জলবায়ু পরিবর্তন কী বল, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার রাজনীতি জলাবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় করণীয় আলোচনা কর

মুখ্য শব্দ বৈশ্বিক উষ্ণতা, গ্রীণ হাউজ গ্যাস, বৃক্ষ নিধন, শিল্পায়ন, নগরায়ন, নীতি ও কৌশল,
ক্ষতিপূরণ, অভিযোজন, কনফারেন্স অব পার্টিস (কপ)
জলবায়ু একটি নির্দিষ্ট আয়তনের এলাকার দীর্ঘ দিনের আবহাওয়ার গড় অবস্থা। এর পরিবর্তন অতি দীর্ঘ
ব্যবধানে হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু জলবায়ু অস্বাভাবিক ও দ্রæত পরিবর্তন আজ সমগ্র বিশ্বের চিন্তার বিষয়।
বাংলাদেশেও জলবায়ুর পরিবর্তন খুব স্পষ্ট লক্ষ্যণীয়। বিশেষ করে অতি দীর্ঘতর এবং উষ্ণতর গ্রীষ্মকাল, দেশের
দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তৃত এলাকায় সমুদ্রের লোনা পানির প্রবেশ খুব সহজেই দৃশ্যমান। এ পরিবর্তনের সাথে রাজনীতি
অনাকাঙ্খিতভাবে জড়িত। বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থার গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অতিরিক্ত
উষ্ণায়নই দায়ী। আর এই উষ্ণায়ন তেরি হয় উন্নত দেশগুলোর অতি শিল্পায়ন, নগরায়ন এবং ভোগবাদী ব্যবস্থাপনার
কারণে। অর্থাৎ উন্নত দেশের ভোগ-বিলাসের বিপরীতে জান-মাল ও প্রাকৃতিক ঝুঁকিতে পড়ছে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল
দেশগুলো। জলবায়ু পরিবর্তনের এই বৈপরীত্য মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজন পড়ে রাজনৈতিক উদ্যোগ। তাই এই পুরো
প্রক্রিয়াটিকে জলাবায়ু পরিবর্তন ও রাজনীতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলো আলোচনা
করলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। নিচে জলবায়ু পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ আলোচনা করা হল -
গ্রীণ হাউজ গ্যাস:
পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হল কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরিনেটেড গ্যাস। শিল্পায়ন, নগরায়ন এর ফলে অধিক পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি, পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন ইত্যাদি ব্যবহার করে শক্তি
উৎপাদন করা হচ্ছে। কিছু উপজাত হিসেবে নির্গত হচ্ছে অধিক তাপ ও গ্রীণ হাউস গ্যাস। এক্ষেত্রে কার্বন ডাই অক্সাইড
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর, যা একাই ৬৪% উষ্ণতা তৈরি করে। তাছাড়া মিথেন ১৭% এবং নাইট্রাস অক্সাইড ৬% উষ্ণায়ন
করে থাকে। বৈষয়িক উষ্ণায়নে দায়ী কয়েকটি উন্নত দেশের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলআমেরিকার পরিবেশ নিরাপত্তা সংস্থার হিসাব মতে ২০১১ সালে চীন ২৮%, আমেরিকা ১৬%, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন
১০%, ভারত ৬%, রাশিয়া ৬% এবং জাপান ৪% গ্রীণ হাউজ গ্যাস নির্গমণ করেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিশ্বের প্রায় ১০টি দেশ প্রায় ৭০ ভাগ গ্যাস নির্গমণ করে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের নির্গমণ মাত্র ০.৩%, অথচ ক্ষতিগ্রস্থ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম একেবারে উপরের দিকে।
নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন :
শিল্পায়ন, নগরায়ন সর্বোপরি জীবিকার তাগিদে বিশ্বের বনভ‚মি দিন-দিন হ্রাস পাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বে
বছরে ১৩.৭ মিলিয়ন হেক্টর বনভ‚মি উজার হচ্ছে, যা প্রায় গ্রীস রাষ্ট্রের সমান। কিন্তু নতুন সৃষ্টি হচ্ছে মাত্র তার অর্ধেক। এ
বিষয়েও চিত্র প্রায় উল্টো। যেসব দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে তাদের বনভ‚মি কম এবং তা দ্রæত কমছে। বাংলাদেশে
বনভ‚মির পরিমাণ ১০ ভাগেরও কম। বনভুমি হ্রাস পাওয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা শোষিত না হয়ে বায়ুমন্ডলকে উষ্ণ করছে।
তাছাড়া কৃষি আবাদ বৃদ্ধিতে বেশি পরিমাণে রাসায়নিক সার কীটনাশক ব্যবহার ও অতিরিক্ত গবাদি-পশু পালন জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার রাজনীতি :
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সকল গবেষণাই এর জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে। অনুন্নত দেশগুলো যখন বাঁচার
জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে তখন উন্নত দেশগুলো উদ্বৃত্ত উৎপাদন ও ভোগ বিলাসে মত্ত। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দুই
ধরনের রাজনীতি দেখা যায়আন্তরাষ্ট্রীয় :
