আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম উপযুক্ত নানা ঘটনাবলীর

আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম উপযুক্ত নানা ঘটনাবলীর মধ্যদিয়ে বিক্ষুদ্ধ আমেরিকানরা ক্রমেই ব্রিটিশ শাসন হতে মুক্ত হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। উপনিবেশের পর উপনিবেশ ক্রমেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রতিরােধ আন্দোলনে যােগ দেয়। এমতাবস্থায় আমেরিকায় ১৩ টি উপনিবেশের মধ্যে জর্জিয়া ব্যতিত অবশিষ্ট ১২ টি উপনিবেশের ৫৬ জন প্রতিনিধি ১৭৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ফিলাডেলফিয়া নগরীতে মিলিত হয় যা ছিল আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ। স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনাবলী আমেরিকার ১৩ টি উপনিবেশ অথাৎ আমেরিকান কংগ্রেস স্বাধীনতার ঘােষণা করে (Declaration of Independence) ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই । স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত হন জর্জ ওয়াশিংটন। টমাস জেফারসনের নের্তৃত্বে ৫ সদস্যের একটি কমিটি স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র রচনা করেন। ঘােষণাপত্রের প্রথম অংশে সকল ব্যক্তির সমান অধিকারের কথা উল্লেখ পূর্বক যেসব অধিকার সব মানুষের ভােগ করা উচিৎ সে সব অধিকারের একটি তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। দ্বিতীয় অংশে ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় জর্জ কর্তৃক মানুষের অধিকারগুলাে যে ভাবে অগ্রাহ্য করা হয়েছিল তার। বর্ণনা দেয়া হয় এবং তৃতীয় অংশে ঘােষণা করা হয় যে, আজ হতে আমেরিকান উপনিবেশের জনগণ ব্রিটেনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কচ্ছেদ করেছে। তৃতীয় অংশে উল্লেখিত স্বাধীনতার ঘােষণার উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত ব্রিটিশ বিরােধী শক্তির সাহায্য ও সহানুভূতি লাভ করা। অবশ্য এর পূর্বেই ম্যাসাচুসেটস রাজ্য মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মহড়া দিতে শুরু করে। এ অবস্থায় মিলিশিয়াদের যুদ্ধের সব সরঞ্জাম নষ্ট করতে বােস্টনে ব্রিটেনের একদল সৈন্য প্রেরণ করা হয় । কিন্তু ১৭৭৫ সালের এপ্রিল মাসে লেকজিনটন নামক স্থানে স্থানীয় বাহিনী ব্রিটিশ সৈন্যদেরকে আক্রমণ করে। এ সময় হতে শুরু হয় আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ । লেকনিটনের ঘটনার পর উপনিবেশের যােদ্ধারা বােস্টনে অবস্থানরত ব্রিটিশ বাহিনীকে অবরােধ করে রেখে তাদেরকে বােস্টন ছেড়ে যেতে বাধ্য করে। ১৭৭৬ সালে ব্রিটিশরা শক্তিশালী অভিযান প্রেরণ করে প্রথমে নিউইয়র্ক ও পরে নিউজার্সি দখল করে । এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন ব্রিটিশ জেনারেল হউ। এরপর দক্ষিণ দিকের উপনিবেশ হতে নিউ ইংল্যান্ড উপনিবেশেটিকে আলাদা করতে ব্রিটিশ বাহিনী ১৭৭৭ সালে আমেরিকায় ব্যাপক অভিযানের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী পরিচালিত অভিযানে ব্রান্ডিওয়াইন নামক স্থানে ব্রিটিশ সেনাপতি জেনারেল হউ এর নিকট আমেরিকার প্রধান সেনাপতি জর্জ ওয়াশিংটন পরাজিত হয়ে ফিলাডেলফিয়া ত্যাগ করে। কিন্তু কানাডা হতে দক্ষিণ দিকে অগ্রসরমান ব্রিটিশ জেনারেল বারগায়নি স্যারাটোগাতে (Saratoga) আমেরিকান জেনারেল গেটস এর নিকট শােচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে সমত্ম সৈন্যসহ আত্মসমর্পণ করে।
আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস স্যারাটোগা ঘটনার পর উপনিবেশসমূহের পক্ষে কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ। তসেবে ফ্রান্স গমন করেন আমেরিকার কূটনীতিক বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। ফ্রাঙ্কলিনের তৎপরতায় ফ্রান্স উপনিবেশসমূহের সঙ্গে ১৭৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সামরিক চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্স আটলান্টিক মহাসাগরে ব্রিটিশ নৌ বাহিনীকে প্রতিরােধ করতে শুরু করে এবং উপনিবেশসমূহকে সৈন্য ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে থাকে। ব্রিটেনের নিকট হতে জিব্রাল্টার ও মিনকা পুনরুদ্ধার করতে স্পেনও ১৭৭৯ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করে। এদিকে ফ্রান্স ও তার মিত্রগণ যেন। সমদপথে উপনিবেশসমূহে যুদ্ধ সরঞ্জামসহ অন্যান্য সাহায্য প্রেরণ করতে না পারে। সেজন্য ব্রিটিশ বাহিনী শত্রুপক্ষের জাহাজ তল্লাশীর পাশাপাশি নিরপেক্ষ দেশের। জাহাজও তল্লাশী করতে থাকে। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাশিয়ার নেতৃত্বে প্রুশিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশ ‘আমড় নিউট্রালিটি অব দ্য নর্থ’ নামে একটি মিত্র সংঘ গঠন করে। এ সময় হল্যান্ড তার অধিনত্ম পশ্চিম ভারতীয় একটি দ্বীপকে আমেরিকার যুদ্ধ সরঞ্জাম রাখার ডিপাে হিসেবে ব্যবহার করতে দিচ্ছে-এ অভিযােগে ব্রিটেন হল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করে। এভাবে ১৭৮০ সাল নাগাদ ব্রিটেন নিজেই। নিজের জন্য বহু শত্রু সৃষ্টি করে। স্যারাটোগার ঘটনার প্রতিশােধ নিতে ব্রিটিশ জেনারেল কর্নওয়ালিশ (ইনি পরবর্তী সময়ে ভারতের গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন) ১৭৮১ সালে নর্থ ক্যারােলিনা আক্রমণ করে আমেরিকান জেনারেল মি গেটসকে পরাজিত করেন। এরপর কর্নওয়ালিশ ভার্জিনিয়া প্রবেশ করে অন্যান্য ব্রিটিশ বাহিনীর সাহায্য চান। ইতােমধ্যে ইউরােপীয় দেশগুলাের সঙ্গে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ার কারণে সমুদ্রের উপর ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পায় । ফলে দ্রুত সৈন্য প্রেরণের ক্ষেত্রে ব্রিটেন সমস্যায় পড়ে। ইতােমধ্যে নিজের সঙ্গে থাকা। সৈন্যের চেয়ে অনেক বেশি আমেরিকান ও ফরাসি সৈন্য দ্বারা কর্নওয়ালিশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত ১৭৮১ সালে আমেরিকা ও ফরাসি সৈন্যদের কাছে ইয়র্ক টাউনে আত্মসমর্পণ করেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ব্রিটেন চুড়াত্মভাবে পরাজিত হয় ।
প্যারিস শান্তি চুক্তি ১৭৮৩: আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৭৮৩ সালে প্যারিস শান্তি চুক্তি সম্পাদনের মধ্যে দিয়ে। ব্রিটিশ সেনাপতি কর্নওয়ালিশ ১৭৮১ সালে ৭,০০০ সৈন্যসহ ভার্জিনিয়ার ইয়র্ক টাউনে আমেরিকান ও ফরাসি সৈন্যদের নিকট আত্মসমর্পণ করার মধ্যদিয়ে মূলত ব্রিটিশদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটেছিল। কারণ এ ঘটনার পর দু'পক্ষের মধ্যে আর তেমন কোনাে লড়াই সংঘটিত হয়নি। এসময় হতেই ইংল্যান্ডে যুদ্ধ বন্ধের দাবি ওঠে। ১৭৮২ সালে প্রথমে দু'পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। ব্রিটিশরা আমেরিকার সঙ্গে একটা মীমাংসার জন্য মাঝে মধ্যে চেষ্টা করলেও কোনটিই সাফল্যমণ্ডিত হয়নি। ১৭৮২ সালের ২০ মার্চ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব গৃহীত হয়। উল্লেখ্য, ফরাসিরা আমেরিকার স্বাধীনতা যুদে অবদান রাখলেও তারাও চাচ্ছিলনা যে আমেরিকায় একটি শক্তিশালী সরকার হােক। অন্যদিকে ব্রিটেন দুর্বল হােক সেটাও ছিল ফ্রান্সের উদ্দেশ্য । স্পেন এ্যাপেলেচিয়ান পর্বতমালা হতে মিসিসিপি নদ পর্যন্ত এলাকার উপর । দাবি করে। ফরাসিরা চাচ্ছিল আমেরিকানদের মাধ্যমে স্পেনের ক্ষতি পচত । স্বাভাবিক ভাবেই আমেরিকানদের সামনে প্রতীয়মান হয় যে, ফরাসিরা সg.. আমেরিকার বন্ধু, তারচেয়ে বেশি ব্রিটেনের শক্র। এ অবস্থায় আমেরিকান কাল বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, জন এ্যাডামস এবং জন জে ব্রিটেনের সঙ্গে স্বতন্ত্র আলােচন মাধ্যমে ১৭৮৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ভার্সাই প্রাসাদে চলে ভাবে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। শান্তি চুক্তির শর্তাবলী ছিল নিম্নরূপ: সম্ভব কলােনী হতে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে।
২. আমেরিকার সীমানা হবে উত্তরে গ্রেটলেক ও কানাডা, দক্ষিণে ফ্লোরিডা রাজেরে উত্তরের ৩১ ডিগ্রী অক্ষাংশ পর্যন্ত এবং পশ্চিমে মিসিসিপি নদ পর্যন্ত (এর ফলে আমেরিকার আয়তন নির্ধারিত হয় ৮২৭৮০০ বর্গ মাইল এবং লােকসংখ্যা হয়। ৩২,৫০,০০০ জন)।
৩. মিসিসিপি নৌপথ উভয়ের জন্য উন্মুক্ত হবে এবং আমেরিকা নিউ ফন্ডল্যান্ডের নদী (New Foundland) ও কানাডিয়ান উপকূলে মাছ ধরার অধিকার পাবে ।
৪. সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ শেষে (১৭৫৬-৬৩) ১৭৬৩ সালে ব্রিটেন কর্তৃক স্পেনের নিকট হতে দখলকৃত ফ্লোরিডা ও মিনকা একটি পৃথক চুক্তির মাধ্যমে স্পেনকে ফেরত দেবে এবং টোবাগাে ও সেনেগালের উপর ফ্রান্সের কর্তৃত্ব স্বীকার করবে।
৫. ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের নিকট আমেরিকার যে ঋণ ছিল তা আমেরিকা পরিশােধ করবে। উপযুক্ত শর্তাবলীর আলােকে স্বাক্ষরিত প্যারিস শান্তিচুক্তি ছিল আমেরিকানদের জন্য বিরাট একটি কূটনৈতিক বিজয়। এ চুক্তির ক্ষেত্রে আমেরিকানরা তাদের কূটনৈতিক মেধা, যােগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে পৃথিবীর অন্যতম সেরা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ব্রিটেনকে যেমন মাথা নােয়াতে বাধ্য করেছিল, তেমনি ফ্রান্সের অতি প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে সমর্থ হয়েছিল। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সামরিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ব্রিটেন যে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিল প্যারিস শাতি চুক্তি ছিল তারই চূড়ান্ত পরিণতি।

FOR MORE CLICK HERE

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]