প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উৎস সমূহ, ভৌগোলিক বৈশিষ্ঠ্য, জনপদ, এর বিবরন।


প্রচীন বাংলার উৎস সমূহ::::::::::::::::::::::::
ইতিহাস রচনায় উৎসের ভূমিকা অনকে। উৎস যত স্বচ্ছ, যৌক্তিক ও প্রায়োগিক ইতিহাস তত প্রাণবন্ত।প্রাচীন বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠন একটি জটিল বিষয়, কারণ প্রাচীন বাংলার কোন ধারাবাহিক ইতিহাস প্রাচীন কালে রচিত হয়নি।যেসব সূত্রে ভিত্তিতে  ইতিহাস রচিত হয় মূলত সেগুলোই ইতিহাসের উৎস।
#সাধারণভাবে ইতিহাস রচনার উৎসকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে::::::::::
(ক) প্রাথমিক বা মূল উৎস::::;::::::::::::::এই উৎসগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বিষয় বা উৎস হল------*সাহিত্যও রচনাবলি * দলিল ও ফরমান *মুদ্রা ও শিলালিপি, *স্থাপত্যওশিল্পকর্ম ।।
(খ)মাধ্যমিক বা গৌন উৎস::::::::::::::::::::::::প্রাথমিক উৎস সূত্র যাচাই- বাছাই ও বিচার বিশ্লেষণ করে পরবর্তী যেসব বস্তুনিষ্ঠা, ইতিহাস গ্রন্থ রচিত হয়ে থাকে সেগুলোই মাধ্যমিক বা গৌণ উৎস হিসেবে চিহ্নত করা যায়।
#প্রচীন বাংলার ইতিহাস রচনা উৎসমূহকে ৩টি পর্যায় ভাগ করা যেতে পারে।
(১)প্রন্ততাত্ত্বিক উৎস সমূহ (archaeological)
(2)সাহিত্যক  উৎস সমূহ(literary)
(৩)পর্যটকদের বিবরনী(travelers)
#ইতিহাস রচনার উপাদান মূলত কয় ভাগে বিভক্ত::::::::::::::
(ক) লিখিত উপাদান::::::::::সাহিত্য,নথিপত্র, জীবনী
(খ)অলিখিত উপাদান:::::::::মুদ্রা, মূর্তি, ইমারত,লিপিমালা
#(ক)প্রত্নতাত্ত্বিক উৎস সমূহ::::::::::::::::::::::::::::::::::::
ইতিহাসের উৎস হিসেবে প্রত্নতত্ত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।প্রত্নেোত্ত্বিক উপাদান অর্থ অর্থ অতীত বা প্রাচীন মানুষ মানুষের সৃষ্ট, ব্যবহৃত বা প্রভাবিত দ্রব্যাদির চিহ্ন বা ধ্বংসাবশেষ।প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় ব্যবহৃত প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলো::::::::::::::
১.লিপিমালা (Inscriptions)
২.মুদ্রা(Coins)
৩.স্থাপনা(Structures)
৪.চারুও কারুশিল্প (Arts and crafts)

(১)প্রাচীন বাংলা লিপি মালা
প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার বা পুর্ণগঠনের লিপিমালা অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ণ উৎস।প্রাচীন কালের মানুষ শিলাগাত্রে তামার পাত বা স্তম্ভের গায়ে লিপি ্‌উৎকীর্ণ করতো সাধারনত শিলাগাত্রে  উৎর্কীণ লিপিকে বলা হয়  শিলালিপি।তামার পাতে উৎকীর্ন লিপিকে তাম্রলিপি বা তাম্রশাসন বলা হয়।এ ছাড়া ও ইট ,পোড়ামটির সিলেও লিপি আবিস্কৃত হয়েছে।
#এ লিপি থেকে যে তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়। তা হল সমসাময়িক রাজার নাম ,পদবি,পরিচয় ,পূর্বপুরুষদের পরিচয়, গৌরবময় কাজের বিবরণ, এবং রাজাদের বংশের তালিকাও এসব লিপিমালা থেকে উদঘাটন করা হয়েছে।যেমন-- বাংলার পাল, সেন, চন্দ্র, ইত্যাদি বংশের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এ লিপি -মালা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছ।
#প্রাপ্ত অনেক লিপিতে সন তারিখ উৎকীর্ণ দেখা যায়। প্রাচীন বাংলায় প্রাপ্ত  এ ধরনের সনগুলোর মধ্যে গুপ্তাব্দ,শকাব্দ প্রভৃতি দেখা যায়।গুপ্ত বংশে প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত।৩২০ খ্রি, সিংহাসন আরোহণ করেন।তার ক্ষমতায় আরোহণ সময়কাল থেকে গুপ্তাব্দ গননা হয়ে থাকে।সম্রাট কনিস্ক ৭৮ খ্রি. সিংহাসন আরোহণ এ সময় থেকে শকাব্দ গননা শুরু হয়।
#লিপি থেকে সম্রাজ্য সম্প্রসারণ সম্পর্কে জানা যায়।
#রাজার ভূমি দান ও জমি ক্রয়-বিক্রয়ের দলির মূলত তামার ফলকে উৎকীর্ণ করা হত।  এর থেকে রাজার দানশীলতার ও পরিচয় পাওয়া যায়। এর থেকে জমির পরিমাণ, মূল্য তথ্য জানা যায় । এ ছাড়াও এর থেকে শিল্প ব্যবসায় - বাণিজ্য সম্পর্কেও জানা যায়। এ ছাড়া তৎকালীন স্থাপত্য- ভাস্কর্য সম্পর্কেও জানা যায়। 
#লিপি থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। যেমন- প্রচীন বাংলার রাজারা ছিলেন দৈব্য ক্ষমতার বিশ্বাসী । এছাড়াও তৎকালীন স্থাপত্য - ভাষ্কর্য সম্পর্কে অনেক তথ্য লিপি থেকে পাওয়া যায়।

(২)মুদ্রা
ইংরেজি কয়েন শব্দের বাংলা পরিভাষা হচ্ছে মুদ্রা ।কয়েন (coin) শব্দটি ল্যাটিন কিউনিয়স (cuneus) শব্দ হতে নির্গত।মুদ্রা সংঙ্গা হিসেবে বলা যায় যে ,স্বর্ণ রৌপ্য বা এরূপ মূল্যবাণ ধাতুর এমণ এক খন্ডকে বুঝায যার আকৃতি ও পরিমাণ সুনির্দিষ্ট  এবং যাতে প্রশাসন ক্ষমতা কর্তৃক বিশুদ্ধতা নিরূপনের উদ্দেশ্য কোন বিশেষ প্রতিকৃতির নমুনা বা প্রতীকচিহ্ন বা লিপি ব্যবহৃত হয়।মুদ্রার বিনিময়মূল্য আছে। মুদ্রা যে কোন দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ে বিনিময় মাধ্যমে হিসেবে বিবেচিত হয়।মুদ্রা অতীতের সমাজ ,সংসকৃতি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও শিল্পকলা প্রভৃতি বিষয়ক তথ্য ও বিবরনী তথা ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এ্কটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হতে পারে।মুদ্রার প্রচলন কবে থেকে শুরু হয়েছে এ সংক্রান্ত বিষয় বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে । ইতিহাসের জনক হেরডোটাস এর মতে-লিডীয় জাতি েএশিয়া মাইনরে সর্বপ্রথম স্বর্ণ ও রৌপ্যের মুদ্রা প্রবর্তন করে । আবার অনেকে মতে মুদ্রার প্রবর্তন হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় অনেক মুদ্রা আবিষ্কার হয়েছে। মহাস্থন গড়ে কুশানরাজা কনিষ্কের মুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে।পাহাড়পুরে ৩টি তাম্র মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে। ময়নামতির শালবন বিহারে “হরিকেল মুদ্রা” নামে অনেক মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে।শ্রীবিগ্র নামে কয়েকটি মুদ্রা পাওয়া গেছে। বাংলায় চন্দ্র, বর্মণ, ও সেন রাজ বংশের কোন মুদ্রাই পাওয়া যায়নি।সুতরাং প্রাচীন ইতিহাস রচনায় মুদ্রা থেকে যে সব ধানণা পাওয়া যায়::::::::::::::::::::
