ভূমিকাঃ বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। কারো কারো মতে, বঙ্গ নাম থেকেই বঙ্গাল এবং পরবর্তীতে বাঙালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, অতীতের বং নামের এক জনগোষ্ঠী এ অঞ্চলে বসবাস করত এবং তাদের নাম অনুযায়ী অঞ্চলটি বঙ্গ নামে পরিচিত লাভ করে। আবার অনেকেই মনে করেন জলমগ্ন স্যাঁতস্যাঁতে অঞ্চলকে বঙ্গ বা বাংলা বলা হয়।
বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তিঃ নিম্নে বঙ্গ বা বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
১. ভ্রমণকারীদের লেখনীতে বাংলাঃ ইংরেজ শাসনকালে বাংলা 'বেঙ্গল' (Bengal) নামে পরিচিত ছিল। ষোলো ও সতেরো শতকে ইউরোপীয়দের লেখনীতে 'বেঙ্গালা' নামের দেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। মার্কা পোলো বেঙ্গালা শহরের উল্লেখ করছেন। গ্যাস্টলদি তাঁর মানচিত্রে চাটিগ্রামের পশ্চিমে বেঙ্গালার অবস্থিত দেখিয়েছেন।
২. আহমদ রফিকের মতেঃ আহমদ রফিক 'বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ' গ্রন্থে বলেছেন,'......... তবে গঙ্গারাষ্ট্র বা গঙ্গাহৃদি নামীয় স্বাধীন বাংলা-ভূখন্ড সর্বপ্রাচীন রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত।
৩. অজয় রায়ের মতেঃ অজয় রায় 'বাঙালির জন্ম' প্রবন্ধে বলেন, 'বঙ্গ' জন ও জনপদ সম্পর্কে প্রথম উল্লেখ দেখা যায় ঐতরেয় আরণ্যকে।৪. আবুল ফজলের মতেঃ সম্রাট আকবরের সভায় কবি আবুল ফজল 'বাংলা' নামের উৎপত্তি সম্পর্কে আইন-ই-আকবরি গ্রন্থে বলেন "এই দেশের প্রাচীন নাম ছিল বঙ্গ। প্রাচীনকালে এর রাজারা ১০ গজ উচুঁ ও ২০ গজ বিস্তৃত প্রকান্ড 'আল' নির্মাণ করতেন; কালে এটা হতে বাঙালা ও বাঙ্গলা নামের উৎপত্তি।" সুতরাং বঙ্গ+আল= বঙ্গাল > বঙ্গ > বাংলা।
৫. সুকুমার সেনের মতেঃ জলময় দেশে যারা পূর্বাপর বাস করে তারা 'বঙ্গ' এবং তাদের নিবাস-ভূমি 'বঙ-দেশ' এইরুপ মত প্রকাশ করেছেন সুকুমার সেন।
৬. রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতেঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন, প্রাচীনকাল হতে 'বঙ্গ' ও 'বঙ্গাল' দুটি পৃথক দেশ ছিল। 'বঙ্গাল' দেশের নাম হতেই কালক্রমে সমগ্র দেশের 'বাংলা' নামকরণ হয়েছে। বর্তমানকালে বাংলাদেশের আধিবাসীদেরকে যে 'বাঙ্গাল' নামে অভিহিত করা হয়, তা সেই প্রাচীন 'বঙ্গাল' দেশের স্মৃতিই বহন করছে।
৭. নিহাররঞ্জন রায়ের মতেঃ নিহাররঞ্জন রায় আবুল ফজলের মতের সাথে মিলিয়ে বলেন, নদীমাতৃক দেশে বন্যা ও জোয়ারের স্রোত রোধের জন্য ছোট বড় বাঁধ (আল) নির্মাণ কৃষি ও বাস্তুভূমির জন্য অনিবার্য ছিল। আর 'বঙ্গ' এর সাথে 'আল' যুক্ত হয়ে 'বাঙ্গালা' নামকরণ হয়েছে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন জনপদ 'বঙ্গ' থেকে মধ্যযুগে 'বাঙ্গালাহ' বা 'বাঙ্গালা', আধুনিক যুগে তথা ব্রিটিশ শাসনামলে পর্তুগীজদের 'বেঙ্গালা', ইংরেজদের 'বেঙ্গল/Bengal', পাকিস্তান শাসনামলে 'পূর্ববঙ্গ' (১৯৪৭-১৯৫৫), পূর্ব পাকিস্তান (১৯৫৫), এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের পর 'বাংলাদেশ' নাম সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং, এভাবে কালক্রমে বঙ্গ>বঙ্গাল>বাঙ্গালা>সুবা-ই-বাঙ্গালা>পূর্ববঙ্গ>পূর্ব পাকিস্তান>বাংলা নামের উৎপত্তি।
নামের উৎপত্তি এবং বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় সম্পর্কে।
বাংলা নামের উৎপত্তি
-------------------------------
দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৭১ সালে।বাংলা শব্দটি বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এসেছে।এই বাংলা নামটির উৎপত্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করব।
আমরা সবাই জানি প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চল বিভিন্ন জনপদে বিভক্ত ছিল।তার মধ্যে গৌড় ও বঙ্গ।এই বঙ্গ থেকে ধীরে ধীরে বাঙালা হয়ে বাংলা শব্দটি পাওয়া যায়।
তবে এই বিষয়ে অনেক মতবাদ রয়েছে,,,মতবিরোধ ও রয়েছে অনেক।
বিভিন্ন মতবাদ
--------------------
আবুল ফজল 'বাঙালা' নামের উৎপত্তি সম্পর্কে তার বিখ্যাত 'আইন -ই- আকবরী' গ্রন্থে বলেছেন-----বাঙালার আদি নাম ছিল বঙ্গ । এই বঙ্গের সাথে 'আল' যুক্ত হয়ে বাঙ্গাল বা বাঙ্গালা নামের উৎপত্তি হয়েছে।
অনেকে ধারণা করেছে 'বঙ্গ' চীনা ও তিব্বতি শব্দ।বঙ্গ এর অং এর সাথে গঙ্গা,হোয়াংহো,ইয়াংসিকিয়াং ইত্যাদি নদীরনামে মিল আছে এ কারণে তাদের এমন ধারণা হতে পারে।
রমেশ চন্দ্র মজুমদার মনে করেন ' বাঙ্গাল 'দেশের নাম হতেই বাংলা নামকরণ হয়।
ইলিয়াস শাহের শাসনামলে তার উপাধি ছিল 'শাহ -ই-বাঙালা'।এছাড়া ষোড়শ শতকে পর্তুগীজরা বাঙালাকে 'বাঙ্গালা' বলে উল্লেখ করেন।
বাংলা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও এটা জোর দিয়ে বলা যায় প্রাচীন
বঙ্গ জনপদ ---এই আবাসভূমির নাম থেকেই বিবর্তনের মাধ্যমে 'বাংলা' নামটি এসেছে।