ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তি, ১৯৩৬

ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তি, ১৯৩৬
ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তি মধ্যপ্রাচ্য তথা পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ চুক্তি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল ।
ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তির পটভূমি : ১৯২৭ সালের এপ্রিল মাসে লিবারেল পার্টির নেতা আদলী ইয়েকেন পাশা পদত্যাগ করলে তার সহকর্মী আব্দুল খালেক সারওয়াত মিশরে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করেন। তার সময় পার্লামেন্টের সম্মানিত সদস্যবর্গ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, সেনাবাহিনীর ‘সিরাদার' বা প্রধান হিসেবে একজন মিশরিয় সামরিক বাহিনীর সদস্যকে নিয়োগ করতে হবে। ফলে ১৯২৭ সালের ২৭ মে ব্রিটেন আলেকজান্দ্রিয়ায় একটি নৌবহর প্রেরণ করে। ১৯২৭ সালে জননেতা সাদ জগলুল পাশার মৃত্যুতে সহকর্মী নাহাস পাশা ওয়াফদ পার্টির নেতৃত্বে আসেন। সারওয়াত পাশা রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের জন্য ১৯২৭ সালের মাঝামাঝিতে ব্রিটিশ সরকারের সাথে আলোচনার জন্য লন্ডনে গমন করেন । সারওয়াত-চেম্বারলেন আলোচনা ফলপ্রসু হয় নি এবং সারওয়াত মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পার্লামেন্টের নির্বাচিত স্পীকার নাহাস পাশাকে পরবর্তী সরকার গঠনের আহ্বান জানান হয়। ১৯২৮ সালের ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ওয়াফদ সরকার গঠিত হয়। কিন্তু স্বৈরাচারী রাজা ফুয়াদ ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সাথে ষড়যন্ত্র করে ২৫ জুন নাহাস মন্ত্রী পরিষদ বাতিল করেন। এরপর মোহাম্মদ মাহমুদ সরকার গঠন করে ১৯ জুলাই পর্যন্ত শাসনকার্য পরিচালনা করেন। রাজা ফুয়াদ রাজনৈতিক সঙ্কট দূরীকরণের জন্য পার্লামেন্টে ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন ৩ বছরের (১৯২৮-৩০) জন্য স্থগিত করেন। ১৯২৯ সালে ব্রিটেনের নির্বাচনে কনজারভেটিভ সরকারের ভরাডুবি হয়, এবং লিবারেল পার্টি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। লিবারেল পার্টি ব্রিটিশ সরকার গঠনে মিশরিয়দের মনে প্রকৃত স্বাধীনতা লাভের আশা সঞ্চার করে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য আদলী একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নাহাস পাশার সুযোগ্য নেতৃত্বে ওয়াফদ পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে মন্ত্রীসভা গঠন করে। উল্লেখ্য যে, এটি ছিল তৃতীয় ওয়াফদ মন্ত্রীপরিষদ ।
১৯৩০ সালে নাহাস পাশা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করার পর ব্রিটিশ সরকারের সাথে সুদান এবং যুদ্ধকালীন সময়ে মিশরে ব্রিটিশ সৈন্য রাখার প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে বিরোধ সৃষ্টি হয়। নাহাস পাশা এ ধরনের ঘৃণ্য প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ১৭ জুন তার মন্ত্রীসভার পতন হয়। রাজা ফুয়াদ তার স্থলে তার ভক্ত ইসমাইল সিদকীকে মন্ত্রী পরিষদ গঠনের আহ্বান জানান। তিনি ১৯২৩ সালের সংবিধান বাতিল এবং নির্বাচন স্থগিতই করলেন না, ব্রিটিশ তাবেদারীতে দেশ শাসন এবং ওয়াফদ পার্টির প্রভাব ও প্রতিপত্তি খর্ব করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায় । সংবাদপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় এবং সভাসমিতির উপর কড়াকড়ি আরোপিত হয়। সিদ্‌কী পাশায় ওয়াফদ পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ হ্রাসের জন্য নির্বাচনি আইন পরিবর্তন করেন যাতে ‘ফেলাহীন' বা কৃষক শ্রেণি ওয়াফদ পার্টির প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারে। দমন-পীড়ন চলতে থাকে এবং সিদ্‌কী পাশা ওয়াফদ পার্টির জনপ্রিয়তা হ্রাসের জন্য 'হিযব-আল সাফ' বা জনগণের দল গঠন করেন। এর ফলে লিবারাল ও ওয়াফদ পার্টি ১৯৩১ সালের ৩১ মার্চ একটি জাতীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে সংঘবদ্ধ হয়। সিদকী পাশা রাজনৈতিক সঙ্কটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। যা প্রতিহত করা তারপক্ষে সম্ভব হয় নি। ১৯৩০ সালের জানুয়ারিতে সিদকী পাশা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। রাজা ফুয়াদ তার স্থলে আব্দুল ফাতাহ ইয়াহইয়ার উপর একটি রাজকীয় মন্ত্রীসভা গঠনের দায়িত্ব অর্পণ করেন। এ সরকার বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। আবদুল ফাতাহকে অপসারণ করে তৌফিক নাসিমকে মন্ত্ৰী পরিষদ গঠনের আহ্বান জানান। এ দায়িত্ব পেয়ে নাসিম ১৯২৩ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে এবং ১৯৩৫ সালের এপ্রিলে একটি রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে সংবিধান পুনরায় কার্যকরি করে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে ইতালি, ১৯২৫ সালে লিবিয়া এবং ১৯৩৬ সালে আবিসিনিয়া (ইথিওপিয়া) দখল করে নেয়। নাসিম ক্রমেই ফুয়াদের আস্থা হারাতে থাকে এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। তিনি একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মাধ্যমে একটি নতুন নির্বাচনের প্রস্তাব দেন। কিন্তু স্বৈরাচারী রাজা তাকে ১৯৩৬ সালের ২২ জানুয়ারি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। নাসিমের স্থলে প্রধান রাজকীয় চেম্বারলেন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে এবং নির্বাচনে নাহাস পাশা বিজয়ী হয় । ইতোমধ্যে রাজা ফুয়াদ ১৯৩৬ সালের ২৮ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করলে ৬ মে তার পুত্র এবং সর্বশেষ মিশরিয় রাজা ফারুক সিংহাসনে বসেন। ১০ মে নাহাস পুনরায় ক্ষমতায় আসেন এবং তৃতীয় বারের মত মন্ত্রীসভা গঠন করেন। ১৯৩৬ সালে সম্পাদিত ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তি এবং সুদান প্রশ্নে নাহাসের সাথে রাজার বিরোধ বাধে এবং ১৯৩৭ সালের ডিসেম্বরে তিনি অপসারিত হন। তার স্থলাভিষিক্ত হন মোহাম্মদ মাহমুদ পাশা ।
১৯৩৫ সালের মাঝামাঝি ইতালি আবিসিনিয়া দখল করলে ব্রিটিশ সরকার মিশরের সাথে সমঝোতা করার আগ্রহ প্রকাশ করে। Axis power এর আধিপত্য উত্তর আফ্রিকায় বিস্তার লাভ করলে মিত্র শক্তি মিশরকে সুরক্ষিত করে একটি ঘাটিতে পরিণত করার প্রয়াস পায়। আর্থার গোল্ডস্মিথ বলেন, “১৯৩৫-১৯৩৬ সালের কতগুলো সৌভাগ্যজনক ঘটনা মিশরে ক্ষমতার লড়াই এর গতি পরিবর্তন করে।” লিবিয়া ও আবিসিনিয়া ইতালির অবস্থিতিতে মিশরে ব্রিটিশ সরকারের প্রভাব ও স্বার্থ ক্ষুন্ন হবার উপক্রম হয়। এ ঘটনা উভয় দেশকে নিকটতর করে এবং ব্রিটিশ সরকারকে দমন নীতি প্রত্যাহারে বাধ্য করে। রাজধানী কায়রোতে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ, গণআন্দোলন ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা পরিস্থিতিকে আরো সংকটাপন্ন করে তোলে। এসব কারণে ব্রিটিশ সরকার নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করেন। বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার মিশরিয় সরকারের সাথে আলোচনা