ফিলিস্তিন (Palestine)

পৃথিবীর সবচেয়ে সমস্যাগ্রস্থ রাষ্ট্র ফিলিস্তিন। স্মরণাতীতকাল হতে ফিলিস্তিন মানব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ভূ-মধ্যসাগরের পূর্বতীরে অবস্থিত যে প্রাচীন ভূমির অধিকাংশ আধুনিক ইসরাইল ও কিছুটা জর্ডান ও মিশরের দখলে তাই ফিলিস্তিন নামে পরিচিত। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বাদশ শতাব্দীতে ফিলিস্তিনিরা এ দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অংশ দখল করে নেয়ার কারণে এর নাম হয় ফিলিস্তিন। দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে এ অঞ্চলটি রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্গত সিরিয়া প্রদেশের দক্ষিণাংশ হিসেবে ‘সিরিয়া ফিলিস্তিনা' নামে অভিহিত হয়। ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে আরবরা ফিলিস্তিন অধিকার করে ও শাসন করতে থাকে। ১৯১৭ সালে ব্রিটেনের জেরুজালেম দখল করা পর্যন্ত ফিলিস্তিন ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের একটি অন্যতম প্রদেশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন এ অঞ্চলটিতে জাতি পুঞ্জের ম্যান্ডেট ব্যবস্থার অধীনে শাসনকার্য পরিচালনার অধিকার লাভ করার পর এর পুনঃনামকরণ করা হয় ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনের সীমা নির্ধারণ করতে গিয়ে বলা চলে যে, পশ্চিম ভূ- মধ্যসাগর থেকে আরম্ভ করে পূর্বদিকে জর্ডান নদী-অতিক্রম করে আরব মরুভূমি পর্যন্ত এবং উত্তরদিকে নিম্ন লিটানি নদী থেকে দক্ষিণে গাজা উপত্যাকা পর্যন্ত এর সীমানার বিস্তৃতি। এর আয়তন তেমন বেশি নয়। মাত্র ১৫০ মাইল লম্বা ও ৮০ মাইল চওড়া। কিন্তু এর ভৌগলিক অবস্থানগত গুরুত্ব অপরিসীম। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে ফিলিস্তিন একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। তিনটি মহাদেশের সংযোগস্থল, সারা বিশ্বের শতকরা ৭০ ভাগ তেল উৎপাদন এবং এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে হ্রস্বতম সমুদ্র ও আকাশ পথের দূরত্ব যোগায় ঠিক সে কারণেই ফিলিস্তিন তথা মধ্যপ্রাচ্যের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে সমধিক গুরুত্ব লাভ করেছে।
ফিলিস্তিন ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি এ তিন ধর্মাবলম্বী মানুষের নিকট পরম পবিত্র স্থান হিসেবে স্বীকৃত। মুসলমানরা একে পবিত্র মনে করে কারণ তাদের দ্বিতীয় কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাস জেরুজালেমে অবস্থিত। খ্রিস্টানরা একে পূন্যভূমি হিসেবে গণ্য করে কারণ যিশু খ্রিষ্ট বেথেলহামে জন্ম গ্রহণ করেন এবং সেখানে ধর্ম প্রচার করেন। আর ইহুদিরাও ফিলিস্তিনকে নিজেদের বলে দাবি করে। এর অধিকারের প্রশ্ন নিয়ে অতীতে অনেক যুদ্ধ বিগ্রহ হয়েছে এবং অনেকবার এর হাত বদল হয়েছে। আসলে ফিলিস্তিন সমস্যার মূল নিহিত আছে ধর্মীয় অনুভূতির মধ্যে । বাইবেলে বলা হয়েছে যে, ফিলিস্তিন ইব্রাহীমের বংশধরকে দেওয়া হল। তাই ইসলাম ও ইহুদি এ উভয় ধর্মের অনুসারীরা ফিলিস্তিনকে নিজেদের বলে দাবি করেন। মুসলমানদের দাবি সন্দেহাতীতভাবে অগ্রগণ্য। কারণ ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রথম স্ত্রী বিবি হাজেরার গর্ভজাত জ্যৈষ্ঠ প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ) তাদের পিতৃপুরুষ। অন্যদিকে ইহুদিরা ইব্রাহীমের দ্বিতীয় স্ত্রী সারার গর্ভজাত সন্তান ইসহাককে নিজেদের পিতৃপুরুষ হিসেবে বিবেচনা করে ফিলিস্তিনকে নিজেদের দখল রাখতে চায় ।
৭০ সালে জেরুজালেমের দ্বিতীয় মন্দির ধ্বংস করে দেয়ার পর ফিলিস্তিনে ইহুদিদের প্রাধান্য লোপ পায়। এবং অধিকাংশ ইহুদি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর অনেকদিন যাবৎ খ্রিস্টানদের অধিকারে থাকার পর খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) শাসনালে ৬৩৪ সালে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে বিজয়ী মুসলমানরা ফিলিস্তিন দখল করে ও দীর্ঘকাল যাবৎ নিজেদের অধিকারে রাখে। কিন্তু একদিন নিজ বাসভূমিতে ফিরে আসার স্বপ্ন ইহুদিদের মন থেকে কখনো মুছে যায় নি। প্রায় দু'হাজার বছরব্যাপী সারা বিশ্বে ভ্রাম্যমান অবস্থায় থাকা কালে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে ধর্মীয় ইহুদিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে এবং অনেক ইহুদি বসবাস করার জন্য ফিলিস্তিনে ফিরে আসতে থাকে ।
১৮৯৬ সালে বুদাপেস্টবাসী ভিয়েনার Neue Freie presse' নামক বিখ্যাত সংবাদপত্রের প্যারিসে নিযুক্ত প্রতিনিধি ড. থিউডোর হারজেল ইহুদিবাদকে রাজনৈতিক রূপ দেন। ১৮৯৭ সালে তিনি Die Welt' নামে এক সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন যা ইহুদিদের মুখপত্র হিসেবে কাজ শুরু করে দেয়। ঐ একই বছর তার নেতৃত্বে সুইজারল্যাণ্ডের বাসলে শহরে প্রথম ইহুদি কংগ্রেস মিলিত হয়। এ কংগ্রেসে ইহুদি জনসাধারণের জন্য ফিলিস্তিনে বাসভূমি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এবং তা বাস্তবায়নের জন্য 'বিশ্ব ইহুদি সংগঠন (WZO) প্রতিষ্ঠা করা হয়। অটোমান সম্রাটের পক্ষ থেকে ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে বসবাসের বারংবার অনুমোদন চাওয়া হয় । কিন্তু সুলতান তা প্রদান করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন ।
১৯১৪ সালের ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হলে ইহুদিদের স্বপ্ন বাস্তাবয়নের এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়। তারা ড. ওয়াইজ ম্যান এর নেতৃত্বে লণ্ডনে কাজ শুরু করে দেয়। ওয়াইজম্যান Manchester Guardian' পত্রিকা, রথশিল্ড পরিবার ও লয়েড জর্জের সমর্থনে লর্ড বেলফুর এর সহানুভূতি লাভ করতে সক্ষম হন। ইহুদিরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ফিলিস্তিনে ইহুদিদের আবাসভূমি স্থাপনের ব্যাপারে মিত্রপক্ষের অঙ্গীকার চাচ্ছিল। ব্রিটেন প্রথমে তাদেরকে উগান্ডায় বসতি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তারা ফিলিস্তিন ছাড়া অন্য কোথায়ও যেতে অস্বীকৃতি জানায়। ইতোমধ্যে ড. ওয়াইজম্যান কৃত্রিম উপায়ে এসেটিলিন (Acetylene) আবিষ্কার করে ব্রিটিনের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় অবদান রাখায় এবং তারা যখন বুঝতে সক্ষম হয় ফিলিস্তিনে প্রতিষ্ঠিতব্য আবাসভূমি সুয়েজ খালের পার্শ্বে অবস্থিত হবে বলে এর ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং ব্রিটেনের প্রভাব বলয়ে থাকবে। তখন পররাষ্ট্র সচিব লর্ড বেলফুর আশ্বস্ত হন । তিনি ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর লর্ড রথশিল্ড-কে লেখেন, “His Majesty's Government view with favour the establishment in palestine of a national home for the Jewish people.” এর বাংলা ভার্সন হল যে ব্রিটিশ সরকার ইহুদি জনগণের জন্য ফিলিস্তিনে একটি জাতীয় আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার প্রশ্নটি অনুগ্রহ সহকারে বিচার করে। এটিই বিখ্যাত Balfour Declaration বা বেলফুর ঘোষণা নামে পরিচিত। কিন্তু ইহুদিরা কিঞ্চিত হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। কেননা বেলকুর ঘোষণায় ফিলিস্তিনে ইহুদি জনগণের জন্য একটি আবাসভূীম প্রতিষ্ঠার প্রশ্নটি শুধু ব্রিটিশ সরকারের অনুগ্রহের সাথে বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। এবং ফিলিস্তিনে ইহুদি জনসাধারণের আবাস ভূমিকে স্বীকার করে নেয়া হয় নি। যা হোক বেলফুর ঘোষণার পর ড. ওয়াইজম্যানের নেতৃত্বে ইহুদি সংগঠন ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ দখলদার বাহিনীর নিকট ইহুদিদের সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম সমন্বয় সাধন করার জন্য একটি কমিশন পাঠায়। এর ফলে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কারণ ইতোমধ্যে ১৯১৫ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে মিশরে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্যার হেনরী ম্যাকমোহন ও মক্কার শরীফ হোসাইনের মধ্যেকার পত্র বিনিময়ের মাধ্যমে ব্রিটেন অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার পুরস্কার স্বরূপ ফিলিস্তিনি আরব রাষ্ট্র স্থাপনের অঙ্গীকার করে। যেহেতু আরবরা প্রায় শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ পর্যন্ত সংখ্যা গরিষ্ঠ ছিল তাই তারা স্বভাবতই আশা পোষণ করত যে ফিলিস্তিনে তাদের জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। কিন্তু যুদ্ধ চলাকালে ব্রিটেনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও যুদ্ধোত্তরকালে ফিলিস্তিনে ফিরে আসার জন্য ইহুদিদের আন্দোলন, তাদের মনে যথেষ্ট ভীতির সঞ্চার করে। এদিকে ব্রিটেন আরবাবাসী ও ইহুদিদের নিকট দেয়া অঙ্গীকার ভঙ্গ করে ফিলিস্তিনকে নিজ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াসী ছিল। কারণ সুয়েজ খালের নিকটবর্তী এ অঞ্চলের ভৌগলিক গুরুত্ব ছিল সীমাহীন। শেষ পর্যন্ত ব্রিটেন জাতিসংঘের ম্যান্ডেট ব্যবস্থার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের শাসনভার নিজ হাতে গ্রহণ করে। এরপর ফিলিস্তিন সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। কারণ ইহুদিরা চাচ্ছিল তারা যত তাড়াতাড়ি পারে সেখানে বসতি স্থাপন করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে এবং সেজন্য Immigration বা বহিরাগমনের ব্যাপারে তারা ব্রিটেনের নিকট ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ফিলিস্তিনে ইহুদি বহিরাগমনের সংখ্যা যত বাড়তে থাকে আরববাসী ও ইহুদিদের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামাও তত বৃদ্ধি পেতে থাকে ৷ ১৯২১ ও ১৯২৯ সালে এ ধরনের দু'টি বিরাট দাঙ্গার পর ব্রিটেন এ সমস্যাটির
বিভিন্ন দিক তদন্ত করে দেখার জন্য দুটি আলাদা কমিশন গঠন করে। উইনস্টন চার্চিলের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার ১৯২২ সালে যে White paper' বা স্বেতপত্র প্রকাশ করে তাতে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের বসতি স্থাপনের দাবিকে স্বীকার করে নেয়া হলেও বহিরাগতদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয় । ১৯৩০ সালে Passfield white paper' বা পাশফিল্ড শ্বেতপত্রে ইহুদি বহিরাগমন স্থগিত রাখা ও আরব সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি Legislative Council' বা বিধান পরিষদ গঠনের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু ইহুদিদের প্রবল বিরোধিতর মুখে এটা কার্যকর হতে পারে নি। এর পূর্বে ১৯২৯ সালে ফিলিস্তিনে ইহুদি সংগঠনকে কার্য পরিচালনার সুবিধার জন্য Jewish Ageney বা ইহুদি সংস্থায় রূপান্তরিত হয় ।
