আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পশ্চিম এশিয়ার গুরুত্ব

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পশ্চিম এশিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। এ অঞ্চলে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু এ অঞ্চলের বিশেষ করে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ফিলিস্থিনির ইতিহাস হল রক্তঝরা সংঘাতের ইতিহাস। এর সূত্রপাত হয় উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন ও ইউরোপীয় স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠীর চক্রান্তে । তিনটি মহাদেশ ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় বিস্তৃত অটোমান সাম্রাজ্য ঐ স্বার্থন্বেষী চক্রের ষড়যন্ত্রে সঙ্কুচিত হয়ে ‘ইউরোপের রুগ্ন ব্যক্তিতে' পরিণত হয় । তুরস্ককে খণ্ড-বিখণ্ড করে বৃটিশ ও ফরাসী আধিপত্যবাদ কায়েম হয়। ইহুদী, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের উৎপত্তি, বিকাশ ও কেন্দ্রস্থল এ অঞ্চলে আন্তর্জাতিক রাজনীতির চাঞ্চল্যকর অবস্থা বিরাজমান রয়েছে। এ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হতে পারে বলে আধুনিক ঐতিহাসিককরা মন্তব্য করেন ।
বিভিন্ন কারণে পশ্চিম এশিয়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এর প্রধান কারণ হল এ এলাকার ভৌগলিক অবস্থান । সাধারণভাবে প্রাচ্য ও প্রতীচ্য এবং বিশেষভাবে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করেছে মধ্যপ্রাচ্য । প্রাচীনকালেও এ অঞ্চল প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে ‘সেতু বন্ধন' হিসেবে কাজ করেছে। খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৪৮০ পর্যন্ত পারস্যরাজ দরায়ূস ও জারেক্রেস মধ্য প্রাচ্যের মধ্যে দিয়েই গ্রীস দখলের অভিযান চালিয়েছিল। প্রায় দেড়শত বৎসর পরে আলেকজাণ্ডার তার প্রাচ্য অভিযান চালিয়েছিলেন এ এলাকার উপর দিয়েই। তুর্কী সাম্রাজ্যের অধীনে থাকাকালীন বিভিন্ন অর্থনৈতিক কারণে এ এলাকার গুরুত্ব হ্রাস পায়। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সুয়েজখাল খননের ফলে এ এলাকার ভৌগলিক গুরুত্ব আবার বৃদ্ধি পায় । এবং এটা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলাচলের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বলে পরিগণিত হতে থাকে ।
মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বিপুল পরিমাণে খনিজ তেল আবিষ্কার আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এ এলাকার গুরুত্ব বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। ১৯০৮ সালে ইরানের মসজিদ-ই-সুলায়মান নামক স্থানে তেল আবিষ্কৃত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে তেলের অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়। শতাব্দীর দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দশকে আরো অনেকগুলো দেশে বিপুল পরিমাণ তেল আবিষ্কৃত হয়। এর ফল হিসেবে এ এলাকার দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ অবস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এক নতুন মোড় নেয় ৷
অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পশ্চিম এশীয় দেশগুলোর মধ্যযুগীয় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের সাথে পশ্চিমা দেশগুলো হতে আমদানি করা আধুনিক ভাবধারা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, যন্ত্রপাতি ও জীবন-যাপন পদ্ধতির সংঘাতের ফলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নৈরাজ্য ও একটি সর্বব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে এ এলাকার দেশগুলো পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্বার্থের দাবাখেলার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল, যদিও বর্তমানে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। শিল্প সমৃদ্ধ পশ্চিমে ইউরোপীয় দেশগুলোর কলকারখানা নিয়মিত তেল সরবরাহের উপর একান্তভাবে নির্ভরশীল । নিজেদের স্বার্থের তাগিদেই তারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রয়াস পেয়েছে। দেশগুলোতে তারা এমন ধরণের সরকার চেয়েছে, সে সরকার তাদের অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষা করে চলবে। ড. মুসাদ্দেকের মত পাশ্চাত্য বিরোধী নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করাই তাদের নীতি। এ অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পাশ্চাত্য দেশগুলোর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে।
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের কিছু আগে হতেই বৃটিশ নৌবহর কয়লার পরিবর্তে তেল ব্যবহার করতে শুরু করে। এর ফলে পশ্চিম এশিয়ার তেলের নিয়মিত সরবরাহ বৃটিশ রাজনীতিবিদ ও সমরনায়কদের চিন্তাধারায় একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় এ এলাকার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেলেও তখনো আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে নাই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জেনারেল এ্যালেনবীর মধ্যপ্রাচ্য অভিযান একটি ছোট খাটো ঘটনা বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে এ এলাকার গুরুত্ব অনেকগুণে বেড়ে যায় ৷ ক্রমবর্ধমান হারে তেল উৎপাদন, সমাজতন্ত্রী দেশ হিসেবে রাশিয়ার অভ্যুদয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রশ্নে রাশিয়া ও পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিশ্ব রাজনীতিতে সুয়েজ খালের গুরুত্ব বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে বৃটেনসহ পাশ্চাত্যের অন্যান্য শক্তি, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব নিশ্চিত করার জন্য ব্যগ্র হয়ে উঠে ।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। এ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে এ সময় বৃটিশ নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিশেষ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হয়। ১৯৪০ সালের অক্টোবর মাসে বৃটেন যখন জার্মান বিমান আক্রমণের মুখে জীবন-মরণ সংগ্রামে লিপ্ত এবং যখন বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জের উপর যে কোন মুহূর্তে বিমান আক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছিল ঠিক সেই সংকট মুহূর্তেও প্রধানমন্ত্রী চার্চিল মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন । অক্টোবর মাসের ১৩ তারিখে জেনারেল ইসমেকে (General Ismay ) তিনি লিখেন—
"Should October pass without invasion. we should begin the reinforcement of the Middle East by the cope route to the utmost extent our shipping permits sending .....the armoured units, the Australians and New Zealanders in November, another British divi- sion before Christmas, and at least four more during January. February and March......The time has come also for a further strong reinforcement of the Middle East by bombers and by fighters. I should be glad to know how far the chiefs of staff would be prepared to go, observing that through the risk is very great, so also is the need."

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]