আমেরিকার শাসনতন্ত্র প্রণয়নঃ- আমেরিকার সংবিধান রচনার পটভূমি আলোচনা কর.

আমেরিকার শাসনতন্ত্র প্রণয়নঃ-

শাসনতন্ত্র বা সংবিধান হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের অপরিহার্য একটি অধ্যায় । সুতরাং সংবিধান বা শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা যে কোনো স্বাধীন দেশের জন্যই একটি স্বাভাবিক ঘটনা । তাই আমেরিকার শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও একটি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে স্বীকৃতি । তবে এ সাধারণতন্ত্র প্রণয়ন প্রক্রিয়া, অনুমোদনের জটিলতাও এর স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য শাসনতন্ত্রের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে ।

ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে বেরিয়ে আমেরিকা ১৩টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে অঙ্গরাজ্য নিয়ে একটি কনফেডারেশন গঠন করে। ১৭৭৬ সালের ২০ মে  কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অঙ্গরাজ্যগুলোকে নিজ নিজ সরকার গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয় । কনফেডারেশন এবং এসব অঙ্গরাজ্য পরিচালিত হতো । ১৭৭৭ সালে কংগ্রেস কর্তৃক গৃহীত আর্টিকেলস অব কনফেডারেশন বা  কনফেডারেশনের বিধানাবলীর মাধ্যমে । কিন্তু রাজ্য গুলোর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় ক্ষেত্রে সংবিধানের কিছু নীতির সংস্কার অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে । তাই আর্টিকেলস অব কনফেডারেশন সংস্কারের জন্য আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পরামর্শ অনুযায়ী ১৭৮৭ সালে সকল রাজ্যের অংশগ্রহণমূলক একটি কনভেনশনের আয়োজন করা হয় । অবশেষে ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ব্যাপক আলোচনার মধ্য দিয়ে মার্কিন শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা হয় । আমেরিকার প্রথম প্রধান বিচারপতি জেমস মেডিসন সংবিধান প্রণয়নের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তাকে আমেরিকার সংবিধানের জনক ( Father of the Constitutions )  বলা হয় । 

ফিলাডেলফিয়া সম্মেলন ১৭৮৭ : 

আমেরিকার শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । এ সম্মেলনে মার্কিন শাসনতন্ত্র প্রণীত হয় । পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৭৮৭ সালের মে থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর । সম্মেলনে সংবিধান রচনা কমিটির প্রধান ছিলেন ভার্জিনিয়ার প্রতিনিধি জর্জ ওয়াশিংটন । যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ টি অঙ্গরাজ্যের মধ্য থেকে ১২ টি অঙ্গ রাজ্যের মোট ৫৫ জন প্রতিনিধি ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন । শুধু রোডস আইল্যান্ড তাদের কোনো প্রতিনিধি সম্মেলনে পাঠাইনি । দীর্ঘ ৫ মাস পরিশ্রম করে বহু বাক-বিতন্ডার পর ১৭ সেপ্টেম্বর শাসনতন্ত্রের কাজ সম্পন্ন করা হয় । 

সম্মেলনের প্রেক্ষাপট : 

ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তিলাভের পর আমেরিকা ১৩টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । আর্টিকেলস অব কনফেডারেশনের মাধ্যমেই অঙ্গরাজ্য গুলি শাসিত হতো । কিন্তু একপর্যায়ে বৈদেশিক বাণিজ্য, পশ্চিম অঞ্চলের উন্নয়ন, টেক্স,  অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যকার সীমান্ত বিরোধ,  মুদ্রা ইত্যাদি প্রশ্নে ব্যাপক বিশৃংখলা দেখা দেয় । ফলে এসব সমস্যা প্রচলিত আর্টিকেলস অব কনফেডারেশনের মাধ্যমে সমাধান করা অসম্ভব হয়ে পড়ে । জর্জ ওয়াশিংটন , জন এডামস প্রমুখ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও উপলব্ধি করেছিলেন যে , একটা বড় রকমের পরিবর্তন ছাড়া অঙ্গরাজ্য সমূহের ঐক্যের স্থায়িত্ব বিধান করা যাবে না । কারণ শাসনতান্ত্রিক সংশোধনীর মাধ্যমে সরকারের খাজনা আদায়ের সীমিত ক্ষমতা প্রদানের সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয় । এছাড়া বৈদেশিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তা এককভাবে কোন রাষ্ট্রের পক্ষে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব ছিল না । তাই কনফেডারেশনের কিছু নীতি সংস্কারের প্রয়োজনে অঙ্গরাজ্যগুলোর নেতৃবর্গ এগিয়ে আসেন । এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ১৭৮৫ সালে ম্যারিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ মাউন্ট ভার্নন কনফারেন্সের আয়োজন করেন । কনফারেন্সের  মূল উদ্দেশ্য ছিল আর্টিকেলস অব কনফেডারেশনের সংস্কারের প্রশ্নে অঙ্গরাজ্যগুলোকে একত্র করা । এই কনফারেন্সের ধারাবাহিকতায় ১৭৮৬ সালে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য এনাপোলিনে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ভার্জিনিয়া , পেনসিলভানিয়া , ডেলওয়ার , নিউজার্সি এবং নিউইর্ক  এ ৫টি রাজ্যের  ১২ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন । নিউইয়র্কের প্রতিনিধি আলেকজান্ডার হ্যামিলটন সম্মেলনে লিখিত রিপোর্ট পেশ করেন এবং আর্টিকেলস অব কনফেডারেশনের সংস্কারের জন্য একটি ফেডারেল সম্মেলন আয়োজনের জন্য মার্কিন কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানান । ২১ ফেব্রুয়ারি ১৭৮৭ সালে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অঙ্গরাজ্যসমূহকে মে মাসের ফিলাডেলফিয়ার অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠানোর আমন্ত্রণ জানানো হয় । সম্মেলনে জর্জ ওয়াশিংটনকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং সংবিধান রচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় । তাদের মধ্যে ৩২ জন ছিলেন আইনজীবী, ১১  জন বণিক, ৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব , ২জন সামরিক ব্যক্তিত্ব , ২ জন চিকিৎসক , ২জন শিক্ষক , ১ জন আবিষ্কারক এবং ১জন কৃষক । তবে সম্মেলনে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব টমাস জেফারসন , জন এডামস এবং পেট্রিক হেনরি অনুপস্থিত ছিলেন । রাষ্ট্রীয় কাজে  তারা তখন দেশের বাইরে অবস্থান করেছিলেন । 

সম্মেলনে উত্থাপিত পরিকল্পনা সমূহ : 

১৭৮৭ সালের ২৫ মে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলন আর্টিকেলস অব কনফেডারেশনের সংস্কারের উদ্দেশ্যে আহ্বান করা হলেও জাতীয়তাবাদী নেতারা নতুনভাবে জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন । এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা সম্মেলনে উত্থাপিত হয় । পরিকল্পনা সমূহ ছিল নিম্নরূপ : 

ভার্জিনিয়া পরিকল্পনা : 

২৯ মে ১৭৮৭ সালে এডমান্ড র‌্যানডল্ফ ভার্জিনিয়া পরিকল্পনা সম্মেলনে উত্থাপিত করেন ।এ পরিকল্পনা রচনা করেছিলেন জেমস মেডিসন । যেখানে গুরুত্বপূর্ণ সেই বিষয়গুলো উল্লেখ ছিল সেগুলো হলো: 

১) দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা থাকবে । 

২) উভয় কক্ষের প্রতিনিধি জনসংখ্যা অনুপাতে নির্বাচিত হবে । 

৩) নিম্নকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে । 

৪) উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন নিম্নকক্ষ দ্বারা । 

৫) উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আইনসভা থাকবে । 

৬) পৃথকভাবে অঙ্গরাজ্যের যে সকল বিষয়ে আইন প্রণয়নের অধিকার নেই , কেন্দ্রীয় আইন সভায় সেই সকল বিষয়ে আইন প্রণয়নের অধিকার থাকবে । 

৭) বিচার বিভাগের গঠন প্রক্রিয়া এবং 

৮) ফেডারেল সরকারের বিধানসমূহ মেনে চলতে অঙ্গরাজ্যগুলোকে বাধ্য করার প্রক্রিয়া ইত্যাদি । 

নিউজার্সি পরিকল্পনা : 

১৫ জুন ১৭৮৭ সালে উইলিয়াম প্যাটারসন নিউজার্সি পরিকল্পনা সম্মেলনে উত্থাপিত করেন । এ প্রস্তাবটি ছিল মূলত ভার্জিনিয়া প্রস্তাবের পাল্টা প্রস্তাব । তার মতে বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর হাতে অধিক ক্ষমতা প্রদান করা হলে তারা ছোট রাষ্ট্রগুলোকে শোষণ করবে । এ পরিকল্পনার উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল- 

১) এক কক্ষ বিশিষ্ট কংগ্রেস নির্বাচন হবে এবং এটি প্রতিটি রাজ্যের একটি করে ভোট থাকবে । 

২) বর্তমান কংগ্রেস বহাল থাকবে এবং কংগ্রেসকে আরও ক্ষমতা প্রদান করা হবে । যেমন : কংগ্রেস ট্যাক্স বসানো এবং তা সংগ্রহের জন্য চাপ দিতে পারবে। 

