আমেরিকার সংবিধান একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান । এ সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্র কর্তিক সম্পাদিত প্রত্যেকটি চুক্তি অঙ্গরাজ্যগুলো মেনে চলতে বাধ্য থাকবে । নিজস্ব কর্মকর্তা ও আদালতের মাধ্যমে সরকারের সে ক্ষমতা প্রয়োগ করবে । সেইসঙ্গে প্রয়োজনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের আছে । মার্কিন সংবিধানের তিনটি স্তরের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় । সেগুলো হলো : শাসন বিভাগ , বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগ ।
এই সংবিধানের অন্যান্য প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল :
১) লিখিত সংবিধান :মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান আধুনিক বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান । এতে শাসন পরিচালনার মৌলিক বিধি , পদ্ধতি, কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যের ক্ষমতা সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে । তবে মার্কিন সংবিধানের সংবিধানের প্রায় দু”শ বছরের ক্রমবিবর্তন ধারায় অনেক অলিখিত বিধান ও শাসন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । মার্কিন সংবিধানের অলিখিত বা প্রথাগত ব্যবস্থার উদাহরণ হিসেবে রাষ্ট্রপতি ক্যাবিনেট মন্ত্রীসভা , রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ও প্রকৃতি বিচারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
২) সংক্ষিপ্ত সংবিধান :বর্তমানে সংবিধান গুলির তুলনায় মার্কিন সংবিধানের অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত আকারের । মার্কিন সংবিধানের কেবল শাসন ব্যবস্থার মূল নীতিগুলি উল্লেখ আছে , কোন বিস্তারিত ব্যাখ্যা নেই । ১৭৮৯ সালের মূল সংবিধানে ১টি প্রস্তাবনাসহ ৭টি ধারা ছিল। মার্কিন সংবিধানের শব্দসংখ্যা এখনো ছ”হাজার অতিক্রম করেনি । এর পৃষ্ঠা সংখ্যা মুদ্রিত অবস্থায় ১৫-১৬ এর বেশি হবে না।
৩) ভাষা ও বিষয়বস্তু সুস্পষ্ট :মার্কিন সংবিধানের সংক্ষিপ্ত হলেও সংবিধানের বিষয়বস্তু খুব স্পষ্ট ও যুক্তিসঙ্গত । সংবিধানের ভাষা ও সহজবোধ্য । এত অপ্রয়োজনীয়’ জটিল ও দ্ব্যার্থবোধক কোন শব্দ স্থান পায়নি ।
৪) সংবিধানের প্রস্তাবনা সংযুক্ত :১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে রচিত ও গৃহীত মার্কিন সংবিধানের সর্বপ্রথম একটি প্রস্তাবনা সংযুক্ত করা হয় । এর আগে সংবিধানের প্রস্তাবনা সংযোজনের কোন নজির নেই । এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পথ-প্রদর্শক । মার্কিন সংবিধানের প্রস্তাবনাটি ছিল নিম্নরূপ: –
“ We the People of the United States, in order to form a more perfect Union, establish Justice, insure domestic Tranquility , provide for the common defence, promote the general Welfare, and secure the Blessings of Liberty to ourselves and posterity, do ordain and establish this Constitution for United States of America.”
৫) সংবিধানের সার্বভৌম কৃতিত্ব ও প্রাধান্য :মার্কিন সংবিধানের সংবিধানের সার্বভৌম কৃতিত্ব প্রাধান্যের কথা বলা হয়েছে । সংবিধানের ৬নং ধারায় সংবিধান “ দেশের সর্বোচ্চ আইন “ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে- যা জাতীয় সরকার , স্থানীয় সরকার ও অঙ্গরাজ্যের উপর সমভাবে প্রযোজ্য হবে । সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে , –
“This Constitution , and the Laws of the United States which shall be made in Pursuance thereof; and all Treaties made , or which shall be made, under the Authority of the United States, shall be the supreme Law of the Land; and the Judges in every State shall be bound thereby, and Thing in the Constitution or Laws of any State to the Contrary notwithstanding .”
