আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি পর্যালোচনা করুন।
আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির বিবরণ দিন।


মুঘল সম্রাটদের মধ্যে মুহীউদ্দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন।
কর্মদক্ষতা, ব্যক্তিত্ব এবং দক্ষতার দিক দিয়ে আওরঙ্গজেব মুঘল সম্রাটদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। একমাত্র
মহান সম্রাট আকবর ছাড়া তাঁর মতো কোন কর্মদক্ষ সম্রাট মুঘল সিংহাসন আরোহণ করেননি। তিনি ছিলেন
সম্রাট শাহজাহানের তৃতীয় পুত্র। উত্তরাধিকারী যুদ্ধে ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ধর্মাট ও দ্বিতীয় সামুগড়ের যুদ্ধে
জয়ী হয়ে তিনি পিতাকে সিংহাসনচ্যুত করে গৃহবন্দি করেন। এরপর আগ্রা অধিকার করে সেখানে
অভিষেক-ক্রিয়া সম্পন্ন করে নিজেকে ভবিষ্যত মুঘল সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। অতপর
খাজওয়া ও দেওয়াই যুদ্ধে দারাকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে পুনরায় অভিষেকক্রিয়া সম্পন্ন করে দিল্লির সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। এসঙ্গে গ্রহণ করেন ‘আলমগীর বাদশাহ গাজী' উপাধি।
আওরঙ্গজেব প্রায় অর্ধশতাব্দী ভারতবর্ষ শাসন করেন। তাঁর শাসনকালকে দুভাগে বিভক্ত করা যায়Ñ
প্রথমার্ধে ১৬৫৮Ñ১৬৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উত্তর ভারতে এবং দ্বিতীয়ার্ধে ১৬৮১Ñ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি
দক্ষিণ ভারতে অবস্থান করেন। প্রকৃতপক্ষে, আওরঙ্গজেবের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় দক্ষিণ ভারতে।
১৬৮২ খ্রিস্টাব্দের পর তিনি আর উত্তর ভারতে ফিরে আসেননি। ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ভারতেই তিনি
মৃত্যুবরণ করেন।
আওরঙ্গজেবের সাম্রাজ্য বিস্তার
উত্তর-পূর্ব ভারতে সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ
মহামতি আকবর যে সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ করেছিলেন আওরঙ্গজেব তা তাঁর সময়ে অব্যাহত
রাখেন। আওরঙ্গজেবের শাসনামলে মূলত সাম্রাজ্যের সর্বাধিক সম্প্রসারণ ঘটে। তাঁর পূর্বে কোন শাসকই
এত বড় সাম্রাজ্যের অধিকারী হতে পারেননি। উত্তর-পূর্ব ভারতের হিন্দুরাজ্য কুচবিহার ও অহোম রাজ্য
অভিযান ছিল আওরঙ্গজেবের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই দু'টি রাজ্য প্রাকৃতিক দিক থেকে সুরক্ষিত
হওয়ায় মুসলিম শাসকগণ এদের স্বাধীনতা হরণ করতে পারেননি। আওরঙ্গজেবের নির্দেশে ১৬৬১ খ্রিস্টাব্দে



বিহারের শাসনকর্তা দাউদ খাঁ পালামৌ মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। এ বৎসর বাংলার শাসনকর্তা মীর
জুমলাকে অহোম, কোচ ও আরাকানী মগদের বিরুদ্ধে সম্রাটের নির্দেশ পেয়ে ১৬৬১ খ্রি: এক বিরাট
সৈন্যবাহিনী নিয়ে ঢাকা থেকে পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে কুচবিহার অধিকার করেন। অতপর মীর জুমলা
সৈন্যবাহিনী নিয়ে পরের বৎসর মার্চ মাসে অহোমের রাজধানী গড়গাঁ গিয়ে উপস্থিত হন। অহোমরাজ
জয়ধ্বজ রাজধানী থেকে পালিয়ে গিয়ে শত্রুর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করেন। কিন্তু অচিরেই বর্ষা নামলে
মুঘল সৈন্যরা আসামের জলবাহিত নানা প্রকার রোগে আক্রান্ত হয়ে এক বিব্রতকর অবস্থায় পতিত হয়। এই
সুযোগে অহোমের রাজকীয় সৈন্যরা মুঘল সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে খন্ড যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এতে মুঘল সৈন্যবাহিনী
ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় মুঘল সৈন্যবাহিনীর জয়লাভের কোন সম্ভাবনা না দেখে মীর জুমলা
অহোমরাজের সঙ্গে এক সন্ধি স্থাপন করেন। সন্ধির শর্তানুযায়ী যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ, বার্ষিক কর এবং দারাং
প্রদেশের অর্ধেক মুঘলদের দিতে বাধ্য হয়। এই অভিযানে মুঘলদের বহু ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। আসামে
অবস্থানকালে মীর জুমলা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বন্যা ও বর্ষার প্রকোপে আসাম থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের
পথে ১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে মীর জুমলা মৃত্যুবরণ করেন। মীর জুমলার মৃত্যুর পর আওরঙ্গজেব তাঁর মাতুল
শায়েস্তা খানকে (আসফ খাঁর পুত্র) দাক্ষিণাত্য থেকে সরিয়ে এনে বাংলার শাসনকর্তা (সুবাদার) পদে
নিয়োগ দান করেন। শায়েস্তা খান দীর্ঘ ত্রিশ বছর এই পদে বহাল ছিলেন। তিনি পর্তুগিজ ও আরাকানী মগ
জলদস্যুদের অত্যাচার ও লুণ্ঠন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে বাংলার নৌশক্তি বৃদ্ধি করেন। ১৬৬৫ খ্রি. মগ
জলদস্যুদের প্রধান ঘাঁটি সন্দ¡ীপ দখল করেন। পরের বছর (১৬৬৬ খ্রি.)আরকান রাজ্যের হাত থেকে
চট্টগ্রামকে অধিকার করে পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলার মানুষকে মগ ও পর্তুগিজদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেন।
উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি
ভারতবর্ষের ইতিহাসে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত রক্ষার সমস্যা চিরকালই ভারতের মধ্যে যুগের শাসকদের
ব্যাপৃত করে রেখেছিল। শুধুমাত্র মুঘল যুগে নয়, সুলতানি যুগেও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত শাসকদের মাথা
ব্যাথার কারণ ছিল। উল্লেখ্য যে, মুসলমানরা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিল। সেই
কারণেই ঐ অঞ্চলের গুরুত্ব অপরিসীম। এই উপলব্ধি থেকেই সকল সময়েই উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত রক্ষার
দায়িত্ব সকল শাসককে গ্রহণ করতে হয়েছিল। আওরঙ্গজেব সিংহাসনে আরোহণ করেই অর্থনৈতিক ও
রাজনৈতিক কারণে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতিতে ‘অগ্রসর নীতি' অবলম্বন করে সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা রক্ষার
চেষ্টা করেন। ঐ অঞ্চলের আফগান উপজাতীয় লোকেরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রায়ই উত্তর-পশ্চিম পাঞ্জাবে
অত্যাচার ও লুটতরাজ করতো। ১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ইউসুফজাই' নামক এক উপজাতি ‘ভাগু' নামে এক
অধিনায়কের নেতৃত্বে দলবদ্ধ হয়ে আটক ও হাজারা জেলা আক্রমণ করে। সম্রাট তাদের বিরুদ্ধে কঠোর
সামরিক অভিযান প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেন। সম্রাট মুঘল সেনাপতি আমিন খাঁ ও কামিল খাঁকে ‘ইউসুফজাই'
উপজাতিদের দমনের জন্য প্রেরণ করেন। দুই সেনাপতি উপজাতীয় বিদ্রোহীদের কঠোর হস্তে দমন করতে
সক্ষম হন এবং দলপতিদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব মহারাজা যশোবন্ত সিংহকে
জামরূদ দুর্গের অধিনায়ক পদে অভিষিক্ত করে এই অঞ্চলের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।
১৬৭২ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিদি ও খাটক নামক উপজাতির লোকেরা মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
আফ্রিদিদের নেতা আকমল খাঁ নিজেকে রাজা বলে ঘোষণা দিয়ে খাটকদের মুঘলদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হতে
আহŸান জানান। তাঁদেরকে দমন করার জন্য সম্রাট সেনাপতি আমিন খাঁকে প্রেরণ করেন। আমিন খাঁ
আফ্রিদি নেতা আকমল খাঁর নিকট পরাজিত হলে সম্রাট আওরঙ্গজেব ক্ষুব্ধ হয়ে সেনাপতি মহব্বৎ খাঁকে
সেখানে প্রেরণ করেন। কিন্তু মহব্বৎ খাঁ যুদ্ধের পরিবর্তে আপোষ নীতির মাধ্যমে বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা
চালালে আওরঙ্গজেব সুজাত খাঁর নেতৃত্বে আরেকটি বাহিনী বিদ্রোহী আফ্রিদি উপজাতিদের বিরুদ্ধে প্রেরণ
করেন। কিন্তু সুজাত খাঁ সহ বহু মুঘল সৈন্য বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন এবং অনেক সৈন্য বন্দি হয়।
আফ্রিদি উপজাতির এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে খাটক উপজাতীয় নেতা কবি খুশ্হল খাঁ আফ্রিদি নেতা
আকমল খাঁর সঙ্গে যোগদান করেন। তাঁরা আফগান ও পাঠান জাতিকে একত্রিত হয়ে মুঘলদের বিরুদ্ধে এক


সার্বজনীন জাতীয় অভ্যুত্থানের আহŸান জানান। এদের দমন করবার জন্য সম্রাট পরপর ফরিদ খাঁ ও মহব্বৎ
খাঁকে প্রেরণ করে ব্যর্থ হন। মুঘল সৈন্য ও সেনাপতিগণ উপর্যুপরি ব্যর্থ হওয়ার ফলে সম্রাট নিজেই সৈন্য
পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি সসৈন্যে পেশোয়ারের নিকটবর্তী হাসান আবদালে উপস্থিত হন।
তিনি একই সঙ্গে ক‚টনীতি ও সামরিক নীতির দ্বারা বিদ্রোহী উপজাতিদের দমন করতে কৃতকার্য হন। তিনি
বিদ্রোহীদের কয়েকটি জায়গীর, অর্থ ও উচ্চপদ উপহার দিয়ে তাঁদের বশীভ‚ত করতে সক্ষম হন। খাটক ও
ইউসুফজাই উপজাতীয় নেতাদের পুত্রদ্বয় মুঘলদের পক্ষে যোগদান করে। বিদ্রোহীপন্থী অন্যান্যদের কঠোর
হস্তে দমন করা হয়। এভাবে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত সমস্যার সমাধান করে ১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেব
রাজধানী দিল্লিতে ফিরে আসেন।
আওরঙ্গজেবের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি সাময়িকভাবে সাফল্যলাভ করলেও তা মুঘল সাম্রাজ্যের পক্ষে
বেশ ক্ষতিকর হয়েছিল। প্রথমত, এই যুদ্ধের ফলে মুঘল রাজকোষ প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত,
রাজপুতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সীমান্ত অঞ্চল থেকে মুঘল সৈন্য সংগ্রহের পথ রুদ্ধ হয়েছিল। সর্বশেষে
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দাক্ষিণাত্য থেকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে মুঘল সেনাবাহিনীর এক বিরাট অংশকে
স্থানান্তরিত করার ফলে শিবাজীর পক্ষে মুঘল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করা সহজসাধ্য হয়েছিল। বস্তুত,
১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তী দেড় বৎসরের মধ্যে শিবাজী গোলকুন্ডা, বিজাপুর, কর্ণাটক প্রভৃতি অঞ্চলে নিজ
আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আওরঙ্গজেবের রাজপুতনীতি
সম্রাট আকবর ছিলেন প্রকৃত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শাসক। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি
সুদৃঢ় করতে হলে রাজপুতদের সাহায্য ও সহযোগিতা একান্তভাবে প্রয়োজন। তিনি রাজপুতগণের সঙ্গে
মিত্রতাসুলভ আচরণ করেন এবং তাঁদের সহায়তা লাভে সমর্থ হন। আকবরের রাজত্বকালে মুঘল সাম্রাজ্য
যে গৌরবের শিখরে আরোহণ করে তা বহুলাংশে রাজপুতদের অকুণ্ঠ সহায়তা লাভেই সম্ভবপর হয়েছিল।
আকবরের বিচক্ষণ এবং সার্থক রাজপুতনীতির আমুল পরিবর্তন ঘটে তাঁর প্রপৌত্র আওরঙ্গজেবের
রাজত্বকালে। রাজপুত বন্ধুত্বের ঐকান্তিক প্রয়োজনীয়তার কথা বিস্মৃত হয়ে আওরঙ্গজেব অত্যাচার ও
উৎপীড়নের নীতি গ্রহণ করেন।
১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে মাড়োয়ারের রাজা যশোবন্ত সিংহ মুঘল সেনাপতি হিসেবে আফগানিস্তান সীমান্তে যুদ্ধরত
অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে আওরঙ্গজেব মাড়োয়ার রাজ্য অধিকার করতে অগ্রসর হন। মাড়োয়ার রাজ্যটি
সামরিক এবং ব্যবসায়িক দিক থেকে রাজপুতনার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত ছিল। এসব কারণে আওরঙ্গজেব
মাড়োয়ার অধিকার করতে চেয়েছিলেন। রাজা যশোবন্ত সিংহের আকস্মিক মৃত্যু আওরঙ্গজেবকে তাঁর
উদ্দেশ্য কার্যে পরিণত করার সুযোগ এনে দেয়। আওরঙ্গজেব প্রথমে মাড়োয়ার রাজ্যটি খালিসার অন্তর্ভুক্ত
করেন এবং পরে মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করতে সচেষ্ট হন। তিনি ৩৬ লক্ষ টাকা নজরানার বিনিময়ে যশোবন্ত
সিংহের জনৈক আত্মীয় ইন্দ সিংহকে মাড়োয়ার সিংহাসনে বসান। কিন্তু এ সময়ে এক নতুন সমস্যার উদ্ভব
হয়। যশোবন্ত সিংহের মৃত্যুর ছয় মাস পর কাবুলে তাঁর দুই রাণীর গর্ভে দুই পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
তন্মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। এতে আওরঙ্গজেবের উদ্দেশ্য সাধনের পথে বাধার সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায়
মাড়োয়ারের রাণীদ্বয় নবজাত পুত্র অজিত সিংহকে সঙ্গে নিয়ে দিল্লিতে উপস্থিত হন। এবং মাড়োয়ারের
সিংহাসনে যশোবন্ত সিংহের পুত্রকে অধিষ্ঠিত করার দাবি জানালে আওরঙ্গজেব অজিত সিংহকে মুঘল
হারেমে রেখে লালন-পালন করার শর্তারোপ করেন। কিন্তু দুর্গাদাস নামে এক অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন
রাঠোর নেতা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। তিনি কৌশলে যশোবন্ত সিংহের
দুই রাণী ও শিশুপুত্র অজিত সিংহকে ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে মুঘল হারেম থেকে উদ্ধার করে নিরাপদে যৌধপুরে
নিয়ে যান। আওরঙ্গজেবের আচরণে রাঠোররা ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং দুর্গাদাসের নেতৃত্বে
অজিত সিংহকে মাড়োয়ারের রাজা বলে ঘোষণা করে। তখন আওরঙ্গজেব নিজ পুত্র আকবরকে দুর্গাদাসের


বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। তিনি স্বয়ং আজমীরে গিয়ে মুঘল সৈন্যবাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুঘল
বাহিনী ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে যৌধপুর অধিকার করেন। কিন্তু তাঁর এই আক্রমণাত্মক নীতিতে মাড়োয়ারের
রাঠোরদের সঙ্গে মেবারের রাজা রাজসিংহ-এর ঐক্য স্থাপিত হয়। মেবারের রাজপরিবারের সঙ্গে মাড়োয়ার
রাজপরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। মেবার বহুদিন মুঘলদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে
চলেছিল। মেবারের রাজা রাজসিংহ আওরঙ্গজেব কর্তৃক জিজিয়া কর পুনপ্রবর্তনে বিরক্ত হয়েছিলেন।
এরপর যখন আওরঙ্গজেব মাড়োয়ার রাজ্য আক্রমণ করেন তখন রাজসিংহ রাঠোরদের সাহায্যে অগ্রসর
হন। রাঠোর ও মেবারের রাজার এই ঐক্য রাজপুত ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই মিলিত শক্তির
নিকট শাহজাদা আকবর সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হন।অতপর আওরঙ্গজেব তাঁর পুত্র আজমকে মুঘল
সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে রাজপুতদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হন।
শাহজাদা আকবরের স্থলে শাহজাদা আজমকে মুঘল বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করায় শাহজাদা আকবর
অপমানবোধ করেন। তিনি রাজপুতদের সঙ্গে মিলিত হয়ে পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ১৬৮১
খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজেকে হিন্দুস্তানের সম্রাট বলে ঘোষণা দেন। এ সময়ে আওরঙ্গজেব আজমীরে অবস্থান
করছিলেন। তিনি কূটকৌশলে শাহজাদা আকবরের সঙ্গে রাজপুতদের বন্ধুত্ব বিনষ্ট করতে তৎপর হন।
আওরঙ্গজেব এমন একটি মিথ্যা পত্র পাঠালেন যা থেকে মনে হয় যে, শাহজাদা আকবর সম্রাটের উদ্দেশ্য
সাধনের জন্য এই নীতি গ্রহণ করেছেন।চিঠিখানা যাতে রাজপুতদের হস্তগত হয় আওরঙ্গজেব সেই ব্যবস্থাও
করলেন। রাজপুতরা আওরঙ্গজেবের ক‚টকৌশল বুঝতে না পেরে শাহজাদা আকবরকে পরিত্যাগ করেন।
রাজপুতেরা কিছুদিনের মধ্যে আওরঙ্গজেবের এই ক‚টকৌশল বুঝতে পারে। কিন্তু তখন আর সম্রাটের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সম্ভবপর ছিল না। আওরঙ্গজেব এইভাবে তাঁর কার্যে সিদ্ধি লাভ করলেন। শাহজাদা
আকবরের ঐকান্তিকতায় সন্তুষ্ট হয়ে রাঠোর সেনাপতি দুর্গাদাস পিতার ক্রোধ থেকে শাহজাদা আকবরকে
রক্ষা করার জন্য তাঁকে ১৬৮১ খ্রিস্টাব্দে মারাঠাদের নিকট পৌঁছে দেন। মারাঠা নেতা শিবাজীর পুত্র শম্ভুজীর
সঙ্গে শাহজাদা আকবরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
আওরঙ্গজেবের সঙ্গে মেবার ও মাড়োয়ারের যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। ১৬৮১ খ্রিস্টাব্দে শাহজাদা মুয়াজ্জমের
মধ্যস্থতায় মেবারের সঙ্গে মুঘলদের সন্ধি স্থাপিত হয়। কিন্তু মাড়োয়ারের সঙ্গে যুদ্ধ আওরঙ্গজেবের
জীবিতকালে সমাপ্ত হয়নি। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর দুই বছর পর ১৭০৯ খ্রিস্টাব্দে এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি
ঘটে। পরবর্তী মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (মুয়াজ্জম) অজিত সিংহকে মাড়োয়ারের রাজা হিসেবে
স্বীকৃতি প্রদান করেন।
আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বনাশ ডেকে আনে। অকাতরে অর্থ ব্যয় করে এবং
অগণিত সৈন্য ক্ষয় করে আওরঙ্গজেব দুই ক্ষুদ্র রাজপুত রাজাকে পরাজিত করতে পারেননি। এই নীতি
একদিকে মুঘল সাম্রাজ্যের পক্ষে সম্মান হানিকর ছিল, অন্যদিকে সাম্রাজ্যের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও
শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপরে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করেছিল। যে রাজপুত বীরত্ব মুঘলদের সাম্রাজ্যকে
বিস্তৃত করতে সাহায্য করেছিল, চরম সংকটের সময়ে আওরঙ্গজেব সেই সাহায্য থেকে বঞ্চিত হন।
মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অথবা উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের উপজাতিদের বিরুদ্ধে রাজপুত বীরত্ব মুঘল সম্রাটদের
পক্ষে একান্ত সহায়ক হতো। শাসনের দিক দিয়েও মুঘল সাম্রাজ্য দক্ষ কর্মচারী থেকে বঞ্চিত হয়। এইভাবে
মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের বীজ উপ্ত হয়।
আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি
আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি পূর্ববর্তী মুঘল সম্রাটদের দাক্ষিণাত্যে রাজ্য সম্প্রসারণ নীতির অনুসরণ বলা
যেতে পারে। সম্রাট আকবরের আমল থেকেই দাক্ষিণাত্যে মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রচেষ্টা চলে আসছিল।
আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতিকে দুইভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করা যায় ঃ (১) পিতা শাহজাহানের


রাজত্বকালে দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তারূপে আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি,(২) সম্রাট হিসেবে
আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি।
শাহজাহানের শাসনকালে আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি
দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা হিসেবে আওরঙ্গজেব দুইবার নিযুক্ত হন এবং সেখানে আক্রমণাত্মক নীতি অনুসরণ
করেন। প্রথমবার তিনি ১৬৩৬ খ্রি. থেকে ১৬৪৩ খ্রি. পর্যন্ত দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তার পদে অধিষ্ঠিত
ছিলেন। ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় তিনি দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। দাক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরীণ
শাসনব্যবস্থাকে সংগঠিত করে আওরঙ্গজেব গোলকুন্ডা ও বিজাপুরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। তাঁর
উদ্দেশ্য ছিল এই দুই শিয়া সুলতানি রাজ্যের স্বাধীনতা লুপ্ত করা। গোলকুন্ডার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এককালের
মণিমুক্তা ব্যবসায়ী, প্রচুর অর্থের অধিকারী মীর জুমলা। তিনি স্বাধীন শাসনকর্তার ন্যায় আচার-আচরণ
করতে থাকলে গোলকুন্ডার সুলতান কুতুব শাহ উদ্ধত প্রধানমন্ত্রীকে নিরস্ত্র করতে চেষ্টা করেন। মীর জুমলা
নিজের প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য এই সময় দাক্ষিণাত্যের মুঘল শাসনকর্তা আওরঙ্গজেবের সঙ্গে গোপনে
যোগাযোগ আরম্ভ করেন। গোলকুন্ডাকে মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করাই ছিল আওরঙ্গজেবের একমাত্র লক্ষ্য। এই
বিষয়ে তিনি মীর জুমলার সঙ্গে গোপনে ষড়যন্ত্র করেন। কিন্তু দারাশিকোহ এবং জাহানারার হস্তক্ষেপে তিনি
গোলকুন্ডা জয় করতে পারেননি। সুলতান প্রচুর অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিয়ে নিজ রাজ্যের স্বাধীনতা রক্ষা
করেন এবং নিজ কন্যার সঙ্গে আওরঙ্গজেবের পুত্র মুহাম্মদের বিবাহ দেন। কুতুব শাহের মৃত্যুর পর
গোলকুন্ডার শাসক হিসেবে মুহাম্মদ অধিষ্ঠিত হবেন এই প্রতিশ্রুতিও আওরঙ্গজেব কুতুব শাহ থেকে আদায়
করেন।
এরপর আওরঙ্গজেব বিজাপুরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। আদিল শাহের মৃত্যুর পর বিজাপুরে যে বিশৃ´খল
অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তা আওরঙ্গজেবকে ঈপ্সিত সুযোগ দান করে। সম্রাট শাহজাহানের অনুমতি নিয়ে
১৬৫৭ খ্রি: বিজাপুর আক্রমণ করেন। মীর জুমলা এই যুদ্ধে তাঁকে সহযোগিতা দান করেন। একে একে
বিদর, কল্যাণী অধিকার করে তিনি যখন রাজধানী বিজাপুর অভিমুখে যাত্রা করেন ঠিক তখনই জাহানারা ও
দারার প্ররোচনায় শাহজাহান হস্তক্ষেপ করেন। বিজাপুরের সুলতান সন্ধি করে প্রচুর ক্ষতিপূরণ এবং বিদর,
কল্যাণী এবং পরীন্দা মুঘলদের দিয়ে দেন। অতপর শাহজাহানের মৃত্যু এবং তাঁর পুত্রদের উত্তরাধিকার
দ্বন্দে¡র জন্য দাক্ষিণাত্যে মুঘল বিজয় সাময়িকভাবে স্থগিত থাকে।
সম্রাট হিসেবে আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি
আওরঙ্গজেব সিংহাসন লাভের পর তাঁর নীতি কার্যে পরিণত করার পরিপূর্ণ সুযোগ লাভ করেন। তাঁর
শাসনকালের প্রথম যুগে মূলত উত্তর ভারতই তাঁর রাজনৈতিক কার্যক্ষেত্র ছিল। এই সময়ে দক্ষিণ ভারতে
মারাঠা বীর শিবাজীর অভ্যুদয় হয়। আওরঙ্গজেব যখন দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা তখন হতেই শিবাজী ধীরে
ধীরে ক্ষমতা বিস্তার করছিলেন।সিংহাসন লাভের পর আওরঙ্গজেব নিজ মাতুল শায়েস্তা খানকে দাক্ষিণাত্যের
শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। শায়েস্তা খান প্রথম দিকে সাফল্য লাভ করলেও মারাঠা জাতীয় অভ্যুত্থানের
নেতা শিবাজীকে প্রতিহত করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। ব্যর্থ শায়েস্তা খান বাংলায় প্রেরিত হন। এরপর
আওরঙ্গজেব তাঁর দুই খ্যাতনামা সেনাপতি দিলির খাঁ ও জয়সিংহকে শিবাজীর বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। তাঁরা
সাময়িকভাবে সাফল্য লাভ করলেও শিবাজীর ক্ষমতাকে দমন করতে পারেননি। শিবাজী অপ্রতিহতভাবে
নিজ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকেন। উত্তর ভারতে নানা সমস্যায় ব্যস্ত সম্রাট দাক্ষিণাত্যে দৃষ্টি দিতে পারেননি।
এর পরিপূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করলেন মারাঠা নেতা শিবাজী। শিবাজী নিজ দক্ষতার স্বাধীন মারাঠা রাজ্যের
সূত্রপাত করেন। অবশেষে ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে শিবাজীর মৃত্যুর পর বিদ্রোহী শাহজাদা আকবর যখন শিবাজীর
পুত্র শম্ভূজীর সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন তখন আওরঙ্গজেব আর স্থির থাকতে পারলেন না। সেই সময়ে
তিনি মেবারের সঙ্গে সন্ধি স্থাপনের মাধ্যমে রাজপুত যুদ্ধের অবসান ঘটান এবং ১৬৮১ খ্রি. স্বয়ং দাক্ষিণাত্য
অভিমুখে যাত্রা করেন।


১৬৮১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আওরঙ্গজেবের মূল কার্যক্ষেত্র ছিল দক্ষিণ ভারত। তিনি এবার
দাক্ষিণাত্যের সুলতান শাসিত দু'টি রাজ্যের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করেন। গোঁড়া সুন্নী আওরঙ্গজেবের পক্ষে শিয়া
গোলকুন্ডা ও বিজাপুরের সুলতানদের স্বাধীন অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়া সহজ ছিল না। অনস্বীকার্যভাবে এই
দুই রাষ্ট্র তখন ক্ষয়িষ্ণু এবং বিশৃ´খল অবস্থায় ছিল। বিজাপুর ছিল অন্তর্দ্বন্দে¡ জর্জরিত। মারাঠা অভ্যুত্থান
