মুখ্য শব্দ রাজনৈতিক সংকট, খসড়া প্রস্তাব, যুক্তরাষ্ট্র, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, কালো দিবস
পটভূমি
ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ক্রিপস মিশন এবং মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ক্রিপস
মিশন যখন কাজ শুরু করে তখন কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ পরস্পর বিরোধী অবস্থানে ছিল। বিশ্ব রাজনীতি তখন দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধ ইস্যুতে দ্বিধা বিভক্ত। এমন এক পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ ক্যাবিনেটের প্রভাবশালী মন্ত্রি স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস এর
নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল ভারতের রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য ১৯৪২ সালের ২৯ মার্চ একটি খসড়া প্রস্তাব
পেশ করে। স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস এর নামানুসারে এ মিশনের নাম হয় ক্রিপস মিশন।
ক্রিপস মিশন এর প্রস্তাবনায় ভারতে একটি যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং একটি ডোমিনিয়নের মর্যাদার জন্য সুপারিশ করা হয়।
তাছাড়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ গঠন, অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন বিষয়েও সুপারিশ
করা হয়।
কিন্তু ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব মুসলিম লীগ প্রত্যাখ্যান করে। ফলে এ মিশন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়।
পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর ব্রিটিশ সরকার আবারো ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমধানে
উদ্যোগ গ্রহণ করে। তাছাড়া, ব্রিটেনে শ্রমিক দলের নতুন সরকার ভারতীয়দের স্বাধীনতার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
ফলশ্রæতিতে ১৯৪৬ সালের মার্চ মাসে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায় তিনজন প্রভাবশালী মন্ত্রি নিয়ে গঠিত একটি মিশন সিমলাতে
ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসে। এরা হলেন ভারতসচিব লর্ড প্যাথিক লরেন্স, বাণিজ্যবোর্ডের সভাপতি স্যার
স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস এবং রাজকীয় নৌ বাহিনীর প্রথম লর্ড এ.ভি. আলেকজান্ডার।
এ মিশন ১৯৪৬ সালের ১৬ মে ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেশ
করে। এ প্রস্তাবনা মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা নামে পরিচিত।
বৈশিষ্ট্য
মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার প্রস্তাবগুলো স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদী এ দু’ভাগে বিভক্ত ছিল। নি¤েœ মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার মূল
বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলÑ
১. মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যগুলোর সমন্বয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করা হয়।
প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ ও বৈদেশিক সম্পর্ক এ তিনটি বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রাধীন রাখা হয়।
২. কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাভুক্ত বিষয় ছাড়া শাসন সংক্রান্ত অন্যান্য সকল বিষয়ের উপর প্রাদেশিক ও দেশীয় রাজ্য
সরকারের কর্তৃত্ব থাকবে।
৩. ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইনসভা ও শাসন বিভাগ গঠিত হবে।
৪. কেন্দ্রীয় আইনসভায় কোনো সম্প্রদায়ের মৌলিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে ঐ সম্প্রদায়ের
সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে।
৫. ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশসমূহকে তিনটি গ্রæপে বিভক্ত করা হবে। যথাÑ
‘ক’ গ্রæপ- এ গ্রæপে থাকবে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ছয়টি প্রদেশ যথা- মাদ্রাজ, বোম্বাই, বিহার, উড়িষ্যা, মধ্য প্রদেশ ও যুক্ত
প্রদেশ।
‘খ’ গ্রæপ- এ গ্রæপে থাকবে উত্তর-পশ্চিম ভারতের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ তিনটি প্রদেশ যথা- সিন্ধু, পাঞ্জার ও উত্তরপশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ।
‘গ’ গ্রæপ- এ গ্রæপে থাকবে পূর্ব ভারতের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দু’টি প্রদেশ যথাÑ বাংলা ও আসাম।
প্রতিটি গ্রæপ স্বাতন্ত্র্য লাভ করবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়সমূহ ছাড়া পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন অর্জন করবে।
৬. প্রাদেশিক পর্যায়ে প্রতিটি গ্রæপের আলাদা শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ থাকবে।
৭. ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতন্ত্র রচনার জন্য প্রতিটি গ্রæপের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়।
৮. কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক গ্রæপের শাসনতন্ত্রে এমন শর্ত থাকতে হবে যেন দশ বছর পর যেকোন প্রদেশ সংবিধানের
শর্তাবলী পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
৯. যেকোন প্রদেশে সংবিধান রচিত হবার পর সংশ্লিষ্ট গ্রæপ থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।
১০. এ পরিকল্পনায় ভারতের জন্য নতুন সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত গভর্ণর জেনারেল কর্তৃক প্রধান প্রধান রাজনৈতিক
দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।
১১. প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্র গঠনের পর দেশীয় রাজ্যসমূহের উপর থেকে ব্রিটিশ সার্বভৌম ক্ষমতার অবসান হবে।
মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার পরিণতি
মুসলীম লীগ মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনাকে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করলেও কংগ্রেস মিশনের অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন ও
বাধ্যতামূলক গ্রæপিং ব্যবস্থাকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এমতাবস্থায়, ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৬ সালের ২৬ জুন
নিজেদের মনোনীত সদস্যদের নিয়ে একটি তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণায় মুসলিম লীগ মর্মাহত
হয় এবং ব্রিটিশ সরকারকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে। পাকিস্তান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট ‘প্রত্যক্ষ
সংগ্রামের’ ডাক দেয়। ইতিমধ্যে কংগ্রেস অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব মেনে নিলেও, মুসলিম লীগ ‘প্রত্যক্ষ
সংগ্রামের’ কর্মসূচিতে অনড় থাকে। এমতাবস্থায় কলকাতায় ১৬ আগস্ট এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। এর
মধ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯৪৬ সালের ২৪ আগস্ট কংগ্রেসের নেতৃত্বে শাসন পরিষদ গঠন করে যার প্রতিবাদস্বরূপ মুসলিম
লীগ ১ সেপ্টেম্বর ‘কালো দিবস’ পালন করে। এ সময় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাড়তে থাকে।
এক সময় মুসলিম লীগ অন্তবর্তীকালীন সরকারে যোগদানে সম্মতি জানায়। কিন্তু কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের পরস্পর
বিরোধী অবস্থান দিন দিন বাড়তেই থাকে। ফলে, অচিরেই মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
সারসংক্ষেপ
মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষকে একটি শিথিল বন্ধনীর মাধ্যমে যুক্ত রাখতে
চেয়েছিলেন। কিন্তু এ মিশন ভারতে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের পরস্পর বিরোধী স্বার্থের সমন্বয় করতে ব্যর্থ হয়।
ফলশ্রæতিতে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা কার্যকর করা সম্ভব হয় নি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.১৬
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। ক্রিপস মিশন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় কেন?
(ক) কংগ্রেস প্রত্যাখ্যান করায় (খ) মুসলিম লীগ গ্রহণ করায়
(গ) ব্রিটিশরা প্রত্যাখ্যান করায় (ঘ) রাণীর অনুমোদন না পাওয়ায়
২। মন্ত্রিপরিষদ পরিকল্পনা পেশ করা হয় কত সালে?
(ক) ১৯৪৪ সালে (খ) ১৯৪৬ সালে
(গ) ১৯৪৭ সালে (ঘ) ১৯৪৮ সালে
৩। মন্ত্রিমিশনের সদস্য ছিলেন-
র. স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস
রর. লর্ড মাউন্টব্যাটেন
ররর. লর্ড প্যাথিক লরেন্স
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র ও রর (খ) র ও ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র