ্কটকালে অভিজাত শ্রেণির ভূমিকা
না। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় অবশ্য দেখানো হয়েছে যে, এই জোটবদ্ধতার কোন সাংগঠনিক ভিত্তি ছিল না, এটা ব্যক্তিগত স্বার্থকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল, যার ফলে এটা বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেনি। সে যাই হোক, সিরাজউদ্দৌলা নবাব হয়েই সামরিক ও বেসামরিক উভয় শাসনব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজাতে শুরু করেন। মোহনলাল, মীরমদন ও খাজা আবদুল হাদি খানের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ এই নতুন ব্যবস্থার ইঙ্গিত বহন করে। এঁদের বিরুদ্ধে ‘অপদার্থ চালিয়াত' এবং সিরাজের ‘অযোগ্য দোসর' বলে যে অভিযোগ করা হয় তার খুব একটা ভিত্তি নেই। মোহনলাল যে সুদক্ষ শাসক ও যোদ্ধা এবং সিরাজের ঘনিষ্ঠ শুভার্থী ছিলেন, তার প্রমাণ পূর্ণিয়া অভিযান ও পূর্ণিয়ার শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠনে মোহনলালের অবদান এবং পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রে সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সিরাজের পক্ষে তার অসমসাহসিক যুদ্ধ। মঁসিয়ে জাঁ ল অবশ্য মোহনলালকে “সবচেয়ে বড় বদমাশ” বলে অভিহিত করেছেন (সম্ভবত সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের চন্দননগর আক্রমণে বাধা না দেয়ায় এবং মুর্শিদাবাদ থেকে ল'কে চলে যেতে বাধ্য করায় রাগে ও হতাশায় তিনি এই মন্তব্য করেছেন, কারণ এসবের জন্য মোহনলালই দায়ী বলে তিনি ভেবেছিলেন)। তবে একই সঙ্গে মোহনলালকে তিনি ‘জগৎশেঠদের চরম শত্রু” এবং “জগৎশেঠদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারার মতো একমাত্র ব্যক্তি” বলে স্বীকার করেছেন। বীর যোদ্ধা হিসেবে মীরমদনের দক্ষতা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না এবং সঁসিয়েল একমাত্র তাঁর উপরই অনেকটা নির্ভর করেছিলেন। খাজা আবদুল হাদি আগেই (আলিবর্দীর রাজত্বের শেষদিকে) নবাবের সৈন্যবাহিনীতে যে ‘বিরাট জালিয়াতি ও প্রবঞ্চনা' চলছিল তা প্রকাশ করেন (এ দুর্নীতির মাধ্যমে 'মুৎসুদ্দি ও জমাদারদের' সঙ্গে মীর জাফর এবং খাদিম হুসেন খানও ‘প্রচুর পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ' করেন) এবং তা বন্ধ করার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিজের কর্মদক্ষতা ও কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন।