তার ক্ষমতাকে বহুল পরিমাণে সংকুচিত করেছিল। ১৬৮৪ খ্রি. আওরঙ্গজেব বিজাপুর অবরোধ করলে
সুলতান আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। এরপর তিনি ১৬৮৭ খ্রি. গোলকুন্ডা রাজ্য আক্রমণ করেন।
গোলকুন্ডার জনৈক রাজকর্মচারীর বিশ্বাসঘাতকতায় আওরঙ্গজেব গোলকুন্ডাকে মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করতে
সক্ষম হন।
বিজাপুর ও গোলকুন্ডা অধিকার করে আওরঙ্গজেব মারাঠা শক্তিকে বিনষ্ট করতে অগ্রসর হন।
আওরঙ্গজেবের আক্রমণ অপ্রত্যাশিত সাফল্য লাভ করে। ১৬৮৯ খ্রি. শিবাজীর পুত্র শম্ভুজীকে পরাজিত ও
নিহত করে আওরঙ্গজেব মারাঠা রাজধানী রায়গড় অধিকার করেন। শম্ভুজীর নাবালক পুত্র শাহু বন্দি হন
এবং তাকে মুঘল অন্তপুরে রাখা হয়। উল্লসিত আওরঙ্গজেব মুঘল ক্ষমতা সুদূর দক্ষিণে বিস্তৃত করেন।
১৬৯০ খ্রি: তাঞ্জোর ও ত্রিচিনপল্লীর হিন্দু রাজাগণ তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে নেন। এভাবে সম্রাটের ক্ষমতা
উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করে। কিন্তু মুঘল সামরিক শক্তি মারাঠা জাতির উত্থানকে দমন করতে
পারেনি। ১৬৯১ খ্রি. পর মারাঠারা শম্ভুজীর ভ্রাতা রাজারাম এবং তাঁর পতœী তারাবাই-এর নেতৃত্বে ক্ষমতা
পুনরুদ্ধার করে মুঘলদের বিরুদ্ধে জাতীয় সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে রাজারামের মৃত্যু হলে
তাঁর পতœী তারাবাই নাবালক পুত্র দ্বিতীয় শিবাজীর নামে রাজ্য শাসন করতে থাকেন। এভাবে মারাঠাদের
মধ্যে জাতীয়তাবাদী প্রতিরোধ সৃষ্টি হয়। মারাঠাদের এই জাতীয় প্রতিরোধ দমন করা আওরঙ্গজেবের পক্ষে
সম্ভব হয়নি।
দাক্ষিণাত্যে আওরঙ্গজেবের ব্যর্থতার কারণ
দাক্ষিণাত্যে আওরঙ্গজেবের ব্যর্থতার মূল কারণ হলো মুঘল ও মারাঠা বাহিনীর সংগঠন ও রণকৌশলের
চরিত্রগত পার্থক্য। মারাঠাগণ ত্বরিৎ আক্রমণ ও গেরিলা যুদ্ধে সুশিক্ষিত ছিল। তার ওপর তারা ছিল কষ্ট
সহিষ্ণু ও জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ। সেই তুলনায় মুঘল বাহিনীর বিশালত্ব, ভারী অস্ত্রশস্ত্র এবং দরবারী জীবনে
অভ্যস্ত বিলাস ও আরামপ্রিয়তা তাদেরকে অকর্মণ্য করে তুলেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রেও মুঘল সেনাপতিগণ
রাজধানীর বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন। স্বভাবতই তাঁদের গতি ছিল শ্লথ ও মন্থর। দ্বিতীয়ত,
আওরঙ্গজেবের হিন্দুনীতি রাজপুতগণকে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতি বিদ্বেষী করে তুলেছিল। তাই আওরঙ্গজেবের
রাজপুত সেনাপতিগণ হিন্দু মারাঠাদের বিরুদ্ধে নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে যুদ্ধ করেননি। তৃতীয়ত, মুঘল
সেনাপতিগণের বিলম্বিত নীতি, আক্রমণে তৎপরতার অভাব ও ষড়যন্ত্রপ্রিয়তা বহুলাংশে মুঘল বিপর্যয়ের
অন্যতম কারণ ছিল।
দাক্ষিণাত্যে নীতির সমালোচনা
আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি বিশেষত বিজাপুর ও গোলকুন্ডার প্রতি তাঁর ব্যবহারের যৌক্তিকতা সম্বন্ধে
ঐতিহাসিকরা একমত নন। এলফিনস্টোন এবং ভিনসেন্ট স্মিথ আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতিকে তাঁর
চরম রাজনৈতিক নির্বুদ্ধিতার নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, আওরঙ্গজেব এই দুই সুলতানি
রাজ্যের স্বাধীনতা হরণ করে এবং তাদের শক্তিকে বিনষ্ট করে দক্ষিণ ভারতে মারাঠাদের অভ্যুত্থানকে
পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছিলেন। তাঁরা মনে করেন, এই দুই রাজ্যের স্বাধীনতা যদি অব্যাহত থাকতো
তাহলে তারা স্বাভাবিকভাবেই মারাঠা শক্তিকে বাধা দান করতো এবং মারাঠাদের অভ্যুত্থান সহজ হতো না।
কিন্তু স্যার যদুনাথ সরকার, ড. কালীকিঙ্কর দত্ত প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ এই মতবাদকে স্বীকার করেননি।


তাঁদের মতে, মারাঠা শক্তি প্রতিরোধে মুঘল শক্তি এবং এই দুই সুলতানদের মধ্যে মৈত্রী সম্ভব ছিল না।
কারণ সাম্রাজ্যবাদী মুঘল সম্রাটদের সাম্রাজ্য লিপ্সার সঙ্গে এই দুই সুলতান বহুদিন ধরেই পরিচিত ছিলেন
এবং সে অবস্থায় নিছক মারাঠা শক্তিকে দমন করার জন্য এই শত্রুতা দূর হতে পারে না। স্যার যদুনাথ
সরকারের মতে, আকবরের বিন্ধ্য পর্বত অতিক্রম করার পর হতেই দাক্ষিণাত্যের সুলতানগণ উপলব্ধি
করেছিলেন যে, তাঁদের রাজ্য মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করাই মুঘল সম্রাটগণের প্রকৃত উদ্দেশ্য। দ্বিতীয়ত,
বিজাপুর, গোলকুন্ডা রাজ্যের শক্তি তখন ক্ষয়িষ্ণু ছিল। তাঁদের সামরিক দক্ষতা এবং ক্ষমতা এরূপ ছিল না
যে, একটি জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ নতুন শক্তিকে তাঁরা পরাজিত করতে পারেন। তৃতীয়ত, এই দুই
সুলতানির মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ-বিসম্বাদ একটি চিরন্তন সমস্যা ছিল। সুতরাং তারা যে এই বিবাদ-
