স্থাপত্য শিল্পে শাহজাহানের কৃতিত্ব মূল্যায়ন করুন।
শাহজাহানের রাজত্বকালকে মুঘল ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলা হয় কেন?


শাহজাহানের রাজত্বকাল প্রায় ত্রিশ বৎসরব্যাপী (১৬২৮-১৬৫৮) বিস্তৃত ছিল। তাঁর রাজত্বকালকে
সাধারণত মুঘল শাসনের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করা হয়। তিনি ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে লাহোরে
জন্মগ্রহণ করেন। পিতামহ আকবর এবং পিতা জাহাঙ্গীর দুজনেরই প্রিয়পাত্র ছিলেন তিনি। তাঁর প্রকৃত নাম
ছিল র্খুরম। সম্রাট আকবর নিজে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করে মুঘল রাজপরিবারের একজন উপযুক্ত ব্যক্তি
হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। তার কর্মপ্রচেষ্টা, উদ্যম, বুদ্ধিমত্তা এবং সাহসকিতার পরিচয় পেয়ে পিতা
জাহাঙ্গীর তাঁকে বহু যুদ্ধের অধিনায়ক নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি মেবার, দাক্ষিণাত্য ও কাংড়া প্রভৃতি
অভিযানে কৃতিত্ব প্রদর্শন করলে জাহাঙ্গীর তাঁকে ‘শাহজাহান' উপাধিতে ভ‚ষিত করেন। ১৬২৭ খ্রি. পিতার
মৃত্যুর পর তিনি তাঁর তীক্ষèবুদ্ধি এবং প্রখর বাস্তববোধকে কাজে লাগিয়ে নুরজাহানের সকল চেষ্টা ও
দূরভিসন্ধিকে ব্যর্থ করে সিংহাসন লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি
পিতার দেয়া উপাধি ‘শাহজাহান' গ্রহণ করে মহাসমারোহে দিল্লির সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।
শাহজাহানের প্রাথমিক সমস্যা ও বিদ্রোহ দমন
শাহজাহান সিংহাসন আরোহনের পর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যায় পতিত হন। শাসনকালের প্রথম
দিকে তাঁকে দু'টি বিদ্রোহ দমন করতে হয়। একটি হলো বুন্দেলখন্ডের রাজপুত নেতা জুঝর সিংহের
বিদ্রোহ, অপরটি হলো দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা আমীর খান জাহান লোদির বিদ্রোহ। শাহজাহান ১৬২৮
খ্রিস্টাব্দে জুঝর সিংহের বিরুদ্ধে মহবৎ খানের নেতৃত্বে মুঘল সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। মহবৎ খান জুঝর
সিংহকে পরাজিত করে বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করেন। সম্রাট শাহজাহান জুঝর সিংহকে মনসবদার নিযুক্ত
করেন কিন্তু ১৬৩৫ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় বিদ্রোহ করলে তাঁকে বন্দি করে হত্যা করা হয়।
১৬২৮ খ্রি. দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা খান জাহান লোদি আহম্মদনগরের সুলতানের সঙ্গে মিলিত হয়ে বিদ্রোহ
করলে সম্রাট শাহজাহান তাঁর বিরুদ্ধে মুঘল সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। যুদ্ধে খান জাহান লোদি পরাজিত
হয়ে কালিঞ্জরে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি নিহত হন।
পর্তুগিজ দমন
১৫৭১ খ্রি. সম্রাট আকবরের অনুমতি নিয়ে পর্তুগিজ বণিকগণ বাংলার সাতগাঁও নামক স্থানে বাণিজ্য কেন্দ্র
স্থাপন করেছিল। ক্রমে তারা হুগলীতে তাদের বাণিজ্য কেন্দ্র স্থানান্তরিত করে। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়
থেকে তারা দুর্নীতি পরায়ন হয়ে ওঠে। শুল্ক ফাঁকি, কৃষকদের ওপর অত্যাচার, বলপূর্বক খ্রিষ্টধর্মে
ধর্মান্তরিতকরণ এবং মমতাজ মহলের দু'জন ক্রীতদাসী বালিকাকে অপহরণ প্রভৃতি অপকর্মের জন্য সম্রাট
শাহজাহান তাদের সমুচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য বাংলার শাসনকর্তা কাশিম খাঁকে নির্দেশ প্রদান করেন।
১৬৩২ খ্রি. কাশিম খার পুত্র এনায়েত উল্লাহ পর্তুগিজ বাণিজ্য কেন্দ্র হুগলী আক্রমণ করে তাঁদেরকে কঠোর
হস্তে দমন করেন। অবশ্য ১৬৩৩ খ্রি. শাহজাহান পর্তুগিজদের হুগলীতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অনুমতি
দিয়েছিলেন।
শাহজাহানের সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি
দাক্ষিণাত্য


রাজনৈতিক দিক থেকে শাহজাহানের রাজত্বকাল দাক্ষিণাত্যে মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য সমধিক প্রসিদ্ধ।
শাহজাহান পিতা জাহাঙ্গীর ও পিতামহ আকবরের সাম্রাজ্য বিস্তার নীতির পথ অনুসরণ করেই দাক্ষিণাত্যে
রাজ্য সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
মুঘল সাম্রাজ্যের দক্ষিণ সীমান্তে ছিল আহম্মদনগরের নিজামশাহী রাজ্যের অবস্থান। কাজেই শাহজাহানের
দাক্ষিণাত্য অভিযানের প্রধান লক্ষ্য ছিল আহম্মদনগর রাজ্য। এই সময়ে আহম্মদনগরের সুলতান নিজামউল-মুলকের মন্ত্রী মালিক অম্বরের স্বার্থানে¦ষী পুত্র ফতে খাঁ ষড়যন্ত্র করে সুলতান দ্বিতীয় মর্তুজাকে হত্যা
