ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসন (Jewish Immigration)

ইহুদি অভিবাসন
ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসন (Jewish Immigration) ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র ‘ইসরাইল' প্রতিষ্ঠায় জাইয়নবাদীদের প্রচেষ্টার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিরা বসবাসের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনে আসতে থাকে। ১৮৮০ সালে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫,০০০-এর দুই তৃতীয়াংশ জেরুজালেমে এবং বাকিরা অন্যান্য পবিত্র স্থান যেমন সাফেদ, টাইবেরিয়াস ও হেবরনে বাস করত। এছাড়া জাফা ও হাইফাতেও কিছু ইহুদির বসবাস ছিল। এসব ইহুদিদের অধিকাংশই ইউরোপ ও আমেরিকার ইহুদিদের প্রেরিত অনুদানের উপর নির্ভরশীল ছিল । ১৮৮০-দশকে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ থেকে একদল ইহুদি বসবাসের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনে আসে । ইহুদিদের এ আগমন প্রথম আলিয়া নামে পরিচিত। ১৯০৪ সাল থেকে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত আরো অনেক ইহুদি ফিলিস্তিনে আসে যা দ্বিতীয় আলিয়া নামে পরিচিত। ফলে ১৯১৪ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫,০০০ এ যা ফিলিস্তিনের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১২ ভাগ। আবশ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এ সংখ্যা কমে হয় ৫৬,০০০। ব্যালফুর ঘোষণাটি ফিলিস্তিনে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করে। তবে ঘোষণাটি বাস্তবায়নের জন্য ইহুদিদের
আরো ৩০টি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে তাদেরকে ঘোষণাটির প্রতি বৃহৎ শক্তিবর্গের সম্মতি আদায় করতে হয়েছিল। এবং আরবদের সাথে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হয়েছিল। ব্যালফুর ঘোষণাটির মাধ্যমে ব্রিটিশ সহানুভূতি অর্জনের পর জাইয়নবাদীদের লক্ষ্য হয় মিত্র শক্তির অন্যান্য শক্তি কর্তৃক ঘোষণাটির অনুমোদন। ১৯১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্স এবং একই বছর ইতালি ঘোষণাটিকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯১৮ সালের ২৯ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এক পত্র মারফত Rabbi stephen S. Wise কে ব্যালফুর ঘোষণার প্রতি তার সমর্থনের কথা জানান। ফলে জাইয়নবাদীরা মিত্র শক্তির আন অফিসিয়াল মিত্রে পরিণত হয় এবং মিত্র শক্তির জয় পরাজয়ের সাথে ব্যালফুর ঘোষণার ভাগ্য জড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধে মিত্রশক্তির জয়লাভের পিছনে জাইয়নবাদীদের কতটা ভূমিকা ছিল তা বলা মুশকিল। তবে ১৯৩৫ সালে ফিলিস্তিন রয়েল কমিশনের সামনে ব্রিটেনের যুদ্ধকালীন সময়ের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জের বক্তব্য হতে এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। কমিশনের সামনে তিনি বলেছিলেন “জাইয়নবাদী নেতৃবৃন্দ আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে যদি মিত্রপক্ষ ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি আবাসভূমি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে তাহলে তারা মিত্র শক্তির পক্ষে সমগ্র বিশ্বের ইহুদিদের সমর্থন ও সহযোগিতা আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। তারা তাদের কথা রেখেছিলেন ।
