মধ্যযুগের ভারতবর্ষে মহামতি আকবরই ছিলেন ধর্ম সম্বন্ধে সবচেয়ে উদার শাসক। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী
মানুষের আবাসভ‚মি ভারতে স্থায়ী ও স্থিতিশীল মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে ধর্ম বিষয়ে উদারতা এবং
জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল ভারতবাসীর আনুগত্য ও সহযোগিতা ভিন্ন যে জাতীয় শাসকরূপে অধিষ্ঠিত হওয়া
যায় না, এ বিষয়টি আকবর উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আকবর তাঁর ব্যক্তি জীবনে ধর্মীয় ঔদার্য এবং
শাসন ব্যবস্থায় ধর্ম নিরপেক্ষতা স্থাপনের দূরদর্শিতা প্রদর্শন করে ভারতবর্ষের জাতীয় শাসকরূপে আবির্ভুত
হয়েছিলেন। আকবরের ধর্মমতের মধ্যে পরধর্ম সহিষ্ণুতা, উন্নত পরিকল্পনা ও মহান ভাবাদর্শ নানা কারণে
গড়ে উঠেছিল।
প্রথমত, সুলতানি আমলে ভক্তিবাদী মহাপুরুষ নানক, কবীর ও চৈতন্যদেব তাঁদের উদার চিন্তাধারার মাধ্যমে
ভারতীয় সমাজে মিলন ও সহনশীলতার এক চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন। প্রতিভাবান রাষ্ট্রনীতিক
আকবর এই সমন¦য়বাদী চিন্তাধারায় প্রভাবানি¦ত হয়েছিলেন।
দ্বিতীয়ত, আকবর যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে পরিবার ছিল মধ্যযুগের ইতিহাসে এক উদার শিক্ষা
ও সংস্কৃতির পরিমন্ডল। তাছাড়া তাঁর পিতা ছিলেন ‘সুন্নী' ও মাতা ছিলেন পারসিক ‘শিয়া' সম্প্রদায়ভুক্ত।
মাতার উদারতা ও পরধর্ম সহিষ্ণুতা পুত্রকে প্রভাবিত করেছিল। তাঁর পিতৃবন্ধু ও অভিভাবক বৈরাম খাঁ
ছিলেন ধর্মীয় ব্যাপারে অত্যন্ত উদার ব্যক্তি। বৈরাম খাঁ আবদুল লতিফের মতো উদার পারসিক পন্ডিতকে
তাঁর গৃহ শিক্ষক নিয়োগ করেছিলেন। তাঁর কাছে আকবর ধর্ম বিষয়ে উদারতা ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা লাভ
করেন।
তৃতীয়ত, আকবর কাবুলে থাকাকালীন পারস্য থেকে অত্যাচারিত হয়ে বহু সুফি দরবেশ সেখানে আসেন।
তাঁদের সংস্পর্শে এসে তিনি আধ্যাÍিক চিন্তাধারায় গভীরভাবে প্রভাবিত হন।
চতুর্থত, স্বীয় রাজপুত মহীষীদের প্রভাব ও তাঁর বন্ধু ও সভাসদ আবুল ফজল, আবুল ফজলের পিতা শেখ
মুবারক ও ভ্রাতা ফৈজীর ‘মুক্ত চিন্তা'র প্রভাব আকবরের ওপর গভীরভাবে পড়েছিল।
পঞ্চমত, বাদায়ুনীর মতে, আকবর রাজ্য জয় ও রাজকার্যে ব্যস্ততার মধ্যেও খুব ভোরে ফতেপুর সিক্রীর
একটি পুরাতন ইমারতের পাথরের ওপর বসে ধ্যানমগ্ন হয়ে থাকতেন। এরূপ মানসিক পরিবর্তন আকবরকে
বিভিন্ন ধর্মের মৌলিক বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে।
ষষ্ঠত, আকবর বাল্যকাল থেকে মুসলমানদের শিয়া, সুন্নী ও মেহদী-সুফি ধর্ম সম্প্রদায়গুলোর ধর্মীয় বিতর্কে
বীতশ্রদ্ধ ও মর্মাহত হয়ে ক্রমেই সর্বধর্ম সারগ্রাহী হয়ে ওঠেন।
আকবরের ধর্মনৈতিক বিবর্তন
আকবরের ধর্মনৈতিক বিবর্তনকে ঐতিহাসিকগণ তিনটি স্তরে বিভক্ত করেছেন ঃ
প্রথম পর্যায় (১৫৬০Ñ১৫৭৫ খ্রি.) ঃ এই সময়ে আকবর একজন সুন্নী মুসলমানের মতো ইসলাম ধর্মের