(১)মুদ্রা- সার্ব ভৌমত্বের পরিচয় বহন করেন।
(২)মুদ্রা থেকে রাজার মতামত ও শিল্প নিপুণতা সম্পর্কে জানা যায়।
(৩)মুদ্রা উৎকীর্ণ লেখার রাজত্বকাল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।
(৪)মুদ্রায় উৎকীর্ণ লেখার ধরণ দেখে অনেক সময়কাল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অর্জণ করা যায়।
(৫) মুদ্রায়  প্রাপ্তিস্থান হতে িএকটি রাজ্যের ব্যাপ্তি- বিস্তার সম্পর্কে জানা যায়।
(৬) মুদ্রায় অঙ্কিত রাজা ও দেব -দেবীর প্রতিকৃতি থেকে সমাজের অভিজাত শ্রেণীর রুচিবোধ, পোশাক পরিচ্ছদ ও অলংকার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

(৩)প্রচীন বাংলার স্থাপত্য


প্রচীন বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনের মুদ্রা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।প্রাচীন বাংলায় প্রাচীন স্থাপনার অস্তিত্ব সহজ প্রাপ্য নয়। স্থাপনা সমাজের সভ্যতার একটি অন্যতম নিদর্শন বা উপাদান।বাংলার বহু স্থানে প্রচীনকালে স্থাপনার ধ্বংসাশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব স্থাপনার মধ্যে দুর্গ,বিহার, মন্দির, স্তূপ অন্তর্ভুৃক্ত । মহাস্থানগড়, বানগড়,চন্দ্রকেতুগড় নাম প্রাচীন বাংলার দুর্গসমূহের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়।দুর্গনগরী হিসেবে এ সমস্ত স্থানগুলো চিহ্নিত হয়েছিল।এসব নগর ছিল শিল্প বাণিজ্য ও প্রশাসনের কেন্দ্র। প্রচীনকালে মহাস্থানগড় পরিচিত ছিল পুন্ড্রনগর হিসেবে। বানগড় প্রাচীনকাল পরিচিত ছিল কোটিবর্ষ হিসেবে। এই সমস্ত দুর্গ নগর গুলো খনন করে প্রাচীন বাংলার সাংস্কৃতিক বহু নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।প্রাচীন বাংলার পুন্ডুনগর ছিল মৌর্য ও গুপ্ত যুগে বাংলার উত্তরাঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র। পাল রাজা ধর্মপালের অমর কীর্তি  নওগা জেলার পাহাড়পুরের  অঞ্চলে সোমপুর বিহার আবিষ্কৃত হয়েছে।

(৪)প্রাচীন বাংলার  চারু ও কারু শিল্প
চারু অর্থ - মনোহার । যা মনকে হরণ করে : সুন্দর শোভন সুদর্শন কমনীয়। কারু অর্থ - শিল্প : শিল্পকার , নির্মাতা, কর্তা শিল্পকর্ম; কাঠধাতু , ইত্যাদির কারিগরি শিল্প , নকশা ইত্যাদি।প্রাচীন বাংলায় চারু কারু শিল্প হিসেবে চিত্রকলা; ভাস্কর্য মৃৎশিল্প ইত্যাদি নিদর্শন উল্লেখযোগ্য । এই সব নিদর্শনের মাধ্যমে প্রাচীন বাংলার অর্থনৈতিক , সামাজিক ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক অবস্থা সম্পর্কে একটি ধারনা লাভ করা যায়।