*লক্ষ্মনসের পরিচয়::::
বাংলার ইতিহাসে লক্ষ্মনসেন এক গুরুত্বপূর্ন স্থান অধিকার করে রয়েছেন। পিতা বল্লালসেন আনুমানিক ১১৭৮ খ্রিঃ মৃত্যুর পর লক্ষ্মনসেন সিংহাসন আরোহন করেন।লক্ষ্মনসেনর মাতা ছিলেন চালুক্য বংশের রাজকন্যা রমাদেবী।যখন সিংহাসন আরোহণ করেন তখন লক্ষ্মনসেনের বয়স ৬০ বছর। লক্ষ্মনসেন সম্পর্কে জানার জন্য উৎসের অভাব নেই, কিন্তু একজন রাজপুত হওয়া সত্ত্বে ও ত্র বাল্যকাল সম্পর্কে সূত্রের অভাবে রয়েছে। অনুমান করা যায় যে, একজন রাজপুত্র হওয়ার কারণে তিনি অনেকটা আরাম আয়েশে জীবনযাবপন করেছেন।সময়কালে তিনি উন্নত শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন।লক্ষ্মনসেনের বাল্রকাল সম্পর্কে যেটুকু তথ্য জানা যায় তা থেকে মনে হয় যে তিনি পিতা ও পিতামহের সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে যুদ্ধে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন।সেন বংশের বিভিন্ন সূত্র থেকে যানা যায় লক্ষণসেন পিতা ও পিতামহের রাজত্বকালে গৌড় অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন এবং কামরূম ও কলিঙ্গ রাজ্য জয় করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।সেন বংসের (লাখনাবতীর) শেষ রাজা হিসেবে রাজা লক্ষ্মণসেন ইতিহাসে সুপরিচিত ও গুরুত্বপূর্ন।তার সময সেন রাজ্য উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করেছিলো। আবার সে সময় থেকেই সাম্রাজ্যের পতন সূচিত হতে থাকে। লক্ষ্মণসেনের আমলে লখনাবতীর মুসলিম বিজয়ী ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার লাভ করেন এবং লক্ষ্মণসেনের রাজ্য বিক্রমপুরে সীমিত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সেনবংশের পতন সম্পন্ন হয়।
#লক্ষ্মণসেন সম্পর্কে জানার উৎস সমূহ::::;;
(১) লক্ষ্মনসেনর তর্পনদিঘি তাম্রশাসন
(২)লক্ষ্মনসেনর গোবিন্দপুর তাম্রশাসন
(৩)লক্ষ্মনসেনর আনুলিয়া তাম্রশাসন
(৪) লক্ষ্মনসেনর সুন্দরবন তাম্রশাসন
(৫) লক্ষ্মনসেনর ঢাকা তাম্রশাসন
(৬) লক্ষ্মনসেনর শক্তিপুর তাম্রশাসন
(৭)লক্ষ্মনসেনর ভাওয়াল তাম্রশাসন
(৮) লক্ষ্মনসেনর মাধাইনগর তাম্রশানস
#সিংহাসন আরোহণের পূর্বে রাজা লক্ষ্মসেন ::::::::::
একসময় লক্ষ্মসেনের সঙ্গে তার পিতা বল্লালসেনের মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।কথিত রয়েছে যে-লক্ষ্মণসেনের পিতা বল্লালসেন এক নিম্নবর্ণের বা নিচ বংশজাত মহিলার রুপে গুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে পত্মী হিসেবে গ্রহণ করেন। লক্ষণসেন পিতার এমন আচরনকে ভালোভাবে মেনে নিতে পারেন নি। লক্ষ্মনসেন এর তীব্র প্রতিবাদ করলে বল্লালসেন পুত্রের প্রতী ভীষণ অসন্তুষ্ট হন এবং তার উক্ত পত্নী প্ররোচনায় লক্ষ্মনসেনকে পূর্ববঙ্গে নির্বাসন করেন।অবশ্য এ অবস্থা দীর্ঘদিন বিরাজিত ছিল না।অচিরেই রাজা বল্লালসেন পুত্রের প্রতি সহানুভূতিমীল হয়ে যান। কথিত আছে যে-পিতাপুত্রের এ মিলনে লক্ষ্মনসেনের পত্মী তান্দ্রাদেবী বা তারাদেবীর অবদান রয়েছে।