বিসম্বাদের উর্ধ্বে ওঠে ঐক্যবদ্ধভাবে মারাঠাদের বাধা দেবে এই সম্ভাবনা একেবারেই ছিল না। এই অবস্থায়
আওরঙ্গজেবের অনুসৃত নীতিকে পরিপূর্ণভাবে অবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করা যুক্তিযুক্ত হবে না। মুঘল
সাম্রাজ্যের পতনের জন্যও একমাত্র আওরঙ্গজেবকেই অযথা দায়ী করার মধ্যে যথেষ্ট যুক্তি নেই।
আওরঙ্গজেবের ধর্মীয় নীতি
আওরঙ্গজেব ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান সুন্নী মুসলমান। তাঁর ধর্মীয় নীতির লক্ষ্য ছিল, শরীয়ত অনুযায়ী
ভারতে ইসলাম ধর্মকে এমন শক্তিশালী করা যার ফলে ভারত প্রকৃত ইসলামী রাষ্ট্র স্থাপিত হবে এবং রাষ্ট্রের
প্রতিটি কাজকর্ম ইসলামী ধ্যান-ধারণা ও আচার-অনুষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হবে। এই গোঁড়া ধর্মীয় নীতি তাঁর
রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাহায্য করে। দ্বিতীয়ত, ভ্রাতৃযুদ্ধের সময় আওরঙ্গজেব নিজেকে গোঁড়া সুন্নীদের
প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লির সিংহাসনে তাঁর দাবি জানান। এবং একই সঙ্গে তিনি তাঁর উদার মতাবলম্বী অগ্রজ
দারাকে অধার্মিক ও ইসলামবিরোধী বলে ঘোষণা করেন। এরফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নী সম্প্রদায়ভুক্ত
মুসলমানেরা তাঁকে সমর্থন জানায়। অতএব, আওরঙ্গজেবের শাসন নীতি তাঁর ব্যক্তিগত খেয়ালখুশী বা
পার্থিব লাভ-লোকসানের দ্বারা নির্ধারিত হয়নি। নিষ্ঠাবান সুন্নী মুসলমান হিসেবে তিনি ইসলামী রাজতন্ত্রে
বিশ্বাসী ছিলেন। এই রাজতন্ত্রের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল যে, শাসক পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত নীতি
অনুসারে রাজ্য শাসন করবেন। তাঁর রাজ্য শাসনের মূলনীতিই হবে পবিত্র কোরআনের নীতিগুলোকে
শাসনের মাধ্যমে কার্যকর করা। এই নীতি কার্যকর করতে গিয়ে তিনি ইসলামের অনুশাসনগুলো
কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে থাকেন। ফলে তাঁর শাসনকালে মুঘল রাষ্ট্রের বহুল অংশ ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রে পরিণত
হয়। এর ফলে ভারতবর্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলমান প্রজারা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে
নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।
সুন্নী মুসলমান প্রজাগণ আওরঙ্গজেবকে ‘জিন্দাপীর' বলে মনে করতেন। তিনি সিংহাসনে আরোহণ করে
ইসলাম শাস্ত্র বিরোধী আচার-আচরণ নিষিদ্ধ করেন। তিনি মুদ্রায় ‘কলেমা' উৎকীর্ণ করা বন্ধ করেন। কারণ
তিনি মনে করতেন, অমুসলমানদের হাতে গেলে তা অপবিত্র হবে। তিনি ‘নওরোজ' উৎসব বন্ধ করে দেন।
যদিও তাঁর পূর্ববর্তী সম্রাটগণ এই উৎসব পালন করতেন। আওরঙ্গজেব এই উৎসবকে ইসলামবিরোধী বলে
মনে করতেন। এছাড়া মুহতাসিব নামে একদল রাজকর্মচারী নিয়োগ করা হয়। যাদের কাজ ছিল কোরআন
নির্দেশিত পথে জনসাধারণ আচরণ করছে কিনা তা দেখা। কোরআনে অননুমোদিত আচার-অনুষ্ঠান কঠোর
হস্তে দমন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সম্রাট তাঁর অনুশাসন কার্যকর করতে গিয়ে শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে
সকল মুসলমানকে শাস্তি দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি শিয়াদের ‘মহরম' উৎসব পালন
নিষিদ্ধ করেন।
১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেব দরবারে নৃত্যগীত নিষিদ্ধ করেন। রাজত্বের একাদশ ও দ্বাদশ বছরে যথাক্রমে
সোনা, রূপা ও মণিমুক্তা দিয়ে বছরে দু'বার সম্রাটের দেহ ওজনের যে প্রথা এবং প্রত্যহ সকালে
জনসাধারণকে দর্শন (ঝরোকা) দেওয়ার যে রীতি ছিল তা তিনি বন্ধ করে দেন। আওরঙ্গজেব তাঁর জন্মদিন


ও অভিষেক দিনে উৎসব পালন বন্ধ করেন। তাঁর মতে, এসব রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান ছিল ইসলাম
বিরোধী।
১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেব এক নির্দেশনামায় হিন্দু প্রজাদের ওপরে পুনরায় জিজিয়া কর স্থাপন করেন।
তবে বালক, নারী, দাস, ভিখারী এবং নিঃস্বদের এই কর দিতে হতো না। হিন্দু প্রজারা এই কর
পুনস্থাপনের জন্য প্রতিবাদ জানালে জিজিয়া কর প্রত্যাহার করা হয়নি। তবে একথা সত্যি যে, তিনি হিন্দু
ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতার বশবর্তী হয়ে জিজিয়া কর প্রবর্তন করেননি। যুদ্ধ-বিগ্রহের ফলে প্রচুর অর্থ ব্যয়
হওয়ায় রাজকোষ প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছিল। রাজকোষকে উন্নত করার জন্য তাঁর রাজত্বের অনেক বছর পরে
তিনি জিজিয়া কর পুনপ্রবর্তন করেন।