শুরু করে। এ সম্মেলনে মিশরিয় পক্ষে ১৩ জন, এর মধ্যে ওয়াফদ পার্টির ৭ জন এবং অপরাপর সদস্যরা অন্যান্য দলভুক্ত ছিলেন। অপরদিকে কমিশনার মাইলস ল্যামসন ‘ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। ব্রিটিশ ও মিশরিয় প্রতিনিধি দল আলাপ-আলোচনা করে একটি চুক্তি সম্পাদনে সম্মত হন। মিশরিয় দলের নেতা নাহাস পাশা মিশরিয় সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন এবং ব্রিটিশ কমিশনার ল্যামসন ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ১৯৩৬ সালের ২৬ আগস্ট লন্ডনে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিটি ইতিহাসে ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তি নামে পরিচিত। ১৯৩৬ সালের ২৬ আগস্ট ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ইঙ্গ-মিশর চুক্তি অনুমোদন করে। পরে মিশরিয় পার্লামেন্টে এ চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত হয় এবং তা অনুমোদিত হয় ৷
ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তি-১৯৩৬ এর শর্তাবলি : এ চুক্তির শর্তাবলি নিম্নরূপ : ১. মিশরে ব্রিটিশ সামরিক দখলদারিত্বের অবসান ঘোষণা করা হয়।
২. মিশরে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত এবং ব্রিটেনে মিশরের রাষ্ট্রদূত স্ব-স্ব দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ।
৩. মিশর লীগ অব নেশন সদস্যপদ লাভের জন্য আবেদন করবে। মিশরকে একটি স্বাধীন ও স্বার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতিদানকারী ব্রিটিশ সরকার এ ব্যাপারে মিশরকে সহযোগিতা করবে।
৪. উভয় পক্ষের মধ্যে বন্ধুত্ব, আন্তরিকতাপূর্ণ সমঝোতা এবং সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে ।
৫. কোন পক্ষই অন্য কোন বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে এ মৈত্রী চুক্তির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে না। অথবা এমন কোন রাজনৈতিক চুক্তি করবে না, যা বর্তমান চুক্তির ধারাসমূহের সাথে সঙ্গতিপূৰ্ণ নয় ৷
৬. কোন পক্ষের সাথে যদি তৃতীয় কোন পক্ষের বিরোধের ফলে বিবাদমান পক্ষটির রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় তাহলে উভয় পক্ষ আলোচনায় বসবে এবং লীগ অব নেশনসের কভেনান্ট ও এক্ষেত্রে প্রযোজ্য অন্যান্য আন্তজার্তিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী উক্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান করবে।
৭. দুপক্ষের মধ্যে কোন পক্ষ যদি তৃতীয় কোন পক্ষের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে অন্যপক্ষ যত দ্রুত সম্ভব সহযোগিতার পথ প্রসারিত করবে। যুদ্ধের সময় অথবা যুদ্ধ অত্যাসন্ন হলে অথবা আন্তর্জাতিক কোন জরুরী অবস্থা বিরাজ করলে মিশরের রাজা তার আওতাধীন বন্দর, বিমান ঘাঁটিসহ যোগাযোগের সকল ব্যবস্থা ব্রিটিশদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিবেন। এসব সুযোগ-সুবিধা ও সহযোগিতা কার্যকরভাবে প্রদানের জন্য প্রয়োজনে তিনি সামরিক শাসন ও সেন্সরশিপ আরোপ করবেন ।
