ভূমিকা ষোল শতকের প্রথম দিকে ভারতবর্ষের অরাজক রাজনৈতিক অবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে জহির উদ্দিন মুহম্মদ বাবর এদেশে মোগল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মাত্র চার বছর রাজত্ব করেন। রাজত্বকালের পুরো সময়েই তিনি যুদ্ধ বিগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন। তাই তিনি বংশধরদের জন্য একটি সুসংগঠিত রাজ্য রেখে যেতে পারেন নি। এ কারণে হুমায়ুন সিংহাসনে আরোহণ করার পরই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। দিল্লির সিংহাসন তাঁর হাত-ছাড়া হয়ে যায়। তবে দীর্ঘ পনের বছর পর হুমায়ুন দিল্লির সিংহাসন পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছিলেন। বাবরের ভারতবর্ষ আক্রমণের প্রাক্কালে এদেশের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল, কিভাবে বাবর এদেশে মোগল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, তাঁর পুত্র হুমায়ুনের শাসন কেমন ছিল তা এ ইউনিটের বিভিন্ন পাঠে আলোচিত হয়েছে। মুখ্য শব্দমালা ক্ষুদ্র রাজ্য, ইব্রাহিম লোদী, রাজপুত, মোগল মধ্য এশিয়া থেকে রাজ্যজয়ের নেশায় বেরিয়েছিলেন বাবর। ১৪১৪ সালে কাবুল অধিকারের পর বাবর ভারত বিজয়ের পরিকল্পনা করেন। ১৫১৯ সালে ভারত অভিযানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। এসময় ভারতের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন লোদী সুলতানরা। ভারতের পথে ছোট খাট আরো কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করতে কয়েকটি বছর কেটে যায়। বাবরের আক্রমণের পূর্বে ভারতের শেষ সুলতান ছিলেন ইব্রাহিম লোদী (১৫১৭-২৫ খ্রি.)। দিল্লি ও আশেপাশের অঞ্চলগুলোর উপর তাঁর অধিকার ছিল। ইব্রাহিম লোদী খুব দক্ষ শাসক ছিলেন না। সামন্ত রাজা ও প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অনেকেই তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল না। তাছাড়া ভারতবর্ষের হিন্দু রাজন্যবর্গ ও রাজপুতদের সম্পূর্ণ রূপে পরাজিত করতে পারেন নি দিল্লির সুলতানগণ। ফলে তুঘলক বংশের শাসনের (১৩২০-১৪১৩) শেষের দিকে দিল্লির কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্যের ঊত্থান ঘটে। ভারতে সুদূর দক্ষিণে বাহমনী ও বিজয়নগর রাজ্য, উত্তর ভারতে কাশ্মীর ও জৌনপুর রাজ্য, পূর্বাঞ্চলে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা এবং পশ্চিমে পাঞ্জাব, মালব ও গুজরাটে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের রাজাগণ ছিলেন উচ্চাকাক্সক্ষী ও স্বাধীনতা প্রিয়। এদের সাথে বিরোধের ফলে দিল্লির কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বল ও সংকুচিত হয়ে পড়ে। ভারতের কেন্দ্রীয় শক্তির দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে বাবর এদেশে মোগল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। বাবরের ভারত বিজয়ের প্রাক্কালে পাঞ্জাবে দৌলত খান লোদী স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতেন। দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদী দৌলত খানের স্বাধীন শাসনের বিরোধিতা করায় উভয়ের মধ্যে দারুণ শত্রæতা দেখা দেয়। সুলতান ইব্রাহিম লোদীর খালাত ভাই আলম খান লোদী বিদ্রোহী দৌলত খান লোদীর সাথে যোগ দিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। বিহারের শাসনকর্তা দরিয়া খান ও দৌলত খানের সাথে যোগদান করেন। তাঁরা দিল্লির লোদী শাসনের অবসানের জন্য কাবুলে অবস্থানরত বাবরকে ভারত আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান। দিল্লির লোদী সাম্রাজ্যের বাইরে কয়েকটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মালব। মালব রাজ্যটি ছিল রাজপুতনা ও বুন্দেলখÐের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। ফিরোজ তুঘলকের রাজত্বকালে (১৩৫১-১৩৮৮ খ্রি.) মালব স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৬ শতকে মালবের সুলতান দ্বিতীয় মুহম্মদ শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাঁর রাজপুত সামন্তরা ক্ষমতা দখল করে নেয়। সামরিক দিক থেকে মালবের অবস্থান ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া গুজরাটেও একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। এ রাজ্যটি ছিল সমৃদ্ধশালী। গুজরাটের বন্দর থেকে বহু পণ্য পশ্চিম এশিয়ায় রপ্তানি হতো। এ জন্য পর্তুগিজ বণিকরা গুজরাটের উপক‚লে আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা করে। গুজরাটের সুলতান শেষ পর্যন্ত পর্তুগিজদের দমন করতে সক্ষম হন। রাজপুতনায় অনেকগুলো স্বাধীন রাজ্য ছিল। দিল্লির সুলতানের দুর্বলতার সুযোগে এসব রাজ্য শক্তিশালী হয়ে উঠে। এই রাজ্যগুলোর মধ্যে