এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তি-১৯৩০

ব্রিটিশ ম্যান্ডেটারি শাসনামলে ব্রিটেন ও ইরাকের মধ্যে সম্পাদিত এ্যাংলো ইরাকি চুক্তি, ১৯৩৬ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
পটভূমি : প্রথম মহাযুদ্ধের পর ইরাক থেকে তুর্কিদের বিতাড়িত করা হয় । ১৯২০ সালে ইরাকে সামরিক শাসন জারি করা হয়। ব্রিটিশ সরকার স্যার ফার্সি বক্সকে অবশেষে হাই কমিশনার হিসেবে প্রেরণ করেন। তিনি একটি শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার চেষ্টা করেন। বাগদাদের নকীবের নেতৃত্বে একটি আরব মন্ত্রীসভাও গঠিত হয়। সামরিক ও বৈদেশিক বিষয় ছাড়া যাবতীয় শাসনভার মন্ত্রীসভার উপর ন্যস্ত থাকে। প্রত্যেক মন্ত্রীর সাথে একজন ব্রিটিশ উপদেষ্টা থাকেন। ইরাকী জাতীয়তাবাদীরা এ রূপে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। তারা তালিব পাশার নেতৃত্বে একটি স্বাধীন ইরাকি রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা চালান। তালিব পাশা মন্ত্রী সভার একজন সদস্য হলেও বিরোধী কার্যকলাপের জন্য ব্রিটেন তার উপর বিরূপ ছিল। তাকে কৌশলে বন্দী করে সিংহলে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ১৯২১ সালে কায়রোতে উইন্সটন চার্চিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে শরীফ হুসাইনের পুত্র ফয়সালকে ইরাকের বাদশাহ হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়। ফয়সাল ম্যান্ডেটের আওতায় ইরাকের বাদশাহর দায়িত্ব গ্রহণ করতে রাজী হন নি। কিন্তু ইরাকের জাতীয়তাবাদীরা যখন এর সমর্থন করল এবং একটি রেফারেন্ডামে ফয়সালকে বাদশাহ হিসেবে স্বীকার করল তখন তিনি ইরাকের শাসনভার গ্রহণ করলেন। ফয়সাল ক্ষমতা লাভ করলেও জাতীয়তাবাদীরা ম্যাণ্ডেট ব্যবস্থার তীব্র বিরোধীতা করেন। তারা এর বিলুপ্তির দ্বারা ইরাকের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করে। জাতীয়তাবাদরা ফয়সালের সমালোচনা করেন এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচন বর্জন করেন। ব্রিটিশ সরকার জাতীয়তবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাদের কার্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও খর্ব করা হয়। ‘প্যাট্রিয়টিক পার্টি' এবং ‘হিজব আল- ওয়াতানা' দলগুলোর কার্যকলাপের উপর কঠোর দৃষ্টি দেয়া হয়। তীব্র বিক্ষোভের মুখে নকীব সরকারের পতন হয়। অতঃপর ১৯২২ সালে ব্রিটিশ ইরাক সম্মেলন আহবান করা হয় এবং একটি খসড়া সন্ধি প্রণীত হয়। এ খসড়ায় বলা হয়,
“ইরাকের মহামান্য বাদশাহ ইরাকি শাসনতান্ত্রিক পরিষদে উত্থাপনের জন্য একটি সাংগঠনিক আইন প্রণয়ন করবেন, যা ইরাকের সকল শ্রেণীর মানুষের স্বার্থ, আকাঙ্খা ও অধিকারকে বাস্তবে রূপ দিবে।” কিন্তু ইরাকি জাতিয়তাবাদীরা এতে সন্তুষ্ট হতে পারে নি। কেননা এতে সার্বভৌম রাষ্ট্রের উল্লেখ ছিল না। ফলে ইরাকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। ইরাকী জনতার উপর কঠোর দমননীতি ব্রিটিশ সরকার অব্যাহত রাখে। তীব্র বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশ সরকার বাদশাহ ফয়সালকে সিংহাসনে এবং তাবেদার মন্ত্রীসভাকে বজায় রাখেন। অতঃপর ১৯২৩ সালের এপ্রিল মাসে ব্রিটিশ হাই কমিশনার স্যার ফার্সি বক্স এবং ইরাকি মন্ত্রি পরিষদের মধ্যে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । এটিকে মূল প্রথম চুক্তির ‘প্রোটোকল' বলা হয়। এবং এর শর্তানুযায়ী ম্যান্ডেটির মেয়াদ ২০ বছর হতে ৪ বছরে কমিয়ে আনা হয়। এ চুক্তি বাদশাহ ফয়সাল ও কতিপয় রাজনীতি গ্রহণ করলেও জাতীয়তাবাদী ইরাকিরা এটি প্রত্যাখ্যান করে। ১৯২৪ সালে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নতুন পরিষদ এ্যাংলো-ইরাক চুক্তি অনুমোদন করতে অস্বীকার করে। এর ফলে ব্রিটিশ সরকার বলপূর্বক ১৯২৪ সালের জুন মাসে এ চুক্তি অনুমোদন করতে পার্লামেন্টকে বাধ্য করে। এ চুক্তির শর্তাবলি দ্বারা ব্রিটিশ সরকার ইরাক সরকারকে পরামর্শ দান এবং বাদশাহ ফয়সালের স্বার্থ রক্ষার অধিকার লাভ করলে ইংরেজ ছাড়া অন্যান্য বিদেশিকে ইরাকে কর্মচারি নিযুক্ত করা যাবে না এবং অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক বিষয়াদি ব্রিটিশ হাইকমিশনার নিয়ন্ত্রণ করবেন। মসুলকে কেন্দ্র করে ইরাক ও তুরস্কের মধ্যে বিরোধ বাধে। লীগ অব নেশনসে মসুল প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, মসুলকে ইরানের সাথে সংযুক্ত করা হবে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটেনের ক্ষমতা আরো সুসংহত হয়। ইরাকিদের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯২৬ সালের ১৩ জানুয়ারি এবং
১৯২৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর আরো দুটি এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি দুটিতে সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ কিছুটা হ্রাস পায়। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কর্তৃত্বের কোন পরিবর্তন না হওয়ায় তা ইরাকি জাতীয়তাবাদীদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। ১৯২৮ সালে ব্রিটেন ইরাক থেকে ‘ম্যান্ডেন্ট' প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এবং ১৯৩২ সালে এটি উঠিয়ে নিতে সম্মত হয়। পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য জাতীয়তাবাদীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখে । আরেকটি নতুন চুক্তির দাবি উত্থাপিত হয়। এর ফলে এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তি, ১৯৩০ সম্পাদনের পথ সুগম হয় ।
এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তি ১৯৩০ স্বাক্ষর : ১৯২৭ সালে স্যার গিলবার্ট ক্লেটন হাইকমিশনার হয়ে ইরাকে আসেন্তার আগমন ইরাকী জাতীয়তাবাদীদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করে এবং পূর্বতন পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। কেননা তিনি ছিলেন আরবি ভাষার সুপণ্ডিত এবং বাদশাহ ফয়সালের বন্ধুস্থানীয় । তিনি কিছুকাল হেজাজী বাহিনীর সাথেও জড়িত ছিলেন। এবং আরব জাতীয়তাদের আশা- আকাঙ্খার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। ফলে নতুন একটি চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মূলত তারই প্রচেষ্টায় ইরাকিদের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি চুক্তির খসড়া প্রণীত হয়। কিন্তু তার অকস্মাৎ মৃত্যুর ফলে চুক্তিটি চূড়ান্ত রূপলাভ করতে পারে নি। তার উত্তরসূরী স্যার ফ্রান্সিস হামফ্রিসের সময় তা চূড়ান্ত হয়। ১৯৩০ সালের ৩০ জুন ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্যার ফান্সিস হামফ্রিস এবং ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নূরি আল সাঈদ পাশা একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এটিই ঐতিহাসিক “এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তি- ১৯৩০” । নব্য চুক্তিতে ব্রিটেন ও ইরাকের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদী মৈত্রী স্থাপনের কথা বলা হয়। ইরাকের স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়া হয়। লীগ অব নেশনস এর সদস্য পদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্রিটেন ইরাককে আশ্বাস দেয় এবং সদস্য পদলাভের অব্যবহিত পর হতেই ইরাকে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি শাসনের অবসান হবে বলে ঘোষণা দেয়।
