সুলতান মাহমুদের অভিযানসমূহের উল্লেখপূর্বক তাঁর সাফল্যের কারণ ও ফলাফল ব্যাখ্যা করুন।


দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারতে মুসলমানদের অভিযান পরিচালিত হয়েছিল গজনীর সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে।
গজনী রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আলপ্তিগীন নামক জনৈক ভাগ্যানে¦ষী তুর্কি মুসলমান। পারস্যের সামানিদ
বংশের অধীনে তিনি প্রাদেশিক শাসনকর্তার পদে উন্নীত হন। সামানিদ সম্রাটদের দুর্বলতার সুযোগে তিনি
গজনীতে এক স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ৯৭৭ সালে আলপ্তিগীনের মৃত্যুর পর তাঁর ক্রীতদাস ও জামাতা
সবুক্তিগীন গজনীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। সবুক্তিগীনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মাহমুদ ৯৯৭ সালে
গজনীর অধিপতি হন। গজনীর তুর্কি সুলতান মাহমুদই ভারতে মুসলমান অভিযানের দ্বিতীয় পর্যায়ে নায়ক।
সুলতান মাহমুদ ছিলেন বীর যোদ্ধা। পিতার জীবদ্দশায় তিনি পিতার সব অভিযানেই অংশ নিয়েছিলেন।
পিতার আমলে তিনি হিন্দুশাহী রাজা জয়পালের বিরুদ্ধে অভিযানেও বিশেষ ভ‚মিকা গ্রহণ করেছিলেন। ফলে
রাজপুত্র থাকা কালেই মাহমুদ ভারতের রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। ভারতের অতুল
ধন-সম্পদের কথাও তিনি নিশ্চয় শুনেছিলেন। সিংহাসনে আরোহণের পর পিতার নীতি অনুসরণ করে
মাহমুদ সামানিদ বংশের আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে সামানিদ সাম্রাজ্যে অন্তর্কলহের
সুযোগে মাহমুদ নিজেকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন। খলিফা আল-কাদির বিল্লাহ্র কাছ থেকে তিনি
‘ইয়ামিন-উদ-দৌলা' ও ‘আমিন-উল-মিল্লাত' উপাধি লাভ করেছিলেন। মাহমুদ গজনী বংশের চিরাচরিত
রীতি ত্যাগ করে ‘আমীরের' পরিবর্তে ‘সুলতান' উপাধি গ্রহণ করেন।
ভারত আক্রমণের কারণ
বারম্বার ভারত আক্রমণ সুলতান মাহমুদের কর্মময় জীবনের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। সিংহাসনে আরোহণের পর
সুলতান মাহমুদ প্রথমে নিজের দেশের নিরাপত্তা ও সুশাসনের ব্যবস্থা করেন এবং তারপর ভারতের দিকে
মনোযোগ দেন। গজনীর সুলতান হয়েও যে সুলতান মাহমুদ ভারতীয় ইতিহাসের এক আলোচিত চরিত্র
তাঁর প্রধান কারণ হচ্ছে তাঁর বারম্বার ভারত আক্রমণ। তেত্রিশ বছরের রাজত্বকালে (৯৯৭-১০৩০ খ্রি:)
সুলতান মাহমুদ স্যার হেনরি ইলিয়টের মতে সতের বার ভারত আক্রমণ করেছিলেন এবং প্রতিবারই
সাফল্য অর্জন করেছিলেন। রাজত্বের শেষ দিকে তিনি শুধু পাঞ্জাব, সিন্ধু এবং মুলতান তাঁর দখলে
রেখেছিলেন। এগুলো ছাড়া বিজিত বা আক্রান্ত অন্য কোনো রাজ্য বা অঞ্চল তিনি তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত করেন
নি। তাই তাঁর বারম্বার ভারত আক্রমণের উদ্দেশ্য নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক তাঁর ভারত আক্রমণের পিছনে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বা ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছিল বলে
মনে করেছেন। এখানে সুলতান মাহমুদের ভারত আক্রমণের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা হল।
পাঠ -


বারম্বার ভারত আক্রমণ করলেও একমাত্র পাঞ্জাব, মুলতান ও সিন্ধু ছাড়া (১০২১-১০২২ খ্রি:) ভারতের
বিজিত অঞ্চলগুলো সুলতান মাহমুদ কখনো তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত করেন নি। মধ্য এশিয়ায় তাঁর বিস্তৃত
সাম্রাজ্যের সঙ্গে ভারতকেও অন্তর্ভুক্ত করলে সেই সাম্রাজ্য সুষ্ঠুভাবে শাসন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে এবং
সাম্রাজ্যে বিশৃ´খলা দেখা দেবে এটা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। কাজেই সেই অর্থে অর্থাৎ সাম্রাজ্যের
বিস্তৃতি ঘটানোর জন্য যে তিনি ভারত আক্রমণ করেন নি তা বলা যায়। তবে এ অভিযানগুলোর পিছনে
তাঁর অন্য রকম কিছু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। এ অভিযানগুলো তাঁকে ‘গাজির' সম্মান দিয়েছিল যা তাঁকে
সমকালীন অন্যান্য মুসলমান সুলতানদের চেয়ে উচ্চতর মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তাছাড়া অন্যান্য
মুসলমান সুলতানদের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ও অধিকতর শক্তিশালী প্রমাণ করার জন্য এ অভিযানগুলো
থেকে তিনি প্রয়োজনীয় অর্থ ও মর্যাদা লাভ করেছিলেন। হিন্দু অধ্যুষিত ভারতে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠা
করা ছিল অসম্ভব এবং সে কারণেই তিনি সে চেষ্টাও করেন নি।
পিতা সবুক্তিগীনের আমলেই হিন্দুশাহী রাজা জয়পালের সঙ্গে গজনী সাম্রাজ্যের যুদ্ধ ও সন্ধি হয়েছিল। কিন্তু
জয়পাল এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আনন্দপালের সন্ধির শর্ত অমান্য ও গজনী সাম্রাজ্যের শত্রুদের
সাহায্যদান সুলতান মাহমুদকে ভারত আক্রমণে উৎসাহিত করেছিল। গজনী সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমান্ত ছিল
জয়পালের রাজ্যের সীমান্তবর্তী।কাজেই নিজ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিধানের জন্য তিনি পাঞ্জাবের হিন্দুশাহী
বংশের রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাছাড়া সুদূর গজনী থেকে এসে ভারতের বিভিন্ন
অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করা ছিল কষ্টসাধ্য। সে তুলনায় লাহোর ও মুলতান অঞ্চল তাঁর দখলে থাকলে
সেটাকে ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো সহজতর ছিল। এ জন্যই
রাজত্বের প্রায় শেষ দিকে সুলতান মাহমুদ এ এলাকা নিজ অধিকারভুক্ত করেন।
কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন যে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে সুলতান মাহমুদ বারম্বার ভারত আক্রমণ
করেছিলেন।এ দেশে হিন্দু ধর্মকে উৎপাটিত করে সেখানে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করাই ছিল তাঁর
উদ্দেশ্য। ভারত অভিযানকালে তিনি বহু হিন্দু মন্দির লুঠ ও ধ্বংস করেছিলেন বলেই এ ধারণার সৃষ্টি
হয়েছে। কিন্তু সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে ভারত অভিযানের পিছনে সুলতান
মাহমুদের কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছিল না। এসব মন্দির লুঠ ও ধ্বংস করার পিছনে ছিল তার অর্থনৈতিক
উদ্দেশ্য, ধর্মীয় উদ্দেশ্য নয়।
নিচের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে যে তাঁর অভিযানের পিছনে কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্য
ছিল না। অতি প্রাচীনকাল থেকেই ভারতের রপ্তানী আমদানির চেয়ে অনেকগুণ বেশি ছিল। ফলে ভারত
হয়ে ওঠে অত্যন্ত ঐশ্বর্যশালী এক দেশ যা বার বার বিদেশী আক্রমণকারীদের আক্রমণে প্রলুব্ধ করেছে, এ
অতুল ঐশ্বর্যই তাঁর বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিভিন্ন যুগে।তাছাড়া যুগযুগ ধরে ধনী হিন্দু ব্যক্তিরা
তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ-সম্পদ মন্দিরে জমা রাখত। বহু ধনী হিন্দুব্যক্তি মন্দিরে অজস্র অর্থও দান করতো। ফলে
মন্দিরগুলো হয়ে উঠেছিল এক একটা রতœভান্ডার। তাঁর নিজের সাম্রাজ্যকে সুসংগঠিত করার জন্য, তাঁর
সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য এবং তাঁর রাজধানী গজনীকে প্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ ও সুন্দরতম শহর
হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সুলতান মাহমুদের প্রয়োজন ছিল প্রচুর অর্থের। এ অর্থ সহজে পাওয়ার প্রধান
উৎস ছিল মন্দিরগুলো। অনেক মন্দিরেই মূল্যবান রতœ-সজ্জিত স্বর্ণ-বিগ্রহ ছিল। কাজেই বলা যায় যে
প্রয়োজনীয় অর্থের চাহিদা মিটানোর উদ্দেশ্যেই তিনি ভারতের মন্দিরগুলোকে তাঁর আক্রমনের লক্ষবস্তু
হিসাবে স্থির করেছিলেন- এর পিছনে কোনো ধর্মীয় বিদ্বেষ বা উদ্দেশ্য ছিল না।
সুলতান মাহমুদ পরধর্মসহিষ্ণু ছিলেন। তিনি তাঁর সৈন্যবাহিনীতে নিযুক্ত হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা
দিয়েছিলেন। তাঁরা তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী গজনীতেও শাঁখ বাজাত এবং পূজা করতো। অধ্যাপক
হাবিব বলেছেন যে ইসলাম ধর্ম বিস্তারের জন্য মাহমুদ বারম্বার ভারত আক্রমণ করেছিলেন এ বক্তব্য
ঐতিহাসিকভাবে ভুল এবং মনস্তাত্তি¡কভাবে অসত্য। ইতিহাসে এমন কোনো সাক্ষ্য নেই যে তিনি বলপূর্বক
বা শান্তিপূর্ণ উপায়ে কাউকে নিজ ধর্মে দীক্ষিত করেছেন। কখনো কোনো রাজা হয়তো তাঁর আক্রমণের হাত
থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু সুলতান মাহমুদের স্বদেশ-প্রত্যাবর্তনের
পরই সে রাজা আবার নিজ ধর্মে ফিরে গেছেন। এটা ছিল সেই রাজার আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক

চাল এবং এজন্য সুলতান মাহমুদকে দায়ী করা যায় না। ধর্মপ্রচারের জন্য স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থা থাকা
আবশ্যক। কিন্তু ভারতে সুলতান মাহমুদের সারা সময়টাই কেটেছে যুদ্ধ বিগ্রহে - ধর্মপ্রচারে আত্মনিয়োগ
করার মত সময় তাঁর ছিল না। তাঁর সৈন্যবাহিনীতে যেমন বহু হিন্দু সৈনিক ছিল, তেমনি বহু হিন্দু তাঁর
শাসনামলে রাজ্যের উঁচু ও দায়িত্বপূর্ণ পদেও নিযুক্ত ছিলেন। তা ছাড়া ভারতীয় অভিযানগুলোর ধর্মীয়
উদ্দেশ্য থাকলে মুসলমান সৈন্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হিন্দু সৈন্যরা হয়তো যুদ্ধ করতো না।
এলফিনস্টোন সুলতান মাহমুদের ধর্ম-নীতি সম্পর্কে বলেছেন যে যুদ্ধক্ষেত্রে বা দুর্গ দখল করতে গিয়ে ছাড়া
কখনো কোনো হিন্দুকে তিনি হত্যা করেছেন এমন দৃষ্টান্ত নেই। স্যার উলসলি হেগ বলেছেন যে ইসলাম
ধর্মের অনুরাগী হলেও তাঁর অধীনে বহু হিন্দু সৈনিক ছিল এবং ধর্মান্তরিতকরণ ছিল চাকরির শর্ত, এটা
বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
সুলতান মাহমুদের ভারতীয় অভিযানের ধর্মীয় উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ভারতে তিনি শুধু
হিন্দু রাজ্য বা মন্দিরই আক্রমণ করেন নি- অন্ততপক্ষে দুইবার তিনি মুসলমান রাজ্যও আক্রমণ
করেছিলেন। সেখানেও তাঁর উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক। তাছাড়া মধ্য এশিয়ার পরিচালিত সুলতান মাহমুদের
সব অভিযানই ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে ড. নাজিম বলেছেন যে ভারতীয় হিন্দু রাজাদের তিনি
নাজেহাল করেছেন, তবে ইরান ও মধ্য এশিয়ার মুসলমান সুলতানদেরও তিনি রেহাই দেন নি। এ সব যুক্তি
ও তথ্যের ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে সুলতান মাহমুদের ভারতীয় অভিযানগুলোর পিছনে কোনো ধর্মীয়
উদ্দেশ্য ছিল না।
অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যেই সুলতান মাহমুদ বারম্বার ভারত আক্রমণ
করেছিলেন। যুগ যুগ সঞ্চিত ভারতীয় ধন-সম্পদ লুঠ করে মাহমুদ তা নিজের সাম্রাজ্যকে সুসংগঠিত করার
ও রাজধানী গজনীকে প্রাচ্যের সুন্দরতম শহর ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার কাজে ব্যয়
করেছেন। অধ্যাপক হাবিব বলেছেন যে অর্থ ও ক্ষমতার লোভেই তিনি ভারত আক্রমণ করেছিলেন-এর
পিছনে ইসলাম প্রচারের মহৎ উদ্দেশ্য ছিল না।
অভিযানসমূহ
১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সুলতান মাহমুদ সতের বার ভারত আক্রমণ
করেছিলেন।
ভারতে সুলতান মাহমুদের প্রথম অভিযান ছিল খাইবার গিরিপথের নিকটবর্তী কয়েকটি সীমান্ত শহরের
বিরুদ্ধে। ১০০০ খ্রিস্টাব্দে সেই অঞ্চলের কয়েকটি শহর ও দুর্গ তিনি দখল করেন।
পরের বছর (১০০১ খ্রি:) তিনি তাঁর পিতার শত্রু পাঞ্জাবের রাজা জয়পালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করেন।
পেশোয়ারের কাছে সংঘটিত যুদ্ধে জয়পাল শোচনীয়ভাবে পরাজিত এবং বন্দি হন। সুলতান মাহমুদ
জয়পালের রাজধানী ওয়াহিন্দ দখল করেন। বিপুল অর্থ ও পঞ্চাশটি হাতির বিনিময়ে জয়পাল সুলতান
মাহমুদের সঙ্গে সন্ধি করে মুক্তিলাভ করেন। বারম্বার পরাজয়ের গøানিতে জয়পাল সিংহাসন ত্যাগ করে
অগ্নিকুন্ডে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
সুলতান মাহমুদের তৃতীয় অভিযান পরিচালিত হয় ভেরার বিরুদ্ধে। সেখানকার রাজা বিজি রায় কর দিতে
অসম্মতি জানালে তিনি তাঁর রাজ্য আক্রমণ করেন। ঝিলাম নদীর তীরে সংঘটিত যুদ্ধে বিজি রায় পরাজিত
হন। প্রচুর ধন-সম্পদ এবং ২৮০টি হাতি নিয়ে সুলতান মাহমুদ ফিরে আসেন।
এরপর সুলতান মাহমুদ মুলতান আক্রমণ করেন। সেখানকার রাজা শেখ হামিদ লোদি উপঢৌকন পাঠিয়ে
সবুক্তিগীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন। কিন্তু তাঁর পৌত্র আবুল ফতেহ দাউদ পূর্বের নীতি ত্যাগ করে
সুলতান মাহমুদের রোষানলে পড়েন। ভেরা আক্রমণের সময় ভেরার পতন সুলতানের বিপদের কারণ হতে
পারে ভেবে দাউদ বিজি রায়কে সাহায্য করেছিলেন। ফলে (১০০৫-১০০৬ খ্রি:) সুলতান মাহমুদ দাউদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করেন। দাউদের আহŸানে জয়পালের পুত্র আনন্দপাল তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে


আসেন। কিন্তু যুদ্ধে দাউদ পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান ও পরে সুলতান মাহমুদের সঙ্গে সন্ধি করতে বাধ্য
হন। সন্ধির শর্তানুসারে তিনি সুলতান মাহমুদকে বার্ষিক ২০,০০০ দিরহাম কর দিতে স্বীকার করেন। ঐ
সময় জয়পালের এক পৌত্র সুখপাল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এবং নওয়াশ শাহ নাম গ্রহণ করেন। সুলতান
মাহমুদ তাঁকে ভেরার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
১০০৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ সুখপালের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। তুর্কিদের সঙ্গে সুলতান মাহমুদের
সংঘর্ষের সুযোগে সুখপাল ইসলাম ধর্মত্যাগ করেন এবং সুলতান মাহমুদের কর্মচারীদের বিতাড়িত করেন।
বলখের যুদ্ধের পর সুলতান মাহমুদ ভেরার দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু তাঁর ভেরা পৌঁছানোর আগেই তাঁর
কর্মচারীরা সুখপালকে বন্দি করে তাঁর সামনে হাজির করে। সুখপাল চার লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা দিতে বাধ্য হন এবং
বাকী জীবন বন্দিদশায় কাটান।
সুলতান মাহমুদের ষষ্ঠ অভিযান ছিল আনন্দপাল ও উত্তর ভারতীয় হিন্দু রাজাদের সম্মিলিত বাহিনীর
বিরুদ্ধে। শতদ্রু নদীর অপর তীরের মন্দিরগুলোর ধন-রতœ লুণ্ঠন করা ছিল সুলতান মাহমুদের এই অভিযানের
উদ্দেশ্য।আনন্দপাল উজ্জয়িনী, গোয়ালিয়র, কালঞ্জর, কনৌজ, দিল্লি ও আজমীরের রাজাদের প্রতি সাহায্যের
আবেদন জানালে তাদের সম্মিলিত বাহিনী সুলতান মাহমুদকে বাধাদানের উদ্দেশ্যে আনন্দপালের নেতৃত্বে
