বৈদিক যুগে আর্যদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক অবস্থার বিবরণ দিন।


আর্যদের সমাজ, অর্থনীতি, ধর্ম ও রাজনৈতিক জীবন
খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের দিকে আর্যরা ভারতবর্ষে আগমন করেছিল বলে মনে করা হয়। আর্যদের ধর্মগ্রন্থ
বেদ থেকে ভারতে তাদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে কিছু ধারণা লাভ করা যায়। বেদ পৃথিবীর
প্রাচীনতম গ্রন্থ। এটা আবার চার ভাগে বিভক্ত যথা ঃ ঋক্, সাম, যজুর এবং অথর্ব। ঋগে¦দের সম্ভাব্য
রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৯০০ অব্দের মধ্যে বলে অধ্যাপক ব্যাশাম মনে করেন। অন্য তিনটি বেদ
খ্রিস্টপূর্ব ৯০০-৬০০ অব্দের মধ্যে রচিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। আর্য সভ্যতাকে দুই ভাগে
আলোচনা করা যায়- ঋগে¦দের যুগের সভ্যতা বা ঋগৈ¦দিক সভ্যতা এবং পরবর্তী বৈদিক সভ্যতা।
ঋগৈ¦দিক আর্য সভ্যতা
সামাজিক অবস্থা ঃ
ঋগে¦দে একটি সুসংগঠিত সমাজ-ব্যবস্থার চিত্র পাওয়া যায়।এক বিবাহ প্রচলিত নিয়ম হলেও রাজপরিবারের
বা খুব উচ্চবিত্ত পরিবারে মাঝে মাঝে বহু বিবাহ দেখা যায়। বহু পতিত্ব অবশ্য প্রচলিত ছিল না। বিবাহকে
পবিত্র বন্ধনরূপে বিবেচনা করা হতো এবং বিবাহ বিচ্ছেদ প্রচলিত ছিলনা।বিধবাদের সাধারণত:
সন্তানহীনাদের দেবরের সঙ্গে পুন:বিবাহের নিয়ম ছিল। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সন্তানের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা
থেকেই মনে হয় এটা হয়েছিল।পণ প্রথা প্রচলিত ছিল, তবে মাঝে মাঝে বরকেই পণ দিতে হতো।
মেয়েদের জন্য বিয়ে বাধ্যতামূলক ছিল না এবং দেখা যায় যে মেয়ে বাবা বা ভাইয়ের সংসারে থেকে
যেতো। বিয়ের পর নববধূ তার নতুন সংসারে সম্মানজনক স্থান লাভ করতো এবং শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ভাসুর,
দেবর এবং ননদদের দেখাশুনা করতো। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে অংশগ্রহণ করতো এবং স্ত্রীর
অংশগ্রহণ ব্যতীত কোন অনুষ্ঠানকেই কার্যকর বিবেচনা করা হতো না। বাল্যবিবাহের প্রচলন ছিল না। স্বামী
নির্বাচনের ব্যাপারে কনের পিতার পছন্দের মূল্য দেওয়া হতো। কিন্তু এ ব্যাপারে কনেরও কিছুটা স্বাধীনতা
ছিল। স্ত্রী-শিক্ষার প্রচলন ছিল এবং শিক্ষিতা মহিলা হিসাবে আমরা লোপামুদ্রা, বিশ্ববারা, অপালা, মমতা,
ঘোষা প্রমুখের নাম দেখতে পাই এবং তাঁরা বেদমন্ত্রও রচনা করেছিলেন। মহিলারা যুদ্ধবিদ্যা, অসিচালনা
ইত্যাদিও শিখতেন। পর্দাপ্রথার প্রচলন ছিলনা। সতীদাহ প্রথার উল্লেখ পাওয়া গেলেও বিধবা বিবাহের
প্রচলন থাকায় অধ্যাপক রোমিলা থাপার মনে করেন যে, ঋগৈ¦দিক যুগে সতীদাহ ছিল প্রতীকি।
পরিবার ছিল পিতৃ-প্রধান। পরিবারের সর্বাপেক্ষা বয়স্ক পুরুষ গৃহপতি হিসাবে গণ্য হতেন। তিনি ছিলেন
সমস্ত স্থাবর সম্পত্তির মালিক। গরু, ঘোড়া, অলঙ্কার ইত্যাদির মত অস্থাবর সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা
অন্যদের থাকতে পারতো।দত্তক-সন্তান নেওয়ার অধিকার স্বীকৃত ছিল।পুত্রহীন পিতার সম্পত্তি উত্তরাধিকারী
হিসাবে কন্যা নয়, লাভ করতো দৌহিত্র।পরিবার ছিল একান্নবর্তী এবং পিতা-মাতা, পিতামহী, মাতামহী
এবং অন্যান্য পরিজন নিয়ে পরিবার গঠিত হতো।পরিবারের প্রধানকে বলা হতো কুলপ বা দম্পতি।



