বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্মের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য
বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের উৎপত্তি প্রায় একই সময়ে এবং পাশাপাশি অঞ্চলে ঘটেছিল। এ দুটি ধর্মের মধ্যে বেশ
কিছু সাদৃশ্য দেখা যায় ঃ
উভয় ধর্মের প্রবর্তকই ছিলেন ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভূত।
উভয় ধর্মেরই জন্ম হয়েছিল হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ধর্মরূপে। হিন্দু ধর্মের যাগ-যজ্ঞ এবং আড়ম্বরপূর্ণ
পূজা সম্পর্কে হতাশাবোধ থেকে এ দুটি ধর্মের উদ্ভব হয়েছিল।
এ দুটি ধর্মের কোনটিই বেদকে ঐশ্বরিক গ্রন্থরূপে এবং ব্রাহ্মণদের শ্রেষ্ঠত্বকে স্বীকার করে না।
উভয় ধর্মই দার্শনিক তত্তে¡র চেয়ে ভক্তিকে বেশি গুরুত্ব দেয়।
উভয় ধর্মই অহিংসবাদী। প্রাণী হত্যা উভয়ের কাছেই মহাপাপ বলে বিবেচিত।
দুটি ধর্মই শ্রেণীভেদ প্রথার বিরোধী। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষেরই এ দুটি ধর্মে যোগদানের অধিকার
ছিল।
হিন্দু ধর্মের বিরোধিতা করলেও উভয় ধর্মেই হিন্দু ধর্মের কিছু কিছু প্রভাব দেখা যায়। যেমন উভয় ধর্মই
কর্মফল ও পুনর্জন্মে বিশ্বাসী।
কর্মফল ও পুনর্জন্মের দু:খ থেকে মুক্তি লাভই হচ্ছে উভয় ধর্মের লক্ষ।
উভয় ধর্মই জনগণের ভাষা অর্থাৎ পালি ভাষায় প্রচারিত হয়েছিল।
উভয় ধর্মেই মঠ-জীবনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
দুটি ধর্মের কোনটিই প্রচলিত অর্থে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাস করেনা।অবশ্য জৈন ধর্ম সরাসরি ঈশ্বরকে
অস্বীকার করলেও বৌদ্ধ ধর্ম এ ব্যাপারে নীরব।
উভয় ধর্মই প্রধানত বৈশ্য, শূদ্রদের আকর্ষণ করেছিল।
উভয় ধর্মই প্রধানত দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত। বৌদ্ধরা মহাযান ও হীনযান সম্প্রদায়ে বিভক্ত। জৈনরা বিভক্ত
দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর সম্প্রদায়ে।
সমসাময়িক এ দুটি ধর্মের মধ্যে কিছু কিছু সাদৃশ্য থাকলেও এদের মধ্যে বেশ কিছু বৈশাদৃশ্যও দেখা যায় ঃ
গৌতম বুদ্ধ ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক। কিন্তু জৈন ধর্ম প্রচারিত হয়েছিল ২৪ জন তীর্থঙ্করের মাধ্যমে -
এর প্রবর্তক সম্পর্কে কিছু জানা যায় না । মহাবীরকে জৈন ধর্মের প্রবর্তকরূপে বিবেচনা করা হলেও
প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন এ ধর্মের শেষ তীর্থঙ্কর।
দিগম্বর সম্প্রদায়ের জৈনরা নগ্ন থাকার পক্ষপাতী। কিন্তু বৌদ্ধদের মধ্যে এ ধরনের কোন রীতি নেই।
উভয় ধর্মই অহিংসবাদী হলেও জীবহত্যার ব্যাপারে জৈনরা চরমপন্থী। কোন ভাবেই যেন জীবহত্যা না হয়
সে ব্যাপারে জৈনরা অত্যন্ত সতর্ক।
জৈন ধর্ম কখনই ভারতের বাইরে প্রসার লাভ করেনি। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল
এবং আজও টিকে আছে। অন্যদিকে ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম লুপ্তপ্রায় হলেও জৈন ধর্ম কোনও দিনই ভারতে
বিলুপ্তির সম্মুখীন হয় নি।
জৈন ধর্মে আত্মার চিন্তা অত্যন্ত ব্যাপক। তারা জড় পদার্থের আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসী। জৈনদের এই
সর্বপ্রাণবাদে বৌদ্ধরা বিশ্বাস করে না ।
জৈনরা কঠোর কৃচ্ছ্রসাধনের পক্ষপাতি।কিন্তু গৌতম বুদ্ধ তাঁর শিষ্যদের মধ্যপথ অনুসরণের নির্দেশ
দিয়েছিলেন।
জৈন ধর্মে মুক্তির উপায় হচ্ছে কৃচ্ছ্রসাধন, তপস্যা ও উপবাসে প্রাণত্যাগ। বৌদ্ধ ধর্মে নির্বাণ লাভের উপায়
হচ্ছে অষ্টমার্গ অনুসরণ করা।
সারসংক্ষেপ
সমসাময়িক ও নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক উপাদানের অভাবে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জীবন
সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত।তিনি ৫৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কপিলাবস্তুর লুম্বিনী গ্রামে শাক্যবংশে
জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ব নাম ছিল সিদ্ধার্থ। ২৯ বছর বয়সে তিনি সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাস ব্রত
গ্রহণ করেন। উরুবিল্ব নামক স্থানে একটি পিপল গাছের নিচে ৪৯ দিন সাধনার পর তিনি দিব্যজ্ঞান বা
বোধি লাভ করে বুদ্ধ বলে পরিচিত হন।সারনাথে তিনি প্রথম তাঁর ধর্মমত প্রচার করেন। তিনি সুদীর্ঘ
৪৫ বছর অক্লান্তভাবে ধর্মপ্রচার করেন। অত:পর ৮০ বছর বয়সে গোরখপুর জেলার কুশিনগরে ৪৮৭
খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ধর্মের মূল লক্ষ ছিল মানুষকে দুঃখের হাত থেকে রক্ষা
করা।দুঃখ থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি আটটি পথ বা মার্গের কথা বলেছেন। তিনি মধ্যপন্থা
অনুসরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বৌদ্ধ ধর্মের অহিংসবাদ, সহজ-সরল শিক্ষাবলী সহজেই
সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। কেননা, হিন্দু ধর্মের ব্যয়বহুল, জটিল পূজা-অর্চনা,
যাগযজ্ঞ এবং জাতিভেদ প্রথা সাধারণ মানুষকে ক্লান্ত-অসন্তুষ্ট করে তুলেছিল।সম্রাট অশোকের
সময়কালে গুরুতর মতপার্থক্যের দরুন বৌদ্ধরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়েপড়েÑ হীনযান ও মহাযানপন্থী।
ভারতের এক কোণে উদ্ভব হলেও কালক্রমে বৌদ্ধ ধর্ম সমস্ত ভারত এবং উপমহাদেশের সীমানা
ছাড়িয়ে শ্রীলংকা, চীন, মায়ানমার, তিব্বত, জাভা, সুমাত্রা, জাপান, থাইল্যান্ড ও মধ্যএশিয়ায় প্রসার
লাভ করে। পরবর্তী সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে জনমনে এ ধর্মের আবেদন কমে
যায়। তা সত্তে¡ও, সংখ্যার বিবেচনায় এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থানÑ
(ক) কপিলাবস্তু (খ) লুম্বিনী
(গ) সারনাথ (ঘ) নালন্দা।
২। ‘ধর্মচক্র প্রবর্তন' বলতে বুঝায়Ñ
(ক) বুদ্ধ কর্তৃক ধর্মের বাণী প্রচার শুরু
(খ) বুদ্ধ কর্তৃক ধর্মের চাকা বন্ধ করে দেওয়া
(গ) বৌদ্ধ সংঘের প্রতিষ্ঠা
(ঘ) বুদ্ধের ধর্মযাত্রা।
৩। বুদ্ধ প্রচারিত ধর্মের আর্যসত্যের মধ্যে নেই কোনটি?
(ক) জন্মই দুঃখের কারণ (খ) কামনা, বাসনা দুঃখের কারণ
(গ) কামনা, বাসনা অতৃপ্তির রোধের উপায় আছে
(ঘ) সন্ন্যাস জীবনই দুঃখ থেকে মুক্তির পথ।
৪। বিহার বৌদ্ধদেরÑ
(ক) উপাসনালয় মাত্র (খ) ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
(গ) রাষ্ট্রীয় কেন্দ্র (ঘ) সামাজিক মিলনায়তন।
৫। কোন দেশটিতে বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তার ঘটেনিÑ
(ক) থাইল্যান্ড (খ) শ্রীলংকা
(গ) জাভা (ঘ) ইরান।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারে নির্বাণ লাভের উপায় কি?
২। হীনযান ও মহাযান সম্পর্কে যা জানেন লিখুন।
৩। সংক্ষেপে বৌদ্ধ ধর্মের জনপ্রিয়তা হ্রাসের কারণসমূহ বর্ণনা কর।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। গৌতম বুদ্ধের জীবনী উল্লেখপূর্বক তাঁর প্রচারিত ধর্মের মূলনীতি ব্যাখ্যা করুন।
২। বৌদ্ধ ধর্মের জনপ্রিয়তার কারণসমূহ সহ বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য উল্লেখ করুন।
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি
১। জ.ঈ. গধলঁসফধৎ, ঐরংঃড়ৎু ধহফ ঈঁষঃঁৎব ড়ভ ঃযব ওহফরধহ চবড়ঢ়ষব, ঠড়ষ-১
২। ঊহপুপষড়ঢ়বফরধ ড়ভ জবষরমরড়হ ধহফ ঊঃযরপং.
৩। প্রভাতাংশু মাইতী, ভারত ইতিহাস পরিক্রমা, ১ম খন্ড।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত