আলাউদ্দিন খলজীর দাক্ষিণাত্য নীতি পর্যালোচনা করুন। এ নীতির সাফল্য-ব্যর্থতা সম্পর্কে আপনার মতামত দিন।


খলজী বংশের উৎপত্তি
খলজী বংশের উৎপত্তি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। মুসলমান ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন
বারাণী বলেন, দিল্লিতে কাচান ও সুরখা'র নেতৃত্বে তুর্কি দল এবং জালালউদ্দিন খলজীর নেতৃত্বে খলজী দল
পরস্পরের সাথে প্রতিদ্বন্দি¡তায় অবতীর্ণ হয়েছিল। খলজীগণ ছিল তুর্কি জাতি হতে সম্পূর্ণ পৃথক ও স্বতন্ত্র।
এর বেশি কোনো বর্ণনা বারাণী দেননি। পরবর্তী ঐতিহাসিক নিজামউদ্দিনের মতে, খলজীগণ ছিল চেঙ্গিস
খাঁর জামাতা কুলিজ খাঁ'র বংশধর। কুলিজ খাঁ'র নামানুসারে তাঁর বংশধরগণ ‘কালিজ' ও ‘খালিজ' নামে
পরিচিত হয়। নিজামউদ্দিনের এই মত সমর্থন করে ঐতিহাসিক ফিরিস্তা কালিজ খাঁকে খলজী বংশসম্ভূত
এবং জালালউদ্দিন খলজীকে কুলিজ খাঁর বংশধর বলে অভিহিত করেন। যাহোক, গভীরভাবে বিচার করলে
খলজীগণকে তুর্কি বংশসম্ভূত বলেই মনে হয়। আফগানিস্তানের হেলমন্দ নদীর উপক‚ল অঞ্চল ‘খলজী
অঞ্চল' এবং এখানকার অধিবাসীগণ ‘খলজী' নামে পরিচিত।‘তাবাকাৎ-ই-নাসিরি' গ্রন্থের রচয়িতা মিনহাজউস-সিরাজ বলেন যে, খলজীগণ ঘোর ও গজনী রাজবংশের অধীনে বহু যুদ্ধ-বিগ্রহে অংশগ্রহণ করেছিল।
আধুনিককালের ঐতিহাসিক লেনপুল অনুমান করেন যে, খলজী বংশ তুর্কি জাতি হতে উদ্ভূত এবং দীর্ঘকাল
আফগানিস্তানের গরম্শির নামক অঞ্চলে বসবাস করার ফলে তাঁদের মধ্যে আফগান জাতির বহু আচারআচরণ, রীতি-নীতি প্রবেশ করে। মধ্য এশিয়ার ইতিহাসের বিশেষজ্ঞ বারথোল্ড (ইধৎঃযড়ষফ)-এর মতে,
খলজীগণ ছিল তুর্কি এবং এরা খ্রিস্টিয় চতুর্থ অব্দের পর আফগানিস্তানে বসতি স্থাপন করেন।
মোটামুটিভাবে একথাটি বলা যেতে পারে যে, খলজীগণ অবশ্যই তুর্কি ছিলেন। প্রথমদিকে তাঁরা গজনী ও
ঘোরের আক্রমণকারীদের সাথে ভারতে প্রবেশ করেন এবং অনেকে মধ্য এশিয়া ও আফগানিস্তানে মোঙ্গল
আক্রমণের সময় আশ্রয়ের সন্ধানে ভারতে আসে। কিন্তু ভারতে বহুদিন ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ইলবারি
তুর্কিগণ নবাগত খলজীগণকে কখনোই মনে-প্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি, যদিও উভয়েই এক জাতি বা
গোষ্ঠীভুক্ত ছিল।
খলজী বংশের উত্থান: জালালউদ্দিন খলজী
ইলবারি তুর্কি বংশের শেষ সুলতান কায়কোবাদকে হত্যা করে জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজী ১২৯০
খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। খলজীদের উত্থান ভারতের ইতিহাসে ‘খলজী বিপ্লব' (কযধষলর
জবাড়ষঁঃরড়হ) নামে অভিহিত হয়েছে। জালালউদ্দিন খলজীর পূর্বপুরুষেরা তুর্কি জাতীয় লোক ছিলেন।
ভারতীয় উপমহাদেশে তুর্কি অভিযান শুরু হওয়ার সাথে সাথে আক্রমণকারীদের সঙ্গে ভারতে তাঁদের
আগমন ঘটে। শুরু থেকেই খলজীরা ভারতের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শাসনকার্যে লিপ্ত হয়েছিলেন।
জালালউদ্দিন খলজীর সাফল্যের মাধ্যমে তাঁদের ক্ষমতা উচ্চ শিখরে উপনীত হয়। খলজীদের এই



শক্তিবৃদ্ধিতে ইলবারি তুর্কিদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তুর্কিরা খলজীদেরকে অ-তুর্ক মনে করতো। এ
কারণে জালালউদ্দিন খলজী শক্তিশালী তুর্কি ওমরাহ্গণের স্বত:প্রবৃত্ত আনুগত্য হতে বঞ্চিত হন। এমনকি