করেন। অতপর নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য তিনি সুলতানের দশ বৎসরের নাবালক পুত্র আহম্মদনগরের
সিংহাসনে বসিয়ে রাজ্য শাসন করতে থাকেন। ১৩৩১ খ্রি. মুঘল সৈন্যবাহিনী আহম্মদনগরের দৌলতাবাদ
দুর্গ আক্রমণ করে। ফতে খাঁ মুঘল বাহিনীকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুঘল বাহিনীর আক্রমণে
ফতে খাঁর বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে সাড়ে দশ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা উৎকোচ গ্রহণ করে দৌলতাবাদ দুর্গ
মুঘলদের হাতে অর্পণ করে। দৌলতাবাদ দুর্গের পতনের ফলে আহম্মদনগরের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয় এবং
এটি মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। নাবালক সুলতান হুসেন শাহ যাবজ্জীবন গোয়ালিয়র দুর্গে বন্দি জীবন কাটান।
অন্যদিকে ফতে খাঁ মুঘল দরবারে স্থায়ী আসন লাভ করেন।
দাক্ষিণাত্যে আহম্মদনগর বিজয়ের পর সম্রাট শাহজাহান বিজাপুর ও গোলকুন্ডা রাজ্যের অস্তিত্ব বিলোপ
করতে সচেষ্ট হন। ১৬৩৫ খ্রিস্টাব্দে আহম্মদনগরের নিজাম শাহী বংশকে পুনপ্রতিষ্ঠা করতে শাহুজী চেষ্টা
চালালে উল্লেখিত দু'টি রাজ্য শাহুজীকে গোপনে সহযোগিতা করে। এই সংবাদ অবগত হয়ে এদের স্বীকৃতি
আদায়ের জন্য স্বয়ং শাহজাহান ১৬৩৬ খ্রি. দৌলতাবাদে গমন করেন। এবং ৫০,০০০ সৈন্যের এক বিশাল
বাহিনী গঠন করে বিজাপুর ও গোলকুন্ডা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হন। শাহজাহানের এই উদ্যোগ দেখে
গোলকুন্ডার সুলতান আবদুল্লা কুতব শাহ ভীত হয়ে পড়েন। শাহজাহানকে সার্বভৌম সম্রাট স্বীকার করে
বাৎসরিক কর প্রদান করতে সম্রাটের নামে খুৎবা পাঠ ও মুদ্রা প্রচলন সহ স্বীকৃত হন।
কিন্তু বিজাপুরের সুলতান আদিল শাহ সহজে মুঘলদের বশ্যতা স্বীকারে রাজি ছিলেন না। ফলে শাহজাহান
মুঘল সৈন্যবাহিনীকে বিজাপুর আক্রমণের নির্দেশ দেন। বিজাপুর বাহিনী মুঘল বাহিনীকে বীরত্বের সাথে
প্রতিরোধ করে এবং শাহপুর হ্রদের বাধ কেটে রাজধানী প্লাবিত করে মুঘল সৈন্যবাহিনীকে বাধা প্রদান
করে। এক পর্যায়ে উভয় বাহিনী ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এবং এক সন্ধির মাধ্যমে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। আদিল
শাহ মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করেন। ফলে বিজাপুরের অখন্ডতা বজায় থাকে। উপরন্তু
আহম্মদনগরের পঞ্চাশটি পরগনা বিজাপুরের সুলতান লাভ করেন। অন্যদিকে বিজাপুরের সুলতান ২০ লক্ষ
স্বর্ণমুদ্রা মুঘল সম্রাটকে প্রদান করেন। এসঙ্গে শাহুজীকে সাহায্য করা থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
শাহজাহান ১৬৩৬ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় পুত্র আওরঙ্গজেবকে ১৮ বৎসর বয়সে দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা নিয়োগ
করেন। দাক্ষিণাত্য প্রদেশকে খান্দেশ, বেরার, তেলিঙ্গনা ও দৌলতাবাদÑ এই চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করা
হয়। মুঘল সম্রাটগণ সেখান থেকে বৎসরে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব লাভ করতেন।
শাহজাহানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি
সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে পারস্য সম্রাট শাহ আব্বাস কান্দাহার অধিকার করে নিয়েছিলেন (১৬২৩
খ্রি.)। ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহান কান্দাহার পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হন। তিনি এজন্য কূটকৌশলের আশ্রয়
নেন। তিনি কান্দাহারের তৎকালীন শাসনকর্তা আলী মর্দানকে প্রভুত অর্থ দ্বারা বশ করে কান্দাহার অধিকার
করেন। আলী মর্দান দিল্লিতে চলে আসেন। তিনি মুঘল দরবারে অভাবনীয় সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেন।
তাঁকে কাশ্মির ও কাবুলের শাসনকর্তা নিয়োগ করা হয়।
মাত্র দশ বছর কান্দাহার মুঘল অধিকারে ছিল। ১৬৪৮ খ্রি. পারস্যের শাহ আব্বাস কান্দাহার অবরোধ
করেন। শীতকালে তুষারপাতের ফলে শাহজাহান যথাসময়ে সামরিক সাহায্য প্রেরণ করতে না পারায় মুঘল


বাহিনী কান্দাহার রক্ষা করতে পারেনি। মুঘল শাসনকর্তা দৌলত খাঁ পারস্য বাহিনীর হস্তে পরাজিত হয়ে
কান্দাহার ত্যাগ করতে বাধ্য হন। অতপর শাহজাহান ১৬৪৯, ১৬৫২ এবং ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে মুঘল
সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করে কান্দাহার পুনরুদ্ধার করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মুঘল বাহিনী কান্দাহার
পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হন।
শাহজাহানের মধ্য এশিয় নীতি
১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে কান্দাহার পুনরুদ্ধার করার পর শাহজাহান মধ্য এশিয়া পুনঅধিকারের সংকল্প গ্রহণ করেন।
বল্খ এবং বাদাখ্শান বিজয়ের উদ্দেশ্যে ১৬৪৬ খ্রি. যুবরাজ মুরাদ এবং আলী মর্দানকে মধ্য এশিয়ায় প্রেরণ
করেন। এই অভিযান সাফল্যমন্ডিত হয়। তাঁরা বল্খ ও বাদাখসান অধিকার করে নেন। কিন্তু কিছুকাল পর
সেখানকার আবহাওয়া সহ্য করতে না পেরে পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মুরাদ আগ্রায় ফিরে আসেন। মুরাদের
প্রত্যাবর্তনের পর শাহজাহান প্রধানমন্ত্রী সাদুল্লাকে বল্খ-এ প্রেরণ করেন। ১৬৪৭ খ্রি. তাকে সাহায্য এবং
নব বিজিত স্থানগুলোর নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে এক বিশাল সেনা বাহিনী সহ শাহজাদা আওরঙ্গজেবকে
সেখানে প্রেরণ করেন। কিন্তু দুর্ধর্ষ উজবেগদের পদানত করে রাখতে পারেনি। আওরঙ্গজেবের সকল চেষ্টা
ব্যর্থ হলে তিনি বল্খ ত্যাগ করে আসতে বাধ্য হন। এই ব্যাপারে রাজকোষের প্রভুত অর্থ ব্যয় এবং বিপুল
সৈন্যের প্রাণহানি ঘটে।
শাহজাহানের রাজত্বকালে উত্তরাধিকার যুদ্ধ
১৬৫৭ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে সম্রাট শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর অসুস্থতার সঙ্গে সঙ্গেই
গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, সম্রাটের মৃত্যু ঘটেছে। এরূপ অবস্থায় তাঁর পুত্রদের মধ্যে মুঘল সাম্রাজ্যের
সিংহাসনের অধিকার নিয়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। অথচ শাহজাহান তাঁর মৃত্যু আসন্ন জেনে সম্ভবত জ্যেষ্ঠ পুত্র
দারাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করে সুবিবেচনার পরিচয় দিতে ভুল করেন। এই ভুলই
উত্তরাধিকার দ্বন্দ¡কে অনিবার্য করে তোলে। শাহজাহানের পুত্ররা এই সময়ে বয়প্রাপ্ত এবং শাসন বিষয়ে
অভিজ্ঞ ছিলেন। তবে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মধ্যে পার্থক্য ছিল।
দারাশিকোহ
জ্যেষ্ঠ পুত্র দারাশিকোহ ছিলেন শাহজাহানের সবচেয়ে প্রিয়। তিনি ছিলেন পাঞ্জাব, মুলতান ও এলাহাবাদের
শাসক। কিন্তু তিনি সর্বদা পিতার নিকটে থেকে প্রতিনিধির মাধ্যমে উক্ত প্রদেশের শাসনকার্য পরিচালনা
করতেন। তিনি ছিলেন বিদ্বান, বিদ্যোৎসাহী ও ধর্ম সম্পর্কে উদার। উপনিষদ, বাইবেল এবং সুফি
সম্প্রদায়ভুক্ত লেখকদের রচনার সাথে তাঁর পরিচিতি ছিল খুবই ঘনিষ্ট। তিনি হিন্দু পন্ডিতদের সাহায্যে
ফারসি ভাষায় অথর্ব বেদ ও উপনিষদের অনুবাদ সম্পন্ন করেন। সকল ধর্মের সমন¦য় সাধনই ছিল তাঁর
ধর্মীয় নীতির প্রধান লক্ষ্য।
সুজা
শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র সুজা ছিলেন বাংলার শাসনকর্তা। ব্যবহার অমায়িক হলেও তাঁর নৈতিক চরিত্র ছিল
নিæমানের। কিন্তু মদ এবং নারীর প্রতি আসক্তি তাঁর সর্বনাশ ডেকে আনে। যদিও কোন প্রকার গোঁড়ামি,
ভন্ডামী অথবা সহজাত দুষ্টবুদ্ধি তাঁর ছিল না।


আওরঙ্গজেব
শাহজাহানের তৃতীয় পুত্র আওরঙ্গজেব ছিলেন দাক্ষিণাত্যের শাসক। ভ্রাতাদের মধ্যে তিনি যেমনি ছিলেন
বিদ্বান, সাহসী, শৃ´খলাপরায়ণ তেমনি ছিলেন কূটনীতিজ্ঞ এবং দূরদর্শী। তাঁর মধ্যে সামরিক প্রতিভা ও
শাসনতান্ত্রিক প্রতিভারও অভাব ছিল না। সুজাও দক্ষ ছিলেন। কিন্তু আওরঙ্গজেবের মতো একটানা কঠোর
পরিশ্রমে উৎসাহ ও দৃঢ়তা তাঁর ছিল না। সরল জীবনযাত্রা, সৌজন্য ও প্রিয়ভাষিতা এবং শৃ´খলা
পরায়ণতার জন্য তাঁর খ্যাতি ছিল। তিনি ছিলেন গোঁড়া সুন্নী মুসলমান। লক্ষ্য সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল
স্পষ্ট এবং তিনি অবিচল থাকতেন তাঁর লক্ষ্য সিদ্ধির জন্য।
মুরাদ
শাহজাহানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র মুরাদ ছিলেন গুজরাটের শাসক। তিনি সাহসী ও শক্তিশালী ছিলেন; কিন্তু চিন্তাভাবনা, ভয়, কপটতা, সংযম-ধর্মনিষ্ঠা প্রভৃতি তাঁর ছিল না। মদ ও নারীর প্রতি সুজার মতো তাঁরও আসক্তি
ছিল। আওরঙ্গজেবের কূটনীতি বোঝার মতো ক্ষমতা তার ছিল না।
জাহানারা ও রৌশনারা
দরবারের রাজনীতিতে বিশেষত উত্তরাধিকার দ্বন্দে¡র সময় শাহজাহানের দুই কন্যার ভ‚মিকা লক্ষণীয়।
জাহানারা পিতা ও জ্যেষ্ঠভ্রাতা দারার পক্ষ নেন এবং রৌশনারা আওরঙ্গজেবের পক্ষ অবলম্বন করেন।
সম্রাট শাহজাহান যখন অসুস্থ হন তখন জ্যেষ্ঠ পুত্র দারা পিতার কাছে আগ্রায় উপস্থিত ছিলেন। সে সময়
সুজা বাংলায়, আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যে এবং মুরাদ গুজরাটে ছিলেন। স্বভাবতই দারা পিতার অসুস্থতার