আসলে সিরাজউদ্দৌলার মতো বেপরোয়া তরুণ নবাব হওয়ায় শাসকশ্রেণির সংখ্যাগরিষ্ঠ চক্রিদল, যাদের মধ্যে ব্যবসায়ী, জমিদার, রাজকর্মচারী সব শ্রেণির লোকই ছিল, তারা সবাই ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে। আগের নবাবদের আমলে এই বিশেষ শ্রেণিই সম্পদ পুঞ্জীভবনে লিপ্ত ছিল। এখন তাদের উৎকণ্ঠা জাগে যে, সিরাজউদ্দৌলা হয়তো তাদের সম্পদ পুঞ্জীভবনের পথগুলো বন্ধ করে দেবেন। জগৎশেঠরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল তাদের নিজস্ব কারণে। এর সঙ্গে একটি প্রচলিত গল্পের কোন সম্পর্কই নেই। কোন কোন আধুনিক ঐতিহাসিক বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে তাঁদের সুবিধামত এ গল্প ব্যবহার করেছেন। গল্পটি হচ্ছে : জগৎশেঠ নবাবের আদেশে ব্যবসায়ী ও জমিদারদের কাছ থেকে তিন কোটি টাকা তুলে দিতে অস্বীকার করলে সিরাজউদ্দৌলা নাকি প্রকাশ্য সভায় তাঁর গালে চড় মারেন। এই গল্পের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। জগৎশেঠরা সিরজউদ্দৌলাকে সরিয়ে অন্য কাউকে নবাব করতে বদ্ধপরিকর হয়ে পড়ে। তাই তারা এ গল্প প্রচার করে। কিন্তু এটা নেহাতই কল্পকথা এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই ।
জগৎশেঠরা বিপুল পরিমাণ বিষয়-সম্পদ পুঞ্জীভূত করেছিল পূর্বতন নবাবদের প্রদত্ত টাকশাল ব্যবহার, বাট্টা ধার্য করা ও খাজনা আদায়ের একচেটিয়া ব্যবসা করে। আর্মেনীয় ব্যবসায়ী খোজা ওয়াজেদের সোরা ও লবণের একচেটিয়া কারবারও ছিল। দরবারের আনুকূল্যে। সুতরাং ব্যবসায়ী ও মহাজন শ্রেণি, বিশেষকরে বড় ব্যবসায়ীরা। আতঙ্কিত হয়ে পড়লো পাছে সিরাজউদ্দৌলা তাদের সম্পদ পুঞ্জীভূত করার পথগুলো বন্ধ করে দেন, একচেটিয়া ব্যবসার আনুকূল্য তুলে নেন। মীর জাফর, রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফ প্রভৃতি অভিজাত অমাত্যবর্গ এই ব্যবসায়ী শ্রেণির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তাছাড়া তাদেরও আশঙ্কা ছিল, সিরাজউদ্দৌলার মতো দুঃসাহসী তরুণ এমন কিছু করতে পারেন যাতে তাদের অনুকূলে ক্ষমতার যে ভারসাম্যতা নষ্ট হয়ে যাবে এবং তাতে তাদের সমূহ বিপদের সম্ভাবনা। ইয়ার লতিফ ভজগৎশেঠদের কাছ থেকে মাসোহারা পেতেন এবং মীর জাফর জগৎশেঠদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে রবার্ট ওরমে যে মন্তব্য করেছেন তা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, ব্যবসায়ী শ্রেণির সঙ্গে অভিজাত সামন্তদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। এই অভিজাত অমাত্যদের মাধ্যমেই ব্যবসায়ীরা নবাবের দরবারে তাদের প্রভাব বিস্তার করতো। সুতরাং এই ব্যবসায়ী ও সামন্ত শ্রেণি উভয়েই ভীত এবং সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো যে তাদের সম্পদ পুঞ্জীভূত করার পথে সিরাজউদ্দৌলা মূর্তিমান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবেন। কারণ তরুণ বয়সের সিরাজ হিতাহিত বিবেচনা না করে সংহারমূর্তি ধারণ করতে পারেন এমন একটা উদ্বেগ তাদের মধ্যে জেগেছিল ।
সৈন্যাধ্যক্ষের পদ থেকে মীর জাফরের অপসারণ, রাজা মানিকচাঁদের কারাদণ্ড এবং সর্বোপরি আলিবর্দীর একান্ত বিশ্বস্ত ও প্রভূত ক্ষমতাশীল হুকুম বেগকে দেশ থেকে বিতাড়নের মধ্যে শাসকশ্রেণির চক্রিদল বিপদসঙ্কেত পেয়ে যায়। এসব ঘটনা এবং নতুন এক অভিজাত সামন্ত গোষ্ঠীর (মোহনলাল, মীরমদন ও রাজা আবদুল হাদি যাদের প্রতিনিধি) সঙ্গে তরুণ নবাবের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ প্রত্যক্ষ করে শাসক শ্রেণির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হতাশাগ্রস্ত হলে পড়লো। বস্তুতপক্ষে সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে আলিবর্দীর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিশেষ বনিবনা ছিল না। তাই তাঁরা সিরাজ নবাব হওয়ার পর নতুন পরিস্থিতিতে, বিশেষকরে ক্ষমতাবিন্যাসে নিজেদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন। সিরাজ যে এঁদের উপর আঘাত হানতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবেন না তার প্রমাণ আলিবর্দীর খুব ঘনিষ্ঠ হুকুম বেগকে দেশ থেকে বিতাড়ন । হুকুম বেগ আলিবর্দীর কাছে প্রশ্রয় পেয়েছিলেন এবং কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন জোর করে ও অন্যায়ভাবে অর্থ আদায়ের জন্য। তাছাড়া কয়েকটি পণ্যদ্রব্যের একচেটিয়া ব্যবসাতেও হুকুম বেগ লিপ্ত ছিলেন। ইয়ান কারসেরুমের তথ্য অনুযায়ী হুকুম বেগ ছিলেন মুর্শিদাবাদের 'ক্ষমতাশালী পাচোত্রা দারোগা'। এহেন শক্তিশালী হুকুম বেগকে দেশ থেকে বিতাড়ন দরবারের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করেছিল। তাছাড়া মীর জাফরের অপসারণ ও মানিকচাঁদের কারাদণ্ডে নতুন নবাবের উদ্দেশ্য
৩৮০ বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যকলাপ ১৭৫৭সাল পর্যন্ত, পলাশীর সঙ্কটকালে অভিজাত শ্রেণির ভূমিকা
সম্বন্ধে এঁদের মনে সন্দেহের কোন অবকাশ রইলো না। তাঁদের সন্দেহ আরো ঘনীভূত হলো যখন মোহনলাল, মীরমদন, খাজা আবদুল হাদি খান প্রমুখ অভিজাত শ্রেণির নতুন এক গোষ্ঠীকে সিরাজউদ্দৌলা তাঁর শাসনযন্ত্রের নানা বিভাগে প্রাধান্য দিতে শুরু করলেন। এঁদের সঙ্গে আগের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর তফাত এঁরা এখনো সম্পদ। পুঞ্জীভবনে লিপ্ত নয়। স্বাভাবিকভাবেই রাজা দুর্লভরাম পছন্দ করতে পারেননি যে খাজা আবদুল হাদি খান তাঁর জায়গা নেবেন। জগৎশেঠ, উমিচাদ, খোজা ওয়াজেদ প্রমুখ বণিকরাজরা ভয় পেয়েছিলেন এই ভেবে যে, তাঁদের সম্পদ পুঞ্জীভূত করার সহজ রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং সিরাজউদ্দৌলাকে হটানো প্রয়োজন যাতে ক্ষমতার যে ভারসাম্য তখন ছিল তা নষ্ট হয়ে না যায়, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সম্পদ পুঞ্জীভবনের সহ পথ রুদ্ধ না হয় এবং নতুন কোন গোষ্ঠী এসে যেন শাসকশ্রেণির চক্রিদের একচ্ছত্র আধিপত্যের অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায়।
