মুখ্য শব্দ শাসন ব্যবস্থা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িক, অর্থনৈতিক, কেন্দ্রস্থল,
রাজনৈতিক সংগঠন।
বাংলা ও ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে ভারতের
যে রাজনৈতিক আলোড়নের সৃষ্টি হয় তা পরবর্তীতে রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
বঙ্গভঙ্গ
বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত ছিল বাংলা প্রদেশ বা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি। এটি ছিল ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তম প্রদেশ।
ব্রিটিশ সরকার শাসনকাজে সুবিধার জন্য বাংলা প্রদেশকে বিভক্তিকরণের কথা চিন্তা করতে থাকে। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভ‚মিকা
পালন করেন স্যার বাম্পফিল্ড ফুলার এবং স্যার এন্ড্রু ফ্রেজার। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে বড়লাট লর্ড কার্জন ও বাংলা
বিভক্তিকরণের বিষয়ে আলোচনা করেন। অতপর ১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বঙ্গভঙ্গ সম্পন্ন হয়। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম
ও আসামকে নিয়ে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি হয়। এর রাজধানী হয় ঢাকা। নতুন প্রদেশের রাজধানী
ছিল ১,০৬,৫০৪ বর্গমাইল এবং লোকসংখ্যা ছিল ৩ কোটি ১০ লক্ষ। এ প্রদেশে মুসলমানরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ।
বঙ্গভঙ্গের কারণ
ব্রিটিশ সরকার প্রধানত প্রশাসনিক কারণে বঙ্গভঙ্গ করলেও এর পেছনে আরো অনেক কারণ ছিল। নি¤েœ সেগুলো আলোচনা
করা হল:
শাসনতান্ত্রিক কারণ
১৮৬১ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইন অনুসারে সৃষ্ট বাংলা প্রদেশ ছিল ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় প্রদেশ। এই বিশাল
আয়তনের শাসনভার একজন গভর্ণরের উপর ন্যস্ত ছিল। ফলে শাসনতান্ত্রিক শৃংখলা রক্ষা ছিল দুরূহ ব্যাপার। তাই বাংলা
প্রদেশকে ভাগ করার জন্য ব্রিটিশরা চিন্তা-ভাবনা শুরু করে। অবশেষে লর্ড কার্জন বাংলা প্রদেশকে বিভক্ত করে নতুন প্রদেশ
সৃষ্টি করেন।
রাজনৈতিক কারণ
বিশ শতকের প্রারম্ভে ভারতীয় জনসাধারণের মাঝে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটতে থাকে। এক্ষেত্রে বাংলা প্রদেশ
ছিল অনেক অগ্রসর। বলা হত এ কারণে ব্রিটিশ সরকার
বাংলাকে ভাগ করে জাতীয়তাবাদী চেতনাকে ভাগ করতে চেয়েছিল। হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক
চেতনা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল।
সামাজিক কারণ
ব্রিটিশ শাসনের শুরু থেকে নানাবিধ কারণে মুসলমান সমাজ ধীরে ধীরে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে
থাকে। পূর্ববঙ্গের মুসলমানরা ভেবেছিল বাংলাকে ভাগ করলে তারা তাদের হারানো গৌরব ফিরে পাবে।
অর্থনৈতিক কারণ
বাংলা প্রদেশের রাজধানী কলকাতা হওয়ায় সকল ব্যবসা বাণিজ্য ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক। তাছাড়া কলকাতার হিন্দু সম্প্রদায়
ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দেখা দেয়। এই বাস্তবতা বঙ্গভঙ্গের
ব্যাপারে উচ্চবর্গের অনেক মুসলমানকেও আকৃষ্ট করে।
ভাগ কর, শাসন কর নীতি
বঙ্গভঙ্গ করার প্রস্তাব ব্রিটিশ শাসকদের কাছ থেকে আসে। বঙ্গভঙ্গ মুসলমানদের দাবির ফসল ছিল না। পরবর্তীকালে এর
ঘোর সমর্থক ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ স্বয়ং শুরুতে এ ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন। কার্যত এটি ছিল ব্রিটিশদের ‘ভাগ
কর ও শাসন কর’ নীতির ফল। মূলত হিন্দু আধিপত্যের বিরুদ্ধে মুসলিম সেন্টিমেন্ট জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাকে ভাগ
করা হয়।
বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন
বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ববাংলার জনগণের সার্বিক উন্নতি হবে এ আশাবাদ থেকে পূর্ববাংলায় নতুন প্রদেশের প্রতি সমর্থন লক্ষ্য
করা যায়। কিন্তু বাংলার হিন্দু সম্প্রদায় প্রধানত দুইটি কারণে বঙ্গভঙ্গের ঘোর বিরোধিতা করে। প্রথমত, বাংলার রাজনীতি,
অর্থনীতি ব্যবসা-বাণিজ্য, ইত্যাদি সবকিছু কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। নতুন প্রদেশ গঠনের ফলে
তাদের স্বার্থে চরম আঘাত লাগে। দ্বিতীয়ত, দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী হিন্দু নেতৃবৃন্দের নিকট বাংলা বিভক্তি ছিল
‘মাতৃভ‚মির অঙ্গচ্ছেদ’ এর মত। বঙ্গভঙ্গকে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ব্রিটিশ ষড়যন্ত্র বলে অ্যাখায়িত করে
তাঁরা এর ঘোর বিরোধিতায় অবতীর্ণ হন। এ সকল কারণে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন দ্রæত বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
এক পর্যায়ে, স্বদেশীপণ্য ব্যবহার এবং বিদেশী পণ্য বর্জনের কর্মসূচি যুক্ত হয়। এক পর্যায়ে আন্দোলন সহিংস রূপ ধারণ
করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়ে। কুমিল্লা, ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর, পাবনা, রাজশাহীসহ পূর্ব
বাংলায় বহু স্থানে হিন্দু-মসুলমান সম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠিত হয়। আন্দোলন তীব্র হলে ব্রিটিশ সরকার নত হতে বাধ্য হয়।
১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর স¤্রাট পঞ্চম জর্জ বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে, তিনি ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী
কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরের কথা বলেন।
বঙ্গভঙ্গ ও বঙ্গভঙ্গ রদের ফলাফল
বঙ্গভঙ্গের ফলে সৃষ্ট নতুন প্রদেশে তাৎক্ষণিক কিছু উন্নয়ন কর্মকান্ড সাধিত হলেও বাঙালির অখন্ড চেতনার জন্য তা ছিল
আত্মঘাতমূলক। হিন্দু সম্প্রদায়ের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক সংগঠনের আবশ্যকতা তুলে
ধরে।
বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন বাঙালির মধ্যে জাতিসত্তা বোধ জাগিয়ে তোলে। অপরদিকে বঙ্গভঙ্গ হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ১৯১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার জনগণের মাঝে
একটি সাম্প্রদায়িক রেখা সৃষ্টি করে।?
সারসংক্ষেপ
ব্রিটিশ শাসকরা বাংলা বিভাগকে স্থায়ী ব্যবস্থা বলেছিল, যদিও নতুন প্রদেশ সৃষ্টির ৬ বছরের মধ্যে তা বাতিল ঘোষিত
হয়। বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান ঘটে। বঙ্গভঙ্গ কেন্দ্রিক রাজনীতিতে ব্রিটিশদের অনুসৃত ‘ভাগ
কর ও শাসন কর নীতি’ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.৬
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বঙ্গভঙ্গ সংগঠিত হয় কত সালে?
(ক) ১৯০৩ সালে (খ) ১৯০৫ সালে
(গ) ১৯০৬ সালে (ঘ) ১৯১১ সালে
২। বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণার মূল কারণ কোনটি?
(ক) বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন (খ) মুসলমানদের দুর্বল রাজনীতি
(গ) ব্রিটিশ স্বার্থ (ঘ) হিন্দু-মুসলমান স¤প্রীতি স্থাপন
৩। বঙ্গভঙ্গের মূল্যায়ন হিসেবে যৌক্তিক হলোÑ
র. হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের উন্নতি
রর. ব্রিটিশদের ‘ভাগ কর ও শাসন কর-’ নীতির বিজয়
ররর. মুসলিম লীগের জন্ম
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র ও রর (খ) র ও ররর
(গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র