মুখ্য শব্দ রাজনৈতিক সংগঠন, আলিগড় আন্দোলন, প্রতিনিধিত্ব স্বতন্ত্র, পৃথক নির্বাচন
মুসলিম লীগ ভারতীয় মুসলমানদের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল। কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার ২১ বছর পর
মুসলমানরা নিজেদের জন্য একটি রাজনৈতিক সংগঠন তৈরী করে। পরবর্তীতে এ রাজনৈতিক দলের দাবি
অনুযায়ী ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়।
পটভ‚মি
মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্যার সৈয়দ আহমদ খান ও আলিগড় আন্দোলনের প্রভাব ছিল সর্বাধিক। ১৮৮৫ সালে
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি মুসলমানদের এতে যোগদান করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। কারণ তিনি
আশংকা করেছিলেন সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মুসলমান সম্প্রদায় সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হলে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে
ফেলবে। তিনি মুসলমানদের শিক্ষা বিস্তারের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেন।
মুসলিম লীগ
তিনি মুসলমানদের শিক্ষা বিস্তারের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পরের বছর তিনি ‘অল ইন্ডিয়া
মোহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্স’ বা শিক্ষা সম্মেলন প্রতিষ্ঠা করেন। আলীগড়ে স্যার সৈয়দ আহমদ খান প্রতিষ্ঠিত
মোহামেডান এ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় তাঁর শিক্ষা আন্দোলন যা ‘আলীগড় আন্দোলন’ নামে
পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসলমানরা এখানে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকেন। মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায়
স্যার সৈয়দ আহমদ খান ও আলীগড় আন্দোলনের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বঙ্গভঙ্গ ও এর রদ আন্দোলন অন্যতম কারণ ছিল। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন শুরু
হয়। বাংলায় বঙ্গভঙ্গের প্রধান সমর্থক ছিলেন নবাব সলিমুল্লাহ। এ সময় তিনি ভারতবর্ষে মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের
জন্য একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজন অনুভব করেন।
অপরদিকে, ১৮৯২ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী আইনসভায় প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে তা সম্প্রসারিত
করা হয়। তবে এসব সংস্থার প্রতিনিধি নির্বাচনে অনগ্রসর ও অসংগঠিত মুসলমান সম্প্রদায় হিন্দুদের তুলনায় অনেক
পিছিয়ে ছিল। ১৯০৬ সালের ২০শে জুলাই জন মর্লি ব্রিটিশ ভারতের শাসনকার্যে ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্ব আরো বৃদ্ধির
ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা ভারতীয় মুসলমানদের চিন্তিত করে তোলে। ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর আগা খানের নেতৃত্বে
ভারতের শীর্ষস্থানীয় ৩৫ জন মুসলমানের একটি প্রতিনিধি দল সিমলায় লর্ড মিন্টোর কাছে মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক
নির্বাচন ব্যবস্থার দাবী জানান। লর্ড মিন্টো মুসলমানদের তাঁদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেন।
১৯০৬ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় স্যার সৈয়দ আহমদ খান প্রতিষ্ঠিত সর্বভারতীয় শিক্ষা সম্মেলনের ২০তম
অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষ্যে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসলিম নেতৃবৃন্দ ঢাকায় মিলিত হন। এর আগে ঢাকার
নবাব সলিমুল্লাহ মুসলমানদের জন্য একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে নেতৃস্থানীয় মুসলিম নেতৃবৃন্দের নিকট
প্রচারপত্র প্রেরণ করেন। ৩ দিনব্যাপী শিক্ষা সম্মেলন শেষে চতুর্থ দিনে অর্থাৎ ৩০ শে ডিসেম্বর মুসলিম নেতৃবৃন্দ একটি
রাজনৈতিক অধিবেশনে মিলিত হন। ভারতের বিভিন্ন অংশের মোট ৬৮জন প্রতিনিধি এ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
নবাব সলিমুল্লাহ মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল গঠনের মূল প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি
সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। অপর এক প্রস্তাবে নবাব ভিকার-উল-মুলক ও নবাব মোহসীন-উল-মুলক এ দু’জনকে যুগ্ম
সম্পাদক করে ৬০ সদস্য বিশিষ্ট অন্তবর্তীকালীন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিকে গঠনতন্ত্র রচনার দায়িত্ব ন্যস্ত করা
হয়। এভাবেই ‘সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ’ নামক একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়।
১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠাকালে নি¤েœাক্ত বিষয়সমূহ মুসলিম লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে গৃহীত হয়১. ভারতের মুসলমানদের মধ্যে মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্যের মনোভাব সৃষ্টি করা।
২. ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গৃহীত কোন নীতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে কোন প্রকার ভুল ধারণার জন্ম হলে তা দূর করা।
৩. ভারতীয় মুসলমানদের অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণ করা এবং তাদের প্রয়োজন ও প্রত্যাশার কথা বিবেচনা ও
আনুগত্যের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের নিকট পেশ করা।
৪. মুসলিম লীগের অন্যান্য উদ্দেশ্য যেন বিঘিœত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে মুসলমান সম্প্রদায়ের সাথে অন্যান্য
সম্প্রদায়ের সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি করা।
মুসলিম লীগের বিকাশধারা
১৯০৬ সালে মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠার পর ১৯০৮ সালে আলীগড়ে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে আগা খানকে সভাপতি ও সৈয়দ
হাসান বিলগ্রানিকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪৩ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। ১৯১৩ সাল পর্যন্ত আগা খান
লীগের স্থায়ী সভাপতি ছিলেন তবে মতপার্থক্যের কারণে তিনি ঐ একই বছর সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বস্তুত
এ সময় ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাবসম্পন্ন, শিক্ষিত, স্বাধীন পেশায় যুক্ত, বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ একটি অংশ মুসলিম
লীগের নেতৃত্বে আসেন। এদের মধ্যে ফজলুল হক, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, সৈয়দ ওয়াজির হাসান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
এদের নেতৃত্বে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে সাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক লক্ষেèৗ চুক্তি। কংগ্রেস ও লীগ মিলিতভাবে
খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনা করে। তবে মুসলিম লীগের সাংগঠনিক বিস্তৃতি ঘটেনি। ১৯৩৭ সালে
প্রাদেশিক নির্বাচনের পূর্বে জিন্নাহ মুসলিম লীগকে সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে মুসলিম
লীগ ৪৮২টি মুসলিম আসনের মধ্যে ১০৪টি আসন লাভ করে। এ নির্বাচনের পর থেকে মুসলিম লীগের সাংগঠনিক বিস্তৃতি
ঘটতে থাকে। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হবার পর মুসলিম লীগ অতি দ্রæত গণভিত্তিসম্পন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে
পরিণত হয়। কী?
সারসংক্ষেপ
ব্রিটিশদের প্রতি অনুগত বিত্তবান এবং শিক্ষিত রক্ষণশীল মুসলমানদের নেতৃত্বে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ
করে। প্রতিষ্ঠার পরবর্তী তিন দশক পর্যন্ত মুসলীম লীগ কার্যত কোন সাংগঠনিক ভিত্তি সম্পন্ন রাজনৈতিক সংগঠনে
পরিণত হতে পারেনি। পরবর্তীতে লাহোর প্রস্তাব মুসলিম লীগের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১.৭
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১। সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ?
(ক) ১৯০৫ সালে (খ) ১৯০৬ সালে
(গ) ১৯১১ সালে (ঘ) ১৯০৯ সালে
২। ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদের আলাদা সংগঠনের উৎসাহ দেন কেন?
(ক) কংগ্রেসের প্রতি আস্থাশীলতার জন্য
(খ) কংগ্রেসের প্রতি বিরূপ মনোভাবের জন্য
(গ) মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার ধ্বংস করার জন্য
(ঘ) হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে উৎসাহ দেয়ার জন্য
৩। মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল
র. সকল স¤প্রদায়ের স্বার্থরক্ষা
রর. ব্রিটিশ সরকারের প্রতি মুসলমানদের আনুগত্য নিশ্চিত করা
ররর. মুসলমানদের রাজনৈতিক দাবি-দাওয়া উত্থাপন করা
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র ও রর (খ) রর ও ররর
(গ) র ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র