মুখ্য শব্দ রাজনৈতিক নিষ্ঠা, শাসনতান্ত্রিক সংস্কার, অসহযোগ আন্দোলন, বিশ্বশান্তি, স্বরাজ পার্টি,
বেঙ্গল প্যাক্ট।
উপমহাদেশের রাজনীতিতে গভীর নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের জন্য চিত্তরঞ্জন দাশকে দেশবন্ধু আখ্যা দেওয়া হয়।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন একজন বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার। বিলেতে পড়ালেখা করার সময়ই তিনি
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা দাদাভাই নওরোজির সান্নিধ্যে আসেন। বলা যায়, তাঁর প্রত্যক্ষ
রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল দাদাভাই নওরোজির সান্নিধ্যে এসে। রাজনৈতিক জীবনের গোড়া থেকে তিনি ইংরেজ
ঔপনিবেশিক শাসনকে মেনে নিতে পারেননি। চিত্তরঞ্জন দাশ ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীর নির্মমতা ও অপশাসনের বিরোধিতা
করেছেন তীব্রভাবে। রাজনীতিতে চিত্তরঞ্জন দাশ মহাত্মা গান্ধীর সাথে থাকলেও নানান বিষয়ে বিশেষ করে নির্বাচনে
অংশগ্রহণ সংক্রান্ত ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি মনে করতেন যে, আইন পরিষদে থেকেই সরকারের শাসনতান্ত্রিক
সংস্কার, আইন, অধ্যাদেশ ইত্যাদির বিরোধিতা করতে হবে। অর্থাৎ শত্রæকে ঘায়েল করতে হলে তাদের মধ্যে থেকেই
অন্যায়, নিপীড়নমূলক কাজের বিরোধিতা করতে হবে।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের জীবন বৃত্তান্ত
সি. আর দাশ নামেও পরিচিত দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ১৮৭০ সালের ৫ নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতায়
জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর পৈতৃক নিবাস ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের অন্তর্গত তেলিরবাগ গ্রামে। তাঁর পিতা ভুবনমোহন দাস
কলকাতা হাইকোটের সলিসিটার ও ব্রাহ্মসমাজের নেতা ছিলেন। ভবানীপুরের লন্ডন মিশনারী সোসাইটি স্কুল থেকে ১৮৮৬
সালে এন্ট্রান্স পাশ করার পর চিত্তরঞ্জন দাশ কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে বি. এ. ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর
উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য তিনি ইংল্যান্ডে গমন করেন এবং ১৮৯৪ সালে তিনি ব্যারিস্টারি পরীক্ষা পাশ করে স্বদেশে
প্রত্যাবর্তন করেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে তিনি রাজনীতিতে জড়িত হন। অনুশীলন সমিতি ও বঙ্গভঙ্গ বিরোধী
কার্যক্রমে তিনি যুক্ত ছিলেন। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে মহাতœা গান্ধীর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি লাভজনক আইনজীবির
পেশা পরিত্যাগ করে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে আরো বেশী সোচ্চার হয়ে ওঠেন। কিন্তু গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত
করলে সি.আর দাশ সিদ্ধান্তটিকে গুরুতর ভুল বলে নিন্দা করেন। পরবর্তীতে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে স্বরাজ পার্টি গঠন
করেন। ক্ষণজন্মা এই দেশবন্ধু ১৯২৫ সালের ১৬ জুন অসুস্থ অবস্থায় দার্জিলিংয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের রাজনৈতিক চিন্তা
চিত্তরঞ্জন দাশ স্বরাজ অর্জনের জন্য আন্দোলনকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পথ মনে করলেও, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির গুরুত্বও
তিনি স্বীকার করেছেন। গান্ধীজীর ন্যায় তিনিও অহিংস পন্থায় স্বদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পক্ষপাতী ছিলেন। রাজনৈতিক
জীবনে তিনি মনে করতেন যে ব্রিটিশ সরকার বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনার সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত স্থান হলো আইন পরিষদ।
