আরব জাতীয়তা বিকাশে মিশরে ইব্রাহিম পাশার অবদান

মিশরে ইব্রাহিম পাশার অবদান (৩)
আরব জাতীয়তাবাদের বিকাশে ইব্রাহীম পাশার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁকে আরব জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রবক্তা বলা হয়। আরব জাতীয়তাবাদ বিকাশে তাঁর অবদান নিম্নে আলোচনা করা হল ।
পিতার যোগ্য উত্তরসূরী : ইব্রাহীম পাশা ছিলেন তাঁর পিতা মুহাম্মদ আলীর সুযোগ্য উত্তরসূরী। সিরিয়া জয়ের পর মুহাম্মদ আলী-পাশা তাঁর পুত্র ইব্রাহীম পাশাকে সিরিয়ার গভর্ণর নিযুক্ত করেন। পিতার মত তিনিও ছিলেন আরব জাতীয়তাবাদের ধারক ও বাহক। তবে পিতা অপেক্ষা তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা ভিন্ন হলেও তিনি পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তিনি নিজেকে একজন আরব বলতে গর্ববোধ করতেন এবং আরবি ভাষায় কথা বলতেন। মিশরের আলো বাতাসে বড় হওয়ায় আরব জাতীয়তাবাদের প্রতি তাঁর আন্তরিক সহানুভূতি ছিল । সিরিয়ায় তার শাসনামলের প্রথম দুই বছর তিনি সিরিয়াবাসীর মনে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করার জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালান। পিতার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি সিরিয়াবাসীকে বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, মুহাম্মদ আলী পাশার শাসনের ফলে সিরিয়ায় এক নবযুগের সূচনা হয়েছে।
সংস্কার : সিরিয়ার গভর্ণর হওয়ার পর তিনি সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন। সেনাবাহিনীর মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলার জন্য তিনি আরবদের প্রাচীন বীরত্ব গাঁথার বর্ণনা দিতেন। সিরিয়ার শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করার পর সিরিয়ার প্রশাসন যন্ত্রকে উন্নত ও দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন । তিনি আইন, বিচার, কর ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেন। শাসনকার্য পরিচালনার জন্য তিনি আরবদেরকে নিযুক্ত করেন। আরবদের শাসনকার্য পরিচালনার যোগ্যতা সম্পর্কে তার পূর্ণ আস্থা ছিল। তাঁর শাসনামলে সিরিয়ায় এক নব যুগের সূচনা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি তাঁর অর্জন ও সফলতাগুলো উল্লেখ করে দেখানোর চেষ্টা করেন যে, যদি তুর্কি শাসন থেকে চূড়ান্তভাবে মুক্তি লাভ করা সম্ভব হয় তাহলে আরবদের জন্য আরো উন্নত ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে ৷
আরব রেঁনেসা : ইব্রাহীম পাশার শাসনামলেই সিরিয়া ও লেবাননে বুদ্ধিবৃত্তিক পুনজাগরণ ঘটে, তার সময়েই প্রথম বৈরুতে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ফরাসী ও মার্কিন মিশনারীদের স্বাধীনভাবে কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি দেন। ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় কিছু মিশনারি বিদ্যালয় স্থাপিত হয় । আর এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভের ফলে আরবদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় যা আরব জাতীয়তাবাদের বিকাশে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইব্রাহীম পাশা নিজেও সিরিয়ায় প্রচুর সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি দামেস্ক, আলেপ্পো এবং এ্যান্টিওতে বেশ কিছু কলেজ স্থাপন করেন। এসব কলেজে মুসলিম শিক্ষার্থীরা সরকারি খরচে পড়াশুনা করতো। তবে ইব্রাহীম এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তার রাজনৈতিক ও সামরিক প্রয়োজন মিটানোর হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। তাই অনেক মুসলিম অভিভাবকদের তা পছন্দ ছিল না। তারা তাদের সন্তানদের সামরিক প্রশিক্ষণ মুক্ত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ইব্রাহীমের স্কুলের বিকল্প হিসেবে বেশ কিছু স্কুল স্থাপন করেন । এভাবে আরব রেঁনেসার সূত্রপাত হয় ।
মূল্যায়ন : ইব্রাহীম পাশার এতসব সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের পরও সিরিয়ায় তার শাসন ক্ষমতা স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে নি। মাত্র আট বছর পর তাকে সিরিয়া ত্যাগ করতে হয়। এর কারণ হিসেবে বলা যায় তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও এশিয়া মাইনর অভিযান ইউরোপীয় শক্তিসমূহ এবং তুর্কি সুলতানের মনে শঙ্কার সৃষ্টি করেছিল। ইব্রাহীম এবং তার পিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য সে সময় এমন একটি আবহ সৃষ্টি করেছিল যে, মনে হচ্ছিল অল্প কিছু কালের মধ্যেই তুর্কি সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যাবে এবং মিশর তুর্কি সাম্রাজ্যের স্থলাভিষিক্ত হবে। কিন্তু ইউরোপীয় শক্তিগুলো ছিল তুর্কি সাম্রাজ্যের অখণ্ডতার পক্ষে, তাই ইউরোপীয় রাষ্ট্রনেতাদের চাপে মুহাম্মদ আলী সুলতানের সাথে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হন এবং বংশানুক্রমিক শাসন ক্ষমতার বদলে সুলতান অনুমোদিত সিরিয়ার আজীবন শাসন ক্ষমতা নিয়েই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। কেননা ইউরোপীয় শক্তি এবং সুলতানের বিরুদ্ধে একা লড়ে যাওয়ার ক্ষমতা তার ছিল না। তবে তাৎক্ষণিকভাবে না পারলেও তিনি যথাসময়ে এর সমুচিত জবাব দেওয়ার সংকল্প করেন। এ উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার সমৃদ্ধ করার এবং সেনা বাহিনীকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেন। পুত্র ইব্রাহীমকে তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেশ দেন। পিতার আদেশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ইব্রাহীম সিরিয়ায় নতুন নতুন কর আরোপ করেন এবং বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদানের নির্দেশ দেন। তার এ দু'টি অপ্রিয় পদক্ষেপের ফলে সিরিয়াতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং সর্বত্র বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। এ বিদ্রোহ দমন করার জন্য ইব্রাহীমকে প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয়। বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে যে নির্যাতন ও নিপীড়ন তাকে চালাতে হয়েছিল তা তার জনপ্রিয়তাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে দেয়। মাত্র আট বছর পূর্বে যে ইব্রাহীম মুক্তিদাতা হিসেবে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। তিনি একজন ব্যাপক অজনপ্রিয় শাসক হিসেবে সিরিয়া ত্যাগ করেন। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সিরিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি যেসব সংস্কার কার্য সম্পাদন করেছিলেন সেগুলোর প্রভাবে পরবর্তী সময়ে সিরিয়ায় জাতিয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটেছিল ।
সর্বোপরি, মুহাম্মদ আলী পাশা ও তার পুত্র ইব্রাহীম পাশা আরব জাতীয়তাবাদের বিকাশে অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু তারা আরব জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সে স্বাধীন আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়িত হয় নি। এর পিছনে তাদের নিজেদের দুর্বলতা ছাড়াও দুটি প্রধান কারণ ছিল-প্রথমটি হচ্ছে ব্রিটেনের বিরোধিতা আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আরবদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের অভাব ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]