১৯৩৩ সালে জার্মানিতে Adolf Hitler এর ক্ষমতা দখলের পর তার ইহুদি নির্যাতনের নীতিতে অতিষ্ট হয়ে হাজার হাজার ইহুদি ফিলিস্তিনে এসে আশ্রয় নিতে থাকে। এ ধরনের অশুভ অগ্রগতির মুখে ১৯৩৫ সালের নভেম্বরে আরববাসীরা ব্রিটিশ হাইকমিশনারের কাছে দরখাস্ত করে যাতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে Convenant of the League of Nations বা জাতিসংঘের গঠনতন্ত্রে এবং ফিলিস্তিন ম্যান্ডেট এর ২ নং ধারা অনুযায়ী সেখানে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আবেদন জানানো হয়। ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ইহুদিরা বিজয় লাভ করার পর ফিলিস্তিনের ইহুদিপন্থী সংবাদপত্রগুলি আনন্দে আত্মহারা হয় এবং আরববাসীরা ভীত হয়ে পড়ে। ফিলিস্তিনে আবার নতুন করে গন্ডগোলের সূত্রপাত হয়। এরূপ অবস্থায় ১৯৩৬ সালের মে মাসে ফিলিস্তিনকে শান্ত করার উদ্দেশ্যে বৃটিশ সরকার আর্ল পীল (Earll peel) এর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন প্রেরণ করে। এ সময় আরেকটি অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। কেননা ধর্মঘট না থাকা পর্যন্ত পীল কমিশন ব্রিটেন ত্যাগ করবে না, অন্যদিকে ইহুদি বহিরাগমন বন্ধ না করা পর্যন্ত Arab Higher Committee বা আরব উচ্চ কমিটি ধর্মঘট শেষ করবে না। যাহোক, ১৯৩৭ সালের জুলাই মাসে পীল কমিশনের রিপোর্টে মন্তব্য করা হয় যে, ফিলিস্তিন শেষ পর্যন্ত কে শাসন করবে এ প্রশ্নে দায়িত্বহীন সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রিপোর্টে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়। এবং এর শর্ত ও সীমানার ব্যাপারে ইঙ্গিত দেয়া হয়। একই সময়ে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা পীল রিপোর্টকে সরকারি নীতি হিসেবে সমর্থন করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করার এ মতলব আরববাসী ও ইহুদি উভয় সম্প্রদায়কেই তীব্রভাবে আক্রমণ করে। পীল রিপোর্ট ও শ্বেতপত্রের প্রস্তাব অনুযায়ী ফিলিস্তিনে ইহুদি বহিরাগমনকে হ্রাস করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অবৈধ ইহুদি আত্মরক্ষা বাহিনী Haganah (হাগানা) তার তৎপরতা জোরদার করতে থাকে। ফিলিস্তিনে আবারো বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১৯৩৮ সালের অক্টোবরে আরব বিদ্রোহীরা পুরনো নগরী জেরুজালেম অধিকার করে নেয়। হাগানাও আরবদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে থাকে এবং ফিলিস্তিনে Civil War বা গৃহযুদ্ধ শুরু হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় ব্রিটেন পরিস্থিতির নাজুকতা অনুধাবন করে বিভক্তির পরিকল্পনা ত্যাগের কথা ঘোষণা করে। এবং আরববাসী ও ইহুদিদের লন্ডনে এক সম্মেলন আহ্বান করে। ১৯৩৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত লন্ডন সম্মেলনে ব্রিটেন আরববাসী ও ইহুদিদের কাছে আলাদা আলাদাভাবে প্রস্তাব রাখে যে ইহুদিদের বহিরাগমন ও জমি ক্রয়কে অনেকটা কমিয়ে ফেলা হবে এবং দশ বছর পর ফিলিস্তিনে একটি একক স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। ইহুদিরা এ প্রশ্নটি আরো অধিক আলোচনা করতে অস্বীকার করে সম্মেলন ত্যাগ করে। আরববাসীরাও অস্পষ্ট কারণে এ প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় । উপরন্ত উভয় দিক থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে গ্রেটব্রিটেন ১৯৩৯ সালের ১৭ মে ফিলিস্তিনের অচলাবস্থা দূর করতে তার Unilateral বা এক পক্ষীয় পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করে আরেকটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে । এতে বলা হয় যে আগামী পাঁচ বছরে ৭৫,০০০ ইহুদি বহিরাগতকে ফিলিস্তিনে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। এবং তারপর শুধু আরববাসীদের সম্মতি নিয়েই দ্বার খোলা হবে। দশ বছর পর ইরাকে প্রচলিত ধারা অনুযায়ী Self government বা স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন আরববাসী ও ইহুদিরা বুঝতে পারল যে বৃহৎ শক্তিবর্গের মধ্যকার এ লড়াইয়ের ফলাফলের উপরই ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত জড়িত। ফিলেস্তিনে নিজেদের আবাসভূমি গড়ে তোলার জন্য ইহুদি সমাজ উঠে পড়ে লাগে। অন্য দিকে আরববাসীরা বিশ্বাস করত যে ফিলিস্তিনে স্বাধীন আরব রাষ্ট্র গঠনের যে অঙ্গীকার দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই পালন করা হবে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৯ সালের শ্বেতপত্র ফিলিস্তিনের ভবিষ্যতকে হিমাগারে নিক্ষেপ করে । আরবদের নিকট থেকে ইহুদিদের কাছে ভূমি হস্তান্তর বন্ধ রাখা হয়। এবং পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ইহুদি বহিরাগমনের মোট সংখ্যা ৭৫,০০০ নির্ধারণ করা হয়। ইহুদি সংস্থাও আরব কমিটি এ শর্তাবলিতে মৌন সম্মতি জানায়। কিন্তু সবাই জানত যে যুদ্ধের অব্যবহিত পরেই ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন দাবি উঠবে। ১৯৪২ সালে মার্কিন ইহুদিরা নিউইয়র্ক নগরীর বিল্টমোর হোটেলে মিলিত হয়ে তাদের ভবিষ্যত কর্তব্য নির্ধারণ করে। Biltmore Programme- এ সমগ্র ফিলিস্তিনে একটি Jewish Commonwealth বা ইহুদি সাধারণ তন্ত্র প্রতিষ্ঠার এবং ইহুদি সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীনে অপরিমিত বহিরাগমনের দাবী জানানো হয়। বিল্টমোর প্রোগ্রামকে কার্যে পরিণত করার জন্য ফিলিস্তিনে অবৈধ ইহুদি অনুপ্রবেশ বহুগুণে বেড়ে যায় এবং ইহুদি সংস্থার নতুন নেতা Devid Ben-Gurion (ডেভিড বেন-গুরিয়ন) চাচ্ছিলেন যে ফিলিস্থিনে আশ্রয় গ্রহণকারী এ সকল ইহুদিরা সেখানে তাদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জনে সহায়তা করবে এবং পরিণামে তাদের দাবি জোরদার হবে। তবে যখনই দলেদলে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করত তখনই তা আরব দেশগুলির বিরোধীতার সম্মুখীন হত। ইতোমধ্যে বেন-গুরিয়ন ব্রিটিশ সরকারকে জানিয়ে দেন যে ১৯৩৯ সালের শ্বেতপত্রকে কার্যে পরিণত করতে হলে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাস ও নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নিবে । উপরন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর ফিলিস্তিনে মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যকার চির শত্রুতা নতুন করে বৃদ্ধি পায়। কেননা ইতোমধ্যে ইহুদিরা তাদের বহিরাগমনের ব্যাপারে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করে। ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসের নির্বাচনে বৃটেনে Labour Party (শ্রমিকদল) ক্ষমতায় এসে কোন নীতি গ্রহণ না করে ১৯৩৯ সালের শ্বেতপত্র যেমন ছিল তেমনি থাকতে দেয়। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট Harry S. Truman (ট্রুম্যান) অতি দ্রুত ১,০০০০০ বহিরাগমন সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য বেন গুরিয়নের অনুরোধ সমর্থন করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী Clement Attlee (এটলি) কে তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুনয়-বিনয় করেন ।
যেহেতু আরবদের চাপের মুখে ব্রিটেন এটা করতে ইতঃস্তত করছিল এবং কোন রকম দায়িত্ব না নিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর জন্য জেদ করতে থাকে । তাই এ প্রশ্নটি পরীক্ষা করে দেখানোর জন্য ৬ জন বৃটিশ ও ৬ জন মার্কিনবাসী নিয়ে একটি এ্যাংলো মার্কিন তদন্ত কমিটি নিয়োগ করা হয়। এ কমিটির রিপোর্টে অতি তাড়াতাড়ি ইউরোপীয় ইহুদিদেরকে ১,০০০০০ বহিরাগমন সার্টিফিকেট প্রদান করার সুপারিশ করা হয়। এতে স্বীকার করে নেয়া হয় যে ইহুদি ও আরববাসীদের মধ্যকার বিরোধ ঐ মুহূর্তে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনকে অসম্ভব করে তুলেছে। এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অধীনে একটি Trusteeship Agreement বা আদি চুক্তি সম্পাদন না করা পর্যন্ত ব্রিটেনকে ম্যান্ডেট ধরে রাখার উপদেশ দেয়া হয় ।
আরব রাষ্ট্রগুলি বর্ধিত হারে ইহুদি বহিরাগমনের বিরোধিতা করে এবং তাদের পছন্দমত ফিলিস্তন সমস্যার সমাধান না করা হলে মধ্য প্রাচ্য ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। অবশ্য এ অচলাবস্থা দূর করার জন্য Morrision- Grady Plan বা মরিসন গ্রাডি পরিকল্পনায় জেরুজালেম ও নেজেভকে নিয়ন্ত্রণকারী একটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পৃথক পৃথক আরব ও ইহুদি স্বায়ত্ব শাসিত প্রদেশ সৃষ্টির কথা বলা হয়। আরববাসি ও ইহুদিরা উভয়ের এ পরিকল্পনাকে অসন্তোষজনক বলে প্রত্যাখ্যান করে। ব্রিটেনের নিকট ফিলিস্তিনের অবস্থা ক্রমশ অসহনীয় হতে থাকে। ইহুদিদের বক্তব্য সমর্থনকারী মার্কিন সরকারের তীব্র চাপ ইহুদি ও আরব এ উভয় সরকারের সাথে মন-কষাকষি ও তার ম্যান্ডেট ভূমিতে ক্রমবর্ধমান গোলযোগের সম্মুখীন হয়ে বৃটিশ সরকার ফিলিস্তিন সমস্যাটি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৪৭ সালের ২ এপ্রিল এ সমস্যাটি বিবেচনা করার জন্য ব্রিটেন সাধারণ পরিষদের একটি বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করার অনুরোধ জানায়। একই বছর ২৮ এপ্রিল ১৫ মে এর মধ্যবর্তী সময় সাধারণ পরিষদের বৈঠকে মিলিত হয়ে United Nations Special Committee on Pelestine (UNSCOP) বা ফিলিস্তিনের উপর একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে
যার উপর দায়িত্ব দেয়া হয়। ফিলিস্তিন সম্পর্কিত যে কোন প্রশ্ন তদন্ত করে ১৯৪৭ সালে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জাতিসংঘের নিকট রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়। UNSCOP বা এ বিশেষ কমিটি ফিলিস্তিন সফর করার পর জেনেভায় বসে রিপোর্ট তৈরি করে। কমিটির ১১ জন সদস্যের সবাই একমত হন যে ম্যান্ডেট সম্পূর্ণ রূপে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ কমিটির রিপোর্ট A majority and minority plan বা সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘিষ্ট এ দুটো পরিকল্পনায় বিভক্ত করে । সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিকল্পনায় জেরুজালেমকে আন্তর্জাতিক নগরী হিসেবে আলাদা করে ফিলিস্তিনকে দ্বিধাবিভক্ত করে একটি আরব রাষ্ট্র ও একটি ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে যেগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সংযোগ অবশ্যই বজায় থাকবে। ভারত, ইরান ও যুগোশ্লাভিয়া সমর্থিত সংখ্যালঘিষ্ঠ পরিকল্পনায় আরব ও ইহুদি এ দুটো রাজ্য সমবায়ে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয় যার প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্য স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে। ইহুদি রাষ্ট্র ৩ বছরের জন্য Absorptive Capacity বা ধারণ ক্ষমতা পর্যন্ত বহিরাগমনের অনুমতি দেয়া হবে। এ ধারণ ক্ষমতা নির্ধারণের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে ৩ জন আরব, ৩ জন ইহুদি ও জাতিসংঘের ৩ জন প্রতিনিধির উপর। আরব রাষ্ট্রগুলোর মতামত সংখ্যালঘিষ্ট পরিকল্পনায় অনুকূলে ছিল। ইহুদিরা কিছুটা অনিচ্ছা সহকারে সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিকল্পনাটি গ্রহণ করে। কিন্তু বিভক্তি পরিকল্পনা ছিল যেমন সম্ভাবনাহীন ও অবাস্তব, তেমনি এ দুয়ের মাঝে ১০ বছর মেয়াদি অর্থনৈতিক সংযোগের চুক্তি স্বাক্ষর করাও ছিল অচিন্তনীয় ব্যাপার। এছাড়াও ব্রিটেন ঘোষণা করে যে উভয় পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রহণ না করলে সে এর কোন সমাধানের কার্য নির্বাহে অংশগ্রহণ করবে না। বিশেষ কমিটি ১৯৪৮ সালের ১ অক্টোবরের পূর্বে রাষ্ট্রগুলো প্রতিষ্ঠার আহবান জানায়। উপরন্তু, উভয় পরিকল্পনাই ১৯৪৭ সালে সাধারণ পরিষদের একটি Special adhoc Committee (বিশেষ এডহক কমিটি) তে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিতর্কিত হয়। ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর ইহুদিদের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন। কেননা ঐ দিন সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপোর্টের প্রস্তাব অনুযায়ী সাধারণ পরিষদ ভোটের মাধ্যমে একটি অর্থনৈতিক সংযোগ সহ ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করার সুপারিশ করে। উভয় রাষ্ট্রের সীমানাও সেই সাথে নির্দেশ করে দেয়া হয়। পরিষদ আরো লক্ষ্য করে যে ব্রিটেন ১৯৪৮ সালের ১ আগস্ট তার ম্যান্ডেট শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ পরিষদে আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে ব্রিটেনের প্রত্যাহারের দু'মাসের মধ্যে দুটো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে । এ সিদ্ধান্তকে কার্যকর করতে 5 Nation UN Palestine Commission বা পাঁচ জাতি ফিলিস্তিন কমিশন গঠন করা হয় এবং বিভক্তির পরিকল্পনাকে জোর করে পরিবর্তন করতে চাইলে তাকে শান্তির প্রতি হুমকি হিসেবে গণ্য করে। কেননা এর পূর্বে প্রেসিডেন্ট Franklin D. Roosevelt ও প্রেসিডেন্ট Truman ওয়াদা করেছিলেন যে উভয় পক্ষের সম্মতি ছাড়া ফিলিস্তিনের ব্যাপারে কোন মৌলিক
সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যবহারেও আহত হয় । কারণ তৎকালীন সোভিয়েত ডেপুটি বিদেশমন্ত্রী Andreri Gromyko (আন্দ্রে গ্রোমিকো) ঘোষণা করেছিলেন যে, “এটা অন্যায় হবে যদি আমরা ইহুদিদের নিজেদের রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্খাকে বাস্তবে রূপদানের অস্বীকার করি।” এ বক্তব্যের ইংরেজি ভার্সন হল, “It would be unjust if we deny the Jews the right to realize these aspirations to a state of their own. এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশসমূহ অথবা সোভিয়েত ইউনিয়ন, চেকোশ্লোভিয়া, পোল্যান্ড, ইউক্রেন ও বাইলো রাশিয়া এর যে কোন এক পক্ষ বিভক্তি পরিকল্পনার পক্ষে ভোট না দিলে, এমনকি ভোটদানে বিরত থাকলেও ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করার সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তটি প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের অভাবে গৃহীত হত না ।
আরব রাষ্ট্রসমূহ আইনগত দিক দিয়ে এ সিদ্ধান্তটি অবশ্য পালনীয় কিনা সে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। তারা যুক্তি প্রদর্শন করে যে Charter of the United Nations বা জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী সাধারণ পরিষদের অবশ্য পালনীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই। এটা শুধুমাত্র Recommendation বা সুপারিশ করতে পারে। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফিলিস্তিন সম্পর্কিত আরব উচ্চ কমিটি ঘোষণা করে যে, “Any attempt by the Jews or any other power or group of powers to establish a Jewish state in Arab territory is an act of oppression which will be resisted in self defence by force." এর বাংলা ভার্সন হল “ইহুদিরা বা অন্য কোন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রমণ্ডলী কর্তৃক আরব ভূমিতে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে কোন প্রচেষ্টা উৎপীড়নমূলক কাজ যা আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও প্রতিরোধ করা হবে।”
