মুহাম্মদ ঘোরীর ভারত আক্রমণের কারণ উল্লেখপূর্বক ভারত বিজয়ের বিবরণ দিন।


দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ চতুর্থাংশে তৃতীয় পর্যায়ে মুসলমানদের ভারত অভিযান পরিচালিত হয় ঘোর থেকে।
মুহাম্মদ বিন কাসিম ও সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে পরিচালিত প্রথম দুটি অভিযানের ফলে ভারতে
মুসলমানদের শাসন স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত না হলেও তৃতীয় পর্যায়ের অভিযানের ফলে ভারতে মুসলমানদের
দীর্ঘস্থায়ী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তৃতীয় পর্যায়ে ঘোরীদের আক্রমণের ফলে ভারতে রাজপুত শক্তিরও
সামরিক পতন ঘটে।
ঘোর রাজ্য গজনী ও হিরাটের মধ্যবর্তী পর্বত সঙ্কুল স্থানে অবস্থিত ছিল। শুরুতে ঘোর গজনী সাম্রাজ্যের
অধীনে ছিল এবং এর অধিবাসীরা ছিল তুর্কি। গজনী সাম্রাজ্যের দূর্বলতার সুযোগে ঘোরের তুর্কিরা স্বাধীন
হয়ে পড়ে। ঘোরের সুলতান গিয়াসউদ্দিন ১১৭৩ খ্রিস্টাব্দে গজনী জয় করে তাঁর ভাই মুইজউদ্দিন মুহাম্মদের
ওপর গজনীর শাসনভার ন্যস্ত করেন। মুইজউদ্দিন মুহাম্মদই ভারতের ইতিহাসে শিহাবউদ্দিন ঘোরী বা
মুহাম্মদ ঘোরী নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। মুহাম্মদ ঘোরী গজনী থেকেই তাঁর ভাইয়ের প্রতিনিধিরূপে ভারতে
অভিযান পরিচালনা করেছিলেন।
খ্রিস্টিয় সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগে হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ে এবং উত্তর ভারতে বহু
ছোট ছোট রাজ্যের উদ্ভব হয়। গুর্জর-প্রতিহার রাজারা উত্তর ভারতে তাঁদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলেও তা
দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সুলতান মাহমুদের বারম্বার ভারত আক্রমণের ফলে উত্তর ভারতের রাজনৈতিক শক্তি
আবারও দূর্বল হয়ে পড়ে।
সুলতান মাহমুদের মুত্যুর প্রায় ১৫০ বছর পর মুহাম্মদ ঘোরী ভারত আক্রমণ করেন। ঘোরীর আক্রমণের
প্রাক্কালে উত্তর ভারত বেশ কয়েকটি ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত ছিল।পাঞ্জাবে সুলতান মাহমুদের এক বংশধর
খসরু মালিক রাজত্ব করছিলেন। উত্তর সিন্ধু ও মুলতান ছিল কারামতীয়দের অধীনে। নিম্ন সিন্ধু অঞ্চল ছিল
সুম্রা বংশের শাসনাধীন। এর রাজধানী ছিল দেবল। গুজরাট ছিল বাঘেলাদের শাসনাধীন। আজমীরে
রাজত্ব করছিলেন চৌহান রাজারা। ক্রমে চৌহানরা শক্তিশালী হয়ে ওঠেন এবং ১১৫০ খ্রিস্টাব্দে তাঁরা দিল্লি
ও দখল করে নেয়।উত্তর-পূর্ব রাজপুতানাও তাঁরা অধিকার করে। মুহাম্মদ ঘোরীর আক্রমণের সময় পৃথ্বিরাজ
ছিলেন দিল্লি ও আজমীরের রাজা। কনৌজে তখন রাজত্ব করতেন গাহড়বাল বংশীয় রাজা জয়চন্দ্র। চৌহান
ও গাহড়বাল রাজাদের মধ্যে আবার ছিল শত্রুতা। পূর্ব ভারতে বিহারে পালরা এবং বাংলায় সেনরা রাজত্ব
করছিলেন। উত্তর ভারতীয় হিন্দু রাজাদের মধ্যে কোনো ঐক্য ছিল না, বরং একে অপরের শত্রু ছিলেন।
তাঁদের এই অনৈক্য মুহাম্মদ ঘোরীর সাফল্যের সহায়ক হয়েছিল।



মুহাম্মদ ঘোরীর ভারত অভিযানের কারণ
মুহাম্মদ ঘোরী ছিলেন একজন উচ্চাকাক্সক্ষী ব্যক্তি। স্বভাবতই একটি বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনে তিনি ছিলেন
আগ্রহী। তবে তাঁর ভারত আক্রমণের বিশেষ কয়েকটি কারণ ছিল। প্রথমত, সুলতান মাহমুদের মত
ঘোরীরাও মধ্য এশিয়ায় একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে অঞ্চলে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায়
তাঁরা সেলজুক তুর্কি ও খাওয়ারিজম শাহ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হন। একাধিকবার ঘোরীরা খাওয়ারিজমের শাহের
হাতে পরাজয় বরণ করে সে আশা ত্যাগ করে এবং ভারতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে বাধ্য হয়। ড.
হাবিবুল্লাহ যেমন বলেছেন যে মুইজউদ্দিনের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনায় ভারতীয় অঞ্চল জয়ের স্থান ছিল
গৌণ।
দ্বিতীয়ত, সুলতান মাহমুদের পরবর্তী এক সুলতান, বাহরামের আমল থেকেই ঘোরীদের সঙ্গে গজনীর
শত্রুতা ছিল। মুহাম্মদ ঘোরী গজনী দখল করে নিলেও গজনীর ইয়ামনী বংশের সুলতানরা পাঞ্জাবে রাজত্ব
করছিল এবং সেখান থেকে তাঁরা সুযোগমত ঘোরও আক্রমণ করতে পারত। কাজেই পাঞ্জাব থেকে ইয়ামনী
শাসকদের উচ্ছেদ করে ঘোরের নিরাপত্তা বিধান করাও ছিল মুহাম্মদ ঘোরীর ভারত আক্রমণের একটি
উদ্দেশ্য।
তৃতীয়ত, ভারতীয় রাজাদের অনৈক্য ও অন্তর্বিবাদও মুহাম্মদ ঘোরীকে ভারত আক্রমণে উৎসাহিত করেছিল।
মুহাম্মদ ঘোরীর ভারত অভিযানের পিছনে ধর্মীয় কারণ ছিল বলে কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন।
কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। কবি সাদী স্পষ্টভাবেই বলেছেন যে, পেশাদার সৈন্যরা তাদের মজুরির জন্য যুদ্ধ
করেছিল। তাদের রাজা, দেশ বা ধর্মের জন্য তাঁরা যুদ্ধ করে নি।
মুহাম্মদ ঘোরীর উচ্চাকাক্সক্ষা ও মধ্য এশিয়ায় সাম্রাজ্য স্থাপনে তাঁর ব্যর্থতা স্বভাবতই তাকে ভারতের প্রতি
আকৃষ্ট করেছিল। ১১৭৫ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ঘোরী প্রথমবারের মত ভারত অভিযানে আসেন। ঐ সময়
মুলতানে ইসলাম ধর্মাবলম্বী কারামতীয় সম্প্রদায়ের প্রাধান্য ছিল। গোঁড়া মুসলমানরা তাদের বিধর্মী বলে
মনে করতো। মুহাম্মদ ঘোরী তাদের কাছ থেকে মুলতান জয় করেন। এর পর ১১৭৬ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ
ঘোরী উচ্ দুর্গ অবরোধ করেন এবং সেখানকার রাণীর বিশ্বাসঘাতকতায় দুর্গটি দখল করেন। গুজরাটের
ধন-সম্পদে আকৃষ্ট হয়ে মুহাম্মদ ঘোরী ১১৭৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের রাজধানী আনহিলওয়ারা বা পাটান
আক্রমণ করেন, কিন্তু গুজরাটের বাঘেলা রাজা মূলরাজের হাতে পরাজিত হয়ে দেশে ফিরে যান। ভারতে
এটাই ছিল মুহাম্মদ ঘোরীর প্রথম পরাজয়। ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি পেশোয়ার দখল করলেও খসরু মালিকের
কাছ থেকে লাহোর দখল করতে ব্যর্থ হন। ১১৮২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ঘোরী দেবল আক্রমণ করেন এবং
সমুদ্র-উপক‚ল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল জয় করেন। ১১৮৬ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ঘোরী খসরু মালিককে পরাজিত ও
বন্দি করে লাহোর দখল করেন। খসরু মালিকের পরাজয়ের ফলে ভারতে গজনীর ইয়ামনী বংশের শাসনের
অবসান ঘটে। পাঞ্জাব অধিকার করার ফলে ভারতের অন্যান্য অঞ্চল জয়ের পথ মুহাম্মদ ঘোরীর জন্য উন্মুক্ত
হয়। কিন্তু রাজপুতরা তাঁর অগ্রগতি রোধ করে।
রাজপুতরা ছিল বীর যোদ্ধা জাতি। গজনী ও ঘোরের তুর্কিরা মধ্য এশিয়ার সেলজুক ও অন্যান্য তুর্কিদের
সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু তখন পর্যন্ত মুসলমানরা যুদ্ধে রাজপুতদের মুখোমুখি হয়নি। কিন্তু বীর যোদ্ধা
হওয়া সত্তে¡ও রাজপুতদের সামন্ত্রতান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থা ও বর্ণভেদ প্রথা তাদের দূর্বলতার কারণ হয়ে
দাঁড়িয়েছিল।
১১৯১ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ঘোরী সরহিন্দ অভিমুখে যাত্রা করেন এবং শহরটি দখল করেন। আজমীর ও
দিল্লির চৌহান রাজা পৃথ্বিরাজ পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে মুহাম্মদ ঘোরীর বিরুদ্ধে উত্তর ভারতীয়
রাজাদের নিয়ে এক জোট গঠন করেন। শুধুমাত্র কনৌজের গাহড়বাল বংশীয় রাজা জয়চন্দ্র মুসলমানদের
বিরুদ্ধে গঠিত এই জোটে যোগদান করেননি। কর্নেল টডের মতে জয়চন্দ্রের মেয়েকে বলপূর্বক বিয়ে করার
কারণে পৃথ্বিরাজের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল এবং সে কারণেই তিনি পৃথ্বিরাজের নেতৃত্বে গঠিত জোটে
যোগদান করেন নি। ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে এক বিশাল বাহিনী নিয়ে পৃথ্বিরাজ মুহাম্মদ ঘোরী বিরুদ্ধে অগ্রসর হন।


ফিরিশতার ভাষ্য অনুসারে পৃথ্বিরাজের নেতৃত্বাধীন বাহিনীতে ২,০০,০০০ অশ্বারোহী এবং ৩,০০০ হাতি
ছিল। থানেশ্বরের ১৪ মাইল দূরে তরাইনে এই বাহিনী মুহাম্মদ ঘোরীর বাহিনীর মুখোমুখি হয়। তুমুল যুদ্ধের
পর মুহাম্মদ ঘোরীর বাহিনী পরাজিত হয় এবং মুহাম্মদ ঘোরী নিজেও আহত হয়ে স্বদেশে ফিরে যান।
পৃথ্বিরাজ সরহিন্দ পুনর্দখল করেন। এই যুদ্ধ ইতিহাসে তরাইনের যুদ্ধ নামে খ্যাত।
তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মুহাম্মদ ঘোরী দমে যান নি। দেশে ফিরে এসে তিনি এই পরাজয়ের
প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এক বিশাল বাহিনী গঠন করেন। ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর বিশাল বাহিনী নিয়ে
পৃথ্বিরাজের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। আফগান, তুর্কি ও ইরানি সৈন্য নিয়ে গঠিত তার বাহিনীতে সদস্য সংখ্যা
ছিল ১,২০,০০০ এবং এর সঙ্গে ছিল ১২,০০০ অশ্বারোহী। পৃথ্বিরাজের নেতৃত্বে হিন্দুরাজাদের সম্মিলিত
বাহিনী আগেই তরাইনের প্রান্তরে উপস্থিত হয়েছিল।সারাদিন তুমুল যুদ্ধের পর সন্ধ্যায় মুহাম্মদ ঘোরী
জয়লাভ করেন। পৃথ্বিরাজ বন্দি ও নিহত হন। বীরত্বে হিন্দুরা মুসলমানদের চেয়ে কোনো অংশেই কম ছিল
না।কিন্তু হিন্দুদের চিরাচরিত যুদ্ধরীতিতে হাতির ওপর নির্ভরশীলতা এবং সর্বোপরি সম্মিলিত বাহিনীর
পরিচালনায় সম্পূর্ণ কেন্দ্রীভ‚ত একক-অধিনায়কত্বের অভাবের ফলে তাদের পরাজয় ঘটে।
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বলা যেতে পারে যে, রাজপুতদের
এই জোটের বিরুদ্ধে মুহাম্মদ ঘোরীর জয় ভারতে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। এর
পর মুহাম্মদ ঘোরী এবং তাঁর সেনাপতিরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল জয় করে এই দেশে মুসলিম রাজ্যের
বিস্তার ঘটান।
হিন্দুদের জন্য তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ ছিল দুর্ভাগ্যজনক।এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে রাজপুতদের প্রতিরোধ
শক্তি ভেঙ্গে পড়ে। এর পর ভারতের হিন্দুরা মুসলমানদের বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আর কোনো জোট গঠন
করতে সক্ষম হয়নি। এই যুদ্ধে জয়লাভের ফলে মুসলমানদের অধিকার প্রায় দিল্লির উপকণ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত
হয়। হান্সি, সামানা, কোহরাম, বাকুহারাম ও অন্য বেশ কয়েকটি দুর্গ মুহাম্মদ ঘোরীর করতলগত হয়।
আজমীর রাজ্য মুহাম্মদ ঘোরীর হাতে বিধ্বস্ত হয়। মুহাম্মদ ঘোরী আজমীরের হিন্দু মন্দির ও অন্যান্য বহু
ইমারত ধ্বংস করেন এবং সেখানে মসজিদ ও মাদ্রাসা স্থাপন করেন। বাৎসরিক কর দানের শর্তে আজমীর
শহরটি পৃথ্বিরাজের পুত্রের হাতে ন্যস্ত করা হয়।
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের পর মুহাম্মদ ঘোরী কুতুবউদ্দিন নামে তাঁর এক বিশ্বস্ত অনুচরকে তাঁর বিজিত
ভারতীয় অঞ্চলের শাসনকর্তা নিয়োগ করে গজনী ফিরে যান। কুতুবউদ্দিন ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি জয় করেন
এবং একে একে মীরাট, কোল, গোয়ালিয়র ইত্যাদি দখল করেন। কুতুবউদ্দিন দিল্লিতে তাঁর রাজধানী স্থাপন
করেন।
চৌহানদের ধ্বংস করে দিল্লি, আজমীর দখল করলেও মুসলমানরা তখনও ভারতের প্রভু হতে পারেনি।
দোয়াব অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন জয়চন্দ্র। তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী রাজা এবং পূর্বদিকে তাঁর রাজ্য
বারাণসী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তাঁর রাজধানী কনৌজ ছিল রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এক
শহর। উল্লেখ্য যে তরাইনের যুদ্ধের সময় ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারণে জয়চন্দ্র পৃথ্বিরাজের নেতৃত্বে গঠিত
হিন্দু জোটে যোগদান করেন নি। সম্ভবত তিনি মনে করেছিলেন যে সুলতান মাহমুদের মত মুহাম্মদ ঘোরীও
যুদ্ধে জয়লাভের পর ধন-রতœ নিয়ে দেশে ফিরে যাবেন এবং পৃথ্বিরাজের পরাজয় উত্তর ভারতে তাঁর নিজের
ক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়ক হবে। কিন্তু তাঁর সে আশা পূর্ণ হয় নি। ১১৯৪ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ ঘোরী জয়চন্দ্রের
বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। জয়চন্দ্রও এক বিশাল বাহিনী নিয়ে তাঁকে বাধা দেওয়ার জন্য অগ্রসর হন। এ সময়
আগের মত কোনো সম্মিলিত জোট গঠিত হয়নি। সম্ভবত পৃথ্বিরাজের পরাজয় হিন্দুদের উৎসাহকে স্তিমিত
করে দিয়েছিল।তাজুল-মাসির এবং তাবাকাৎ-ই-নাসিরি গ্রন্থে এ যুদ্ধের কিছু বিবরণ পাওয়া যায়। চান্দওয়ার
ও ইটাওয়ার মধ্যবর্তী স্থানে সংঘটিত এ যুদ্ধে জয়চন্দ্র পরাজিত ও নিহত হন এবং মুহাম্মদ ঘোরী প্রচুর ধনরতœ ও ৩০টি হাতি লাভ করেন। এর পর মুহাম্মদ ঘোরী বারাণসী আক্রমণ করে সেখানকার বহু মন্দির
ধ্বংস করেন এবং সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেন। কুতুবউদ্দিনের ওপর বিজিত অঞ্চলের শাসনভার অর্পণ
করে এরপর মুহাম্মদ ঘোরী গজনী ফিরে আসেন। মুহাম্মদ ঘোরীর আমলেই বখতিয়ার খলজী বাংলা ও


বিহার জয় করেন (বখতিয়ার খলজীর বাংলা ও বিহার জয়ের এবং সেই অঞ্চলে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠার
বিবরণ নবম ইউনিটের প্রথম পাঠে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে)।
১২০৩ খ্রিস্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন ঘোরীর মৃত্যুর পর শিহাবউদ্দিন মুহাম্মদ ঘোরী গজনী, ঘোর ও দিল্লির সুলতান
পদে অধিষ্ঠিত হন। তাঁর রাজত্বের শেষ ভাগে (১২০৫ খ্রি:) গজনীতে বিদ্রোহ দেখা দিলে তিনি তা দমন
করেন। ভারতেও খোকাররা বিদ্রোহ করলে মুহাম্মদ ঘোরী ভারতে আসেন এবং তাদের বিদ্রোহ দমন করে
লাহোরে প্রত্যাবর্তন করেন। সেখান থেকে গজনী প্রত্যাবর্তনের পথে ধামিয়াক নামক স্থানে ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে
মুহাম্মদ ঘোরী এক আততায়ীর হাতে নিহত হন।
মুহাম্মদ ঘোরীর মৃত্যুর পর তাঁর ভ্রাতুস্পুত্র মাহমুদ ঘোরের সিংহাসনে বসেন। তাঁর রাজ্য ছিল খুবই সীমিত
এবং মুহাম্মদ ঘোরীর তিনজন ক্রীতদাস তাঁর সাম্রাজ্যের তিন অংশ শাসন করতে থাকে। গজনীতে
তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ, সিন্ধুতে নাসিরউদ্দিন কুবাচা এবং উত্তর ভারতে কুতুবউদ্দিন আইবক শাসনকার্য
পরিচালনা করেন। মাহমুদের রাজত্বকাল স্বল্পস্থায়ী ছিল। তাঁর মত্যুর পর ঘোর রাজ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় এবং
এই সুযোগে খাওয়ারিজমের শাহ ঘোর রাজ্য দখল করে ঘোর বংশের শাসনের অবসান ঘটান।
মুহাম্মদ ঘোরীর কৃতিত্ব
ভারতের ইতিহাসে শিহাবউদ্দিন মুহাম্মদ ঘোরীর স্থান যে অতি উচ্চে সে সম্পর্কে বিতর্কের অবকাশ নেই।
অধ্যাপক খালিক আহমদ নিজামী তাঁকে মধ্যযুগের সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম রূপে অভিহিত
করেছেন। মুসলমানদের ভারত অভিযানের তৃতীয় পর্যায়ে মুহাম্মদ ঘোরীর নেতৃত্বেই ভারতে দীর্ঘস্থায়ী
মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। মুহাম্মদ ঘোরী ছিলেন একজন সামরিক প্রতিভা সম্পন্ন ব্যক্তি। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা
গিয়াসউদ্দিন ঘোরীর অধীনে গজনীর শাসনকর্তা হিসাবে তাঁর জীবন শুরু হলেও নিজ প্রতিভা ও দক্ষতাবলে
তিনি ভারতে মুসলমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার সূচনা করেন। তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত হয়েও তিনি
হতোদ্যম হননি। পরের বছর একই স্থানে তিনি হিন্দুদের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে উত্তর ভারতে
মুসলমান রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। ভারতের রাজনৈতিক কাঠামোর দূর্বলতার সুযোগ তিনি গ্রহণ
করেছিলেন। সুলতান মাহমুদের মত বহু হিন্দুমন্দির ধ্বংস করলেও তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ছিল প্রখর।
তিনি ধন-রতœ লুঠ করেই ক্ষান্ত হননি; শুরু থেকেই ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনের উদ্দেশ্যেই তিনি এদেশে
বারম্বার অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। সে জন্যই কোনো অঞ্চল জয় করার পর তিনি সেখানে স্থায়ী
শাসনব্যবস্থা কায়েম করেন। তাঁর মৃত্যুর পর ঘোর সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে গেলেও ভারতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত
সাম্রাজ্য বহুদিন টিকে ছিল। ভারতে নিজের রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলেও তিনি তাঁর কয়েকজন
অনুচরকে যথাযোগ্য প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন যারা ভারতে তাঁর সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে সাহায্য
করেছিল। বিশ্বস্ত অনুচর নির্বাচনে তিনি তাঁর প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন। বস্তুত আইবক, ইয়ালদুজ,
কুবাচার মত অনুচররাই ছিল তাঁর সাফল্যের মূলস্তম্ভ। মুহাম্মদ ঘোরীর রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করে
তাকে নি:সন্দেহে ভারতে মুসলমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার অগ্রনায়ক বলা চলে।
সারা জীবন যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত থাকায় জ্ঞান-বিজ্ঞান বা শিল্পের প্রতি নজর দেওয়ার তেমন কোনো সময়সুযোগ তিনি পাননি। তবুও ঘোরের সাংস্কৃতিক বিকাশে তাঁর অবদান তুচ্ছ নয়। তাঁর আমলে ঘোর শিক্ষাসংস্কৃতির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। বিখ্যাত দার্শনিক ও পন্ডিত ফখরউদ্দিন রাজী এবং কবি নিজামি তাঁর
দরবার অলঙ্কৃত করেছিলেন। ইউ. স্ক্রেটো মনে করেন যে গজনীতে দৃষ্ট চকচকে টালির ব্যবহার মুহাম্মদ
ঘোরীর আমলেই শুরু হয়েছিল। দানশীলতার ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতার প্রশংসা করেছেন। ফিরিশতা
তাঁকে একজন খোদা-ভক্ত, জনকল্যাণকামী ও ন্যায়বান সুলতান রূপে অভিহিত করেছেন। মুহাম্মদ ঘোরী
ন্যায়বিচারক ছিলেন। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির প্রতিও তিনি যতœশীল ছিলেন।
জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা গিয়াসউদ্দিনের প্রতিনিধিরূপেই মুহাম্মদ ঘোরী ভারত অভিযান করেছিলেন। তিনি বড় ভাইয়ের
শ্রেষ্ঠত্ব ও সার্বভৌমত্ব মেনে চলতেন। যুদ্ধের সময় লুণ্ঠিত গণিমতের মালের মূল্যবান জিনিষগুলোও তিনি
বড় ভাইয়ের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। তাঁর ভ্রাতৃ-ভক্তি ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

সুলতান মাহমুদ ও মুহাম্মদ ঘোরীর জীবনী পর্যালোচনা করলে দুজনের মধ্যে যেমন কিছু কিছু সাদৃশ্য দেখা
যায় তেমনি কিছু কিছু বৈসাদৃশ্যও লক্ষ করা যায়। দুজনই তরবারির মাধ্যমে যশ অর্জন করেছিলেন। কিন্তু
সমরনায়ক হিসাবে সুলতান মাহমুদের তুলনায় মুহাম্মদ ঘোরী প্রায় অখ্যাত রয়ে গেছেন। সামরিক অভিযানে
সুলতান মাহমুদ ভারতে বা ভারতের বাইরে কোথায়ও কখনো পরাজয় বরণ করেননি। কিন্তু মুহাম্মদ ঘোরী
১১৭৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটে এবং ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন।
সুলতান মাহমুদ এবং মুহাম্মদ ঘোরী দুজনই গজনী থেকে তাঁদের ভারত অভিযানে অগ্রসর হয়েছিলেন।
সুলতান মাহমুদ ছিলেন গজনীর স্বাধীন ও সার্বভৌম সুলতান, অন্যদিকে মুহাম্মদ ঘোরী ছিলেন জ্যেষ্ঠভ্রাতা
গিয়াসউদ্দিন ঘোরীর অধীনে গজনীর শাসনকর্তা। অবস্থানগত এই পার্থক্য এ দুজনের সামরিক সুযোগসুবিধার কিছু পার্থক্য সৃষ্টি করেছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই- তবে এ দুজনের অভিযানের উদ্দেশ্যও ছিল
ভিন্নতর। সুলতান মাহমুদ ভারত আক্রমণ করেছিলেন মূলত: ধন-রতেœর লোভে। ভারত থেকে ধন-রতœ
নিয়ে তিনি গজনী সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলেছেন। নিরাপত্তার খাতিরে পাঞ্জাব ও সিন্ধু
রাজত্বকালের প্রায় শেষভাগে নিজের অধিকারে রাখলেও ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনের কোনো উদ্দেশ্য সুলতান
মাহমুদের ছিলনা। মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে স্থাপিত সাম্রাজ্যের সঙ্গে ভারতকেও যুক্ত করলে তা
শাসন করা হবে অসম্ভব Ñ এ বাস্তব উপলব্ধি থেকেই সুলতান মাহমুদ ভারতের বিজিত অঞ্চলগুলো নিজ
সাম্রাজ্যভুক্ত করেননি। অন্য দিকে মুহাম্মদ ঘোরী শুরু থেকেই এদেশে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য
নিয়েই ভারত অভিযানে বের হয়েছিলেন। এর অবশ্য বাস্তব কারণও ছিল- খাওয়ারিজমের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দি¡তা
করে মধ্য এশিয়ায় সাম্রাজ্য স্থাপন করা মুহাম্মদ ঘোরীর পক্ষে সম্ভব ছিলনা বলেই তিনি ভারতের প্রতি দৃষ্টি
নিবদ্ধ করেন এবং এদেশের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এখানে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হন। কাজেই বলা যায়
যে দুজনই ছিলেন বাস্তববাদী ও নিজ নিজ উদ্দেশ্য সাধনে সফল।
মানুষ ও শাসক হিসাবে সুলতান মাহমুদ মুহাম্মদ ঘোরীর চেয়ে অনেক বেশি খ্যাতিমান। মুহাম্মদ ঘোরী
ছিলেন মূলত: একজন রণ-নেতা। যুদ্ধ বিগ্রহ ও সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় তাঁর সারা জীবন কেটে যায়। ফলে
জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করার তেমন সময় বা সুযোগ কোনোটাই তাঁর ছিল না।
তবুও তিনি স্বল্প পরিসরে তা করার চেষ্টা করেছিলেন। অন্যদিকে এ ক্ষেত্রে সুলতান মাহমুদের ছিল
বিশ্বজোড়া খ্যাতি। তাঁর দরবার ছিল কবি, জ্ঞানী-গুণী, শিল্পী-সাহিত্যিকদের মিলনক্ষেত্র। এ ক্ষেত্রে সুলতান
মাহমুদের তুলনায় মুহাম্মদ ঘোরী নিস্প্রভ। তবে ভারতে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অগ্রনায়ক
এবং সে কারণেই মুহাম্মদ ঘোরী ভারতের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
মুহাম্মদ ঘোরীর ভারত অভিযানের সাফল্যের কারণ
বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্নভাবে মুহাম্মদ ঘোরীর ভারত অভিযানের সাফল্যের কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা
করেছেন। হাসান নিজামি, মিনহাজ এবং ফখর-ই-মুদাব্বিরের মত সমসাময়িক ঐতিহাসিকরা এর কোনো
ব্যাখ্যা দেননি, যদিও শেষোক্ত জন তুর্কিদের অশ্বারোহী সৈন্য ও ভারতের সামন্ত প্রথাকে এই সাফল্যের
কারণ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। স্যার যদুনাথ সরকারের মতে, ইসলাম তাঁর অনুসারীদের তিনটি বিশিষ্ট
গুণের অধিকারী করেছিল যা আরব, বার্বার, পাঠান এবং তুর্কিদের মত স্বভাবসিদ্ধ সৈনিকদের বিস্ময়কর
সামরিক দক্ষতার অধিকারী করেছিল। প্রথমত, আইনসম্মত পেশাগত অবস্থান ও ধর্মীয় সুযোগ-সুবিধার
ক্ষেত্রে ছিল সমযোগ্যতা ও সংহতি। ফলে জাতি ও বর্ণের সব বৈষম্য দূরীভ‚ত করে সবাই ভ্রাতৃত্ববন্ধনে
আবদ্ধ হতে পেরেছিল। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ্র যা ইচ্ছা তাই হবে- এ অদৃষ্টবাদ যুদ্ধে তাদের মরণপণ লড়াই
করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তৃতীয়ত, মদ্যপান ইসলামে নিষিদ্ধ এবং যে কোনো মুসলমান রাষ্ট্রে আইনত দন্ডনীয়
অপরাধ বলে বিবেচিত। অন্যদিকে রাজপুত, মারাঠা এবং অন্যান্য হিন্দু সৈন্যদের ধ্বংসের কারণ ছিল
মদ্যাসক্তি। মদ্যাসক্ত হিন্দু সেনাধ্যক্ষ ও সৈন্যরা দূরদর্শী সামরিক পরিকল্পনা প্রণয়নে এবং সুচারুরূপে যুদ্ধ
পরিচালনায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কোনো কোনো ঐতিহাসিক ভারতীয়দের শান্তিবাদ ও যুদ্ধের প্রতি
ঘৃণাকে তাদের পরাজয়ের কারণ হিসাবে বিবেচনা করেছেন যা ঠিক নয়। যুদ্ধ ছিল রাজপুতদের পেশা এবং
একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীর ভারতীয় ইতিহাস অন্তর্ঘাতী সংগ্রাম, যুদ্ধ সংঘাতে পরিপূর্ণ। মুসলমানদের ধর্মীয়


উন্মাদনাকে কেউ কেউ এ সাফল্যের কারণরূপে গণ্য করেছেন। এ সাফল্যের পিছনে ধর্মীয় উৎসাহ কিছুটা
দায়ী হলেও হতে পারে, তবে শুধু এটাই একমাত্র কারণ ছিল না। তাছাড়া মনে রাখা প্রয়োজন যে ভারতআক্রমণকারী সকল তুর্কি উপজাতি সম্পূর্ণভাবে তখনো ধর্মান্তরিত হয়নি।
ভারত বিজয়ে তুর্কিদের সাফল্যের অনেক কারণ ছিল। ভারতীয়দের পরাজয়ের বড় কারণ ছিল তাদের
সমাজ-ব্যবস্থা ও বিদ্বেষজনক বর্ণ-বৈষম্য যা তাদের সামরিক সংগঠনকে দূর্বল করে ফেলেছিল। বর্ণবৈষম্য
সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐক্যের মূলে কুঠারাঘাত করেছিল।এমনকি ধর্মেও ছিল এক বিশেষ শ্রেণীর
একাধিপত্য। ফলে ঘোরীর আক্রমণের সম্মুখীন হলে ভারতীয়দের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলার মত
তাদের কিছুই ছিলনা। পক্ষান্তরে মুসলমানদের মধ্যে জাতিভেদ না থাকায় তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করতে
পেরেছিল।
বর্ণভেদ-প্রথা রাজপুতদের সামরিক দক্ষতাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। যুদ্ধ একটি শ্রেণীর পেশা হওয়ায় সেই
শ্রেণী থেকেই সৈনিকদের নির্বাচন করতে হতো। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সামরিক প্রশিক্ষণের সুযোগ থেকে ছিল
বঞ্চিত। নিম্নবর্ণের মানুষের স্পর্শ উচ্চবর্ণের ধর্মনষ্ট করে এ ধারণার কারণে সৈন্যদের মধ্যে শ্রম-বিভক্তি
সম্ভব ছিল না। ফলে একই লোককে যুদ্ধ করা থেকে পানি আনা, রান্না করা ইত্যাদি সব কাজই করতে হতো
যা সেনাবাহিনীর কার্যকারিতা অনেক কমিয়ে ফেলে।
মধ্য এশিয়ায় যুদ্ধরীতির অগ্রগতি সম্পর্কে ভারতীয়রা ছিল অজ্ঞ। ভিনসেন্ট স্মিথ যেমন বলেছেন যে, কোনো
হিন্দু সেনানায়ক শত্রুর যুদ্ধ কৌশল শিখে নিজেদের সামরিক দক্ষতা বৃদ্ধির কোনো চেষ্টা কোনোদিনই করেন
নি। আলেকজান্ডারের আমল থেকেই বিদেশীদের যুদ্ধ কৌশলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়ে আসছিল। কিন্তু
তবুও ভারতীয় রাজারা সামরিক পদ্ধতির কোনো পরিবর্তন বা উন্নতি করার চেষ্টা করেননি। সামরিক ক্ষেত্রে
ভারতীয়দের স্থবিরতা তাদের পরাজয়ের একটা বড় কারণ।
মুসলমান আক্রমণকারীরা এক নেতার অধীনে যুদ্ধ করতো। অন্যদিকে হিন্দু-রাজারা কখনো কখনো
ঐক্যবদ্ধ হলেও তাদের সেনাবাহিনী বিভিন্ন রাজার নেতৃত্বে যুদ্ধ করতো। সর্বময় একক অধিনায়কত্বের
অভাব তাদের পরাজয়ের একটা কারণ ছিল। তাছাড়া মুসলমান আক্রমণকারীদের মধ্যে শৃ´খলা,
নিয়মানুবর্তিতা এবং সংগঠন ক্ষমতা ছিল অত্যধিক। বিচ্ছিন্ন ও পরস্পর বিবদমান হিন্দুরাজাদের পক্ষে
সুসংহত ও শৃ´খলাবদ্ধ মুসলমান আক্রমণকারীদের প্রতিহত করা ছিল কঠিন।
গতিময়তা ছিল তুর্কিদের সামরিক সংগঠন ও সাফল্যের চাবিকাঠি। প্রধানত যুদ্ধাস্ত্রে সুসজ্জিত দ্রুতগতি
সম্পন্ন অশ্বারোহী সৈনিক ছিল তুর্কি বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অন্যদিকে ভারতীয়রা ছিল বিশালাকৃতির কিন্তু
শ্লথ-গতির হাতির ওপর বেশি নির্ভরশীল। যুদ্ধক্ষেত্রে হাতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ রাখাও ছিল কষ্টসাধ্য। দ্রুতগতি
সম্পন্ন তুর্কি অশ্বারোহী বাহিনী সহজেই ভারতীয় হস্তিবাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তাছাড়া
তুর্কিদের রসদ বহনকারী হিসাবে ব্যবহৃত হতো দ্রুতগামী উট, যার জন্য আলাদা কোনো পশু-খাদ্যের
প্রয়োজন হতো না, পথের পাশের ঘাস-পাতা খেয়েই এদের চলতো। অন্যদিকে হিন্দুদের রসদ বহন করতো
যেসব পশু সেগুলো ছিল ধীরগতি সম্পন্ন।
গতিময়তা ছাড়াও, আর. সি. স্মেইল যেমন উল্লেখ করেছেন, তুর্কিদের কৌশলগত দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য ছিল
তাঁদের ধনুর্বিদ্যা। চলন্ত অবস্থায় ঘোড়ার পিঠে বসেই তাঁরা তীর ছুঁড়ত। এর ফলে তাঁরা ভারতীয়দের বিশাল
কিন্তু ধীর গতিসম্পন্ন হাতির বিপরীতে কিছুটা অতিরিক্ত সুবিধা লাভ করেছিল।
মধ্য এশিয়ার পর্বতসঙ্কুল শীতপ্রধান দেশের দুর্ধর্ষ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গ্রীষ্মপ্রধান ভারতীয়দের দুর্বলতা
সহজেই অনুমেয়। তাছাড়া তুর্কিরা দেশ থেকে বহুদূরে এসে যুদ্ধ করেছিল। তাঁদের সামনে দুটো পথ খোলা
ছিল- হয় যুদ্ধ করে জয়ী হওয়া, অথবা নিশ্চিত মৃত্যু, পালাবার কোনো উপায় তাঁদের ছিলনা।ঘোরীরাও
সুলতান মাহমুদের মত মধ্য এশিয়ায় একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেলজুক তুর্কি ও
খাওয়ারিজমের শাহের বিরোধীতার কারণে সে চেষ্টা সফল হয়নি। কাজেই বাধ্য হয়েই তাঁরা ভারতে
এসেছিল। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এদেশ দখল করা ছাড়া তাঁদের কোনো বিকল্প ছিলনা।


ভারত জয়ের ফলাফল
মুহাম্মদ ঘোরী উত্তর ভারত জয় ক্রমে ক্রমে কিন্তু অনিবার্যভাবে এদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,
সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছিল। একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীর বহু রাজ্যে
বিভক্ত উত্তর ভারত এখন অসীম ক্ষমতার অধিকারী একজন সুলতানের নিয়ন্ত্রণে আসে।কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন
রাজনৈতিক সংগঠন ছিল প্রাথমিক তুর্কি সুলতানদের আদর্শ।
বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে ভারতীয় রাজারা নিজেদের মধ্যে বহু যুদ্ধ করেছিল। প্রচুর প্রাণহানি ও রক্তপাত
ঘটেছে, কিন্তু হর্ষবর্ধনের পর কেউই উত্তর ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য সাধন করতে পারেনি। মুহাম্মদ
ঘোরীর অভিযানের ফলে একদল বিদেশী এক প্রজন্মে সে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেন। প্রধান শহর ও
যোগাযোগের রাস্তাগুলো দিল্লি-প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে এনে তাঁরা ক্ষুদ্র আকারে সর্ব-ভারতীয় প্রশাসনের সূচনা
করে।
স্যার যদুনাথ সরকার যথার্থই বলেছেন, প্রাথমিক বৌদ্ধ আমলে এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের যে
যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল অষ্টম শতাব্দীতে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ভারত আবার আত্ম-কেন্দ্রিক ও
বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দ্বাদশ শতাব্দীর শেষদিকে মুসলমানদের বিজয়ের ফলে এশিয়ার
অন্যান্য অঞ্চল ও আফ্রিকার নিকটতম অংশের সঙ্গে সে যোগাযোগ পুন:স্থাপিত হয়েছিল।
তুর্কিদের উত্তর ভারত জয়ের প্রভাব নগরগুলোর ওপরও পড়েছিল। রাজপুতদের পুরনো জাত-ভিত্তিক
শহরগুলো এখন উঁচু নিচু, শ্রমিক ও কারিগর, হিন্দু ও মুসলমান, চন্ডাল ও ব্রাহ্মণ-সকলের জন্যই অবারিত
হয়। শ্রমিক, কারিগর, নিচু বর্ণের মানুষ সবাই নতুন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে নতুন নতুন
শহর গড়ে তোলে। অধ্যাপক হাবিব একে বলেছেন ‘শহুরে বিপ্লব'।
ভারতীয় বাহিনীর প্রকৃতি ও গঠনে, তাদের নির্বাচন পদ্ধতি ও রক্ষণাবেক্ষণে তুর্কিদের বিজয়ের সামরিক
প্রভাব লক্ষ করা যায়। আগে যুদ্ধ করা ছিল বিশেষ এক বর্ণ বা শ্রেণীর একাধিকার, এখন সেটা
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, যুদ্ধ করতে সক্ষম ও ইচ্ছুকদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে শক্তিশালী স্থায়ী
সেনাবাহিনীর সৃষ্টি হয়। রণনীতি ও কৌশলেও ভারতীয়রা মধ্য এশিয়ার সমকক্ষ হয়ে ওঠে। পদাতিক
সৈন্যের স্থানে অশ্বারোহীরা প্রাধান্য লাভ করে, হাতির পরিবর্তে ভারতীয় বাহিনীতে অশ্বের ব্যবহার
অনেকগুণে বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের পুনর্গঠিত বাহিনীর পক্ষেই মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব ছিল।
বহির্জগতের সঙ্গে যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও নতুন নতুন শহর গড়ে ওঠার ফলে বাণিজ্যেও উন্নতি ও প্রসার
ঘটেছিল। একই ভাবে আইন, শুল্ক ও মুদ্রাব্যবস্থা স্থানান্তরে ভ্রমণ ও পণ্যবহনের সহায়ক হয়েছিল।
প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত ও সরকারি ভাষার ক্ষেত্রেও তুর্কি-বিজয়ের প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। আগের
আমলে প্রশাসনিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত উপভাষা ও ভাষাগুলো ছিল বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম।
সমগ্র ভারতীয় ঘোর সাম্রাজ্য সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পর্যায়ে ফার্সির প্রচলনের ফলে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত
ভাষায় সমরূপতা আসে।
ধর্মের ক্ষেত্রেও মুহাম্মদ ঘোরীর উত্তর ভারত জয়ের প্রভাব পড়ে। তাঁর আক্রমণের সময় বহু বিখ্যাত
মুসলমান সুফি-দরবেশ ভারতে এসেছিলো। মুসলমান সুফিরা বিভিন্ন তরীকায় বিভক্ত ছিলেন। প্রথম দিকে
ভারতে আসা সুফিরা সোহরাওয়ার্দীয়া এবং চিশতিয়া তরীকায় বিভক্ত ছিলেন। শেখ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া
(১১৮২-১২৬৭ খ্রি:) ভারতে সোহরাওয়ার্দীয়া তরীকার গোড়াপত্তন করেন। তিনি মুলতানে বসবাস করতেন
এবং মুলতানকে কেন্দ্র করে পশ্চিম পাকিস্তান অঞ্চলে এই তরীকা জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই তরীকার
সুফিরা ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি এবং তাঁরা জনসাধারণের সার্বিক উন্নতির চেষ্টা করতেন। এমনকি
তাঁরা মোঙ্গল আক্রমণের সময়ও নিরীহ জনসাধারণের নিরাপত্তার প্রতি লক্ষ রাখতেন। এই তরীকার আরেক
জন সুফি দরবেশ শেখ জালালউদ্দিন তাব্রিজি সুলতান ইলতুৎমিশের রাজত্বকালে বাংলায় এসেছিলেন এবং
এখানে ইসলাম বিস্তারে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন।
ভারতে চিশতিয়া তরীকার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শেখ মঈনউদ্দিন চিশতি। তিনি ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ
ঘোরীর ভারত বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে এদেশে আসেন। লাহোরে কিছুদিন অবস্থানের পর তিনি আজমীরে চলে


যান এবং সেখানেই ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন ভারতের সুফি দরবেশদের মধ্যে
শ্রেষ্ঠ। তিনি ‘সুলতান-উল-হিন্দ‘ বা হিন্দুস্তানের আধ্যাত্মিক সুলতান রূপে পরিচিত।
দিল্লি সালতানাতের প্রাথমিক যুগের সুফি দরবেশদের মধ্যে খাজা কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী, নজমউদ্দিন
(সুঘরা), কাজি হামিদউদ্দিন নাগোরী, বাবা ফরিদ প্রমুখ ছিলেন বিখ্যাত। তাঁরা এদেশে ইসলাম ধর্ম প্রচারে
বিশেষ অবদান রেখেছিলেন।এই সব সুফিদের ইসলামের বাণী প্রচারের ফলে ও তাঁদের সহজ-সরল
জীবনযাত্রায় আকৃষ্ট হয়ে বহু লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল।
সারসংক্ষেপ
ভারতে মুসলিম আগমনের তৃতীয় পর্যায়ের নায়ক ছিলেন গজনীর শাসনকর্তা মুহাম্মদ ঘোরী এবং এই
অভিযানের ফলে ভারতে মুসলমানদের দীর্ঘস্থায়ী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মূলত, মুহাম্মদ ঘোরীর
এশিয়ায় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতাই ভারত অভিযানে তাঁকে আগ্রহী করে তোলে। এ সঙ্গে যুক্ত
হয়েছিল উত্তর ভারতের হিন্দু রাজাদের অনৈক্য ও অন্তর্বিবাদ। ১১৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতে তাঁর
প্রথম অভিযান পরিচালনা করেন। অত:পর ১১৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কয়েকবার অভিযান চালিয়ে তিনি
মুলতান, উচ দুর্গ, পেশোয়ার, লাহোর, পাঞ্জাব, সরহিন্দ অধিকার করেন। কিন্তু রাজপুতরা তাঁর
অগ্রগতি রোধ করে। আজমীর ও দিল্লির চৌহান রাজা পৃথ্বিরাজের নেতৃত্বে উত্তর ভারতীয় হিন্দু
রাজাদের সম্মিলিত জোটের বিরুদ্ধে ১১৯১ সালের তরাইনের প্রথম যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন। স্বদেশ
প্রত্যাবর্তনের পর তিনি পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এক বিশাল সৈন্যবাহিনী গঠন করেন।
১১৯২ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের প্রান্তরে পুনরায় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘোরী জয়লাভ
করেন। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন। ভারতে দীর্ঘস্থায়ী মুসলমান শাসন
প্রতিষ্ঠার অগ্রনায়ক হিসেবে তিনি ভারতের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১. মুহাম্মদ ঘোরী ছিলেনÑ
(ক) গিয়াসউদ্দিন ঘোরীর ভ্রাতা (খ) ইলতুৎমিশের পিতা
(গ) সুলতান মাহমুদের পুত্র (ঘ) গিয়াসউদ্দিন বলবনের পৌত্র
২. মুহাম্মদ ঘোরী ছিলেনÑ
(ক) ইরানি (খ) মোঙ্গল
(গ) তুর্কি (ঘ) সেলজুক
৩. তরাইনের ১ম যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেনÑ
(ক) খসরু মালিক (খ) জয়চন্দ্র
(গ) পৃথ্বিরাজ (ঘ) রাণা প্রতাপ
৪. তরাইনের ২য় যুদ্ধ হয়েছিলÑ
(ক) ১০৮৬ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে
৫. মুহাম্মদ ঘোরী মারা যানÑ
(ক) ১১৯৫ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১২১০ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১২২৮ খ্রিস্টাব্দে
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। মুহাম্মদ ঘোরী সম্পর্কে একটি টীকা লিখুন।


২। রাজপুতদের সাথেমুহাম্মদ ঘোরীর সংঘর্ষের বিবরণ দিন।
৩। ভারত আক্রমণকারী হিসেবে সুলতান মাহমুদ ও মুহাম্মদ ঘোরীর তুলনামূলক পর্যালোচনা করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। মুহাম্মদ ঘোরীর ভারত আক্রমণের কারণ উল্লেখপূর্বক ভারত বিজয়ের বিবরণ দিন।
২। ভারত বিজয়ে মুহাম্মদ ঘোরীর সাফল্যের কারণ আলোচনা করুন।
৩। মুহাম্মদ ঘোরীর ভারত জয়ের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]