৩) যুক্তরাষ্ট্রের আইন সঙ্গত অধিকারের স্বাক্ষরিত এবং অনুমোদিত সমূহ নিজ নিজ রাজ্যের চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে । 

৪) কোন রাজ্যের আইনে যদি অসঙ্গতি বা বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যায় তাহলে ওই রাজ্যের বিচারকগণ পূর্বোক্ত আইন মানতে বাধ্য থাকবেন । 

৫) শাসনতন্ত্র রাষ্ট্রের চূড়ান্ত বিধান , এর বিপরীতে সব আইন অচল এবং একমাত্র আদালতে হচ্ছে একে কার্যকর করার যথাযোগ্য প্রতিনিধি । 

হ্যামিল্টন পরিকল্পনা :

১৮ জুন আলেকজান্ডার হ্যামিল্টন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার গঠনের পরিকল্পনা নিজ মতামত প্রকাশ করেন । হ্যামিল্টন তার দীর্ঘ বক্তব্য প্রেসিডেন্ট এবং সিনেট নির্বাচনের পরিকল্পনার কথা বলেন । সেই সঙ্গে তিনি হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ ৩ বছরের জন্য সরাসরি নির্বাচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন । তিনি মূলত এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার পরিকল্পনা করেছিলেন । হ্যামিলটনের এই পরিকল্পনায় ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল । তবে হ্যামিলটনের এ পরিকল্পনা সম্মেলনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়নি । তাই তিনি সম্মেলন ছেড়ে চলে যান । তবে সম্মেলনের শেষের দিকে শাসনতন্ত্রের স্বাক্ষর করার জন্য তিনি এসেছিলেন । 

এছাড়া জন ডিকিনসন এবং রজার শ্যরমান তাদের পরিকল্পনা পেশ করেছিলেন । তবে জন ডিকিনসন আনুষ্ঠানিকভাবে তার মতামত উপস্থাপন করেননি । ডিকিনসন হ্যামিল্টনের পরিকল্পনার বিপরীতে মত প্রকাশ করেছিলেন । অন্যদিকে রজার শ্যরমান ১১ জুন তাঁর পরিকল্পনা উত্থাপিত করেন । শ্যরমানের পরিকল্পনা দ্যা গ্রেট কমপ্রোমাইজ নামে পরিচিত । তার পরিকল্পনা অনুসারে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে এবং সিনেটে প্রতিটি রাষ্ট্রের সমান সদস্য থাকবে । সেই সঙ্গে তিনি দাসদের বাদ দিয়ে শুধু মুক্ত জনগণকে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন করার যোগ্য বলে মত প্রকাশ করেন । কিন্তু আমেরিকার দক্ষিণের রাজ্যগুলো এর বিরোধিতা করলে জেমস উইলসন এর মত অনুযায়ী স্থির হয় যে, দাসদের তিন-পঞ্চমাংশ এবং স্বাধীন মানুষের সংখ্যা সহ মোট জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধিত্ব নির্দেশ করবে । 

শাসনতন্ত্র প্রণয়ন : 

ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে উত্থাপিত পরিকল্পনা সমূহের পরিপ্রেক্ষিতে সম্মেলনে নেতৃবর্গ প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের দিক-নির্দেশনার ব্যাপারে একমত হতে পারছিল না । তাই প্রতিনিধিত্বের বিতর্কিত সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে প্রত্যেক রাজ্য থেকে একজন সদস্য নিয়ে একটি বড় কমিটি গঠন করা হয় । ১৬ জুলাই কমিটি কর্তৃক গৃহীত এক গুরুত্বপূর্ণ মীমাংসা ছোট বড় সকল রাজ্য সিনেটে এক ভোটের অধিকার লাভ করবে । তবে প্রতিনিধি পরিষদে রাজ্যসমূহের প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন করা হয় জেমস উইলসনের মতামত অনুযায়ী । তার মতে দাসদের তিন- পঞ্চমাংশ ও স্বাধীন মানুষের সংখ্যা সহ মোট তাদের জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধিত্ব নির্দেশ করবে । যেহেতু তাদের মধ্যে থেকে তিন- পঞ্চমাংশ জনসংখ্যা হিসেব করা হয় এজন্য এ পদক্ষেপকে তিন- পঞ্চমাংশ ( Three-Fifth Compromise )  সমঝোতা বলা হয় । একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে , সকল অর্থসংক্রান্ত বিল জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদ থেকেই উত্থাপিত হবে । প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ও অন্যান্য বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় । উত্তর দিকের শিল্প প্রদান এবং দক্ষিণে কৃষিপ্রধান রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক ব্যাপারে সংঘর্ষ দেখা দেয় । উত্তর দিকে রাষ্ট্রগুলো সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করার পক্ষপাতী ছিল কিন্তু দক্ষিণ দিকে রাষ্ট্রগুলো আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের উপর সরকারের অতিরক্ত কৃতিত্ব স্থাপনে বিরুদ্ধে অভিমত প্রকাশ করতে থাকে । শেষ পর্যন্ত স্থির হয় কৃষি পণ্য রপ্তানি এবং আগামী বিশ বছর পর্যন্ত ক্রীতদাস আমদানির ব্যাপারে সরকার কোন কঠোর নীতি গ্রহণ করবে না । একইভাবে দক্ষিণের রাষ্ট্রগুলোকে সন্তুষ্ট করার পর যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের নতুন  Navigation Act পাশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে উত্তরের রাষ্ট্রগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা দূর করে । এছাড়া সম্মেলনের প্রতিনিধিদের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক স্বার্থের বিষয়ক একটা নির্দিষ্ট ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়েছিল ।  চার্লস পিস্কনির মন্তব্য অনুযায়ী আঞ্চলিক ক্ষেত্রে পাঁচটি বাণিজ্যিক স্বার্থ ছিল নিম্নরূপ : 

