পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের পরিচয় ও শাসন আমল


গোপালের পরিচয়:::
গোপালের বংশ পরিচয় ও পাল বংশের উৎপত্তি সম্পর্কে তথ্যের অভাবে জানা খুব  দুঃসহ ব্যাপার। পাল বংশের আদি পুরুষ বাস করত মগধে। আধুনিকদের মতে পাল বংশের আবাস্থল ছিল বরেন্দ্র।একমাত্র ধর্মপালের খালিমপুর তাম্রলিপিতে গোপালের পিতা, পিতামহ, ও স্ত্রী নাম উল্লেখ পাওয়া যায়। পিতা নাম ছিল -বপ্যট (যাকে শুত্র ধ্বংসকারী বলা হয়) আর পিতামহ ছিল দায়িতবিষ্ণু(যাকে সর্ব বিদ্যা বিশুদ্ধকারী বলা হয় )।গোপালের স্ত্রী নাম ছিল দেদ্দাদেবী।গোপালের বংশ পরিচয় ভিত্তি সম্ভবতঃ গোপালে ও শুত্র দমনকারী যুদ্ধা এবং তিক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। গোপাল বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি পৃষ্ঠপোষক ছিল। খালিমপুর লিপিতে গোপালকে “পরম সৌগত” বলে উল্লেখ করা হয়েছে।খালিমপুর তাম্রলিপিতে আরও বলা হয়েছে রাজা গোপালকে সূর্য বংশীয় বলিয়া দাবি করেছে , যদিও ঐতিহাসিকদের ধারণা ও বিশ্বাস যে পরবর্তীকালে তাহারা সাধারণ বংশ পরম্পরাকে গৌরবান্বিত করা  ছাড়া বা প্রমান পত্র নাই।গোপালের পুত্র ধর্মপাল।
#গোপালের সিংহাসন আরোহনের কাহিনী:
গোপালের সিংহাসন আরোহন নিয়ে  বেশ কয়েকজন বিভিন্ন মতামত দিয়েছে:::;;
ড.আব্দুল মমিন চৌধিুরী বলেন,অরাজকতার মধ্য হইতেই পালবংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপাল বাংলার রাজরূপে প্রতিষ্ঠিত হন । ধর্মপালের রাজত্বকালের খালিমপুর তাম্রশাসনের ঘোষণা করা  হয়েছে যে, মাৎস্যন্যায় অবস্থার অবসান করিয়াছিলেন।গোপালের ক্ষমতালাভ সম্বন্ধে খালিমপুরে তাম্রলিপিতে
যে  শ্লোকটি আছে তা হল:: তাহার ছেলে শ্রী গোপালকে,যিনি রাজাদের মধ্যে মুকুটমণি ছিলেন,মাৎস্যন্যায়য়ের অবসান ঘটাইবার জন্য প্রকৃতিগণ লক্ষীর হাত গ্রহণ করাইছিল।
লামা তারানাথ গোপালের উথান সম্বন্ধে এক রূপকথায় কাহিনীর অবতারণা করিয়াছেন। তাহার কাহিনীর সারমর্ম এই যে দেশে বহুদিন যাবৎ অরজাকতার ফলে জনগণের দুঃখকষ্টের সীমা ছিল না । নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা মিলিত হইয়া আইনানুগ শাসন প্রতিষ্ঠকল্পে একজন রাজা  “নির্বাচিত” করেন। 
কিন্তু “নির্বাচিত’ রাজা রাত্রিতে এক কৎসিত নাগ রাক্ষসী কর্তৃক নিহত হয় । ইহার পর প্রতি রাত্রিতে একজন করিয়া ‘নির্বাচিত” রাজা নিহত হইতে থাকেন। এইভবে বেশ কয়েক বছর গত হইয়া যায়। অবশেষে একদিন চুন্ডাদেবীর এক ভক্ত এক বাড়িতে আসে। সেই বাড়ির সকলে খুব বিষন্ন। কারণ ঐদিন “নির্বাচিত” রাজা হইবার ভার পড়িয়াছে ঐ বাড়িরই এক ছেলের উপর । আগন্তক ঐ ছেলের ষ্থানে রাজা হইতে রাজী হন এবং সকালে বেলা তিনি রাজা নিবাৃচিত হন। সেই রাত্রিতে নাগ রাক্ষসী আসেলে তিনি চুন্ডদেবীর মহিমায়যুক্ত এক লাঠি দিয়া তাহাকে আঘাত করেন, রাক্ষসী মরিয়া যায়। পরের দিন তাহাকে জীবিত দেখিয়া সকলেই আশ্চর্য হইল। পরপর সাতদিন নিতি এইভাবে রাজা ‘নির্বাচিত” হইলেন । অতঃপর তার অদ্ভুত যোগ্যতার জন্য জনগন তাকে স্থায়ী রাজারূপে ‘নির্বাচিত” করল এবং গোপাল নাম দেওয়া হইল।
ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার ও সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে বলেন যে, “এ চরম দুঃখু - দুর্দশা হইতে মুক্তি লাভের জন্য  বাঙ্গালি জাতি যে রাজনৈতিক বিজ্ঞতা ,দূরদশিৃতা ও আত্মত্যাগের পরিচয় দিয়াছিল; ইতিহাসের তা চিরস্মরণীয় হইয়া থাকিবে। এরূপ কেবল দেশের মঙ্গলের দিকে চাহিয়া ব্রক্তিগত স্বাথৃ বিসর্জনপুর্বক সর্বসাধাণের মিলিয়া কোন বৃহঃ কার্য অনুষ্ঠািন যেমন বাঙালির ইতিহাসে আর দেখা যায় না।
