১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ বা প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে আলোচনা কর

মুখ্য শব্দ স্বাধীনতা সংগ্রাম, শোষণ-বঞ্চনা, অসম্মান, লুণ্ঠনযজ্ঞ, কালাপানি, স্বত্ব-বিলোপ,
মঙ্গল পান্ডে, ভাইসরয়।
সিপাহী বিদ্রোহ
ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাস ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ব্রিটিশদের প্রায় দু’শ বছরের
শাসনামলে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম সংগঠিত হয়। শুরুর দিকের আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন এবং এগুলো
খুব বেশী সফলতার মুখ দেখেনি। কিন্তু ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ব্রিটিশদের এ অঞ্চল সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
অনেক ঐতিহাসিক ‘সিপাহী বিদ্রোহ’কে ভারতীয় ইতিহাসের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে অভিহিত করেছেন।
সিপাহী বিদ্রোহের কারণসমূহ
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ কোন একক কারণে হয়নি। ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের পরে কোম্পানির একশ বছরের
অত্যাচার, শোষণ ও বঞ্চনার প্রতিবাদ হল সিপাহী বিদ্রোহ। বিভিন্ন কারণে সিপাহী বিদ্রোহ সংগঠিত হয়, নি¤েœ সেগুলো
আলোচনা করা হল :
ক্স রাজনৈতিক কারণ : কোম্পানির বিভিন্ন কার্যকলাপ ও পদক্ষেপ এ দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক
ক্ষমতা হ্রাস করে। লর্ড ডালহৌসীর ‘সা¤্রাজ্য বিস্তার নীতি ও স্বত্ব বিলোপ নীতি’ দ্বারা দেশীয় অনেক নবাব ও
রাজা তাদের রাজ্য হারান। কুশাসনের অভিযোগে অযোধ্যা ও নাগপুর রাজ্য দখল করে নেয়া হয়। তাছাড়া বিভিন্ন
উপায়ে মোঘল স¤্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে অপমাণিত ও অসম্মান করা হয়।
ক্স অর্থনৈতিক কারণ : কোম্পানির একশ বছরের শাসনে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে নাজুক
হয়ে পড়ে। কোম্পানি প্রবর্তিত নতুন ভ‚মি ও খাজনা নীতি যেমন কৃষকদের ভ‚মিহীন করেছিল তেমনি অনেক
জমিদারও তাদের জমিদারি হারান। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। তাছাড়া কোম্পানি এদেশ
থেকে মূল্যবান ধাতু ও ধনসম্পদ ইংল্যান্ডে পাচার করতে থাকে। কোম্পানির এ লুণ্ঠনযজ্ঞ অর্থনৈতিক বিপর্যয়
ডেকে আনে।
ক্স সামরিক কারণ : কোম্পানির সামরিক বাহিনীতে ৮৭ ভাগ ছিল দেশীয় সিপাহী। তথাপি ভারতীয় ও দেশীয়
সৈন্যদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদির ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য ছিল। দেশীয় সৈন্যরা সর্বোচ্চ পদোন্নতি পেত
সুবেদার পর্যন্ত। তাছাড়া একজন ব্রিটিশ সৈন্য অবসর গ্রহণ করত ৭০ বছর বয়সে যেখানে একজন ভারতীয়
অবসর পেত মাত্র ৫৫ বছর বয়সে। এছাড়া ১৮৫৬ সালে লর্ড ক্যানিং ‘এবহবৎধষ ঝবৎারপব ঊহষরংঃসবহঃ অপঃ'
নামক একটি আইন পাশ করে। এতে বলা হয় দেশীয় সিপাহীদের প্রয়োজনে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দূর দেশে গিয়ে
কাজ করতে হবে। হিন্দু সিপাহীগণ সমুদ্র পাড়ি দেওয়াকে ধর্ম বিরুদ্ধ মনে করত। ফলে তাদেরকে ‘কালাপানি’
অর্থাৎ সমুদ্র পাড়ি দিতে বাধ্য করায় তাদের মধ্যে ভীষণ অসন্তোষ দেখা দেয়।