৮. সুয়েজ খাল মিশরের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় এর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই মিশরিয় সেনাবাহিনী সুয়েজ খালের নিরাপত্তা রক্ষা করার মত শক্তিশালী না হওয়া পর্যন্ত এ সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য এ ধারায় সংযুক্তি অনুযায়ী উভয় পক্ষের সম্মতিতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুয়েজ খাল এলাকায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনী অবস্থান করবে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর এ উপস্থিতি দখলদারিত্ব হিসেবে বিবেচিত হবে না এবং তা মিশরের সার্বভৌম অধিকারকে ক্ষুণ্ন করবে না। যতক্ষণ চুক্তির ১৬নং ধারায় উল্লেখিত ২০ বছর সময় অতিক্রান্ত হবার পর মিশরিয় সেনাবাহিনী সুয়েজ খালের নিরাপত্তা রক্ষার মত শক্তিশালী হয়েছে কিনা তা বিবেচনা করে উভয় পক্ষ সুয়েজ খাল এলকায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর উপস্থিতির যৌক্তিকতা নির্ধারণ করবে। এ ব্যাপারে কোন বিরোধ দেখা দিলে তা লীগ অব নেশনসের কভেনাট অনুযায়ী মিমাংসা করা হবে। উল্লেখ্য যে সুয়েজ খাল এলাকায় ব্রিটেনের অনধিক ১০,০০০ পদাতিক বাহিনী, ৪০০০ পাইলট, ৪,০০০ বেসামরিক নাগরিক এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রযুক্তিবিদ ও প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ অবস্থান করবে। এতে তাদের অবস্থানের এলাকা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে।
৯. বর্তমান চুক্তির আওতায় মিশরে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকগণ বিচার ও শুল্ক ক্ষেত্রে কি কি সুযোগ-সুবিধা ও দায়মুক্তি ভোগ করবে উভয় পক্ষের সম্মতিতে একটি পৃথক কনভেনশনের মাধ্যমে তা স্থির করা হবে
১০. লীগ অব নেশনসের কভেনান্ট অথবা ১৯২৮ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি কর্তৃক উভয় পক্ষের উপর আরোপিত দায়-দায়িত্ব ও প্রদত্ত অধিকারসমূহকে এ চুক্তির কোন ধারা ক্ষুন্ন করবে না ।
১১. উভয়পক্ষ ১৮৯৯ সালে সম্পাদিত কনডোমিনিয়াম চুক্তি অনুযায়ী সুদানের শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করে। উক্ত চুক্তিতে গভর্নর জেনারেলকে ক্ষমতা অনুযায়ী তিনি মিশর ও ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে সুদান শাসন করবেন। এ শাসন ব্যবস্থা সুদানের জনগণের কল্যাণার্থে পরিচালিত হবে। সুদানের সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বৃটিশ এবং মিশরিয় সেনাবাহিনীও সুদানের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। আইন শৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কারণ ছাড়া সুদানে মিশরিয়দের অভিবাবসন নিষিদ্ধ করা হবে না। বাণিজ্য, অভিবাসন এবং সম্পত্তির মালিকানা বিষয়ে সুদানে অবস্থানরত বৃটিশ নাগরিক ও মিশরিয়দের মধ্যে কোন প্রকার বৈষম্য করা হবে না ।
১২. মিশরিয় সরকার মিশরে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান করবে।
১৩. সময়ের পরিবর্তন এবং মিশরের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে ক্যাপিচুলেশন প্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় ।
১৪. মিশর ও ব্রিটেনের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ চুক্তির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সকল চুক্তি বা আইন বাতিল বলে গণ্য হবে ।
১৫. যদি চুক্তির বাস্তবায়ন এবং এ ধারাসমূহ ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে কোন মতপার্থক্য দেখা দেয় এবং উভয় পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হয় তাহলে লীগ অব নেশনসের চুক্তি অনুযায়ী এর সমাধান করতে হবে।
১৬. চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার পর ২০ বছর অতিক্রান্ত হলে যেকোন এক পক্ষের অনুরোধে উভয় পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে চুক্তির ধারাসমূহ সংশোধন করতে পারবে। এ ব্যাপারে কোন মতপার্থক্য দেখা দিলে তা লীগ অব নেশনসের চুক্তি অনুযায়ী মিমাংসার জন্য লীগ কাউন্সিলে উপস্থাপন করা হবে। তবে চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার ১০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর উভয় পক্ষের সম্মতিতে তা সংশোধন করা যাবে।
