ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ এবং ধর্মপাল


ধর্মপালের পরিচয়::::::::::
পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল ও দেদ্দাদেবীর পুত্র ধর্মপাল । পিতার মৃত্যুর পর  সিংহাসন আরোহন করেন ধর্মপাল। ধর্মপাল এর অপর একটি নাম বিক্রমশীল। ধর্মপাল হচ্ছে পাল বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপতি। ধর্মপাল অনুমানিক ৪০ বছর বাংলার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলো । ধর্মপাল রাষ্ট্রকূট রাজবংশের পরবেলের কন্যা রন্নাদেবীকে বিবাহ করেন। ধর্মপালের দুই পুত্র নাম জানা যায় -যুবরাজ ত্রিভুবন এবং রাজপুত্র দেবট(দেবপাল)।গোপাল যে রাজ্যের হাল ধরেছেন,তার ছেলে ধর্মপাল সেই ভুঙ্গুর রাজ্যেকেই নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্ঠা করেছেন। অনেক দিক থেকে বলতে গেলে সফল হয়েছিলেন তিনি। বিশেষত,যুদ্ধক্ষেত্র ও রাজনীতিতে খুবই দক্ষ এবং চতুর ছিলেন।
উত্তর ভারতে মধ্যে অঞ্চলে সেই সময়ে তেমন কোন প্রভাবশালী শক্তি ছিল না কনৌজ ছিল এই অঞ্চলের কেন্দ্রস্থল। কনৌজকে কান্যকুঞ্জ  নামে ডাকা হত।
#ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ এবং ধর্মপাল #
ধর্মপাল শাসন আমলে উল্লেখ্য যোগ্য ঘটনা হল ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ ।উত্তর ভারতে রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে এ দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। এই ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ তিন পক্ষ ছিল, পাল প্রতিহার, রাষ্টকূট।অর্থাৎ উত্তর ভারতে ছিল পাল বংশ দাক্ষিন্যে ছিল রাষ্ট্রকূট বংশ।পশ্চিম ভারতে ছিল প্রতীহার বংশ।
অনেক ঐতিহাসিকগন মনে করে চতুংশক্তি সংঘর্ষ হয়েছিল মধ্যদেশ কনৌজ ছিল।
#ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের কারণ #:::::::::::::
এ ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের পিছনে অনেক কারন ছিল।
(১) ষষ্ঠ শতাব্দীতে কনৌজের রাজা হর্ষবর্ধন ছিলের সারা ভারতের অধীশ্বর। কিন্তু, অষ্টম শতাব্দীর কনৌজের আয়ুধ বংশ অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যায়। তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও  ছিল। কাজেই তৎকালে উদিয়মান শক্তিগুলো যেমন- ধর্মপাল, গুর্জর প্রতিহার বংশ ও দাক্ষিণাত্যের রাষ্টকূট বংশের লোলুপ দৃষ্টি এ সংঘর্ষের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল।
(২) ধর্মপাল ছিলেন উচ্চভিলাষী রাজা। রাজধানী পাটলিপুত্রকে কেন্দ্র করে আর্যবর্তে আধিপত্য বিস্তার করবার জন্য তিনি অগ্রসর হন। এটাও এ সংঘর্ষের  অন্যতম প্রধান কারণ ছিল।
(৩)দাক্ষিণাত্যের রাষ্টকূট রাজারা দাক্ষিণাত্যের চালক্যরাজাদের পরাজিত করে সেখানে শ্রেষ্ঠ শক্তিধর হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তারা উত্তর ভারতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালান ও গুর্জর প্রতিহারদের সাথে সংঘর্ষের লিপ্ত হন। আবার তারা বাংলার পাল বংশের রাজা ধর্মপালের সাথেও  সংঘর্ষে লিপ্ত হন।
(৪) এ ত্রি-শক্তির উচ্চাভিলাষ এবং কনৌজের উপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তারই ছিল এ ত্রিপক্ষী সংর্ষের প্রধাণ কারণ।(সূত্র:মাহবুবুর রহমানের বই বাংলাদেশের ইতিহাস)
#ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ কয়টি পর্যায় বিভক্ত ও কী কী::;
প্রাচীন বাংলার পাল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে ধর্মপালের শাসন আমল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন অধ্যায় । পাল সাম্রজ্যের প্রতিষ্ঠিতা  গোপাল মৃত্যুর পর তার পুত্র ধর্মপাল সিংহাসনে আরোহণ করেণ। ধর্মপাল সিংহাসনে বসে সাম্রজ্যের বিস্তারে মনোনিয়োগ করেছিলেন।আর এই কাজ করতে গিয়েই, অন্যদের সাথে দ্বন্দ্বে সূত্রপাত ঘটে । এর মধ্যে অন্যতম ছিল ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ।