৬) জনগণের সার্বভৌমত্ব :জনগণের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি মার্কিন সংবিধানের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য । মার্কিন সংবিধানের শুরু হয়েছে “ We the people of the United States” বাক্যটি দিয়ে G সংবিধানের প্রস্তাবনায় এইরকম উল্লেখ সার্বভৌমত্বে সুস্পষ্ট স্বীকৃতির পরিচায়ক । লর্ড ব্রাইসের মতানুসারে মার্কিন সংবিধানের উল্লেখিত জনগণের সার্বভৌমত্ব হলো গণতন্ত্র ও মূলমন্ত্র স্বরূপ । প্রস্তাবনার থেকেই প্রতিপন্ন হয় যে , মার্কিন সংবিধানের উৎস এবং আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি হলো সে দেশের জনসাধারণ ।
৭) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা :মার্কিন সংবিধানের একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে । যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতি এ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য । যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা বলতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকবে । উভয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান এবং তার প্রাধান্য , যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের কৃতিত্ব এবং দ্বৈত নাগরিকতা মূলত এই চারটি বৈশিষ্ট্য যুক্ত শাসনব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা ।
৮) সমঝোতা নীতি:মার্কিন সংবিধান সমঝোতা নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত । বৃহৎ ও ক্ষুদ্র অঙ্গরাজ্য গুলির মধ্যে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে তার সমঝোতার মাধ্যমে নিরসন হবে । সমঝোতার মধ্যে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষের প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের দুইজন প্রতিনিধি এবং নিম্ন কক্ষে জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন সংরক্ষিত থাকবে ।
৯) রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থা :মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । শাসন বিভাগের সকল ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত থাকে । তিনি একাধারে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান । তিনি চার বছর মেয়াদে নির্বাচিত হন । সংবিধানের ২নং ধারার ২নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে , “ The president shall be Commander in Chief of the Army and Navy of The United States, and of the Militia of the several States,… and he shall have power to grant Reprieves and pardons for Offences against the United States, except in Cases of Impeachment. He shall have Power , by and with the Advice and Consent of the Senate, to make Treaties, provided two thirds of the senators present concur; and he shall nominate, and by and with the Advice and Consent of the senate, shall appoint Ambassadors, other public Ministers and Consuls , Judges of the supreme Court, and all other Officers of the United States, whose Appointments are not herein otherwise provided for , and which shall be established by Law; but the congress may by Law vest the Appointment of such inferior Officers, as they think proper, in the President alone, in the Courts of Law, or in the Heads of Departments.”
১০) প্রজাতান্ত্রিক প্রকৃতি :মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা প্রজাতান্ত্রিক । মার্কিন রাষ্ট্রপতি চার বছরের জন্য একটি নির্বাচন সংস্থা ( ইলেক্টোরাল কলেজ ) কর্তিক নির্বাচিত হন । কংগ্রেসের দুটি কক্ষ সিনেট প্রতিনিধি সভার সদস্যগণও নির্বাচকমণ্ডলী দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন । মার্কিন অঙ্গরাজ্যগুলোর সরকার ও প্রজাতান্ত্রিক । আত্তাক যুক্তরাষ্ট্রের শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।
১১) ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ :মার্কিন সংবিধানের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ । মার্কিন শাসনতন্ত্রের রচিয়তাগণ উপনিবেশিক শাসনের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে ব্যক্তি স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে গণ্য করে আইন , শাসন ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র রেখেছিলেন । ফলে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে , শাসন ক্ষমতার শাসন বিভাগের হাতে এবং বিচার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্ট ও অন্যান্য আদালতে হাতে ন্যস্ত থাকে ।
১২) বিচার বিভাগের প্রাধান্য :সংবিধানে বিচার বিভাগের প্রাধান্য স্বীকৃতি হয়েছে । সংবিধানের সঙ্গে কোন বিষয়ে সরকারের দেখা দিলে সুপ্রিমকোর্ট সরকারের যেকোনো কার্যকলাপের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করতে পারে । অর্থাৎ মার্কিন আদালত সংবিধানের রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করে ।
১৩) ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা :রাষ্ট্রের কোন বিভাগ এই যেন এককভাবে প্রাধান্য বিস্তার করতে না পারে সেজন্য মার্কিন সংবিধানের সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য ও পারস্পারিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে । যেমন- রাষ্ট্রপতির হাতে শাসন বিভাগের সর্বোচ্চ দায়িত্ব ন্যস্ত হলেও কার্যকালের মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে রাষ্ট্রপতিকে কংগ্রেস পদচ্যুত করতে পারে । কংগ্রেস প্রণীত কোন আইন ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী হলে সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করতে পারে । আবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ সিনেটের অনুমোদন সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে থাকেন । এ কারণে উড্রো উইলসন সুপ্রিমকোর্টকে “ A kind of Constitutional Convention in Continuous Session: নামে অভিহিত করেছিলেন ।
১৪) সরকারের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা :মার্কিন সংবিধানের সরকারের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি এবং ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ মূলক নীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংবিধান রচিতারা সীমাবদ্ধ সরকারের ধারণাকে স্বীকার করেছেন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল সংবিধানে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার গুলির উপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে ।
১৫) দ্বৈত নাগরিকত্ব :যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার দ্বৈত নাগরিকতার নীতি স্বীকৃতি হয়েছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক একই সঙ্গে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং নিজ অঙ্গরাজ্যের নাগরিক ।
১৬) মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ :মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম নাগরিকদের কিছু মৌলিক অধিকার সংবিধানে লিখিতভাবে স্বীকার করা হয়েছে । প্রথমদিকে মার্কিন সংবিধানের নীতিসমূহ না থাকায় রাজ্যসমূহ অনুমোদন সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিয়েছিল । পরে ১৭৯১ সালে মৌলিক অধিকার গুলি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় । এসব মৌলিক অধিকারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : ব্যক্তি স্বাধীনতা , মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার , সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদি । মার্কিন নাগরিকদের এসকল অধিকারকে অধিকারের ( Bill of Rights) আইন বলা হয় ।
১৭) সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় :মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল । অর্থাৎ সংবিধান হচ্ছে দুষ্পরিবর্তনীয় । এটা সংশোধনে এক বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় । কেন্দ্রীয় আইনসভার উভয় কক্ষের ( উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ ) দুই-তৃতীয়াংশের অনুমোদনের পর কংগ্রেস সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে । তারপর সংশোধনী প্রস্তাব কার্যকর করতে তিন চতুর্থাংশ অঙ্গরাজ্যের অনুমোদন প্রয়োজন হয় ।
১৮) উদারনৈতিক রাষ্ট্র দর্শনের প্রভাব :মার্কিন সংবিধানের প্রণেতাগণ এক্ষেত্রে জর লক , টমাস পেইন প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের উদারনৈতিক রাষ্ট্র দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন । এজন্য মার্কিন শাসন ব্যবস্থায় উদারনৈতিক গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্তমান ।
১৯) কৃতিত্ব বিহীন ক্যাবিনেট ব্যবস্থা :মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের মত একটি কেবিনেট আছে । তবে মার্কিন কেবিনেট এর নিজস্ব কোন ক্ষমতা ও কৃতিত্ব নেই । মার্কিন কেবিনেটের সদস্যগণ রাস্ট্রপতির অধঃস্তন কর্মচারী হিসেবে বিবেচিত হন মাত্র ।
২০) দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আইনসভা :মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট । এর উচ্চকক্ষের নাম সিনেট এবং নিম্নকক্ষ নাম প্রতিনিধি সভা । নিম্নকক্ষের প্রতিনিধিগণ রাজ্যের জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে দুই বছরের জন্য নির্বাচিত হন এবং সিনেট সদস্যগণ অঙ্গ রাজ্যের আইনসভা কর্তৃক ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন ।