সুযোগ নিয়ে শাসনভার গ্রহণপূর্বক তিন ভাইয়ের আগ্রা আগমনের পথ বন্ধ করে দেন। এমন কি রাজধানী
থেকে কোন সংবাদ যাতে ভাইদের নিকট পৌঁছাতে না পারে সে ব্যবস্থাও করেন। সম্ভবত শাহজাহান
রোগশয্যায় দারাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছিলেন। ভগ্নী রৌশনারা মারফত আওরঙ্গজেব
সংবাদ পান যে, পিতা শাহজাহান অসুস্থ, দারা শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। এই সংবাদ পেয়ে তিনি ক্ষুব্ধ
হন। তিন ভ্রাতাই মনে করেন যে, তাঁদের পিতা আর জীবিত নেই এবং দারা সিংহাসনে বসার জন্য এই
সংবাদটি গোপন করেছেন। এই অনুমানের ওপর নির্ভর করে তিন ভ্রাতাই দারাকে পরাস্ত করে সিংহাসন
অধিকারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রথমেই সুজা বাংলার তৎকালীন রাজধানী রাজমহলে নিজেকে সম্রাট
বলে ঘোষণা দেন। অতপর তিনি বিহার অধিকার করে আগ্রা অভিমুখে অগ্রসর হন। এদিকে মুরাদ
গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদে নিজেকে সম্রাট বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু আওরঙ্গজেব অপর দুই ভাইয়ের
মতো কোনরূপ ঘোষণা না দিয়ে সুযোগের প্রতীক্ষায় রইলেন। সুজা আগ্রা অভিমুখে সসৈন্যে অগ্রসর হচ্ছেন
এ সংবাদ পেয়ে আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্য থেকে তাঁর নিজস্ব সৈন্যবাহিনী নিয়ে উত্তর ভারত অভিমুখে যাত্রা
করেন। ২৪ এপ্রিল, ১৬৫৮ খ্রি. দিপালপুরে মুরাদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত ঘটে। তিনি মুরাদের সঙ্গে এক
চুক্তিতে আবদ্ধ হন। স্থির হয় যে, তাঁরা দুজনে দারা ও সুজার বিরুদ্ধে মিলিতভাবে যুদ্ধ করবেন এবং যুদ্ধে
জয়ী হবার পর মুঘল সাম্রাজ্য নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবেন।
তিন ভ্রাতার রাজধানী অভিমুখে সসৈন্যে অগ্রসর হবার সংবাদ পেয়ে দারা পুত্র সুলেমানের নেতৃত্বে এক
সৈন্যবাহিনী সুজার বিরুদ্ধে পাঠান। সুলেমানের অধীনস্থ মুঘল বাহিনী সুজার সৈন্যবাহিনীকে বারাণসীর
নিকট বাহাদুরপুরের যুদ্ধে পরাজিত করে (ফেব্রুয়ারি, ১৬৫৮ খ্রি.)। সুজা বাধ্য হয়ে বাংলায় প্রত্যাবর্তন
করেন। দারা যশোবন্ত সিংহ এবং কাশিম খাঁর নেতৃত্বে অপর এক সেনাবাহিনী আওরঙ্গজেব ও মুরাদের
সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। যশোবন্ত সিংহ এবং কাশিম খাঁর মধ্যে মতানৈক্যের জন্য


আওরঙ্গজেব এই বাহিনীকে উজ্জয়িনীর চৌদ্দ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ধর্মাট নামক স্থানে পরাজিত
করতে সক্ষম হন (এপ্রিল, ১৬৫৮)। এই যুদ্ধে জয়লাভের ফলে আওরঙ্গজেবের সামরিক খ্যাতি ও মর্যাদা
বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আওরঙ্গজেব ও মুরাদের বিজয়ী বাহিনী আগ্রার নিকটবর্তী সামুগড় নামক স্থানে উপস্থিত
হয়। দারা প্রায় পঞ্চাশ হাজার সৈন্য নিয়ে দারা আওরঙ্গজেব এবং মুরাদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। উল্লেখ্য যে,
দারার সৈন্যবাহিনী সংখ্যায় শত্রুপক্ষীয় সৈন্যেবাহিনীর সমান হলেও শৃ´খলার অভাব ছিল। তা সত্তে¡ও দারা
নিজে সৈন্যবাহিনী পরিচালনা করেন। তরুণ রামসিংহের নেতৃত্বে রাজপুতরা বীরত্বের সাথে প্রাণপণে দারার
পক্ষে যুদ্ধ করেন। কিন্তু আওরঙ্গজেবের নিপুণ রণকৌশলের নিকট দারা সামুগড়ের যুদ্ধে (মে, ১৬৫৮)
পরাজিত হন। এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দারা পাঞ্জাবে পলায়ন করেন। আওরঙ্গজেব অবিলম্বে আগ্রায়
উপস্থিত হয়ে আগ্রা দুর্গ অবরোধ করেন। বৃদ্ধ শাহজাহানের সমস্ত প্রতিরোধ ও আপোষ রফার অনুরোধ
উপেক্ষা করে আওরঙ্গজেব আগ্রা দুর্গ অধিকার করেন। পিতা শাহজাহানকে আগ্রা দুর্গে নজরবন্দি করে
রাখেন।
আগ্রা থেকে আওরঙ্গজেব দিল্লি অভিমুখে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে মথুরার কাছে তিনি কৌশলে মুরাদকে
বন্দি করেন। প্রথমে সলিমগড় দুর্গে পরে গোয়ালিয়র দুর্গে বন্দি করে রাখেন। ১৬৬১ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ান
আলী নকীকে হত্যার অভিযোগে আওরঙ্গজেবের আদেশে মুরাদকে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করা হয়।
১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে সুজা বারাণসীর কাছে দারার পুত্র সুলেমানের হাতে পরাজিত হয়েছিলেন। ধর্মাট ও
সামুগড়ের যুদ্ধে দারার পরাজয়ের ফলে সুলেমান আর সুজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে পারলেন না। ইতোমধ্যে
সুজা পুনরায় সৈন্য সংগ্রহ করে শক্তিবৃদ্ধি করেন। আওরঙ্গজেব আগ্রা অধিকার করে সুজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা
করেন। ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে খানুয়ার যুদ্ধে আওরঙ্গজেব সুজাকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করেন। অতপর
আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলা সুজার পশ্চাদধাবন করলে তিনি বাংলা ত্যাগ করে আরাকান অঞ্চলে
পালিয়ে যান। এরপর সুজার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। অনুমান করা হয় যে, আরাকান রাজের
আদেশে তিনি নিহত হয়েছিলেন।
এদিকে দারা পাঞ্জাব থেকে পারস্য অভিমুখে যাত্রা করেন। পথে তিনি জিওন খাঁ নামক এক আফগান
সর্দারের গৃহে আশ্রয় গ্রহণ করেন। জিওন খাঁকে একসময় দারা শাহজাহানের প্রাণদন্ডাদেশ হতে রক্ষা
করেছিলেন। কিন্তু অকৃতজ্ঞ জিওন খাঁ অর্থলোভে দুই কন্যা, নাবালক পুত্র ও স্ত্রী সহ দারাকে আওরঙ্গজেবের
হস্তে অর্পণ করেন। বন্দি অবস্থায় দারাকে দিলি তে নিয়ে আসা হয় এবং প্রকাশ্য রাজপথে তাঁকে চরম -
অবমাননা করা হয়। ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেব দারাকে ধর্মদ্রোহিতার অপরাধে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করে
সিংহাসন লাভে নিশ্চিত হন। এইভাবে চরম রক্তাক্ত পরিণতির মধ্যদিয়ে আওরঙ্গজেব দিল্লির সিংহাসনে
অধিষ্ঠিত হন। সম্রাট শাহজাহান দীর্ঘকাল বন্দি অবস্থায় আগ্রা দুর্গে অতিবাহিত করে ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে
মৃত্যুমুখে পতিত হন।
আওরঙ্গজেবের সাফল্যের কারণ
উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিরোধ ও সংঘর্ষে নি¤œলিখিত কারণে আওরঙ্গজেব সাফল্য লাভ করেছিলেনঃ
প্রথমত, আওরঙ্গজেব অসাধারণ দূরদর্শী, সামরিক প্রতিভাসম্পন্ন ও সাংগঠনিক ক্ষমতা ব্যক্তি ছিলেন। তিনি
ছিলেন গোঁড়া সুন্নী ইসলামী মতবাদে বিশ্বাসী। ফলে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নী সম্প্রদায়ভুক্ত মুসলমানগণ
তাঁকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছিল।
দ্বিতীয়ত, শাহজাহানের দুর্বলতা এবং সিদ্ধান্তহীনতা আওরঙ্গজেবের সাফল্যের অন্যতম কারণ। পুত্রদের
রাজধানী অভিমুখে যাত্রার সংবাদ পেয়ে শাহজাহানের উচিত ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়া। কিন্তু তিনি
তা না করে বিদ্রোহী পুত্রদের স্পর্ধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছিলেন এবং দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
তৃতীয়ত, আওরঙ্গজেবের উচ্চাক্সক্ষা এবং যোগ্যতা সম্পর্কে অপরাপর ভ্রাতাদের অসতর্কতাও আওরঙ্গজেবের
সাফল্যের পথ প্রশস্ত করেছিল। বিপদের সময় সাহসিকতা এবং ক‚টনৈতিক জ্ঞানে কোন ভ্রাতাই


আওরঙ্গজেবের সমকক্ষ ছিলেন না। আওরঙ্গজেবের অধীনস্থ গোলন্দাজ বাহিনী ছিল সর্বাপেক্ষা সুদক্ষ এবং
অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। গোলন্দাজ বাহিনীর সাফল্যই যুদ্ধের জয়-পরাজয় নির্ধারণ করেছিল।
সর্বশেষে বলা যেতে পারে যে, দারার অধীনস্থ সেনাবাহিনীর মধ্যে ঐক্যের অভাবের ফলে দারাকে বারবার
বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। অপরদিকে আওরঙ্গজেবের সৈন্যবাহিনী ছিল সুসংঘবদ্ধ ও একক
নেতৃত্বাধীনে পরিচালিত। এইরূপ সৈন্যবাহিনীর যুদ্ধে জয়ী হওয়া নিতান্তই স্বাভাবিক ঘটনা।
স্থাপত্য শিল্পে শাহজাহানের অবদান
মধ্যযুগের ভারতবর্ষের মুঘল ইতিহাসে শাহজাহানের রাজত্বকাল স্বর্ণযুগ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এ যুগে
ভারতে সকল দিক দিয়ে চরম উন্নতি ঘটেছিল। সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ও ঐশ্বর্যের দিক দিয়েও ভারত গৌরবের
চরম শিখরে আরোহণ করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, স্থাপত্য শিল্পের উৎকর্ষে জন্যই ঐতিহাসিকগণ শাহজাহানের
রাজত্বকালকে মুঘল যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ বলে অভিহিত করেছেন। কোন কোন ঐতিহাসিক আবার
শাহজাহানের রাজত্বকালকে অমব ড়ভ মৎধহফবঁৎ বলেও চিহ্নিত করেছেন। শাহজাহান ছিলেন একজন
মহান স্থপতি এবং শাহজাহানকে তাই ঞযব ঢ়ৎরহপব ড়ভ নঁরষফবৎং বলে অভিহিত করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরের
আমলে যেমন চিত্রশিল্পের অভাবনীয় বিকাশ ঘটেছিল, তেমনি শাহজাহানের আমলে স্থাপত্য শিল্পে মণিমানিক্যাদির ব্যবহার মুঘল যুগের স্থাপত্য রীতিকে এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য দান করেছিল। শাহজাহানের
রাজত্বকালে সম্পূর্ণ নতুন এক স্থাপত্য রীতির রূপ পরিগ্রহ করে। প্রকৃতপক্ষে, শাহজাহান তাঁর স্থাপত্য শিল্পে
