আগরতলা মামলার প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল সম্পর্কে অবগত হবে

মুখ্য শব্দ ঐতিহাসিক মামলা, বৈঠক, আন্দোলন, অভ্যুত্থান, ষড়যন্ত্র, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, কালো
অধ্যায়।
আগরতলা মামলা পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ছয় দফা ভিত্তিক বাঙালির
জাতীয় চেতনাকে সমূলে বিনষ্ট করার জন্য জেনারেল আইয়ুব খান ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেন। প্রকৃতপক্ষে ছয়
দফাকে নস্যাৎ করাই এই ষড়যন্ত্রের মুখ্য উদ্দেশ্য। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর
সহযোগীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলাকে পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত
করে। ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কুর্মিটোলা সেনানিবাসে নিয়ে
যাওয়া হয়। মামলায় বলা হয় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোগিরা ভারতের আগরতলায় গোপন বৈঠকে এক সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে
পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। শাসক গোষ্ঠী শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মোট ৩৫
জনের বিরুদ্ধে ‘আগরতলা’ মামলা দায়ের করে। এই মামলায় বলা হয় ষড়যন্ত্রের মূল পরিকল্পনাকারী শেখ মুজিবুর
রহমান। অভিযোগে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভারতীয় যোগসাজসে এবং ভারতীয় অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে পূর্ব পাকিস্তানকে
পাকিস্তান হতে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করেছিল।
এই মামলায় ১৯৬৮ সালের ২১ এপ্রিল সাবেক বিচারপতি এস. এ. রহমানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠন করে।
কুর্মিটোলা সেনানিবাসে কড়া প্রহরায় ‘‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যদের মামলা’’ এর বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্য প্রমাণে
দেখা গেল সম্পূর্ণ মামলাটিই ছিল হীন ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধুকে এহেন মিথ্যা মামলায় জড়ানোর প্রেক্ষিতে পূর্ব-বাংলার জনগণের
মনে দারুন ক্ষোভ ও অসন্তোষের আগুন জ্বলে ওঠে। ছাত্র-জনতা তাঁর মুক্তির জন্য সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করে।
উপায়ান্তর না দেখে গণ আন্দোলনের মুখে সামরিক শাসক আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি এক বেতার ভাষণে
আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবসহ সকল ব্যক্তিদের নি:শর্ত মুক্তি প্রদানের ঘোষণা দেন।
আগরতলা মামলার কারণ
বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করাই ছিল আগরতলা মামলার প্রত্যক্ষ ও সুদূর প্রসারী
লক্ষ্য।
ক্ষমতা দখলের প্রথম কয়েক বছর প্রচন্ড প্রতাপে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকেন আইয়ুব খান। তবে আস্তে-আস্তে পূর্ব পাকিস্তানের
ছাত্র ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো ক্রমশ আইয়ুব শাহীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করে। ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন
আইয়ুব বিরোধী প্রথম বড় ধরণের আন্দোলন। এরপরে ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর পশ্চিম পাকিস্তানি
আইয়ুব বিরোধীরা জোটবদ্ধ হয় এবং ছাত্ররা আন্দোলনে মুখর হয়ে ওঠে। তাসখন্দ চুক্তির কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীও
আইয়ুবের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল। ১৯৬৬ সালের ছয় দফার আন্দোলনে আইয়ুবের ক্ষমতার ভিত অনেকটা নড়বড়ে হয়ে যায়।
এভাবে পাকিস্তানে উভয় অঞ্চলে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে। আইয়ুব খান তার কর্তৃত্বকে অক্ষুণ রাখার
জন্য এ সকল আন্দোলন দমন করতে বদ্ধ পরিকর ছিলেন। আর এটা ছিল আগরতলা মামলা সাজানোর অন্যতম কারণ।
মামলার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া
আগরতলা মামলার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ করে। আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে অভিযুক্তদের
প্রকাশ্য বিচারের দাবি করা হয়। ১৯ জানুয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মঘট পালিত হয়। জেনারেল আইয়ুব খান আশা
করেছিলেন আগরতলা মামলার দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি জনগণের বিশ্বাস ভঙ্গ হবে। কিন্তু তার এই আশা করাটা
আত্মঘাতী হয়েছিল। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৯৬৯ সালে ১১ দফা দাবি পেশ করে। তাদের ১১ দফা দাবির মধ্যে একটা ছিল
