খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের বিস্তার ও পরিণতি সম্পর্কে বর্ণনা কর

মুখ্য শব্দ তুর্কি সা¤্রাজ্য, খলিকা, জালিয়ানওয়ালাবাগ, খিলাফত সম্মেলন, পঞ্চায়েত।
ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ আন্দোলনের
মাধ্যমে প্রথমবারের মত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতের হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব হয়।
খিলাফত আন্দোলন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুরস্ক ব্রিটেনের বিপক্ষে যুদ্ধ করে। যুদ্ধে ব্রিটেন জয়লাভ করে। এর ফলে তুর্কি সা¤্রাজ্যের অখÐতা
হুমকির সম্মুখীন হয়। ভারতীয় মুসলমানরা তুরস্কের সুলতানকে মুসলমানদের খলিফা বা নেতা বলে মনে করত। প্রথম
বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ভারতীয় মুসলমানরা একটি শর্তে ব্রিটিশদের যুদ্ধে সহায়তা করেছিল আর তা হল ব্রিটিশরা তুর্কি
সা¤্রাজ্যের উপর হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু জয়লাভের পর ব্রিটিশরা তাদের প্রতিশ্রæতি ভঙ্গ করে তুরস্ককে খÐ-বিখÐ করতে
উদ্যত হয়। এমতাবস্থায়, ভারতীয় মুসলমানরা তুর্কি সা¤্রাজ্যের অখÐতা ও তুর্কি সুলতানের মান ও মর্যাদা রক্ষার জন্য
১৯১৯ সালে যে আন্দোলন গড়ে তোলে, তাই ইতিহাসে খিলাফত আন্দোলন নামে পরিচিত।
অসহযোগ আন্দোলন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয় তার সূত্র ধরে ভারতীয়রা ইংরেজদের কাছে প্রাদেশিক
স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন এ প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়। অপরদিকে এ সময়
ব্রিটিশ সরকার ‘রাউলাট আইন’ পাশ করে। এ আইনে শান্তি-শৃংখলা বিরোধী কর্মকাÐের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে
কাউকে বিনা বিচারে দীর্ঘ সময়ের জন্য আটক করে রাখার বিধান করা হয়। এ আইনের ব্যাপারে জনমনে যখন অসন্তোষ
সৃষ্টি হচ্ছিল তখন আরেকটি ঘটনা ঘটে। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ নামক স্থানে চতুর্দিকে
প্রাচীর ঘেরা একটি মাঠে কয়েক হাজার মানুষ প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। ব্রিটিশ সরকার এই নির¯্র জনতার উপর গুলি
চালায় এবং এতে প্রায় চারশ মানুষ নিহত ও অনেকে আহত হয়। এমতাবস্থায়, ১৯১৯ সালে ব্রিটিশদের দমন ও
পীড়নমূলক কার্যকলাপের প্রতিবাদে মহাত্মাগান্ধীর আহবানে সমগ্র ভারতব্যাপী যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তা অসহযোগ
আন্দোলন নামে পরিচিত। এ আন্দোলনের প্রকৃতি ছিল অহিংস। একই সময়, ভারতের মুসলমান সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন গড়ে ওঠে।
আন্দোলনের কর্মসূচি ও বিস্তার
খিলাফত আন্দোলনে ভারতীয় মুসলমানরা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। ভারতের বিভিন্নস্থানে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক
খিলাফত কমিটি গঠিত হয়। কলকাতায় ১৯১৯ সালের ৯ ফেব্রæয়ারি খিলাফতের সমর্থনে প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
দিল্লিতে ১৯১৯ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম সর্বভারতীয় খিলাফত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। খিলাফত আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের
মধ্যে ছিলেন মোহম্মদ আলী, শওকত আলী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী, এ. কে. ফজলুল
হক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক আয়োজিত ‘শান্তি উৎসব’ এর বিরোধিতা করে দিল্লি সম্মেলনে প্রস্তাব গৃহীত হয়।
অপরদিকে অসহযোগ আন্দোলনের এক পর্যায়ে গান্ধী তাঁর ‘বয়কট কর্মসূচী’ প্রস্তাব করেন। এ কর্মসূচি ১৯২০ সালের
সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও খিলাফত কমিটির সম্মেলনে অনুমোদিত হয়। বয়কট কর্মসূচি
একই বছরের নভেম্বর মাসে নাগপুরে অনুষ্ঠিত যৌথ সম্মেলনে গৃহীত হয়। এ কর্মসূচিতে নি¤েœাক্ত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়১. বিদেশী পণ্য বর্জন।
২. ব্রিটিশ প্রদত্ত খেতাব ও পদবি বর্জন এবং অবৈতনিক পদসমূহ ত্যাগ।
৩. ব্রিটিশ মনোনীত ভারতীয় সদস্যদের আইনসভা থেকে পদত্যাগ, কাউন্সিল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা।
৪. সরকারি স্কুল-কলেজ বর্জন এবং আইনজীবীদের আদালত বর্জন
৫. পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও সুসংহত করা
৬. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা
৭. সকল প্রকার সরকারি কার্যক্রম বর্জন করা।
খিলাফত আন্দোলন কর্তৃক বয়কট কর্মসূচি গ্রহণ এবং মাহাত্মা গান্ধীর খিলাফত আন্দোলনের প্রতি সমর্থন এ আন্দোলনকে
তীব্র করে তোলে। মাহাত্মা গান্ধীর বয়কট কর্মসূচি জনগণকে প্রচÐভাবে আন্দোলিত করে। জনগণ বিদেশী পণ্য বর্জনের
পাশাপাশি ব্রিটিশ প্রদত্ত খেতাব ও পদবি বর্জন করতে থাকে। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায় সম্মিলিতভাবে এ
আন্দোলনে সামিল হন এবং এক দুর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলন দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন
দমন ও নির্যাতনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকে।
খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের পরিণতি
আন্দোলন যখন তুমুল পর্যায়ে, তখন বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটতে শুরু করে। কিন্তু অহিংস আন্দোলনের আদর্শ সহিংসতা
বিরোধী। এক পর্যায়ে ১৯২২ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে ভারতের উত্তর প্রদেশের চৌরিচৌরা নামক স্থানে উত্তেজিত জনতা
স্থানীয় থানা আক্রমণ করে এবং এতে প্রায় ২২ জন পুলিশ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় মর্মাহত হয়ে মাহাত্মা গান্ধী
প্রায় একক সিদ্ধান্তে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। সাথে সাথে খিলাফত আন্দোলন স্তিমিত হয়ে আসে। এর মূল
কারণ ছিল এ রকম একটি গণআন্দোলন পরিচালনা করার মত সাংগঠনিক ক্ষমতা ও যোগ্যতা খিলাফলত নেতৃবৃন্দের ছিল
না। ভারতে, ১৯২৪ সালে মোস্তফা কামাল পাশা তুরস্কের দায়িত্বভার গ্রহণ করে খিলাফতের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। ফলশ্রæতিতে খিলাফত আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে।?
সারসংক্ষেপ
খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হলেও এ আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতীয়
জনগণ গণআন্দোলনের সাথে পরিচিত হয় এবং তা রাজনৈতিক চেতনা বিকাশে সহায়তা করে। হিন্দু-মুসলমান
সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.১১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। খিলাফত আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেনÑ
র. মাওলানা মোহাম্মদ আলী
রর. মওলানা আব্দুল কালাম আজাদ
ররর. মওলানা হামিদ খান ভাসানী
নিচের কোনটি সঠিক
(ক) র ও রর (খ) রর ও ররর
(গ) র ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
২। মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেনÑ
র. হিংসাত্মক পথ বর্জনের মাধ্যমে
রর. হিংসাত্মক পথের মাধ্যমে
ররর. সত্যাগ্রহ নীতিকে সামনে রেখে
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র ও রর (খ) রর ও ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]