সকল আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলতেন। যথারীতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, রোজা রাখতেন এবং সুন্নী
মতবাদের একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
দ্বিতীয় পর্যায় (১৫৭৫Ñ১৫৮০ খ্রি.) ঃ এ সময়ে আকবর শেখ মুবারক এবং তাঁর দুই পুত্র আবুল ফজল ও
ফৈজীর সুফি মতবাদের প্রভাবে এবং উদারনৈতিক চিন্তায় প্রভাবিত হয়ে ‘আত্মা অবিনশ্বর এবং পরমাত্মার
অংশ বিশেষ' এই ধারণার বশবর্তী হয়ে সত্যানে¦ষণে অগ্রসর হন। এই উদ্দেশ্যে ১৫৭৫ খ্রি. সকল ধর্মের
সার আহরণের জন্য ফতেপুর সিক্রীতে ‘ইবাদত খানা' নির্মাণ করেন এবং সেখানে ধর্ম ও দর্শনের মূল বিষয়
সম্পর্কে আলোচনার ব্যবস্থা করেন। প্রথম দিকে ধর্মালোচনার জন্য মুসলিম পন্ডিতদের আহŸান করেন।
কিন্তু গোড়া সুন্নীপন্থী শেখ আবদুল নবী, মকদম-উল-মূলক প্রমুখ উলেমারা উদারনৈতিক ধর্মালোচনার
পরিবর্তে উদারপন্থী উলেমা শেখ মোবারক, আবুল ফজল ও ফৈজী পরিচালিত ‘মুক্তচিন্তা' মতবাদীদের
ব্যক্তিগত আক্রমণ করে গোঁড়ামীর পরিচয় দেন। উপরন্তু এসব উলেমারা আকবরের জিজ্ঞাসু মনের উত্তর
দিতে ব্যর্থ হন। উলেমাদের পরস্পর বিরোধী এসব কার্যকলাপে ব্যথিত হয়ে আকবর কিছুদিন ইবাদতখানার
আলোচনা বন্ধ রাখেন। এবং উলেমাদের ধর্মান্ধতায় বিরক্ত হয়ে তাঁদের প্রতিপত্তি নষ্ট করতে তৎপর হন।
আকবর তাঁদের আলোচনায় অসন্তুষ্ট হয়ে সত্যানুসন্ধানে ব্রতী হন। উলেমাদের মধ্যে অবিরত দ্বন্দে¡র ফলে
আকবর উপলব্ধি করেন যে, দ্বন্দ¡ ও বিভিন্নতার অবসান ঘটিয়ে ‘নিরঙ্কুশ সত্য' অনুসন্ধান করতে হবে, সকল
ধর্মীয় মতপার্থক্যের অবসান ঘটিয়ে একটি ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং ধর্মনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য
সকল ক্ষমতা নিজ হস্তে গ্রহণ করতে হবে।
১৫৭৮ খ্রি. আকবর পুনরায় ইবাদতখানায় ধর্মালোচনার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ সময় মুসলিম
ধর্মতত্ত¡বিদদের সঙ্গে হিন্দু, জৈন, পার্সি, শিখ, খ্রিস্টান প্রভৃতি ধর্মের পন্ডিতগণ ধর্মালোচনায় অংশগ্রহণ
করেন। তাঁদের মধ্যে হিন্দুধর্মের পুরুষোত্তম, দেবী, জৈনধর্মের হরি বিজয় সুরী, বিজয় সেন সুরা, ভানু চন্দ্র
উপাধ্যায়, গোয়ার জেসুইট ধর্মযাজক ফাদার রিডোলফো ও ফাদার মানসারেট প্রমুখ ধর্মতত্ত¡বিদের নাম
সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ আকবরের ইবাদতখানাকে 'ঋরৎংঃ ডড়ৎষফ
জবষরমরড়ঁং চধৎষরধসবহঃ’ নামে অভিহিত করেছেন। আকবরের উদ্দেশ্য ছিলÑ তুলনামূলক ধর্মালোচনার
মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করা। তিনি এসব ধর্মতত্ত¡বিদদের আলোচনা ও মতামত অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে
এবং ধৈর্য্যরে সঙ্গে শুনতেন এবং তাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতেন। এখানেও উলেমাদের ব্যক্তিগত
আক্রমণ ও সংকীর্ণতা আকবরকে ব্যথিত করে। তিনি দেখতে পান যে, সকল ধর্মের মধ্যে সত্য রয়েছে ,