১৭. চুক্তিটি কার্যকর হলে উভয় দেশের সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে । যত দ্রুত সম্ভব কায়রোতে এ অনুমোদনপত্র বিনিময় হবে। অনুমোদনপত্র বিনিময়ের দিন থেকেই চুক্তিটি কার্যকর হবে। এরপর চুক্তিটি লীগ অব নেশনসে নিবন্ধিত হবে।

ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তি, ১৯৩৬ এর পুনর্বিবেচনা ও সংশোধনে সমস্যাসমূহ :


১৯৩৬ সালের ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তির মেয়াদ ১৯৫৬ সাল অর্থাৎ ২০ বছর পর্যন্ত মেয়াদ ছিল। এ চুক্তি পুনবিবেচনা ও সংশোধনে মতবিরোধ রয়েছে। ১৯১৯ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তিতে ভার্সাই শান্তি চুক্তি সম্পাদনের পূর্বে ১৩ জানুয়ারি সাদ জগলুল পাশা প্রকাশ্যভাবে মিশরের স্বাধীনতা প্রদানের দাবি জানান। এরপর থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সতের বছর আলাপ-আলোচনার পর মিশরে স্বাধীনতা প্রশ্নে ব্রিটিশ সরকার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তাদের মতামত ব্যক্ত করে। এ চুক্তির সুফল বিচার করলে প্রতীয়মান হয় যে যদিও এ চুক্তি মিশরকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের অঙ্গীকার করে নি, তবুও এ চুক্তির ফলে মিশর সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য রক্ষিত মর্যাদা লাভ করে। যেমন- রেসিডেন্ট এজেন্ট বা কনসুল জেনারেলের স্থলে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের মিশরে অবস্থান সম্পর্কে ভ্যার্টিকিওটিস বলেন যে, এ চুক্তির ফলে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা লাভ করে, পক্ষান্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে মিশরকে সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা দান করে। ব্রিটিশ হাইকমিশনার H.M. Ambassador নামে আখ্যায়িত হন। উপরন্তু মিশর সরকার প্রশাসনকে মিশরিয়করণের সুযোগ লাভ করে। যেমন মিশরিয় সেনাবাহিনীর ব্রিটিশ ইন্সপেক্টর জেনারেলের অবসর গ্রহণের পর একজন মিশরিয় তার স্থলাভিষিক্ত হন। এছাড়া ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মিলিটারী একাডেমীতে অধিক সংখ্যক মিশরিয় সামরিক অফিসার প্রশিক্ষণের সুযোগ পেতে থাকেন। Montreux Convention কর্তৃক চতুর্থ শর্ত ক্যাপিচুলেশন প্রথা বাতিল হলে মিশরে একই আইন বলবৎ হয় । বিদেশীদের জন্য পৃথক আইন মধ্যপ্রাচ্যে চালু ছিল। কিন্তু চুক্তির শর্তানুসারে ১২ বছর পর উভয় পক্ষের সম্মতিতে ক্রমে চুক্তি রদবদল করার যে সুযোগ ছিল তারই প্রেক্ষিতে ১২ বছর পর অর্থাৎ ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে ট্রাইবুনাল তা রহিত · করে। এছাড়া ১৯২৩ সালের লুজান চুক্তি অনুযায়ী প্রাক্তন অটোমান সাম্রাজ্যের অঞ্চলগুলি, যেমন—সিরিয়া, লেবানন, ইরাক ও ফিলিস্তিনে ক্যাপিচুলেশন প্রথা রহিত হয়ে যায়। সুতরাং, মিশরেও এ আইন বাতিল হয়ে যায়। ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তিতে মিশর হতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের যে স্পষ্ট শর্ত ছিল তা দখলদার বাহিনী থেকে মিশরের মুক্তির একটি সনদপত্র বলে মনে করা হয়। অবশ্য ব্রিটিশ স্বার্থে যুদ্ধকালীন অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সুয়েজ খালের রক্ষণাবেক্ষণে আলেকজান্দ্রিয়ায় একটি ব্রিটিশ নৌবহর অবস্থান করে। পরোক্ষভাবে এ চুক্তি সুয়েজ খাল কোম্পানিতে দুজন মিশরিয় ডিরেক্টর নিয়োগের পথ সুগম করে। মিশরিয় রয়ালিটির পরিমাণ ৩০০০০০ মিশরিয় পাউন্ডে বৃদ্ধি পায় এবং এ কোম্পানিতে কর্মরত শ্রমিকদের শতকরা ৩৫% মিশরিয় নিয়োগের সুযোগ লাভ করে। উপরন্তু এ চুক্তি কোম্পানিকে সুয়েজ থেকে পোর্ট সৈয়দ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে বাধ্য করে ।