কৈলুগড়ি প্রাসাদে অভিষেক হবার পরও তিনি অনেকদিন পর্যন্ত দিল্লিতে প্রবেশ করতে পারেননি। যাহোক,
কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সিংহাসনে উপবেশন করেন। জায়গীর ও সরকারি চাকুরির বন্টনে সুলতান তাঁর পুত্র
ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করেন; অবশ্য কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তুর্কি আমীরওমরাহ্গণের মনোরঞ্জনের চেষ্টাও তিনি করেন। বলবন পরিবারের সদস্য এবং প্রবীন ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা
প্রদর্শনের মাধ্যমে সুলতান অনেকের আস্থা ও আনুগত্য লাভ করেন। কিন্তু যে ব্যক্তি ‘বলবনের সিংহাসনকক্ষের সামনে অশ্রু বিসর্জন করতেন' তিনি বলবনের পরিত্যক্ত বিশাল রাজ্য শাসনের যোগ্য কিনা সে বিষয়ে
রাজ্যের নবীনেরা সন্দেহ পোষণ করতেন। জালালউদ্দিনের দুর্বলতাও ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়। তিনি
বিদ্রোহী বন্দিদের মুক্ত করে দেন, তাদেরকে পানসভায় আপ্যায়ন করেন; পরকালের চিন্তায় রক্তপাত থেকে
বিরত থাকেন; গ্রেপ্তারকৃত সহস্রাধিক ‘ঠগ' কে শাস্তি প্রদানে ব্যর্থ হন এবং সামগ্রিকভাবে তাঁর সম্পর্কে
জনগণের ধারণা হয় যে, তিনি ঈশ্বরের কৃপাধীন নন।
রণথম্ভোরের বিরুদ্ধে প্রেরিত এক অভিযানই (১২৯১ খ্রি:) ছিল সুলতানের একমাত্র উল্লেখযোগ্য সামরিক
প্রয়াস। মোঙ্গলদের বিরুদ্ধেও জালালউদ্দিন কিছুটা শক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন। ১২৯২ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গলদের
এক বাহিনী সিন্ধু নদ অতিক্রম করে সুনাম পর্যন্ত অগ্রসর হলে সুলতান তাদেরকে পরাজিত করেন।
খলজী বিপ্লবের গুরুত্ব
ইলবারি তুর্কিদের বিরুদ্ধে খলজীদের সাফল্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবকের সময় হতে
ইলবারি তুর্কিরা দিল্লিতে জেঁকে বসে। তারা নিজেদেরকে দিল্লির সিংহাসনের ধারক ও বাহক মনে করতো।
তুর্কিরা মনে করতেন তাঁরাই একমাত্র অভিজাত শ্রেণী। অন্য কেউ তাঁদের আভিজাত্য ক্ষুন্ন করুক এটা তাঁরা
সহ্য করতেন না। কিন্তু জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজীর সাফল্য এবং দিল্লির সিংহাসন অধিকার ইলবারি
আভিজাত্যের ওপর চরম আঘাত হানে।এরপর থেকে খলজীদের সাথে অন্যান্য অ-তুর্ক মুসলমানদেরও
ক্ষমতা লাভের পথ প্রশস্ত হয়। মাত্র ত্রিশ বছর স্থায়ী খলজী শাসন দিল্লি সাম্রাজ্যের মোড় পরিবর্তন করতে
সমর্থ হয়। সকল স্তরের, সকল গোত্রের মুসলমানদের সমন¦য়ে তাঁরা এমন শক্তি সঞ্চয় করেন, যাতে শুধু
দিল্লি সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বৃদ্ধিই নয় বরং সুদূর দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত মুসলমান শাসনের সম্প্রসারণ ঘটে।
খলজীগণ এটাই প্রতিপন্ন করেন যে, ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমর্থন ছাড়াও রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও শক্তি অক্ষুন্ন রাখা
যায়। সর্বোপরি খলজীদের সাফল্য শুধু যে রাজবংশের পরিবর্তন ঘটায় তা নয়, এটা ভারতে মুসলমান
প্রভুত্বের সম্প্রসারণ, রাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন এবং শিক্ষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে অভাবনীয় উৎকর্ষ সাধন
প্রভৃতিরও সূত্রপাত করে। খলজীগণ কোন রাজপরিবারভুক্ত ছিলেন নাÑ রাজত্বসূচক কোন ঐতিহ্যও তাঁদের