১) নিউ ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রসমূহের আওতাধীন ছিল মৎস্য এবং পশ্চিম ভারতীয় বাণিজ্য । 

২) নিউইয়র্কের প্রধান স্বার্থ ছিল বৈদেশিক বাণিজ্য 

৩) নিউজার্সি ও পেনসিলভানিয়ার প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল গম ও ময়দা 

৪) ম্যারিল্যান্ড ভার্জিনিয়া ও উত্তর ক্যারোলাইনার অংশবিশেষে উৎপাদিত হতো তামাক । 

৫) দক্ষিণ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ার প্রধান রপ্তানি দ্রব্য ছিল চাল ও  নীল । 

Three-Fifth Compromise  এবং Navigation Act  এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতভেদ ছাড়াও ছোটখাট ব্যাপারে বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে নানা প্রকার মতপার্থক্য দেখা যায় । শেষ পর্যন্ত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধী মতের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের দ্বারা সংবিধান তৈরি বাধাগুলো দূর করা হয় । ফলে ১৭৮৭ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে সম্মেলনে গৃহীত সংবিধানেই নীতি সমূহের খসড়া তৈরি করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় । পরবর্তী একমাস কমিটি খসড়া তৈরির জন্য নিরলস পরিশ্রম করে । এরপর দ্বিতীয় কমিটি গঠন করা হয় চূড়ান্ত সংবিধান তৈরি করার জন্য । এই কমিটিতে ছিলেন হ্যামিল্টন , উইলিয়াম স্যামুয়েল জনসন , রূফুম কিং , ম্যাডিসন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ । শুভারনিয়াস মরিস ছিলেন কমিটির প্রধান । কমিটি  ১৭৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত সংবিধান সম্মেলনে পেশ করেন । দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান রচিত হলেও প্রতিনিধিদের মধ্যে একজনও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়নি । সকলে আমেরিকার উন্নতি এবং অঙ্গরাজ্যগুলোর ঐক্যবদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য আপস-রফার মাধ্যমে সংবিধান তৈরি করেন । তাদের মধ্যে কেউ কেউ সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই চলে যান এবং তিনজন সংবিধানে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানায় । তারা হলেন ভার্জিনিয়ার এডমান্ড রেনডল্ফ ও জর্জ মেসন এবং ম্যাসাচুসেটস এর এলব্রিজ গেরি । শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের মধ্যে ৩৯ জন প্রতিনিধি সংবিধানে স্বাক্ষর করেন । স্বাক্ষর শেষে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছিলেন , “ There are several parts of this Constitution which I do not at present approve, but I am not sure I shall never approve them . ….I doubt too whether any other Convention we can obtain, may be able to make a better Constitution, …. It therefore astonishes me, to find this system approaching so near to perfection as it does; and I think it will astonish our enemies……” এরপর সংবিধান কার্যকর করার জন্য ৯টি রাষ্ট্রের অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল  তাই সম্মেলন শেষে প্রতিনিধিবর্গ সংবিধান অনুমোদন প্রক্রিয়া আরম্ভ করেন । ১৭৮৭ সালের ২১ জুন নিউ হ্যাম্পশায়ার নবম রাষ্ট্র হিসেবে সংবিধান অনুমোদন করে । অবশেষে ১৭৮৯ সালের ৪ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কার্যকর হয় ।

FOR MORE CLICK HERE

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]