মুখ্য শব্দ সা¤্রাজ্যবাদ, মজলুম, কৃষক-শ্রমিক, অধিকার, অসহযোগ, মুক্তিযুদ্ধ।
সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য বাংলার যেসব সন্তান আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন তাঁদের অন্যতম মজলুম
জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। মওলানা ভাসানী এমন এক রাজনৈতিক নেতা ছিলেন ক্ষমতার মস্নদ
যাকে কোন দিন বশীভূত করতে পারেনি। মওলানা ভাসানীর জন্মই হয়েছিল যেন বাংলার খেটে খাওয়া কৃষক-শ্রমিকের
অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে জীবনাতিপাত করার জন্য। তাঁর আপোষহীন রাজনীতির পিছনে ছিল এ জনপদের
কৃষক-জনতার স্বার্থ। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ছিল অবহেলিত সাধারণ মানুষের কল্যাণ ও অর্থনৈতিক মুক্তি। ভাসানী এমন
একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি ব্রিটিশ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এ তিন রাষ্ট্রেরই রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সংগ্রামী
অবদান রেখেছেন। মুসলিম লীগের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখা থেকে শুরু করে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট
গঠন ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন ইত্যাদি রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অনবদ্য অবদান রেখে গেছেন তিনি।
সর্বোপরি, জেনারেল আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখে এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানকে সমর্থন দানের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জীবন বৃত্তান্ত
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমা শহরের
অদূরবর্তী ধনপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল হাজী শরাফত আলী খান। অতি অল্প বয়সে ভাসানী
পিতা-মাতাকে হারান। পিতা-মাতার মৃত্যুর পর আরো দুই ভাইকে হারিয়ে বালক আব্দুল হামিদ ওরফে চেকা মিয়া তাঁর
চাচা ইব্রাহিম খানের আশ্রয়ে থেকে স্থানীয় মাদ্রাসায় কিছুকাল পড়াশুনা করেন। তৎকালীন সমাজের সাধারণ মানুষের দুঃখ
জর্জরিত জীবনের সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ পরিচয় ছিল বলে তিনি উৎপীড়িত মানবতার ডাকে দরদী বন্ধুর মত সাড়া দিয়েছেন।
টাঙ্গাইলের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ-খেলাফত
আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভাসানীর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। সারাজীবন তিনি নিপীড়িত মানুষের জন্য লড়াই সংগ্রাম
করে গেছেন । ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর রাজনৈতিক চিন্তা ও কর্মকান্ড
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে ক্ষমতার মোহ কখনো আচ্ছন্ন করতে পারেনি। তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা ও কর্মকান্ড
আবর্তিত হয়েছে সাধারণ মানুষের মুক্তিকে ঘিরে। তিনি শোষণ ও বঞ্চনা থেকে বাংলার নিপীড়িত মানুষকে মুক্ত করার জন্য
সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন।
ক্স মওলানা ভাসানী ১৯৩৭ সালে মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি আসাম মুসলিম লীগের
সভাপতি হন।
ক্স তৎকালীন পাকিস্তানের মুসলিম লীগের পূর্ব বাংলার ক্ষুদ্ধ সদস্যরা ১৯৪৯ সালের ২৪ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করে এবং এই নতুন রাজনৈতিক দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা
ভাসানী।
ক্স ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রæয়ারি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে কয়েকজন ছাত্র নিহত হলে ভাসানী এক
তীব্র প্রতিবাদী বিবৃতি দেন। পুলিশ তাঁকে গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়।
ক্স ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে যুক্তফ্রন্ট নামে একটি
বিরোধী দলীয় মোর্চা গঠন করেন। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে ২২৮ টি আসন লাভ করে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের আসন
১৪৩টি পক্ষান্তরে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ মাত্র ৭ টি আসন পায়।
ক্স ১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানী ঢাকায় পাকিস্তানের সকল বামপন্থী দলের একটি সম্মেলন আহবান করেন। এই
সম্মেলনের মাধ্যমে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামক নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তিনি এই
দলের সভাপতি নির্বাচিত হন।
ক্স ভাসানী আইয়ুব সরকারকে সা¤্রাজ্যবাদের লেজুড় হিসেবে গণ্য করেন এবং এই স্বৈরশাসকের অপসারনের জন্য তীব্র
আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং
মুক্তিদানের জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেন।
ক্স ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য যে উপদেষ্টা কমিটি বানানো হয় ভাসানী সেই কমিটির অন্যতম
সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সারা জীবন রাজনীতি করেছেন মেহনতী মানুষকে শোষক ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের হীন
ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার করে তোলার জন্যে। জীবনভর মেহনতী মানুষের সঙ্গে থাকায় তাঁকে মজলুম জননেতা খেতাব
দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীর কাজ মওলানা ভাসানীর রাজনীতির দর্শন আলোচনা করুন।
সারসংক্ষেপ
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন বাংলার খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের এক সরব সৈনিক।
ক্ষমতার মসনদ কখনও তাঁকে আকর্ষণ করে নি। সাধারণ মানুষের পাশে তিনি ছিলেন সদা ঢাল হয়ে, বন্ধু হয়ে। আর এ
কারণে মাওলানা ভাসানীকে বলা হয়ে থাকে ‘মজলুম জননেতা’। তিনি সারাজীবন রাজনীতি করেছেন মেহনতী মানুষকে
শোষক ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের হীন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার করে তোলার জন্যে। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ছিল
অবহেলিত সাধারণ মানুষের কল্যাণ ও অর্থনৈতিক মুক্তি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৩.৭
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। মওলানা ভাসানীর মুসলিম লীগে যোগদান করেন কত সালে?
(ক) ১৯১৫ সালে (খ) ১৯১৬ সালে
(গ) ১৯১৭ সালে (ঘ) ১৯৩৭ সালে
২। ১৯৪৯ সালে মওলানা ভাসানী কোন দলের সভাপতি হন?
(ক) মুসলিম লীগ (খ) জনতা পার্টি
(গ) ন্যাপ (ঘ) আওয়ামী মুসলিম লীগ
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র