আগরতলা মামলা প্রত্যাহার। আগরতলা মামলার আসামি জহুরুল হককে ১৫ ফেব্রæয়ারি ঢাকা সেনানিবাসে গুলি করে হত্যা
করা হয়, ১৮ ফেব্রæয়ারি রাজশাহী বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড: শামসুজ্জোহা, ২০ ফেব্রæয়ারি ঢাকায় আসাদুজ্জামান নিহত হলে
আন্দোলন আরো জোরদার হয়। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি আইয়ুব সরকার মামলা প্রত্যাহার করে নেয় ও শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকলকে মুক্তি প্রদান করে।
আগরতলা মামলার ফলাফল
আগরতলা মামলাকে কেন্দ্র করে বাঙালিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে।
সরকারের দমন নীতির কারণে উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের অনুপস্থিতিতে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও ডাকসু মিলে ছাত্র সংগ্রাম
পরিষদ গঠন করে সরকারের নিকট ১১ দফা দাবি পেশ করে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবির প্রতি সকল শ্রেণি-
পেশার মানুষ সমর্থন দেয়। ফলে ১৯৬৯ সালের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এই আন্দোলন অচিরেই গণআন্দোলনের রূপ ধারণ
করেছিল। ১১ দফা দাবির অন্যতম দাবি ছিল শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকলের নি:শর্ত মুক্তি। ২৩শে ফেব্রæয়ারি ঢাকার
রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্বর্ধনার আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে জনতার উপস্থিতিতে তাঁকে
‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। আগরতলা মামলায় জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতার ভীত দুর্বল হয়ে যায়। পূর্ব
পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন না দেয়ার জন্য জেনারেল আইয়ুব ও তাঁর সমর্থক গোষ্ঠী নানা রকম কূটকৌশল নিয়েও সফল হতে পারেনি, বাঙালিদের আন্দোলনের প্রাবাল্যে।
শিক্ষার্থীর কাজ পাকিস্তানী শাসকেরা কেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেছিল?
সারসংক্ষেপ
আগরতলা মামলার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালির প্রধান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দিয়ে
জনগণের মনে অবিশ্বাস গড়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে নিশ্চিহ্ন করা। কিন্তু ফলাফল হয়েছিল বিপরীত। জনগণ বুঝতে
পেরেছিল মামলাটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট। ফলে পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন জোরদার
হয়েছিল। এই মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা এতই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০
সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। এই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জিত হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.৮
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। আগরতলা মামলার আসামি ছিল কয়জন ?
(ক) ৩০ জন (খ) ৩২ জন
(গ) ৩৬ জন (ঘ) ৩৫ জন
২। আগরতলা মামলার কোন আসামিকে সেনানিবাসে হত্যা করা হয়েছিল?
(ক) শেখ মুজিবুর রহমান (খ) তোফায়েল আহমেদ
(গ) সার্জেন্ট জহুরুল হক (ঘ) আব্দুর রাজ্জাক
নিচের উদ্দীপকটি পড়ুন এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দিন।
জনগণের ন্যায্য অধিকারের জন্য ‘ক’ রাষ্ট্রের জনপ্রিয় একজন নেতাকে বারবার কারাভোগ করতে হয়। এক পর্যায়ে
নেতাকে ষড়যন্ত্রমূলক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার করা হলে জনগণ আন্দোলন করে তাঁকে মুক্ত করে।
৩। উদ্দীপকে বর্ণিত নেতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নেতা হচ্ছেন-
(ক) দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ (খ) শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক
(গ) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (ঘ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
৪। উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আন্দোলনের সরাসরি ফলর) আইয়ুব খানের পতন
রর) ১৯৭০ সালের নির্বাচন দিতে বাধ্য করা
ররর) মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র (খ) রর (গ) র ও রর (ঘ) রর ও ররর
৫। কত তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধ’ু উপাধি প্রদান করা হয়?
(ক) ১৯৬৯ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি (খ) ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি
(গ) ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি (ঘ) ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রæয়ারি

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]