বল্লালসেন


বল্লালসেন
বিজয়সেনের পর তাঁর পুত্র বল্লালসেন সিংহাসনে আরোহণ করেন। নৈহাটিতে প্রাপ্ত একটি তাম্রশাসন,
ভাগলপুর জেলার কহলগ্রাম হতে ১১ মাইল দূরে সনোখার গ্রামে প্রাপ্ত একটি মূর্তিলিপি, বল্লালসেন রচিত
‘দানসাগর' ও ‘অদ্ভূতসাগর' নামক দুটি গ্রন্থ এবং আনন্দভট্ট রচিত ‘বল্লালচরিত' গ্রন্থ হতে বল্লালসেনের
রাজত্বকালের ইতিহাস জানা যায়। বল্লালচরিত সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য না হলেও এর মধ্যে সমসাময়িককালের
বিশেষ করে সামাজিক ইতিহাসের কিছু তথ্য অন্তর্নিহিত আছে। তথাপি পরবর্তীকালে সংকলিত যে কোন
গ্রন্থের মতই বল্লালচরিতের তথ্যকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে গ্রহণ করা হয়।
নৈহাটি তাম্রশাসনে বল্লালসেনের কৃতিত্ব সম্বন্ধে তেমন কোন বিবরণ নেই। তবে সনোখারে প্রাপ্ত মূর্তিলিপি
বল্লালসেন কর্তৃক পূর্ব মগধ অঞ্চল জয়ের কথা ঘোষণা করে। মদনপালের পর গোবিন্দপাল মগধের রাজা
হন। সম্ভবত তাঁকে পরাজিত করে বল্লালসেন পূর্বাঞ্চল (ভাগলপুর জেলা) অধিকার করেন। গৌড়ের ওপর
গোবিন্দপালের কোন অধিকার না থাকলেও তিনি “গৌড়েশ্বর” উপাধি ধারণ করতেন। “অদ্ভূতসাগর” গ্রন্থে
গৌড়রাজ্যের সাথে বল্লালসেনের যে যুদ্ধের উল্লেখ আছে তা নিঃসন্দেহে গোবিন্দপালের বিরুদ্ধে মগধের
পূর্বাঞ্চল অধিকারের যুদ্ধ। এই গ্রন্থে আরো বলা হয়, পিতার জীবদ্দশায় বল্লালসেন মিথিলা জয় করেন।
তবে মিথিলা সেন সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। নান্যদেবের উত্তরাধিকারীগণ
মিথিলায় রাজত্ব করেন এরূপ প্রমাণ পাওয়া যায়। কয়েক শতাব্দীকাল পরে সংকলিত জনপ্রবাদ আছে,
মিথিলা বল্লালসেনের রাজ্যের পাঁচটি প্রদেশের একটি ছিল, এটি সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাছাড়া উত্তর
বিহারে প্রচলিত ‘লক্ষণ-সম্বৎ' এর সাথে বাংলার সেনবংশের কোন সম্বন্ধ ছিল কিনা তা আজও প্রমাণের


অপেক্ষায় আছে। কারণ ‘লক্ষণ সম্বৎ' যদি সেনরাজা লক্ষণসেনের নামের সাথে জড়িত হয়ে থাকে তাহলে
বাংলার কোন জায়গায় কিংবা সেনরাজাদের বিশেষ করে লক্ষণসেন ও তাঁর উত্তরাধিকারীদের সরকারি
দলিলে এই ‘সম্বৎ' এর ব্যবহার থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু সেন দলিলে সবক্ষেত্রেই রাজ্যাঙ্কের প্রচলন। সুতরাং
‘লক্ষণ-সম্বৎ' এর প্রচলনের ভিত্তিতে বলা যায় না যে মিথিলা সেন রাজ্যভুক্ত হয়েছিল।
বল্লালসেনকে প্রচলিত কুলীন প্রথার প্রবর্তক মনে করা হয়।তবে ইদানিংকালের গবেষণার মাধ্যমে এই
সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হয় যে, কুলীন প্রথার সাথে বল্লালসেনের সম্পর্কের কোন যুক্তিযুক্ত ভিত্তি নেই। অষ্টাদশ
ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় কুলীন প্রথার বহুল প্রচলন দেখা দেয়। এই প্রথার উদ্যোক্তা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়
নিজেদের দাবীকে জোরদার করতে একে ঐতিহাসিক ভিত্তি দেয়ার চেষ্টা করেন।ফলে বিগত হিন্দু
শাসনকালে অর্থাৎ সেনযুগে কুলীন প্রথার উৎপত্তি হয়েছিল, এ ধরনের মতবাদ প্রচার করেন। যদি এই প্রথা
সেনযুগে প্রবর্তিত হতো তাহলে সে যুগের সাহিত্য ও লিপিমালায় এর উল্লেখ থাকা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু
ভবদেব ভট্ট, হলায়ূধ মিশ্র, অনিরুদ্ধ প্রমুখ সেনযুগের পন্ডিতগণ বহু বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করলেও কুলীন প্রথা
সম্বন্ধে কোন গ্রন্থ রচনা করেননি। এমনকি এ বিষয়ে কোন উক্তিও তাঁদের লেখনিতে নেই। সুতরাং কুলীন
প্রথার সাথে বল্লালসেনকে সম্পর্কিত করার কোন ভিত্তি নেই বললেই চলে। বাংলার সামাজিক প্রাধান্য
প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এ ধরনের একটি কল্পিত উপকথার প্রচার করেছে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়।
বল্লালসেন বিদ্বান পন্ডিত হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। প্রশস্তিকার তাঁকে ‘বিদ্বানমন্ডলীর চক্রবর্তী' বলে
উল্লেখ করেন। বল্লালসেন কর্তৃক রচিত দুটি গ্রন্থ প্রশস্তিকারের এই উক্তির সত্যতা প্রমাণ করে। ১১৬৮
খ্রিস্টাব্দে তিনি দানসাগর রচনা সমাপ্ত করেন। এবং ১১৬৯ খ্রিস্টাব্দে অদ্ভূতসাগর গ্রন্থ রচনা শুরু করেন।
কিন্তু সেই গ্রন্থ সমাপ্ত করেন তাঁর পুত্র লক্ষণসেন। দানসাগরের উপসংহার হতে জানা যায়, গুরু অনিরুদ্ধের
কাছে বল্লালসেন বেদস্মৃতি, পুরাণ প্রভৃতি শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন।
বল্লালসেন শৈব ছিলেন। তিনি অন্যান্য উপাধির পাশাপাশি “অরিরাজ নিঃশঙ্ক শঙ্কর” উপাধি গ্রহণ করেন।
অদ্ভূতসাগরের একটি শ্লোকে বল্লালসেনের মৃত্যুর বিবরণ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বৃদ্ধ বয়সে পুত্র
লক্ষনসেনের হাতে রাজ্যভার হস্তান্তর করে বল্লালসেন সস্ত্রীক ত্রিবেণীর কাছে গঙ্গাতীরে বাণপ্রস্থ অবলম্বন
করে শেষ জীবন কাটান।
বল্লালসেন তাঁর ১৮ বছর (আনু: ১১৬০-১১৭৮ খ্রি:) রাজত্বকালে পিতৃরাজ্য অক্ষুন্ন রাখেন এবং সেনরাজ্য
মগধে সম্প্রসারিত করেন। তবে জ্ঞানী ও পন্ডিত হিসেবেই তাঁর খ্যাতি অধিক। এই খ্যাতি বাংলায় তাঁর নাম
চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

FOR MORE CLICK HERE

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]