অর্থাৎ তিনি স্বদেশে ইংরেজ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন সমর্থন করতেন না ঠিকই কিন্তু মনে করতেন ইংরেজ প্রবর্তিত আইন
সভার অভ্যন্তরে থেকেই ব্রিটিশ সরকার বিরোধী চাপ সৃষ্টি করতে হবে। নি¤েœ চিত্তরঞ্জন দাশের আরো কিছু রাজনৈতিক চিন্তা
তুলে ধরা হলো।
ক্স জাতীয়তাবাদকে চিত্তরঞ্জন দাশ বিশ্ব শান্তির সোপান মনে করতেন। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই তিনি স্বরাজ
আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তিনি মনে করতেন ভারতীয়দের উপর চাপিয়ে দেওয়া ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান কোনদিনও
এদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটাতে পারবে না।
ক্স চিত্তরঞ্জন দাশ সংসদীয় সরকারকে দায়িত্বশীল সরকার হিসেবে মনে করতেন। কারণ প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত সংসদই
জনসাধারণের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
ক্স চিত্তরঞ্জন দাশের সময়ে ভারতবর্ষের রাজনীতিতে যে সমস্যাটি অত্যন্ত প্রকট ছিল তা হলো হিন্দু-মুসলিম ঐক্য সমস্যা।
তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন যে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য সমস্যা জিইয়ে রেখে স্বরাজ আন্দোলনের গন্তব্যে পৌঁছানো
অনেক কঠিন হবে। আর তাই ১৯২৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পূর্বে তিনি নিজ প্রদেশে মুসলমান সম্প্রদায়ের সাথে
একটি চুক্তি করেন যা ’বেঙ্গল প্যাক্ট’ নামে পরিচিত। ’বেঙ্গল প্যাক্ট’ এ সরকারি চাকুরিতে মুসলমানদের জন্য শতকরা
৫৫ ভাগ আসন সংরক্ষণের কথা বলা হয়। যতদিন মুসলমানরা ৫৫ শতাংশে না পৌঁছায়, ততদিন পর্যন্ত মোট সরকারি
চাকুরির ৮০ ভাগ মুসলমানদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বদেশের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে নিগূঢ়ভাবে ভালবেসেছেন। তিনি ছিলেন একজন বিশুদ্ধ বাঙালি। স্বরাজ
পার্টি গঠন, বেঙ্গল প্যাক্ট এর মত উদ্যোগগুলি নিয়ে এ জনপদের রাজনীতিকে অসাম্প্রদায়িক ধারায় প্রবাহিত করতে সচেষ্ট
হন চিত্তরঞ্জন দাশ।
সারসংক্ষেপ
রাজনৈতিক নিষ্ঠা ও গভীর দেশপ্রেমের জন্য এই উপমহাদেশের জনগণ চিত্তরঞ্জন দাশকে দেশবন্ধু উপাধিতে ভূষিত
করে। একজন বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার হওয়া সত্তে¡ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ছিল তাঁর অনঢ় অবস্থান। তিনি রাজনৈতিক
জীবনের শুরু থেকেই ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনকে মেনে নিতে পারেননি। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে মহাতœা
গান্ধীর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি লাভজনক আইনজীবির পেশা পরিত্যাগ করে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে আরও বেশি সোচ্চার
হয়ে দেশপ্রেমের অমোঘ স্বাক্ষর রাখেন। ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ দেশবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চিত্তের অনন্য উদাহরণ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.৪
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বেঙ্গল প্যাক্টের রূপকার কে?
(ক) পন্ডিত মতিলাল নেহেরু (খ) মহাত্মা গান্ধী
(গ) দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ (ঘ) মাওলানা শওকত আলী
২। দেশবন্ধু নামে খ্যাত কে?
(ক) ফজলুল হক (খ) চিত্তরঞ্জন দাশ
(গ) আব্দুল লতিফ (ঘ) সুভাস চন্দ্র বসু
৩। বেঙ্গল প্যাক্ট হল-
র. হিন্দু-মুসলিম স¤প্রদায়ের মধ্যে স¤প্রীতি বাড়ানোর চেষ্টা
ররর. হিন্দু-মুসলিম ঐক্য বৃদ্ধি
ররর. হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে সা¤প্রদায়িকতা বাড়ানো
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র ও রর (খ) রর ও ররর
(গ) র ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র