ছিল না। তাঁরা ছিলেন সাধারণ শ্রেণীভুক্ত। সুতরাং খলজীদের সাফল্যে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সার্বভৌম
অধিকার কোনো বিশেষ শ্রেণীর একচেটিয়া নয়।
আলাউদ্দিন খলজী: প্রথম জীবন
সিংহাসনে আরোহণের পর জালালউদ্দিন খলজী তাঁর প্রিয় ভ্রাতুস্পুত্র ও জামাতা ‘আলি ঘুরশাস্প' কে
‘আমীর-ই-তুজুক' নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করেন। এই আলিই হলেন শ্রেষ্ঠ খলজী শাসক
আলাউদ্দিন খলজী।সুলতানি সাম্রাজ্যের একজন বিখ্যাত সুলতান হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে।
আলাউদ্দিনের বাল্যকাল সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। সম্ভবত ১২৬৬-৬৭ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন
জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় বিদ্যাশিক্ষার কোনো সুযোগ তাঁর হয়নি। কিন্তু তরুণ বয়সে তাঁকে অশ্বচালনা
ও অসিচালনায় বিশেষ শিক্ষা দেয়া হয়। তখন তিনি সামরিক নৈপুন্যের পরিচয়ও দেন। ১২৯১ সালে
বলবনের ভ্রাতুস্পুত্র মালিক চজু (মতান্তরে ছজ্জু) বিদ্রোহী হলে তিনি তাঁকে দমন করেন। এই কৃতিত্বের
পুরস্কারস্বরূপ আলাউদ্দিনকে এলাহাবাদের নিকটবর্তী কারা-মানিকপুরের জায়গীর দেয়া হয়। এরপর থেকেই


আলাউদ্দিনের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ প্রকাশ পেতে শুরু করে। মালিক চজুর অনুচরদের প্ররোচণায় এবং
অন্যান্য পারিপার্শ্বিক ও পারিবারিক পরিস্থিতিতে তিনি স্বাধীন ক্ষমতা লাভের সংকল্প করেন। কিন্তু এই
উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিক পরিকল্পনা রূপায়নের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। আলাউদ্দিন নিজের
অনুচরদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হন। বহু সেনা ও আমীর-ওমরাহ্ তাঁর দলভুক্ত হয়। এরপর অর্থ
সংগ্রহে তিনি কয়েকটি যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ১২৯২ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন ভিলসা নগর আক্রমণ করে প্রচুর
ধনরতœ সংগ্রহ করেন। ভিলসায় তিনি দেবগিরির যাদব রাজ্যের বিপুল সমৃদ্ধির কথা শুনেছিলেন। বিন্ধ্য পর্বত
অতিক্রম করে সেখানে আক্রমণের জন্য তিনি সংকল্প করেন। ১২৯৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি দাক্ষিণাত্যের পথে
যাত্রা করেন। আলাউদ্দিনের সাথে ৮ হাজার অশ্বারোহী ছিল। দেবগিরিতে তিনি সাফল্য লাভ করেন। বহু
অশ্ব ও হস্তি তাঁর হস্তগত হয়। যাদবরাজ রামচন্দ্র সন্ধি করেন এবং আলাউদ্দিনকে বিপুল পরিমাণে স্বর্ণ ও
রতœাদি প্রদানে রাজি হন। আলাউদ্দিনের দেবগিরি অভিযানের রয়েছে বিশেষ ঐতিহাসিক গুরুত্ব। কেননা,
বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে এটাই হলো মুসলমানদের প্রথম অভিযান। এ সময় হতেই দাক্ষিণাত্যে মুসলমানদের
সাম্রাজ্য বিস্তারের সূত্রপাত হয়। তদুপরি এ অভিযানে আলাউদ্দিন তাঁর রণ নৈপুন্য ও সাহসিকতা প্রদর্শন
করেন।
আলাউদ্দিনের সিংহাসনারোহণ
ধনসম্পদ নিয়ে আলাউদ্দিন কারায় ফিরে আসেন। কারায় তাঁর অনুপস্থিতিকালে সুলতানের বিশ্বস্ত কর্মচারীরা
সুলতানকে আলাউদ্দিন সম্পর্কে বুঝাবার চেষ্টা করেন যে, উচ্চাভিলাষী আলাউদ্দিনকে বিশ্বাস করা উচিত
নয়। কিন্তু সুলতান এ প্রচারণায় কান দেননি।আলাউদ্দিনের কনিষ্ঠ ভ্রাতা উলুঘ খাঁ দিল্লিতে আলাউদ্দিনের
