#পালযুগের সভ্যতা ও সংস্কৃতি
পাল যুগের বাংলার রাজনীতি ক্ষেত্রে যে শক্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসে তার ফলস্বরুপ পাল আমলে সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে।
*ধর্মপাল তার নিজ নাম বিক্রমশীলদেব অনুসারে বিক্রমশীল বিহার বা বিশ্ববিদ্যাল প্রতিষ্ঠা করেন।
*ধর্মপাল উত্তর ভারতে রাজনৈতিক কেন্দ্র কনৌজ নিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে “উত্তরাপথস্বামী” অভিধাপ্রপ্ত হন।
*ধর্মপাল নওগা জেলার পাহাড়পুর অঞ্চলে সোমপুর বিহার প্রতিষ্ঠা করেন।
*ভবদেব ভট্ট ছিলেন পাল যুগের বিখ্যাত শাস্তকার।
*চক্রপানি দত্ত “চিকিৎসা সংগ্রহ” নামে একটি বিখ্যাত চিকিৎসা গ্রন্থ রচনা করেন।
*শূরপাল ছিলেন উদ্ভিদ বিদ্যায় পন্ডিত।
*পাল যুগে বৌদ্ধ দর্শন ধর্মশাস্ত্রের চর্চার প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়।
*পাল যুগে মগধে বিখ্যাত পন্ডিত।
*পাল যুগে বৌদ্ধ দর্শন ধর্মশাস্ত্রের চর্চার প্রভূত দীপঙ্কর।
*ভাস্কর্ষের ক্ষেত্রে পালযুগের দুই শেষ্ঠ ভাস্কর ছিলেন বীতপাল ও ধীমান।
# পালযুগের সামাজিক অবস্থা:::::::::::::::::
(১)বাংলার জাতিসমূহ:::::::::::::
পাল আমলে বাংলায় যেসব জাতির নাম পাওয়া যায় সেগুলো হলো কিরাত,নিষাদ,দামিল,পুন্ড্র।দামিল ও নিষাদ জাতির লোকেরা কুষিকাজ করে জীবিকানির্বাহ করত।অনুমানকরা হয় যে-পাল যুগের বাংলার জনগন তথা এসব জাতিসমূহ এক উন্নত সভ্যতা ও সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল্
(২)জাতিভেদ::::::::::::::::::
প্রাচীন যুগে আর্যদের আগমনের পর পরই জাতিভেদ প্রথার প্রচলন শুরু হয়। পাল যুগে সমাজে জনগনের শ্রেনীবিভাগ ছিল তা হল-
(১)ব্রাক্ষণ
(২)ক্ষত্রিয়
(৩) বৈশ্য
(৪) শূদ্র
এই চারটি শ্রেনীবিভাগ ছিল সমাজে ।ব্রাক্ষণরা সমাজে উচ্চ মর্যদাশীল ছিল তার পূজা যঙ্গ,যাঙ্গের আচার অনুষ্ঠান পরিচালনা করত। ক্ষত্রিয়-এর রাজপ্রসাদ সেনাপতি যুদ্ধ বিগ্রহ কাজ করত। বৈশ্য -এরা পশু পালন ব্যবসা বাণিজ্য চাষাবাদ করত।ক্ষূদ্র-এর এই ত্রিন শ্রেনী কাজে নিয়োজিত থাকত।
(৩)নারীদের অবস্থা:::::::::::::
পাল যুগে নারীদের মৃদুভাষিনী শান্তস্বভাবা, সুন্দরী বলে বর্ণানা করেছেন।বলা যায় যে পাল যুগে নারীদের অবস্থান ছিল অতি উচ্চ।পাল রাজ প্রাসাদের নারীর ছিল খুব প্রভাবশালী।পুরুষরা সাধরনত একটি বিবাহ করত। যৌতুক প্রথা প্রচলিত ছিল।পাল যুগ বিধবা নারীদেরকে সংযম ও সাধারণ মধ্যে জীবন কাটাতে হতো।
(৪)পোশাক পরিচ্ছদ::::::::::::::::