২১) সরকারি উপাধি বর্জন :মার্কিন সংবিধানের কোন প্রকার সরকারি উপাধি গ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ । বলা হয়ে থাকে যে , মার্কিন নাগরিকদের সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রকে বাস্তবে রূপায়িত করার উদ্দেশ্যে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ।
২২) সরকারি দলের অনুগতদের উচ্চপদে নিযুক্ত সুযোগ :মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদ সমূহে রাষ্ট্রপতি দলের সমর্থকগণকে নিযুক্ত করা হয় । পূর্ববর্তী রাস্ট্রপতির আমলে কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে হয় । সরকারি ক্ষেত্রে চাকরির এদরনের ব্যবস্থাকে
বলা হয় । সরকারি চাকরি ছাড়াও কনট্রাক্ট দেওয়া এবং কর প্রদানের ছাড় প্রভৃতি ক্ষেত্রেও এ স্পয়েল সিস্টেম প্রয়োগ করা হয় । তবে বর্তমানে এ ব্যবস্থার প্রয়োগ যথেষ্ট সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ মার্কিন সংবিধানের মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে এবং অন্যান্য সংবিধান হতে পৃথক করে । আর সংবিধানের প্রগতিশীলতার বৈশিষ্ট্য একে দীর্ঘস্থায়ী করে । সেই সঙ্গে পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে তার কাঠামো পরিবর্তনের মার্কিন সংবিধানে গতিশীলতা আনয়ন করা হয়েছে । প্রেসিডেন্ট মনরো তাই বলেছেন , “ মার্কিন শাসনতন্ত্র স্থিতিশীল নয় গতিশীল , নিউটনিয়ান নয় ডারউইনিয়ান ।
সংবিধান অনুমোদন সংক্রান্ত জটিলতা :১৭৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ফিলাডেলফিয়ার সম্মেলন শেষে গৃহীত সংবিধান রাজ্যগুলো দ্বারা অনুমোদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় । বলা হয় প্রতিটি রাষ্ট্রের জনগণ ভোট দানের মাধ্যমে সংবিধান অনুমোদন করবে । কিন্তু সংবিধান রচনার পর থেকেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এর বিপক্ষে তীব্র সমালোচনা করা হয় । আর্টিকেলস অফ কনফেডারেশন সংশোধনের উদ্দেশ্যে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলন ডাকা হলেও প্রতিনিধিবৃন্দ তা বাদ দিয়ে নতুন সংবিধান রচনা করার এ সংবিধান রচনার প্রক্রিয়া অসাংবিধানিক বলে কেউ কেউ অভিযোগ করে । সংবিধান অনুমোদনের বিরোধীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভার্জিনিয়ার রিচার্ড হেনরি লি ও প্যাট্রিক হেনরি, নিউইয়র্কের জর্জ ক্লিনটন এবং ম্যাসাচুসেটস এর স্যামুয়েল এডমন্ড ও জন হ্যাস্কর । অন্যদিকে উদ্যমী তরুণরা ছিলেন শাসনতন্ত্রের একনিষ্ঠ সমর্থক । ফেডারেলিস্ট বিরোধিতামূলক সংবিধান অনুমোদন না করার প্রচেষ্টা সোচ্চার হয়ে ওঠে । মার্কিন সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতা ছিল বিল অব রাইটস অন্তর্ভুক্ত না করা । এর ফলে ফেডারেলিস্ট বিরোধী বক্তব্য আরো জোরালো হয়ে ওঠে । ম্যারিল্যান্ডের লুথার মাটিনের তিন ঘন্টা দীর্ঘ বক্তব্যের পর ম্যারিল্যান্ড কনভেনশনে বিল অব রাইটস এর সংশোধনী প্রস্তাব এনে ২৮ এপ্রিল ১৭৮৮ সালে শাসনতন্ত্র অনুমোদন করে । সেই সঙ্গে এই সংশোধনীর সকল রাজ্যের জন্য প্রযোজ্য বলে ঘোষণা করা হয় । তবে বৃহৎ রাজ্যগুলোতে সংবিধান অনুমোদনের জটিলতা বেশি ছিল । সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভার্জিনিয়া । এখানে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক লড়াই হয় । রিচার্ড হেনরি লি ও প্যাট্রিক হেনরির দাবি ছিল নতুন সংবিধান রাজতন্ত্রের ইঙ্গিতবাহী । তবে মেডিসন , এডমন্ড প্যাশুলটন এবং জন মার্শালের বক্তব্যের পর ভার্জিনিয়া কনভেনশন বিনা শর্তে ২৩ জুন ১৭৮৭ সালে সংবিধান অনুমোদন করে । শাসনতন্ত্র অনুমোদনে ভার্জিনিয়া ছিল দশম রাষ্ট্র । এদিকে গভর্নর ক্লিনটন নিউইয়র্কে বৃহৎ ভূস্বামীদের নিয়ে শাসনতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নেন । ভূস্বামীদের শংখ্যাছিল কাস্টমস শুল্ক আরোপের ক্ষমতা অঙ্গরাজ্যে হাতে না থাকলে তার ফল দাঁড়াবে অত্যাধিক ভূমি কর । তবে জন জে এবং মেডিসনের প্রচেষ্টায় একে একে ১৩ টি রাষ্ট্রই শাসনতন্ত্র অনুমোদন করে ।