মেবার ছিল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। সংগ্রাম সিংহ বা রানা সংগ্রাম সিংহ ছিলেন মেবারের শাসনকর্তা। তিনি রাজপুতদের নেতা ছিলেন। মধ্যপ্রদেশ পর্যন্ত তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তৃত ছিল। ইব্রাহিম লোদীর দুর্বলতার সুযোগে সংগ্রাম সিংহ দিল্লি অধিকারের ইচ্ছা পোষণ করেন। দক্ষিণ ভারতের বিজয়নগর রাজ্যের রাজা কৃষ্ণদেব খুব উচ্চাভিলাষী ছিলেন। দাক্ষিণাত্যে নিজ প্রভুত্ব স্থাপনে উদ্যোগ গ্রহণ করলে বাহমনী রাজ্যের সাথে তাঁর সংঘাত শুরু হয়। অন্যদিকে উত্তর ভারতে কাশ্মীর রাজ্যেও তখন গোলযোগপূর্ণ অবস্থা বিরাজমান ছিল। পূর্ব ভারতের বাংলায় সুলতান হুসেন শাহের পুত্র নুসরত শাহ রাজত্ব করতেন। তাঁর রাজ্য সীমানা বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ভারতবর্ষ একটি বিশাল দেশ। এদেশে কেন্দ্রীয় শক্তির দুর্বলতা রাজনৈতিক অস্থিরতার মূল কারণ। এমন পরিস্থিতি বাবরের জন্য সুযোগ এনে দেয়। ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এমন অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তিনি চূড়ান্ত আক্রমণ পরিচালনা করেন। আক্রমণ করেন। শিক্ষার্থীর কাজ শিক্ষার্থীগণ মধ্যযুগের ভারতের একটি মানচিত্র অংকন করবে এবং এতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলোর অবস্থান বিভিন্ন রঙে চিত্রিত করবে সারাংশ বাবরের ভারতবর্ষ আক্রমণের প্রাক্কালে এদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান ছিল। তখন দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের শাসক ছিলেন ইব্রাহিম লোদী। তিনি অনেকটা দুর্বল শাসক ছিলেন। ফলে অমাত্যবর্গ ও প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণের উপর তার নিয়ন্ত্রণ কম ছিল। কেন্দ্রীয় শাসনের দুর্বলতার সুযোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব রাজ্যের মধ্যে পাঞ্জাবের দৌলত খান লোদী সুলতানের চরম বিরোধিতা করেন এবং ইব্রাহিম লোদীকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য বাবরকে আমন্ত্রণ জানান। এমন সংকটপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে বাবর ভারত আক্রমণ করেন। সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন। ১। বাবরের ভারত বিজয়ের প্রাক্কালে দিল্লির সুলতান ছিলেন কে? ক) ইব্রাহিম লোদী খ) দৌলত খান লোদী গ) আলম খান লোদী ঘ) দরিয়া খান ২। দৌলত খান লোদী কোন রাজ্যের শাসক ছিলেন? ক) কাশ্মীর খ) মালব গ) পাঞ্জাব ঘ) বাংলা ৩। মেবার-এর শাসনকর্তা ছিলেন কে? ক) রাজা কৃষ্ণ দেব খ) রানা সংগ্রাম সিংহ গ) দৌলত খান লোদী ঘ) দরিয়া খান ৪। বাবরের ভারতবর্ষ বিজয়ের প্রাক্কালে বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন কে? ক) হুসেন শাহ খ) নুসরৎশাহ গ) গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ ঘ) আলাউদ্দিন মাহমুদ শাহ ৫। বাবরকে ভারত আক্রমণের আমন্ত্রণ জানানÑ র. দৌলত খান লোদী রর. আলম খান লোদী ররর. দরিয়া খান নিচের কোনটি সঠিক? ক) র ও রর খ) র ও ররর গ) রর ও ররর ঘ) র, রর ও ররর সৃজনশীল প্রশ্ন কামালউদ্দিন ছিলেন বহরমপুরের জমিদার। তার জমিদারী ছিল সমৃদ্ধশালী। এখানকার বন্দর থেকে বহু পণ্য পার্শ্ববর্তী ভূখÐে রপ্তানি হতো। এটা দেখে রতনপুর রাজ্যের বণিকরা বহরমপুরের উপকূলে তাদের আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা করে। বহরমপুরের জমিদার শেষ পর্যন্ত উক্ত ব্যবসায়ীদের দমন করতে সক্ষম হয়। ক. কোন দেশের অধিবাসীদের পর্তুগিজ বলা হয়? ১ খ. মোগল বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল? ২ গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে পাঠ্য পুস্তকের কোন দেশের বণিকদের আধিপত্য বিস্তারে সাদৃশ্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করুন। ৩ ঘ. ‘উক্ত বণিকরা শেষ পর্যন্ত ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত হয়।’ পাঠ্য পুস্তকের আলোকে বিশ্লেষণ করুন। ৪
FOR MORE CLICK HERE
এইচএসসি বাংলা নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
ENGLISH 1ST & SECOND PAPER
এইচএসসি আইসিটি নোট
এইচএসসি অর্থনীতি নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র
এইচএসসি পৌরনীতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ১ম পত্র
এইচএসসি সমাজকর্ম নোট ২য় পত্র
এইচএসসি সমাজবিজ্ঞান নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইতিহাস নোট ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ১ম পত্র
এইচএসসি ইসলামের ইতি. ও সংস্কৃতি নোট ২য় পত্র
এইচএসসি যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ভূগোল ও পরিবেশ নোট ১ম পত্র ও ২য় পত্র
এইচএসসি ইসলামিক স্টাডিজ ১ম ও ২য় পত্র