লুজান চুক্তি মধ্যপ্রাচ্য তথা পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


লুজান চুক্তি
লুজান চুক্তি মধ্যপ্রাচ্য তথা পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তিতে তুরস্কের সাথে মিত্র শক্তির দ্বিতীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে সর্বপ্রথম বৈঠক বসে লুজানে ১৯২৩ সালের ২০ নভেম্বর। ব্রিটিশ পরারাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড কার্জন যুক্তরাজ্যের, মুসোলিনী ইতালির, পয়ঙ্কাবি ফ্রান্সের এবং ইসমত পাশা (ইনুনু) তুরস্কের প্রতিনিধিত্ব করেন । ইসমত ইনুনুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও কূটনৈতিক দক্ষতার ফলে মিত্রশক্তি অন্যায়ভাবে কোন প্রকার শর্ত তুরস্কের উপর চাপাতে ব্যর্থ হয়। ফলে ১৯২৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি লুজেন বৈঠক বিফলে পরিণত হয়। দীর্ঘকালের আলোচনার ফলে এবং ইসমত ইনুনুর অটল সংকল্প ও দৃঢ় চিত্ততায় মিত্রবাহিনী অবশেষে ২৪ জুলাই পুনরায় বৈঠকে যোগদান করতে সম্মত হয়। এর ফলে তুর্কি তার সকল দাবী আদায়ে সমর্থ হয়। এবং সেভার্সের চুক্তির ফলে তুরস্ক যে গ্লানির সম্মুখীন হয় তা থেকে অব্যাহতি লাভ করে। লুজেনের চুক্তিতে স্বাক্ষর দাতা দেশগুলি হচ্ছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, রুমানিয়া, রাশিয়া, যুগোশ্লাভিয়া, জাপান, গ্রীস ও তুরস্ক ।
মুদানিয়ার যুদ্ধবিরতির পর মিত্রশক্তির নিকট প্রতীয়মান হয় যে মুস্তফা কামালের জাতীয়তাবাদী সরকারের মাধ্যমে সেভার্সের চুক্তি অনুমোদন ও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিত্র শক্তি ও তুরস্কের মধ্যে আরেকটি নতুন চুক্তি সম্পাদনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সুইজারল্যান্ডের লুজান শহরে ১৯২২ সালের ২১ নভেম্বর সম্মেলন শুরু হয়। এ সম্মেলনে আঙ্কারা সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন ইসমত ইনুনু। মুদানিয়ায় তার দৃঢ়তার কারণেই তাকে লুজানে তুর্কি জাতির প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিল। তিনি এমন একটি জাতির প্রতিনিধিত্ব করছিলেন, যে জাতি সেভার্সের চুক্তিকে অকার্যকর করে দিয়ে মিত্র শক্তিকে নতুন একটি চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য করতে সক্ষম হয়েছিল । অথচ লুজানেও মিত্র শক্তি তাঁকে পরাজিত রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করতে লাগল । কিন্তু তুরস্কের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি মিত্র শক্তির সকল প্রস্তাব ইসমত ইনুনু দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে মিত্র শক্তির অন্যায় যুক্তিসমূহ খন্ডন করেন। এমনকি তিনি মিত্র শক্তির প্রতিনিধিবৃন্দের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও তাদের বলশেভিক ভীতিকে তুরস্কের অনুকূলে কাজে লাগাতে সক্ষম হন ৷
সম্মেলন চলাকালে মুস্তফা কামাল পূর্ব থ্রেসের শহর সমূহের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ইসমতের, অবস্থানকে শক্তিশালী করে দেন। দীর্ঘ বিতর্কের পর ৪ ফেব্রুয়ারী সাময়িক সময়ের জন্য সম্মেলন মূলতবি করা হয়। ইসমত আঙ্কারায় ফিরে আসেন। ৮ মার্চ জাতীয় মহা সংসদ একটি শান্তি প্রস্তাব প্রণয়ন করে। ২৩ এপ্রিল পুনরায় সম্মেলন শুরু হলে ইসমত এ প্রস্তাবটি নিয়ে লুজানে ফিরে আসেন এবং নব উদ্যমে নতুন নতুন যুক্তি প্রদানের মাধ্যমে প্রস্তাবটি মিত্র শক্তির নিকট গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করেন। দীর্ঘ ৩ মাস আলোচনার পর অবশেষে ১৯২৩ সালের ২৪ জুলাই লুজানে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটিই ঐতিহাসিক “লুজান চুক্তি” নামে পরিচিত।
