ভারতবর্ষে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির আগমন

ভারতবর্ষে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির আগমন
ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসন শুরু হয়। ইষ্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানি ব্রিটিশদের একটি বণিক সংঘ। ১৬০০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ ২১৭ জন বণিককে এই
প্রাইভেট জয়েন্ট স্টক কোম্পানি গঠন করার সনদ প্রদান করেন। এই কোম্পানিকে ভারত ও পূর্ব ভারতীয়
দ্বীপপুঞ্জে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে ব্যবসা করার একচেটিয়া অধিকার দেয়া হয়। ইংরেজদের এ অঞ্চলে আগমনের পূর্বেই
পর্তুগিজ, ফরাসি ও ওলন্দাজরা এদেশে বাণিজ্য শুরু করে। বাণিজ্য সংক্রান্ত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এদের সঙ্গে
ইংরেজদের দ্ব›দ্ব সংঘর্ষ হয়। শেষ অবধি ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে বাণিজ্যিক আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি
নিজেদের অপ্রতিদ্ব›দ্বী শক্তি হিসেবে আবিভর্‚ত করতে সক্ষম হয়।
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের প্রথম বাণিজ্য কুঠি ভারতের পশ্চিম উপক‚লে বন্দর সুরাতে (১৬১৩ খ্রি:) স্থাপন করে। এর
প্রায় বিশ বছর পর ১৬৩৩ সনে কোম্পানি নামে মাত্র বাংলার সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বোধন করে। তবে এ অঞ্চলে বাণিজ্য
লাভজনক না হওয়ায় কোম্পানি এ নিয়ে প্রথম বিশ বছর বেশ দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব থাকে। পরবর্তীতে কোম্পানি ১৬৫০ সনে বাংলায়
বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৬৫১ সালে হুগলীতে স্থাপন করে প্রথম বাণিজ্যকুঠি। এই ঘটনাকে বাংলায়
ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার
পথে পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হল ১৬৮৬-৯০ সালে এ্যাংলো-মুঘল যুদ্ধ, এর পর স¤্রাট
আওরঙ্গজেব কর্তৃক বাৎসরিক থোক তিন হাজার টাকা শুল্ক প্রদানের শর্তে বাংলায় অবাধ বাণিজ্য করাসহ কোম্পানি
প্রতিনিধি জব চার্নককে সুতানুটিতে বসতি স্থাপনের অনুমতি প্রদান করা। ১৬৯৮ সনে কোম্পানিকে কলকাতা, সুতানুটি ও
গোবিন্দপুর নামক তিনটি গ্রামের জমিদারি সনদ প্রদান করা এবং কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ স্থাপনের অনুমতি প্রদান
করা হয়। পরবর্তীতে ১৭১৭ সালে স¤্রাট ফররুখ শিয়ার কোম্পানিকে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অনুমতি প্রদান করে।
মাদ্রাজ, বোম্বে ও কলকাতাকে কেন্দ্র করে কোম্পানির বাণিজ্য দ্রæত প্রসার লাভ করতে থাকে। পলাশীর যুদ্ধ ও কোম্পানি শাসন প্রতিষ্ঠা
১৭১৭ সালের বাদশাহী ফরমান নবাব ও কোম্পানির মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ শীতল করে তোলে। নবাব আলীবর্দী খানের
মৃত্যুর পর তার দোহিত্র সিরাজউদ্দৌলা মুর্শিদাবাদের মসনদে আরোহণ (১০ এপ্রিল, ১৭৫৬) করেন এবং কোম্পানির প্রতি
তাঁর নীতি ঘোষণা করেন। তিনি উপলদ্ধি করেন যে, ইংরেজদের উপস্থিতি এ দেশের স্বার্থের প্রতিক‚ল।
ইংরেজদের বাংলা থেকে বিতাড়নে তিনটি কারণ নি¤œরূপ
প্রথমত, দেশের প্রচলিত আইন-কানুন অমান্য করে কলকাতার দুর্ভেদ্য দুর্গ ও পরিখা স্থাপন।
দ্বিতীয়ত, বেআইনীভাবে কোম্পানির নামে ব্যক্তি পর্যায়ে দস্তক (বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার পাশ) বিতরণ করে সরকারকে
বৈধ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা এবং তৃতীয়ত, জমিদারি ইজারার নিয়ম ভঙ্গ করে ইংরেজদের কলকাতা জমিদারীকে
নিজেদের সার্বভৌম এলাকা হিসেবে গণ্য করা ও নবাবি আইন-আদালত থেকে পালিয়ে আসা অনেক অপরাধীকে
কলকাতায় কোম্পানি কর্তৃক আশ্রয় প্রদান।
কোম্পানির প্রতি নবাবের ঘোষিত নীতির কারণে ইংরেজদের সাঙ্গে নবাবের বেশ কয়েক দফা যুদ্ধ ও শান্তিচুক্তি সম্পাদিত
হয়। বস্তুত সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনে আরোহণ করার পর থেকে তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে নানা কারণে মন:ক্ষুন্ন ঘরের
শত্রæ শওকত জং, ঘষেটি বেগম দরবারের শত্রæ আমাত্য ও বেনিয়া সম্প্রদায় এবং বহি:শত্রæ ইংরেজদের সঙ্গে। নবাবের
অভ্যন্তরীণ শত্রæুদের কাজে লাগিয়ে ইংরেজরা নবাবকে উৎখাতের এক নীল নকশা তৈরি করে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন
রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে নবাবের বাহিনীর এক যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। তবে একে যুদ্ধ না বলে
পাতানো খেলা বলা ভালো। কারণ যুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের নেতৃত্বাধীন অধিকাংশ
সৈন্য নিষ্ক্রিয় ভ‚মিকা পালন করে, যার ফলে নবাবের পরাজয় ঘটে। বন্দী অবস্থায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবকে।
পলাশীর যুদ্ধের দুই ধরণের ফলাফল আছে; প্রথমত অব্যবহিত ফলাফল এবং দ্বিতীয়ত সুদূর প্রসারী ফলাফল। পলাশী
যুদ্ধের পরপরই এ অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ইংরেজরা চরম লুণ্ঠনযজ্ঞ চালাতে থাকে, বাংলার সম্পদ পাচার
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় এইচএসসি প্রোগ্রাম
ইউনিট এক পৃষ্ঠা ৩
হতে থাকে। ইংরেজরা স্থানীয় ব্যবসায় যোগদান করে, যার ফলে বাংলার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হয়। অপরদিকে,
পলাশী যুদ্ধের সুদূর প্রসারী ফলাফল ছিল রাজনৈতিক। পলাশীর পরিণতিতে বাংলার প্রধান প্রধান প্রতিষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে
এবং ভিত্তি রচিত হয় নতুন প্রতিষ্ঠানে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের।
পলাশী যুদ্ধের পর ষড়যন্ত্র মোতাবেক মীর জাফর বাংলার নবাব হন। কিন্তু মাত্র তিন বছর পর তিনি নিজ জামাতা মীর
কাশিমের ষড়যন্ত্রের শিকার হন এবং নবাবী হারান। মীর কাশিম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সিংহাসনে আরোহণ করলেও দেশের
স্বার্থে কাজ করা শুরু করেন। ফলশ্রæতিতে ইংরেজদের সাথে তাঁর যুদ্ধ (১৭৬৩) হয় এবং যুদ্ধে পরাজিত হলে তাকে দেশ
ত্যাগে বাধ্য করা হয়। এরপর আবার নবাব হন মীর জাফর। মূলত ইংরেজরা পুতুল নবাব পছন্দ করতেন, কোনো
স্বাধীনচেতা নবাব তাদের পছন্দ ছিল না। কোম্পানি সরাসরি শাসনভার হাতে না নিলেও দেশীয় রাজার মসনদে থাকা না
থাকা ছিল তাদের ইচ্ছার ব্যাপার। এভাবে পলাশীর যুদ্ধের পর কোম্পানিই দেশের শাসনকর্তা হয়ে ওঠে। ১৭৬৫ সালে
কোম্পানি বাংলা-বিহার ও উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের একচ্ছত্র আইনগত ক্ষমতা লাভ করে। ১৭৭২ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট
কর্তৃক প্রণীত ‘রেগুলেটিং এ্যাক্ট’ এর মাধ্যমে ওয়ারেন হেস্টিংসকে গভর্ণর জেনারেল এবং চার সদস্য বিশিষ্ট
উপদেষ্টামÐলীর বিধান করে কলকাতায় সর্বপ্রথম কোম্পানি একটি কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এরপর ধীরে ধীরে
এই কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রসারিত হয়। ১৮৫৮ সালে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে এবং এর স্থলে ব্রিটিশ রাণীর সরাসরি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
সারসংক্ষেপ
পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজরা জড়িত হয় মূলত বাণিজ্যিক স্বার্থে। বাংলা তথা ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যে যোগদান করতে
এসেছিল ওলন্দাজ, ফরাসি ও ইংরেজসহ নানান ইউরোপিয় দেশের বণিকেরা। তারা স্থানীয় শাসক ও বণিকদের সাথে
সম্পর্ক স্থাপন করে। ইংরেজ বণিকেরা বাণিজ্যের পাশাপাশি স্থানীয়দের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে বাংলার নবাবকে মসনদ
থেকে উৎখাত করে। বাণিজ্য রূপান্তরিত হয় রাজনৈতিক আধিপত্যে। স্থাপিত হয় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। পলাশীর যুদ্ধ কত সালে সংঘটিত হয়?
(ক) ১৭৫৭ সালে (খ) ১৮৫৭ সালে (গ) ১৯০৫ সালে (ঘ) ১৯৪৭ সালে
২। ব্রিটিশ ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসান হয় কত সালে
(ক) ১৭৫৪ সালে (খ) ১৭৫৭ সালে (গ) ১৮৫৮ সালে (ঘ) ১৮৫৭ সালে
৩। মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহের কাছ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানি লাভ করায়Ñ
(র.) বাংলার নবাব ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েন
(রর.) কোম্পানি সরাসরি প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের অধিকার পায়
(ররর.) কোম্পানি লাভ করে দায়িত্বহীন ক্ষমতা
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র ও রর (খ) র ও ররর (গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]