পাল যুগের সমাজে পোশাক পরিচ্ছদে কোন বিলাসিতা ছিল না । নারীরা শাড়ি পরত। মেয়েরা কখনো কখনো ওড়না ব্যবহার করত । মেয়রা শরীরের
উপরাংশ আকৃত করে রাখত। পুরুষরা সাধরনত পোশাক হিসেবে ধুতি এবং চাদর পরিধান করত, পুরুষরা নাগরা জুতা পরত।
(৫)অলংকার:::::::::::
পাল যুগের সমাজ ব্যবস্থায় নারী -পুরুষ সকলেই অলংকার ব্যবহার করত। নারীরা প্রসাধনী হিসেবে সিদুর ,কাজল খোপা বাধত,পায়ে রং দিত। নারীরা সোনা ও রুপার তৈরি অলংকার ব্যবহার করত।
(৬)খাদ্য:::::::::::::
পাল যুগের নিদর্শণ থেকে পাওয়া যায় যে-পাল যুগে ভাত ও মাছ ছিল তাদের প্রধান খাদ্য। মৌরাল মাছের তরকারি সুগন্ধ ভাত, নলিতা শাকের ঝোল ছিল উৎকৃষ্ট খাদ্য। এছাড়াও হরিণ ও পাঠা মাংস ছিল প্রিয় খাদ্য। বাঙ্গালি ব্রাহ্মণ ছাড়া সকলে সম্প্রদায় সুরা পান করত।
(৭) ধর্মীয় অবস্থা:::::::::::::::
পাল রাজার ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।কিন্তু পাল রাজারা ব্রাহ্মণ ধর্মের প্রতি সহনশীল ছিলেন। পাল যুগে বৌদ্ধ ছাড়াও ব্রাক্ষণ রাজকার্যে অংশগ্রহন করতে পারতেন।
#পাল যুগের অর্থনৈতিক অবস্থা:::::::::::::::::
(১)কৃষি:::::::::::
কৃষিই ছিল পাল যুগের জনসাধারনে প্রধান জীবিকা। ধান,আম,নারিকেল,আখ,বাশ প্রভৃতি দ্রব্য পাল আমলে প্রচুর পরিমানে উৎপন্ন হত। সেই সময় বাংলা সুগন্ধি শালিধানের জন্য বিখ্যাত ছিল। সন্ধ্যাকর নন্দী “রামচরিত” থেকে জানা যায় যে- বাংলায় নানা জাতের ধানের উৎপাদন হতো।দেবপাল মুঙ্গের লিপি থেকে জানা যায যে ,সে সময় জমিতে আম ও পুকুরে মাছ উৎপাদিত হতো । বিভিন্ন চিত্র থেকে গরু ,ঘোড়া ,শূকর, উট ,হরিণ ও বানরের কথা জানা যায়।
(২) শিল্প::::::::::::
পাল যুগের বাংলায় শিল্পের মধ্যে বস্ত্র শিল্প ছিল বিখ্যাত।বাংলার মিহি সুতার কাপড়ের আরব ও চীনা পর্যটকরা উচ্চ প্রশংসা করেছেন। চর্যাপদ থেকে জানা যায় যে, বাংলায় “দুকুল” নামে রেশমের কাপর তৈরি হতো। এছাড়াও বাংলার অন্যতম প্রধাণ শিল্প চিনি শিল্প।সেই সময় বাংলা জাহাজ নির্মাণ ছিল বেশ বিখ্যাত। বাংলায় নৌশিল্পের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
(৩) খনিজ দ্রব্য::::::::::::::
পাল যুগে বাংলায় প্রচুর পরিমান খনিজ দ্রব্য উৎপাদন হতো বলে জানা যায়। মেদিনীপুর লবন উৎপাদন এর কথা জানা যায়।পুন্ড্রবর্ধন সোনার খনি ছিল। গঙ্গায় মুক্তা পাওয়া যেত।বাংলা থেকে ভারতে লবন রপ্তানি হতো। এছাড়া বাংলায় পিতল ও কাসার জিনিস বিখ্যাত ছিল।
(৪) অভ্যন্তরীণ বানিজ্য::::::::::::::::