ওয়াহিন্দে উপস্থিত হয়। এটাই ছিল সুলতান মাহমুদের ভারতে সবচেয়ে বড় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
আনন্দপালের হাতি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গেলে সম্মিলিত বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং সুলতান
মাহমুদের সৈন্যদের হাতে প্রচুর সংখ্যক হিন্দু সৈন্য নিহত হয়। জোটে যোগদানকারী রাজারা একে একে
সুলতান মাহমুদের হাতে পরাজিত হয়ে ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রচুর ধন-রতœ সুলতান মাহমুদকে দিতে বাধ্য
হয়।এরপর সুলতান মাহমুদ কাংড়া বা নগরকোট দুর্গ দখল করেন এবং সেখানকার মন্দিরটি লুঠ করে
অবিশ্বাস্য পরিমাণ ধন-রতœ লাভ করেন। নগরকোট থেকে তিনি ৭০০,০০০ স্বর্ণ দিনার, ৭০০ মন স্বর্ণ ও
রৌপ্য পাত্র, ২০০ মন স্বর্ণ, ২০০০ মন অপরিশোধিত স্বর্ণ ও রৌপ্য এবং ২০ মণ মণিমুক্তা নিয়ে
গিয়েছিলেন। এরপর থেকেই ধন-সম্পদ লাভের আশায় হিন্দু মন্দিরগুলো আক্রমণ করতে তিনি আরো
বেশি উৎসাহী হয়ে ওঠেন।
১০০৯ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ আবার আনন্দপালের বিরুদ্ধে অগ্রসর হলে আনন্দপাল ভীত হয়ে তাঁর সঙ্গে
সন্ধি করেন।
১০১০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ মুলতান আক্রমণ করে দাউদকে পরাজিত করেন। দাউদ বাকী জীবন
ঘোরের এক দুর্গে বন্দি অবস্থায় কাটান।
পরের বছর (১০১১ খ্রি:) সুলতান মাহমুদ থানেশ্বর আক্রমণ করেন এবং হিন্দু মন্দিরের মূর্তি ধ্বংস করেন
এবং প্রচুর ধনরতœ নিয়ে দেশে ফিরে আসেন।
আনন্দপালের মৃত্যুর পর ত্রিলোচনপাল রাজা হন। তিনি মুসলমানদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা
করেন। কিন্তু তিনি দুর্বল শাসক হওয়ায় তাঁর পুত্র ভীমপালই রাজ্যে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। তিনি গজনীর
সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কও ছিন্ন করেন। ফলে ১০১৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ যাত্রা করেন
এবং তাঁকে পরাজিত করেন।
১০১৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ মথুরা আক্রমণ করে সেখানকার মন্দিরগুলো ধ্বংস করেন। এরপর তিনি
কনৌজ আক্রমণ করলে কনৌজের রাজা পালিয়ে যান এবং সুলতান মাহমুদের সৈন্যরা কনৌজ লুঠ করে।
১০১৯ খ্রিস্টাব্দে মাহমুদ ত্রিলোচনপালের বিরুদ্ধে অগ্রসর হলে তিনি পালিয়ে যান। তাঁর সৈন্যবাহিনী সুলতান
মাহমুদের হাতে পরাজিত হয়।
ভারত জয় বা ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপন করা সুলতান মাহমুদের উদ্দেশ্য না হলেও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন
যে দোয়াব অঞ্চলে অভিযান চালাতে হলে অন্ততপক্ষে ঘাঁটি হিসাবে পাঞ্জাব তাঁর দখলে থাকা প্রয়োজন।
১০২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি গজনী থেকে পাঞ্জাবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পথে তিনি সোয়াত, বাজাউর ইত্যাদি
স্থানের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী উপজাতিদের পরাজিত করেন এবং তাদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। পাঞ্জাব
দখল করে তিনি লাহোরে একজন বিশ্বস্ত গভর্নর নিয়োগ করেন।


১০২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি গোয়ালিয়র ও কালিঞ্জর আক্রমণ করলে দুই রাজ্যের রাজাই তাঁর সাথে সন্ধি করেন।
গোয়ালিরের রাজা তাকে ৩৫টি এবং কালিঞ্জরের রাজা তাঁকে ৩০০টি হাতি দিয়েছিলেন।
সুলতান মাহমুদের ভারতীয় অভিযানগুলোর মধ্যে ১০২৪ খ্রিস্টাব্দে সোমনাথ আক্রমণ ছিল সবচেয়ে
উল্লেখযোগ্য। দুর্গাধিপতি পালিয়ে গেলেও তাঁর সৈন্যরা দুর্গ রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল। প্রচন্ড যুদ্ধের পর
দুর্গের পতন ঘটলে সুলতান মাহমুদ সোমনাথ মন্দিরে প্রবেশ করেন। সোমনাথ মন্দিরের মূর্তি তিনি ভেঙ্গে
ফেলেন এবং এ মন্দির থেকে প্রচুর ধনরতœ লাভ করেন। মন্দির থেকে অন্যান্য মণিমুক্তা ছাড়াও সুলতান
মাহমুদ ২০,০০০,০০০ দিনার পেয়েছিলেন। কথিত আছে যে, সুলতান মাহমুদ সোমনাথ মন্দিরের দেবমূর্তি ভাঙ্গতে উদ্যত হলে ব্রাহ্মণরা প্রচুর ধনরতেœর বিনিময়ে মূর্তিটি রক্ষা করার চেষ্টা করে। কিন্তু মাহমুদ
ঘোষণা করেন যে ভাবীকালে তিনি মূর্তি ধ্বংসকারী হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান, মূর্তি বিক্রেতা রূপে
নয়।
ভারতে সুলতান মাহমুদের শেষ অভিযান পরিচালিত হয়েছিল জাটদের বিরুদ্ধে। সোমনাথ অভিযান থেকে
গজনী ফেরার পথে জাটরা তাঁর সৈন্যবাহিনীকে নাজেহাল করেছিল। মুলতানে পৌঁছে সুলতান মাহমুদ
১৪০০ নৌকার এক নৌ-বাহিনী গঠন করেন এবং প্রতিটি নৌযানে তীর-ধনুক ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র সজ্জিত ২০
জন সৈনিক মোতয়েন করেন। জাটরা ৪০০ নৌকা নিয়ে তাঁকে বাধা দিয়ে পরাজিত হয়।
দীর্ঘ ৩৩ বছর রাজত্ব করার পর ১০৩০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ মৃত্যুবরণ করেন। গজনীর ফিরোজা
প্রাসাদে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।
সুলতান মাহমুদের সাফল্যের কারণ
শক্তিশালী হিন্দু রাজা ও বিভিন্ন রাজাদের সমন¦য়ে গঠিত জোটের বিরুদ্ধে সুলতান মাহমুদের বারম্বার জয়
বিস্ময়ের উদ্রেক করে।তাঁর এ সাফল্যের কয়েকটি কারণ ছিল। প্রথমত, সুলতান মাহমুদ ছিলেন নি:সন্দেহে
সে যুগের শ্রেষ্ঠ সমরনায়ক।তাঁর সামরিক সংগঠন ও রণকৌশল ছিল অতি উচ্চমানের। দ্বিতীয়ত, তাঁর তুর্কি
অনুচরগণ ছিল দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। জেহাদের চেতনা ও ধন-সম্পদ লাভের আশা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধ করার
প্রেরণা যুগিয়েছিল। তৃতীয়ত, হিন্দুরাজাদের অনৈক্য সুলতান মাহমুদের সাফল্যের অন্যতম কারণ হয়ে
দাঁড়িয়েছিল। মাঝে মাঝে হিন্দু রাজারা জোট গঠন করলেও একক নেতৃত্বে এ জোটভুক্ত বাহিনী কখনো যুদ্ধ
করেনি। বিভিন্ন সেনাপতির নির্দেশে বিভিন্ন বাহিনীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ তাদের পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ভারতীয়রা মধ্য এশিয়ার পাবর্ত্য অঞ্চলের তুর্কিদের তুলনায় দৈহিক শক্তিতে দুর্বল ছিল। তবে তুর্কিদের
তুলনায় ভারতীয়রা ছিল সংখ্যায় অনেকগুণ বেশি। একক সেনাপতির নির্দেশে পরিচালিত হলে ভারতীয়দের
সংখ্যাধিক্য তাদের জয় নিশ্চিত করতে পারতো। কিন্তু ঐক্যের অভাবে স্বল্পসংখ্যক তুর্কিদের আক্রমণ
প্রতিহত করা ভারতীয়দের পক্ষে সম্ভব হয়নি। চতুর্থত, হিন্দুদের সামরিক পদ্ধতি ছিল দুর্বল ও ক্রটিযুক্ত।
ভারতীয়রা যুদ্ধে হাতির ওপর ছিল অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। কিন্তু এই বিরাটাকার প্রাণীকে যুদ্ধক্ষেত্রে
সঠিকভাবে পরিচালনা করা ছিল কষ্টসাধ্য। সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও আনন্দপালের হাতির যুদ্ধক্ষেত্র
ত্যাগ সম্মিলিত বাহিনীর পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ফলাফল
সুলতান মাহমুদের সতের বার ভারত অভিযানের ফলাফল ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সুলতান মাহমুদ ভারতে বিজিত
অঞ্চলে তাঁর শাসনব্যবস্থা স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করেন নি Ñ শুধুমাত্র পাঞ্জাব, মুলতান ও সিন্ধু তিনি নিজ
অধিকারে রেখেছিলেন। অন্যান্য অঞ্চল তিনি স্থানীয় শাসকদের ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ভারতে স্থায়ী সাম্রাজ্য
প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না। উত্তর পশ্চিমাঞ্চল তিনি অধিকার করে রেখেছিলেন তাঁর মধ্য
এশিয়ার সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তার প্রয়োজনে। তাঁর প্রত্যাবর্তনের পর রাজপুতরা উত্তর ভারতে
নিজেদের শাসন আবার প্রতিষ্ঠা করেছিল। সুলতান মাহমুদের অভিযানের ফলে হিন্দু রাজা ও জনসাধারণের


মনে দারুণ ভীতির সৃষ্টি হয়েছিল। যার ফলে পরবর্তীকালে মুসলমানদের বিজয় ও ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপন
সহজ হয়েছিল। সতের বার অভিযান পরিচালনা করে সুলতান মাহমুদ উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোর সামরিক
শক্তি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। ফলে পরবর্তীকালে মুসলমানদের আক্রমণ প্রতিরোধ করার মত শক্তি অনেক
রাজারই ছিল না। কাজেই সুলতান মাহমুদের অভিযানের পায়ে পায়ে ভারতে স্থায়ী মুসলমান সাম্রাজ্য
প্রতিষ্ঠিত না হলেও তাঁর অভিযানগুলো ভবিষ্যতে ভারতে মুসলমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সহায়ক হয়েছিল।
সুলতান মাহমুদ বারম্বার ভারত আক্রমণ করে ভারতের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। যুগ যুগ
ধরে সঞ্চিত ধনসম্পদ বারম্বার লুণ্ঠিত হওয়ার ফলে ভারতীয় রাজ্যগুলো প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অন্যদিকে এ
লুণ্ঠিত ধনসম্পদ দিয়ে গজনী সাম্রাজ্য সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে। তাঁর সামরিক বাহিনী হয়ে ওঠে আরো
শক্তিশালী। গজনীতে বিভিন্ন সুরম্য অট্টালিকা নির্মাণ করা হয় যা গজনী প্রাচ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর
নগরীতে পরিণত করে।
সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের কিছু সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ফলও লক্ষ করা যায়। তাঁর অভিযানের ফলে
মুসলমান ও হিন্দু সভ্যতা আরো কাছাকাছি আসে এবং এই দুই সংস্কৃতির পারস্পরিক যোগাযোগ আরো
ঘনিষ্ঠ হয়। মুসলমান সৈন্যদের সাথে বহু পন্ডিত ও দরবেশ এদেশে এসেছিলেন। তাঁদের প্রভাব সাংস্কৃতিক
ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়।
চরিত্র - কৃতিত্ব
ইতিহাসের মহান ব্যক্তিদের মত সুলতান মাহমুদের চরিত্র ও কৃতিত্ব বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন
করেছেন। তাঁর প্রশংসায় যেমন কেউ কেউ পঞ্চমুখ, তেমনি তাঁর নিন্দুকেরও অভাব নেই। কারো চোখে
তিনি ছিলেন দরবেশ, আবার কেউ তাঁকে এক লুটেরা সর্দাররূপে অভিহিত করেছেন, রক্তপাত ও
লুঠতরাজেই ছিল যার আনন্দ। তবে ড. নাজিম ঠিকই বলেছেন যে, তিনি কোনোটাই ছিলেন না।
মানুষ হিসাবে সুলতান মাহমুদ ছিলেন ¯েœহশীল এবং আত্মীয়দের প্রতি দয়ালু। তাঁর ভাই ইসমাইল ছিলেন
সিংহাসনের একজন প্রতিদ্বন্দ¡ী। কিন্তু তাকেও তিনি যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছিলেন। সুলতানের বিরুদ্ধে
ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ায় তাকে গজনী থেকে জুজনানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং সেখানে তিনি জীবনের বাকী
দিনগুলো শান্তিতেই কাটিয়েছিলেন। তাঁর অন্য এক ভাই আবুল মোজাফ্ফর নসরকে সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ
সামরিক পদ দেওয়া হয়েছিল। তাকে সিস্তানের প্রাদেশিক গভর্নরও নিযুক্ত করা হয়েছিল এবং মৃত্যু পর্যন্ত
তিনি ঐ দুই পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন। সবুক্তিগীনের মৃত্যুকালে সুলতান মাহমুদের অন্য ভাই আবু ইয়াকুব
ইউসুফ ছিলেন নিতান্তই শিশু। সুলতান মাহমুদ তাঁর দুই পুত্রের সঙ্গে আরও শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন
এবং নসরের মৃত্যুর পর তাকে ঐ পদে নিয়োগ করেছিলেন। সুলতান তাঁর পুত্রদের শিক্ষার প্রতি বিশেষ
মনোযোগী ছিলেন এবং তাদের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর তীক্ষè নজর রাখতেন। প্রথাগত শিক্ষাদান ছাড়াও
তাদেরকে সামরিক শিক্ষা দেওয়া হতো এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য দক্ষ ওয়াজিরদের
তত্ত¡াবধানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশের শাসন কাজে নিয়োগ করা হতো।
সুলতান মাহমুদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। অধ্যাপক হাবিব বলেছেন যে,
তাঁর পূর্ববর্তী বা পরবর্তী সুলতানদের চেয়ে ভিন্নতর ছিলেন না এবং সমসাময়িক সুলতানদের মত তিনিও
যুদ্ধ, নারী এবং মদ পছন্দ করতেন। তবে ড. নাজিম বলেছেন যে, সুলতান মাহমুদ ইসলামের নৈতিক
অনুশাসন মেনে চলতেন এবং মনে হয় যে শরিয়ত অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে বেশি স্ত্রী তাঁর ছিল না। মাঝে
মাঝে তিনি শখ করে মদ পান করলেও কখনও মদ্যাসক্ত ছিলেন না।
সুলতান মাহমুদ ছিলেন একগুয়ে ও অনমনীয় এবং তাঁর মতের বিরোধিতা তিনি সহ্য করতে পারতেন না -
মধ্যযুগের বিজেতা ও সুলতানদের এগুলো ছিল সাধারণ চারিত্রিক ত্রুটি। কিন্তু নিজের দোষ স্বীকার করার
মত হৃদয়ের উদারতাও তাঁর ছিল।


সুলতান মাহমুদ ছিলেন অসীম সাহসী। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি সামনে থাকতেন এবং সবচেয়ে বিপদসংকুল স্থানে
সৈন্যদের সাথে একসঙ্গে যুদ্ধ করতেন। কথিত আছে যে যুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে তাঁর শরীরে ৭২টি
ক্ষতচিহ্ন ছিল। সুলতানের ব্যক্তিগত শৌর্য ও নির্ভীকতা তাঁর সৈন্যদের মনে সাহস ও উদ্দীপনার সঞ্চার
করতো।
সেনাপতি হিসাবে সুলতান মাহমুদ ছিলেন দক্ষ ও অভিজ্ঞ। তাঁর রণ পরিকল্পনা ছিল প্রয়োগসিদ্ধ। ইরাক
থেকে দোয়াব এবং খাওয়ারিজম থেকে কাথিয়াওয়াড় পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তিনি অতুলনীয় শক্তি ও
সাফল্যের সঙ্গে সারা জীবন যুদ্ধ করেছেন। রণবিদ্যায় তিনি নতুন কিছু আবিষ্কার বা যোগ করেননি, কিন্তু
সেনাবাহিনীতে তিনি নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করেছিলেন। আরব, খলজী, আফগান, তুর্কি, হিন্দু- ইত্যাদি
বিভিন্ন উপাদানে গঠিত ছিল তাঁর সৈন্যবাহিনী। কিন্তু কঠোর নিয়মানুবর্তিতার ফলে তিনি সেই
সৈন্যবাহিনীকে অপরাজেয় করে তুলেছিলেন। সারাজীবন যুদ্ধ করলেও তিনি কখনও পরাজয় বরণ
করেননি। তিনি ছিলেন একজন সাহসী কিন্তু সাবধানী সেনাপতি। শত্রুকে পরাজিত করার মত শক্তি সঞ্চয়
না করে তিনি কখনও আক্রমণ করতেন না। অধ্যাপক হাবিব বলেছেন যে, তিনি কখনও যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যর্থ
হননি, কারণ জয়ের সম্ভাবনাহীন কোনো যুদ্ধ তিনি করেন নি। তরবারি ছিল সুলতান মাহমুদের প্রিয় যুদ্ধাস্ত্র।
কিন্তু তীর চালনায়ও তিনি ছিলেন সমান দক্ষ।
সুলতান মাহমুদ ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। তাঁর গ্রীষ্মকাল কাটতো মধ্য এশিয়ায় অভিযানে- শীতকালে তিনি
বের হতেন ভারত অভিযানে। তাপ বা শৈত্য, প্রাকৃতিক বাধা, কোনো কিছুই তাঁর অভিযানে বাধা হয়ে
দাঁড়ায়নি।ঘোরের দুর্গম শৈলশ্রেণী, কাশ্মিরের বরফঢাকা পাহাড়ি গিরিপথ, ভারতের উত্তাল নদী বা মুষলধারে
বৃষ্টি, রাজপুতনার তপ্ত মরুভ‚মি - কিছুই তাঁকে বাধা দিতে পারে নি।
সুলতান মাহমুদ ছিলেন একজন ন্যায় বিচারক। সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করতে তিনি তাঁর সর্বশক্তি
প্রয়োগ করেছিলেন। আইনের চোখে সবাই ছিল সমান - উচ্চবংশ, আত্মীয়তা বা পদমর্যাদার কারণে কেউ
আইনের হাত থেকে রেহাই পায়নি। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই ন্যায় বিচার পেতো।
কবি ও বিদ্বান ব্যক্তি হিসাবে সুলতান মাহমুদের খ্যাতি ছিল। কথিত আছে যে তফ্রিদুল ফুরু নামে ফিকাহ্
শাস্ত্রের একটি গ্রন্থ তিনি রচনা করেছিলেন। দরবারে তিনি জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে
আলোচনা করতেন।
সুলতান মাহমুদ জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর দরবার তখন মুসলিম বিশ্বের জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিদের
মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। তাদের জন্য সুলতান বছরে ৪০০,০০০ দিরহাম খরচ করতেন। তাঁর
পৃষ্ঠপোষকতায় ফার্সি সাহিত্যের প্রচন্ড উৎকর্ষ হয়। তাঁর দরবারে সমবেত কবিদের মধ্যে আবুল কাসিম
ফেরদৌসী, আবুল কাসিম হাসান বিন আহমদ উনসুরি, ফারুকী, আমজাদী প্রমুখরা ছিলেন উল্লেখযোগ্য।
তাঁর দরবারে এবং সম্ভবত তাঁর অনুরোধে ফেরদৌসী তাঁর অমরকাব্য শাহনামার বৃহত্তর অংশ রচনা
করেছিলেন। কিন্তু রাজকবি উনসুরির ঈর্ষার কারণে ফেরদৌসী তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতি ও সম্মান লাভ করতে
পারেননি। গণিতশাস্ত্রবিদ, দার্শনিক ও জ্যোতিষশাস্ত্রবিদ আবু রায়হান আল-বেরুনী, ঐতিহাসিক উতবী ও
বইহাকী এবং দার্শনিক আল ফারাবীও সুলতান মাহমুদের রাজসভা অলঙ্কৃত করেছিলেন। বিভিন্ন স্থান থেকে
জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিদের তিনি তাঁর দরবারে সমবেত করেছিলেন। তাঁর দরবারে ৪০০ কবির সমাবেশ ঘটেছিল।
গজনীতে তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বহু মূল্যবান
গ্রন্থে পরিপূর্ণ একটি গ্রন্থাগারও ছিল। বিভিন্ন অভিযানে তিনি শুধু ধনরতœই আহরণ করেননি, তা আক্রান্ত
স্থানের গ্রন্থাগারগুলো থেকে বহু মূল্যবান গ্রন্থও তিনি গজনীতে নিয়ে এসেছিলেন।
সুলতান মাহমুদ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। পীর দরবেশদের প্রতি ছিল তাঁর প্রগাঢ় ভক্তি। বহু দূরত্ব
অতিক্রম করে তিনি বিখ্যাত দরবেশ আবুল হাসান খারকানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। ধর্মের
ব্যাপারে তিনি ছিলেন অনুসন্ধিৎসু। প্রথমে তিনি ছিলেন হানাফী মতাবলম্বী। কিন্তু পরে পর্যায়ক্রমে তিনি
কারামতীয় ও শাফি মতাবলম্বী হয়েছিলেন। তাঁর এ ধরনের ধর্মীয় মত পরিবর্তন থেকে ধর্ম সম্পর্কে তাঁর
অনুসন্ধিৎসার পরিচয় পাওয়া যায়।


ধর্মপালনের ক্ষেত্রে সুলতান মাহমুদ ছিলেন অতি সতর্ক। তিনি নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন এবং রোজ
কোরআন শরীফ পড়তেন। রোজার মাসে তিনি নির্ধারিত হারে যাকাত দিতেন ও রোজা রাখতেন। তাছাড়া
প্রতিদিনই তিনি দীন-দরিদ্রদের মধ্যে অর্থ বিতরণ করতেন। হজ্ব পালনের ইচ্ছা থাকলেও রাজনৈতিক
ব্যস্ততার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে হজ্বযাত্রীদের সম্ভাব্য সকল রকম সুযোগ-সুবিধা দানে তিনি সচেষ্ট
ছিলেন।
সুলতান মাহমুদ পরধর্ম সহিষ্ণু ছিলেন। তাঁর আমলে হিন্দুরা ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতো। রাজধানী
গজনীতে হিন্দুদের জন্য পৃথক আবাসিক এলাকা তৈরি করা হয়েছিল এবং সেখানে তাঁরা স্বাধীনভাবে তাদের
ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করতো। সন্ধ্যায় গজনীর হিন্দু এলাকা শাঁখ ও ঘন্টাধ্বনি শোনা যেতো। ভারতে
তিনি বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছিলেন- কিন্তু তাঁর পিছনে অর্থনৈতিক কারণ ছিল- ধর্মীয় নয়। তিনি
কখনও কোনো হিন্দুকে জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন নি। তাঁর সামরিক ও বেসামরিক বিভাগে
বহু হিন্দু কর্মচারী ছিল এবং তাদের অনেকেই রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
স্থাপত্য-শিল্পের প্রতিও সুলতান মাহমুদের অনুরাগ ছিল। ভারত থেকে নেওয়া ধন-সম্পদ দিয়ে তিনি গজনী
নগরীকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছিলেন। গজনীতে তিনি অত্যন্ত সুন্দর এক মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
গজনীতে তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গ্রন্থাগারও নির্মাণ করেছিলেন। তিনি বহু মিনার, সেতু ও বাধ নির্মাণ
করেছিলেন। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব সত্তে¡ও বাধটি এখনও ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। শুষ্ক মওসুমে
গজনীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় কৃষি সেচের উদ্দেশ্যে এই বাধ নির্মাণ করা হয়েছিল। গজনীর নিকটে তাঁর
সমাধি-সৌধ এবং দুটি মিনার আজও বিদ্যমান। সুলতানের অনুকরণে অভিজাতরাও বহু সুন্দর ইমারত ও
বাগান নির্মাণ করেছিলেন। ফলে তাঁর রাজত্বকালে গজনী ও প্রাদেশিক রাজধানী শহরগুলো প্রাসাদ,
মসজিদ, বাগান ইত্যাদিতে সৌন্দর্য মন্ডিত হয়ে উঠেছিল।
সুলতান মাহমুদ এক বিশাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণের সময় তিনি
ছিলেন গজনী, বুস্ত এবং বলখের শাসক। ক্রমে ক্রমে তিনি খোরাসান, সিস্তান, ঘোর, খাওয়ারিজম,
কাফিরিস্তান, ইস্পাহান ইত্যাদি এলাকাও জয় করেন। ভারতে তিনি হিন্দুশাহী রাজাদের কাছ থেকে
লামাঘান থেকে বিপাশা নদী পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল জয় করেন। তাছাড়া বহু ভারতীয় রাজা তাঁর আনুগত্য
স্বীকার করেছিল। তাঁর সাম্রাজ্য ইরাক ও কাস্পিয়ান সাগর থেকে গঙ্গা নদী এবং আরল সাগর থেকে ভারত
মহাসাগর, সিন্ধু ও রাজপুতনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পূর্ব-পশ্চিমে তাঁর সাম্রাজ্য ছিল প্রায় ২০০০ মাইল দীর্ঘ
এবং উত্তর-দক্ষিণে এর প্রস্থ ছিল প্রায় ১৪০০ মাইল। গজনী থেকে এই বিশাল সাম্রাজ্য সুশৃ´খলভাবে
শাসন করা অসম্ভব হবে ভেবে তিনি তাঁর সাম্রাজ্য তাঁর দুই পুত্র মাসুদ ও মুহাম্মদের মধ্যে ভাগ করে দেন।
সাম্রাজ্য ভাগ নিয়ে অবশ্য তাঁর পুত্রদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর আগে
সুলতান মাহমুদ মাসুদকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেন। সাম্রাজ্য ভাগ ও উত্তরাধিকারী নির্বাচনে
সুলতান মাহমুদ দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারেন নি। মাসুদ শাসক হিসাবে অধিকতর যোগ্য জেনেও তাকে
উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা সুলতানের অদূরদর্শিতার পরিচায়ক। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মাসুদই সিংহাসন
লাভ করেছিলেন।
সুলতান মাহমুদ ছিলেন একজন দক্ষ সেনাপতি, সফল বিজেতা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক ও সাম্রাজ্যের
প্রতিষ্ঠাতা। ড. নাজিম তার মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছেন যে কিছু কিছু ত্রুটি থাকা সত্তে¡ও সুলতান মাহমুদ
ছিলেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক ও বিজেতা। সুলতান মাহমুদের পুত্র ও উত্তরাধিকারী মাসুদ তাঁর
সম্পর্কে বলেছেন যে, মাহমুদের মত মানুষ আর কোনোদিন জন্মগ্রহণ করবে না।
সারসংক্ষেপ
ভারতে মুসলিম আগমনের দ্বিতীয় পর্যায়ের নায়ক ছিলেন গজনীর সুলতান মাহমুদ। ১০০০ থেকে
১০২৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেছিলেন। তাঁর ভারত আক্রমণের পিছনে
ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছিল না। বরং অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যই ছিল প্রধান। ভারতের ধনরতœ আহরণ করে নিজ
সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করাই ছিল তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য। তাঁর অভিযানগুলোর মধ্যে সোমনাথ দুর্গে


আক্রমণ ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিজীত রাজাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করে তিনি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার
পরিচয় দিয়েছিলেন।
সুলতান মাহমুদের অভিযানের ফলে ভারতে মুসলিম শাসন স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত না হলেও পরবর্তীতে
মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছিল।
সুলতান মাহমুদ কেবল দক্ষ সমরনায়কই ছিলেন না। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সাহিত্যের
পৃষ্ঠপোষকতা করে তিনি গজনী রাজ্যকে সমসাময়িক বিশ্বে সুপরিচিত করেছিলেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন:
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। মাহমুদ কোথাকার সুলতান ছিলেনÑ
ক. ঘোর খ. গজনী
গ. খাওয়ারিজম ঘ. ভারত
২। সুলতান মাহমুদ ভারত আক্রমণ করেছিলেনÑ
ক. ১৫ খ. ১৭
গ. ১৮ ঘ. ২০ বার
৩। সুলতান মাহমুদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অভিযান ছিলÑ
ক. পাঞ্জাব খ. সিন্ধু
গ. রাজপুতনা ঘ. সোমনাথ
৪। সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিলÑ
ক. অর্থনৈতিক খ. রাজনৈতিক
গ. সামাজিক ঘ. ধর্মীয়
৫। সুলতান মাহমুদ মৃত্যুবরণ করেনÑ
ক. ১০২৫ খ. ১০২৭
গ. ১০৩০ ঘ. ১০৩১ খ্রিস্টাব্দে
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। সুলতান মাহমুদের বারম্বার ভারত অভিযানের পিছনে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যই ছিল প্রধানÑ ব্যাখ্যা করুন।
২। সুলতান মাহমুদ সম্পর্কে একটি টীকা লিখুন।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করুন।
২। সুলতান মাহমুদের অভিযানসমূহের উল্লেখপূর্বক তাঁর সাফল্যের কারণ ও ফলাফল ব্যাখ্যা করুন।
৩। সুলতান মাহমুদের চরিত্র ও কৃতিত্ব মূল্যায়ন করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]