প্রাচীন বাংলায় চারু ও কারু শিল্প সাধারনত উচ্চবৃত্তি শ্রেনীর লোক শিল্পকারদের দিয়ে কাজ করাতেন।কারণ চারু ও কারু শিল্প তৈরি করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হত।প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের পাল ও সেন যুগে চারু ও কারু শিল্প এর অনেক নিদর্শন পাওয়া যায়। সাধারনত এসব শিল্পের বেশিরভাগ নিদর্শনে বিভিন্ন দেবে- দেবীর চিত্র আছে।এছাড়া নারীর বিভিন্ন রূপ,চাষ করবার দৃশ্য ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায়।

প্রাচীন বাংলার সাহিত্যিক উৎস সমূহ
(৫)সাহিত্যিক উৎস সমূহ::::::::::::::::::::::::
প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার ও পুর্নগঠনের সাহিত্য উপাদান এর গুরুত্ব অপরিসীম।বাংলার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল উৎসের মতো সাহিত্যিক উৎস পর্যাপ্ত নয়।এর অনেক কারনের মধ্যে রয়েছে, বাংলার ইতিহাস রাজনৈতিক বিপ্লব এতটার ঘন ঘন সম্পন্ন হয়েছে যে, এক বংশের ইতিহাস অন্য বংশের লোকদের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন মনে করতো না । তবু ও কিছু কিছু যে সাহিত্য উপাদান পাওয়া যায় সেগুলো প্রায় সবগুলোই ধর্মসংক্রান্ত পুস্তক কিছু কিছু সাহিত্য উপাদানে প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক ,সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের চিত্র পাওয়া যায় ।
(ক)হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থাদি:
বেদ, গীতা, পুরান, রামায়ন,মহাভারত প্রভৃতি হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থে প্রাচীন বাংলা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় এ সমস্ত তথ্যাবলি নিঃসন্দেহে অতি মূল্যবান।তাই এসব তথ্য সতর্কতার সাথে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস বিনিমার্ণ করা সম্ভব । এ সমস্ত গ্রন্থের কাহিনী মূলত কিংবদন্তিমূলক। তবে ইতিহাস রচনায় অনেক গুরুত্ব উপকরণ।
(খ) জৈন ও বৌদ্ধ কাহিনী::::::::::::
বাংলার প্রাচীন  ইতিহাস রচনার সাহিত্যিক উৎস হিসেবে জৈন ও বৌদ্ধ কাহিনীর গুরুত্ব অপরিসীম। তিনটি দ্বীপবংশ, মহাবংশ, এবং আর্যমুঞ্জশ্রীমূলকল্প নামক বৌদ্ধধর্মসংক্রান্ত গ্রন্থে বাংলার প্রাচীন অনেক তথ্য পাওয়া যায়। এই গ্রন্থে শশাঙ্ক ও পাল রাজাদের সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়।
(গ) পতঞ্চলি ও পানিনির ব্যাকরণ:::::::::
পতঞ্চলি ও পানিনির  দুজন ব্যক্তি ছিলেন সংস্কৃত ভাষায় ব্যকরণ রচিয়তা । তাদের রচিত ব্যকরনগুলোতে প্রাচীন বাংলার তথ্য পাওয়া যায় । এসব তথা প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
(ঘ) কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র:::::::::::::::