লুজান চুক্তির ধারাসমূহ : লুজান চুক্তিতে ১৪৩ টি ধারা ছিল । চুক্তির উল্লেখযোগ্য ধারাসমূহ হলো—রাজনৈতিক ধারা, ভূ-খণ্ডগত ধারাসমূহ, সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত ধারাসমূহ ও জনসংখ্যা বিনিময় ইত্যাদি। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হল ।
১। চুক্তির প্রথম ভাগে রাজনৈতিক ধারার উল্লেখ করা হয়। এ চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, গ্রিস, রুমানিয়া এবং কিংডম অব সার্বস, ক্রোটস এন্ড স্লোভেনিজ, ইত্যাদি রাষ্ট্রের সাথে তুরস্কের শান্তি পুনঃ স্থাপিত হবে। তুর্কিদের জাতিগত ঐক্য স্বীকৃতিসমূহের ভূ-খন্ডগত ঐক্য স্বীকার করে নেয়। তুরস্ক আরব অঞ্চল সমূহের পৃথক অস্তিত্ব মেনে নেয়।
২। ভূ-খণ্ডগত ধারাসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হল ।
(ক) কৃষ্ণসাগর ও ইজিয়ান সাগর পর্যন্ত অঞ্চলে তুরস্কের সাথে বুলগেরিয়া ও গ্রিসের সীমানা এবং ভূ-মধ্যসাগর থেকে পারস্য সীমান্ত পর্যন্ত তুরস্কের সাথে সিরিয়া ও ইরাকের সীমানা নির্ধারিত হয়। চুক্তির সাথে সংযুক্ত মানচিত্রে উপরোক্ত সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। চুক্তির ধারাসমূহ ও মানচিত্রের মধ্যে কোন অসঙ্গতি দেখা দিলে চুক্তির ধারাসমূহই অগ্রগণ্য হবে ।
(খ) গ্রিসের সাথে তুরস্কের সীমানা চূড়ান্ত করার জন্য উভয় দেশ থেকে একজন করে প্রতিনিধি এবং উভয় দেশের পছন্দক্রমে তৃতীয় কোন দেশ থেকে মনোনিত একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি সীমানা কমিশন গঠন করতে হবে। তৃতীয় দেশের প্রনিতিধি এ কমিশনে নেতৃত্ব দিবে না। সীমান্ত নির্দেশক পিলারগুলি উভয় রাষ্ট্র থেকেই দৃশ্যমান হবে এবং গ্রথিত পিলারের সংখ্যা ও অবস্থান মানচিত্রে চিহ্নিত করা হবে।
(গ) মারিজা নদী ও এর পশ্চিম তীরস্থ কারাগাচ শহর পর্যন্ত সমগ্র পূর্ব থ্রেচের উপর পুনরায় তুরস্কের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। ইমব্রস ও তেনেদস দ্বীপ তুরস্ককে প্রদান করা হয়। তুরস্ক এ অঞ্চলের অমুসলিমদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধানের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়। তবে ইজিয়ান সাগরের অন্যান্য দ্বীপের উপর গ্রিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। তুরস্ক ইতালির অনুকূলে দোদেকানিজ দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব পরিত্যাগ করে। আনাতোলিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্মার্ণায় তুর্কি সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত হয় ।
(ঘ) ১৯২১ সালে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী সিরিয়ার সাথে তুরস্কের সীমানা নির্ধারিত হবে বলে স্থির হয়। এ চুক্তিতে আলেকজান্দ্রেত্তা জেলাটি সিরিয়ার সাথে যুক্ত হয়। ইরাকের ম্যান্ডেটরি শাসক ব্রিটেনের সাথে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে তুর্কি-ইরাক সীমানা নির্ধারিত হবে বলে স্থির হয়। ব্রিটেন ও তুরস্ক যদি এক বছরের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থ হয় তাহলে উভয়পক্ষই লীগ অব নেশনস এর কর্তৃত্ব মেনে নিবে বলে অঙ্গীকার করে ।
(ঙ) তুরস্ক মিশর ও সুদানের উপর তার নিয়ন্ত্রণ পরিত্যাগ করে, যা ১৯১৪ সালের ৫ নভেম্বর থেকে কার্যকর বলে বিবেচিত হয়। তুরস্ক সাইপ্রাসের উপর ব্রিটিশ দাবি স্বীকার করে নেয়। সাইপ্রাসে বসবাসরত তুর্কিরা ব্রিটিশ নাগরিকত্ব অর্জন করবে বলে স্থির হয়। তবে চুক্তি কার্যকর হওয়ার দুই বছর পর্যন্ত তুর্কি নাগরিকত্ব অর্জনের জন্য আবেদন করতে পারবে। আবেদন গৃহীত হওয়ার এক বছরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সাইপ্রাস ছেড়ে তুরস্কে চলে আসতে হবে। তুরস্ক থেকে বিচ্ছিন্নকৃত অঞ্চলের তুর্কি নাগরিকদের ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে ।