স্বার্থের প্রতি লক্ষ রাখতেন। তিনি সুলতানকে আলাউদ্দিনের প্রতি বিশ্বস্ত রাখতে তৎপর ছিলেন।এমনকি
উলুঘ খাঁর পরামর্শ মতো সুলতান জালালউদ্দিন খলজী আলাউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।বলা হয়ে থাকে,
বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণার সাহায্যে পূর্বের ব্যবস্থা অনুযায়ী আলাউদ্দিনের ইঙ্গিতে দুজন দুর্বৃত্ত
জালালউদ্দিনকে হত্যা করে।নিহত সুলতানের মস্তক একটি বর্শাফলকে বিদ্ধ করে শাসনাধীন অঞ্চলে প্রদর্শন
করা হয় বলেও সমসাময়িক সূত্র থেকে জানা যায়। তবে অনেকে মনে করেন, সুলতানের হত্যাকান্ড
আলাউদ্দিনের পূর্বপরিকল্পনাপ্রসূত নয়। পরিস্থিতির বাস্তবতায় তাৎক্ষণিকভাবেই এটি ঘটেছে।যাহোক,
এরূপেই ১২৯৬ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে বসে তিনি জালালউদ্দিনের
পুত্র আরকালী খাঁকে পরাজিত করে নিজ অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। যে সকল আমীর-ওমরাহ্ অর্থলোভে
আলাউদ্দিনের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন তাঁদেরকে তিনি কঠোর শাস্তি দেন।কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন,
অর্থলোভী ব্যক্তিরা যে কোন সময়ই প্রভু বদল বা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে।
আলাউদ্দিনের সাম্রাজ্যবাদী নীতি
আলাউদ্দিন যুদ্ধপ্রিয় ও সাম্রাজ্যবাদী সুলতান ছিলেন। সিংহাসনে বসেই তিন দিগি¦জয় - নীতি গ্রহণ করেন।
তিনি নতুন এক ধর্ম প্রবর্তনেরও উদ্যোগ নেন। যাহোক আলেকজান্ডারের মতো বিশ্বজয়ের বাসনার
বাস্তবায়ন না হলেও আলাউদ্দিন ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ওপর আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালান।
সুতরাং, আলাউদ্দিনের সাম্রাজ্যবাদী নীতির মূল উদ্দেশ্য হিসেবে সমগ্র ভারতে সার্বভৌম রাজশক্তি প্রতিষ্ঠার
কথা বলা যেতে পারে। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আলাউদ্দিন একের পর এক যুদ্ধ শুরু করেন। প্রথমেই তিনি
মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করার দিকে মনোযোগ দেন। মোঙ্গলদের উপর্যুপরি আক্রমণের বিপরীতে ভারতের
নিরাপত্তা বিধান সুলতান আলাউদ্দিনের রাজত্বের একটি অন্যতম কীর্তি। ইলতুৎমিশের আমল থেকে
সুলতানি সাম্রাজ্যের সীমাকে বৃদ্ধি করার কোন চেষ্টা কোন সুলতান করেননি। আলাউদ্দিন খলজী শুরুতেই
তার পিতৃব্য জালালউদ্দিনের রাজত্বকালে দেবগিরি লুণ্ঠন করে তাঁর উচ্চাকাক্সক্ষা ও সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের
পরিচয় দেন। তিনি তাঁর সাম্রাজ্য সম্প্রসারণকে দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করে পরিচালনা করেনÑ প্রথমে উত্তর
ভারত এবং পরবর্তীতে দক্ষিণ ভারত।


উত্তর ভারত অভিযান: গুজরাট
সিংহাসনে আরোহণের পর আলাউদ্দিন খলজীর প্রথম অভিযান ছিল গুজরাট অভিযান। ১২৯৮ খ্রিস্টাব্দে
তিনি এই অভিযান প্রেরণ করেন। গুজরাট ছিল খুবই সমৃদ্ধশালী অঞ্চল। বাঘেলা রাজপুত বংশীয় কর্ণদেব
বা রায়করণ এ সময় গুজরাটের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আলাউদ্দিন তাঁর দুই সেনাপতি নসরৎ খান ও
উলুঘ খাঁকে গুজরাট জয়ের জন্য পাঠিয়ে দেন।রাজা কর্ণ আমেদাবাদের যুদ্ধে পরাজিত হন।রাণী কমলাদেবী
সুলতানের সৈন্যদের হাতে বন্দি হন। অত:পর আলাউদ্দিন তাঁকে বিয়ে করেন। রাজা কর্ণ তাঁর কন্যা