প্রথম পর্যায় ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ:::::::::::::::
ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষর মধ্যে ছিল তারা হল পাল বংশ, প্রতিহার বংশ, রাষ্ট্রকুট বংশ । ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ প্রথম পর্যায় শুরু হয ৭৯০ খ্রি.।ধর্মপাল প্রতিহার -এর রাজা বৎস্যরাজ্যের নিকট পরাজিত হন । ধর্মপাল এবং  বৎসরাজ অনতিকাল পরেই রাষ্ট্রকূটরাজা ধ্রব দাক্ষিণ্যত্যে নিকট পরাজিত হন। কিন্তু যুদ্ধের পর ধ্রব এর নিকট পরাজিত হন। কিন্তু যুদ্ধের পর ধ্রব দাক্ষিণ্যত্যে ফিরে গেলে প্রতিহারদের পরাজয়ের সুযোগ নিয়ে ধর্মপাল তার হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার করে নেন। এর পর কনৌজ ধর্মপাল আক্রমণ করে ইন্দ্ররাজের পরাজিত করে তার পরিবর্তে চক্রায়ুধকে ঐ রাজ্যের সিংহাসনে আসীন করেন। যার ফলে ভোজ,মৎস, কুরু, যদু, যবদ, অবন্তি, গান্ধার, করী প্রভূতী জনপথের রাজার তার বশ্যতা স্বীকার করে নেন।
দ্বিতীয় পর্যায় ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ:::::::::::::::::
প্রতীহারের রাজা বৎস্যরাজের পুত্র নাগভট্ট প্রথমে চক্রায়ুধ কে পরাজিত করেন পরে ধর্মপালকে পরাজিত করেন। চক্রায়ুধ ও ধর্মপাল দাক্ষিণাত্যের রাজা ধ্রব -এর পুত্র তৃতীয় গোবিন্দের নিকট সাহায্য করেছিলেন। তৃতীয় গোবিন্দের নিকট সাহায্য প্রর্থনা করেছিলেন। তৃতীয় গোবিন্দ প্রতিহারের রাজা নাগভট্টকে পরাজিত করেন। চক্রায়ুধ ও ধর্মপাল তৃতীয় গোবিন্দর নিকট আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছিলেন। যার ফলে তাদের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহ সৃষ্টি হয় নি। এর পর তৃতীয় গোবিন্দ দক্ষিনাত্যে ফেরে গেলে ধর্মপাল উত্তরাপথের অধীশ্বর ধর্মপাল এর সাম্রজ্যের উত্তর হিমালয় থেকে দক্ষিনে বিন্ধ্য পর্বত পর্যন্ত বিস্তার হয়।
ধর্মপালের ধর্মনীতি(Religious policy of damply)
ধর্মপাল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তার পিতা গোপালও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেণ।ধর্মপাল বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক হলেও হিন্দুধর্মের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও তিনি  খ্যাতি পেয়েছিলেন।তিনি নিজের নামনুসারে দুটো বিশ্ববিখ্যাত বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করেন।(১)বরেন্দ্রে ধর্মপাল মহাবিহার (২) মগধের বিক্রমশীলা মহাবিহার।
বরেন্দ্রর ধর্মপাল মহাবিহার::::::::বরেন্দ্রের প্রাচীন নগরী সোমপুরে অবস্থিত বলে একে সোমপুর বিহার বলেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।বিহারটির ধ্বংসাবশেষ বর্তমান নওগা জেলার পাহাড়পুরে রয়েছে, তাই একে পাহাড়পুর বিহার ও বলা হয়ে থাকে।এটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত।এখানে ১৭৭ জন ভিক্ষুর জন্য কক্ষ বরাদ্দ ছিল। বিহারটি ফাকা স্থানে একটি বহুতল মন্দির এবং কিছু ধ্বংসাবশেষে স্তূপীকৃত অবস্থায় রয়েছে।বর্তমান বিহারটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে
বাংদেশে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।বর্তমান বিহারটি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভক্ত প্রত্নস্থল।
মগধের বিক্রমশীলা বিহারটিও বিখ্যাত একটি বিহার::::::::::::::এর নামকরণ ধর্মপালের অপর নাম বা উপধি বিক্রমশীল হতে গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিব্বতি জনশ্রুতি রয়েছে। শিক্ষা সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান হিসেবে পালযুগে এ বিহারটির খ্যতি ছরিয়ে পড়েছিল। সে সময় বিভিন্ন বিষয়ের ১১৪ জন অধ্যাপক ও অসংখ্য শিক্ষার্থী জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত থাকতেন। ভারতের বিহার রাজ্যের ভাগলপুর জেলার পাথরঘাটায় বিক্রমশীল বিহারের ধ্বঙসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছ।