ক্স প্রত্যক্ষ কারণ/তাৎক্ষণিক কারণ : কোম্পানি সামরিক বাহিনীতে ‘ঊহভরবষফ জরভষব’ নামক এক প্রকার নতুন অস্ত্রের
প্রচলন শুরু করে, যার কার্তুজ দাঁত দিয়ে কাটতে হত। গুজব রটে যে, এ কাতর্ুৃজে শুকর ও গরুর চর্বি মিশ্রিত
আছে যা যথাক্রমে মুসলমান ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ে ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ। এ ঘটনা সিপাহীদের বিদ্রোহী করে
তোলে এবং ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ শুরু হয় যা মূলত ইংরেজদের প্রতি একশ বছর ধরে জমে থাকা
ক্ষোভের বহি:প্রকাশ।
বিদ্রোহের বিস্তার : ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ ব্যারাকপুর প্যারেড গ্রাউন্ডে এনফিল্ড রাইফেল ব্যবহার করতে বলা হলে
সিপাহীদের মধ্য থেকে ‘মঙ্গল পান্ডে’ নামক একজন সিপাহী প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেন। ক্রমে এটি বিদ্রোহের রূপ ধারণ
করে এবং মিরাট, দিল্লী, বেরুলী, কানপুর, এলাহাবাদ, অযোধ্যা, কলকাতা, বিহার, ঢাকা, চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে
পড়ে। বিদ্রোহীরা মোঘল স¤্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে ভারতের বাদশাহ ও বিদ্রোহের নেতা ঘোষণা করেন। মারাঠা নেতা
নানা সাহেব, ঝাঁসির রাণী লক্ষèী বাই, মৌলভী লিয়াকত আলী প্রমুখ ব্যক্তিত্ব বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। ১৮৫৭ সালে প্রথমত
সিপাহীরা এ বিদ্রোহ শুরু করলেও পরবর্তীতে সাধারণ মানুষও এতে অংশগ্রহণ করে। ইংরেজরা কঠোর হাতে এ বিদ্রোহ
দমন করে। বিদ্রোহ এক বছরের কিছু বেশী সময় স্থায়ী ছিল।
ফলাফল ও মূল্যায়ন : সিপাহী বিদ্রোহের ফলাফল সুদূরপ্রসারী। এ বিদ্রোহ সফল না হলেও এটি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের
মূলে প্রচন্ড আঘাত হানে। ১৮৫৮ সালে বিদ্রোহ শেষে এক ঘোষণা বলে মহারাণী ভিক্টোরিয়া ভারতবর্ষের শাসনভার নিজের
হাতে তুলে নেন এবং অবসান হয় একশ বছরের কোম্পানি শাসন। ব্রিটিশ রাজ ‘স্বত্ব বিলোপ নীতি’ বাতিল ঘোষণা করে।
সামরিক বাহিনীতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। বাহাদুর শাহ জাফরকে রেঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ভারতবর্ষের
বিষয়াবলী দেখাশোনার জন্য ‘ভাইসরয়’ নামক একটি পদ সৃষ্টি করা হয়। এভাবে ইংরেজরা তাদের শাসনকার্যে ব্যাপক
পরিবর্তন আনেন।
সারসংক্ষেপ
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাঁদের একশ বছরের শাসনামলে এ দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিকসহ
প্রতিটি ক্ষেত্রে শোষণ ও অত্যাচার করে। কোম্পানির প্রতি জমে থাকা ক্ষোভ ও অসন্তোষের বহি:প্রকাশ ঘটে সিপাহীদের
মাধ্যমে। তাই ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ সফল না হলেও এর মাধ্যমে ভারতবর্ষের মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার
আকাংখা সৃষ্টি হয়েছিল।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। সিপাহী বিদ্রোহ কত সালে সংঘটিত হয়?
(ক) ১৭৫৭ সালে (খ) ১৯৪৭ সালে
(গ) ১৮৫৭ সালে (ঘ) ১৯০৫ সালে
২। ‘কালাপানি’ কী?
(ক) মরুভূমি (খ) নদী
(গ) সমুদ্র (ঘ) পর্বত

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]