মুখ্য শব্দ মৌলিক অধিকার, মূলনীতি, নাগরিকত্ব, সংবিধানের সার্বভৌমত্ব, সংসদীয় সরকার
পদ্ধতি, জনগণের সার্বভৌমত্ব।
বাংলাদেশের জনগণ বাঙালি জাতির অস্তিত্ব ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহŸানে
স্বত:স্ফূর্ত সাড়া দেয় এবং বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই
ডিসেম্বর চ‚ড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। বিজয় অর্জনের এক বছরের মধ্যেই নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত
করেন, যা ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত এবং একই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর কার্যকর হয়। নি¤েœ ১৯৭২
সালের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল :
১. প্রজাতন্ত্রের প্রস্তাবনা : বাংলাদেশ সংবিধানের প্রথম ভাগে ১নং অনুচ্ছেদের ১নং ধারায় প্রজাতন্ত্রের প্রস্তাবনা রয়েছে।
এ প্রস্তাবনা অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যা ‘‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’’ নামে
পরিচিতি।
২. রাষ্ট্রীয় মূলনীতি : ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৮(১) নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি চারটি। যথা :
জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এই নীতিসমূহ এবং তার সঙ্গে এই নীতিসমূহ হতে উদ্ভ‚ত অন্য
সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলে পরিগণিত।
৩. মৌলিক অধিকার : সংবিধানের তৃতীয় ভাগে নাগরিকদের জন্য কতকগুলো মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ রয়েছে।
নাগরিকের ব্যক্তিত্ব বিকাশ এবং অধিকারের পথ উন্মুক্ত করার জন্য প্রগতিশীল সংবিধানে মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত
থাকে। বাংলাদেশের সংবিধান ঘোষিত মৌলিক অধিকারের মধ্যে রয়েছে; আইনের দৃষ্টিতে সমতা, সরকারি নিয়োগ
লাভে সুযোগের সমতা, সাম্যের অধিকার, চলাফেরা, সভা-সমিতি, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা
সম্পত্তির অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রভৃতি।
৪. সংসদীয় সরকার পদ্ধতি : সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার পদ্ধতি
বিদ্যমান। নিয়মতান্ত্রিক প্রধান থাকবে কিন্তু প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদ হবে দেশের প্রকৃত শাসক। মন্ত্রিপরিষদ
যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকবে।
৫. লিখিত সংবিধান : বাংলাদেশের সংবিধান লিখিত এবং গ্রন্থীত। সংবিধানের ১১টি ভাগ, ১৫৩টি অনুচ্ছেদ এবং একটি
প্রস্তাবনাসহ ৭টি তফসিল রয়েছে। সংবিধানে সরকারের তিনটি বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকারী যেমন- রাষ্ট্রপতি,
প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, অ্যার্টনি জেনারেলসহ অন্যান্যদের ক্ষমতা, কার্যাবলি সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ
রয়েছে।
৬. জনগণের সার্বভৌমত্ব : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণের পক্ষে সংবিধান
অনুযায়ী নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এই ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘‘জনগণই সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার
উৎস। জনগণ প্রত্যক্ষভাবে বা প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিচালনা করবে।’’
৭. সংবিধানের সার্বভৌমত্ব : বাংলাদেশ সংবিধানে শাসনতন্ত্রের সার্বভৌমত্বের বিধান রয়েছে। এখানে সংবিধান বা
শাসনতন্ত্রই হল দেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানের সাথে সামঞ্জ্যহীন যে কোন আইন বাতিল বলে গণ্য হবে।
৮. নাগরিকত্ব : বাংলাদেশ সংবিধানের ৬নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক বাংলাদেশের নাগরিকত্ব
আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে। বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশি
বলে পরিচিত হবে।
৯. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত হচ্ছে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট’। আপিল
বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হবে। সংবিধানের ২২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের নির্বাহী অর্থাৎ
প্রশাসনিক আদেশসমূহ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করা হবে।
১০. দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান : বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনগত দিক থেকে দুষ্পরিবর্তনীয়। অর্থাৎ এ সংবিধান সহজে
পরিবর্তন করা যায় না। তবে শর্তসাপেক্ষে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন করা যায়। এ জন্য
সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি দরকার।
১১. এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র : সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত। বাংলাদেশে কোন প্রদেশ নেই।
সে কারণে এখানে সরকারের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকবে এবং কেন্দ্রীয় সরকার কেন্দ্র থেকেই
শাসনকার্য পরিচালনা করে।
১২. মালিকানা নীতি : বাংলাদেশ সংবিধানে এ দেশের নাগরিকদের তিন ধরনের মালিকানা নীতি স্বীকার করা হয়েছে।
সংবিধানের ১৩নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এগুলো হচ্ছে (র) রাষ্ট্রীয় মালিকানা (রর) সমবায়ী মালিকানা ও (ররর) ব্যক্তিগত
মালিকানা
১৩. এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা : বাংলাদেশের আইনসভার নাম ‘জাতীয় সংসদ’। এটি এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা।
জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০ জন সদস্য নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হয়।
১৪. সংবিধান সংশোধনীর বিধান : সংবিধানের যে কোনো ধারা সংশোধন বা বাতিল করার জন্য পার্লামেন্টের দুইতৃতীয়াংশের সম্মতিসূচক প্রস্তাব বা ভোট গ্রহণের বিধান সংবিধানে রয়েছে। তাছাড়া যুদ্ধ ঘোষণা বা অংশগ্রহণের জন্য
সংসদ সদস্যদের সম্মতি প্রয়োজন।
পরিশেষে বলা যায়, ১৯৭২ সালের সংবিধান বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত মর্যাদাকর। কেননা এ সংবিধানের
মাধ্যমেই নাগরিকদের প্রকৃত স্বাধীনতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
সারসংক্ষেপ
১৯৭২ সালের সংবিধানে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব, সংগ্রাম, স্বাধীনতা এবং অধিকারগুলো স্বীকৃতি পেয়েছে। এ
সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ এবং রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও
বিচার বিভাগের কার্যপরিধিসহ সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষমতা ও কার্যাবলি বর্ণিত হয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৪.২
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকরী হয় কখন?
(ক) ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ (খ) ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর
(গ) ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর (ঘ) ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর
২। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি কয়টি?
(ক) ৪টি (খ) ৬টি
(গ) ৮টি (ঘ) ১০টি
৩। বাংলাদেশের আইনসভার নাম কি?
(ক) কংগ্রেস (খ) পার্লামেন্ট
(গ) জাতীয় সংসদ (ঘ) লোকসভা
৪। বাংলাদেশের আইনসভার মোট সদস্য সংখ্যা কত?
(ক) ৩০০ (খ) ৩১৫
(গ) ৩৩০ (ঘ) ৩৫০
৫। বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য হল-
র.দুষ্পরিবর্তনীয়
রর.জনগণের সার্বভৌমত্ব
ররর. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র ও রর (খ) র ও ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর, ও ররর
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র