ভারতের সৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত - এর প্রধানমন্ত্রী কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন।এ গন্থে ভারতের অনেক তথ্য পাওয়া যায়। তা- ছাড়া এই গন্থে প্রাচীন বাংলার শ্বেত-স্নিগ্ধ- সুতিবস্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। বাংলার অর্থনৈতিক ইতিহাস রচনায় ক্ষেত্রে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গুরুত্ব অপরিসীম।
(ঙ) বানভট্টের  ‘হর্ষচরিত’:::::::::::::::: 
উত্তর ভারতের সম্রাট হর্ষবর্ধন (৬০৬-৬৪৭ খ্রি) এর মহাকবি ছিলেন বানভট্ট। বানভট্ট হর্ষরচিত নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন । বানভট্ট হর্ষরচিত গ্রন্থ যানা যায় গৌড়রাজা শশাঙ্গ ও গৌড়ীয় সাহিত্যের কথা অবগত  হওয়া যায় ।সুতরাং এই গ্রন্থ প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় হর্ষচরিত একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
(চ) কলহনের রাজতরঙ্গিনী:::::::::::::::
ভারতের কাশ্মিরের ঐতিহাসিক ছিলেন কলহণ। কলহণ  “রজতরঙ্গিণী নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে মূলত কাশ্মিরের ইতিহাস বিবৃত হয়েছে । গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়ে কাশ্মির বাজার পৌত্র “জয়াপীড়” গৌড় রাজ্য অধিকার করেন। এসব তথ্য প্রাচীন বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনকে যৌক্তিক মাত্রায় উপনীত করতে পারে।
(ছ)সন্ধ্যাকরনন্দীর রামচরিত:::::::::::::::::::::: 
প্রচীন বাংলার ইতিহাসগ্রন্থের মধ্যে সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত গ্রন্থটি অনন্য সাধারন একটি দলিল। কাব্য ছন্দে রচিত রামচরিত  গ্রন্থটি মূলত দ্বিতীয মহিপাল থেকে মদনপাল পর্যন্ত পালবংশ এবং কৈবর্তর রাজবংশের ইতিহাস রচনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
সন্ধ্যাকর নন্দীর বাড়ি ছিল পৌন্ডদেশ । তাকে কলিকাল বাল্মীক উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল । তিনি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনায় করেন।সন্ধ্যাকর  নন্দী পিতা প্রজাপতি নন্দী ছিলেন একজন পাল রাজার পদস্থ রাজকর্মচারী। ফলে তিনি খুব কাছে থেকে রাজদরবারে ঘটনাবলি দেখেশুনে এই গ্রন্থটি রচনা করেন।
(৬)পর্যটকদের বিবরনী::::::::::::::::
প্রচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় পর্যটকদের ভ্রমন  সংক্রান্ত বিবরনী একটি গুরুত্বপূর্ন  উপাদান। ভারতবর্ষের বাইরের লেখকদের বিশেষ করে গ্রিক ও রোমান লেখকদের রচনা এবং চীনদের রচনায় প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উপাদান খুজে পাওয়া যায়।
(১)গ্রিক ও রোমান লেখকদের বিবরনী:::::::::::::
গ্রিক লেখক টলেমি রচিত ভূগোলবিষক গ্রন্থে ভারতবর্ষে ও বাংলায় অবস্থিত সমুদ্রবন্দরের বিবরনী রয়েছে । রোমান লেখক প্লিনি গঙ্গারিডহ রাজ্যের বিবরন দিয়েছে।
