বাংলাদেশ ও সুশাসন

বাংলাদেশে সুশাসনের ইস্যুসমূহ
উন্নয়নশীল দেশগুলোর মূল লক্ষ্য মানব উন্নয়ন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও জাতিসংঘ প্রত্যেক রাষ্ট্রে সুশাসন
প্রতিষ্ঠার প্রতি জোর দিচ্ছে। একটি দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুশাসন। সুশাসন
স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আইনী কাঠামো ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করে, যা দারিদ্র বিমোচন,পরিবেশ
সুরক্ষা, লিঙ্গগত বৈষম্য রোধ করে। আলোচ্য ইউনিটে বাংলাদেশ ও সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, নারীর ক্ষমতায়ন,
দুর্নীতি রোধ, জলবায়ু পরিবর্তন ও রাজনীতি, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও করণীয়, খাদ্যে ভেজাল ও আমাদের করনীয়, পরিবেশ দূষণ ও সুশাসন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সুশাসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ । শাসন শব্দের সাথে সুপ্রত্যয়টি যুক্ত করা হয়েছে।
সুশাসনকে একক কোনো ধারণা দিয়ে সংজ্ঞায়িত বা ব্যাখ্যা করা যায় না। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাংকের এক
সমীক্ষায় ‘সুশাসন’ প্রত্যয়টি ব্যবহার করা হয়। সুশাসনের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রে একটি কল্যাণকর
ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। সুশাসনের মাধ্যমে নাগরিক সমাজের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
সুশাসন হল সরকারের এমন এক ব্যবস্থা যার লক্ষ্য রাষ্ট্র ও সুশীল সমাজের মধ্যে বৈধ সম্পর্ক ও উন্মুক্ত যোগাযোগ নিশ্চিত
রা। সেই সাথে কার্যকরি ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি, নির্বাচন প্রক্রিয়া  এবং
প্রতিনিধিত্বকারী দায়িত্বশীল সরকারি কাঠামোকে ক্রিয়াশীল রা।
অর্থাৎ, যেখানে রাজনৈতিক স্বাধীনতার সুরক্ষা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, আইনসভার নিকট শাসন
বিভাগের জবাবদিহিতা, বৈধতা, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত, বাক স্বাধীনতা থাকে, সেই শাসনকে সুশাসন বলা যায়।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আর গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুশাসন। যে কোন রাষ্ট্রর অগ্রযাত্রার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে সুশাসন। সুশাসিত রাষ্ট্রই কেবলমাত্র কল্যাণ রাষ্ট্র হতে পারে।
সুশাসন কথাটি বিশ্বব্যাংকের উদ্ভাবিত ধারণা। একটি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বব্যাংক সর্বপ্রথম উন্নয়নের
প্রেক্ষাপটে সুশাসন ধারণাটিকে গুরুত্ব দিয়েছে। ২০০০ সালে বিশ্বব্যাংক সুশাসনের জন্য প্রয়োজনীয় চারটি শর্ত ঘোষণা
করে। সেগুলো হলো : ১. দায়িত্বশীলতা ২. স্বচ্ছতা ৩. আইনী কাঠামো ৪. অংশগ্রহণ
১। দায়িত্বশীলতা : প্রত্যেক ব্যক্তি ও বিভাগের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে সঠিক সময়ে পালনই দায়িত্বশীলতা।
বাংলাদেশে সরকারি কার্যালয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দায়িত্বশীলতার চরম ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়।
২। স্বচ্ছতা : সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য স্বচ্ছতা অপরিহার্য। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সেবা বন্টনের ক্ষেত্রে কখন
কোথায় কিভাবে কতটুকু সম্পদ বা সেবা প্রদান করা হল তার তথ্য জানা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। স্বচ্ছতার
মধ্য দিয়ে সরকার ও জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।
৩। আইনী কাঠমো : দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা আইনের শাসন এগুলো নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ ও দক্ষ
আইনী কাঠামো প্রয়োজন। যেমন, কর্মস্থলে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নের ফলে পূর্বের চেয়ে অধিক স্বচ্ছতা
