মুখ্য শব্দ বিধিবদ্ধ কমিশন, সাংবিধানিক অগ্রগতি, সাইমন কমিশন, নেহেরু রিপোর্ট,
সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ, যুগ্ম বিষয়, নতুন প্রদেশ।
১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন ভারতীয়দের রাজনৈতিক আশা-আকাংখা পূরণে ব্যর্থ হয়। তাছাড়া ১৯১৯
সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ১০ বছর পর ভারতের সাংবিধানিক অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য একটি
বিধিবদ্ধ কমিশন গঠনের কথা ছিল। এমতাবস্থায় ব্রিটিশ সরকার ১৯২৭ সালে স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট
একটি কমিশন গঠন করে। যা সাইমন কমিশন নামে পরিচিত। এ কমিশনে ভারতীয় কোন সদস্য অন্তর্ভুক্ত না থাকায়
ভারতবর্ষের প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ তথা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ তা প্রত্যাখ্যান করে।
অপরদিকে, ভারতীয়দের জন্য সাংবিধানিক রূপরেখা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯২৮ সালে কংগ্রেস নিজেই মতিলাল নেহেরুকে
সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি যে রিপোর্ট প্রকাশ করে, তা ‘নেহেরু রিপোর্ট’ নামে পরিচিত। এ
রিপোর্টে মুসলমানদের দাবী-দাওয়া পূরণ না হওয়ায় মুসলিম নেতৃবৃন্দ তা বর্জন করেন। নেহেরু রিপোর্টের প্রতিবাদে
১৯২৯ সালে মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাঁর চৌদ্দ দফা দাবি পেশ করেন। এমনই এক
পরিস্থিতিতে, ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে গান্ধীর নেতৃত্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০-৩২) শুরু
হয়। এমতাবস্থায়, ব্রিটিশ সরকার ভারতের রাজনৈতিক সংকট ও শাসনতান্ত্রিক রূপরেখা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ভারতীয়
নেতৃবৃন্দের সাথে এক গোলটেবিল বৈঠক আহŸান করে। এ বৈঠক ১৯৩০ সালে শুরু হয়ে তিন দফায় ১৯৩২ সাল পর্যন্ত
অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে চূড়ান্ত সমঝোতার সম্ভাবনা না দেখে ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামজে ম্যাকডোনাল্ড একটি সমাধান প্রদান করেন। এতে তিনি আইনসভায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি
বণ্টনসহ ভারতের জন্য একটি ভবিষ্যত সংবিধানের রূপরেখা প্রণয়ন করেন। এটি ম্যাকডোনাল্ডের ‘সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ’
নামে পরিচিত। এই ধারাবাহিকতাতে ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নতুন ভারত শাসন আইন পাশ হয়।
বৈশিষ্ট্য :
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ ছিল নি¤œরূপ:
১. ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ব্রিটিশ ভারতের সকল প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যসমূহ নিয়ে একটি
সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা উল্লেখ করা হয়।
২. এ আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় আইনসভা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট করা হয়। এর উচ্চকক্ষটি রাজ্যসভা
নি¤œকক্ষটি ব্যবস্থাপক পরিষদ বলে অভিহিত হবে। উচ্চকক্ষের সর্বমোট প্রতিনিধি হবেন
২৬০ জন এবং নি¤œকক্ষের সদস্য সংখ্যা হবে ৩৭৫ জন।
৩. এ আইনের মাধ্যমে শাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে তিনভাগে বিভক্ত করা হয় যথা: কেন্দ্রীয় বিষয়, প্রাদেশিক বিষয় ও
যুগ্ম বিষয়। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বিষয়সমূহ যথা: দেশরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক, মুদ্রা, আয়কর,
যোগাযোগ, তথ্যদপ্তর প্রভৃতি ন্যস্ত করা হয়। অপরদিকে, প্রাদেশিক সরকারের হাতে প্রাদেশিক বিষয়াবলী যথাÑ
আইনশৃংখলা, পুলিশ, শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার প্রভৃতি বিষয় পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। এছাড়া যুগ্ম
তালিকাভুক্ত বিষয়সমূহ যথাÑ ফৌজদারি আইন, বিচার প্রণালী, উইল প্রভৃতি কেন্দ্র ও প্রদেশ উভয় সরকারের
এখতিয়ারভূক্ত রাখা হয়।
৪. ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন প্রদেশে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করে।
প্রাদেশিক বিষয়সমূহের উপর প্রদেশের কর্তৃত্ব স্বীকার করা হয় এবং প্রাদেশিক মন্ত্রিসভাকে আইনসভার নিকট
জবাবদিহি করার বিধান করা হয়।
৫. ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন কেন্দ্রে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা চালু করে। গভর্ণর জেনারেল ও তাঁর নির্বাহী পরিষদের
নিকট প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক, ধর্মীয় বিষয়, উপজাতি প্রভৃতি বিষয়ের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। অপরদিকে অন্যান্য
বিষয়াবলী গভর্ণর জেনারেল ও তাঁর মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত করা হয়।
৬. এ আইনে ভারতবর্ষের জন্য একটি ফেডারেল কোর্ট বা যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হয়। একজন প্রধান
বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতি নিয়ে তা গঠিত হবে।
৭. এ আইন দ্বারা সিন্ধু ও উড়িষ্যা নামে দুটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়।
৮. মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা ও সংখ্যা অতিরিক্ত প্রতিনিধিত্ব অব্যাহত রাখা
হয়।
৯. এই আইনে বার্মাকে (বর্তমান মায়ানমার) ভারতবর্ষ থেকে পৃথক করা হয়।
১০. এ আইনের মাধ্যমে ভোটদানকে উৎসাহিত করা হয় এবং ভোটার হবার যোগ্যতা শিথিল করা হয়।
১১. এ আইনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলমানদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন বরাদ্দ রাখা হয়।
১২. ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের যেকোন প্রকার সংশোধন, পরিবর্তন বা পরিমার্জনের ক্ষমতা ব্রিটিশ পার্লাামেন্টের
হাতে রাখা হয়।
সারসংক্ষেপ
ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ আইনের
মাধ্যমে প্রদেশে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়। তাছাড়া এ আইনের মাধ্যমে ভারতীয়রা অধিক মাত্রায়
প্রতিনিধিত্বশীল সরকার ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হবার সুযোগ পায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.১৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বিশেষ দিক কোনটি?
(ক) যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন (খ) যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা (গ) স্বায়ত্তশাসন (ঘ) ভারত বিভক্তি
২। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশরা প্রশমিত করতে চেয়েছিলÑ
র. ব্রিটিশদের প্রতি ভারতীয়দের অসন্তোষ
রর. ব্রিটিশদের প্রতি হিন্দুদের ক্ষোভ
ররর. হিন্দু-মুসলিম সা¤প্রদায়িক দূরত্ব
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র (খ) র ও ররর (গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
৩। ভারত শাসন আইনে ভারতীয় উপদেষ্টামÐলী রহিত করার সাথে কোনটি জড়িত?
(ক) ভারত সচিব (খ) রাজ প্রতিনিধি (গ) উপদেষ্টা সংখ্যা (ঘ) ভারতীয় প্রতিনিধি
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র