মুখ্য শব্দ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ২১ দফা, পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী, অসাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবাদ।
১৯৫৪ সালের নির্বাচন
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এ নির্বাচনের ফলে ভাষা আন্দোলনে সৃষ্ট
বাঙালি জাতীয়তাবাদ সুদৃঢ় হয় এবং রাজনৈতিক স্বীকৃতি অর্জন করে। আর এ জাতীয়তাবাদী চেতনার ফসল হচ্ছে
আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের
প্রতি বিমাতা সূলভ আচরণ শুরু করে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের স্বাধীনতা ও উন্নয়ন নানাভাবে ব্যাহত হয়। পূর্ব বাংলার
জনগনের মধ্যে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠে।
১৯৪৬ সালের পর ১৯৫১ সালে প্রদেশগুলোতে নির্বাচন হবার কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী পশ্চিম পাকিস্তানের
প্রদেশগুলোতে নির্বাচন দিলেও পূর্ব বাংলাতে নির্বাচন দেয়নি। এর কারণ মুসলিম লীগের সম্ভাব্য পরাজয়ের ভয়। ১৯৪৮-
৪৯ সালে কয়েকটি উপনির্বাচনে পরাজয়ে তাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলায় প্রাদেশিক
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং হোসেন সোহরাওয়ার্দীর
নেতৃত্বে ২১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট গড়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ, কৃষক প্রজা পার্টি, নেজামে ইসলাম এবং গণতন্ত্রী
দল একজোট হয়ে ২১ দফা কর্মসুচিকে নিয়ে নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধিতা করে।
যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি
১. বাংলা হবে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা।
২. বিনা খেসারতে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ, মধ্যস্বত্বের বিলোপ সাধন এবং ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে উদ্বৃত্ত জমি বন্টন, ভূমি
রাজস্বকে ন্যায় সঙ্গত স্তরে নামিয়ে আনা এবং সার্টিফিকেট প্রথা বাতিল।
৩. পাট ব্যবসা জাতীয়করণ ও পাটের ন্যায্য মূল্য প্রদান। মুসলিম লীগ আমলের পাট কেলেংকারির তদন্ত করে দোষী
ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদান।
৪. সমবায় কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন, কুটির শিল্পের বিকাশ ও শ্রমজীবীদের অবস্থার উন্নয়ন সাধন।
৫. পূর্ব বাংলাকে লবণের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে কুটির ও বৃহৎ পর্যায়ে লবণ শিল্প প্রতিষ্ঠা।
৬. অবিলম্বে বাস্তুহারাদের পুনর্বহাল।
৭. সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং দেশকে বন্যা ও দুর্ভিক্ষের কবল থেকে রক্ষা।
৮. পূর্ব বাংলার শিল্পায়তন এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন অনুযায়ী শিল্প শ্রমিকদের জন্য অর্থনৈতিক
ও সামাজিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান।
৯. অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন ও শিক্ষকদের জন্য ন্যায্য বেতন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা।
১০. সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিভেদ বিলোপ করে শিক্ষা ব্যবস্থার পুর্নগঠন।
১১. বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত সকল কালাকানুন বাতিল করে পূর্ন স্বায়ত্তশাসন প্রদান।
১২. প্রশাসনিক ব্যয় সংকোচ ও কর্মচারীদের বেতনের সামাঞ্জস্য বিধান। মন্ত্রীদের সর্বোচ্চ বেতন এক হাজার টাকা।
১৩. ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ ও ১৯৪০ সাল থেকে অর্জিত অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত।
১৪. সকল নিরাপত্তা বন্দীকে মুক্তিদান, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা বিধান।
১৫. শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথককরণ।
১৬. বর্ধমান হাউসকে আপাতত ছাত্রাবাস এবং পরে বাংলা সাহিত্যের গবেষণাগারে রূপান্তর।
১৭. বাংলা ভাষার জন্য শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণ।
১৮. লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান, পূর্ব বাংলাতে নৌবাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপন, অস্ত্র কারখানা
নির্মাণ এবং আনসার বাহিনীকে মিলিশিয়া বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা।
১৯. আইন সভার আয়ু বর্ধিত না করা। সাধারণ নির্বাচনের ছয়মাস পূর্বেই মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করবে এবং নিরপেক্ষ
নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
২০. আইন সভার শূণ্য আসন তিন মাসের মধ্যে পূরণ করা হবে। পরপর তিনটি উপনির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীরা পরাজিত
হলে মন্ত্রিসভা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবে।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল
১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের আইন পরিষদে মুসলিম আসন সংখ্যা ছিল ৩০৯টি। নির্বাচনে
যুক্তফ্রন্ট ২২৮টি মুসলিম আসন লাভ করে; এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪৩টি আসন লাভ করে। অমুসলিম সম্প্রদায়ের
জন্য সংরক্ষিত ৭২টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ২৪টি, তফসিলি ফেডারেশন ২৭টি, যুক্তফ্রন্ট ১৩টি, খ্রিস্টান সম্প্রদায় ১টি,
বৌদ্ধ সম্প্রদায় ২টি, কমিউনিষ্ট পার্টি ৪টি, নির্দলীয় সদস্যগণ ১টি আসন লাভ করে। ১৯৫৪ সালের পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক
পরিষদ নির্বাচনে ১৯৩৭ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা মুসলিম লীগ মাত্র ৭টি আসন পায়।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
এই বিজয় ছিল মূলত বাঙালী জাতীয়তাবাদের বিজয়। জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনার ফসলই হচ্ছে আজকের স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অসাম্প্রাদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটে। ১৯৫৪ সালের
নির্বাচনের প্রতীক ছিল নৌকা । নদীমাতৃক পূর্ব বাংলায় সাধারণ মানুষ নৌকা প্রতীককে তাদের পরিচিত প্রতীক হিসেবে
গ্রহণ করে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলা থেকে মুসলিম লীগের রাজনীতির বিদায় বার্তা ঘোষিত হয়।
উপরোক্ত আলোচনার সূত্র ধরে বলা য়ায় যে, বাঙালি জনগণের রাজনৈতিক অগ্রগতিতে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ও
তাৎপর্য ছিল অপরিসীম।
শিক্ষার্থীর কাজ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের তাৎপর্য নিজের ভাষায় লিখুন।
সারসংক্ষেপ
যুক্তফ্রন্ট গঠন এবং নির্বাচনে গণরায়ের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলায় মানুষের ভাষা ও ভূ-খন্ডগত স্বতন্ত্র চেতনা স্পষ্ট হয়ে
ওঠে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় চেতনা জাগ্রত হয়। পূর্ব বাংলা সকল ক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকার আদায়ে লড়াই
চালাতে প্রস্তুত হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। যুক্তফ্রন্টের কর্মসূচি কি ছিল?
(ক) ছয় দফা (খ) ১১ দফা
(গ) ১০ দফা (ঘ) ২১ দফা।
২। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক কি ছিল?
(ক) গোলাপ ফুল (খ) হারিকেন
(গ) নৌকা (ঘ) ঘড়ি
নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৩ নং প্রশ্নের উত্তর দিন
হাসিব ও রাকিব একটি বই নিয়ে আলোচনা করছিল। সেখানে তারা নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে
অংশগ্রহণকারী একটি দলের নির্বাচনে জয়লাভের কথা বলছিল। সেখানে অন্য একটি দলের নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটে।
৩। কোন দলটির ভরাডুবির কথা বলা হয়েছে?
র) আওয়ামী লীগ
রর) যুক্তফ্রন্ট
ররর) মুসলিম লীগ
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র (খ) র ও রর (গ) র ও ররর (ঘ) কোনটি নয়
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র