এই সব সত্ত্বেও ইংরেজদের সক্রিয় সংযোগ ছাড়া হয়তো পলাশী বিপর্যয় সম্ভব হতো না। সিরাজউদ্দৌলা নবাব হওয়ায় ইংরেজদের স্বার্থও বিশেষভাবে বিঘ্নিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিল। সিরাজ সিংহাসনে আরোহণ করায় ইংরেজ কোম্পানি ততোটা না হলেও কোম্পানির কর্মচারীরা ভীষণভাবে শঙ্কিত হয়ে পড়লো, পাছে নতুন নবাব তাদের দুই ‘কল্পতরু নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবসা ও দস্তকের যথেষ্ট অপব্যবহার সমূলে বিনাশ করে বসেন। আমরা আগেই দেখেছি, সিরাজউদ্দৌলা নবাব হয়েই ইংরেজ কোম্পানির কর্মচারী কর্তৃক দস্তকের অপব্যবহার বন্ধ করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। অর্থের বিনিময়ে এই দস্তকের মাধ্যমে তারা এশীয় ব্যবসায়ীদের বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছিল এবং এতে রাজ্যের প্রভূত রাজস্বহানি হচ্ছিল। যদিও এই দস্তক বিক্রি করে কোম্পানির কর্মচারীরা মোটা মুনাফা লুটতো, তথাপি তাদের ত্রাসের আসল কারণ হচ্ছে সিরাজ তাদের বিনাশুল্কে ব্যক্তিগত ব্যবসার সুযোগ বন্ধ করে দেবেন—এই আশঙ্কা। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এ ব্যক্তিগত ব্যবসাই ছিল রাতারাতি বড়লোক হওয়ার সবচেয়ে সহজ পথ এবং এটা যতো অন্যায়ই হোক না কেন, তারা এটা ছাড়তে মোটেই রাজি ছিল না। গভর্নর ড্রেক থেকে শুরু করে সব ইংরেজ কর্মচারীই এই ব্যক্তিগত ব্যবসায়ে লিপ্ত ছিল এবং কেউই এর মতো লাভজনক ব্যবসা ছাড়তে চায়নি। সুতরাং ইংরেজরাও চাইছিল সিরাজউদ্দৌলাকে হটাতে। তাই শাসকশ্রেণির চক্রিদলের সঙ্গে হাত মেলাতে ইংরেজরা এগিয়ে এল ।
সিলেক্ট কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী ক্লাইভ ১৩ জুন কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ অভিমুখে যাত্রা করলেন এবং ১৯ জুন কাটোয়া পৌঁছলেন। কর্নেল কুট তার আগের দিনই কাটোয়া দখল করে নিয়েছিলেন। ক্লাইভ কিন্তু ষড়যন্ত্র সফল করার জন্য কিভাবে কাজে অগ্রসর হবেন মীর জাফরের কাছ থেকে তার কোন নির্দেশ তখনো না পেয়ে প্রায় দিশেহারা হলে পড়লেন। ১৯ জুন তাই ক্লাইভ কলকাতার সিলেক্ট কমিটিকে লিখছেন, “আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে কিভাবে যে এগুবো তা আমি কিছুই বুঝতে পারছি
না।" আসলে মীর জাফর 'নিরপেক্ষ থাকা' ছাড়া অন্য কোন প্রতিশ্রুতিই কিন্তু ইংরেজদের দেননি। ক্লাইভ ২১ জুন সমরবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সভা ডাকলেন ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঠিক করতে। স্থির হলো, তক্ষুণি 'কার্যকরী আর কিছু' করা হবে না। ২২ জুন অপরাহ্নে ক্লাইভ মীর জাফরের কাছ থেকে 'বহু প্রতীক্ষিত' চিঠি পেলেন এবং সে চিঠিতে মীর জাফর ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে আগের চেয়ে অনেক বেশি উৎসাহ দেখালেন। চিঠি পেয়েই ক্লাইভ পলাশী অভিমুখে রওনা হলেন এবং মধ্যরাত্রির পরে সেখানে পৌঁছে গেলেন। নবাবের সৈন্যবাহিনী তার আগেই পলাশীতে তাঁবু ফেলেছিল।