দেবলরানীসহ দক্ষিণে দেবগিরিতে পালিয়ে যান। আলাউদ্দিনের সৈন্যরা ক্যাম্বে বন্দর ও সোমনাথের মন্দির
লুণ্ঠন করে প্রচুর ধনরতœসহ দিল্লিতে ফিরে আসেন। ক্যাম্বেতে নসরৎ খান জনৈক খোজা মালিক কাফুরকে
কিনেন এবং সুলতানকে উপহার দেন। পরে মালিক কাফুর আলাউদ্দিনের প্রধান সেনাপতি হন।
রণথম্ভোর অভিযান
১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন রণথম্ভোর আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং আমীরদের সঙ্গে পরামর্শ
করে যুদ্ধের সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি উলুঘ খাঁ ও নসরৎ খানের নেতৃত্বে বিরাট সৈন্যবাহিনী
প্রেরণ করেন। সেনাপতিদ্বয় রণথম্ভোর অবরোধ করেন। অবরোধ চলাকালে সেনাপতি নসরৎ খান অবরোধ
কার্য পরিদর্শনের সময় হঠাৎ একটি গোলার আঘাতে আহত এবং কয়েকদিনের মধ্যে মৃত্যুমুখে পতিত হন।
রণথম্ভোরের রাজা রাণা হাম্মীর প্রায় দুই লক্ষ সৈন্যের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। উভয়পক্ষে ভীষণ যুদ্ধ
হয় এবং যুদ্ধে উলুঘ খাঁ অনেক ক্ষতি স্বীকার করে পশ্চাদপসরণ করেন। এই সংবাদ দিল্লি পৌঁছলে সুলতান
নিজে রণথম্ভোরের দিকে অগ্রসর হন, কিন্তু পথে তাঁর ভ্রাতুস্পুত্র আকাত খান তাঁকে অতর্কিত আক্রমণ
করেন।কয়েকজন অসন্তুষ্ট আমীরের প্ররোচণায় আকাত খান সুলতানকে হত্যা করে সিংহাসন দখলে
অভিলাষী হন। সুলতান আহত হন যদিও তাঁর আঘাত গুরুতর ছিল না, আকাত খানকে তৎক্ষণাত হত্যা
করা হয়।এছাড়াও সুলতানের বিরুদ্ধে অপর কয়েকটি বিদ্রোহাত্মক কার্যকলাপ সংঘটিত হয়। কিন্তু
সুলতানের সতর্কতার নিকট সকলেই নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। এসব বিপদ কেটে গেলে সুলতান
সর্বশক্তি প্রয়োগ করে রণথম্ভোর আক্রমণে মনোযোগ দেন। প্রায় এক বছর ধরে রণথম্ভোর দুর্গ অবরোধ
করার পর দিল্লি বাহিনী দেওয়াল টপকিয়ে দুর্গ অধিকার করে। রাণা হাম্মীরকে পরিবার-পরিজনসহ হত্যা
করা হয়। যে সকল সৈন্য শেষ পর্যন্ত বীরত্ব প্রদর্শন করে যুদ্ধ করে, তাদেরও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
চিতোর অভিযান
আলাউদ্দিন খলজীর অন্যতম বিখ্যাত অভিযান ছিল চিতোর আক্রমণ। তিনি ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে রাজপুতনার
সর্বশ্রেষ্ঠ রাজ্য মেবারের এই দুর্গ আক্রমণ করেন। চিতোর ছিল মেবার রাজ্যের রাজধানী। মেবারের
রাজবংশ ‘শিশোদিয়া বংশ' ছিল খুবই প্রাচীন ও সম্মানিত। চিতোরের রাণা রতন সিংহ আলাউদ্দিনের বশ্যতা
স্বীকারের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করলে সুলতান চিতোর অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, চিতোর দুর্গ বিরোধী
শক্তির হাতে থাকলে সুলতানি সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিপন্ন হবার আশঙ্কা ছিল। সুতরাং চিতোরের ওপর
দিল্লির আধিপত্য স্থাপন করার উদ্দেশ্যে তিনি এক শক্তিশালী বাহিনী প্রেরণ করেন। চিতোর দুর্গটি পাহাড়ের
ওপর অবস্থিত ছিল। আলাউদ্দিন খলজী বহু চেষ্টা করে সম্মুখ যুদ্ধে দুর্গ দখল করতে বিফল হন। রাজপুতরা
বীরবিক্রমে সুলতানি বাহিনীকে হঠিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত আলাউদ্দিন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে দুর্গের
প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলেন। প্রায় সাতমাস অতিবাহিত হওয়ার পর আর টিকতে না পেরে চিতোর রাজা