কিন্তু মানুষের সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরায়ণতার ফলে তারা তা উপলব্ধি করতে পারে না। এই অবস্থায় সম্রাটকে
ধর্মতত্ত¡সমূহের একজন ব্যাখ্যাকারী হওয়া প্রয়োজন। ২২ জুন ১৫৭৯, আকবর ফতেপুর সিক্রীর মসজিদের
প্রধান ইমামকে বিতাড়িত করে সেই স্থানে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেন এবং ফৈজীর লিখিত খুৎবা নিজ নামে
পাঠ করেন। ২ সেপ্টেম্বর ১৫৭৯, আবুল ফজলের পিতা শেখ মোবারক রচিত বহুল বিতর্কিত ‘মহজর'
নামক ঘোষণাপত্র জারি করে আকবর উলেমাদের ধর্মনৈতিক অধিকার খর্ব করেন। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট
স্মিথ একে ‘অভ্রান্ত কর্তৃত্বের ঘোষণা' (ওহভধষষরনরষরঃু উবমৎবব) বলে অভিহিত করেছেন। আকবর
নিজেকে রাষ্ট্রের প্রধান ধর্মগুরু অর্থাৎ ‘ইমাম-ই-আদিল' বলে ঘোষণা করেন। ফলে তিনি রাষ্ট্র ও ধর্মের
ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার চূড়ান্ত ক্ষমতা অর্জন করেন।
তৃতীয় পর্যায় (দ্বীন-ই-ইলাহী)ঃ ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে ‘দ্বীন-ই-ইলাহী' নামক দর্শনাশ্রয়ী এক উদার মতবাদ
ঘোষণার মধ্যদিয়ে আকবরের ধর্মনৈতিক জীবনের বিবর্তনের চরম পরিণতি ঘটে। তিনি মূলত পারস্পরিক
ধর্ম-বিদ্বেষ ও পরধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতা দূর করার জন্য এই ধর্মমত প্রবর্তন করেন। জেসুইট পাদ্রী
বারতোলীর বিবরণ থেকে জানা যায় যে, আকবর ইসলাম, হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মের সারবস্তু গ্রহণ
করে এই নতুন ধর্মমত সৃষ্টি করেছিলেন। আকবর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে জাতীয় রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেছিলেন
তার উপযুক্ত জাতীয় ধর্ম হল ‘দ্বীন-ই-ইলাহী'। এই ধর্মমতে বিশ্বাসীদের নি¤œলিখিত অবশ্য পালনীয় কর্তব্য
ছিলÑ
(১) দ্বীন-ই-ইলাহী ধর্মমতে বিশ্বাসী অনুসারীগণ একে অপরের সঙ্গে মিলিত হলে নতুন প্রথায় সম্ভাষণ
করবেন। প্রথম ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার' এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি জাল্লা জাল্লালুহু অর্থাৎ তার মহিমা
বিকশিত হোক উচ্চারণ করবেন।
(২) সাধারণত মৃত্যুর পরে যে ভোজ দেওয়া হয় দ্বীন-ই-ইলাহীর সদস্যগণকে পরকালের পাথেয় সংগ্রহের
জন্য জীবিত অবস্থায় সে ভোজের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৩) প্রত্যেক সদস্যকে জন্মদিবস পালন এবং প্রীতিভোজের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৪) দ্বীন-ই-ইলাহীর সদস্যগণ যতদূর সম্ভব মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। তবে মাংসভোজীদের
প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবেন না।
(৫) কসাই, ধীবর এবং ব্যাধ প্রভৃতি নিচ জাতির লোকদের সঙ্গে দ্বীন-ই-ইলাহীর সদস্যগণ মেলামেশা
করতে পারবে না।
(৬) দ্বীন-ই-ইলাহীর সদস্যদের সম্রাটের নিকট জান, মাল, সম্মান এবং ধর্ম সমর্পণ করতে হতো; যারা