চুক্তির ধারাসমূহ
এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তি, ১৯৩০ এর কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ধারা রয়েছে। চুক্তির ধারাসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হল :
১। ব্রিটেন ও ইরাকের মধ্যে স্থায়ী শান্তি ও বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উভয় পক্ষ বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে ইরাকের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করবে। কোন পক্ষই এমন কোন নীতি গ্রহণ করবে না যাতে অপরপক্ষের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়। এছাড়া ১নং এর সংযুক্ত ধারায় আরো বলা হয় যে, ব্রিটেন ইরাকের অপর দুটি স্থান মসুল ও হিনাইদিতে অনধিক ৫ বছরের জন্য সৈন্য রাখার অধিকার পাবে ।
২। ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের পরিবর্তে একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা হবে এবং তিনি ইরাকে নিযুক্ত সকল বিদেশি রাষ্ট্র দূতের চেয়ে অধিকতর মর্যাদার অধিকারী হবেন। ইরাকও বৃটেনে তার রাষ্ট্রদূত প্রেরণ করতে পারবে। এছাড়া ২ নং এর সংযুক্ত ধারায় বলা হয় যে, ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ সেনাবাহিনী স্থানীয় প্রশাসনের আওতামুক্ত থাকবে এ বাহিনীর সদস্যদের উপর ইরাক সরকার কোনরূপ কর আরোপ করতে পারবে না ।
৩। দুই পক্ষের কোন পক্ষ যদি তৃতীয় কোন রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে অপর পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে। ৩নং এর সংযুক্ত ধারায় বলা হয় যে, অধিকন্ত ইরাকি ভূ-খণ্ডে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এক ঘাঁটি হতে অন্য ঘাটিতে বিনা বাধায় যাতায়াত এবং ওয়ারলেস টেলিগ্রাফ ব্যবহারের অধিকার পায় ।
৪। যদি কখনও যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে ব্রিটেন ইরাকের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নিবে। এক্ষেত্রে ইরাক ব্রিটেনকে তার ভূ-খণ্ডে রেলপথ, নদীপথ, নদীবন্দর, বিমান বন্দর সহ যাতায়াতের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে ।
৫। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ইরাককে বহিশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে ইরাকে ব্রিটিশ উপস্থিতি প্রয়োজন। তাই ব্রিটিশ বিমান ঘাঁটি স্থাপনের জন্য বসরার নিকটবর্তী শুইয়াইবা এবং ইউফ্রেটিসের পশ্চিমে অবস্থিত হাব্বানিয়া নামক স্থান দুটি ইজারা পাবে ব্রিটেন। এ অঞ্চলে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীও অবস্থান করতে পারবে।
৬। চুক্তির সংযুক্তগুলি চুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। ৬নং এর সংযুক্ত ধারায় বলা হয় যে, ইরাক যদি বিদেশি প্রশিক্ষক দিয়ে তার সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে অথবা ইরাকি অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠাতে চায় তাহলে একমাত্র ব্রিটেন হতেই এসব সেবা গ্রহণ এবং অস্ত্র-শস্ত্র ও যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে। ইরাকি সেনাবাহিনীর জন্য এমন কোন অস্ত্র শস্ত্র ও যন্ত্রপাতির ক্রয় করা যাবে না যা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ব্যবহার হয় না ।
৭। চুক্তিটি ব্রিটেন ও ইরাকের মধ্যে স্বাক্ষরিত পূর্ববর্তী চুক্তি সমূহের স্থলাভিষিক্ত হবে। চুক্তিটি ইংরেজি ও আরবি উভয় ভাষায় প্রণীত হবে । তবে কোন বিরোধ দেখা দিলে বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে এর ইংরেজি ভার্সনটি প্রাধান্য পাবে ।
৮। লীগ অব নেশনসের সদস্য পদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্রিটেন ইরাককে সহযোগিতার আশ্বাস দেয় এবং সদস্য পদ লাভের অব্যবহিত পর হতেই ইরাকে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি শাসনের অবসান হবে ঘোষণা দেয়া হয়।
৯। এ চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটেন ও ইরাকের মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদী মৈত্রী স্থাপিত হবে এবং ইরাক হবে স্বাধীন রাষ্ট্র ।
১০। চুক্তির বাস্তবায়ন এবং চুক্তির কোন ধারার ব্যাখ্যা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে যদি উভয় পক্ষের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মিমাংসা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে লীগ অব নেশনসের সনদ অনুযায়ী সমস্যাটির সমাধান করা হবে ।
১১। যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে উভয় পক্ষ চুক্তিটি অনুমোদন করবে এবং তারপর ইরাকের লীগ ভুক্তির দিন হতে চুক্তিটি কার্যকর হবে। চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এর মেয়াদ হবে ২৫ বছর। কার্যকর হওয়ার ২০ বছর পর উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে নতুন একটি চুক্তি সম্পাদন করা যাবে।
এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তি চুক্তির গুরুত্ব
এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তি ১৯৩০ পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এ চুক্তিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। দখলদার বৈদেশিক শক্তির সকল স্বার্থ বজায় রাখার নামে স্বাধীনতা প্রদান করে জাতীয়তাবাদী মহলকে সন্তুষ্ট রাখার যে সাম্রাজ্যবাদ নীতি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পরবর্তীকালে গ্রহণ করা হয়েছিল তার প্রথম প্রকাশ এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তি, ১৯৩০। ১৯৩৬ সালে ইঙ্গ-মিশরীয় চুক্তি, এ বৎসরে ফ্রাঙ্কো-সিরিয়া ও ফ্রাঙ্কো লেবাননি খসড়া চুক্তি এ এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তির উপর ভিত্তি করেই রচিত হয়েছিল ।
জাতীয়তাবাদী মহল হতে এ চুক্তির তীব্র সমালোচনা করা হয়। এ একতরফা চুক্তি যে ইরাকের সার্বভৌমত্ব ও আত্মসম্মানবোধের উপর আঘাতস্বরূপ তা সকলেই উপলব্ধি করতে পেরেছিল। এ তথাকথিত চুক্তির মাধ্যমে ইরাককে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশের পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয় ।
লীগ অব নেশনসের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করার পূর্বে ইরাক সরকারকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ম্যান্ডেটরি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তি ও ঋণ সম্পর্কিত দায়িত্বের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে বলা হয় ৷ ১৯৩২ সালের ৩১ মে ইরাক সরকার এ ব্যাপারে যথারীতি নিশ্চয়তা দান করে । অক্টোবর মাসের ৩ তারিখে ইরাক লীগ অব নেশনসের সদস্যপদ লাভ করে । আরব রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে ইরাকই প্রথম এ বিরল সম্মানের অধিকারী হয়।
ইরাকে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অব্যবহিত হওয়ার পর থেকেই ব্রিটিশ প্রশাসন বিভিন্ন সন্ধি চুক্তির মাধ্যমে ইঙ্গ-ইরাকি সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, ১৯৩০ সালে স্বাক্ষরিত ইঙ্গ-ফরাসী চুক্তির মাধ্যমে তা চূড়ান্ত রূপলাভ করে। এ চুক্তির একটি বিশেষ গুরুত্ব ছিল এই যে, সমসাময়িক কালে মধ্য প্রাচ্যের যেসব অঞ্চলে ম্যান্ডেটরি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেসব অঞ্চলের ম্যান্ডেটরি শাসকগণ স্থানীয়দের সাথে তাদের সম্পর্ক নির্ধারণে এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তিকে একটি মডেল হিসেবে গ্রহণ করে এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সাথেও অনুরূপ চুক্তি সাক্ষর করে ।
তবে গুরুত্ব যাই হোক না কেন চুক্তিটি সমালোচনার উর্ধ্বে ছিল না । এ চুক্তিতে ব্রিটেন তার সকল স্বার্থ বজায় রেখে ইরাককে নামে মাত্র স্বাধীনতা প্রদান করে এবং লীগ অব নেশনসের সদস্য পদ লাভে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে ইরাকি জাতীয়তাবাদীদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে। তাই শুরু থেকেই জাতীয়তাবাদী মহল এ চুক্তির বিরোধীতা করে। তাদের মতে এতদিন ইরাকে ব্রিটিশ শাসন ছিল অলিখিত এবং এ শাসনের প্রতি ইরাকি জনসাধারণের কোন সমর্থন ছিল না । সে দৃষ্টিকোণ থেকে ইরাকে বৃটিশ শাসন ছিল অবৈধ। কিন্তু এ চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটেন ইরাক শাসনের আইনগত অধিকার লাভ করে। লীগ অব নেশনসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্রিটেন ইরাককে ‘এ' ক্যাটাগরির একটি ম্যান্ডেটরি অঞ্চলের মর্যাদা না দিয়ে তার অন্যান্য উপনিবেশের মতই শাসন করছে বলে জাতীয়তাবাদীরা অভিযোগ করে ।
চুক্তির ধারাগুলির মূল্যায়ন করলেও জাতীয়তাবাদীদের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হয়। চুক্তির পররাষ্ট্র বিষয়ক ধারাটি ইরাকের স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। ফলে ইরাকের বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন হয়েছিল। পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক ধারাটি ব্রিটেনের অনুকূলে ছিল । কেননা ইরাকের তুলনায় ব্রিটেনেরই তৃতীয় পক্ষের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ছিল বেশি। ফলে এ ধারাটিতে ভবিষ্যতে ইরাকের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। প্রতিরক্ষা বিষয়ক ধারাটিতে ব্রিটেন ইরাকের নিরাপত্তা প্রদানের অঙ্গীকার করে যুদ্ধের সময় আবারো ইরাকে ফিরে আসার সুযোগ উন্মুক্ত রেখেছিল । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালে এ ধারা বলেই ব্রিটেন ইরানে সেনাবাহিনী প্রেরণ করে এবং সমগ্র ইরাকের উপর পুনরায় তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। চুক্তি ঘাটি ও ট্রানজিট বিষয়ক ধারাটির মাধ্যমে ব্রিটেন ইরাকের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায়। চুক্তির অন্য আরেকটি ধারায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর উপর কর্তৃত্ব বিচার ও করারোপের ক্ষেত্রে ইরাকের অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। অথচ ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ব্যয়ভার বহন করতে হত ইরাক সরকারকেই। সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র ক্রয় সংক্রান্ত ধারাটিতে ইরাকি সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে বৃটিশ সেনাবাহিনীর উপর সনির্ভরশীল করে রাখা হয় । শেষ ধারাটিতে ইরাকে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের পরিবর্তে একজন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করার কথা বলে ব্রিটেন কিছুটা উদারতার পরিচয় দিলেও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের জন্য অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতদের চেয়ে অধিকতর মর্যাদা দাবি করে ব্রিটেন কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করেছে ।
ইরাকের রাজনীতিতে এ চুক্তির ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। চুক্তি বিরোধী জাতিয়তাবাদীরা এ চুক্তির সমালোচনায় লিপ্ত হয়। চুক্তি বিরোধী জাতীয় দল ও গণদল একত্রিত হয়ে ইথা-আলওয়াতান বা জাতীয় ভাতৃত্ব দল গঠন করে । তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মেকাবেলার জন্য নূরি আল-সাইদ চুক্তির সমর্থকদের
নিয়ে আল আহাদ দল গঠন করেন। ফলে ইরাকের রাজনীতিতে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এ সংকট ক্রমে অর্থনৈতিক সংকটে পরিণত হয়। এবং দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সমগ্র দেশে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব বিরাজ করে এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আগের চেয়ে আরো তীব্র হয়ে উঠে ।
শত সমালোচনা সত্ত্বেও ১৯৩২ সালে এ্যাংলো-ইরান চুক্তির অনুমোদন এবং ইরাককে লীগ ভুক্তির ফলে আসিরিয় সম্প্রদায়ের জোরদার আন্দোলন থেকে এ চুক্তি যে কিছুটা হলেও সুফল বয়ে এনেছিল তার প্রমাণ মেলে। ম্যান্ডেটরি শাসনের শুরু থেকেই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ আসিরিয়দের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। তাই আসিরিয়রাও ইরাকে ব্রিটিশ কতৃত্ব সুদৃঢ় হওয়ার পক্ষে ছিল। ১৯৩০ সালের এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তির ফলে ইরাকে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ ও কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল বলেই আসিরিয়রা এর বিরোধীতা করেছিল। কেননা ইরাকে ব্রিটিশ কর্তৃত্বের স্থায়ীত্বের সাথে আসিরিয়দের ভাগ্য ছিল অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে, ১৯৩০ সালের এ্যাংলো ইরাকি চুক্তি কিছুটা হলেও ব্রিটিশ কর্তৃত্ব খর্ব করেছিল । সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক ব্রিটিশ নাগরিকদের বিরোধিতা থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া ইরাকিদের জন্য এ চুক্তির সবচেয়ে বড় সুফল ছিল এই যে, এ চুক্তিতে প্রদত্ত ব্রিটিশ অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৩২ সালের অক্টোবরে জেনেভা সম্মেলনে উপস্থিত ৫২ টি দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ সর্বসম্মতিক্রমে ইরাককে লীগ অব নেশনসের সদস্যপদ প্রদান করে। ইরাক প্রথম আরব দেশ হিসেবে লগি অব নেশনসের সদস্যপদ লাভের গৌরব অর্জন করে। চুক্তিটি সম্পাদনে বাদশাহ ফয়সাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি জানতেন পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলির শত্রুতা থেকে ইরাককে রক্ষা করতে হলে এবং ইরাকে ম্যান্ডেটরি শাসনের সমাপ্তির জন্য ব্রিটেনের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই তিনি ইরাকি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে একটি সহনীয় পর্যায়ে রেখে এ আন্দোলনের প্রতি ব্রিটিশ সহানুভূতি আদায়ের নীতি অবলম্বন করে । এমনকি তিনি জাতীয়তাবাদীদের আন্দোলনকে উৎসাহ প্রদান করে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে ইরাকিদের অনুকূলে চুক্তির ধারাসমূহ নির্ধারণের চেষ্টা চালান ।
১৯৩০ সালের এ্যাংলো ইরাকি চুক্তি ইরাকের বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। এ চুক্তির বিচার সংক্রান্ত সম্পূরক ধারায় ইরাকি আদালতে কিছু সংখ্যক ব্রিটিশ বিচারক নিযুক্তির কথা বলা হয়। সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগ ছিল স্বাধীন। কিছু ক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধকতা ছাড়া প্রকাশ্যে বিচার কার্য পরিচালিত হত এবং রায় ঘোষণা করা হত। আইনমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে বাদশাহ বিচারকদের নিয়োগ দিতেন ।
১৯৩০ সালের এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তি ইরাকের রাজনীতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। এ চুক্তির পর ইরাকের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটে। নূরি আল-সাঈদ ও ওসমানিয় আমলের আহদ পার্টিকে পুনরুজ্জীবিত করেন। দলটির উদ্দেশ্য ছিল ১৯৩০ সালের চুক্তিটি কার্যকর করার মাধ্যমে ম্যান্ডেটরি শাসনের অবসান ঘটানো। কিন্তু চুক্তিবিরোধী রাজনীতিবিদদের মতে, চুক্তিটিতে ইরাকের জাতীয় আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে নি। তারা গণদল ও জাতীয় দলের সমন্বয়ে জাতীয় ভ্রাতৃদল গঠন করে। ইয়াসিন আল-হাসিমি, রশীদ আলী আল-গিলানী। হিকমত সুলায়মান এবং মুহাম্মদ জাকী এ দলের নেতৃত্বে ছিলেন। ইরাকের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন ছিল এ দলের উদ্দেশ্য। ১৯৩২ সালে ইরাকের স্বাধীনতা লাভের পর আহদ পার্টি বিলুপ্ত হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর পরই ফয়সাল অভ্যন্তরীণ ইস্যুর উপর ভিত্তি করে কোন রাজনৈতিক দল গঠন করা যায় কিনা এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের আলোচনার জন্য আহবান করেন। কিন্তু ১৯৩৩ সলে তার আকস্মিক মৃত্যু শুধু ইরাকের রাজনীতিই নয় সামগ্রিকভাবে সমগ্র ইরাকের জন্য অপরিমেয় ক্ষতি বয়ে আনে। ফলে রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলেও ১৯৪৬ সালের পূর্বে তা সম্ভব হয় নি। ১৯৪৬ সালে সুয়াইদির নেতৃত্বে সরকার গঠিত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ৫টি রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়।
সার্বিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিশেষে বলা যায় যে, পার্শ্ববর্তী সিরিয়া- লেবাননে ফরাসি ম্যান্ডেটরি শাসনের তুলনায় ইরাকে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি শাসন ছিল উদার প্রকৃতির । শুরুতে ভারতীয় প্রশাসনের প্রভাব থাকায় কিছুটা কৰ্তৃত্ববাদী শাসন চালু করা হলেও পরবর্তীতে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। কায়রো সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ ইরাকের জন্য ছিল আশীর্বাদ স্বরূপ। এ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই ফয়সাল ইরাকের বাদশাহ নিযুক্ত হন। যুদ্ধ পূর্ববর্তী এ্যাংলো আরব সমঝোতার ভূমিকা, প্যারিস শান্তি সম্মেলনে আরবদের প্রতিনিধিত্ব এবং সিরিয়ার অভিজ্ঞতা তাকে একজন দূরদর্শি ও পরিপক্ক রাজনীতিবিদে পরিণত করেছিলেন। তার এ অভিজ্ঞতার সুফল পেয়েছিল ইরাক। তিনি অত্যন্ত চমৎকারভাবে ইরাকি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও ব্রিটিশ মনোভাবের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেছিলেন। ফলে ম্যান্ডেটারি শাসন প্রতিষ্ঠার মাত্র এক দশকের মধ্যেই তিনি ইরাককে ম্যান্ডেটরি শাসনের নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অবশ্য এক্ষেত্রে ব্রিটেনের সদিচ্ছার কথাও অস্বীকার করা যায় না। সম্ভবত আরবদের প্রতি পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অনুশোচনা থেকেই ব্রিটেন ইরাকে কিছুটা নমনীয় নীতি গ্রহণ করেছিল । সুতরাং বিতর্ক মুক্ত না হলেও ১৯৩০ সালের এ্যাংলো-ইরাকি চুক্তি ইরাক তথা মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]