আপাতদৃষ্টিতে ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তি মিশরিয় স্বাধীনতার পথ সুগম করেছে বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এ চুক্তিটি ছিল ব্রিটিশদের প্রণীত ব্রিটিশ স্বার্থ রক্ষার্থে একটি কূটনৈতিক প্রহসন। এ প্রসঙ্গে জি. ই. কার্ক যথার্থই বলেন, “These conces- sions were made only because both parties were acutely aware of the menace to the respective interests from Italy, now an aggressive Mediterranean and Red sea power and there was no reason to sup- pose that, it this menace were removed. Egyptian Nationalist senti- ment would not once more compel its leaders to seek to achieve complete independence by obtaining evacuation of the British forces, freedom to follow a foreign policy untrammelled by the alliance with Britain and the reasserting in fact of Egypt's sovereign- ty over the Sudan.” ১৯৩৬ সালে Survey of international Affairs উদ্ধৃত বিখ্যাত Times পত্রিকায় বলা হয়েছে, “It is natural enough that the techni- cal advisers of H.M. Government should recommend such a military agreement as would achieve an ideal security for his country's inter- ests for over but the military ideal of 100 percent security takes no account of the political side of the question. An alliance, if it is to have any real value, must be based on respect for national feeling. It must be freely negotiated, not dictated and one of its primary condi- tions...... is that it is inspired by a spirit of mutual trust.”
১৯৩৬ সালের ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তির ব্যর্থতায় প্রমাণিত হয়েছে যে, এ চুক্তি স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে নি। পক্ষান্তরে উভয় দেশের মধ্যে চরম বিরোধ বাধে । মিশরে বৈদেশিক অবস্থান ও সুদান প্রশ্নে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। স্বৈরাচারী শাসক ফারুক, চুক্তির মিশরিয় প্রতিনিধি দলের নেতা নাহাস পাশাকে পদচ্যুত করে তার স্থলে মোহাম্মদ মাহমুদ পাশাকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। ১৯৩৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত মিশরিয় রাজনৈতিক সঙ্কট ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে । যুদ্ধকালীন অবস্থায় মিশর ব্রিটিশ আশ্রিত রাজ্য ছিল। কিন্তু ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তির প্রধান লক্ষ্য ছিল ইঙ্গ-মিশরিয় সম্পর্ক সুদূরীকরণ। এ প্রসঙ্গে ভ্যার্টিকিওটিস বলেন, "To deal with the resolution of matters concerning Anglo-Egyptian relations that had been left outstanding by Four Reserved points of 1992.” ১৯৩৬-১৯৫০ সালে ওয়াফদ পার্টির পুনরায় ক্ষমতা লাভ পর্যন্ত রাজনৈতিক সঙ্কট চরমে উঠে।