সুতরাং গ্রিক ও রোমান লেখকদের বর্ননায় যে গঙ্গারিডহ রাজ্যের তথ্য অবগত হওয়া যায়,তা প্রকৃতপক্ষে ‘বঙ্গ’ জনপদ। গঙ্গার প্রধান দুটি জলধারা হুগলি ভাগীরথীর ও পদ্ম - মেঘনা যা পরবর্তীতে দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর পতিত হয়।
(২)চীন পর্যটকদের বিবরনীয়:::::::::::::::::::::::
চীনের সাথে ভারতবর্ষের যোগাযোগ প্রাচীনকাল থেকেই । চীনা পর্যটকরা ভীর্থবূমি দর্শন ও বৌদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থ সংগ্রহের জন্য ভারত ও বাংলাই পরিভ্রমন করেছেন। এদের মধ্যে ফা হিয়েন ও হিউয়েন সাং এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের বর্ননায় সমগ্র ভারত ও বাংলার রাজনৈতিক ,সামাজিক ,অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ইতিহাস এমনকি প্রাকৃতিক ইতিহাসের তথ্য অবগত হওয়া যায়।
ফা হিয়েন গুপ্তবংশের সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত /বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালে ভারতবর্ষের এসে ১৫ বছর অতিবাহিত্যের রাজত্বকালে ২ বছর অবস্থান করেন । তার বিবরনে বাংলার সাধারন জনগনের অবস্থার সাঠিক চিত্র ফুটে উঠেছে।
হিউয়েন সাং ভারবর্ষে এসে ১৪ বছর অবস্থান করে ।তিনি বাংলার, পুন্ড্রবর্ধন ,কর্ণসুবর্ণ, সমতট, তাম্রলিপ্তি সফর - এই সব অঞ্চলের রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক ধর্মীয় অবস্থার বিবরন তুলে ধরেন ।
(৩) তিব্বতীয় পর্যটকদের বিবরন:::::::::::::
তিব্বত ভারতবর্ষের ইতিহাসের সঙ্গে নিবিড়ভাবেই সম্পর্কযুক্ত ও বাংলার সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
তিব্বতি লেখকদের রচনায় বাংলার অনেক তথ্যই পাওয়া যায়। বাংলায় অনেক লেখকদের রচিত গ্রন্থ তিব্বতীয় তাদের ভাষায় অনুবাদ করেছেন লামা তারানাথ তিব্বতি লেখকদের মধ্যে অন্যতম।
বাংলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য::::::::::::::::::::
বাংলা পৃথিবীর বৈচিত্র‌্যপূর্ণ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যর অধিবাসী। এর ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এ অঞ্চলের সমাজ,সংস্কৃতি ধর্ম ভাষা ও রাজনৈতিক জীবন কেউ প্রভাবিত করেছে।
বৈশিষ্ট্যসমূহ:::::::::::::: 
(১) বাংলা ভূ-খন্ডের অস্তিত্ব বা অবস্থান উপমহাদেশের সর্বপূর্বে প্রান্তে নির্ধারিত হয়।
(২) ভূতাত্ত্বিকভাবে বাংল সুগঠিত ভূভাগ এবং অপেক্ষাকৃত নবীন ভূভাগের সমন্বয়ে সৃষ্ট ।
(৩) বাংলা পৃথিবীর বৃত্তের বদ্বীপ বা ভেল্টা ।
(৪) বাংলার দক্ষিণে উন্মক্ত সমুদ্রদার ।
(৫) বাংলা মৌসুমি জলবায়ু দেশ,এটা বৃষ্টি বহুল অঞ্চল ।
(৬)বাংলা প্রাকৃতিকভাবে নির্ধারিত নৌ এবং স্থল যোগাযোগ পথ সমৃদ্ধ একটি  অঞ্চল।
(৭) বাংলার রয়েছে অসংখ্য  নদী সমন্বিত বিরল -ভূ-বৈমিষ্ট্য।
(৮)বাংলা ভারতীয উপমহাদেশ এবং দক্ষিন - পূর্ব এশিয়া সাথে LAND BRIDGE হিসেবে যোগাযোগ ভূমিকা রাখছে এর ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যর কারনে।