আধুনিক ব্যাখ্যা:::::::::  
ষড়যন্ত্রকারী অভিজাত শ্রেনীর সাহায্য এক সামরিক অভুথানের মাধ্যমে গোপাল ক্ষমতার দখল করেন। কারণ গোপালের পিতা ছিলেন বিজেতা ও পিতামহ ছিলেন পন্ডিত ব্যক্তি।দেশের এক চরম মুেহূর্তে শিক্ষিত শেনী ও সামরিক বাহিনীর সাহায্যে গোপাল সহজেই বাংলার সিংহাসন অস্ত্রের মাধ্যমে দখল করেন(সূত্র:মাহবুব রহমান)
(আমার মতে অরাজকতা অবসান ঘঠিয়ে বাংলার সিংহাসন আরোহন করাক ক্ষমতা ও দক্ষতা গোপালের ছিল । কারন খলিমপুর তম্রলিপিতে বলা হয়েছে গোপাল শুত্র দমনকারী  যুদ্ধা ও তিক্ষ্ণ বুদ্ধি, কূটকৌশরী সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন)
গোপালর কৃতিত্বসমূহ::: 
(১) অরাজকতার অবসান:: :
৬৩৭ খ্রি. শশাঙ্কের মৃত্যু পর প্রায় একশত বছর বাংলাই ঘোর আরজকতা চলছিল। এমন সময় কোন স্থানে শাসন গড়ে উঠেতে পারে নি।অভ্যন্তরীণ গোলযোগতো ছিলই,তদুপরি বিদেশীদের আক্রমণে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা আরো বেড়ে যায়। এই রূপ বাংলার অবস্থাকে কবি সন্ধাকর নন্দী “মাৎস্যন্যায়” বলে অভিহিত করেছেন। এই অরাজকতা মধ্য থেকে পাল বংশের পতিষ্ঠাতা গোপাল বাংলার সিংহাসনে বসেন । গোপাল এই অরজাকতা অবসান ঘটিয়ে শান্তির্শঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।তিনি জনসাধারনের কল্যানের জন্য অনেক কাজ করেছেন।
(২) কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা::::::::::::::: 
গোপাল পালবংশের শীর্ষ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর অরাজকতা হওয়ার পর অরাজকতা অবসান লক্ষ্যে কেন্দ্রী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। গোপাল বিভিন্ন কর্মচারী এবং সামন্ত রাজাকে আনুগত্য লাভ করেন। 
(৩) মগধ জয়::::::::::
গোপাল সিংহাসন বসে সর্ব প্রথম বঙ্গদেশ রাজত্ব করেছেন তার পর তিনি মগধ জয় করেছেন ।কোন কোন পন্ডিত মনে করেন -গোপাল মগধ জয় করে নি বরং পাল বংশের আদি নিবাস মগধে। কারণ পাল বংশে বেশির ভাগ লিপি মগধে পাওয়া গেছে।
(৪)সুনিপুণ যোদ্ধা:::::::::::::: 
গোপাল একজন সুনিপুণ যোদ্ধা এবঙ পরোপকারী মানুষ ছিলেন। তিনি যদিও একজন  শ্রেষ্ঠ বীর যোদ্ধা ছিলেন তথাপি অন্যয়ভাবে কখনো যুদ্ধ করতে প্রয়শী হতেন না । তিনি বীর হলে ও দূরাচারী ছিলেন না । যেখানে প্রয়োজন সেখানেই তার অনি কোষমুক্ত হতো  এবং প্রয়োজনে শেষে তিনি কোষবদ্ধ করতে জানতেন।
(৫) বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক::::::::: 
গোপাল বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিল । গোপাল বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠা ফলে বাংলাই বৌদ্ধ ধর্মের অনুগামীদের সংখ্যা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় । বৌদ্ধ মঠ তৈরী করেছেন গোপাল । গোপাল অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা ছিল।
(৬)গোপালের রাজত্বকাল:::::::::::: 
তিব্বতীয় ঐতিহাসিক লামা তারানাথ এর মতে, গোপাল ৪৫ বছর রাজত্ব করেন “আর্যমুঞ্জশ্যীমূলকল্প” নামক গ্রন্থের মতে, গোপাল ২৭ বছর রাজত্ব করেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ড’আব্দুল মমুনি চৌধুরীর মতে গোপাল ২০ থেকে ২৫ বছর রাজত্ব করেন। তবে গোপাল ৭৫৬ খ্রি, থেকে ৭৮১ খ্রি, পর্যন্ত রাজত্ব করে।

FOR MORE CLICK HERE

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]