সেন রাজা বল্লাল সেনের শাসন আমল(১১৬০-১১৭৮ খ্রি,)


*ভূমিকা::::::::::::::::::::::::
১১৫৮ খ্রিস্টাব্দে পিতা বিজয় সেনের মৃত্যুর পর বল্লাল সেন বাংলার সিংহাসনে বসেন।বল্লাল সেনের  মাতা ছিলেন শূরবংশীয় রাজকণ্যা বিলাস দেবী। বিজয় সেনের আরো একজন স্ত্রী ছিল এবংতার গর্ভজাত সন্তান ও ছিল। সম্ভবত বল্লালসেন ছিলেন তাদের সন্ধান পাওয়া যায় না। তবে ইতিহাসে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়।বল্লাল সেন ছিলেন সেন বংশের দ্বিতীয় রাজা।বল্লালসেন চাণক্যরাজ দ্বিতীয় জগদেবমল্লের কন্যা রমাদেবীকে বিয়ে করেন।বল্লাল সেন পিতার ন্যায় “অরিরাজ নিঃশঙ্ক “শঙ্কর” উপাধি ধারণ করেন।
বল্লালসেন ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানশীল ওসুবিবেচক শাসক।তিনি যুদ্ধের পরিবর্তে সাম্রাজ্যে অভ্যন্তরীণ শান্তি -শৃঙ্খলা ও ন্যয় নীতি প্রতিষ্ঠা এবং  জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি বেশী মনোযোগী ছিলেন।নামমাত্র গোবিন্দ পালকে পরাজিত করে পাল শাসন চির অবসান ঘটিয়ে বল্লালসেন সেন বংশের যাত্রাপথকে বিপদমুক্ত করেছিলেন।বল্লাল সেন কৌলীন্য প্রথার প্রবর্তক হিসেবে বাংলার ইতিহাসে পরিচিত হয়ে আসেন।
*বল্লাল সেনের (উৎস-উপকরণ):::::::::::::::
বল্লালসেনের সম্পর্কে জানার জন্য নৈহাটি তাম্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ন।এতে ১১ টি রাজ্যাংক অঙ্কিত ছিল।বল্লাল সেনের সনোখর প্রতিমালিপি।৯টি রাজ্যাংক অঙ্কিত।বল্লাল সেনর রচিত-
*দান সাগর
*অদ্ভত সাগর
অনুমান করা হয়,১১৬৮ খ্রি, দান সাগর গ্রন্থটি সমাপ্ত করেছিলেন। কিন্তু অদ্ভত সাগর গ্রন্থটি তিনি সমাপ্ত করতে পারেন নিই।তাই পরবর্তীকালে তার পুত্র লহ্মণসেন অদ্ভত সাগর গ্রন্থটি সমাপ্ত করেন।
*বল্লালচরিত গ্রন্থ বল্লাল চরিত নামক দুটি গ্রন্থ আবিষ্কৃত হয়েছে।বল্লালচরিত প্রথম গ্রন্থটি রচনা করেন-আনন্দভট্ট।আনন্দভট্ট রচিত “বল্লালচরিত” পাঠেও তৎকালীন সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা করা যায়।তবে  “বল্লালচরিত্যের” প্রমাণিকতা সম্ভন্ধে  অনেক ঐতিহানসক মনে করেন জনশ্রুতি ও প্রবাদের উপর ভিত্তি করে রচিত।
#বল্লাল সেন রামপাল (ঢাকা জেলার বিক্রমপুর)এর নতুন রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন।
#বল্লালসেনর /পান্ডিত্য::::::::::::::::
বল্লালসেন ছিলেন একজন জ্ঞানী ও পন্ডিত ব্যক্তি। জ্ঞানের প্রতি তার যথেষ্ট অনুরাগ ছিল।জ্ঞানের প্রতি তার যথেষ্ট অনুরাগ ছিল। শিলালিপির প্রশস্তিকার তাকে  “বিদ্বানমন্ডলীয় চক্রবর্তী “ বলে প্রশংসা করেছেন। বল্লালসেন তার জীবদ্দশায় পাঁচটি গ্রন্থ রচনা করে--
(১)দানসাগর =১১৬৮ খ্রি, সমাপ্ত হয়।
(২) অদ্ভতসাগর= লহ্মণসেন সমাপ্ত করেন।
(৩) ব্রত সাগর
(৪) আচারসাগর 
(৫)প্রতিষ্ঠাসাগর =এর সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না
#বল্লাল সেনের ধর্মপরায়ণতা::::::::::::::::::::::::::
পিতা বিজয় সেনের মত বল্লাল সেন ও শৈব মতাবলম্বী ছিলেন। অন্যান্য উপাধির সাথে বল্লালসেন “অরিরাজ নিঃশঙ্ক” উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। বল্লাল সেন যাগযজ্ঞ ও শাস্ত্র চর্চায় অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন।পরধর্মের প্রতি তার কোন বিদ্বেষ ছিল না। পন্ডিতদের মতে, বল্লাল সেন তান্ত্রিক হিন্দু ধর্মের অনুরাগী ছিলেন এবং চট্টগ্রামেে আরাকান, উড়িষ্যা ও নেপাল বহু ধর্ম প্রচারক পাঠিছিলেন। ফলে এ সময় বৌদ্ধ ধর্ম দুর্বল  পড়ে এবং ব্রহ্মণ ধর্মের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। শেষ জীবনে তিনি প্রাচীন হিন্দুরীতি অনুসারণ করে বানপ্রস্থ অবলম্বন করেছিলেন। তিনি স্ত্রীসহ ত্রিবেনীর নিকট অবস্থায় করতে এবং গঙ্গাতীরেই দেহত্যাগ করেন।ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতার কারণে রাজনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে সমাজে ও তিনি
আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
#বল্লাল সেনের রাজ্য জয়:::::::::::::::::::::::::
বল্লাল সেন পিতার মতোই একজন শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন তিনি স্বীয় রাজ্য শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপন করেন। স্বীয় রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপন এবং সংস্কার সাধনের পর তিনি পাশ্ববর্তী  রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হয়েছিলেন। তার প্রাপ্ত লিপিমালার থেকে জানা যায়, তিনি যুদ্ধে লিপ্তি হয় এবং যুদ্ধে বিজয়ের কথা উল্লেখ না থাকলেও তিনি যে যুদ্ধ বিগ্রহে অসম শক্তি ও সাহাসকতার পরিচয় দিয়েছিলেন তাতে তার প্রশংসা করা হয়েছে।
*মগধ বিজয়:::::::::::::::::::::
বল্লারসেন আমলে গোবিন্দপাল ছিলেন মগধের একজন শাসক। ১১৬২ খ্রি. তার রাজ্য ধ্বংস ২য় বলে জানা যায়। ধারনা করা হয় গোবিন্দপাল বল্লালসেনের হাতেই পরাজিত হয়েছিলেন। অদ্ভতসাগর গ্রন্থে উল্লেখ করা হয় যে,বল্লালসেন গৌড়ের রাজার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। এ গৌড়রাজই যতদূর মনে হয় গোবিন্দুপাল বল্লালসেন গোবিন্দপালের নিকট থেকে মগধের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছিলেন।

