বাংলাদেশ সংবিধানে উল্লেখিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতি সম্পর্কে জান

মুখ্য শব্দ সংবিধান, মূলনীতি, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের ঠিক এক বছর পর, অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর
বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ,
সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে লিপিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে
সংবিধানের মূলনীতিতে অনাকাঙ্খিত পরিবর্তন সাধন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রথম
সংবিধানের মূলনীতিগুলো পুন:প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৮ম অনুচ্ছেদ থেকে ২৫ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির উল্লেখ রয়েছে।
১৯৭২ সালে রচিত বাংলাদেশ সংবিধানে উল্লিখিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ :
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ২য় অধ্যায়ের ৮ম অনুচ্ছেদ থেকে ২৫তম অনুচ্ছেদ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার
মূলনীতিগুলো বর্ণিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চারটি বিষয়কে রাষ্ট্রের স্তম্ভ বা
মৌলিক আদর্শ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, উপরোক্ত চারটি নীতিসহ ২য় ভাগে বর্ণিত অন্য
সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলে গণ্য হবে। নি¤েœ রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল :
র. জাতীয়তাবাদ : ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করে
জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছেন, সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও
সংহতি হবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। (অনুচ্ছেদ ৯)।
রর. সমাজতন্ত্র : মানুষের উপর মানুষের শোষণ হতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজ লাভ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হল রাষ্ট্রের লক্ষ্য। (অনুচ্ছেদ ১০)
ররর. গণতন্ত্র : প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানব সত্তার
মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে। প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। (অনুচ্ছেদ ১১)
রা. ধর্মনিরপেক্ষতা : ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হল সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা অবসান, রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে
রাজনৈতিক মর্যাদা না দেওয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার না করা এবং কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ নিপীড়নের অবসান। (অনুচ্ছেদ ১২)
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির শ্রেণিকরণ :
বাংলাদেশের সংবিধানের উল্লিখিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহকে চারভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। নি¤েœ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির শ্রেণিকরণ করা হল -
১. অর্থনৈতিক সম্পর্কিত নীতিসমূহ : বাংলাদেশ সংবিধানের ২য় ভাগের ১৩, ১৫, ১৬, ১৯ (২) এবং ২০ নং অনুচ্ছেদে
অর্থনৈতিক সম্পর্কিত নীতিসমূহের উল্লেখ রয়েছে। এগুলো হচ্ছের. রাষ্ট্র অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণে সচেষ্ট হবে;
রর. নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করবে;
ররর. গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করবে;
রা. রাষ্ট্র কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ ঘটাবে।
া. যোগ্যতা ও কর্ম অনুযায়ী প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করবে।
ার. অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
ারর. অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্র তিন ধরনের মালিকানা যথা- রাষ্ট্রীয় মালিকানা, সমবায়ী মালিকানা ও ব্যক্তিগত মালিকানা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
২. সামাজিক সম্পর্কিত নীতিসমূহ : বাংলাদেশ সংবিধানের ২য় ভাগের ১৪, ১৫, ১৭ এবং ১৮নং অনুচ্ছেদে সামাজিক
সম্পর্কিত নীতিসমূহের উল্লেখ রয়েছে। এগুলো হচ্ছের. রাষ্ট্র জনগণের পুষ্টিমান উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার চেষ্টা করবে;
রর. আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয়
এবং স্বাস্থ্য হানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ররর. গণিকাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
রা. সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে।
া. একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল
বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের কার্যকর ব্যবস্থা রাষ্ট্র গ্রহণ করবে।
ার. আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৩. আইন ও শাসন ব্যবস্থার সংস্কারমূলক নীতিসমূহ : বাংলাদেশ সংবিধানের ২য় ভাগের ৯, ১০, ২২, ২৩ ও ২৪ নং
অনুচ্ছেদে আইন ও শাসনব্যবস্থার সংস্কারমূলক নীতির ব্যাখ্যা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছের. রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
রর. জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্প কলাসমূহের উন্নয়নের ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
ররর. রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৪. পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত নীতিসমূহ : বাংলাদেশ সংবিধানে ২৫ নং অনুচ্ছেদে পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত নীতির উল্লেখ
রয়েছে। সেগুলো হচ্ছের. অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।
রর. আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা
ররর. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য চেষ্টা করা।
রা. প্রত্যেক জাতির স্বাধীন অভিপ্রায় অনুযায়ী নিজস্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্ধারণ ও
গঠনের অধিকার সমর্থন করা।
া. সা¤্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করবে।
রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে আনীত পরিবর্তনসমূহ :
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সংবিধান কার্যকরী হওয়ার পর ১৯৭৯ সালের ফেব্রæয়ারি মাস পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার
মূলনীতির চারটি মূল স্তম্ভে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানকে সপরিবারে হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা দখল করেন জিয়াউর রহমান। এই সামরিক শাসক ১৯৭৯
সালে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের চারটি মূল স্তম্ভের তিনটিতে পরিবর্তন আনেন। সংশোধনী বা পরিবর্তনগুলো
নি¤œরূপ১. জাতীয়তাবাদ : ‘বাঙালি’ জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশি’ জাতীয়তাবাদ করা হয়। তবে বাংলাদেশি
জাতীয়তাবাদের ধরণ বা ভিত্তি কি হবে সংশোধনীতে তার কোনো উল্লেখ করা হয় নি।
২. সমাজতন্ত্র : সমাজতন্ত্রেও পরিবর্তন আনা হয়। এতে বলা হয় সমাজতন্ত্রের স্থানে হবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র।
৩. ধর্মনিরপেক্ষতা : সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া হয়। ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে ‘সর্ব
শক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ প্রতিস্থাপিত হয়।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২৯ আগস্ট, ২০০৫ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে
আপিল বিভাগ ২ ফেব্রæয়ারি, ২০১০ সালে হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখে। এই ধারাবাহিকতাতে ২০১১ সালের ২৫
জুন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলো পুন:প্রতিষ্ঠিত হয়।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহের অন্তভর্‚ক্তিকরণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানের ৮(২) নং
অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘‘এ নীতিসমূহ বাংলাদেশ পরিচালনার মূলসূত্র হইবে, আইন প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তা প্রয়োগ
করিবেন, এই সংবিধান ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে তাই নির্দেশক হইবে এবং তাহা রাষ্ট্র
ও নাগরিকদের কার্যের ভিত্তি হবে, তবে এই সকল নীতি আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হইবে না।’’
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৪.৩
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বাংলাদেশ সংবিধানের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি কয়টি?
(ক) ২টি (খ) ৪টি
(গ) ৬টি (ঘ) ৮টি
২। ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিল?
র. জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র
রর. গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা
ররর দ্বিজাতি তত্ত¡
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) ও (খ) র ও রর (গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর, ও ররর
৩। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ করে অবৈধ ঘোষণা করে?
ক) ২ ফেব্রæয়ারি, ২০১০ খ) ১০ জুন, ২০১২
(গ) ৫ মার্চ, ২০১৫ (ঘ) ১০ জুলাই, ২০১৬

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]