রঙের আতিশয্য ও আড়ম্বরকেই অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। হুমায়ুনের সমাধিভবন, ফতেপুরসিক্রীতে
নির্মিত সৌধগুলো আকবরের সমাধি ভবন এবং নুরজাহানের পিতা ইতিমদ উদ্দৌলার সমাধি ভবন ইন্দো
পারসিক স্থাপত্য রীতির নিদর্শন। আকবর স্থাপত্য শিল্পে যে সমন¦য় ও ভারতীয়করণের রীতি প্রবর্তন
করেছিলেন, তা ¤øান হয়ে যায়। শাহজাহানের আমলে বিদেশী স্থাপত্য শিল্পের আড়ম্বর ও অতি অলংকরণ
ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে শিল্প সমালোচকগণের মতে প্রাক-শাহজাহানের শিল্পসৌধগুলো মজবুত ও
আভিজাত্যপূর্ণ শিল্পসুষমামন্ডিত। কিন্তু শাহজাহানের আমলে নির্মিত সৌধগুলো শৌখিন কিন্তু দুর্বল।
শাহজাহান যে একজন দরদী ও মরমী শিল্পীর মন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্প সৃষ্টি করেছিলেন, সে বিষয়ে
কোন সন্দেহ নেই। সৌধ নির্মাণে আকবর ও জাহাঙ্গীরের আমলে ব্যবহৃত লাল বেলে পাথরের পরিবর্তে
শাহজাহান সাদা মার্বেল পাথর ব্যবহার করেন। সাদা পাথরের ব্যবহার ঘটিয়ে শাহজাহান ভারতীয়
স্থাপত্যরীতিকে এক অনুপম সৌন্দর্যের অধিকারী করেছিলেন। শাহজাহানের স্থাপত্য শিল্পের উৎকৃষ্ট
নিদর্শনগুলো আগ্রা, দিল্লি ও লাহোর দুর্গের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে আছে। এছাড়া কাবুল, কাশ্মির, কান্দাহার ও
আজমীর সর্বত্রই তিনি অনুপম প্রাসাদ, মসজিদ ও উদ্যান নির্মাণ করেন। অনেক শিল্প সমালোচক বলেছেন,
মৌলিকতার দিক থেকে শাহজাহানের নির্মিত সৌধগুলো আকবর নির্মিত সৌধগুলো অপেক্ষা উৎকৃষ্ট হলেও
আড়ম্বর ও বহুমূল্য অলংকরণের দিক থেকে এগুলো শ্রেষ্ঠ ছিল। বিশেষ করে দিলি তে ‘দেওয়ান-ই-আম' -
ও ‘দেওয়ান-ই-খাস', ‘মতি মসজিদ, ‘জামি মসজিদ' এবং ‘শিসমহল' শাহজাহানের অনবদ্য শিল্প সৃষ্টির
নিদর্শন। আগ্রা দুর্গেও অনুরূপভাবে নির্মিত তাঁর জীবনের প্রথমদিকের সৌধগুলো স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম
শ্রেষ্ট নিদর্শন। এখানে নির্মিত বিশেষ করে ‘দেওয়ান-ই-আম', ‘দেওয়ান-ই-খাস', ‘মতি মসজিদ', ‘মুসাম্মন
বাজ', ‘শিস মহল' শাহজাহানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য সৌধ হিসেবে বিবেচিত।
শাহজাহানের বিখ্যাত পরিকল্পনার মধ্যে দিল্লির অনতিদূরে নতুন প্রাসাদ-দুর্গসহ ‘শাহজাহানাবাদ' নামে
রাজধানী শহর প্রতিষ্ঠা অন্যতম। তিনি ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে এই শহর প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন এবং ১৬৪৮
খ্রি. শেষ করেন। আগ্রা থেকে এখানেই তিনি রাজধানী স্থানান্তর করেন। এই দুর্গের অভ্যন্তরেই
রাজপরিবারের বাসস্থান, হারেম, রাজদরবার, বাগিচা প্রভৃতি নির্মাণ করা হয়। আগ্রা দুর্গের অনুকরণে
‘লালকেল্লা' নির্মাণ করা হয়। লাল বেলেপাথরের তৈরি সুউচ্চ প্রাচীর বেষ্টিত এই প্রাসাদের বিশালতা আজও


বিশ্বের স্থাপত্যবিদদের কাছে শ্রদ্ধার উদ্রেক করে। এমনকি এই বিশাল মুঘল স্থাপত্যটি শাহজাহানের
শাসনকালে যেভাবে উদ্ধত অহংকার ও গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়েছিল আজ আধুনিক ভারতবর্ষেও তা অক্ষত আছে।
শাহজাহানের স্থাপত্য শিল্পের আর একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হলোÑ ‘ময়ুর সিংহাসন'। পারস্যের বিখ্যাত
শিল্পী বেবাদল খাঁ এটি নির্মাণ করেছিলেন। এই সিংহাসনের বাহন ছিল রতœখচিত ময়ুর। সিংহাসনের মাথায়
ছিল পৃথিবী বিখ্যাত কোহিনূর হীরা ও রতœখচিত রাজছত্র; মুক্তো দিয়ে তৈরি অকৃত্রিম আঙ্গুরের থোকা
ঝুলতো এবং মনে হতো ময়ূরেরা সেগুলো ছিড়ে খাচ্ছে। এ এক অভ‚তপূর্ব শিল্প-সৌন্দর্য। দুঃখজনক ঘটনা
হচ্ছে পারস্য সম্রাট নাদির শাহ এই মহামূল্যবান ময়ূর সিংহাসনটি লুণ্ঠন করে নিয়ে গিয়েছিলেন।
উপর্যুক্ত স্থাপত্য শিল্পের মহিমাকে ¤øান করে দিয়েছে তাজমহল। শুধু মধ্যযুগের ভারতবর্ষের ইতিহাসে নয়,
সমগ্র বিশ্ব ইতিহাসে শাহজাহানের স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হলো তাঁর প্রিয়তমা পতœী মমতাজ
মহলের স্মৃতিসৌধ আগ্রার তাজমহল। শিল্প সৃষ্টির দিক দিয়ে এটি বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় বলে পরিগণিত
হয়ে থাকে। ১৬৩১ খ্রিস্টাব্দে মমতাজের মৃত্যুর পর যমুনা নদীর তীরে শাহজাহান তাঁর প্রেমকে কালজয়ী
করে রাখার উদ্দেশ্যে এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। সমসাময়িক ঐতিহাসিক লাহোরীর
মতে, এই সৌধ নির্মাণ করতে বারো বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু ট্যাভার্নিয়ের মতে, বাইশ বছর ধরে তিন
কোটি টাকা ব্যয়ে এই সৌধ নির্মিত হয়েছিল।
শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, শাহজাহানের স্থাপত্য শিল্প ইন্দো-পারসিক শিল্পরীতির এক অনবদ্য সৌন্দর্যের
প্রতীক। ইন্দো-পারসিক শিল্পরীতির এমন অনুপম সৌন্দর্য ইতোপূর্বে ভারতীয় শিল্প ও স্থাপত্য রীতিতে
কখনও প্রতিফলিত হয়নি। যদিও ‘হুমায়ুনের সমাধি' ও ‘ইতিমদ উদ্দৌলার সমাধি' ইন্দো-পারসিক
শিল্পরীতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন; কিন্তু ইতিমদ উদ্দৌলার সমাধির শিল্পনৈপুণ্যে রাজপুত শিল্পশৈলীর ছাপ
স্পষ্টভাবে অনুভব করা যায়। শাহজাহানের শিল্পরীতিতে স্বদেশী বা বিদেশী ভাবধারার প্রবেশ নিয়ে যে
প্রশ্নই উঠুক না কেন, সকল ঐতিহাসিকই একমত যে, শাহজাহানের সময়েই মুঘল স্থাপত্যের সর্বাপেক্ষা
বিস্ময়কর প্রকাশ ঘটে।
শাহজাহানের চরিত্র ও কৃতিত্ব
সম্রাট শাহজাহান ছিলেন নিঃসন্দেহে একজন মহান মুঘল শাসক। তাঁর রাজত্বকাল মুঘল ইতিহাসে ‘স্বর্ণযুগ'
নামে খ্যাত। শাহজাহানের চরিত্রের মধ্যে কর্মপ্রচেষ্টা, উদ্যম, উচ্চাকাক্সক্ষা, পুত্রবাৎসল্য ও পতœীপ্রেম প্রভৃতি
বহুগুণের সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি ছিলেন একজন সামরিক প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তি। একদিকে যেমন বিশ্বস্ত
সৈনিক হিসেবে দাক্ষিণাত্য থেকে রাজস্থান পর্যন্ত তার তরবারি একদিন ঝলসে উঠেছিল, অপরদিকে
তেমনি হাজার হাজার শিল্পীর তুলিতে নানা বাহারের রং ঢেলে দিয়ে স্থাপত্য শিল্পে যে সৌন্দের্যের ব্যঞ্জনা
তিনি সৃষ্টি করেছিলেন সেজন্য তাঁকে জগতের একজন শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্যের সাধক বলে অভিহিত করা যায়।
সিংহাসনে আরোহণকালে শাহজাহানকে কোন কোন ক্ষেত্রে নিষ্ঠুর কাজের মধ্যে জড়িয়ে পড়তে হয়েছিল
সত্য, কিন্তু পরবর্তীতে একজন যোগ্য শাসকের পরিচয় দিয়েছিলেন। উপরন্তু মধ্যযুগের আলোকে তাঁর
পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিচার করলে তাঁকে দোষী করা যায় না। কারণ, সে যুগে নিজের সিংহাসনকে সুরক্ষিত
করতে হলে শাহজাদার পক্ষে অপরকে বাঁচিয়ে রাখার কোন উপায় ছিল না। তিনি নুরজাহানের মতো
ক‚টকৌশলী নারীর সকল চেষ্টা ও দূরভিসন্ধি ব্যর্থ করে দিয়ে সিংহাসন অধিকার করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
শাহজাহান তাঁর মহান পিতামহ আকবরের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ছিলেন। আকবরের তত্ত¡াবধানে পাঁচ বৎসর
বয়স থেকে বিখ্যাত পারসিক পন্ডিতদের কাছে শিক্ষালাভ করে শাহজাহান প্রকৃত বিদ্বানে পরিণত হন।
আরবি, ফারসি ও হিন্দিতে তাঁর বিশেষ দখল ছিল। বাল্যকাল থেকেই তিনি মনোযোগ সহকারে যুদ্ধবিদ্যা
শেখেন এবং যৌবনে একজন সামরিক প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিতে পরিণত হন। দাক্ষিণাত্য ও মেবার তাঁরই
নেতৃত্বে পিতা জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। তাঁর এই কাজের পুরস্কার স্বরূপ তিনি পিতা


জাহাঙ্গীর কর্তৃক ‘শাহজাহান' উপাধিতে ভ‚ষিত হন। শাহজাহানের রাজদরবার জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের
জন্য উন্মুক্ত ছিল। কবি, দার্শনিক পন্ডিত ও শিল্পীরা রাজদরবারে যথারীতি মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।
যোগ্যতা অনুযায়ী সকলকেই তিনি পুরস্কৃত করতেন। কাব্য, সঙ্গীত, চিত্রশিল্প, নৃত্য, জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত,
চিকিৎসা বিদ্যা তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছিল। তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ভালবাসতেন
এবং সুন্দর দাস, চিন্তামনি ও করীন্দ্র আচার্য প্রমুখ হিন্দু কবি তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন।
রাজকীয় সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে তানসেনের জামাতা লাল খান তাঁর অত্যন্ত ¯েœহভাজন ছিলেন। শাহজাহান
কর্তৃক কবি জগন্নাথ ‘মহাকবি রাই' উপাধিতে ভ‚ষিত হয়েছিলেন। বহু সংস্কৃত গ্রন্থের ফারসি অনুবাদ
হয়েছিল। এমনকি বৃন্দাবনের গোকুলস্থ গোঁসাইরা শাহজাহানের সময় তাঁর নির্দেশে বিশেষ ব্যবস্থা ভোগ
করেন। উপরন্তু তাঁরই পৃষ্ঠপোষকতায় আবদুল হামিদ লাহোরী ‘পাদশাহনামা' ও ‘শাহজাহাননামা' নামক
দুইটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করে সমকালীন ইতিহাসের অমূল্য ভান্ডার উপহার দিয়েছেন।
শাহজাহানের রাজত্বকালে ভারতবর্ষ সকল দিক দিয়ে সুখী ও সমৃদ্ধ ছিল। তাঁর শাসনকালে মুঘল রাজকোষ
ছিল পূর্ণ। শাহজাদা আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্য সুবায় টোডরমলের রাজস্ব ব্যবস্থা প্রয়োগ করে মুঘল