লক্ষ্মনসেন তারাদেবী নামক এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন কলে জানা যায়। তারাদেবীর গর্ভজাত দুটি পুত্র সন্তান ছিল। তারা হলেন, কেশবসেন আর বিশ্বরূপসেন। পরবর্তীতে পিতার মৃত্যর পর তারা ও পূর্ববঙ্গের সিংহাসন আরোহণ করেছিলেন।
#লক্ষ্মণসেনের রাজসভায় ৫ জন সভাকবি বা গুণি পন্ডিত ছিল::::::::::::
(১)উমাপতিধর
(২)শরণ
(৩)ধোয়ী
(৪)গোবর্ধন
(৫)জয়দেব
এই ৫ জন সভাকবি সর্বদা লক্ষ্মনসেনের রাজসভা অলংকৃত করে রাখতেন। এদেরকেই লক্ষ্মনসেনের রাজসভায় “পঞ্চরত্ন” বলা হয়ে থাকে।
#রাজা লক্ষ্মনসেনর সিংহাসন আরোহণ:::::::::
লক্ষ্মণসেনের পিতা বল্লালসেন। লক্ষ্মনসেন ৬০ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। অনুমানিক ১১৭৮ খ্রিঃ সিংহাসনে বসেন। বল্লালসেন শেষ জীবনে বান প্রস্থ আশ্রম অবলম্বণ করতে যাওয়ার সময় তিনি লক্ষ্মণসেনকে সিংহাসন অর্পণ করে দিয়ে যান।রাজা বল্লালসেন ও রানী রমাদেবী এ বিখ্যাত পুত্র লক্ষ্মনসেন উপাধী ধারণ করেছিলেন “অবরিরাজ মদন-শংকর ” নামে । লক্ষ্মসেনের ধর্মীয় উপাধী ছিল - ”পরম বৈঞ্চব” এবং নরসিংহ।পিতা বল্লালসেনের মতো লক্ষ্মণসেন গৌড়েশ্বর উপাধি গর্বিত হয়েছিলেন।লক্ষ্মসেনের রাজ্য অভিষেকের সময় হতে একটি নতুন সাল গণণা শুরু হয়। এটি ছিল-লক্ষ্মণাব্দ, লক্ষ্মণ সংবৎ বা লং সং। বখতিয়ার খলজির নেতৃত্বে মুসলমানদের বাংলা বিজয়ের পরে ও এ সাল গনণা অব্যাহত ছিল। এখন ও পর্যন্ত মিথিলায় এ সাল গননা হয়ে থাকে। লক্ষ্মনসেনের আমলে বাংলা মুসলমানদের আমলে বাংলায় মুসলমানদের আগমণ কারণে তিনি প্রকটভাবে উচ্চারিত একজন শাসক।
#লক্ষ্মণসেনের রাজ্য জয়::::::
(১) গৌড় রাজ্য জয়:::::::::::::
লক্ষ্মণসেন গৌড়েশ্বর উপাধি ধারণ করেছিলেন ।লক্ষ্মসেনের ভাওয়াল ও মাধাইনগর লিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে - তিনি গৌড় রাজ্য জয় করেছিলেন। গৌড় রাজ্য জয়ের সময় গৌড়ের রাজা দ্রুত পালায়নে বাধ্য হন। যতদূর ধারণা করা যায় তিনি তার পিতামহ বিজয় সেনের শাসনামলে গৌড়রাজ্য জয় করেছিলেন। এ কারণে লক্ষণসেনের নামনুসারে গৌড়ের রাজধানীর নাম লখনাবতী রাখা হয়েছিল।
(২)কামরূপ রাজ্য জয়:::::::::
কামরূপ রাজ্য জয় করেছিলেন লক্ষ্মণসেনের আমলে না তার পিতামহ বিজয় সেন এর আমলে এই নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কামরুপ রাজ্যর রাজা ভীত হয়ে লক্ষ্মসেনের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য হন। ধারনা করা যায় যে, বিজয়সেন কামরুপ রাজাকে বিতাড়িত করলে ও তা বিজয় সফলতা সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারেন নি। পরবর্তীতে রাজা লক্ষ্মনসেন কামরূপ রাজ্য সম্পূর্ণভাবে বিজয় সম্পন্ন করেন।
(৩)কলিঙ্গ রাজ্য জয়::::::::
লক্ষ্মসেনের ভাওয়াল ও বাধাইনগর লিপি থেকে যানা যায়-লক্ষ্মণসেন যৌবনে কলিঙ্গ দেশ অভিযান পরচিালনা করেন।অর্থাৎ লক্ষ্মনসেন পিতামহ বিজয় সেনের সঙ্গে কলিঙ্গ অভিযানে অংশগ্রহণ করে সফল হণ।পরবর্তীতে কলিঙ্গ দেশ সেন অধীনে কতদিন স্থায়িত্ব লাভ করেছিলেন সে সম্পর্কে কোন ধারণা পাওয়া যায় না।
(৪)গাহড়বাল রাজ্য জয়:::::::::
বিজয়সেন ইতঃপূর্বে নৌ-অভিযানের মাধ্যমে গাহড়বাল অভিযান করেছিলেন। সেন শাসনামলে গাহড়বাল রাজাদের সঙ্গে সেনদের সম্পর্ক ভালো ছিল না এবং প্রতিদ্বদ্বিতাপূর্ন ছিল। লক্ষ্মনসেন গাহড়বাল রাজা জয়চন্দ্রকে পরাজিত করে রাজ্য বিস্তার করেছিলেন।
(৫)ম্লেচ্ছ রাজার পরাজয়::::::::::::
লক্ষ্মনসেনর সভাকবি শরণ ও উমাপতিধর শ্লোক রচিত থেকে বলা হয়- ম্লেচ্ছ রাজাকে লক্ষ্মনসেন পরাজিত করেছিলেন। ড.নীহারঞ্জন রায় আনুমান করেন যে -বখতিয়র খলজি কর্তৃক নদীয়া জয়ের পূর্বে লক্ষ্মনসেন ম্লেচ্ছ রাজার বিরেুদ্ধে জয়লাভ করেছিলো।কিন্তু অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন ম্লেচ্ছ বলতে- আরাকানী মগধেরকে বুঝায় তাদের ধারনা মগধরা হয়ত বাংলায় আগমন করেছিলেএবং লক্ষ্মনসেন তাদেরকে পরাজিত করেন।
#বখতিয়ার খলজীর আক্রমণ:::::::::
লক্ষ্মনসেনর শেষ জীবন সুখের হয় নিই। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলো একে একে তুর্কিদের হাতে দখল হতে থাকে।ক্রমে তুর্কিরা বাংলাই প্রবেশ করতে থাকে।১২০৪ খ্রিঃ বখতিয়ার খলজী লক্ষ্মণসেনর রাজধানী নদীয়া আক্রমণ করেন। বৃদ্ধ লক্ষ্মনসেন তখন নদীয়ায় অবস্থান করেছিলো।বখতিয়ার খলজী অনেক দূরদর্শী সাহসী সৈনিক ছিলেন। বাংরায় অভিযানের পূর্বেই তিনি বাংলার অভ্যন্তরীণ অবস্থা, বাংলার রক্ষাব্যবস্থা,বাংলায় প্রবেশের বিভিন্ন পথ সম্পর্কে অবগত হয়েছিলেন। তিনি বাংলার প্রবেশের সহজ পথ বর্জন করে দুর্গম পাহাড়ের পথ দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করেন।অর্থাৎ অরন্য অঞ্চল গয়া ও ঝাড়খন্ডের মধ্যে দিয়ে নদীয়া এসে পৌছান।
তবাকাত -ই- নাসিরী গ্রন্থে বর্ননা থেকে জানা যায়--বখতিয়র খলজী আরব অশ্ব বিক্রেতার ছদ্মবেশে মাত্র ১৮ জন অশ্বরোহী নিয়ে লক্ষ্মনসেনের প্রসাদের সম্মুখে বিনা বাধায় উপস্থিত হয়ে প্রাসাদরক্ষীদের হত্যা করা শুরু করেন। তখন শহরে শোরগোল শুরু হয়ে যায়। এই সময় ছিল দুপুরঅ সৈন্য - সামন্তরা কৈউ কেউ দুপুরের খাবার খাওয়া কিংবা খাবারের পরের আলস্যতায় মগ্ন ও অসচেতন াছল। রাজা লক্ষ্মনসেন এ সময় মাধ্যাহ্নভোজনে বসেছিলেন।এই সময় প্রাসাদ - এ শোরগোল ও উচ্চকন্ঠে আর্তনাদ শুনে রাজা লক্ষণসেন ভীত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে জ্যেতিষী পন্ডিদের ভবিষ্যদ্বানী ও তুর্কি জাতি কর্তৃক বঙ্গ অভিযান, কথা ও তার স্মৃতিতে ছিলো বিধায় রাজা কাল বিলম্ব না করে অন্য কোন উপায়ের চিন্তা না করে প্রাসাদের পিছনের দরজা দিয়ে পালয়ন করেন এবং নৌকাযোগে পুর্ববঙ্গের বিক্রমপুরে আশ্রয় নেনেএর ফলে রাজা লক্ষ্মণসেনের বিপুল ধনসম্পদ ও বহুসংখ্যক হাতি বখতিয়ার খলজী হস্তগত হয়। অতএব বখতিয়ার পক্ষে বাংলা অভিযানে আর বাধা রইল না। ইতোঃমধ্যেই বখতিয়ার খলজীর পেছনে থাকা সৈন্য বাহিনী তার সাথে যোগ দিয়েছে। এই ভাবে নদীয় বিজয় সম্পন্ন হয়।উত্তর ও পশ্চিম- বাংলা বখতিয়ার সহজেই অধিকার করে নেন এবং লক্ষ্মণাবতীকে কেন্দ্র করে বংলায় মুসলিম শাসক প্রতিষ্ঠা করেন।