১৯৫০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ওয়াফদ পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করে এবং প্রধানমন্ত্রী নাহাস পাশা ক্ষমতা লাভের দুমাসের মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের সাথে স্থগিত ও পুরাতন বিষয়গুলো পুনরায় আলাপ-আলোচনার দাবি জানান। ১৯৩৬ থেকে ১৪ বছর পর হতে মিশরের স্ট্যাটাস পরিবর্তিত হয় নি। অথচ শর্ত অনুযায়ী ১০ বছর পরে উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে শর্তাবলী রদবদল করার ব্যবস্থা ছিল । কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের স্বদিচ্ছার অভাবে তা সম্ভবপর হয় নি। এ কারণে নাহাস পাশা মন্ত্রীপরিষদ গঠন করেই ৯ মাস ব্যাপী ব্রিটিশ সরকারের সাথে আলাপ আলোচনা ও চিঠিপত্র আদান-প্রদান করেন। কিন্তু এ উদ্যোগ যখন ব্যর্থ হল তখন নাহাস পাশা ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তি বাতিলের জোর দাবি জানান। এ চুক্তি বাতিলের দাবিতে সমগ্র মিশরে গণমিছিল ও বিক্ষোভ শুরু হয় ।
অতঃপর ১৯৫০ সালের ৮ অক্টোবর নাহাস পাশার নেতৃত্বে মিশরিয় পার্লামেন্টে ১৯৩৬ সালের ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তি এবং ১৮৯৯ সালের সুদান কনডোমিনিয়াম চুক্তি বতিল ঘোষণা করে। এমনকি একতরফাভাবে পার্লামেন্ট ১৯৫০ সালের মে মাসে সামরিক আইনও বাতিল করে। মিশরিয় সরকার একতরফাভাবে সামরিক আইন ও চুক্তি দুটি বাতিল করলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তা সম্পূর্ণরূপে বেআইনী বলে অভিহিত করে। ব্রিটিশ বিরোধী তীব্র গণবিক্ষোভ উপেক্ষা করে রাজা ফারুক নাহাশ পাশাকে পদচ্যুত করেন এবং গণ আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করতে থাকেন। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে মিশরের রাজনৈতিক পট দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। ১৯৫০ সালের জুলাই মাসে নাটকীয়ভাবে জেনারেল মোহাম্মদ নগীব এক সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসেন ৷ স্বৈরাচারী রাজা ফারুক তার শিশু পুত্রের আনুকূল্যে সিংহাসন ত্যাগ করতে বাধ্য হয়ে নির্বাসিত হন । ১৯৫৩ সালে নগীব মিশরকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেন এবং স্বয়ং প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এ চুক্তিতে ব্রিটেন সুদানের ভবিষ্যত সুদানীদের ভাগ্য নির্ধারণের অঙ্গীকার করে। ফলে ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তির ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়। উপরন্তু, একতরফাভাবে প্রজাতন্ত্র ঘোষণায় উক্ত চুক্তির কোন কার্যকারিতা থাকে না। ১৯৫৪ সালে নগীবকে এক সামরিক অভ্যুত্থানে অপসারিত করে জেনারেল নাসের ক্ষমতা লাভ করেন এবং মিশরিয় প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি একজন আদর্শ জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন এবং আরব জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ছিলেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে ইঙ্গ-মার্কিন আধিপত্যকে রোধ করার জন্য একতরফাভাবে ১৯৫৬ সালে সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করেন । এর ফলে মিশর ব্রিটিশ আধিপত্য থেকে মুক্ত হয় ।
ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তি, ১৯৩৬-এর সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন : ১৯৩৬ সালের সম্পাদিত ইঙ্গ-মিশরিয় চুক্তির ধারাসমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে উভয় পক্ষই একে অপরকে ছাড় দিয়েছে। ১৯২২ সালে ব্রিটেন একতরফাভাবে মিশরের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও ৪টি বিষয়ে তার চূড়ান্ত এখতিয়ার বজায় রেখেছিল। (এ) ব্রিটেন মিশরে তার সাম্রাজ্যবাদী যোগাযোগ রক্ষার নিশ্চয়তা চেয়েছিল। এ চুক্তির ৮নং ধারায় মাধ্যমে ব্রিটেন সে নিশ্চয়তা আদায় করে নেয় ।