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, রাষ্ট্র ও স্বীকৃত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে জলবায়ু পরিবর্তন
মোকাবেলার উদ্যোগ গ্রহণ। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতো সংগঠনগুলো উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন
করছে। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা নিয়মিত সম্মেলনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায়
অংশীদারিত্ব তৈরি করছে। তথাপি অনুন্নত রাষ্ট্রগুলো ন্যায্য ক্ষতিপূরুণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই রাজনৈতিক প্রচেষ্টা
আরো জোরদারে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন ফোরাম এ জোরালো অবস্থান তৈরি করছে। কিন্তু বিভিন্ন সম্মেলনে এ পর্যন্ত
প্রতিশ্রত ক্ষতিপূরণের অর্থ দেশগুলো এখনও তেমনভাবে পায় নি। তাই বিশ্লেষকগণ মনে করেন প্রত্যেকটি রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে আরো চাপ সৃষ্টি করা উচিত।
অভ্যন্তরীণ :
জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত দেশগুলো দায়ী কিন্তু তাদের নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া অনেক সময় সাপেক্ষ ও শর্ত পূরণের বিষয়। তাই বাংলাদেশ সরকার স্ব-উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার পথ ধরে ইতোমধ্যে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন
করেছে। এজন্য দেশীয় সম্পদ ও প্রযুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করা জন্য অধিকতর রাজনৈতিক ঐক্য ও
উদ্যোগ জরুরি। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থাকার পরও, রাজনৈতিক দলগুলো জলবায়ু পরিবর্তনকে এখনো
তাঁদের রাজনৈতিক ইস্যু করছে না বা পরিবেশাবাদী কোন রাজনৈতিক দল গড়ে উঠছে না। কানাডা, জার্মানির মতো
দেশগুলোতে পরিবেশবাদী রাজনৈতিক দল রয়েছে। এই দলগুলো এখন সরকারের উপর নানাবিধ চাপ সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশের সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) এর গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন এই তহবিলেও দুর্নীতি হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দুর্নীতি ও
অবহেলা মোকাবেলা করার জন্যও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ জরুরি। সময়োপযোগী নীতি ও কৌশল প্রয়োগে রাজনৈতিক সদিচ্ছা অপরিহার্য।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় করণীয়
রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন যুক্ত করার কোন বিকল্প নেই। নিচে সরকার এবং রাজনৈতিক সংগঠনের
করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হল১. সরকারি নীতিমালায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সম্পর্কিত বিষয় অন্তভর্‚ক্ত করা
২. সরকারি-বেসরকারি গবেষণা বৃদ্ধি করা
৩. পরিবেশবাদী রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি
৪. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিপূরণ আদায়ে অভিজ্ঞ টিম গঠন। এ টিমের কার্যক্রম হবে ক্ষতিপূরণের যৌক্তিকতা
নিরুপণে প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা এবং প্রয়োজনে লবিং/যোগাযোগ করা।
পরিশেষে বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী নয়। দায়ী রাষ্ট্রগুলো চেষ্টা করলেই পৃথিবীর তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে
(২০ প এর কম বৃদ্ধি) রাখতে পারে।
সারসংক্ষেপ
দ্রæত ও অস্বাভাবিক জলবায়ু পরিবর্তন সমগ্র পৃথিবীর জন্য হুমকিস্বরূপ। জীবাশ্ম জ্বালানির অধিকতর ব্যবহার, বনাঞ্চল
ধ্বংস করা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে মানবসৃষ্ট কারণই দায়ী
এবং তা করছে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আন্ত:রাষ্ট্রীয় এবং অভ্যন্তরীণ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১০.৫
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য দায়ী
র. বৃক্ষরোপণ
রর. গ্রীণ হাউজ গ্যাস
ররর. অতিরিক্ত গবাদিপশু পালন
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র (খ) রর ও ররর (গ) র, রর ও ররর (ঘ) কোনটিই নয়
২। শিল্পোন্নত চীন বিশ্বের কতভাগ গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন করে?
(ক) ২০% (খ) ২২%
(গ) ২৫% (ঘ) ২৮%
৩। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কোনটি গুরুত্বপূর্ণ?
(ক) নীতি ও কৌশল প্রণয়ন
(খ) আন্তর্জাতিক ফোরামে নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরা
(গ) জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা
(ঘ) সব কয়টি

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]