প্রাচীন বাংলার জনপদ:::::::::::::::::: 
বাংলাদেশে বলতে আমরা এখন যে এলাকা বুঝি প্রাচীন কালে বাংলাদেশ বলতে এমন যে কোন একক দেশ বা অখন্ড রাজ্য ছিল না । এদেশে তখন অনেকগুলো ছোট ছোট রাজ্য বা জনপদে বিভক্ত ছিল। ‘বঙ্গ’ উপমহাদেশের এমনি এক জনপদের নাম । রাজ্যশক্তির হ্রাস-বৃদ্ধি ফলে এসব জনপদের সীমানা ও বিস্তার বার বার পরিবতর্তিত হয়েছে । তবে প্রাকৃতিক সীমানা এক রকমই থেকেছে ।
(১)বঙ্গ::::::::::
বঙ্গ খুবই প্রচীন জনপদ। “ঐতরেয় আরন্যক”গ্রন্থ সর্বপ্রথম এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ‘বৌধায়ন ধর্মসূত্র” -এ আর্যসভ্যতা বহির্ভূত এবং কালিদাসের রঘু বংশ এবং রামায়ণে অযোধ্যার সাথে  মিত্রতা স্থাপনকারী দেশগুলোর তালিকায় “বঙ্গের ” নাম উল্লেখ রয়েছে । বর্তমান বাংলাদেশের পূর্বও দক্ষিণ পূর্ব এলাকা জুরে তখন ‘বঙ্গ’ জনপদ নামের একটি অঞ্চল গড়ে উঠেছিল ।মহাভারতের উল্লেখ হতে বুঝা যায় যে - বঙ্গ,পুন্ড্র, তাম্রলিপি ও সূক্ষের সংলগ্ন দেশ ।অনুমান করা হয়;এখানে বঙ্গ নামে এক জাতি বাস করতো।এই জনপদটি পরিচিত ’বঙ্গ’ নামে ।সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে মনে হয়,  গঙ্গা ও ভাগীরথীর মাঝখানের অঞ্চলকেই ‘বঙ্গ”  বলা হত। পাল ও সেন বংশীয় রাজাদের আমলে বঙ্গের আয়তন সংকুচিত হয়ে  পড়ে। পাল বংশের শেষ পর্যায় বঙ্গ জনপদ দুভাগে বিভক্ত হয়ে উত্তর বঙ্গ- দক্ষিন বঙ্গ নামে পরিচিত হয় । অনুমান করা হয় -ঢাকা -ফরিদপুর -বরিশাল -কুমিল্লা এলাকা বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত ছিল । ‘বঙ্গ’ থেকে বাঙ্গালি জাতির উৎপত্তি ঘটেছিল ।
(২)পুন্ড্র:::::::::::
প্রচীন বাংলার জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন হলো -পুন্ড্র। বরা হয় যে -পুন্ড্র বলে এক জাতি এ জনপদ গড়ে তুলেছিল। বৈদিক সাহিত্য ও মহাভারতে এ জাতি উল্লেখ আছে । পন্ড্রদের রাজ্যর রাজধানীর নাম পুন্ড্রনগর । পরবর্তীকালে এর নাম হয় মহাস্থানগড়। সম্ভবত মৌর্য সম্রাট  আশোকের রাজত্ব প্রাচীন পুন্ড্র রাজ্যস্বাধীন সত্তা হারায় । পঞ্চম -ষ্ষ্ঠ শতকে তা পুন্ড্রবর্ধনে রুপান্তরিত হয়েছে ।সে সময় বগুড়া , দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা জুড়ে পুন্ড্রবর্ধন জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল । প্রত্মতত্ত্ব নির্দশন দিক দিয়ে পন্ড্রবর্ধন প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ। বাংলদেশে প্রাপ্ত পাথরের চাকতিতে খোদাই সম্ভবত প্রচীনতম শিলালিপি এখন পাওয়া গেছে।

(৩)গৌড়::::::::::::::::::::::::
গৌড় নামটি সুপরিচিত হলে, গৌড় বলতে কোন অঞ্চল বুঝায় এ নিয়ে মতভেদ আছে। আর যে এলাকা গৌড় নামে অভিহিত হতো -কেনই বা এ নামে অভিহিত হত তা সঠিকভাবে জানা যায় না । তবে গৌড় নামটি যে প্রাচীন সে বিষয় সন্দেহ নাই। পানিনির ব্যাকরণ, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ও বাৎসায়নের কামসূত্র নামক গন্থে - গৌড়ের সবৃদ্ধি কথা উল্লেখিত হয়েছে।হর্ষবর্ধনের অনুশাসন সমূহ 