রাজকোষে প্রভুত অর্থ প্রেরণ করেছিলেন। অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃ´খলা বিরাজমান থাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
ও বহির্বাণিজ্য অভাবনীয় রূপে বিকাশ লাভ করেছিল। সুরাট তখন বহির্বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
এই সময়েই ভারতের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার বাণিজ্য সম্পর্ক ঘনিষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইউরোপের সঙ্গে
বাণিজ্যের সূত্রপাত হয়। এই বাণিজ্যে ভারতের পণ্যই রপ্তানি হতো এবং রাজকোষে প্রচুর অর্থাগম হতো।
তাঁর রাজত্বকালে কৃষি ও কৃষকের অভাবনীয় উন্নতি সাধিত হয়।
শাহজাহান ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক, বিজেতা এবং সুষ্ঠু বিচারক। তিনি তাঁর শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থায়
উচ্চপদে অত্যন্ত যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দান করতেন। ‘মনসবদারি' ব্যবস্থা ও রাজস্ব ব্যবস্থার বহু ত্রুটি দূর
করে শাসনব্যবস্থাকে তিনি গতিশীল করেন। ইউরোপীয় পর্যটক মানুচি শাহজাহানের সুবিচারের প্রশংসা
করেছেন। ফরাসি পর্যটক ট্যাভার্নিয়ে শাহজাহানের শাসনকে প্রজার ওপর রাজার শাসন না বলে পিতার
শাসন বলাই শ্রেয় বলে মন্তব্য করেন।


সারসংক্ষেপ
১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহান সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রথমেই বুন্দেলখন্ডের রাজপুত নেতা জুঝর
সিংহের বিদ্রোহ, দাক্ষিণাত্যের শাসক খান জাহান লোদির বিদ্রোহ এবং পর্তুগিজ বণিকদের দমন করে
সাম্রাজ্যে শান্তি-শৃ´খলার উন্নতি সাধন করেন। অতপর সাম্রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন।
দাক্ষিণাত্যের আহম্মদনগর, গোলাকুন্ডা, বিজাপুর প্রভৃতি অঞ্চলে অভিযান প্রেরণ করে সফলতা লাভ
করেন। এ সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চল ও মধ্য এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তারে সামরিক অভিযান প্রেরণ
করে তাঁর পূর্ব পুরুষদের সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ নীতি অক্ষুন্ন রাখেন। ১৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট শাহজাহানের
অসুস্থতার সুযোগে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে তাঁর চার পুত্রের মধ্যে দ্বন্দ¡ সংঘটিত হয়। এই
ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে আওরঙ্গজেব জয়ী হয়ে দিল্লির সম্রাটকুপে অধিষ্ঠিত হন। শাহজাহানের আমলে স্থাপত্য
শিল্পের অভ‚তপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়। তিনি ছিলেন একজন সুশাসক, বিজেতা ও সুবিচারক। তাঁর
রাজদরবার ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। তাঁর শাসনকাল মুঘল ইতিহাসে ‘স্বর্ণযুগ' হিসেবে খ্যাত।
পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। শাহজাহান কত বৎসর ভারতবর্ষ শাসন করেছিলেনÑ
(ক) প্রায় চল্লিশ বছর (খ) প্রায় ত্রিশ বছর
(গ) প্রায় কুড়ি বছর (ঘ) প্রায় পনর বছর।
২। শাহজাহান সিংহাসনে কত খ্রি. অধিষ্ঠিত হনÑ
(ক) ১৬২৮ (খ) ১৬১৮
(গ) ১৬৩৮ (ঘ) ১৬৪৮।
৩। উত্তরাধিকার যুদ্ধে কে জয়ী হয়েছিলেন?
(ক) দারা (খ) মুরাদ
(গ) সুজা (ঘ) আওরঙ্গজেব।
৪। শাহজাহানের কন্যা জাহানারা তাঁর কোন ভ্রাতাকে সমর্থন করেছিলেন?
(ক) আওরঙ্গজেব (খ) মুরাদ
(গ) সুজা (ঘ) দারা।
৫। শাহজাহান কত খ্রি. মৃত্যুবরণ করেন?
(ক) ১৬৫৬ (খ) ১৬৬৬
(গ) ১৭৬৬ (ঘ) ১৬৪৬।


সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক দাক্ষিণাত্যের আহম্মদনগর অধিকারের ইতিহাস বর্ণনা করুন।
২। মধ্যএশিয়া অধিকার করতে শাহজাহান কি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তার বিবরণ দিন।
৩। শাহজাহানের পুত্রদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দিন।
৪। ভ্রাতৃদ্বন্দে¡ আওরঙ্গজেবের সাফল্যের কারণসমূহ উল্লেখ করুন।
৫। শাহজাহানের আমলেনির্মিত শিল্প নিদর্শনগুলোর বর্ণনা দিন।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। শাহজাহানের সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি বর্ণনা করুন।
২। আওরঙ্গজেবের সাফল্যের কারণ উল্লেখপূর্বক সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে সংঘটিত উত্তরাধিকার যুদ্ধের ঘটনাবলীর বিবরণ দিন।
৩। স্থাপত্য শিল্পে শাহজাহানের কৃতিত্ব মূল্যায়ন করুন।
৪। শাহজাহানের রাজত্বকালকে মুঘল ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলা হয় কেন?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]