(চ) আর্মেনিয়া রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে চুক্তিতে কোন কিছু উল্লেখ করা হয় নি ৷ বিষয়টি ট্রান্স-ককেশিয় সীমান্ত নিয়ে পূর্বে সম্পাদিত তুর্কি-সোভিয়েত চুক্তির প্রতি মিত্রশক্তির পরোক্ষ স্বীকৃতির ইঙ্গিত বহন করে। কুর্দিস্থানের স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত বিষয়েও নীরবতা পালন করা হয় ।
৩। লুজানের চুক্তিতে সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত ধারাসমূহ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ চুক্তিতে সেবার্সের চুক্তির তুলনায় তুরস্কের সার্বভৌমত্বের প্রতি অধিকতর সম্মান প্রদর্শন করা হয়। ক্যাপিচুলেশন প্রথা বিলুপ্ত করা হয়। বিনিময়ে তুরস্ক তার বিচার ব্যবস্থায় নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক নিয়োগে সম্মত হয়। অর্থনৈতিকভাবে তুরস্ক বৈদেশিক শক্তিসমূহের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয় এবং মিত্রশক্তি ক্ষতিপূরণের দাবী পরিত্যাগ, করে। তুর্কি সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের উপর সেভার্সের চুক্তিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে তুরস্ক থ্রেস সীমান্তবর্তী ত্রিশ মাইল প্রশস্থ অঞ্চলে সামরিক তৎপরতা বন্ধ করতে সমর্থ হয়। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য সম্পাদিত চুক্তি সমূহের অনুরূপ চুক্তি সম্পাদন করতে সম্মত হয়। তবে তুরস্কে বসবাসরত গ্রিক-ও আর্মেনিয়দের ব্যাপারে বিশেষভাবে কোনকিছু উল্লেখ করা হয় নি। তবে তুরস্কের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি ধারাসমূহের মধ্যে প্রণালীসমূহের উপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ছিল অন্যতম। তবে এক্ষেত্রে তুরস্কের প্রতি কিছুটা সম্মান প্রদর্শন করা হয় । বলা হয়, লীগ অব নেশনসের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি প্রণালী কমিশন গঠিত হবে এবং একজন তুর্কি নাগরিক সভাপতি নির্বাচিত হবেন। দার্দানেলিস ও বসফরাস প্রণালীর উভয় তীর এবং মর্মর সাগরস্থ দ্বীপসমূহে সকল প্রকার সামরিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করা হয়। তবে তুরস্ক কন্সটান্টিপোপলে ১২,০০০ সৈন্য রাখার অনুমতি পায়। লুজান সম্মেলনেই মর্মর সাগর সহ এ দুটি প্রণালীর ব্যবহার সংক্রান্ত মূল চুক্তির সমমর্যাদা সম্পন্ন একটি উপচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ উপচুক্তিতে বলা হয়। যুদ্ধ ও শান্তি উভয় সময়ই এ জলপথ সমূহের মধ্য দিয়ে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের নৌ চলাচল এবং উপস্থিত আকাশপথে বিমান চলাচলের স্বাধীনতা থাকবে ।
৪ । জনসংখ্যা বিনিময় সংক্রান্ত ধারাতে তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে সম্পাদিত পৃথক একটি চুক্তিতে তুরস্কে বসবাসরত গ্রীক সংখ্যালঘু এবং গ্রিসে বসবাসরত তুর্কি সংখ্যালঘুদের বাধ্যতামূলকভাবে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে কন্সটান্টিনোপলে বসবাসকারী গ্রিক এবং পশ্চিম থ্রেসে বসবাসকারী তুর্কিদের এ চুক্তির আওতামুক্ত রাখা হবে ।
