তুরস্কের জাতীয় ইতিহাসে ছয় নীতি (Six Principles ) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


ছয়নীতি (Six Principles )


তুরস্কের জাতীয় ইতিহাসে ছয় নীতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তুর্কি জাতির মহানায়ক মুস্তফা কামাল এ ছয়টি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে তার সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করেছিলেন। যা কামালবাদ নামেও পরিচিত। কামাল প্রতিষ্ঠিত ‘পিপলস' পার্টির তৃতীয় অধিবেশন এ ছয় নীতি গৃহীত হয়। ১৯৩৭ সালে এ নীতিগুলো তুরস্কের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ নীতিগুলো হচ্ছে-
১ । প্রজাতন্ত্রবাদ
২। জাতীয়তাবাদ
৩ । গণবাদ
৪ । রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদ ৫। বিপ্লববাদ
৬। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ
নিম্নে এ নীতিগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হল :
১ । প্রজাতন্ত্রবাদ : দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অসমর্থ এবং জাতির শত্রুদের সাথে সহযোগিতাকারী সুলতানের শাসন চালু রাখার কোন ইচ্ছা জাতীয়তাবাদীদের ছিল না। তুরস্কে একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত ওসমানিয় সাম্রাজ্য তার ধর্মীয় ঐতিহ্য ও রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা নিয়ে টিকে ছিল। প্রজাতান্ত্রিক সরকার কর্তৃক সালতানাত বিলুপ্ত করা হলেও জনগণের মানসিকতায় তখনো এর কিছুটা প্রভাব ছিল। কামাল জনগণের মানসিকতা থেকে গতানুগতিক চিন্তা-চেতনা দূর করার উদ্দেশ্যে বেশ কিছু মৌলিক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সাধন করেন। ওসমানির আমলের দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের পরিবর্তে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত এক কক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় মহাসংসদ গঠন করা হয়। ওসমানিয় আমলের মিল্লাত ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়। এ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় তাদের নেতা নির্বাচিত করত এবং কর, বিচার ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। কামাল এ ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়কে সাধারণ ও ধর্মনিপেক্ষ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। ১৯৩০ সালে তিনি মিউনিসিপাল নির্বাচনে নারীদের ভোটাধিকার প্রদান করেন। ১৯৩৪ সালে জাতীয় নির্বাচনেও নারীদের ভোটাধিকার ও প্রার্থী হওয়ার অধিকার প্রদান করা হয়। এর ফলে ১৯৩৫ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ১৮ জন নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। উপরন্তু প্রজাতন্ত্র ঘোষণা নিয়ে সংসদে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হলে প্রবীনতম সদস্য আব্দুর রহমান শরফ বলেন, “শত বর্ষের সংস্কার প্রয়াসের ফলস্বরূপ এ নবজাতক । আমরা কি এর নামাকরণে ভীত হব? এ সত্য আমাদেরকে গ্রহণ করতেই হবে যে এটা প্রজাতন্ত্র ।”
২। জাতীয়তাবাদ : প্যান-ইসলামবাদের মত কোন বিতর্কিত ও অনিশ্চিত আদর্শকে কামাল রাষ্ট্রীয় নীতির নিয়ামক হিসেবে গ্রহণ না করে দেশপ্রেম, তুর্কি জনসাধারণের স্বার্থ এবং দেশজ সংস্কৃতি ও আধুনিকতাকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। স্বাধীনতা অর্জন তথা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জাতীয়তাবাদের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। কামালের এ জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় নি। ওসমানিয় সাম্রাজ্যের হারানো অঞ্চলসমূহ পুনরুদ্ধার করাও এর উদ্দেশ্য ছিল না। কামালের নেতৃত্বে পরিচালিত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল তুর্কি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো নিয়ে একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। প্রজাতান্ত্রিক তুরস্ক প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণকারী জনগণকে কামাল তুর্কি জাতি বলে অভিহিত করেছেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রজাতান্ত্রিক তুরস্কই তুর্কি জাতি রাষ্ট্রে পরিণত হয় । তুর্কি জাতির স্বাধীনতা লাভের পরও জাতীয়তাবাদের গুরুত্ব হ্রাস পায় নি। নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের সংহতি রক্ষা এবং যে কোন প্রকার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে জাতীয়তাবাদ নীতিটি গৃহীত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ও পরে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসনাধীন জাতিসমূহ স্বাধীনতা লাভ করলে ওসমানিয় সাম্রাজ্যের বহুজাতিক চরিত্র লোপ পেলেও শেখ, গোত্র প্রধান ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের প্রাধান্যের কারণে রাষ্ট্রীয় সংহতি ব্যহত হওয়ার উপক্রম হয়। তাদের ক্ষমতা খর্ব করার উদ্দেশ্যেই কামাল তার জাতীয়তাবাদের ধারণাটি কাজে লাগান । কামালের এ জাতীয়তাবাদের উদ্দেশ্যেই ছিল স্বৈরতন্ত্র, মোল্লাতন্ত্র ও সামন্তবাদের কবল থেকে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র জনগণ তথা তুর্কি জাতির নিকট হস্তান্তর করা। ১৯২৭ সালে তুরস্কের জনসংখ্যার শতকরা ৯৭.৩ ভাগ ছিল তুর্কি মুসলমান। জাতিগত ও ধর্মীয় মিল থাকায় নব প্রতিষ্ঠিত প্রজাতন্ত্রটির জাতীয়তাবাদী আশা-আকাঙ্খার বাস্তবায়নের পথ সুগম হয়। সংবাদপত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ, রিপাবলিকান পিপলস পার্টি এবং নব্যতুর্কিদের উত্তরসূরী সংগঠন Turkish Hearth Organization-এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতিয়তাবাদী মতবাদ প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। এতে তুর্কিদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশে তুর্কিদের অবদান প্রচার করা হয়। তাই তুর্কি জাতীয়তাবাদ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।