পরিবার পিতৃ-প্রধান হওয়ায় সকলেই পুত্র সন্তান কামনা করতো, তবে কন্যা সন্তানকে অবহেলা করা হতো
না।
যব, গম, দুধ, ফলমূল, মাছ ও মাংস ছিল আর্যদের প্রধান খাদ্য। তারা ভাত ও চাল-জাত খাদ্যও খেতো।
ঘি, মাখন, দই ইত্যাদি তাদের প্রিয় খাদ্য ছিল। তারা পিঠা ও চালজাত পায়েশও খেতো। ঘোড়া, ছাগল ও
পাখির মাংস ছিল তাদের খাদ্য-তালিকার অন্তর্ভুক্ত। গরুর মাংসও তারা খেতো, তবে ঋগে¦দে দুগ¦বতী গাভী
হত্যা নিষিদ্ধ ছিল। ঋগে¦দে আর্যদের আহার্যের তালিকায় লবণের কোন উল্লেখ নেই। নদী,ঝর্ণা, কূপ থেকে
পানীয় জল সংগ্রহ করা হতো। তাছাড়া আর্যরা সোম ও সুরা নামক দুটি উত্তেজক পানীয়ও পান করতো।
সুরা ছিল সাধারণ উত্তেজক পানীয়। ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উৎসব উপলক্ষে সোম রস পান করা হতো। এটা
ছিল এক ধরনের লতার রস।
এ যুগে আর্যদের পোশাক তিন অংশে বিভক্ত ছিল - নীবি, বাস বা পরিধান এবং অধিবাস বা দ্রাপি। নীবি
ছিল অন্তর্বাস, বাস ছিল বাইরের বা ওপরের পোশাক এবং অধিবাস ছিল উত্তরীয় বা চাদর। এসব পোশাক
সুতি ও পশমি হতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চামড়া, বিশেষত হরিণের চামড়া দিয়ে পোশাক তৈরি করা
হতো। ধনীদের পোশাক সোনার সুতা দিয়ে কারুকাজ করা থাকতো। নারী ও পুরুষ সবাই সোনার ও ফুলের
অলঙ্কার ব্যবহার করতো। মেয়েরা বেনী বাঁধতো। নারী পুরুষ উভয়েই হার, দুল, বালা ইত্যাদি অলঙ্কার
পরতো। পুরুষদের মধ্যে দাড়ি রাখা ও দাড়ি কাটা উভয় রেওয়াজই ছিল।
ঋগৈ¦দিক যুগে আর্যদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নিরানন্দ ছিল না। অবসর বিনোদনের জন্য ছিল সঙ্গীত, নাচ,
জুয়াখেলা, রথ-প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। ঋগে¦দে ঢোল, বীণা, বাঁশি, করতাল ইত্যাদির মতো বেশ কয়েকটি
বাদ্যযন্ত্রের উল্লেখ আছে। সঙ্গীতের তাল-লয়-গ্রাম সর্ম্পকেও তাদের জ্ঞান ছিল। ঋগে¦দে জুয়াখেলার বিভিন্ন
ধরণ, উপকরণ ও নিয়মকানুনের বর্ণনা আছে। রথের দৌড় ছিল উচ্চবিত্তের খেলা। সাধারণত: দুটো ঘোড়া
রথ টানতো এবং রথে দুজন বসতে পারতো।
ঋগে¦দের যুগে আর্যরা যাযাবর বৃত্তি ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। তাদের বাসগৃহ ছিল
কাঠের খুঁটির ওপর খড়ের চাল দিয়ে তৈরি। এগুলো ছিল আয়তাকার ও একাধিক কক্ষ বিশিষ্ট। বাসগৃহের
এক অংশে ছিল গৃহপালিত পশুপাখিদের থাকার স্থান। প্রত্যেক বাড়িতেই একটি ছোট অগ্নিকুন্ড সবসময়
জ্বালিয়ে রাখা হতো।
আর্যসভ্যতার আগেই সিন্ধু সভ্যতার মানুষ বর্ণমালা ব্যবহার করলেও শুরুতে আর্যরা লিখতে জানত না।
অধ্যাপক রোমিলা থাপার মনে করেন যে, খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দের দিকে আর্যদের মধ্যে বর্ণমালার ব্যবহার
শুরু হয়েছিল। ঋগে¦দের যুগে পাঠ দান ছিল মৌখিক। গুরুর উচ্চারিত পাঠ ছাত্ররা অত্যন্ত সুশৃ´খলভাবে
বারবার আবৃত্তি করে মুখস্থ করে নিত। শিক্ষা ছিল উচ্চবর্ণের মধ্যে এবং বেদ পাঠ ছিল ব্রাহ্মণদের মধ্যে
সীমিত। অঙ্ক, ব্যাকরণ ও ছন্দবিজ্ঞান ছিল পাঠ্যসূচির অন্তর্গত প্রধান বিষয়।
আদিতে আর্যদের মধ্যে কোন জাতিভেদ ছিলনা। আর্যদের সঙ্গে আদিম অধিবাসীদের গায়ের বর্ণের ভিন্নতার
কারণে বর্ণভেদ ছিল। আর্যরা ছিল ফর্সা, দীর্ঘকায় ও উন্নত নাসিকাযুক্ত দেখতে সুন্দর। ভারতের আদিম
অধিবাসীরা ছিল কৃষ্ণকায়। ফলে আর্য ও অনার্য এই দুই শ্রেণীর সৃষ্টি হয়। কিন্তু ক্রমে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি ও
সমাজ জীবনের জটিলতার কারণে কর্মক্ষমতা এবং পেশার ভিত্তিতে সমাজ চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে
পড়ে। পূজা-পার্বণ, যাগ-যজ্ঞ ও শাস্ত্রপাঠে পারদর্শীরা 'ব্রাহ্মণ' ও দেশরক্ষা ও দেশ শাসনে নিয়োজিত
ব্যক্তিরা 'ক্ষত্রিয়' নামে পরিচিত হয়। ব্যবসায়-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প ও পশুপালনে নিয়োজিতরা হলেন ‘বৈশ্য'।
এ তিন শ্রেণীর সেবাকাজে নিয়োজিতরা ‘শূদ্র' নামে পরিচিত হয়। এ শ্রেণীবিভাগ বংশানুক্রমিক ছিলনা।
বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে অন্তর্বিবাহ ও একসঙ্গে খাদ্য গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল না। পরবর্তীকালে আর্যসমাজে
জাতিভেদের যে কঠোরতা দেখা যায় ঋগৈ¦দিক যুগে তা ছিল না। ইচ্ছা ও সুযোগমত তাঁরা পেশা পরিবর্তন
করতে পারতো। ক্ষত্রিয় বিশ্বামিত্র ব্রাহ্মণত্ব লাভ করেছিলেন। অগ্যস্ত্য ঋষি বিয়ে করেছিলেন বিদর্ভরাজের
কন্যা লোপামুদ্রাকে। ঋষিকন্যা দেবযানির বিয়ে হয়েছিল ক্ষত্রিয় এক রাজার সঙ্গে। শূদ্রের হাতের রান্না
খাওয়া কারো জন্য নিষিদ্ধ ছিল না। নিম্নবর্ণের কারো স্পর্শ অন্য কাউকে অপবিত্র করে এরকম ধারণাও

তখন জন্মলাভ করেনি। আর্য ও অনার্যদের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য ছিল। অনার্যরা দাস, দস্যু বা অসুর নামে
অভিহিত হতো। অনার্যদের ভাষা ছিল আলাদা এবং তাঁরা আর্যদের মত দেব-দেবীর পূজা বা পশুবলিও
করতো না। যুদ্ধক্ষেত্রে আর্যরা অনার্যদের ভয় পেত। অধ্যাপক রোমিলা থাপারের মতে, অনার্যদের সঙ্গে
সংমিশ্রণের ফলে তাদের স্বকীয়তা বিলোপ পেতে পারে এ ভয়ও আর্যদের অনার্যদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে
রেখেছিল।
ঋগে¦দের যুগে আর্যদের জীবন চারটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল যা চতুরাশ্রম নামে পরিচিত। সমাজের প্রথম তিন
শ্রেণীর ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য ছিল। বাল্যে ও কৈশোরে আর্যসন্তান গুরুগৃহে অবস্থান করে বিদ্যাচর্চা করতো
এবং গুরুর সংসারের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতো। এটাকে বলা হতো ব্রহ্মচর্য। সাহিত্য, ব্যাকরণ, ছন্দ ও
বেদ ছিল গুরুগৃহে শিক্ষার বিষয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে যৌবনে বিয়ে করে সে সংসারী হতো এবং এ পর্যায়কে বলা
হয় গার্হস্থ্য।প্রৌঢ় অবস্থায় সংসার, সম্পত্তি, পরিজন ইত্যাদির মায়া ত্যাগ করে পরলোকের চিন্তা ও
অরণ্যবাস ছিল বাণপ্রস্থ পর্যায়। সবশেষে ছিল সন্ন্যাস পর্যায়। এ পর্যায়ে ঈশ্বর চিন্তা ও সন্ন্যাস জীবন যাপন
করে গৃহত্যাগী হয়ে ভ্রমণ করা ছিল সন্ন্যাসীর কর্তব্য।
অর্থনৈতিক অবস্থা
ঋগে¦দের যুগে আর্যরা গ্রামে বাস করতো। ঋগে¦দে ‘পুর' (দুর্গ বা প্রাকার অর্থে ব্যবহৃত) এর উল্লেখ
থাকলেও নগর বা শহরের কোন উল্লেখ নেই। ঋগৈ¦দিক সভ্যতা গ্রামকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। সে
যুগে আর্যদের অর্থনৈতিক জীবনের ভিত্তি ছিল কৃষি ও পশুপালন। গরু দিয়ে লাঙল টানা হতো। লাঙলকে
বলা হয় ‘শীর'। চাষের জমিকে বলা হতো ‘ক্ষেত্র' বা ‘উর্বরা'। ছয়, আট বা বারটি গরু লাঙল টানত।
জমিতে জলসেচের ব্যবস্থা ছিল। এ জন্য ‘জলচক্র' ও জলাশয় ব্যবহার করা হত। ঋগে¦দে জমি চাষ,
বীজবপন, ফসলকাটা, গোলাজাত করা ও ফসল মাড়াই করার উল্লেখ আছে। ফসল কাটা হতো কাঁচি দিয়ে।
আর্যরা যব, গম, ধান, বার্লি ইত্যাদি শস্যের চাষ করতো। ঋগে¦দে ধান বা গমের উল্লেখ নেই। তবে
অধ্যাপক ব্যাশাম মনে করেন যে, সম্ভবত ঋগে¦দে সাধারণ খাদ্যশস্য অর্থে যব শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে
যা দিয়ে গম এবং ধানকেও বোঝানো হয়েছে। পাখি, পঙ্গপাল, অতিবৃষ্টি বা খরাতে শস্যহানির কথাও
ঋগে¦দে আছে।
ঋগে¦দের যুগে জমির মালিকানা ব্যবস্থা সম্পর্কে পন্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। ড. এইচ.সি.রায় চৌধুরীর
মতে, পশুচারণ ভ‚মি ছিল সর্বসাধারণের সম্পত্তি। বাস্তু ও আবাদী জমি ছিল ব্যক্তিগত মালিকানাধীন।
অধ্যাপক রোমিলা থাপার মনে করেন যে, গোড়াতে জমি ছিল গ্রামের মালিকানাধীন। কিন্তু পরে উপজাতিক
সংস্থাগুলো ক্রমশ: দুর্বল হয়ে পড়ায় পরিবারগুলোর মধ্যে জমি ভাগ করা দেওয়া হয় এবং জমির
ব্যক্তিমালিকানা সৃস্টি হয়।
অধ্যাপক রোমিলা থাপারের মতে, গোড়াতে ভারতীয় আর্যরা ছিল পশুপালক, পরে তাঁরা কৃষিকাজে
মনোনিবেশ করে। যাই হোক, কৃষির পরেই পশুপালন ছিল প্রধান জীবিকা। গরু ছিল প্রধান গৃহপালিত পশু
এবং গরুকে মূল্যবান সম্পদ হিসাবে গণ্য করা হতো। যমুনা নদীর উপত্যকা গো-সম্পদের জন্য বিখ্যাত
ছিল। গরু যাতে হারিয়ে না যায় এজন্য গরুগুলোর কানে নানা রকম সাংকেতিক চিহ্ন দেওয়া থাকত।
সাধারণ মানুষ গো-সম্পদ বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করতো। পুরোহিতদের গো-দানের মাধ্যমে পুরষ্কৃত করা
হতো। ঋগে¦দে ‘গাভিষ্টি' শব্দটি পাওয়া যায় যার অর্থ গো-অনুসন্ধান। তবে এ দিয়ে যুদ্ধকে বোঝানো হত যা
থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে গরু লুন্ঠন এবং হারানো গরুকে কেন্দ্র করে উপজাতিগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বেধে
যেতো। গরুর মাংস খাওয়া হতো। দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য ছিল আর্যদের প্রিয় খাদ্য। চামড়া দিয়ে পাথর
ছোঁড়ার জন্য গুলতি, ধনুকের জ্যা, রথের দড়ি, লাগাম, চাবুক ইত্যাদি তৈরি হত। মূল্যের একক ও
বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে গরুকে ব্যবহার করা হতো। ব্যক্তিবিশেষের সম্পদও নিরূপিত হত গরু দিয়ে।
ঘোড়া যুদ্ধে ও রথ টানার কাজে ব্যবহার হতো বলে ঘোড়াও ছিল মূল্যবান গৃহপালিত পশু। পশমের উৎস
হিসাবে ভেড়াও ছিল গুরুত্বপূর্ণ।


প্রধানত কৃষি ও পশুপালন এ যুগের অর্থনৈতিক ভিত্তি হলেও আর্যরা বিভিন্ন শিল্পকর্মেও পটু ছিল। শিল্পের
মধ্যে মৃতশিল্প, বস্ত্রশিল্প, ধাতুশিল্প, কারুশিল্প ছিল উল্লেখযোগ্য। এযুগে সূত্রধর বা কাঠের মিস্ত্রির কাজ বেশ
লাভজনক ছিল। রথ, লাঙল, গৃহ, গরুর গাড়ী ইত্যাদি সে তৈরি করতো। চর্মকার পশুর চামড়া দিয়ে বিভিন্ন
প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করতো। কামার বিভিন্ন ধাতু দিয়ে সংসারের ও যুদ্ধের জিনিসপত্র তৈরি করতো।
এ যুগে ব্রোঞ্জ ও তামার প্রচলন ছিল বেশি। অধ্যাপক ব্যাশামের মতে এ যুগে লোহার ব্যবহার ছিলনা ।
সাধারণত মহিলারা বয়নশিল্পের কাজ করতো।
শিকার ছিল পেশা এবং নেশা - উভয়ই। বন্য জন্তুর আক্রমণ থেকে গৃহপালিত পশুগুলোকে এবং পাখির
হাত থেকে ফসল বাঁচানোর জন্য শিকার ছিল আবশ্যকীয়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিভিন্ন রকম পশুপাখি শিকার
করা হতো।
আর্যরা বিভিন্ন শিল্পকর্মেও পটু ছিল।পূর্বদিকে গাঙ্গেয় উপত্যকায় ভ‚মি আবাদের ফলে নদী হয়ে ওঠে
বাণিজ্যের স্বাভাবিক প্রধান জলপথ। নদীর তীরবর্তী বসতিগুলো বাজারে পরিণত হয়। জমির অপেক্ষাকৃত
ধনী মালিকরা তাদের জমি চাষের জন্য অন্যদের নিযুক্ত করে এবং নিজেদের সময় ও অর্থ ব্যবসায়ের কাজে
লাগায়। এ ভাবেই ভ‚-স্বামী শ্রেণী থেকে বণিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। প্রধানত স্থানীয়ভাবে বাণিজ্য চলত।
ঋগে¦দে জাহাজ ও সমুদ্রযাত্রার উল্লেখ থাকলেও মনে হয় শুধু মাত্র উপকূলীয় এলাকাতেই সমুদ্র বাণিজ্য
সীমিত ছিল। ‘নিষ্ক' নামক স্বর্ণমুদ্রার উল্লেখ ঋগে¦দে থাকলেও তা দিয়ে বহির্বাণিজ্য কতটুকু চালানো যেতো
সে সম্পর্কে পন্ডিতদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অধ্যাপক ব্যাশাম বলেছেন যে, মুদ্রা হিসাবে নিষ্কের
উল্লেখ থাকলেও সে আমলে নিষ্ক ছিল এক ধরনের অলঙ্কার। দ্রব্য বিনিময়ের মাধ্যমেই প্রধানত ব্যবসাবাণিজ্য চলতো। বড় বড় লেনদেনে গাভীকে মূল্যের একক হিসেবে ধরা হতো।বাজারে দর কষাকষির রীতি
ছিল, তবে স্বীকৃত চুক্তি মেনে চলতে হতো এবং বিক্রিত দ্রব্যসামগ্রী ফেরৎ নেওয়া হতো না। সে যুগেও সুদ
প্রথা প্রচলিত ছিল। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের জন্য স্থলপথ ও জলপথ দুটোই ব্যবহার করা হতো। স্থলপথে রথ
ও গরুর গাড়ী এবং জলপথে নৌকায় মাল চলাচল করতো। এই যুগে সমুদ্র বাণিজ্য সর্ম্পকে স্পষ্ট কিছু জানা
যায় না। ঋগে¦দে ‘মনা' নামক মুদ্রার উল্লেখ থেকে অনেকে মনে করেন যে পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে আর্যদের
বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল, কারণ মনা ছিল ব্যাবিলনের মুদ্রা। ঋগে¦দে শতদাঁড় বিশিষ্ট ‘শত অনিত্র' নামের
নৌকার উল্লেখ রয়েছে। অনেকে মনে করেন যে এগুলো ছিল সমুদ্রগামী নৌকা। তবে ঋগে¦দে সিন্ধু নদীর
মোহনার অনুল্লেখ ও মুদ্রা অর্থনীতির অনুপস্থিতি সমুদ্র বাণিজ্যের বিরোধিতা করে।
ধর্মীয় অবস্থা
ঋগৈ¦দিক আর্যদের ধর্ম ছিল সহজ সরল। তারা প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তিকে পূজা করতো। তারা স্বর্গের,
বায়ুমন্ডলের এবং পৃথিবীর দেব-দেবীতে বিশ্বাসী ছিল। পৃথিবী, সোম, অগ্নি ছিল পৃথিবীর দেবতা। ইন্দ্র,
বায়ু, মরুৎ ছিল বায়ুমন্ডলের দেবতা এবং দৌ, বরুণ, সূর্য, সাবিত্রী, মিত্র, বিষ্ণু ইত্যাদি ছিল স্বর্গের দেবতা।
বরুণ ছিলেন পাপ-পূণ্যের দেবতা এবং অত্যন্ত সন্মানিত।তিনি ছিলেন বিশ্বজগতের নিয়ম শৃ´খলা
রক্ষাকারী। ইন্দ্র ছিলেন ঝড় ও যুদ্ধের দেবতা। অনার্যদের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ইন্দ্র আর্যদের অত্যন্ত প্রিয় ও
প্রয়োজনীয় দেবতারূপে পূজিত হতেন। যম ছিলেন মৃত্যুর দেবতা। বায়ু ছিলেন বাতাসের দেবতা। অগ্নি
ছিলেন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। তিনি যজ্ঞের আহুতি গ্রহণ করে তা দেবতাদের কাছে পৌঁছে দিতেন।
মানুষ ও দেবতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন যোগসূত্র। প্রতি ঘরেই একটি ছোট অগ্নিকুন্ড জ্বালিয়ে রাখা হতো।
অগ্নিসাক্ষী রেখেই বিয়ে সম্পন্ন হতো, যেমনটি এখনও হয়।পঞ্চ উপাদানের মধ্যে অগ্নি ছিল সবচেয়ে
পবিত্র। তাঁকে আহুতি না দিয়ে কোন যজ্ঞই সম্পন্ন করা যেতো না। সোম ছিলেন পানীয়ের দেবতা। কখনও
কখনও দেব-দেবীকে পশুর আকারে কল্পনা করা হয়েছে, যেমন ইন্দ্রকে ষাঁড় এবং সূর্যকে দ্রুতগামী অশ্বরূপে
উল্লেখ করা হয়েছে। তবে উল্লেখ্য যে, ঋগৈ¦দিক ভারতে পশু-পূজার প্রচলন ছিলনা ।


ঋগৈ¦দিক আর্যরা দেবতাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রপাঠ করতো এবং বিভিন্ন দ্রব্য যেমন দুধ, ঘি, শস্য, সোমরস ও
মাংস আহুতি দিতো। দেবতাদের সন্তুষ্টি বিধানই ছিল এ সবের উদ্দেশ্য। ঋগৈ¦দিক আর্যদের ধর্ম ছিল
যজ্ঞকেন্দ্রিক। পারিবারিক যজ্ঞে সাধারণ জিনিস আহুতি দেওয়া হতো। কিন্তু কালক্রমে বিশাল আকারে
যজ্ঞের ব্যবস্থা করা হয় যাতে শুধু একটি গ্রামই নয়, গোটা উপজাতিই অংশ নিত এবং তখন বহু পশু বলি
দেওয়া হতো। নিয়ত যুদ্ধরত উপজাতিগুলোর জন্য দেবতাদের আশীর্বাদ ছিল অত্যাবশ্যকীয় এবং তারা
বিশ্বাস করতো যে যজ্ঞে সন্তুষ্ট হলে দেবতা বরদান করেন। এমনও বিশ্বাস করা হতো যে দেবতারা
লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন এবং জয় নিশ্চিত করেন। যজ্ঞের একটা সামাজিক
দিকও ছিল। যজ্ঞ ছিল চিত্তবিনোদনের একটা উপায় এবং আনন্দ-উল্লাসের সময়। যজ্ঞের পরে প্রায়
সকলেই সোমরস পান করতো। কালক্রমে যজ্ঞ ও মন্ত্রাদি অত্যন্ত দীর্ঘ জটিল হয়ে পড়ায় পূজা ও যজ্ঞের
জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন দেখা দেয়। তার ফলেই আর্য সমাজে পুরোহিত সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। এই
যজ্ঞের সুত্র ধরেই ব্রাহ্মণ পুরোহিত সমাজে গুরুত্ব লাভ করে। ধারণা করা হতো যে তাঁর কিছু রহস্যপূর্ণ ও
জাদুবলের ক্ষমতা (ব্রহ্ম) আছে এবং এজন্যই তিনি ব্রাহ্মণ এবং পুরোহিত। কালক্রমে এই ধারণারও সৃষ্টি
হয় যে দেবতা, পুরোহিত এবং অর্ঘ্য কোন এক মুহ‚র্তে এক হয়ে যায়।স্বাভাবিকভাবেই যজ্ঞানুষ্ঠান
পুরোহিতদের ক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়ক হয়, কারণ তাঁকে ছাড়া যজ্ঞ সম্পন্ন করা সম্ভব ছিলনা। এই যজ্ঞানুষ্ঠান
রাজারও ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটায়। কারণ, বিশাল আকারে সম্পাদিত যজ্ঞানুষ্ঠানের ব্যয়ভার তিনিই বহন
করতেন। এসব যজ্ঞের কৌত‚হলোদ্দীপক কিছু উপজাতও দেখা যায়। যজ্ঞের স্থানে বিভিন্ন দ্রব্যের স্থাপনে
কিছুটা গাণিতিক জ্ঞানের প্রয়োজন হওয়ায় গণিত সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি পায় । প্রায়ই পশুবলি দেওয়া হতো
বলে পশু দেহতত্ত¡ সম্পর্কেও মানুষের জ্ঞানের প্রসার ঘটে।
ঋগৈ¦দিক যুগে আর্যরা মূর্তি পূজা করতো না। বলি এবং দুধ, শস্য, ঘি, মাংস এবং সোমরস নৈবেদ্য দিয়েই
পূজা সম্পন্ন করা হতো। বর্তমান কালের পূজার ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান তখন ছিলনা।
ঋগৈ¦দিক যুগে দেবীদের স্থান ছিল দেবতাদের তুলনায় গৌণ। উষা, পৃথিবী, সরস্বতী, অদিতির মতো
দেবীরা ছিলেন তাঁদের স্বামীদের পাশে নিস্প্রভ। উল্লেখ্য যে সিন্ধু সভ্যতায় মাতৃদেবী ও শিব ছিলেন সমান
গুরুত্বপূর্ণ।
ঋগে¦দের রচনাকাল ছিল দীর্ঘ। অধ্যাপক ব্যাশামের মতে, এটা রচিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ৯০০
অব্দের মধ্যে।ফলে এ দীর্ঘ সময়কালে আমরা ঋগৈ¦দিক দেব-দেবীদের গুরুত্ব ও অবস্থানে উল্লেখযোগ্য
পরিবর্তন দেখতে পাই।দেবী পৃথিবীর গুরুত্ব হ্রাস পায় এবং আকাশের দেবতা দৌ-এর স্থান অধিকার করেন
বরুণ। কিছুদিনের মধ্যেই বরুণও তাঁর গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেন এবং ইন্দ্র হয়ে পড়েন ঋগৈ¦দিক দেব-দেবীদের
মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আদিতে সরস্বতী ছিলেন নদ-নদীর দেবী। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি বিদ্যা-দেবী
হিসাবে পূজিত হন। কিন্তু গোটা ঋগৈ¦দিক যুগেই অগ্নি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
ঋগৈ¦দিক ধর্মের অন্য একটি বৈশিষ্ট্য, একেশ্বরবাদও লক্ষণীয়।স্তোত্রগুলোতে এক সৃষ্টিকর্তার ধারণা প্রকাশ
পায়। ঋগে¦দের স্তোত্রগুলোর অন্তর্নিহিত ভাব হলো সৃষ্টিকর্তার বহু নাম থাকলেও তিনি এক ও অভিন্ন। ইন্দ্র,
মিত্র, বরুণ, অগ্নি ইত্যাদি নামে তিনি অভিহিত। এককেই কবিরা বহু নাম দিয়েছেন।
মৃতদেহ সৎকারের দুটি পদ্ধতি ছিল। মৃতদেহ কবর দেওয়া হতো অথবা পোড়ানো হতো। আগুন পবিত্রতা
দান করে এ ধারণার কারণে মৃতদেহ পোড়ানো অধিকতর জনপ্রিয় রীতিতে পরিণত হয় এবং পরবর্তীকালে
এটাই মৃতদেহ সৎকারের একমাত্র রীতি হয়ে দাঁড়ায়।
ঋগৈ¦দিক আর্যদের বিশ্বাস ছিল যে মৃত্যুর পর পাপীদের শাস্তি ও পূণ্যবানদের পুরস্কার দেওয়া হয়। পাপীরা
নরকে এবং পূণ্যবানরা স্বর্গে স্থান লাভ করতো।পরের দিকের কিছু স্তোত্রে মৃত্যুর পর আত্মার গাছ,
লতাপাতায় দেহান্তর গ্রহণের ইঙ্গিত থাকলেও পুনর্জন্মের ধারণা সে সময় ছিল অস্পষ্ট। তবে শেষ পর্যন্ত এ
ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলে এটা থেকেই উদ্ভব হয় পূর্বজন্মের আচরণের ভিত্তিতে আত্মার সুখ বা দু:খে পুনর্জন্মের
তত্ত¡।এটা পরবর্তীকালে কর্মফলের তত্তে¡ বিকাশ লাভ করে।কর্মফল তত্ত¡ হয়ে পড়ে জাতিভেদ প্রথার


দার্শনিক যুক্তি।এ তত্ত¡ অনুসারে উচ্চ বা নীচ বংশে জন্মগ্রহণ পূর্বজন্মের কার্যাবলীর ওপর নির্ভরশীল এবং
এটা পরবর্তী জন্মে একজনকে সামাজিক উন্নতি লাভের আশা যোগায়।
রাজনৈতিক অবস্থা
ঋগৈ¦দিক যুগে আর্যদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের ভিত্তি ছিল পরিবার। কয়েকটি পরিবার নিয়ে
গ্রাম, কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি বিশ এবং কয়েকটি বিশ নিয়ে গঠিত হতো জন। গ্রামের প্রধানকে বলা
হতো গ্রামণী। বিশের প্রধানকে বিশপতি এবং জনের প্রধানকে গোপ বা রাজা।
প্রচলিত শাসনব্যবস্থা ছিল রাজতান্ত্রিক। তবে অরাজতান্ত্রিক ব্যবস্থারও উল্লেখ পাওয়া যায়। উপজাতির
প্রধান হিসাবে গণপতি বা জ্যেষ্ঠের উল্লেখ প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ইঙ্গিত দান করে।
সে যুগে রাজ্য ছিল প্রধানত রাজার শাসনাধীন। তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ¡ী এবং অন্য প্রতিদ্বন্দ¡ীদের
ধ্বংসকারী। রাজপদ সাধারণত বংশানুক্রমিক। ঋগে¦দে স্পষ্ট কোন উল্লেখ না থাকলেও নির্বাচিত রাজতন্ত্র
থাকাটাও অস্বাভাবিক ছিলনা। তবে রাজার সার্বভৌম অধিকার স্থায়ী ও দৃঢ় হওয়ার জন্য জনসমর্থনের
প্রয়োজনীতার কথা ঋগে¦দে আছে।
গোষ্ঠীর মধ্যে রাজা এক বিশেষ স্থানের অধিকারী ছিলেন। আনুষ্ঠানিক অভিষেকের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতাসীন
হতেন। তিনি বিলাসবহুল প্রাসাদে বাস করতেন এবং তাঁর ঝলমলে পোষাক দিয়েই তাঁকে চেনা যেতো।
ঋগে¦দের যুগে আর্যদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে এবং অনার্যদের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে রাজা ছিলেন মূলত
একজন সামরিক নেতা। উপজাতি এবং তাঁর সম্পত্তি রক্ষা করা ছিল রাজার প্রধান কর্তব্য। তিনি প্রজাদের
কাছ থেকে স্বেচ্ছায় দান করা উপহার গ্রহণ করতেন। ঋগে¦দে বলির উল্লেখ থাকলেও এটা নিয়মিত কর
ছিলনা। যুদ্ধে লুন্ঠিত দ্রব্যের অংশও তিনি পেতেন। ধর্মের ব্যাপারে প্রথম দিকে রাজার তেমন কোন ভ‚মিকা
ছিলনা। পরবর্তীকালে রাজার দৈবত্বের ধারণার উদ্ভব হয়। পুরোহিত যজ্ঞের মাধ্যমে রাজার ওপর দৈবত্ব
আরোপ করতেন।
শাসনকাজে রাজাকে সাহায্যকারী কিছু কর্মকর্তার উল্লেখ পাওয়া যায়।তাদের মধ্যে প্রধান ছিলেন পুরোহিত।
তিনি বিভিন্ন যজ্ঞানুষ্ঠান পরিচালনা করতেন এবং প্রজাদের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ করতেন। পুরোহিত
ছিলেন রাজার অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা। তিনি যাগ-যজ্ঞ ও মন্ত্রের মাধ্যমে রাজার সাফল্য নিশ্চিত করতেন।
তিনি রাজার সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রেও উপস্থিত থাকতেন। অপর একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ছিলেন সেনানী বা
সেনাপতি। তখনকার সেনাবাহিনীর সংগঠন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। সেনাবাহিনীতে পদাতিক
ও রথারোহী সৈন্য ছিল। কোন কোন যুদ্ধ স্তোত্রে লাফানো ঘোড়ার উল্লেখ আছে। তবে এ যুগে যুদ্ধে হাতির
ব্যবহার ছিলনা। যোদ্ধারা ধাতব বক্ষাবরণ, ধাতব শিরস্ত্রাণ পরতো। তীর-ধনুক ছিল প্রধান যুদ্ধাস্ত্র। এছাড়া
বর্শা, তরবারি এবং কুঠার ব্যবহৃত হতো। কুলপ বা পরিবার প্রধানরা ব্রজপতি বা গ্রামণীর নেতৃেত্ব যুদ্ধ
করতো। দুর্গ ছিল পুরোহিতের অধীনে। শত্রুর ও রাজ্যের প্রজাদের খবরাখবর জানার জন্য রাজা গুপ্তচর
নিয়োগ করতেন।
রাজা জনগণের প্রভু হলেও তাদের মতামতের মূল্য দিতেন। এ প্রসঙ্গে সভা ও সমিতি নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের
নাম উল্লেখযোগ্য। সমিতিতে অভিজাতবর্গ ও সাধারণ মানুষ সমবেত হতো।সমিতির অধিবেশনে উপস্থিত
থাকা রাজার কর্তব্য ছিল। ঋগে¦দের যুগে সমিতি যথেষ্ট ক্ষমতাশালী ছিল। ঋগে¦দে জনসাধারণকে সমিতির
অধিবেশনে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং একই মতে কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ
থাকলে রাজার পক্ষে স্বৈরাচারী হওয়া কঠিন ছিল। সভা ছিল বয়স্ক ও অভিজাত ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠান। সভায়
মহিলাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল। প্রথমদিকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেও পরের দিকে একমাত্র
বিচারের ক্ষেত্রেই সভার ভ‚মিকা সীমাবদ্ধ হয়ে পরে।


এ যুগে কোন নিয়মিত বিচারালয় ছিলনা।প্রথাই ছিল আইন।রাজা পুরোহিত এবং সম্ভবত বয়োবৃদ্ধ
দু'একজনের সহায়তায় বিচারকাজ পরিচালনা করতেন। অপরাধের মধ্যে বেশি সংঘটিত হতো চুরি,
বিশেষত গরু চুরি। নরহত্যার শাস্তি ছিল একশত গাভী দান। মৃত্যুদন্ডের প্রচলন তখন ছিলনা বলেই মনে
হয়। বিচারের সময় অপরাধ নির্ণয়ের জন্য অপরাধীকে বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হতো, যেমন
উত্তপ্ত কুঠারে জিহŸা স্পর্শ করে অভিযুক্তকে তার নির্দোষত্ব প্রমাণ করতে হতো।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]