বাঁশের কেল্লা
ব্রিটিশ বিরোধী সশ¯্র প্রতিরোধ
ভ‚মি রাজস্ব ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নেয়াটাই ছিল ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রাথমিক যুগের শাসনের অন্যতম লক্ষ্য।
মূলত একটি বাণিজ্যিক সংস্থা হিসেবে কোম্পানির অভিজ্ঞতা ছিল বাণিজ্য বিষয়ে সীমাবদ্ধ। দেশ শাসন সম্পর্কে কোম্পানির
কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে শাসন সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ঊর্বরতম ক্ষেত্র ছিল ভূমি রাজস্ব শাসন। তাদের শাসন-
শোষণে চিরায়ত গ্রামীণ সমাজ কাঠামো দ্রæত ভেঙ্গে পড়ছিল। কৃষকের উদ্বৃত্ত আত্মসাতের জন্য কোম্পানি সরকার শশব্যস্ত
থাকলেও খরা, প্লাবন, দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ছিল সম্পূর্ণ উদাসীন। শুধু তাই নয় কৃষকদের জন্য
অলাভজনক হওয়া সত্তে¡ও ইংরেজ ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে কৃষকদের নীল ও লবণ চাষে বাধ্য করা হত।
এমতাবস্থায়, ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে একের পর এক বিদ্রোহের জন্ম হয়। এর মধ্যে ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ
(১৭৭০-১৭৯০), রংপুর কৃষক বিদ্রোহ (১৭৮৩), স›দ্বীপ বিদ্রোহ (১৭৬৪), চাকমা বিদ্রোহ (১৭৭৭-৮৭), যশোর-খুলনার
প্রজা বিদ্রোহ (১৭৮৪-১৭৯৬), পাগলাপন্থা বিদ্রোহ (১৮২৩-১৮৩৩), ফরায়েজী আন্দোলন (১৮২০-১৮৫৭), নীল বিদ্রোহ
(১৮৫৯-৬০), পাবনা কৃষক বিদ্রোহ (১৮৭২-১৮৭৩) প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আঠার-ঊনিশ শতকে বাংলার এই
বিদ্রোহগুলো ছিল প্রাক-রাজনৈতিক, কেননা এগুলো ছিল মূলত ধর্মীয়, অপরিকল্পিত, অসংগঠিত, এবং স্বত:স্ফ‚র্ত। তবে
সীমাবদ্ধতা স্বত্তেও এসব বিদ্রোহ আমাদের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে ফরায়েজী আন্দোলন ও তিতুমীরের কৃষক বিদ্রোহ
ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলায় বিভিন্ন সময় ব্রিটিশ বিরোধী বিভিন্ন সংগ্রাম সংগঠিত হয়। এরূপ বিদ্রোহের মধ্যে ফরায়েজী
আন্দোলন ও তিতুমীরের নেতৃত্বাধীন কৃষক বিদ্রোহ ছিল অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ। প্রাথমিকভাবে এ আন্দোলনগুলো
ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও পরবর্তীতে তা ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়। মুসলমানদের
পাঁচটি ফরয কাজের উপর গুরুত্বারোপ করে ফরায়েজী আন্দোলনের সূচনা। ঊনিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে হাজী
শরীয়তুল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০) ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন হিসেবে ফরায়েজী আন্দোলন শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর সন্তান
মুহাম্মদ মহসীন উদ্দীন ওরফে দুদু মিয়ার (১৮১৯-১৮৬২) নেতৃত্বে দ্রæত এটি কৃষক আন্দোলনে পরিণত হয়।
হাজী শরীয়তুল্লাহ ও ফরায়েজী আন্দোলন
হাজী শরীয়তুল্লাহ্ ১৭৮১ সালে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার বাহাদুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইসলামী শিক্ষায় সুপন্ডিত
ছিলেন। ধর্মীয় শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি ১৮ বছর বয়সে মক্কা গমণ করেন এবং ২০ বছর সেখানে অবস্থান করেন। দেশে
ফিরে তৎকালীন মুসলমান সমাজের দুরাবস্থা দেখে তিনি খুবই ব্যথিত ও উদ্বিগ্ন হন। এমতাবস্থায়, তিনি মুসলমান সমাজকে
“শুদ্ধকরণের” যে আন্দোলন শুরু করেন তা ফরায়েজী আন্দোলন নামে পরিচিতি। এছাড়াও তিনি প্রজাসাধারণের উপর
চলে আসা সকল শোষণ, বঞ্চণা ও নির্যাতন রুখে দাঁড়ানোরও আহবান জানান। তাঁর নেতৃত্বে এ আন্দোলন দ্রæত ফরিদপুর,
বরিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে
দুদু মিয়ার নেতৃত্বে ফরায়েজী আন্দোলন