২৩ জুন প্রত্যুষে নবাবের সৈন্যরা তাঁবু ছেড়ে মাঠে সুসজ্জিতভাবে ছড়িয়ে পড়লো। এদের সাজসজ্জা, আড়ম্বর এবং চারদিকে উত্তোলিত পতাকা দেখে ক্র্যাফটন একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এবং মন্তব্য করেছিলেন, সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যবাহিনী “ভীষণ জাঁকজমকপূর্ণ ও ভয় পাইয়ে দেবার মতো”। পলাশীতে নবাবের যে শিকারগৃহ ছিল তার ছাদ থেকে ক্লাইভ এই দৃশ্য দেখে একটু হতোদ্যম হয়তো হয়েছিলেন। সকাল ৮টা নাগাদ 'তথাকথিত যুদ্ধ' শুরু হলো। নবাবের সৈন্যবাহিনী যেভাবে এগোচ্ছিল তা দেখে ক্লাইভ ইংরেজদের ‘নিশ্চিত জয়' সম্বন্ধে ভরসা পেলেন না এবং 'দিনের বেলা যথাসম্ভব আক্রমণ প্রতিরোধ করে' রাতে কলকাতা ফিরে যাওয়ার কথা ভাবলেন। এটা ঠিক, পলাশীর ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও সিরাজউদ্দৌলার অবস্থা সাংঘাতিক খারাপ কিছু ছিল না; তাঁর পক্ষে বেশ কয়েকজন দক্ষ ও অনুগত সেনাপতি এমন অবস্থায়ও যুদ্ধ করতে ছিলেন প্রস্তুত। মীরমদন, মোহনলাল এবং আরো ক'জন সেনাপতির নেতৃত্বে নবাবের সৈন্যবাহিনী বেশ বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল এবং সাঁ ফ্রের অধীনে নবাবের গোলন্দাজ বাহিনী শত্রুর উপর ক্রমাগত গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছিল। আধঘণ্টার মতো উভয় পক্ষের গোলাবর্ষণের পর দেখা গেল, ইংরেজদের মধ্যে ১০ জন ইউরোপীয় ও ২০ জন সেপাই নিহত বা আহত হয়েছে। নবাবের সৈন্যবাহিনীর তুলনায় ইংরেজ বাহিনীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম ছিল এবং সেই কারণে উক্ত হতাহতের সংখ্যা ইংরেজদের পক্ষে 'মারাত্মক আঘাত' রূপে দেখা দিল। তখন ক্লাইভ শত্রুর গোলাবর্ষণ থেকে নিস্তার লাভের জন্য তাঁর সৈন্যদের আম্রকুঞ্জে আশ্রয় নেয়ার নির্দেশ দিলেন। ঠিক এ ধরনের প্রতিরোধ ক্লাইভ আশা করেননি। এ দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের এক প্রতিনিধি নাকি ক্লাইভকে আশ্বাস দিয়েছিল, নবাবের সব সৈন্য ও সেনাপতি নবাবের প্রতি একান্তভাবেই বিরূপ এবং কেউই নবাবের হয়ে যুদ্ধ করবে না। ক্লাইভ যুদ্ধক্ষেত্রে সেই প্রতিনিধিকে নাকি বলেছিলেন, “এখন দেখছি ঠিক তার উল্টোটাই ঘটছে।” জন উড নামে পলাশীতে যুদ্ধ করেছে এমন এক ইংরেজ সৈন্য লিখেছে : “সারা সকাল ধরে ইংরেজদের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল” এবং “রাত্রে কিছু করা ছাড়া অন্য কিছু তারা ভাবতেই পারছিল না।”
চার ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পরও জয়-পরাজয়ের কোন নিষ্পত্তি হয়নি ঠিকই, কিন্তু ইংরেজদের অবস্থা মোটেই উৎসাহব্যঞ্জক ছিল না। অন্যদিকে সিরাজউদ্দৌলার প্রতি মোটেই সুপ্রসন্ন ছিলেন না এমন একজন ফরাসি সমসাময়িক ঐতিহাসিকও বলছেন, “জয় ও বরমাল্য নবাবের হাতে প্রায় এসে যাচ্ছিল”। নবাবের সৈন্যবাহিনীর দুই- তৃতীয়াংশ মীর জাফর, ইয়ার লতিফ এবং রায় দুর্লভের অধীনে দর্শকের মতো নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে যুদ্ধ দেখলেও মীরমদন ও মোহনলাল ধীরে অথচ সদর্পে আম্রকুঞ্জের দিকে এগোচ্ছিলেন। সময় তখন বিকেল প্রায় তিনটা। আর তখনই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটলো। নবাবের ‘শক্তির প্রধান উৎস', ডান হাত বলতে যা বুঝায়, সেই মীরমদন অকস্মাৎ শত্রুপক্ষের গোলার আঘাতে গুরুতরভাবে আহত হলেন। নবাবের তাঁবুতে আনার পরই তাঁর মৃত্যু হলো। এ ঘটনায় পলাশী যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল। স্ক্র্যাফটন পলাশীর যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন এবং লিখেছেন : “আমাদের সাফল্যের একটি বড় কারণ হচ্ছে, ভাগ্যক্রমে মীরমদন নিহত হলেন।”দিশেহারা হয়ে সিরাজউদ্দৌলা মীর জাফরকে ডেকে পাঠালেন এবং নিজের মাথার মুকুট মীর জাফরের সামনে রেখে তাঁর ‘জীবন ও সম্মান' রক্ষা করার আকুতি জানালেন। মীর জাফর নবাবকে পরামর্শ দিলেন ঐদিনের মতো যুদ্ধ স্থগিত রাখতে, আশ্বাস দিলেন, পরের দিন মীর জাফর নিজে যুদ্ধ শুরু করবেন। এই খবরটি সঙ্গে সঙ্গে তিনি ক্লাইভকে পাচার করে দেন। উদ্ভ্রান্ত নবাব রায়দুর্লভকে ডেকে পাঠালেন, রায়দুর্লভও একই পরামর্শ দিলেন। দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে এবং এই জটিল পরিস্থিতি আপাতত সামলানোর উদ্দেশ্যে সিরাজউদ্দৌলা মোহনলাল, খাজা আবদুল হাদি, মীর মুহম্মদ কাজিম, রাজা মানিকচাঁদ প্রমুখ সেনাপতিকে পশ্চাদপসরণ করে তাঁবুতে ফিরে আসতে আদেশ দিলেন। মীরমদনের মৃত্যুর পর মোহনলাল নবাবের সৈন্যদের নেতৃত্ব গ্রহণ করলেন এবং নবাবের সৈন্যদের ফিরে আসতে বাধা দিলেন। সেনাপতিরা কিন্তু নবাবের আদেশ প্রথমে অগ্রাহ্য করেন এই কারণে যে, ঐ সময় নিজেদের জায়গা ছেড়ে তাঁবুর দিকে ফিরতে গেলেই শত্রুপক্ষ ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং তখন পরিস্থিতি কিছুতেই সামলানো যাবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নবাবের বারংবার অনুনয়ে তাঁরা নবাবের আদেশ মেনে নিলেন। তাঁরা তাঁবুর দিকে ফেরা মাত্রই ইংরেজরা প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করলো, নবাবের সৈন্যবাহিনী ছত্রভঙ্গ হলে গেল। বিকেল ৫ টার মধ্যে পলাশীর যুদ্ধ শেষ। সিরাজের পরাজয় ও পরে মৃত্যুর ফলে বাংলায় ইংরেজ রাজ্য প্রতিষ্ঠার শক্ত ভিত্তি স্থাপিত হলো। পলাশীর সঙ্কটকালে অভিজাতশ্রেণির এরূপ ঘৃণ্য ভূমিকার জন্যই বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হলো ।
ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ কবে ভারত ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে বাণিজ্য করার অধিকার দিয়ে ২১৭ জন বণিককে একটি প্রাইভেট জয়েন্ট স্টক কোম্পানি গঠন করার জন্য চার্টার প্রদান করেন?
উত্তর : ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর।
চার্টার প্রাপ্ত কোম্পানির নাম কী ছিল?
উত্তর : The Governor and Company of Merchants of London Trading
into the East Indies.
সনদের মেয়াদ সম্পর্কে কী উল্লেখ ছিল?
উত্তর : মেয়াদ পনেরো বছর, কিন্তু নবায়নযোগ্য ।
8
প্রায় দেড়শত বছর পর্যন্ত অবাধ বাণিজ্য করার পর এদেশে কী স্থাপন করলো? উত্তর : একটি ওপনিবেশিক রাষ্ট্র।

কোম্পানির প্রথম বাণিজ্যকুঠি কবে, কোথায় স্থাপিত হয়?
উত্তর : ভারতের পশ্চিম উপকূল বন্দর সুরাতে।

বাংলায় কবে, কোথায় কোম্পানির প্রথম বাণিজ্যকুঠি স্থাপিত হয়?
উত্তর : ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে হুগলিতে।
9
বাংলায় ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার পথে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ 'মাইলফলক' কোনটি?
উত্তর : হুগলিতে কুঠি স্থাপন ।
b.
কোম্পানিকে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার দিয়ে সম্রাট ফররুখশীয়র কবে ফরমান জারি করেন?
উত্তর : ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর :
১০
কত সালের ফরমান নবাব ও কোম্পানির মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ‍ই শীতল করে
তোলে।
: ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দের বাদশাহি ফরমান।
কোন ইস্যুকে কেন্দ্র করে নবাব ও কোম্পানির মধ্যে সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটে?
উত্তর : নবাবের অনুমতি না নিয়ে দুর্গ নির্মাণ ।
৩৮৪ বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যকলাপ ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত, পলাশীর সঙ্কটকালে অভিজাত শ্রেণির ভূমিকা
১১
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি কোম্পানি ও সুবার মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি কী নামে পরিচিত?
উত্তর : আলিনগরের সন্ধি।
১২
সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বিষয়ক ক্লাইভ-মীর জাফর গোপন চুক্তি কবে স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর : ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুন।
১৩
“সিরাজউদ্দৌলার যাই দোষত্রুটি থাকুক না কেন, তিনি মনিবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি, দেশকে বিকিয়ে দেননি”- উক্তিটি কার ।
উত্তর : G. B. Malleson এর !
১৪
পলাশীর যুদ্ধ কী খাঁটি যুদ্ধ?
উত্তর : যুদ্ধের ক্লাসিল সংজ্ঞায় পলাশীর যুদ্ধ খাঁটি যুদ্ধ নয়, পাতানো খেলা মাত্র ।
পলাশীর যুদ্ধের পর কে বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন?
১৫
উত্তর : মীর জাফর।
পলাশীর যুদ্ধের পর দিল্লির বাদশাহ রবার্ট ক্লাইভকে কী উপাধি দিয়ে সম্মানিত
করেন?
উত্তর : সাবুদ জং ।
১৭
‘সাবুদ জং' -এর অর্থ কী?
উত্তর : রণে পরাক্রম ।
১৮
মীর কাশিম কত খ্রিস্টাব্দে বাংলার নবাব হন?
উত্তর : ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে।
১৯
পলাশীর যুদ্ধ (১৭৫৭) থেকে দিউয়ানী (১৭৬৫) বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন ছিল?
উত্তর : রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান ছিল ।
২০
পলাশী যুদ্ধের পর বাংলার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ কী ছিল?
উত্তর : মুর্শিদাবাদের সিংহাসনে ঘন ঘন নবাব পরিবর্তন ।
২১
পলাশী যুদ্ধের কত দিন পর মীর জাফর সিংহাসনে আরোহণ করেন?
উত্তর : ৬ দিন পর ।
২২
মীর জাফরের সিংহাসনারোহণের তারিখ লিখ ।
উত্তর : ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুন।
২৩. মুর্শিদাবাদ হারেম ও রাজ কোষাগারে কারা লুটপাট চালায়? উত্তর : ক্লাইভ ও তার মিত্র বাহিনী।
বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস
৩৮৫
২৪. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পলাশী উত্তর কর্মকাণ্ডকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও
ঐতিহাসিকগণ কী নাম দিয়েছেন?