ধর্মপাল বৌদ্ধধর্মের পাশাপাশি হিন্দুধর্ম ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায়ও তিনি অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।একজন শাসক হিসেবে তিনি বৌদ্ধধর্মের অনুসারী ও ধর্মপরায়ণ হলেও ভিন্ন ধর্মের প্রতি উদার মনোভা পোষণ করতেন। নিম্নে তার হিন্দুধর্মের প্রতি মনোভাবের কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেখানো হলো।
(১)ধর্মপালের তাম্রশাসনে উল্লেখ রয়েছে যে, ধর্মপালের সামন্ত ছিলেন নারায়ণ বর্মণ। তিনি শুভস্থলি নামক স্থানে একটি হিন্দু মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। ধর্মপাল এ মন্দিরটিতে চারটি গ্রামের নিষ্কর ভূমি দান  করেছিলেন।
(২)নারায়ণপালের আমলে উৎকীর্ন বাদল স্তম্ভ লিপিতে উল্লেখ রয়েছে যে, ধর্মপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেণ একজন হিন্দু ব্রাহ্মণ। তার নাম ছিল গর্গ। গর্গরা উত্তর পুরুষ থেকে বংশানুক্রমে পাল রাজাদের প্রধানমন্ত্রী পদ অলংকৃত করতেন।
(৩)দেবপাল মুঙ্গের তাম্রশাসনে উল্লেখ রয়েছে যে, ধর্মপাল নিজে যেমন শাস্ত্রের অনুশাসন মেনে চলতেন হিন্দুদর্মের সকল বর্ণ ও মতের প্রত্যেকে যেন নিজ ধর্ম পালন করতে পারে তার ব্যবস্থা করেছিলেনি। এটি  ছিল হিন্দু ধর্মের জন্য একটি সংস্কারের কাজ।
(৪) ধর্মপাল পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে কেন্দ্রীয় মন্দিরে ৬৩ টি পাথরের মূর্তি সংযুক্ত অবস্থায় ছিল। এর  অধিকাংশই পৌরাণিকই বা হিন্দু দেবদেবীর প্রতিমা। এগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হিন্দু মন্দির থেকে সংগ্রহ করে এখানে সংস্থাপন করা হয়েছিল বলে অনুমিত হয়।
সুতরাং এ থেকে বোঝা যায় ,ধর্মপাল ও তার  আমলের বৌদ্ধ ভিক্ষুণ হিন্দু দেবদেবীকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন।
#ধর্মপালের কৃতিত্ব#
(১)বিজেতা হিসেবে:::::::::::
ধর্মপাল বিজেতে হিসেবে তার কৃতিৃত্ব সম্মানজনক স্থানে দখল করে। ধর্মপালের র্মত্যু পর সিংহাসন আরোহন করে। এর পর সিংহাসন বসে সাম্রাজ্যের বিস্তার করতে গিয়ে অন্যদের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় এবং মধ্য ছিল ত্রি-পক্ষীয় সংঘর্ষ । ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষ উত্তর ভারতে মধ্যদেশ কনৌজ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সূচনা হয়।ধর্মপাল এই ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষে বেশ কৃতিত্ব দেখান।
 (২)শাসক হিসেবে::::::::::::
ধর্মপাল পাল রাজবংশের একজন অন্যতম শক্তিশালী শাসক ছিলেন।ধর্মপাল গৌড় - বরেন্দ্র নিজের নিয়ন্ত্রণ রেখে শাসন করতেন। ধর্মপাল উত্তর হিমালয় থেকে দক্ষিণ বিন্ধ্য পর্বত পর্যন্ত শাসন করতেন।
(৩)ধর্মীয় পৃষ্ঠপোষক::::::
পিতার ন্যায় ধর্মপাল বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ধর্মপাল বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তীতে বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র পরিনত হয়। অনেক  ঐতিহাসিক মনে করেন,ধর্মপাল ৫০ টি বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি করেছেন। “পাল রাজাদের মধ্যে তিনিই সর্বোচ্চ সাবভৌম উপাধি যথা- পরেমশ্ব,পরমভট্টারক, মহারাজধিরাজ,উপাধি গ্রহণ করে।
(৪)ধর্মপালের রাজত্বকাল::::::::::
খালিমপুর তাম্রশাসন অনুসারে ধর্মপাল ৩২ বছর রাজত্ব করেন্।তিব্বতীয় লামা তারানাথ এর মতে তিনি ৬৪ বছর রাজত্ব করেন্। ড.রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, ৭৭০ তেকে ৮১০ খ্রি পর্যন্ত মোট ৪০ বছর ধর্মপাল রাজত্ব করেন। তবে আধুনিক গবেষকদের মতে ধর্মপাল ৪০ বছর রাজত্ব করেছেন।

FOR MORE CLICK HERE

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]