বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস বর্ণনা কর

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
সংবিধান হল একটি রাষ্ট্রের দর্শন বা প্রতিচ্ছবি। উৎপত্তিগত অর্থে সংবিধান বলতে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের আদেশ
প্রতিষ্ঠা করাকে বোঝায়। একটি রাষ্ট্রের গঠন কাঠামো, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন, ব্যক্তি ও সরকারের
মধ্যে সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়গুলো সংবিধানে সুনির্দিষ্ট থাকে। সরকারের রূপ সংবিধান দ্বারাই নির্ধারিত হয়ে থাকে। প্রত্যেক
দেশের সংবিধানই সমসামময়িক কালে সমাজে বিরাজমান বাস্তব পরিস্থিতি এবং প্রচলিত বিশ্বাসের ফলস্বরূপ। হাল ছাড়া যেমন নৌকা চলে না, তেমনি সংবিধান ব্যতীত রাষ্ট্র ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। তাই একটি রাষ্ট্রে সংবিধানের গুরুত্ব
অপরিসীম। আলোচ্য ইউনিটে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস, সংবিধানের বৈশিষ্ট্য, সংবিধানের সংশোধনী ও সুশাসন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মুখ্য শব্দ গণপরিষদ, অধিবেশন, সংবিধান প্রণয়ন কমিটি, বিল, অনুমোদন, কার্যকর
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি
পায়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসে সদ্য
স্বাধীন দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১১ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের অস্থায়ী গণপরিষদ
আদেশ জারি করেন। এ গণপরিষদ বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করে।
গণপরিষদ আদেশ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। আদেশটি ২৬ মার্চ,
১৯৭১ সাল থেকে কার্যকর হয়। এই আদেশ অনুসারে ডিসেম্বর, ১৯৭০ এবং জানুয়ারি, ১৯৭১ সালে নির্বাচিত প্রাদেশিক ও
জাতীয় পরিষদের সদস্যগণ গণপরিষদের সদস্য বলে বিবেচিত হয়। মৃত্যু এবং আইনে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার ফলে
উভয় পরিষদ মিলে সর্বমোট ৪৬৯ জন সদস্যের স্থলে ৪০৪ জন সদস্য নিয়ে গণপরিষদ গঠিত হয়। এই গণপরিষদের
উপর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। গণপরিষদ তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করে।
গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন
১০ এপ্রিল, ১৯৭২ সালে গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে। অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে আইন ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী ড.
কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। ১৭ এপ্রিল, ১৯৭২
সালে কমিটি প্রথম বৈঠক করে। এই কমিটি সংবিধান সম্পর্কে মতামত লাভের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকগুলো বৈঠক
করে। ‘খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি’ সংবিধান সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে ৯৮টি প্রস্তাব ও সুপারিশ পায়। ১০ জুন,
১৯৭২ সালে কমিটির শেষ বৈঠকে সংবিধানের প্রাথমিক খসড়াটি অনুমোদন করা হয়। ১১ জুন, ১৯৭২ সালে কমিটির
সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে খসড়া সংবিধানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করেন। ১১ অক্টোবর,
১৯৭২ সালে কমিটি সর্বশেষ আলাপ-আলোচনা করে এবং সেদিনই সংবিধানের পূর্ণাঙ্গ খসড়া চ‚ড়ান্তভাবে গৃহীত হয়।
গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন
১২ অক্টোবর, ১৯৭২ সালে গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে খসড়া সংবিধানটি বিল আকারে পেশ
করা হয়। গণপরিষদে বিলটির ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এই সংবিধান শহীদের রক্তে
লিখিত।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই সংবিধান দেশের সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হবে।’
বিল উত্থাপনকালে আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘এই সংবিধান গণতান্ত্রিক উপায়ে এক
শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে। এই সমাজ ব্যবস্থায় আইনের শাসন, জনগণের মৌলিক
অধিকার, স্বাধীনতা, সাম্য এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।’
খসড়া সংধিানের চ‚ড়ান্ত অনুমোদন
১৯ অক্টোবর, ১৯৭২ সালে খসড়া সংবিধানের প্রথম পাঠ শুরু হয় এবং ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চলে। অত:পর ৩১ অক্টোবর
দ্বিতীয় পাঠ শুরু হয় এবং ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এ পাঠ চলে। ৪ নভেম্বর সংবিধানের ওপর তৃতীয় ও সর্বশেষ পাঠ শুরু হয়। ঐ
দিন অর্থাৎ ৪ নভেম্বর, ১৯৭২ সালে গণপরিষদ সদস্যগণ বাংলাদেশের সংবিধানকে তুমুল করতালি ও হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে
চ‚ড়ান্তভাবে বিধিবদ্ধ করেন। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘‘একটি জাতি হিসেবে বাঙালিরা ইতিহাসে
এই প্রথমবারের মত তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সংবিধান প্রণয়ন করল।’’ গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত এ সংবিধান বিজয়
দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২ সাল থেকে কার্যকর করা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটি স্বতন্ত্র সংবিধান প্রণয়ন ছিল যুগান্তরী পদক্ষেপ।
বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বের অন্যতম ফসল স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান। এই সংবিধানে জনগণের মৌলিক অধিকার,
আইনের শাসন, স্বাধীনতা, সাম্য এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়।
সারসংক্ষেপ
১৯৪৭ সালে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নয় বছরে পাকিস্তান প্রথম সংবিধান প্রণয়নে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে বিজয় অর্জনের মাত্র
এক বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান প্রণয়ন ও
কার্যকর করে। এই সংবিধানে বাঙালি জাতির সকল আশা-আকাঙ্খার প্রকাশ ঘটেছে। বাংলাদেশ সংবিধান ১৯৭২
সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত হয় এবং একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৪.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন কখন?
(ক) ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ (খ) ১২ জানুয়ারি, ১৯৭২
(গ) ১০ ফেব্রæয়ারি, ১৯৭২ (ঘ) ১৫ ফেব্রæয়ারি, ১৯৭২
২। খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য সংখ্যা কত ছিল?
(ক) ২৮ (খ) ৩০
(গ) ৩২ (ঘ) ৩৪
৩। অস্থায়ী গণপরিষদ আদেশ কে জারী করেন?
(ক) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (খ) তাজউদ্দীন আহমেদ
(গ) ড. কামাল হোসেন (ঘ) খন্দকার মোশতাক আহমদ

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]