সর্বশেষে বলা যায়, একজন গোঁড়া ও নিষ্ঠাবান মুসলমান হিসেবে আওরঙ্গজেব তাঁর স্বীয় ধর্মের দ্বারা
সম্পূর্ণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।
আওরঙ্গজেবের ব্যক্তিত্ব ও কৃতিত্ব
মধ্যযুগে ভারতবর্ষের মুঘল ইতিহাসে আওরঙ্গজেব ছিলেন একজন ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তিত্ব। তাঁর দোষগুণের
সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ বিচার অনেক ক্ষেত্রে করা হয়নি। তাঁর পিতা সম্রাট শাহজাহানকে নজরবন্দি করে রাখা
এবং উত্তরাধিকার যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ¡ী ভ্রাতাদের রক্তপাতের জন্য অধিকাংশ ঐতিহাসিক যুগধর্মকে ও মুসলিম
উত্তরাধিকার আইনকে বিচার না করে আওরঙ্গজেবের চরিত্রকে কালিমা লিপ্ত করেছেন। অথচ শাসক হিসেবে
তাঁর যোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। আওরঙ্গজেব ছিলেন একজন সুদক্ষ শাসক, সমর নায়ক ও সূ² ক‚টনৈতিক
জ্ঞানসম্পন্ন রাজনীতিবিদ। বিপদে তিনি কখনও সাহস ও ধৈর্য হারাননি। দাক্ষিণাত্যের শাসক হিসেবে তিনি
দাক্ষিণাত্যের অভ্যন্তরীণ অবস্থা উন্নতি বিধানের চেষ্টা করেন। শাসনকার্যের খুঁটিনাটি বিষয়ও তাঁর দৃষ্টি
এড়াতো না। আইন অমান্যকারীকে কঠোর হস্তে দমন করতেন। শাসন ব্যাপারে তিনি নিজের সর্বাত্মক
প্রাধান্যের পক্ষপাতি ছিলেন। আওরঙ্গজেবের নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা ও তাঁর নিয়মতান্ত্রিকতা প্রশংসার দাবি
রাখে। কাফী খান বলেন, সাহস কষ্ট সহিষ্ণুতা এবং সুবিচারের ক্ষেত্রে আওরঙ্গজেব অপ্রতিদ্বন্দ¡ী ছিলেন।
ইসলামী শাস্ত্রে তিনি প্রভুত জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। ফারসি সাহিত্য, আরবিয় আইন-কানুন, নীতিশাস্ত্র
প্রভৃতিতে তিনি পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম আমলের সর্ববৃহৎ আইন
সংকলন ‘ফতোয়া-ই-আলমগীরী', কাফী খানের ‘মুনতাখাব-আল-জেবুর', ‘আলমগীরনামা', মা'আসীর-ইআলমগীরী, ‘খুলাসাত-আত-তাওয়ারীখ' প্রভৃতি ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি
ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ এবং অনাড়ম্বর। পবিত্র কুরআনের অনুলিপি প্রস্তুত করে এবং নিজহস্তে টুপি
সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মিতাহার, স্বল্পনিদ্রা, মাদক দ্রব্যাদিতে অনাসক্তি প্রভৃতি ছিল তাঁর
ব্যক্তিগত চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।
সারসংক্ষেপ
মুঘল সম্রাটদের মধ্যে আওরঙ্গজেব ছিলেন অন্যতম দক্ষ শাসক ও সমর নায়ক। তাঁর সময়ে মুঘল
সাম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তৃতি ঘটে। তবে সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটলেও সাম্রাজ্যে বিশৃ´খলা দেখা দেয়।
দাক্ষিণাত্যে মারাঠাদের উত্থান ঘটে। বিশাল সাম্রাজ্যের জটিল শাসনব্যবস্থার প্রতিটি সামান্য বিষয়েও
ব্যক্তিগতভাবে লক্ষ্য করে কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। তাঁর
মতো এত সাধাসিধে সম্রাট দিল্লির সিংহাসনে বসেননি।


পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। কোন সম্রাটের আমলে মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তৃতি ঘটে?
(ক) আকবরের আমলে (খ) জাহাঙ্গীরের আমলে
(গ) শাহজাহানের আমলে (ঘ) আওরঙ্গজেবের আমলে।
২। অহোমের রাজধানী কোথায় ছিল?
(ক) বিহার (খ) গড়ঁগা
(গ) উড়িষ্যা (ঘ) পালামৌ।
৩। মীর জুমলার মৃত্যুর পর বাংলার মুঘল শাসনকর্তা কে ছিলেন?
(ক) শায়েস্তা খাঁ (খ) মানসিংহ
(গ) ইসলাম খাঁ (ঘ) ঈসা খাঁ।
৪। আওরঙ্গজেবের পুত্র আকবর কত খ্রি. বিদ্রোহ ঘোষণা করেন?
(ক) ১৭০৭ (খ) ১৬৮১
(গ) ১৬৭৫ (ঘ) ১৬৮২।
৫। বিজাপুর ও গোলকুন্ডার সুলতানগণ কোন মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন?
(ক) শিয়া (খ) সুন্নি
(গ) খারেজী (ঘ) জবরিয়া।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। বাংলার শাসনকর্তা মীর জুমলা অহোম ও কুচবিহার অভিযান সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিন।
২। আওরঙ্গজেবের রাতপুত নীতির ফলাফল বর্ণনা করুন।
৩। দাক্ষিণাত্যেআওরঙ্গজেব কেন ব্যর্থহন?
৪। আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি সম্পর্কেঐতিহাসিকদের মতামত ব্যক্ত করুন।
৫। আওরঙ্গজেবের ধর্মীয়নীতির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। আওরঙ্গজেবের সাম্রাজ্য বিস্তারনীতি সম্পর্কে যা জানেন লিখুন।
২। আওরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি পর্যালোচনা করুন।
৩। আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির বিবরণ দিন।
৪। আওরঙ্গজেবের ধর্মীয় নীতির বিশেষ উল্লেখপূর্বক তাঁর ব্যক্তিত্ব ও কৃতিত্ব বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]