*মিথিলা জয়::::::::::::::::::: 
মিথিলার কিছু অংশ বল্লালসেন রাজ্যভক্ত হয়েছিলেন। বল্লাসেন তার পিতা জীবদ্দশায় মিথিলা জয় করেছিলেন। সাস্যদেব মৃত্যুর পর মিথিলার ইতিহাসের অভাব এবং সেখানে সংবতের বহুল প্রচলন হতে মনে হয় যে-মিথিলা সেন রাজাদের অধীন ছিল। বল্লাল সেন স্বীয় রাজ্যকে ৫ ভাগে করে । বল্লাল সেনের পুত্র লক্ষ্মনসেন প্রচলিত সংবৎ মিথিলায় আন্যবধি প্রচলিত আছে।বল্লালসেন তার স্বীয় রাজ্যকে ৫ ভাগে ভাগ করেছেন।(১)রাঢ়(২)বরেন্দ্র(৩)বাগড়ী (৪)বঙ্গ (৫)মিথিলা 

#বাংলায় কৌলীন্য প্রথার উদ্ভব এবং বল্লালসেন::::::::::::::::::::::: 
বল্লালসেন বাংলায় কৌলীন্য প্রথার প্রবর্তন করেন বলে পরবর্তীকালের ঐতিহাসিকগণ দাবি করেন। বল্লালসেন হিন্দু সমাজকে নতুনভাবে গঠন করার উদ্দেশ্য ব্রাক্ষ্মণ বৈদ্য,কায়স্থ  এই তিন শ্রেনীর মধ্যে কৌলীন্য প্রথা প্রর্বতন করেছিলেন।  এ প্রথার অংশ হিসেবে সামাজিক আচার  ব্যবহার বিবাহ অনুষ্ঠান প্রভূতি বিষয়ে কুলীন শ্রেণির লোকদের বিশেয় রীতিনীতি মেনে চলতে হতো। ন্যায়পরায়ণতা ,জাতিগত পবিত্রতা ,সততা প্রভৃতি সদগুণ অর্জন করাই ছিল এ প্রথা প্রবর্তনের উদ্দেশ্য। পরবর্তী কালে এ প্রথা কার্যকর ছিল না, বরং সামাজিক অসন্তোষ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৌলীন্য প্রথার যাবতীয় গুণ লুপ্ত হয়ে সেখানে শ্রেণিবৈষিম্য,অহংকার বিভিন্ন দোষত্রটি প্রবেশ করে।সমকালীন তাম্রশাসন তাম্রলিপি,কিংবা কোন বই পুস্তুকে কৌলীন্য প্রথা বিষয় কোন রকম উল্লেখ দেখা যায় না। পরবর্তীতে উনবিংশ শতাব্দীর ব্রক্ষণ লেখকগন এ বিষয়টি বল্লাল সেনের আমলে ব্যাক্ষণ শ্রেণি বৃদ্ধি পাই ও বৌদ্ধ ধর্ম নিষ্প্রভ হয়ে যায় এইরুপ ধারণা অনেকটাই যুক্তি সঙ্গত বলে মনে হয় যে - কৌলীন্য  প্রথা প্রবর্তন হয়েছে।
#বল্লালসেনের শেষজীবন::::::::::::::::::::
বল্লালসেন জীবিত অবস্থায় থাকাকালী তার পুত্র লক্ষ্মণসেনকে সিংহাসনে বসিয়ে নিজে ও তার স্তী রমাদেবীকে নিয়ে নির্জরপুরে চলে যান। নির্জরপুর হচ্ছে একটি তীর্থস্থান। বল্লাল সেন সেখানে বানপ্রস্থ আশ্রম জীবনযাপন করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সেখানে আত্মবিসর্জন দিয়ের্ছিেলন বলে জানা যায়। বল্লালসেন বাংলার ইতিহাসে এজন জ্ঞানশীল ও সুবিবেচক শাসক ছিলেন বাংলা বিভিন্ন স্থানে আজও তার কীর্তিচিহ্ন বিদ্যমান। দিনাজপুরে পাথরঘরা নামক স্থানে বল্লালদিঘি, বল্লালবাড়ি তার নামে নমাঙ্কৃত।

FOR MORE CLICK HERE

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]