উত্তর : Palassey Plunder.
২৫. বার্ষিক কত টাকা পেশকাশের বিনিময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে বিনা
শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করেছিল?
উত্তর : বার্ষিক থোক তিন হাজার টাকা পেশকাশের বিনিময়ে।
২৬
মীর কাশিমের পরাজয়ের পর কোম্পানির কর্মকর্তাদের স্বার্থে কী প্রতিষ্ঠিত হলো?
উত্তর : Society of Trande
27. 'Society of Trande' এর সদস্য সংখ্যা কত ছিল?
উত্তর : ৬১ জন ।
২৮. 'Society of Trande' নামের লুণ্ঠন সমিতি কী কুক্ষিগত করলো? উত্তর : লবণ, সুপারি, তামাক প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের একচেটিয়া বাণিজ্য । ২৯. ১৭৬৯-৭০ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষে বাংলার কত লোক মারা যায়?
ইতিহাস মাস্টার্স ফাইনাল টেক্সট (৩১১৫০৭)-২৫
উত্তর : প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ।
৩০
পলাশীর সঙ্কটকালে কারা কুচক্রীর ভূমিকা পালন করে?
উত্তর : মীর জাফর, ইয়ার লতিফ ও রায়দুর্লভ প্রমুখ ।

খ-বিভাগ
(B-Part)
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলি
(Short Questions )
এ্যাংলো-মুঘল যুদ্ধ ও জব চার্নক কর্তৃক সুতানুটি কুটি স্থাপন সম্পর্কে সংক্ষেপে
লিখ ।
কোম্পানির জমিদারি লাভের ঘটনা সম্পর্কে লিখ ।
১৭১৭ খ্রিস্টাব্দের সম্রাট ফররুখশিয়ারের ফরমানটি লিখ। ৪. মুর্শিদাবাদ দরবারের রাজনৈতিক কোন্দলের বর্ণনা দাও।
কোম্পানি নবাব সম্পর্কের অবনতি কখন ঘটে?

9
কোম্পানির সঙ্গে সুবার সম্পর্ক নিরূপণ কর।
৭. কৃষ্ণদাস মামলা কী?
কলকাতা পুনরুদ্ধার ও আলী নগরের সন্ধি সম্পর্কে লিখ ।
সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বিষয়ক ক্লাইভ-মীরজাফর গোপন চুক্তিটি লিখ ।
১০. পলাশীর যুদ্ধের মূল্যায়ন কর।
১১. পলাশীর সঙ্কটকালে অভিজাত শ্রেণির ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
৩৮৬ বাংলায় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যকলাপ ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত, পলাশীর সঙ্কটকালে অভিজাত শ্রেণির ভূমিকা
রচনামূলক প্রশ্নাবলি (Broad Questions )
১৬০০ থেকে ১৬৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একশ বছরের ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যকলাপের বিবরণ দাও।
উত্তর : অধ্যায়ের শুরু থেকে ১৫.২ পর্যন্ত ।
১৭০০ থেকে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কোম্পানির কার্যকলাপের বিবরণ দাও। উত্তর : ১৫.৩ থেকে ১৫.১৪ পর্যন্ত।
পলাশীর যুদ্ধ নামে আখ্যায়িত ঘটনাটি প্রকৃত অর্থে কোন যুদ্ধ কিনা-আলোচনা
কর।
উত্তর : ১৫.১৫।
৪. ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পলাশী উত্তর কার্যকলাপের বিবরণ দাও।
উত্তর : ১৫.১৬ এর ৩ থেকে ৬ পর্যন্ত ।

পলাশীর সঙ্কটকালে অভিজাত শ্রেণির ভূমিকা আলোচনা কর । উত্তর : ১৫.১৭।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]