মূল্যায়ন :মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে অঙ্গরাজ্যগুলোর সম্পর্ক যেভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্রকে যথার্থই একটি সম্মিলিত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে । সেইসঙ্গে অঙ্গরাজ্য এবং জাতীয় উভয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের এই মর্মে শপথ গ্রহণ করতে হয় যে , তারা সংবিধান লঙ্ঘন করবে না । আবার অন্যদিকে এ সংবিধানকে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক বলা যায় না । কারণ মার্কিন কংগ্রেসের কেবল একটি পরিষদ হচ্ছে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত । প্রেসিডেন্টকে জনসাধারণের নির্বাচিত নেতা বলা যায় না । তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় নির্বাচক মন্ডলী ( ইলেক্টোরাল কলেজ ) দ্বারা নির্বাচিত । তাই প্রেসিডেন্ট এবং সিলেট সম্মিলিতভাবে কোন আইন বহির্ভূত কাজ করতে চাইলে জনগণ সেখানে কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না । আবার শাসনতন্ত্রের কিছু কিছু দিক সংখ্যাগরিষ্ঠতার নীতিবিরোধী । মেডিসন এ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন যে , সিনেট রাখার উদ্দেশ্য ছিল ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং অধিকাংশ স্বার্থবিরোধী হলেও সম্পত্তির মালিকানা নিরাপত্তা বিধান করা । তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বার্থকে উপেক্ষা করে সংখ্যালঘু বিত্তশালীদের নিরাপত্তা বিধান ও সম্পদের উপর ব্যক্তিমালিকানার নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রতিনিধিগণ শাসনতন্ত্র কোনো রক্ষাকবচ তৈরি করেনি । কাগজের মুদ্রা ছাড়াও সন্ধি চুক্তিতে সই করা রাজ্য সমূহের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় । সর্বোপরি মার্কিন সংবিধানের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে সংবিধানপ্রণেতা কখনোই তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বারা পরিচালিত হয় নি । তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রকে দৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করা । তবে এ লক্ষ্যে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলন সফল হলেও একে বৈপ্লবিক বলা যাবে না ।
সংবিধান অনুমোদনের পর ১৭৮৯ সালের ৩০ এপ্রিল জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং জন এডামস ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন । নিউইয়র্কে নতুন সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল । তাই যথার্থভাবেই বলা যায় ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনের প্রতিনিধিবর্গ যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী তের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে আমেরিকাকে একটি যুগোপযোগী সংবিধান প্রদান করেছিলেন ।
আমেরিকার সংবিধান দীর্ঘস্থায়ীত্বের কারণ :আমেরিকার সংবিধান একটি দীর্ঘস্থায়ী সংবিধান । এ সংবিধানকে দীর্ঘস্থায়ী রাখার পেছনে কতগুলো কারণ রয়েছে । সেগুলো হলো:-
ক) সংশোধনীর মাধ্যমে সময়োপযোগী করা :কাল ভেদে সমস্যার চিত্র পরিবর্তিত হয় । আর পরিবর্তন পরিস্থিতিতে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে । নতুবা রাষ্ট্র তা পরিচালনার মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করতে পারে না । আমেরিকার সংবিধান দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার পেছনে এর সংশোধন পদ্ধতি একটি অন্যতম কারণ । আমেরিকার সংবিধান সংক্রান্ত কোন বিষয়ে সমস্যা দেখা দিলে একটি স্পেশিয়াল কনভেনশনে কংগ্রেসের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য তা উপস্থাপন করবে । অতঃপর এ প্রস্তাবটি আইনসভার তিন-চতুর্থাংশ সদস্যদের অনুমোদনের মাধ্যমে কার্যকর করা হয় ।
খ) বিচার বিভাগ কর্তিত্ব আইনের যুগোপযোগী ব্যাখ্যা :সংবিধানের কোন বিষয় বা ধারা সম্পর্কে বিচার বিভাগ যুগোপযোগী ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে । এর ফলে কোন বিষয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে না । যখনই সংবিধান প্রদত্ত কোন আইন প্রশ্নের সম্মুখীন বা অস্পষ্ট হয়ে জনসাধারণের সামনে আসে তখনই বিচার বিভাগ তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করে – যা আমেরিকার সংবিধান কে দীর্ঘস্থায়ী করার পেছনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ।
গ) ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা :আমেরিকার আইন, বিচার ও শাসন বিভাগ পরস্পর পরস্পরের কাছে জবাবদিহিতা মূলক কার্যক্রমের আওতাধীন বন্দি । সরকারের তিনটি বিভাগ স্বতন্ত্র হলেও প্রতিটি বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও ক্ষমতার ভারসাম্য রয়েছে । যেমন , রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের কাছে দায়বদ্ধ , কংগ্রেস প্রদত্ত কোন আইন আবার সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করতে পারে । পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ কংগ্রেসের সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত । এভাবে দেখা যায় যে , ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে মার্কিন সংবিধানের একটি সময়োপযোগী সংবিধানে পরিণত হয়েছে ।