এই চারটি সমর্পণ করবেন তারা প্রথম শ্রেণীর সদস্য হিসেবে গণ্য হতেন। তিনটি সমর্পণ করলে
দ্বিতীয় শ্রেণী, দুটি সমর্পণ করলে তৃতীয় শ্রেণী এবং একটি সমর্পণ করলে চতুর্থ শ্রেণীর সদস্য হিসেবে
মর্যাদা পেতেন।
আইন-ই-আকবরীর মতে, দ্বীন-ই-ইলাহীর সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র আঠারো। তাঁদের মধ্যে শেখ মোবারক,
আবুল ফজল, ফৈজী, মির্জা জানী, আজিজ কোকা এবং হিন্দুদের মধ্যে রাজা বীরবলের নাম সবিশেষ
উল্লেখযোগ্য। সদস্য স্বল্পতার বিষয় বিবেচনা করলে বুঝা যায় যে, দ্বীন-ই-ইলাহী প্রচারের জন্য কোন
উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। ‘দ্বীন-ই-ইলাহী' সম্রাটের দ্বারা প্রবর্তিত হলেও তিনি কখনও কারও মতের বিরুদ্ধে
এই ধর্মমত গ্রহণ করতে বাধ্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে দ্বীন-ই-ইলাহী কোন ধর্ম নয়। কারণ এতে কোন
প্রেরিত পুরুষ বা কোন ধর্মীয় গ্রন্থ নেই। এটা স্পষ্ট যে আকবরের দ্বীন-ই-ইলাহী রাজনৈতিক কারণে প্রবর্তন
করা হয়েছিল। আকবরের ইচ্ছা ছিল ভারতের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের একত্রিত করে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য
গড়ে তোলা। এতে তিনি সফল হয়েছিলেন।
বাদায়ুনী আকবরের এই ধর্মমতের সমালোচনা করেছেন। বাদায়ুনী আকবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন
যে, আকবর দ্বীন-ই-ইলাহী প্রবর্তনের পর কতগুলো অনুশাসন জারি করেছেন, যেমনÑ শুক্রবারে জুমআ'র
নামাজ, রমজান মাসে রোজা, গরুর মাংস খাওয়া, নতুন মসজিদ নির্মাণ ও মক্কা তীর্থযাত্রা নিষিদ্ধকরণ। কিন্তু
বাদায়ুনীর এ বক্তব্য সঠিক নয়। প্রথমত তিনি আকবরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেন। কারণ পদমর্যাদার
দিক দিয়ে আবুল ফজলকে আকবর তাঁর ওপর স্থান দেন। দ্বিতীয়ত, তিনি গোড়াপন্থী হিসেবে প্রচলিত
ধর্মমতের পরিবর্তনে ক্ষুব্ধ হন। আকবরের বিরুদ্ধে সমালোচক বাদায়ুনী ও জেসুইট পাদ্রীদের তথ্যের ওপর
নির্ভর করে ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ বলেন “দ্বীন-ই-ইলাহী আকবরের জ্ঞানের পরিচয় নয়, নির্বুদ্ধিতার
চরম নিদর্শন এবং সম্রাটের অহংবোধের ও অনিয়ন্ত্রিত স্বৈরাচারিতার জলন্ত দৃষ্টান্ত।” উল্লেখিত দুজন
আকবর বিদ্বেষীর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে স্মিথ, এডওয়ার্ড গারেট, বøকম্যান প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ বলেছেন,
আকবর ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছেন। কিন্তু ঐতিহাসিক ঈশ্বরী প্রসাদ, এম. এল. রায়চৌধুরী, বেভারিজ
প্রমুখ আধুনিক ঐতিহাসিকগণ উক্ত মতের বিরোধিতা করে বলেন, আকবর কখনো ইসলাম ধর্ম ত্যাগ
করেননি। স্যার টমাস রো মন্তব্য করেন, আকবর একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
আধুনিক ঐতিহাসিক ড. রায়চৌধুরী বলেছেন, ‘দ্বীন-ই-ইলাহী' আল-কোরআন ও পারসিক সুফি মতবাদের
নির্যাস। তিনি বলেছেন, ‘ওঃ ধিং ধভঃবৎ ধষষ ধ ংঁভর ড়ৎফবৎ ড়ভ ওংষধস রিঃযরহ ওংষধস’.