রতনসিংহ আত্মসমর্পণ করেন। রতন সিংহ আত্মসমর্পণের পূর্বে রাজপুত রমণীরা অগ্নিকুন্ডে ঝাঁপ দিয়ে
জহরব্রত পালন করে বলে কথিত আছে। প্রায় ত্রিশ হাজার রাজপুত সৈন্য নিহত হয়। কয়েকদিন চিতোর

থাকার পর পুত্র খিজির খানকে চিতোরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে সুলতান আলাউদ্দিন দিল্লি প্রত্যাবর্তন
করেন।
পদ্মিনী উপাখ্যান
আলাউদ্দিন খলজীর চিতোর আক্রমণকে কেন্দ্র করে একটি সুন্দর উপাখ্যান প্রচলিত আছে। কথিত আছে
যে, রাজা রতন সিংহ-এর সুন্দরী রাণী পদ্মিনীকে পাবার উদ্দেশ্যেই সুলতান আলাউদ্দিন চিতোর আক্রমণ
করেন; কিন্তু অনেক বিশ্বাসঘাতকতার পরও সুলতান পদ্মিনীকে তাঁর হারেমে আনতে সক্ষম হননি। ষোড়শ
শতকের মধ্যভাগে মালিক মুহাম্মদ জয়সী নামক এক কবি সর্বপ্রথম “পদ্মিনী উপাখ্যান” রচনা করেন এবং
এরপর পদ্মিনী উপাখ্যান লোক সমাজে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যদিও মুসলমান সুলতানদের হিন্দু রমণীর
পাণিগ্রহণ করার নজির আছে, বিশেষ করে সুলতান আলাউদ্দিন খলজীর হিন্দু রমণী বিয়ে করার প্রমাণও
আছে, তথাপি পদ্মিনী-উপাখ্যানের সত্যতা সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশও রয়েছে। সমসাময়িক কোন
ইতিহাস গ্রন্থে এর উল্লেখ নেই। এমনকি আমীর খসরু, যিনি চিতোর অভিযানে স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন,
তিনিও পদ্মিনী- উপাখ্যানের উল্লেখ করেননি। আধুনিক কোন কোন পন্ডিত মনে করেন যে, পদ্মিনী উপাখ্যান
একান্তই মালিক মুহাম্মদ জয়সীর কল্পনা-প্রসূত ভাবনার কাব্যিক রূপ মাত্র।
মালব জয়
চিতোর অধিকারের পর সুলতান আলাউদ্দিন মালব আক্রমণ করেন। মালবের রাজা অনেক যুদ্ধ করেও
পরাজিত হন এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। মালব জয়ের পর সুলতান সেখানে একজন মুসলমান
শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। এরপর সুলতান মান্ডু, উজ্জয়িনী এবং চান্দেরী ইত্যাদি এলাকা জয় করেন।
এভাবে সমগ্র উত্তর ভারত সুলতান আলাউদ্দিন খলজীর অধিকারে আসে।
দাক্ষিণাত্য অভিযান
উত্তর ভারত বিজিত হওয়ার পর সুলতান আলাউদ্দিন খলজী দাক্ষিণাত্য বিজয়ের দিকে মনোনিবেশ করেন।
দাক্ষিণাত্যের ভৌগোলিক অবস্থান এবং দিল্লি হতে দূরত্ব-এই উভয় কারণে দাক্ষিণাত্য বিজয় মুসলমানদের
জন্য একরূপ অসম্ভব ছিল। দক্ষিণে এই সময় চারটি হিন্দু রাজ্য ছিল, যেমন বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণ-পশ্চিমে
দেবগিরি রাজ্য; বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে তেলেঙ্গনা বা বরঙ্গল রাজ্য অবস্থিত ছিল; কৃষ্ণা নদীর
দক্ষিণে ছিল দ্বারসমুদ্র রাজ্য; সর্বদক্ষিণে ছিল পান্ড্যরাজ্য, এর রাজধানী ছিল মাদুরাই।
সুলতান আলাউদ্দিন খলজী তাঁর প্রিয় ক্রীতদাস মালিক কাফুরকে দাক্ষিণাত্য অভিযানে সেনাপতি নিযুক্ত
করে পাঠান। দাক্ষিণাত্য যাওয়ার পথে মালিক কাফুর মালওয়া ও গুজরাট আক্রমণ করেন, বাঘেলারাজ
করণকেও পরাজিত করেন।
দেবগিরি জয়
বিন্ধ্যের দক্ষিণে আলাউদ্দিন খলজীর বাহিনীর সফলতা ছিল বিস্ময়কর। ১৩০৬-৭ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিনের
সেনাপতি মালিক কাফুর দেবগিরির রামচন্দ্রদেবকে পরাস্ত করে দেবলাদেবীকে বন্দি করেন। আলাউদ্দিনের
পুত্র খিজির খানের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। রামচন্দ্রদেব দিল্লিতে এসে বশ্যতা স্বীকার করেন এবং রায়-রায়ান
