স্থানীয় শাসন ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন

স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা সরকার ও প্রশাসনে গুরুত্ববহ হয়েছে মূলত: গত শতাব্দীর শেষের দিকে। কেন্দ্রীয় সরকার গৃহীত
নীতি ও তার বাস্তবায়ন প্রায়শ রাষ্ট্রের ঊর্দ্ধতন অংশকেই সংশ্লিষ্ট করতো, যেখানে বৃহৎ জনগোষ্ঠী যারা তৃণমূলে বসবাস করে
তারা সবসময়ই বঞ্চিত থেকেছে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধা লাভে। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকের সরকার বিষয়ে
প্রাজ্ঞ গবেষকগণ সেই জায়গা থেকে স্থানীয় শাসন ও প্রশাসনের গুরুত্ব অনুধাবন করেন। তাঁরা মনে করেন, সামষ্টিক আর্থ-
সামাজিক উন্নয়ন ত্বরাণি¦ত করতে হলে ব্যস্টিক বা তৃণমূল উন্নয়ন ব্যতিরেকে কোনভাবেই সম্ভব নয়, যা সমাজের
পরিবর্তনশীলতা বা উন্নয়নের জন্য অতীব জরুরি। এভাবে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় শাসনের বাইরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার
নিমিত্তে আবির্ভূত হয়েছে। এই শাসন ব্যবস্থায় প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত হয় স্থানীয় জনগণের মধ্য থেকে, যা জনগণের
অংশগ্রহণকে ত্বরাণি¦ত করে। বর্তমানকালে স্থানীয় জনগণের কল্যাণে স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্ব এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও এই ব্যবস্থা সমধিক গুরুত্ব পেয়েছে। মুখ্য শব্দ লোক প্রশাসন, সিদ্ধান্ত, স্থানীয় জনগণ, প্রতিনিধির অংশগ্রহণ, উন্নয়ন, কল্যাণ,
স্বায়ত্বশাসন, বিতর্ক, জনগণের অংশগ্রহণ।
’স্থানীয় স্বায়ত্বশাসনের অস্তিত্ব প্রাচীনকালেও এই জনপদের মানুষের মধ্যে ছিল। প্রাচীন পঞ্চায়েত ব্যবস্থা মূলত
একটি স্বায়ত্বশাসিত ধরনের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তাত্তি¡ক আলোচনায় স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন ধারণাটি তুলনামূলকভাবে
নতুন প্রত্যয়। এ প্রত্যয়টি আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও লোকপ্রশাসন অধ্যয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন বলতে
স্থানীয় পর্যায়ে এমন এক ধরণের শাসন ব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে আইনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট
পরিমাণে স্বশাসনের অধিকার প্রদান করা হয়। এই প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত এখতিয়ারের মধ্যে নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন
করতে পারবে এবং কেন্দ্রীয় সরকার কোনো ধরণের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন মূলত ক্ষমতার
বিকেন্দ্রীকরণের একটি পর্যায়কে বুঝায়, যেখানে একটি নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে স্থানীয়ভাবে শাসন
করার জন্য স্বশাসিত স্থানীয় সরকার কাঠামো প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
স্থানীয় স্বায়ত্বশাসনের ধারণা
স্থানীয় শাসনের সংজ্ঞা প্রদান করতে গেলে দেখা যাবে নানান বিশেষজ্ঞ বিভিন্নভাবে প্রত্যয়টিকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা
করেছেন। তবে সাধারণভাবে বলতে গেলে স্থানীয় শাসন বলতে এমন এক ধরনের শাসনকে বোঝায়, যেখানে স্থানীয়
জনগণ স্থানীয় পর্যায়ের জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে তাদের সম্পর্কিত বিষয়াবলীতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপমুক্ত
থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। স্থানীয় শাসন ব্যবস্থায় স্থানীয় জনগণ স্বশাসনের অধিকার ভোগ করে
থাকে। স্থানীয় স্বায়ত্বশাসনের জন্য প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় সরকার স্থানীয় জনগণের ভোটে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত
হয় এবং নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক স্বশাসনের অধিকার লাভ করে। অর্থাৎ এই প্রতিষ্ঠান কর আরোপ করতে পারে এবং নিজেদের জন্য বাৎসরিক বাজেট প্রণয়ন করতে পারে।
স্থানীয় স্বায়ত্বশাসনের ধারণা ও স্থানীয় সরকারের ধারণা সংক্রান্ত কিছু বিতর্ক
রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও লোকপ্রশাসন অধ্যয়নে স্থানীয় স্বায়ত্বশাসনের ধারণা ও স্থানীয় সরকারের ধারণাসংক্রান্ত কিছু বিতর্ক
পরিলক্ষিত হয়। আমরা যদি স্থানীয় সরকারের ধারণার উৎপত্তি সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক আলোচনার শুরুর দিকের তাত্তি¡ক
আলোচনার দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যায় স্থানীয় সরকার ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের একটি পর্যায়ে এক ধরনের স্থানীয়
সরকার কাঠামো সৃষ্টি করার কথা বলা হয়। এই স্থানীয় সরকারের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য থাকার কথাও বলা হয়, যার মধ্যে
অন্যতম একটি হচ্ছে স্বায়ত্বশাসন। সুতরাং স্থানীয় সরকার বলতে মূলত স্থানীয় স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানকেই বোঝানো হয়। যদিও ব্যবহারিক দিক থেকে অনেকেই স্থানীয় সরকার বলতে মাঠ প্রশাসনের স্থানীয় আমলাদের বুঝিয়ে থাকে। বাস্তবতার
নিরীখে এটি একটি ধারণাগত ভুল প্রয়োগ। স্থানীয় সরকার বলতে স্থানীয় জনগণের ভোটে নির্বাচিত স্বশাসনের অধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকেই বুঝিয়ে থাকে।
স্থানীয় স্বায়ত্বশাসনের গুরুত্ব
আধুনিকীকরণের এই যুগে যেকোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্যই স্থানীয় স্বায়ত্বশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজ ব্যবস্থায় যখন
গতিশীলতা সৃষ্টি হয়, তখন সরকারের কাছে জনগণের চাহিদা বহুগুণে বেড়ে যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের একার পক্ষে একটি
নিয়ত পরিবর্তনশীল সমাজের সকল চাহিদা মেটানো এবং উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। সুতরাং জনগণের
কল্যাণের জন্যই স্থানীয় স্বায়ত্বশাসিত সরকার আবশ্যক। এ শাসনব্যবস্থার গুরুত্ব নি¤েœ তুলে ধরা হল:
জনগণের অংশগ্রহণ:
স্থানীয় স্বায়ত্বশাসনের মূল কথাটিই হল স্থানীয় জনগণের ভোটে স্থানীয় সরকার কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সিদ্ধান্ত
প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্নভাবে জনগণ সম্পৃক্ত থাকবে। সুতরাং একথা বলাই যায় যে, স্থানীয় পর্যায়ের যেকোন উন্নয়ন
কর্মকান্ডে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ এ শাসনব্যবস্থা সৃষ্টি করে দেয়।
স্থানীয় উন্নয়ন ও জনকল্যাণ:
স্থানীয় স্বায়ত্বশাসনে যেহেতু জনগণ নিজেরা নিজেদের উন্নয়ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে, সেহেতু স্থানীয় সুযোগসুবিধাগুলোর সঠিক ব্যবহার করার দ্বার উন্মোচিত হয়। এ শাসন ব্যবস্থায় সরাসরি নিজেরা অথবা নিজেদের নির্বাচিত
প্রতিনিধিরা স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করায় জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ অনেকগুণ বেড়ে যায়।
এছাড়াও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন ব্যবস্থায় তৃণমূল পর্যায় থেকে জাতীয় নেতৃত্ব, নানান ধর্মের বর্ণের প্রতিনিধিত্ব, আমলাতন্ত্রের লাল ফিতার দৌরাত্ম হ্রাস এবং আর্থ-সামাজিক সুবিধাগুলোর সদ্ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
সারসংক্ষেপ
স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন ব্যবস্থার পরিব্যাপ্তি স্থানীয়ভাবে। এই ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ থাকে। এই শাসন প্রক্রিয়ায়
আইনানুগভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে স্বশাসনের অধিকার প্রদান করা হয়। এই শাসনব্যবস্থা অন্য যেকোন শাসনব্যবস্থা
থেকে ব্যতিক্রম এই অর্থে যে, এই স্থানীয় প্রশাসনটি নিজের আয়ের মাধ্যমে নিজেদের ব্যয় নির্বাহ করবে। মূলত: এই
চিন্তা থেকেই স্বায়ত্বশাসনের ধারণাটি বিস্তৃতি লাভ করেছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়ার কারণে
প্রশাসনের স্বায়ত্বশাসনের রূপটি আরও প্রগাঢ় হয়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-৬.১
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের সর্বনিম্ন স্তর কোনটি?
(ক) ইউনিয়ন পরিষদ (খ) উপজেলা পরিষদ
(গ) জেলা পরিষদ (ঘ) উপরের কোনটিই নয়
২। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়, কেননা-
র. জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়
রর. নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পায়
ররর. রাজনৈতিক চেতনা ও শিক্ষার প্রসার ঘটে
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র ও রর (খ) রর ও ররর
(গ) র ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর

FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]