#লক্ষ্মণসেনের সাহিত্যনুরাগ::::::::::::
লক্ষ্মণসেন শাস্ত্রচর্চায় পিতার উপযুক্ত পুত্র ছিলো। বল্লাল সেনের নির্দেশক্রমে তিনি তার আরম্ভ “অদ্ভত সাগর” গ্রন্থ সমাপ্ত করেন।তিনি সুকবি ও সপন্ডিত ছিলেন। তার রচিত কয়েকটি শ্লোক পাওয়ার গেছে। তার রাজ সভায় বহু পন্ডিত ও জ্ঞানীজনের সমাবেশ ঘটেছিল। লক্ষ্মণসেনের সময়ে গোবর্ধন “আর্য সপ্তদর্শী” জয়দেব “গীতগোবিন্দ” এবং ধোয়ী পবনদূত রচনা করে খ্যাতি লাভ করেন।
**লক্ষ্মনসেন পিতা ও পিতামহের মতো বাংলার সেন বংশের গৌরবময় শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলার সর্বশেষ হিন্দু রাজা । তিনি ছিলেন সেন বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক । তার সময়ের মুসলিম সেনাপতি বখতিয়ার খলজী বাংলা দখল করে বাংলায় মুসলিম শাসন সূচনা করেন।
সেন বংশের পতনের কারণ
by Sohidul islam on August 22, 2019 in সেন আমল
সেনদের ধংষের চিত্র
ভূমিকা::::
একাদশ শতাব্দীতে পাল বংশের পতনের পর বাংলায় সেন বংশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হয়। দক্ষিণ্যত্যের কর্ণাট দেশ সেন বংশের রাজাদের আদি বাসভূমি। দাক্ষিণ্যত্যে থাকাকলীণ তার প্রথমে ব্রাহ্মণ ছিলেন। কালক্রমে তারা ব্রাহ্মণ্য বৃত্তি ত্যাগ করে ক্ষত্রিয় বৃত্তি গ্রহন করেন এবং ক্ষত্রিয় নামে পরিচিত হন।
**পৃথিবীতে উথান, পতন, বিকাশ, এটি একটি চরম সত্য বানী ।অনেক বড় সাম্রাজ্যে ধ্বংস হয়েছে বলে নজির পাওয়া যায় ঠিক তেমনি বাংলায় সেন বংশেরর ও চির অবসান ঘটে।সেনরা কর্নাট থেকে বাংলায়ে এসে পালদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতা দক্ষল করেন।সামন্ত সেনের হাতে সেন বংশ প্রতিষ্ঠা হয়, বিজয় সেনের হাতে সেন বংশ পরিপূর্ণতা লাভ করে।আর বল্লাল সেন ও লক্ষ্মণ সেন এর হাতে সেন বংশ চরম উন্নতি সাধন করে। অবশেষে সময়ের সন্ধিক্ষনে ১২০৪ খ্রিঃ বখতিয়ার খলজী লক্ষ্মন সেনকে পতনের মধ্যে দিয়ে বাংলা থেকে চিরতরে সেন বংশের অবসান ঘটে।
##সেন বংশের পতনের করণ সমূহ::::::::::
(১)ইবনে খালদুনের মতামত::
ইবনে খালদুন মানুয়ের জীবন কাল কে ১২০ বছর মনে করেন। কোন সাম্রাজ্যের জবিনকালও একই। তিনি কাল সদ্ধিক্ষনের অনুযায়ী বলেন একটি সাম্রজ্যে তিন পুরুষ অধিক স্থায়ী হয় না। তিনি এক এক পুরুষকে ৪০ বছর করে ধরে মোট তিন পুরুষের ১২০ বছর ধরেছেন।সুতরাং বাংলায় সেন বংশ একই রকম ছিলো।
(২)শ্রেণি দ্বন্দ্ব:::::
শ্রেনি দ্বন্দ্ব ছিল সেন কংশের পতনের অন্যতম কারণ । সেন রাজারা কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করেন। এই প্রথার ফলে মূলত জাতিভেদে দেখা যায়।ব্রহ্মনরা সাধারনত কুলীন গোত্রীয় শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। আবার কায়স্থরা কুলীন কায়স্থ ও মৌলিক কায়স্থ ইত্যাদি শ্রেনিতে বিভক্ত ছিল।যায় ফলে সমাজে শ্রেণি বৈষম্য দেখা দেয় যা পরে শ্রেনি দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। সেনরা জাতিভেদ করে কঠোর অনুসাশন করতো। সেনরা ব্রাহ্মনাদের দিয়ে উচু জাত এবং নিম্ন জাত নির্নয় করেতেন। আর সমাজের উচ্চ শ্রেণিরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করতো।
(৩)পরধর্মে সহিঞ্চুতার অভাব:::::
বাংলায় পালরা পর ধর্মের প্রতি সহিঞ্চু ছিলেন । কিন্তু সেনরা তা ছিলো না।এটা ও পতনের অন্যতম কারণ।
(৪)প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা:::::::::::
বাংলা সেন শাসনমলে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সেনরা তাদের পছন্দ মতো প্রশাসনের লোক নিয়োগ করোত । ফলে অনেক লোক অযোগ্য এই প্রশাসনিক খাতে ঢুকে পরতেন। সেই সময় থেকে প্রশাসনিক খাত দুর্বল হতে থাকে ।এভাবে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
(৫) অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ:::::
সেনদের পতনের অন্যতম কারণ অভ্যন্তরীন বিদ্রোহ। সেন রাজা লক্ষ্মণ সেনের দুর্বলতায় সুযোগ নিয়ে সুন্দরবনের শাসক ডেম্মন পাল একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। আর মেঘনা নদীর তীরে মুধুমথনদেব “স্বাধীন দেব বংশ” প্রতিষ্ঠা করেন।তখন লক্ষ্মণ সেন তার প্রতিকার করতে পারে নিই।
(৬)যেগ্য শাসকের অভাব::::::::::
বিজয় ,লক্ষ্মণ সেনের পর সেন বংশে তেমন কোন শক্তিশালী ও দক্ষ শাসক ছিলো না। লক্ষ্মণ সেন এর পর আর কোন যোগ্য শাসক আসেনি। ১২৬০ খ্রিঃ পর্যন্ত সেনদের বাংলায় অস্তিত টিকে ছিলো। কিন্তু তারা ছিলো অযোগ্য।
(৭)সামরিক বাহিনীর দুর্বলতা:::::::
লক্ষ্মণ সেন আমলে সামরিক বাহিনী ছিলো দুর্বল শাসক। এই সামরিক বহিনীর পূর্বে মতো কোন ধৈর্য শক্তি ছিলো না। ফলে এই দুর্বল বাহিনী বিদেশীদের হাতে পরাস্থ হয়।
(৮)জনসমর্থনের অভাব:::::::
সেন রাজদের প্রতি জনগনের কোন সমর্থন ছিলো না। সেনরা সামজে ৪ টি শ্রেণিতে বিভক্ত করে উচ্চ শ্রেণির সাথে নিচু জাতের বিবাহ বন্ধ করে দেয়। আবার সামাজিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ করেণ। সমাজের বেশীর ভাগ মানুষ ছিলো নিচু জাতের। তাদের সমকিছু থেকে বঞ্চিত করা হতো।
(৯) শাস্ত্রের ইঙ্গিত::::::::
১২০৩ খ্রিঃ বখতিযার খলজী বিহার জয় করলে সেন বংশের পন্ডিতরা লক্ষ্মণ সেন কে সাবধান করে দেয়। লক্ষ্মণ সেন এই ভীতি কাটিয়ে তোলার জন্য ইন্দ্রিয় মহাশক্তি যজ্ঞ অনুষ্ঠান করেছিলেন।এই যজ্ঞে পন্ডিতরা বলেন বঙ্গ তুর্কী শাসক কর্তৃক হস্ত ক্ষেপ হবে। তারা আরো তুর্কী শাসকের দৈহিক বর্ননা দিয়েছিলেন যা বখতিয়ার খলজীর সাথে মিলে যায়।
(১০) অর্থহৈনিক কারণ:::::::::
পতনের সময় সেন সাম্রজ্যের অর্থনীতি একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। বিভিন্ন বিশৃঙ্খলায় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে খারাপ হয়ে যায়।