হাজী শরীয়তুল্লাহর মৃত্যুর তাঁর পুত্র দুদু মিঞা ফরায়েজী আন্দোলনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি ফরায়েজী
আন্দোলনকে একটি সুবিন্যস্ত ও শক্তিশালী সাংগঠনিক রূপ দেন। ফরায়েজী আন্দোলনভূক্ত সমগ্র অঞ্চলকে তিনি কয়েকটি
সার্কেলে বিভক্ত করেন। প্রত্যেকটি সার্কেল দেখাশুনার দায়িত্বভার একজন খলিফা বা প্রতিনিধির উপর ন্যস্ত করা হয়।
অত্যাচারী জমিদার নীলকরদের মোকাবেলায় একটি সুশৃংখল লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। জমিদার-নীলকরদের
সঙ্গে দুদু মিয়ার বাহিনীর বেশ কয়েকবার সরাসরি সংঘর্ষ বাঁধে। এর মধ্যে ১৮৪৬ সালে মাদারীপুরের ইংরেজ নীলকর
ডানলপের সাথে সংঘর্ষ উল্লেখযোগ্য।
১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় দুদু মিয়াকে বন্দী করা হয়। পরবর্তীতে মুক্তিলাভ করে তিনি ঢাকায় বসবাস শুরু
করেন। ১৮৬২ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
তিতুমীরের কৃষক বিদ্রোহ
মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমীর (১৭৮২-১৮৩১) পশ্চিম বাংলার চব্বিশ পরগনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিতুমীর প্রথম
জীবনে নদীয়া জেলার জমিদারের লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি হজ্জ্বব্রত পালনের
উদ্দেশ্যে মক্কায় যান। সেখানে গিয়ে ওহাবী আন্দোলনের নেতা সৈয়দ আহমদ বেরেলভির সান্নিধ্য লাভ করেন এবং তাঁর
মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হন।
তিতুমীর দেশে ফিরে একদিকে ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন অপরদিকে জমিদার, নীলকর ও ব্রিটিশ বাহিনীর নির্মম অত্যাচার ও
শোষণের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। শীঘ্রই পশ্চিম বাংলার বিশাল অঞ্চল জুড়ে তিতুমীরের নেতৃত্বে
কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। অত্যাচারী নীলকর, জমিদার ও ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে একাধিক জায়গায় তিতুমীরের বাহিনীর
সংঘর্ষ হয়। চূড়ান্ত সংঘর্ষ বাঁধে বারাসাতের অদূরে নারিকেলবাড়িয়া নামক স্থানে। সেখানে তিতুমীর বাঁশের কেল্লা নির্মাণ
করে শাসকগোষ্ঠির আক্রমণের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত কর্ণেল সুয়ার্টের
নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ বাহিনীর কামানের গোলার আঘাতে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর
অনুষ্ঠিত এ সম্মুখ যুদ্ধে ৫০ জন সহযোদ্ধাসহ তিতুমীর শহীদ হন। এভাবে তিতুমীরের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ বিরোধী
আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে।।
সারসংক্ষেপ
কোম্পানির দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানায় প্রায় সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ। বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিক্রিয়ার
বিভিন্ন কারণ ছিল। শুরুর দিকের প্রতিরোধ সংগ্রামের একটি সাধারণ লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনকে উৎখাত করা। যদিও এ
সকল প্রতিরোধ-সংগ্রাম ছিল বিক্ষিপ্ত ও আঞ্চলিক। তথাপি এ সমস্ত আন্দোলন পরবর্তীতে সকল ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে
প্রেরণা যুগিয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা ছিলেন-
(র) হাজী শরীয়তুল্লাহ
(রর) তিতুমীর
(ররর) নবাব আব্দুল লতিফ
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ^বিদ্যালয় পৌরনীতি ও সুশাসন দ্বিতীয় পত্র
ইউনিট এক পৃষ্ঠা ৬
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র ও রর (খ) র ও ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
২। দুদু মিয়ার পুরো নাম কী?
(ক) নেসার আলী (খ) মুহাম্মদ মহসীন উদ্দীন
(গ) মীর লতিফ (ঘ) শওকত বেগ
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র