এসেছে। এভাবে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও পুরনো আইন হালনাগাদ করে সুশাসন উপযোগী একটি আইনী কাঠামো গড়ে তোলা অপরিহার্য।
৪। অংশগ্রহণ : অংশগ্রহণ বলতে মূলত সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জনগণের ভ‚মিকাকেই বোঝায়।
এ জন্য অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রয়োজন। নির্বাচন, সভা-সমিতি, ইশতেহার, শোভাযাত্রা, সেমিনার এর মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা যায়।
বাংলাদেশ ও সুশাসন :
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করে। পাকিস্তানের দীর্ঘ ২৫
বছরের শাসনামলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানে সুশাসনের কোন চিহ্ন ছিল না, ছিল না মানবাধিকার, ছিল না সম্পদ বন্টনে
সমতা আর আইনের শাসন। স্বাধীনতার পর শুরু হল দেশ গড়ার সংগ্রাম। দেশ গড়ার সংগ্রামে অন্যতম বাধা হয়ে
দাঁড়িয়েছিল সুশাসনের অনুপস্থিতি। দেশি-বিদেশী চক্রান্ত আর অবৈধ ক্ষমতা দখলের পরিণতিতে সুশাসন ক্রমাগত
বিলম্বিত হয়েছে।
বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ অত্যন্ত জরুরি। শাসনকার্যে জনসম্পৃক্ততা যত বৃদ্ধি পাবে,
সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও একইভাবে বৃদ্ধি পাবে। কারণ জনগনের মতামতের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহন ও
বাস্তবায়ন হলে তা সুশাসনেরই নামান্তর। বাংলাদেশে সুশাসনের জন্য দরকার লিঙ্গভিত্তিক সমতা প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশ
সরকার লিঙ্গ ভিত্তিক সমতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সুশাসনের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি শর্ত হচ্ছে শক্তিশালী
স্থানীয় সরকার। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে তৃনমূল পর্যায়ে যতটা সম্প্রসারিত করা যাবে সুশাসন ততটাই জোরদার হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে এক্ষেত্রে নানা ধরণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে সুশাসনের ইস্যুসমূহ :
বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা ও বিশেষজ্ঞগণ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনেকগুলো পূর্বশর্ত বা উপাদানের অপরিহার্যতার কথা
বলেছেন। বাংলাদেশ বর্তমানে সেগুলো পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। সুশাসনের ইস্যু রাষ্ট্র ও সমাজভেদে আলাদা হতে পারে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ ধরণের বিশেষ কয়েকটি ইস্যু রয়েছে। যেমন দুর্নীতি, পরিবেশ দূষণ, অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি
সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া খাদ্যে ভেজাল, নারী নির্যাতন, জলবায়ু পরিবর্তনের আঘাতে উপক‚লীয় অঞ্চলসহ
বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এবং কৃষি জমির ক্ষতি সুশাসন প্রতিষ্ঠার অভিযানে এ ইস্যুগুলো ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব
ফেলে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এসব ইস্যুগুলো অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে।
সারসংক্ষেপ
সুশাসন
 ইংরেজি প্রতিশব্দ । সুশাসনের কতকগুলি উপাদান রয়েছে। সেই
উপাদানগুলির উপস্থিতি নিশ্চিত হলে একটি রাষ্ট্র সুশাসিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। একটি সুশা
রাষ্ট্রই পারে নাগরিকদের সর্বাঙ্গিন মঙ্গল ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১০.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। সুশাসন প্রত্যয়টি প্রথম প্রচলন করে-
(ক) জাতিসংঘ (খ) ইইউ
(গ) ইউএসএ (ঘ) বিশ্বব্যাংক
২। সুশাসনের ইস্যু বলতে বুঝায়-
(ক) সুবিধা (খ) প্রতিক‚লতা
(গ) অপ্রযোজ্যতা (ঘ) অপরিহার্যতা
৩। সুশাসনের জন্য প্রয়োজন
র. জবাবদিহিতা
রর. দায়িত্বহীনতা
ররর. স্বচ্ছতা বৃদ্ধি
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র (খ) র ও রর (গ) র ও ররর (ঘ) সবকটি

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]