উপাধি পান। অত:পর তিনি দক্ষিণে সুলতানি অভিযানের প্রধান সাহায্যকারীতে পরিণত হন।


তেলেঙ্গানা জয়
দেবগিরি জয়ের পর মালিক কাফুর ১৩০৯ খ্রিস্টাব্দে তেলেঙ্গানা আক্রমণ করেন। দেবগিরির রামচন্দ্রদেব
তাঁকে বহু রসদ দিয়ে সাহায্য করেন এবং তেলেঙ্গানা দুর্গে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দেন। রাজা প্রতাপরুদ্রদেব
তেলেঙ্গানা দুর্গে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে কাফুরের সৈন্যবাহিনী দুর্গ অবরোধ করে। রাজা রুদ্রদেব দুর্গের
ভিতর আশ্রয় নিয়ে বিপুল বিক্রমে কাফুরকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। অনেকদিন অবরুদ্ধ থাকার পর
কাকতীয়রাজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন এবং সন্ধির প্রস্তাব দেন।কিন্তু মালিক কাফুর এ প্রস্তাবে অসম্মতি
জানান। কাফুর দাবি করেন যে, রাজা তাঁর সম্পূর্ণ ধন-সম্পত্তি প্রদানসহ প্রতি বছর নিয়মিতভাবে দিল্লিতে
কর পাঠাবার অঙ্গীকার করলে, তিনি ব্যাপক নরহত্যা করবেন না। মালিক কাফুরের শর্ত মেনে নেয়া ছাড়া
রুদ্রদেবের কোন উপায় ছিল না। বিপুল ধন-রতœসহ মালিক কাফুর দিল্লিতে প্রত্যাবর্তন করেন।
দ্বারসমুদ্র জয়
দিগি¦দিকে সুলতানি বাহিনীর উত্তরোত্তর সাফল্যে সুলতান আলাউদ্দিন বেশ উৎসাহী হয়ে ওঠেন।
দাক্ষিণাত্যের বিপুল ধনরতœ তাঁকে লোভী করে তোলে। কৃষ্ণা নদী পার হয়ে ১৩১০ খ্রিস্টাব্দে কাফুরের
নেতৃত্বে সুলতানি বাহিনী দ্বারসমুদ্র বা হোয়শল রাজ্য আক্রমণ করে। রাজা তৃতীয় বীরবল্লাল এই সময়
দক্ষিণে পান্ড্যরাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। সুলতানি বাহিনীর আক্রমণের সংবাদ পেয়ে তিনি রাজধানী
রক্ষার জন্য ছুটে আসেন। বীর পান্ড্যও একটি সেনাদল তাঁর সাহায্যের জন্য পাঠান। কিন্তু সুলতানি
সেনাদলের সঙ্গে যুদ্ধ অর্থহীন বুঝে বীরবল্লাল যুদ্ধ ত্যাগ করেন। তিনি তাঁর বহু ধনরতœ, ঘোড়া ও হাতি
কাফুরের হাতে তুলে দেন। আলাউদ্দিনের বশ্যতা স্বীকার করে তিনি বার্ষিক কর প্রদানেও অঙ্গীকারাবদ্ধ
হন।
পান্ড্যরাজ্য জয়
অত:পর মালিক কাফুর মাদুরার পান্ড্য রাজাদের দিকে মনোনিবেশ করেন।মালিক কাফুর বিরাট
সৈন্যবাহিনীসহ মাদুরা গমন করেন। তিনি পথে অনেক হাতি হস্তগত করেন এবং বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংস
করে ১৩১১ খ্রিস্টাব্দে পান্ড্য রাজ্যের রাজধানী মাদুরার নিকট পৌঁছান। সুলতানি বাহিনীর আগমনের সংবাদ
পেয়ে রাজা পলায়ন করে আত্মরক্ষা করেন।এখানেও মালিক কাফুর হাতি-ঘোড়াসহ প্রচুর ধন-সম্পত্তি
হস্তগত করেন। দিল্লিতে ফিরে আসলে সুলতান তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন।
দেবগিরির রাজা রামদেবের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র শঙ্করদেব দিল্লিতে কর পাঠানো বন্ধ করে দেন। সুলতান
অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে শঙ্করদেবকে শাস্তি দিতে মনস্থ করেন। আলাউদ্দিন মালিক কাফুরকে দেবগিরি আক্রমণ
করতে পাঠান। ১৩১২ খ্রিস্টাব্দে মালিক কাফুর বিরাট সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে দেবগিরি অভিমুখে রওনা
হন। শঙ্করদেব কাফুরকে বাধা দেবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তিনি পরাজিত হলে মালিক কাফুরের নির্দেশে