থেকে জানা যায় যে মৌখরী রাজা ঈশান বর্মণ গৌড় বাসীকে পরাজিত করে সমুন্দ্র  পর্যন্ত বিতাড়িত করেন । গৌড় অন্যান্য জনপদ অপেক্ষা একটি আলাদা জনপদ । গৌড়ের স্থান নির্দেশ করছে আধুনিক বর্ধমানের উত্তরে পদ্মার দক্ষিণে । গৌড়ের রাজধানী ছিল কর্নসুবর্ণ। গৌড়ের রাজা ছিল শশাঙ্গ।গৌড়ের অবস্থান বর্তমান মর্শিদাবাদ নদীয়া ,বর্ধমান , হুগলিতে ।

(৪)হরিকেল::::::::::::
সাত শতকের লেখকেরা হরিকেল নামে এক জনপদের বর্ননা করেছেন । হরিকেল জনপদ চট্টগ্রাম , কুমিল্লা, সিলেটকে গিরে এই জনপদ অন্তর্ভুক্ত ছিল। বঙ্গ,হরিকেল , সমতট, -এই তিনটি পৃথক জনপদ হলেও এরা খুব নিকট প্রতিবেশী। হওয়া কখনো কখনো কোন কোন এলাকায় অন্য জনপদের প্রভাব বিরাজ করতো বলে ধারণা করা হয় । এগারো শতকে পর্যন্ত হরিকেল একটি স্বতন্ত্র‌্য রাজ্য ছিল ।

(৫)সমতট:::::::::::::::: বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিন পর্ব অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছিল ‘বঙ্গ ’ জনপদ আর প্রতিবেশী জনপদ হিসেবে ছিল সমতট। কালিদাসের রঘু বংশ -এর কাব্যের নামক সমুন্দ্রগুপ্ত এ অঞ্চলের শাসন ছিলেন  বলে মনে করা হয় ।এই অঞ্চলটি ছিল আদ্র্র নিম্নভূমি । সমতট জনপদ কুমিল্লা অঞ্চল নিয়ে গঠিথ ছিল । কেউ কেউ মনে করে কুমিল্লা- নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে সমতট জনপদ গঠিত ছিল । মেঘনার পরবর্তী অঞ্চলকে সমতট এর অন্তর্ভুক্ত বলে ধারণা করা হয়।

(৬) তাম্ররিপ্তি::::::::::::::::::: 
হরিকেল উত্তরে অবস্থিত ছিল তাম্রলিপ্তি জনপদ । এলাকা ছিল খুব নিচু ও আর্দ্ । নৌ চলচলের জন্য জায়গাটি ছিল খুব উত্তম । প্রাচীনকালে তাম্রলিপ্তি জনপদ নৌ -বানিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে খুব পরিচিত ছিল । বর্তমান মেদেনীপুর ছিল তাম্রলিপ্ত জনপদ নৌ-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে খুব পরিচিত ছিল। বর্তমান মেদেনীপুর ছিল তাম্রলিপ্তি প্রান কেন্দ্র । এই জনপদের বিস্তৃত সম্পর্কে জানা যায় নি ।
(৭)বঙ্গাল::::::::::::::::::::
বঙ্গের সাথে আর একটি নাম সাধারনত বলা হয়ে থাকে -বঙ্গাল । ধ্বনিগত দিক থেকে উভয়ের মিল আছে এবং সম্ভবত  বঙ্গেরই অংশবিশেষ ছিল বঙ্গাল। ব্ঙ্গ- এর সঙ্গে প্রকৃত ‘আল” যোগ করে বঙ্গাল হয়েছে এবং বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত কোন  বিশেষ এলাকার অর্থে বঙ্গাল । বঙ্গাল -এর ব্যবহার  মূলত দক্ষিনী লিপিতে। সম্ভবত বঙ্গাল থেকেই মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনাধীনে সমগ্র বঙ্গসমূহ বা শাসন অঞ্চলের নাম হয়েছিল “সুবহ -ই- বাঙ্গাল”

FOR MORE CLICK HERE

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]