পাল আমলে বাংলার অভ্যন্তরীণ অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে নৌবাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল এসময়।কারণ নদীপথের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল নৌকা। নদীপথে আমদানি রপ্তানি সুবিধা থাকায় বাংলায় বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসায় কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল।
(৫) গৃহপালিত জীবজন্তু:::::::::::::::::
পাল যুগে অর্থনীতি অনেকাংশ গৃহপালিত জীবজন্তুর উপর নির্ভরশীল ছিল। গৃহপালিত পশুর মাধ্যমে একদিকে চাষাবাদ করা হত আবার অন্য দিকে দুধ ও মাংস আয়ের অন্যতম উৎস ছিল। পাল আমলে বাংলায় গৃহপালিত জীবজন্তুর মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য ছিল-গাভী ,মহিষ ,হস্তী, অশ্ব ,ছাগল ইত্যাদি।
(৬)সম্পদ বন্টন::::::::::::::::::::::
পাল সমাজে দরিদ্র শ্রমজীবী, কৃষক,কারিগরি শ্রেনী ছিল। এরা অর্থহীন বলে দরিদ্র শ্রেনী হিসাবে জীবনযাপন করত। অন্যদিকে উচ্চ শ্রেনীর লোকেরা সমৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দ্র ভোগ করত। সামন্ততান্ত্রিক সমাজে নিয়ম অনুযায়ী সামন্তরাই সমাজে অর্থ ও সমৃদ্ধি ভোগ করে সম্পদশালী হতে থাকে।
#পাল সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ দিক কী কী:::::::::::::::::
(১)শিক্ষাবিকাশ::::::::::
পাল যুগে বাংলায় শিক্ষার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছিল। পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার নির্মিত হয়েছিল। এগুলো ছিল শিক্ষাকেন্দ্র।এই যুগের পন্ডিতগনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন , লুইপা, কাহুপা প্রমুখ।
(২)বৌদ্ধ দর্শণের অগ্রগতি::::::::::::
পাল যুগে বৌদ্ধ ধমেৃ দর্শন শাস্ত্রের অগ্রগতি সাধিত হয়। এই যুগে মগধে মহা পন্ডিত ছিল দীপঙ্গর।
(৩)স্থাপত্য::::::::::::::
পাল যুগে ধর্মপাল বিক্রমশীল বিহার ও নওগা জেলা পাহাড়পুর অঞ্চলে সোমপুর বিহার নির্মান করেন। ১ম মহীপাল বৌদ্ধ গয়া দুটি মন্দির, কাশীধামে সংস্কার করেছে। এছাড়া ও দিনাজপুর ও শর্শিদাবাদ মহীপাল দীঘী নির্মাণ করেছে আর রংপুর, বগুড়া নওগা নগর তৈরি করেন।
(৪)ভাস্কার্য::::::::::::
ভাস্কার্য ক্ষেত্রে পাল যুগে শ্রেষ্ঠ দুই ভাস্কার্য বীতপাল ও ধীমান। এছাড়া ও কুমিল্লা জেলা বাঘাউরা ও নারায়পুরের প্রাপ্ত দুটি মূর্তি ছিল। তৃতীয় গোপালের সদাশিব মূর্তি ইত্যাদি।
(৫)চিত্রকলার বিকাশ::::::::::::::
পাল যুগে চিত্রকলার বিকাশ ও ব্যাপকভাবে হয়েছিল । এই যুগের উল্লেখযোগ্য চিত্রকলার মধ্যে রযেছে-প্রতিমা.ফুল,ফল,লতাপাতা ইত্যাদি।।।।।।