তাঁকে হত্যা করা হয়। এভাবে সুলতান আলাউদ্দিন সারা দাক্ষিণাত্য জয় করতে সমর্থ হন।
উত্তর ভারতে সকল বিজিত রাজ্য আলাউদ্দিন সুলতানি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু দাক্ষিণাত্যে তিনি
অবলম্বন করেন কিছুটা ভিন্ন নীতি। দক্ষিণী রাজ্যগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সেগুলোকে তিনি দিল্লির করদ
রাজ্যে পরিণত করেন। সম্পূর্ণভাবে মুসলমান শাসন দাক্ষিণাত্যে প্রবর্তিত হয়নি। সুলতানের এই বদান্যতায়
ও অনুগ্রহে সন্তুষ্ট হয়ে দক্ষিণী নৃপতিগণ তাঁর মিত্রে পরিণত হন। এমনকি তাঁরা সুলতানের অন্যান্য সামরিক
অভিযানে সাহায্যও করেন।
সারসংক্ষেপ
জালালউদ্দিন খলজী হলেন প্রথম উল্লেখযোগ্য খলজী পুরুষ। ‘খলজী বিপ্লব'-এর তিনিও একজন
অংশীদার। মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব রয়েছে। জালালউদ্দিনের ভ্রাতুস্পুত্র আলাউদ্দিন
খলজী হলেন শ্রেষ্ঠ খলজী শাসক। নানাবিধ ঘটনার মধ্যদিয়ে ১২৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিংহাসনে
বসেন। আলাউদ্দিন ছিলেন যুদ্ধপ্রিয় এবং সাম্রাজ্যবাদী। ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ উভয় অংশেই তিনি

বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমরাভিযান পরিচালনা করেন। এগুলোর মধ্যে গুজরাট, রণথম্ভোর, চিতোর,
মালব, দেবগিরি, পান্ড্যরাজ্য ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আলাউদ্দিনের চিতোর অভিযানকে কেন্দ্র করে
প্রচলিত ‘পদ্মিনী উপাখ্যান' বিপুলভাবে জনপ্রিয়। দাক্ষিণাত্যে মূলত আলাউদ্দিন করদ রাজ্য সৃষ্টি
করেন, কিন্তু উত্তরভারতে তাঁর প্রত্যক্ষ শাসন প্রবর্তিত হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন ঃ
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন।
১। আলাউদ্দিন খলজী সিংহাসনে আরোহণ করেনÑ
(ক) ১২৯২ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১২৯১ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১২৯৬ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১২৯৫ খ্রিস্টাব্দে।
২। আলাউদ্দিনের সাম্রাজ্যবাদী নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিলÑ
(ক) আলেকজান্ডারের মতো বিশ্বজয়
(খ) সমগ্র ভারতে সার্বভৌম রাজ্যশক্তি প্রতিষ্ঠা
(গ) সমগ্র ভারতে অর্থনৈতিক আধিপত্য স্থাপন
(ঘ) খলজী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা।
৩। ১২৯৮ খ্রিস্টাব্দে কোন অঞ্চলে আলাউদ্দিনের অভিযান প্রেরিত হয়?
(ক) রণথম্ভোর (খ) দেবগিরি
(গ) গুজরাট (ঘ) চিতোর।
৪। মেবার রাজ্যের রাজধানীর নামÑ
(ক) চিতোর (খ) মাদুরাই
(গ) দেগবিরি (ঘ) তেলেঙ্গনা।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ঃ
১। খলজী বংশের উৎপত্তি সম্পর্কে যা জানেন লিখুন।
২। খলজীবিপ্লবের গুরুত্ব কি ছিল?
৩। আলাউদ্দিন খলজীর প্রথম জীবন সম্পর্কে কি জানেন?
রচনামূলক প্রশ্ন ঃ
১। সাম্রাজ্য বিস্তারকারী হিসেবে আলাউদ্দিন খলজীর ভ‚মিকা বর্ণনা করুন।
২। আলাউদ্দিন খলজীর উত্তর-ভারত ও দক্ষিণ-ভারত বিজয় সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। মোঙ্গল
আক্রমণকারীদের তিনি কিভাবে প্রতিরোধ করেন?
৩। আলাউদ্দিন খলজীর দাক্ষিণাত্য নীতি পর্যালোচনা করুন। এ নীতির সাফল্য-ব্যর্থতা সম্পর্কে আপনার মতামত দিন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]