১৯৪৮ সালের ১৪ মে তারিখে ব্রিটেনে সরকারিভাবে ফিলিস্তিনের উপর থেকে ম্যান্ডেট তুলে নেয় এবং সেখান থেকে তাদের সম্পূর্ণ বাহিনী অপসারণ করে। ঐদিনই বেন-গুরিয়নের সভাপতিত্বে National Council বা জাতীয় পরিষদ তেল আভিভে এক অধিবেশনে মিলিত হয়ে ফিলিস্তিনে ইসরাইল নামে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে। এর ১৬ মিনিট পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ইসরাইলকে De facto recognition বা কার্যত স্বীকৃতি দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। এদিকে আরব লীগ পূর্বেই ঘোষণা করেছিল যে ইসরাইল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়া হবে না এবং ফিলিস্তিনে কোন ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হলে লীগের সদস্য দেশসমূহ অবশ্যই হস্তক্ষেপ করবে। তদানুযায়ী ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ঘোষণার পরপরই সিরিয়া, লেবানন, ট্রান্সজর্দান, ইরাক ও মিশর থেকে আরর সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে। এভাবে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে প্রথম ফিলিস্তিন যুদ্ধ আরম্ভ হয় ।
সম্মিলিত আরব বাহিনীর তীব্র আক্রমণে যখন ইসরাইল দিশেহারা অবস্থায় ছিল তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন তার উদ্ধারে এগিয়ে আসে এবং অস্ত্রশস্ত্র ও বিমান দিয়ে সাহায্য করে। এটা সহজেই অনুমেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন দীর্ঘদিন থেকে মধ্যপ্রাচ্যে পা রাখার জন্য যে জায়গা খুঁজছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্মগ্রহণকারী সমাজতান্ত্রিকমনা বেন-গুরিয়ন ও মোশে মারটক এর মতো ইসরাইলি নেতাদের মাধ্যমে তার সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে আশা করে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম দিকে ইসরাইলকে সাহায্য করে। কিন্তু এর অব্যবহিত পর মার্কিন ইহুদি সম্প্রদায় প্রয়োজনীয় ডলার ও অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ইসরাইলকে সাহায্য করতে থাকে। এবং যুদ্ধে ইসরাইল বিজয় লাভ করে। তাদের এ বিজয়ের পিছনে প্রথম দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রশস্ত্র ও আর্থিক সাহায্যের অবদান যত না বেশি তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আরব দেশগুলোর অনৈক্য। এবং পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস। ইসরাইলকে চিরতরে পরাজিত করার চেয়ে পাশ্ববর্তী আরব দেশসমূহের অধিকতর লক্ষ্য ছিল কি করে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে নিজ রাজ্য সীমা বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা চালানো । উপরন্ত, আরব ইসরাইল যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৪৮ সালের ২০মে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সুইডেনের Count Folke Bernadotte-কে Mediator বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ফিলিস্তিনে পাঠায়। তিনি তাঁর কর্তব্য পালন কার্যে ইসরাইলি ঘাতকের হাতে প্রাণ হারান। যাহোক তার উত্তরাধিকারী Ralph Bunche (রালফ বান্‌চ)- ১৯৪৮ সালের শরৎকালে ইসরাইল এবং মিশর ও সিরিয়ার মধ্যে অস্ত্র সংবরণের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হন। এবং ইসরাইল ও আরব দেশসমূহকে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করতে বলেন। ১৯৪৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে স্বাক্ষরিত ইসরাইল ও মিশরের মধ্যকার যুদ্ধ বিরতি চুক্তি অনুযায়ী গাজা এলাকা মিশরকে দেয়া হয়। কিন্তু এর সীমারেখা এমনভাবে টানা হয় যে অনেক আরব গ্রাম ইসরাইলের মধ্যে থেকে যায়। মার্চে ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যে এবং জুলাইয়ে সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । ট্রান্সজর্ডানের সাথে মীমাংসার প্রশ্ন ছিল অধিক জটিল। কেননা King Abdullah (রাজা আবদুল্লাহ) চাচ্ছিলেন অবশিষ্ট ফিলিস্তিন নিজ রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে এবং ইসরাইল Gulf of Aqaba বা আকাবা উপসাগরে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়াসী ছিল। ইসরাইলি সৈন্যবাহিনী অস্ত্র সংবরণকে অগ্রাহ্য করে উপসাগরীয় এলাকায় পৌঁছে এং Elath নামক ছোট বন্দর টি দখল করে। অবশেষে ১৯৪৯ সালের এপ্রিলে ইসরাইল ও ট্রান্সজর্ডানের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির ধারানুযায়ী অবশিষ্ট ফিলিস্তিন পায় ট্রান্সজর্ডান এবং এ অন্তর্ভুক্তির পর ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে থেকে ট্রান্স-জর্ডানের নাম পরিবর্তিত হয়ে নতুন রাষ্ট্র জর্ডান নামে পরিচিত হয় ।
ইসরাইল ও পাশ্ববর্তী আরব দেশসমূহের মধ্যকার বিভিন্ন যুদ্ধ বিরতি চুক্তির পর যে অস্থায়ী সীমানা নির্ধারিত হয় তাতে দেখা যায় যে প্রাথমিক বিভক্তির

পরিকল্পনায় ইসরাইলের জন্য যে আয়তন নির্দিষ্ট করা হয়েছিল ইসরাইল তার চেয়ে অধিক ভূমির অধিকারী হয়। এর ফলে আরব উদ্বাস্তুদের নিয়ে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়। ইসরাইল যেসব আরব ভূমি দখল করে নেয় সেখানকার ফিলিস্তিনি আরব জনগণ পাশ্ববর্তী আরব দেশসমূহের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। ইসরাইলের আক্রমণের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত এ ধরণের শরণার্থীদের সংখ্যা ১৯৪৯ সালেই ছিল প্রায় ৭,০০,০০০ । এভাবে দেখা যায় যে, ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলে ফিলিস্তিনের প্রায় ৭০ ভাগ আরব অধিবাসী স্থানচ্যুত হয়ে পড়ে যাদেরকে পুনরায় ফিরিয়ে নিতে ইসরাইল সরকার অস্বীকার করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সেখানে অস্বস্তিকর ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকে। আরব জনসাধারণ ও ফিলিস্তিন উদ্বাস্তুরা সময় ও সুযোগ খুঁজতে থাকে কিভাবে ইসরাইলের অত্যাচারের প্রতিশোধ নেয়া যায় । এজন্য তাদেরকে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয় নি।
১৯৫৬ সালের সুয়েজ সংকটের পর জাতিসংঘ সিনাইতে United Nations Emergency Force (UNEF) নামে জরুরি বাহিনী মোতায়েন করে ।
কিন্তু তা সত্ত্বেও ইসরাইলি সেনাবাহিনী বিনা উস্কানিতে মাঝে মধ্যে আরব গ্রামসমূহে অতর্কিত হামলা চালাত । ১৯৬৬ সালের জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জনসন মিশরে মার্কিন গম সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এরপর অক্টোবরে ইসরাইলে নিযুক্ত বিদেশী রাষ্ট্রদূত তার পাঠানো একটি নোটে উল্লেখ করেন যে সিরিয়ার সীমান্তে ইসরাইল সেনাবাহিনীর সমাহরণ (Concentrations of Israeli troops) দেখা যাচ্ছে । তিনি আরো উল্লেখ করেন যে ইসরাইলি সৈন্যবাহিনী সিরিয়ার অভ্যন্তরে অতিগভীরে বিমান আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মিশরের প্রেসিডেন্ট নাসের ঐ সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আধুনিক সমরাস্ত্র মজুত করে ইসরাইলকে তার ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে বিজয় লাভের পূর্বেকার অবস্থানে ফিরিয়ে দেবার পকিল্পনা আঁটতে থাকে। তিনি সিরিয়ার বিরুদ্ধে ক্রমাগত ইসরাইলি ভীতি প্রদর্শনে অতিষ্ট হয়ে ১৯৬৭ সালের ২২মে Tiran straits বা তিরান প্রণালী বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেন। এর কয়েকদিন পূর্বে আরব রাষ্ট্রসমূহের সমালোচনার মুখে যে জরুরী বাহিনী UNEP থাকার কারণে তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না । ঐ শান্তিরক্ষী বাহিনী তুলে নেবার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্ট (U Thant) এর নিকট আবেদন জানান এবং মহাসচিব তাতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন । এভাবে নাসের অন্যান্য আরব দেশের সমর্থন আদায়ের প্রয়াস পান এবং তারা প্রায় সকলেই তাকে সাহায্য করতে রাজি হয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল যেন আরবদের দীর্ঘকালের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে নাসেরের দূরদর্শি নেতৃত্বে সম্মিলিত আরব ফ্রন্ট গড়ে উঠেছে
I
অবস্থার ভয়াবহতা উপলব্ধি করে কায়রোতে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিকগণ নাসেরকে অবরোধ তুলে নিয়ে সংকট দূর করতে অনুরোধ করেন। নাসেরও এ ব্যাপারে আপোস-মীমাংসায় আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। কিন্তু সবকিছুই ব্যর্থতায়
পর্যবসিত হয় যখন ইসরাইলি বাহিনী প্রথমে আক্রমণ চালিয়ে ১৯৬৭ জুনে Six Day War বা ছয়দিন ব্যাপী যুদ্ধের সূচনা করে। এ যুদ্ধে ইসরাইল ত্বরিৎগতিতে আক্রমণ চালিয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে। ইসরাইলি বাহিনী পশ্চিম তীর ভূমি (West Bank) সিনাই, গাজা অঞ্চল, গোলান পার্বত্যাঞ্চল ও জেরুজালেমের আরব অঞ্চল দখল করে নেয়। এভাবে এ পবিত্র নগরীটি ২৫ তম বার হাত বদল হয় ।
১৯৬৭ সালের ২২ শে নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ফ্রান্সের সমর্থনে ব্রিটেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব (Resolution no 2442) পাশ করাতে সক্ষম হয়। এ প্রস্তাবে জোর করে ভূমি দখলের নিন্দা করা হয় এবং ইসরাইলকে তার সাম্প্রতিক দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দিতে এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদেরকে ন্যায্য অধিকার প্রদান করতে বলা হয়। একই সাথে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আরবদেশগুলিকে ইসরাইলের অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেবার আহ্বান জানানো হয়। কিছুটা দ্বিধার পর আরবদেশসমূহ এ প্রস্তাব অনুমোদান করে। কিন্তু ইসরাইল এটা প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্য কোন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নি অথবা ফিলিস্তিনি সমস্যা কোন সমাধান হয় নি । অদ্যাবধি ফিলিস্তিনে রক্তাক্ত যুদ্ধ চলছে।
একনজরে ফিলিস্তিন :
সাংবিধানিক বা রাষ্ট্রীয় নাম State of Palestine
রাজধানী—জেরুজালেম
প্রধান ধর্ম—ইসলাম
ভাষা—আরবি ও হিব্রু
জনসংখ্যা—২৩ লাখ
জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার—১-৯%
স্বাক্ষরতার হার—৯৫%
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয় ১৫ নভেম্বর ১৯৮৮।
স্বাধীন ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দানকারী প্রথম দেশ-আলজেরিয়া
সরকার পদ্ধতি সংসদীয় গণতন্ত্র
প্রথম প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত
বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস
আইন সভার নাম-ন্যাশনাল কাউন্সিল
ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা (PLO) গঠিত হয় ২৮ মে ১৯৬৪
PLO-এর সদরদপ্তর রামাল্লা (ফিলিস্তিন)
ইয়াসির আরাফাতের দলের নাম-আল ফাতাহ
PLO এবং ইসরাইলের মধ্যে ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন স্বায়ত্তশাসন চুক্তি
স্বাক্ষরিত হয় ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ (ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র)
এবং এর দ্বারা পূর্ব এশিয়ার সাথে যোগাযোগও আগের তুলনায় অনেক বেশী সুরক্ষিত হবে। সুতরাং ব্রিটেনে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিল। ইহুদিদের বহুদিনের স্বপ্নকে সফল করে তোলার সাথে সাথে অবশ্য ব্রিটেন তার সাম্রাজ্যেবাদী নীতিও অনুসরণ করতে শুরু করে।
ব্যালফুর ঘোষণার ফলে আরব ও ইহুদিদের স্বার্থের সংঘাত ও শত্রুতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ব্যালফুর ঘোষণা ইহুদিদের খুশি করলেও আরবদের উত্তেজিত করে তুলেছিল। ফিলিস্তিনে আরবরা বহু শতাব্দী ধরে বসবাস করত এবং ফিলিস্তিনের উপর আরবদের রাজনৈতিক অধিকার মিত্র শক্তিবর্গ ম্যাকমেহ প্রতিশ্রুতির দ্বারা ১৯১৫ সালে স্বীকারও করে নেয়। যুদ্ধের সময় মিত্র শক্তিবর্গকে তারা যথেষ্ট সাহায্যে করেছিল এবং আশা করেছিল যে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর রাজনৈতিকভাবে তারা পুরস্কৃত হবে। কিন্তু ব্যালফুর ঘোষণা ছিল সম্পূর্ণভাবে তাদের স্বার্থের পরিপন্থী। আরবরা তাদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খার সাথে যা মিলাতে পারছিল না। আরবরা এর তীব্র প্রতিবাদ করে। অবশ্য মিত্রশক্তিবর্গ এতে খুব একটা বিচলিত হয় নি। ফিলিস্তিন প্রশ্ন নিয়ে আরবরা যে কতটা স্পর্ষকাতর ছিল তা লয়েড জর্জ বা উইলসনের মত পশ্চিমা বৃহৎ শক্তি ধর নেতারা সম্যক অনুধাবন করতে পারে নি। ১৯২০ সালে ব্রিটেন ফিলিস্তিনের উপর যে ম্যান্ডেট পায় তার অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে একটি জাতীয় বাসভূমি নির্মাণ করা ।
রাজনৈতিক দিক থেকে আরবরা প্রতিবাদ করলে তা বিফল হয়। তখন তারা সংঘর্ষের পথই বেছে নেয়। ১৯২০ ও ১৯২১ সালে পরপর দুটি সংঘর্ষ হয়। তখন আরবদের দুটি বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়। প্রথমত ট্রান্স-জর্ডান অঞ্চলকে ফিলিস্তিন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় এবং এর শাসনভার অর্পণ করা হয় আবদুল্লাহ নামে একজন আরব প্রধানের হতে। দ্বিতীয়ত, ব্রিটেনে পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করা হয় যে ফিলিস্তিনে বসবাসকারী আরবেরদ উপর ইহুদি জাতীয়তাবাদকে চাপিয়ে দেওয়া কখনই তাদের নীতি নয়। এতে কিন্তু আরবরা মোটেই সন্তুষ্ট হতে পারল না এবং ১৯২৩ সালের আইন পরিষদের নির্বাচনেও তারা অংশ গ্রহণ করে নি ।
১৯২৯ সালে আরব-ইহুদি-সংঘর্ষ আবারো চরম আকার ধারণ করে। ত্রিশের দশকে হিটলারের বর্বর অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে বহু ইহুদি মধ্য ইউরোপ থেকে পালিয়ে ফিলিস্তিনে চলে আসে। এ সময় আরবরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে। কেননা তারা মনে করে যে এর ফলে ফিলিস্তিন ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এ কারণে ১৯৩৫ সালে আরব-ইহুদি যে সংঘর্ষ হয় তা ছিল অত্যন্ত তীব্র ।
এ বিষয়ে ইংরেজ সরকারের দ্বারা নিযুক্ত একটি তদন্ত কমিশন ১৯৩৭ সালের একটি বৈপ্লবিক প্রতিবেদন পেশ করে। এই প্রতিবেদনে বলা হয় যে আরব ও ইহুদিদের পরস্পর বিরোধী আশা আকাঙ্খাকে কিছুতেই ম্যান্ডেট দ্বারা সমন্বয় করা "
সম্ভব নয়। এই প্রতিবেদনের সুপারিশ ছিল যে ফিলিস্তিনকে তিন ভাগে বিভক্ত করতে হবে। যেমন (এ) ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন ইসরাইল, (বি) ট্রান্সজর্ডানের সন্নিকটে একটি আরব অঞ্চল এবং (সি) ব্রিটেনের অধীনে একটি ম্যানডেট প্রাপ্ত অঞ্চল ।
ফিলিস্তিনকে ভাগ করার এ প্রস্তাবকে ব্রিটিশ সরকার ও ইহুদিদের অধিবেশন স্বীকার করে নেয়। কিন্তু এ প্রস্তাবকে আরবদের তীব্র বিরোধীতার কার্যে পরিণত করা সম্ভব হয় নি। “The Arab rebellion, formented by Nazi and Fascist intrigues, grew more menacing in a world heading towards world War II.” ১৯৩৯ সালে ব্রিটেন একটি সম্মেলন আহবান করে। এই সম্মেলনে যখন লন্ডনে মিলিত হয়, তখন আরব প্রতিনিধিরা ইহুদিদের সাথে একই গোল টেবিলে বসতে অসম্মতি জ্ঞাপন করে। ব্রিটেন ঠিক করে যে এমতাবস্থায় ম্যানডেট তুলে নিতে হবে এবং ১০ বছর পরে আরব প্রাধান্যে এক স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠন করতে হবে। সেই সাথে স্বাধীন ফিলিস্তিনে ইহুদিদের অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা করা হবে । এই ব্যবস্থায় আরব ইহুদি কোন পক্ষই সন্তুষ্ট হতে পারে নি। এতে আরব ইহুদি সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটি। ব্রিটিশরা কৌশলে ফিলিস্তিন শাসন করে যেতে লাগল আরব ইহুদি কোন পক্ষের সমর্থন ছাড়াই ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]