১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ , ফলাফল সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

মুখ্য শব্দ বৈষম্য, মৌলিক গণতন্ত্র, আগরতলা মামলা, স্বায়ত্তশাসন
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অন্যতম সোপান। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলার জনগণ শোষিত হতে থাকে। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে পূর্ব বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তান
নাম দেয়। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে ও ভোটাধিকার কেড়ে
নিয়ে তথাকথিত ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৬২ সালের সংবিধানে সংসদীয় গণতন্ত্রকে উচ্ছেদ করা হয়। ১৯৬৮
সালে আইয়ুব সরকারের এক দশক স্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘উন্নয়ন দশক’ পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাঙালিদের
কাছে এটা ছিল প্রহসন। কারণ আইয়ুবের দশ বছরে পূর্ব পাকিস্তানে তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের
জনগণ এটা মেনে নিতে পারেনি। তাদের পক্ষে নীরব থাকা সম্ভব ছিল না। তারা আন্দোলন করে আইয়ুব খানের বৈষম্য
নীতির বিরুদ্ধে, আগরতলা মামলার বিরুদ্ধে, ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে
গণআন্দোলন শুরু হয়। এক পর্যায়ে গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পর্যবসিত হয়।
গণঅভ্যুত্থানের কারণ
১. বৈষম্যনীতি: আইয়ুব সরকার সব সময় দুই অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য নীতি প্রয়োগ করে। বস্তত: পাকিস্তান রাষ্ট্রের সূচনা
থেকেই এই বৈষম্য চলতে থাকে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের সময় রাজধানী ছিল করাচী। আইয়ুব সরকার রাজধানী
পরিবর্তন করেন ইসলামাবাদ। এ শহরের উন্নয়নের জন্য ব্যয় হয়েছিল বিপুল অঙ্কের অর্থ । আর পাকিস্তানের দ্বিতীয়
রাজধানী ঢাকার উন্নয়নের জন্য ব্যয় হয় নামে মাত্র অর্থ। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য
ছিল প্রবল। কৃষি, চিকিৎসা, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কেন্দ্রের ১৬টির মধ্যে ১৩টি পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল।
২. মৌলিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: সর্বজনীন ভোটাধিকারের পরিবর্তে তথাকথিত মৌলিক গণতন্ত্রীদের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট
নির্বাচন, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয় না। এর
ফলে মৌলিক গণতন্ত্রীদের ভূমিকা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং জনগণের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
এমতাবস্থায় সর্বত্র জনগণ সরকার পরিবর্তনের জন্য সোচ্চার হয় এবং তাদের পূঞ্জীভূত ক্ষোভ গণঅভ্যুত্থান ঘটায়।
৩. সামরিক শাসন: ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করে গণতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন
অধ্যাদেশের মাধ্যমে রাজনীতি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করেছিলেন। বাংলা ভাষা, বাংলা বর্ণ, রবীন্দ্র
সঙ্গীতসহ বাঙালি সংস্কৃতির নানা দিকে আঘাত হেনে বাংলাকে একটি সাম্প্রদায়িক অঞ্চলে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।
৪. আগরতলা মামলা : ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান আটককৃত অবস্থায় পাকিস্তান
সরকার মামলা দায়ের করে। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে এই মামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। হরতাল, বিক্ষোভ,
আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানকে উত্তাল করে তোলে।
৫. স্বায়ত্তশাসনের দাবি: ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলাকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানীরা যে
উদাসীনতা দেখিয়েছিল তার প্রতিক্রিয়াতে পূর্ব পাকিস্তানীরা স্বায়ত্বশাসনের দাবি তোলে। এ কারণে পশ্চিম
পাকিস্তানীরা শেখ মুজিবসহ শত-শত নেতা-কর্মীকে আটকে রেখে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করেছিল। এতে করে
আন্দোলন আরও কঠোর রূপ ধারণ করে।
১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নামে ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রæপের
নেতার একজন নেতার মৃত্যু হলে আন্দোলন প্রকট আকার ধারণ করে। আসাদ হত্যার পরিণতিতে পরিস্থিতি সরকারের
নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। এর আগে ১৮ ফেব্রæয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড: সামসুজ্জোহা সেনাবাহিনীর
বেয়নেট চার্জে মৃত্যুবরণ করেন। পাকিস্তান সরকার নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে আন্দোলন রুদ্ধ করতে গিয়ে এর গতি আরো তীব্র করে তোলে। ফলে গণঅভ্যূত্থান হয়ে পড়ে অবধারিত।
গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য
১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিশেষ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা
পালন করে। এ গণআন্দোলনের ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদ সুসংগঠিত হয়ে ওঠে। এ আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচার বিরোধী
মানসিকতা জনগণের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত হয়। জনগণ সর্বস্ব ত্যাগ স্বীকারের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়।
আন্দোলনের তীব্রতায় আইয়ুব সরকার জনগণের নিকট নতি স্বীকার করে এবং ১৯৬৯ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে
রাওয়ালপিন্ডিতে একটি সর্বদলীয় গোল টেবিল বৈঠক ডাকতে বাধ্য হন। এ গোলটবিল বৈঠকে তিনটি বিষয়ে নেতৃবর্গ
ঐক্যমত্যে পৌঁছান। যথা- যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন পদ্ধতির প্রবর্তন, সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং প্রাপ্তবয়স্কদের
ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা।
এই অভ্যুত্থানের ফলে মিথ্যা আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং সকল রাজবন্দীর মুক্তি প্রদান করতে বাধ্য হয় সরকার। এ
আন্দোলনের ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির প্রধান নেতায় পরিণত হয়। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটে।রুন।
সারসংক্ষেপ
উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান ছিল বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের চূড়ান্ত পরিণতির একটি ধাপ। এই আন্দোলনের চাপে আইয়ুব
খান ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি লাভ করলে
২৩ ফেব্রুয়ারি এক সংবর্ধনা সভায় তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। গণঅভ্যুত্থানের ফলে আইয়ুব খানের পতন
ঘটে। আইয়ুব খানের দমন-পীড়ন বাঙালিকে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবহিকতারই সর্বোচ্চ প্রকাশ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-২.৯
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। আসাদকে কত তারিখে হত্যা করা হয়?
ক) ১৯ জানুয়ারি খ) ২০ জানুয়ারি গ) ২১ জানুয়ারি ঘ) ২২ জানুয়ারি
২। সর্বদলীয় গোলটেবিল কোন মাসে অনুষ্ঠিত হয়?
ক) জানুয়ারি খ) ফেব্রæয়ারি গ) মার্চ ঘ) এপ্রিল

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]