(বি) ব্রিটেন তার নিজ স্বার্থে মিশরের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নিজের হাতে রেখেছিল। কিন্তু এ চুক্তিতে এ সংক্রান্ত কোন ধারা না থাকায় মিশর নিজেই তার প্রতিরক্ষার দায়িত্ব লাভ করল ।
(সি) এ চুক্তির ১২ নং ধারা অনুযায়ী বিদেশি নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্বও মিশরকে প্রদান করা হয়। ১৯৩৭ সালের ৮মে সুইজারল্যান্ডের মত্রোঁ শহরে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে মিশরে ক্যাপিচুলেশশন সুবিধা ভোগকারী রাষ্ট্রগুলি এ প্রথা বিলুপ্তর ঘোষণা দেয় ।
(ডি) এ চুক্তির ১১ নং ধারা অনুসারে সুদানে ইঙ্গ-মিশরিয় যৌথ শাসন প্রতিষ্ঠার ফলে ১৯২৪ সালে সুদান থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া মিশরিয় সেনাবাহিনী পুনরায় সুদানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পায়। ফলে দেখা যায় যে, এ চুক্তিতে ১৯২২ সালে ব্রিটেন কর্তৃক ৪টি বিষয়ের মধ্যে ৩টিতে ব্রিটেন মিশরকে ছাড় দিয়েছিল ।
এ চুক্তির ফলে মিশরে নিযুক্ত ব্রিটিশ প্রতিনিধির পদমর্যাদা হয় রাষ্ট্রদূত । ফলে তিনি মিশরে নিযুক্ত অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের সমপর্যায়ভুক্ত হন। ১৯৩০ সালে সম্পাদিত ইঙ্গ-ইরাকি চুক্তির মত বিটেন এ চুক্তিতে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের জন্য অধিকতর মর্যাদা দাবি না করে উদারতার পরিচয় দেয়। তবে মিশরের প্রধানমন্ত্রী মস্তফা নাহাস পাশা এক নোটে মিশরে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে অন্যান্য দেশের রাষ্ট্র দূতের চেয়ে জ্যেষ্ঠতা প্রদানের ঘোষণা দেন। এ চুক্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেন মিশরকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ চুক্তিতে প্রদত্ত অঙ্গীকার অনুযায়ী ব্রিটেন লীগ অব নেশনসের সদস্যপদ লাভের জন্য মিশরকে সহযোগিতা করে। ফলে ১৯৩৭ সালের ২৬ মে মিশর লীগ অব নেশনস এর সদস্যপদ লাভ করে। তবে এ চুক্তিতে মিশরের স্বার্থ পরিপন্থী কিছু ধারাও সন্নিবেশিত হয়। চুক্তির ৭ নং ধারা অনুযায়ী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ব্রিটেনের যুদ্ধংদেহী পররাষ্ট্র নীতির সাথে মিশরের ভাগ্য জড়িত হয়ে পড়ে। এর ফলে ব্রিটেনের যেকোন যুদ্ধ প্রচেষ্টায় মিশরের যোগদানের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয় । যুদ্ধের সুযোগে ব্রিটেন মিশরের বন্দর, বিমান ঘাঁটি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অধিকার লাভ করে ।
এছাড়া এ চুক্তিতে মিশরে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য বিচার ও শুল্ক ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ সুবিধা ও দায়মুক্তি দাবি করে। ব্রিটেন মিশরের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুন্ন করেছিল। এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও চুক্তিটি যে মিশরিয়দের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। চুক্তিটি ওয়াপদ পার্টিকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়। চুক্তি সম্পাদনে নেতৃত্ব প্রদানকারী ওয়াফদ পার্টির নেতা মস্তফা নাহাস পাশা দীর্ঘকাল মিশরে অপ্রতিহত ক্ষমতা চর্চা করতে সক্ষম হন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]