ব্যালফুর ঘোষণার খবর বাদশাহ হুসাইনের নিকট পৌছালে তিনি এ বিষয়ে বৃটিশ কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা জানতে চান। জবাবে ব্রিটেন ১৯১৮ সালের ৪ জানুয়ারি তার কায়রোস্থ আরব ব্যুরোকে কমান্ডার D. G. Hogarth এর মাধ্যমে হুসেইনকে এ নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে ফিলিস্তিনি আরবদের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রেখেই ব্রিটেন ইহুদিদের ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপনের ব্যাপারে সহযোগিতা করবে। এবং ব্যালফুর ঘোষণায় ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কোন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় নি। শরীফ হোসাইনকে বিষয়টি যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মিমাংসার জন্য রেখে দেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার অল্প কিছুদিন পূর্বে জেনারেল এলেনবীর নেতৃত্বে ফিলিস্তিনের এক বৃহৎ অংশে বৃটিশ সামরিক দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্যারিস শান্তি সম্মেলনে বিশ্ব জাইয়নবাদীরা ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসনসহ বেশ কতগুলি দাবিদাওয়া সম্বলিত একটি স্মারকলিপি উপস্থাপন করে যা সকলের সহানুভূতিপূর্ণ মনোযোগ আকর্ষণ করে। অবশেষে তাদের এ দাবি দাওয়াগুলি সফলতার মুখ দেখেছিল। ১৯২০ সালের ২৫ এপ্রিল সুপ্রীম কাউন্সিল ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি শাসনের পক্ষে মত দেয়। এ ব্যাপারে ফরাসি বিরোধীতার সম্ভাবনা থাকায় ফরাসি জাইয়নবাদিরা পূর্বেই ফরাসি সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে তাদের দাবির পক্ষে সমর্থন আদায় করে নিয়েছিল। ১৯২২ সালের ২২ জুলাই লীগ অব নেশনসের কাউন্সিল কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনকে ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেটরি শাসকের দায়িত্ব দেয়া হয় । ফিলিস্তিনে একিট ইহুদি আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার
বিষয়টি হুবহু ব্যালফুর ঘোষণার মতই ম্যান্ডেটের ধারায় সংযুক্ত করা হয়। ম্যান্ডেট দলিলের ৪নং ধারায় ইহুদি আবাসভূমি প্রতিষ্ঠায় ম্যান্ডেটরি শক্তিকে সহযোগিতা করার জন্য একটি Jewish Agency বা ইহুদি পর্ষদকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলা হয়। বিশ্ব জাইয়নবাদী সংস্থার প্রেসিডেন্ট এই পর্ষদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি স্থাপনে এ পর্ষদ ছিল ইহুদিদের অফিসিয়াল মুখপাত্র । ব্রিটেন কর্তৃক একে অভিবাসী নির্বাচনের আইনগত অধিকার দেয়া হয়। ফলে বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী ইহুদিদের মধ্যে যারা ইহুদি পর্ষদ কর্তৃক মনোনীত হত এবং যাদের নিকট পর্ষদ কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট ছিল কেবল তারাই স্ব-স্ব দেশে অবস্থিত ব্রিটিশ কনস্যুলেটে ফিলিস্তিনের ভিসার আবেদন করতে পারত। এভাবে ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসন সম্পন্ন হয় ।
১৯২২, ১৯৩০ এবং ১৯৩৯ সালের শ্বেতপত্র
১৯২২ সালের শ্বেতপত্র : ম্যান্ডেটরি শাসক হিসেবে ব্রিটেন ফিলিস্তিনে সামরিক শাসনের বদলে বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। বিখ্যাত ব্রিটিশ ইহুদি পরিবারের সদস্য স্যার হার্বাট স্যামুয়েল ফিলেস্তিনে প্রথম হাইকমিশনার নিযুক্ত হন। নতুন বেসামরিক প্রশাসন ইহুদি অভিবাসীদের জন্য ফিলিস্তিনের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। আরবরা এর তীব্র প্রতিবাদ করে এবং ১৯২১ সালে আরব ইহুদি মারাত্মক দাঙ্গা শুরু হয়। ফলে তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সচিব উইন্সটন চার্চিল ১৯২২ সালের ৩ জুন একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন যা ‘চার্চিল মেমোরেন্ডাম' নামে পরিচিত। এতে তিনি ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি আবাসভূমি প্রতিষ্ঠায় ব্রিটিশ সরকারের ইচ্ছার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি আরবদেরকে এই বলে আশ্বস্থ করেন যে, ব্যালফুর ঘোষণায় সমগ্র ফিলিস্তিনকে ইহুদি আবাসভূমিতে পরিণত করার কথা বলা হয় নি এবং ইহুদি অভিবাসনে সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতি লক্ষ্য রাখবে। শ্বেতপত্রটি বিশ্ব জাইয়নবাদী সংস্থার অনুমোদন লাভ করলেও আরবরা এর তীব্র বিরোধীতা করে। তখন থেকেই ম্যান্ডেটরি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনে ইহুদিদের আগমনের ক্ষেত্রে বাৎসরিক কোটা অনুসরণ করতে থাকে। ফলে ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনে ইহুদির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে । এ শ্বেতপত্রের মাধ্যমে ফিলিস্তিন ভূ- খণ্ডে ‘ইসরাইল' নামে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় পথ সুগম হয় ।
১৯৩০ সালের শ্বেতপত্র : ব্রিটিশ সরকার ১৯৩০ সালের অক্টোবরে আরো একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। উল্লেখ্য যে, আরবদের ইহুদিদের তুলনায় পশ্চাতপদতা সত্ত্বেও ম্যান্ডেটরি শাসনের শুরু থেকেই সংসদীয় গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের দাবী জানাতে থাকে ক্রমবর্ধমান হারে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের আগমনের বিরোধীতা করতে থাকে । ফলে ম্যান্ডেটরি কর্তৃপক্ষের শাসনামলে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ইতিহাস ছিল সংঘাতমুখর। ১৯২৯ সালের ১৫ আগস্ট শত

ফিলিস্থিনি রাজনৈতিক সংগঠন হামাস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৪ ডিসেম্বর ১৯৮৭ হামাস এর প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমদ ইয়াসিন ।
ইয়াসির আরাফাত শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান-১৯৯৪ সালে ।
মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থাপতাকারী গ্রুপ এর নাম Quortl on the Middle East.
কোয়াটার অন দ্যা মিডল ইস্ট এর সদস্য দেশ ২টি ও সংস্থা ২টি। এগুলো জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ।
ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করার জন্য জাতিসংঘের সংস্থার নাম UNRWA (আনরোয়া )
ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে ২৯ নভেম্বর ২০১২।
ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত মারা যান-১১ নভেম্বর-২০০৪ ।
ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শাসনাধীনে ফিলিস্তিন
ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শাসনাধীনে ফিলিস্তিনে ব্যাপক সমস্যার উদ্ভব হয়। এ শাসনামলে ফিলিস্তিন সমস্যা এক ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করে। ব্রিটিশ সরকার এ সমস্যার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে। ইহুদিদের ফিলিস্তিন ভূ-খণ্ডে অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকে। প্রথম সংঘবদ্ধ আগমন ম্যান্ডেটরি শাসনের পূর্বে ঘটলেও বাকি চারটি সংঘবদ্ধ আগমন ব্রিটিশ শাসনামলেই ঘটে। পঞ্চমও সর্বশেষ সংঘবদ্ধ আগমনেই সর্বাপেক্ষা বেশী সংখ্যক ইহুদি ফিলিস্তিনে প্রবশে করে। যেমন ১৮৮২-১৯০৩ সালে প্রথম আলিয়াতে (সংঘবদ্ধ আগমন) ৩০,০০০ ইহুদি ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে। ১৯০৪-১৯১৪ সালে দ্বিতীয় আলিয়াতে ৪০,০০০ ইহুদি ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে। ১৯১৯-১৯২৩ সালের তৃতীয় আলিয়াতে ৩৫০০০ ইহুদি ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে। ১৯২৪-১৯৩১ চতুর্থ আলিয়াতে ফিলিস্তিনে আগত ইহুদির সংখ্যা ৮২,০০০, ১৯৩২-১৯৪৮ সালের পঞ্চম ও শেষ আলিয়াতে ফিলিস্তিনে আগত ইহুদির সংখ্যা ৩০০০,০০০ ।
শিক্ষা-দীক্ষা ও অর্থনৈতিক দিক হতে অসম দুটো সম্প্রদায়ের উপর ব্রিটিশ সরকার তাদের ম্যান্ডেটরি শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ফিলিস্তিনে বৃটিশ সরকারের নীতি যথাযথভাবে অনুধাবন করতে হলে ব্রিটিশ রাজনৈতিক নেতাদের জাইয়নবাদী মনোভাব ছাড়াও এই দুটো সম্প্রদায়ের সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা ও নেতৃত্ব ইত্যাদি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। বৈপরীত্য জাইয়নবাদী মূলত আশকেনাজী ইহুদিদের আন্দোলন। জার্মানি ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশসমূহের উচ্চ শিক্ষিত এসব ইহুদি আধুনিক জীবন ও জগৎ সম্পর্কে ভালভাবে অবগত ছিলেন। সমষ্টিগত যে কোন
কার্যের সাফল্য সেই সংগঠনের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল এরূপ ধারণা জাইয়নবাদীদের ছিল।
ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শাসনাধীনেই ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পটভূমি সূচিত হয়। উপরন্তু, ইহুদিরা ফিলিস্তিন থেকে বিতাড়িত হলেও কখনো একেবারে ইহুদি শূন্য ছিল না। কিছু ইহুদি বসতি ফিলিস্তিনে সর্বদাই ছিল। আর ধর্মীয় পবিত্র স্থান হওয়ায় প্রতি বছরই পাশ্ববর্তী আরব দেশসমূহ এবং ইউরোপ আমেরিকা হতে তীর্থস্থানে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তনে পাড়ি জমাতো। ইহুদি পর্ষদ ছাড়াও ফিলিস্তিনে ইহুদিদের নিজস্ব নির্বাচিত সংসদ এবং একটি কার্যকরী পরিষদ ছিল যা স্বায়ত্ব শাসন ভোগ করত। ইহুদি সমাজে বেশ কিছু রাজনৈতিক দলও ছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিতাড়িত জীবন-যাপনের সময় ইহুদিরা মাটির সাথে কোনরূপ সম্পর্ক গড়ে তুলে নি। অর্থাৎ কৃষি কাজের তুলনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকেই তাদের ঝোঁক ছিল বেশি। কিন্তু ফিলিস্তিনে ইহুদিরা বেশ কিছু যৌথ কৃষি খামার গড়ে তুলেছিল । ইহুদি চিন্তাবিদ বের বরোচভ বলেন, ইহুদিরা আরব চাষী ও শ্রমিক না হওয়া পর্যন্ত ইহুদি সমাজে সুস্বাস্থ্য ফিরে আসবে না। বরোচভ এর সাথে যোগ দেন আরেক ইহুদি চিন্তাবিদ এ. ডি. গর্ডন। তিনি বলেন, “চাষাবাদ হবে ইহুদিদের ধর্ম এবং চাষিদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে হবে ইহুদি সমাজ ও রাষ্ট্র।” এ দুজন ইহুদি চিন্তাবিদের প্রভাবেই ১৯০৯ সালের গ্যালিলি সমুদ্রের তীরে ডেগসিয়াতে প্রথম ইহুদি সমবায় বসতি প্রতিষ্ঠিত হয়। একই বছর তেল আবিব শহরটিও প্রতিষ্ঠিত হয় । কৃষিতে সফল আজকের ইসরাইলের পিছনে রয়েছে এই কিবুজ আন্দোলন । ইউরোপ আমেরিকায় বসবাসকারী ইহুদিরা নিজেদের পছন্দমত এলাকার কিবুজকে অকাতরে টাকা পাঠাতে থাকে। গড়ে উঠতে থাকে কৃষিমুখী সমবায় আন্দোলন এবং তার ফলে বর্ধিষ্ণু সব গ্রাম । বুদ্ধিমান ইহুদিরা কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেই ক্ষান্ত থাকেন নি । নতুন নতুন ফসলও উদ্ভাবন করতে থাকেন। সারা বিশ্বে জাফা নামে সে সুমিষ্ট কমলা, এ্যাংগালিয়া নামে যে সেরা তরমুজ বিক্রি হচ্ছে সে দুটো ফল প্রথম ইসরাইলেই উৎপাদিত হয়। আরবদের আক্রমণ হতে কৃষি খামারগুলির রক্ষার জন্য তারা ১৯০৯ সালের হাশেমার নামে একটি রক্ষী বাহিনী গঠন করে যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর হাগানা নাম ধারণ করে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি শাসনামলে ইসরাইলিরা কৃষি সম্প্রসারণের চেয়ে শিল্পোন্নয়নের প্রতিই তাদের আগ্রহ বেশী ছিল। আধুনিক কলকারখানা স্থাপন ও পরিকল্পিত উপায়ে শিল্পপায়নের ফলে ইহুদি বসতটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। ফলে খুব সহজেই পাশ্ববর্তী আরব দেশগুলো এর শিল্প পণ্যের এক বৃহৎ বাজারে পরিণত হয়। ১৯২০ সালে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন চালু হয় । প্রতিটি ইহুদি বসতিতে অত্যাধুনিক শিক্ষাকেন্দ্র, চিকিৎসালয় ও অবসর বিনোদন কেন্দ্র ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয়। উপরন্তু ইহুদিরা মিলেমিশে ফিলিস্তিনে একটি নতুন জাতীয়তাবাদের ভিত্তি স্থাপন করে যা ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে ।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনে বসবাসকারী আরবদের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত । ইহুদিদের মত রাজনৈতিকভাবে তারা সংগঠিত ছিল না। ইহুদিদের পাশ্চাত্য ধাঁচের সংসদীয় গণতন্ত্রের বদলে আরবরা মুসলিম কাউন্সিল দ্বারা শাসিত হত। সরকার অনুমোদিত এ কাউন্সিলের কিছু সদস্য ব্রিটিশ হাইকমিশনারের কর্তৃক নিযুক্ত হতেন। রাজনৈতিকভাবে আরবরা ছিল বিভক্ত। ম্যান্ডেটারি কর্তৃপক্ষ আমিন আল হুসাইনীকে এ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করে। কিন্তু জেরুজালেমের মেয়র রাঘিব বে নাশাশিবির সাথে তার রাজনৈতিক বিরোধ ছিল। শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয় সকল দিক দিয়েই আরব সমাজ ছিল ইহুদিদের চেয়ে অনেক বেশি পশ্চাৎপদ। আরব জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৭৩ ভাগই গ্রামে বাস করত। যার মধ্যে আবার ৬৫,০০০ ছিল যাযাবর। আধুনিক জীবনযাত্রার সাথে তাদের কোন যোগাযোগ ছিল না। আরবরা সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করত। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতিবেশী খ্রিষ্টানদের তুলনায় তারা ছিল পশ্চাদপদ। আর ইউরোপ থেকে আগত ইহুদিদের তুলনায় তারা ছিল একেবারে মধ্য যুগীয়। যেখানে ইহুদি ছেলে মেয়েদের শতকরা ১০০ ভাগই স্কুলে যেত সেখানে আরবদের স্কুলগামী ছেলে মেয়েদের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ ভাগ। এ পরিসংখ্যানে আরবদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি করুণ চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। ইহুদিদের ব্যাপক উন্নয়নে পাশ্চাত্যের ধনী ইহুদিদের উদার হস্তে দান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। অথচ ফিলিস্তিনি আরবদের বাইরে থেকে সহযোগিতা করার মত কেউ ছিল না।
বৃটিশ ম্যান্ডেটারি কর্তৃপক্ষের উপর বৈপরীত্যে ভরপুর এ দুটো জাতির দায়িত্ব অর্পিত হয়। ভারত, মিশর ও সুদানের ব্রিটিশ প্রশাসনের মত ফিলিস্তিনে ম্যান্ডেট প্রশাসন এতটা দক্ষ ছিল না। ফলে ইউরোপীয় দেশসমূহ হতে আগত উচ্চ শিক্ষিত ইহুদি নেতৃবৃন্দের সামনে এ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যোগ্যতা ছিল একেবারে ম্লান । ফিলিস্তিনকে একটি আধুনিক ইহুদি রাষ্ট্রে পরিণত করার মত দক্ষতা তাদের ছিল। সর্বোপরি, যে কোন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নিজেদের সমস্যা যোগ্যতার সাথে উপস্থাপন করার ক্ষমতা তাদের ছিল। শিক্ষিত ও বাস্তব জ্ঞান সম্পন্ন এসব ইহুদি নেতৃবৃন্দের সামনে ম্যান্ডেটরি প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছিল নিষ্প্রভ। ফলে ম্যান্ডেটরি প্রশাসনকে ইহুদিদের স্বার্থের পক্ষে পরিচালিত করা তাঁদের জন্য কঠিন কিছু ছিল না। তাই গতানুগতিক পদ্ধতি অনুসরণ করেই তারা উদ্ভূত সমস্যা সমাধান করতে পারত। অন্যদিকে ইহুদি প্রশাসনকে নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত করাতো দূরের কথা নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বের সংকট কাটিয়ে উঠাও তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]