৩। গণবাদ : গণবাদের মূলকথা হচ্ছে জনসাধারণের সার্বভৌমত্ব ৷ সমস্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উৎস জনগণ এবং জনসাধারণের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় মহাসংসদ এ সার্বভৌমত্বের প্রতিভূ। গণবাদ মতামতটি তুর্কি জাতীয়তাবাদ ও প্রজাতন্ত্রের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপে গণবাদের বিকাশ ঘটে। শ্রেণি, পদমর্যাদা, ধর্ম, পেশা নির্বিশেষে আইনের চোখে সকল নাগরিকের সমান অধিকার ঘোষিত হয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও শ্রেণীভিত্তিক সকল প্রকার বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বিলুপ্ত করা হয়। কাল মার্ক্সের শ্রেণি সংগ্রামের বিপরীতে কামাল এ মতবাদটি প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি রাষ্ট্রীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করেন। “There are no classess, There are only occupa- tion”. এ মতবাদকেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পক্ষে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হয়। বলা হয়, যেহেতু তুর্কি সমাজে কোন শ্রেণী বিভাজন নেই সেহেতু সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব বা স্বার্থ রক্ষার জন্য ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক প্ৰতিনিধিত্ব বা স্বার্থ রক্ষার জন্য ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের ও প্রয়োজন নেই। রিপাবলিকান পিপলস পার্টিই সমগ্র জাতির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবে। গণবাদ অনুযায়ী সরকারের মালিক জনগণ, শাসক শ্রেণি নয়। এ দৃষ্টিকোণ গণবাদকে গণতন্ত্রের সাথেও তুলনা করা যায়। শাসনকার্যে জনগণের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা থেকেই জাতীয় মহাপরিষদ গঠন করা হয়েছিল । শুরুতে ১৮ বছর বা তদোর্ধ বয়সী পুরুষদের ভোটাধিকার প্রদান করা হয়। পরে ১৯৩৪ সালে নারীরাও ভোটাধিকার এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার পায়।
৪। রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদ : কামাল বুঝতে পেরেছিলেন যে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও বৈদেশিক বিশেষ সুযোগ-সুবিধার শিকার তুর্কি জনসাধারণের পক্ষে মূলধন বিনিয়োগ করে বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সাধারণভাবে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদ বলতে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকে বুঝায় ৷ নির্দিষ্ট অর্থে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদ হচ্ছে যেসব দেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও পুঁজি অত্যন্ত দুর্বল সেসব দেশে জাতীয় উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষার জন্য অর্থনৈতিক ও শিল্পক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ। মুস্তফা কামালের রাষ্ট্রীয় কর্তত্ববাদ নীতিটি এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়। কামাল বিভিন্ন সময় তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের উপর তুরস্কের আধুনিকায়ন অনেকাংশে নির্ভরশীল । তাই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং অর্থনীতির যেসব ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে অথবা ব্যক্তিগত উদ্যোগের সাফল্যের সম্ভাবনা কম সেসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। তুরস্কের অর্থনীতিতে কৃষি খাতের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই কৃষি মন্ত্রণালয়কে কৃষি খাতের উন্নয়নের দায়িত্ব দেয়া হয় । কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, নতুন ফসল, তার উৎপাদন পদ্ধতি ও উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহে কার্যকর ভূমিকা রাখার উদ্দেশ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়কে ঢেলে সাজানো হয়। প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম একদশকে শিল্প ক্ষেত্রে উন্নয়ন কৃষির তুলনায়ও মন্থর ছিল । শিল্পের বিকাশের জন্য নব্য তুর্কিরা কর আরোপে ছাড় এবং যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক মওকুক সুবিধা প্রদান করলেও এ খাতে খুব একটা অগ্রগতি সাধিত হয় নি। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের ফলে তা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। উপরন্তু বিদেশী পুঁজিবাদীদের দীর্ঘ শোষণের ফলে তুর্কি শিল্পোদ্যোক্তারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। তাই কামাল শিল্পোন্নয়নে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তিনি তামাক, দিয়াশলাই, চা, লবণ, তেল ও মাদকদ্রব্যের উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া বেসরকারী বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য তিনি রাষ্টীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের নীতি গ্রহণ করেন ।
৫। বিপ্লববাদ : সমাজ বা রাষ্ট্র সর্বদা গতিশীল। গতিহীনতা ব্যক্তির ন্যায় সমাজেরও মৃত্যুর লক্ষণ। বিপ্লববাদ বলতে কামাল সনাতন প্রতিষ্ঠান ও ধ্যান ধারণার পরিবর্তে আধুনিক প্রতিষ্ঠান ও ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠাকে বুঝিয়েছেন। এজন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ৷ অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, নতুন প্রযুক্তি আমদানি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ইত্যাদি বিপ্লববাদের মূল উদ্দেশ্যে পরিণত হয়। বিপ্লববাদ বলতে কোন অবস্থাতেই পশ্চাদপন্থি পুরাতন ধ্যান-ধারণায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। বৈদেশিক শত্রুর মোকাবিলা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনার উদ্দেশ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে বিপ্লববাদের অবতারণা করা হয় । কামালের মতে ইউরোপীয় দেশগুলোর মত তুরস্কের অগ্রগতির জন্য নিজেকে নিয়োজিত করা ও বিরামহীনভাবে সংগ্রাম করাই হচ্ছে বিপ্লববাদ। এজন্য কামাল তুরস্কের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ইত্যাদির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইউরোপীয় ধ্যান-ধারণা ও প্রথা প্রতিষ্ঠান আমদানির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন ।
৬। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ : ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কামালীয় সংস্কারের প্রধান স্তম্ভ। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ধর্মের প্রভাব যে রাষ্ট্র ও ধর্ম উভয়ের ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর এ সম্পর্কে কামালের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের ভূমিকা তার এ বিশ্বাসকে আরো দৃঢ়তর করে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিচার কাঠামো, শিক্ষা ব্যবস্থা ও সর্বোপরি সমাজ ব্যবস্থাকে ধর্মের প্রভাব হতে মুক্ত করাই ছিল বিপ্লববাদের মূল উদ্দেশ্যে। এছাড়া ধর্ম কর্তৃক আরোপিত নিয়ন্ত্রণ হতে জনগণের ব্যক্তি জীবনকে মুক্তি প্রদান এবং ইসলামী আচার প্রথা অনুযায়ী পরিচালিত রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়নও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমেই খেলাফতের বিলুপ্তি সাধন করে কামাল রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের প্রভাব হতে মুক্ত করেন। তারপর তিনি আরো কিছু সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যে যোগসূত্র চূড়ান্তভাবে ছিন্ন করেন। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ অনুযায়ী কোন একটি বিশেষ ধর্মের প্রতিনিধি, করা বা রক্ষকের ভূমিকা পালন করা রাজনীতিবিদদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে তুরস্কেও এ নীতিটি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইস্তাম্বুলের মেয়র (১৯৯৪–১৯৯৮) থাকাকালে ধর্মীয় বক্তব্য সম্বলিত একটি কবিতা আবৃত্তির জন্য তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী Recep Tayyip Erdogan কে জেল খাটতে হয়েছিল। কেননা তুরস্কের বিচার বিভাগের মতে তার এ কাজ ধর্মে বিশ্বাসী এবং ধর্মে অবিশ্বাসী তুর্কি জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছিল। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কামাল আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন ও বিচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ইত্যাদি সংস্কার কার্য সম্পাদন করেন। তবে কামালের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বলতে ধর্ম বিরোধী কার্যকলাপকে বুঝায় না। রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করা বা কোন ধর্মের প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রদর্শন করা এ মতবাদের উদ্দেশ্যে ছিল না। চিন্তার স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধর্মীয় চিন্তা ও প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রভাব হতে মুক্ত করার উদ্দেশ্যেই এ মতবাদ প্রণীত হয়। তুরস্ক যেহেতু একটি ইসলাম প্রধান দেশ ছিল সেহেতু এ মতবাদের প্রভাব মূলত ইসলাম ধর্মের উপরই পড়েছিল । তবে তার এ মতবাদ আলোকিত ও যৌক্তিক ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয় নি। ইসলামের যেসব প্রথা আধুনিকায়ন ও গণতন্ত্রের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল কামালের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ তার বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল।
পরিশেষে বলা যায় যে, কামালের জীবদ্দশায় ছয় নীতি (Six Principles ) প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হলেও তার মৃত্যুর পর এগুলি মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তানজিমাতও নব্যতুর্কিদের শাসনামলে গৃহীত বিভিন্ন সংস্কারের মধ্যে কামালের এ মতবাদসমূহের মূল নিহিত ছিল বলে মনে করা হয়। এগুলোকে তিনি শুধু রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবেই ঘোষণা করেন নি। উপরন্তু এ মতবাদসমূহ বাস্তবায়নের জন্য তিনি ১৯২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রিপাকলিকান পিপলস পার্টি গঠন করেন, যা তার মৃত্যুর পরও এসব মতবাদ বাস্তবায়নে নিয়োজিত থাকে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]