অধিবাসী বিনিময়ের ফলে এশিয়া মাইনর থেকে ১৩,৫০,০০০ গ্রিক গ্রিসে এবং মেসিডোনিয়া থেকে ৪৩,২০০ তুর্কি মুসলমান আনাতেলিয়ায় চলে আসে। এটি বাধ্যতামূলক বাসিন্দা বদল ও যুগান্তকারী ঘটনা। এর ফলে যন্ত্রণাদায়ক সংখ্যা গরিষ্ঠ সমস্যার চির অবসান ঘটে। এতে তুরস্কে সর্ব প্রথম জাতি, ভাষা ও ধর্মগত ঐক্য আসে, মিল্লাত অর্থাৎ তুরস্কের অমুসলমান সম্প্রদায়ের অবসান ঘটে ।
৫। লুজানের চুক্তি অনুযায়ী লিবিয়া, সুদান, প্যালেস্টাইন, ইরাক, সিরিয়া ও আরব রাজ্য সমূহের উপর তুর্কি আধিপত্য প্রত্যাহার করা হয় ।
৬। সাইপ্রাস ব্রিটেনের দখলে চলে যায় ।
৭। তুরস্ককে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এতে তুরস্ক অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয় ৷
ফলাফল : লুজানের চুক্তি তুরস্কের জন্য সুদূর প্রসারী ফল বয়ে আনে। একথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে তুরস্ক জার্মানির পক্ষে যোগ দিলে যুদ্ধ শেষে মিত্র শক্তি তুরস্কের উপর সেভার্সের মত যে ঘৃণ্য ও অপমানকর চুক্তি চাপিয়ে দেয় তা বহুলাংশে সংশোধিত ও পরিমার্জিত হয় লুজানের চুক্তিতে। এটি অনেকটা ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার পাওয়া একটি নতুন জাতি। এ কারণে ঐতিহাসিক প্রাইস বলেন, "The Ottoman Empire was dead but a new turkish nation had been internationally recognised in control of all the truly Turkish lands in Asia Minor and of a small part of South east Europe together with the historic capitals of constantinople and Adrianople"
ক্যাপিচুলেশন প্রথা বাতিলের ফলে তুরস্কের অর্থনীতিতে নতুন যুগের সূচনা হয়। উল্লেখ্য সে, ক্যাপিচুলেশন প্রথা অনুযায়ী বিদেশী খ্রিস্টান সম্প্রদায় তুরস্কের আইন না মেনে তাদের নিজস্ব অনুশাসন মানত। তারা তুরস্কের সরকারকে কোন প্রকার কর দিত না এবং রাষ্ট্রের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করত। ১৫৩৫ সালে মহামতি সুলায়মান সর্বপ্রথম ফরাসিদের এ ক্যাপিচুলেশন প্রদান করেন। লুজানের চুক্তিতে এ প্রথা বাতিল হওয়ায় তুরস্ক অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয় ।
সামরিক যুদ্ধে (গ্রিকদের সাথে) তুরস্ক জয়লাভ করে। জাতীয়তাবাদীদের রাজনৈতিক কাযক্রম কার্যকর হয় এবং একটি আন্তজার্তিক চুক্তি দ্বারা তা স্বীকৃত হয়। লুজানের চুক্তি তুরস্কের জাতীয়তাবাদী চেতনাকে প্রকটভাবে নাড়া দেয় এবং ক্ষয়িষ্ণু সালতানাত খিলাফতের পতনকে ত্বরান্বিত করে। মুস্তফা কামাল পাশা একজন জাতীয় নেতা বা আতার্তুকের মর্যাদা লাভ করেন। এ প্রসঙ্গে ইসমত ইনুনু বলেন, “We have finised the exams and now we are graduating.” অর্থাৎ, আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়েছে এবং আমরা একটি আধুনিক প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছি।
সর্বোপরি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যে সকল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তার মধ্যে লুজানের চুক্তি ছিল দীর্ঘ স্থায়ী। এ চুক্তি ছিল তুর্কি জাতীয়তাবাদের বিজয়। এটি কোন আরোপিত চুক্তি ছিল না। এটি ছিল সমতার ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি। এ চুক্তিতে তুর্কিদের ন্যায্য দাবীসমূহ প্রতিফলিত হয়। তুরস্কের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এবং তুর্কি অধ্যুষিত ভূ-খণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষিত হয় । সামরিক, অর্থনৈতিক ও বিচারিক ক্ষেত্রে তুরস্ক বৈদেশিক নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী জাতীয়তাবাদী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি লাভ করে। তাই ঐতিহাসিক লুজান চুক্তি পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]