প্রকৃতপক্ষে, ‘দ্বীন-ই-ইলাহী'তে ধর্মের ছাপ থাকলেও এটি ছিল একটি রাজনৈতিক দলিল। আকবর দ্বীন-ইইলাহীকে কোন ধর্মমতের রূপ না দিয়ে একে মানুষের নৈতিক জীবনবাদে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তাঁর
বিরুদ্ধে যে অভিযোগই উঠুক না কেন, তিনি মধ্যযুগের বিশ্ব ইতিহাসে পরধর্ম সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে এক অনন্য
স্থানের অধিকারী। স্মিথ, এডওয়ার্ড গারেট, বøকম্যান প্রমুখ ঐতিহাসিক যাই বলুন না কেন একথা
অনস্বীকার্য যে, আকবরের সমকালীন ইউরোপও পরধর্ম সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে ছিল। আকবর
যখন পরধর্ম সহিষ্ণুতা নীতি প্রবর্তন করেছেন, তখন ইউরোপে ক্যাথলিকদের হাতে প্রোটেস্ট্যান্টরা
নির্যাতিত হচ্ছিল। ‘দ্বীন-ই-ইলাহী' আকবরকে ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক মহান জাতীয় সম্রাটে পরিণত
করে।
সারসংক্ষেপ
আকবর ছিলেন একজন ধর্মীয় সংস্কার মুক্ত মানবপ্রেমী মানুষ। তিনি তাঁর পিতা-মাতা, গৃহশিক্ষক সুফি-
দরবেশের সংস্পর্শে এসে পরধর্ম সহিষ্ণুতায় প্রভাবিত হয়েছিলেন। এ সঙ্গে কবীর, চৈতন্য, নানক
প্রভৃতি সমন¦য়বাদী মহাপুরুষের দর্শনে প্রভাবানি¦ত হয়ে বিভিন্ন ধর্মের সত্যানুসন্ধানে মনোনিবেশ করেন।
তুলনামূলক ধর্মালোচনার জন্য ইবাদতখানা প্রতিষ্ঠা করেন। হিন্দু, ইসলাম, খ্রিস্টান, জৈন প্রভৃতি ধর্মের
ধর্মতত্ত¡বিদগণকে আকবর তাঁর ইবাদতখানায় আমন্ত্রণ করেন। সেখানে বিভিন্ন ধর্মতত্ত¡বিদ তাদের
বক্তব্যে পারস্পরিক বিদ্বেষ ও পরধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করেন। ধর্মতত্ত¡বিদদের এই বিদ্বেষ ও
অসহিষ্ণুতা দূর করার জন্য আকবর দ্বীন-ই-ইলাহী ধর্মমতের প্রবর্তন করেন। এতে ধর্মের ছাপ থাকলেও
এটি মূলত একটি রাজনৈতিক দলিল।
পাঠোত্তর মূল্যায়নÑ
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। আকবরের পিতা কোন ধর্মাবলম্বী ছিলেন?
(ক) শিয়া (খ) সুন্নী
(গ) ফারায়েজী (ঘ) কোনটিই নয়।
২। বৈরাম খাঁ কাকে আকবরের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন?
(ক) শেখ মোবারক (খ) আবদুল লতিফ
(গ) আবুল ফজল (ঘ) ফৈজী।
৩। আকবর কত খ্রিস্টাব্দে ফতেপুর সিক্রীতে ইবাদতখানা প্রতিষ্ঠা করেন?
(ক) ১৬৭৫ (খ) ১৫৭৫
(গ) ১৫৮১ (ঘ) ১৫৬০।
৪। পুরুষোত্তম ও দেবী কোন ধর্মের ধর্মতত্ত¡বিদ ছিলেন?
(ক) হিন্দু (খ) জৈন
(গ) ইসলাম (ঘ) বৌদ্ধ।
৫। দ্বীন-ই-ইলাহী কত খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তন করা হয়?
(ক) ১৫৭৫ (খ) ১৫৮১
(গ) ১৫৬০ (ঘ) ১৫৫৬।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। কি কি কারণে আকবরের ধর্মমতে পরমত সহিষ্ণুতা গড়ে উঠেছিল?
২। আকবরের ইবাদতখানা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে উল্লেখপূর্বক সেখানে ধর্মালোচনায় উলেমাদের ভ‚মিকা বর্ণনা
করুন।
৩। ইবাদতখানায় ধর্মালোচনায় মুসলিম ধর্মতত্ত¡বিদ ব্যতীত অন্যান্য ধর্মতত্ত¡বিদদের ভ‚মিকা বর্ণনা করুন।
৪। দ্বীন-ই-ইলাহী ধর্মমতে বিশ্বাসীদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্যগুলো উল্লেখ করুন।
৫। দ্বীন-ই-ইলাহী সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মতামত ব্যক্ত করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। আকবরের ধর্মনীতি আলোচনা করুন।
২। দ্বীন-ই-ইলাহীর বিশেষ উল্লেখপূর্বক আকবরের ধর্মনীতি পর্যালোচনা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত